স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক শাজাহান সিরাজ ও এমাজউদ্দীন স্যার
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমইদানীং প্রতি রবিবারই নঈম নিজামের লেখা দেখি। পড়ে বেশ ভালো লাগে। পুরনো দিন চোখের সামনে ভেসে ওঠে। নঈমের কোনো কোনো বন্ধু নাকি বলেছে, সে শুধুই অতীতমুখী। বড় পেছনের কথা বলে। আমার কাছে কিন্তু তেমন মনে হয় না। নঈম নিজামের লেখা নিয়ে অনেক পাঠকের সঙ্গে কথা হয়, তাঁরা খুবই প্রশংসা করেন। এখন তো সত্য বলা, সাহস করে বলা খুব একটা সহজ নয়। নঈম নিজাম আমার প্রিয় বলে বলছি না, তাঁর যোগ্যতা, দক্ষতা কিনা অথবা ভাগ্যদেবতা তাঁর সহায় কিনা বলতে পারি না। তবে এটা বলতে পারি, নঈম নিজাম যেখানেই হাত দিয়েছে সেখানেই সোনা ফলেছে- সেটা ইলেকট্রনিক মিডিয়াই হোক আর প্রিন্ট মিডিয়া। গ্রামেগঞ্জে ঘরে ঘরে এর আগে আর কোনো পত্রিকা এতটা জনপ্রিয়তা অর্জন করেনি যতটা নঈম নিজামের সম্পাদনায় বাংলাদেশ প্রতিদিন করেছে। বাংলাদেশে আর কোনো পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতা পড়ার জন্য মানুষ এমন ব্যাকুল হয়ে থাকে না। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট ও নেপোলিয়ানকে নিয়ে কিছুদিন আগে পীর হাবিব এবং সেদিন নঈম নিজাম লিখেছে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বীর সম্রাটদের মৃত্যু অতি সাধারণ। বিশ্ব দখলে বেরিয়ে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট আর দেশে ফিরতে পারেননি। মিসরের কাছে প্রাণ হারিয়েছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, অসুস্থ হয়ে। তাঁর কফিন বইবার জন্য ডাক্তারদের কাঁধে চড়েছিলেন। বয়ে নিয়ে যাওয়া কফিনে দুই হাত ছিল বাইরে একেবারে খোলা। তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, মৃত্যুর ব্যাপারে ডাক্তার-চিকিৎসক অসহায়। আর যেমনি খালি হাতে এসেছিলেন, তেমনি খালি হাতেই গেলেন। সবাইকে তেমনিই যেতে হবে। অথচ আমরা অনেকেই সে কথা চিন্তাও করি না। এই যে রিজেন্ট হসপিটালের সাহেদ, মানুষের লোভেরও তো সীমা থাকে। জেকেজি হাসপাতালের আরিফ চৌধুরী এবং তার স্ত্রী সাবরিনা বিসিএস পাস করে সরকারি ডাক্তার হওয়ার পরও এমন দুর্নীতি! করোনায় সারা বিশ্ব জেরবার, সরকার যারপরনাই পেরেশান তখন ভুয়া সার্টিফিকেট বিক্রি করে সাবরিনারা টাকা কামান! কী হবে এত টাকায়। আমি তো কম দেখলাম না। যারা একসময় ধুলো ছিটিয়ে ছুটত তাদের অসহায়ত্ব দেখেছি। নিজেকে দিয়েও বিচার করি, একসময় যারা হাঁ করে আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকত এখন তাদের অনেককে খুঁজে পাওয়া যায় না। দু-এক জনকে ফোন করে দেখেছি কোনো সাড়া নেই- এটাই বাস্তব, এটাই দুনিয়া। তাই কী হবে এত দুর্নীতি করে। দীর্ঘ রোগভোগের পর সেদিন শাজাহান সিরাজ চলে গেলেন। ’৬৯-এর গণআন্দোলনের মহানায়ক জননেতা তোফায়েল আহমেদের শাজাহান সিরাজের ওপর লেখাটি পড়ে যারপরনাই খুশি হয়েছি। আমরা কেন যে সত্যকে আড়াল করতে চাই, সত্যকে অসত্য বানাতে চাই বুঝতে পারি না। আর যে যাই বলুন, যত বড় নেতা আর যোদ্ধাই হোন কালুরঘাটে একটা তৈরি রেডিও স্টেশনে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ জিয়াউর রহমানকে আদর আপ্যায়ন করে নিয়ে যান। সেখানে তিনি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সে ঘোষণাতেই যদি এত কিছু হয় তাহলে শাজাহান সিরাজ কম কিছু করেননি। তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা ছিলেন। নিজেরা পল্টন ময়দানে সভা করে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছিলেন। পতাকা, জাতীয় সংগীত, রাষ্ট্রপতি, রাষ্ট্রপিতা কোনো কিছু বাকি রাখেননি। যদি যুদ্ধে আমরা জিততে না পারতাম, যদি পাকিস্তানিরা বহাল থাকত তাহলে আমাদের কী হতো। শাজাহান সিরাজের কী হতো। একটা দেশকে অস্বীকার করে অন্য একটা দেশের পতাকা তোলা যা তা নয়। আজ যতই অবমূল্যায়ন করা হোক পাকিস্তান থাকলে আ স ম আবদুর রবকে টুকরো টুকরো করা হতো। শাজাহান সিরাজ, নূরে আলম সিদ্দিকী, আবদুল কুদ্দুস মাখন কারও কোনো উপায় থাকত না। স্বাধীনতা কামনার জন্য পুরস্কার হতো ফাঁসি, ফাঁসি আর ফাঁসি। অথচ আজ অনেকেই স্বীকার করতেও চান না যে, ছাত্রদের ভূমিকা ছিল, রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা ছিল। ওদিকে জিয়াউর রহমান, কোনো কোনো জায়গায় সশস্ত্র বাহিনী আর কিছু না। যদি রাজনৈতিক অবস্থান না থাকত, লড়াইটা জনযুদ্ধ না হতো, শত্রুদেশের সেনাবাহিনী হিসেবে ভারত সীমানায় পা রাখলেই কম করে ১২ বছরের কোর্ট মার্শাল দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দিত। ১২-১৫ বছর পর তারা ছাড়া পেত। জামাই আদরে ভারতের সীমান্তে অথবা ভারতের বড় বড় শহরে থাকার উপায় ছিল না। জিয়াউর রহমানের ছেলে তারেক রহমান মাঝেমধ্যেই বলার চেষ্টা করে, তার বাবা এক দিনের জন্য হলেও রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তার বাবা এক দিনের জন্য নয়, বেশ কয়েক বছর যেভাবেই হোক রাষ্ট্রপতি ছিলেন। কিন্তু ’৭১-এ নয়। ’৭১-এ রাষ্ট্রপতি হওয়ার মতো কোনো সাংবিধানিক সামর্থ্য ছিল না। তিনি না এমপি, না এমএনএ ছিলেন। তিনি যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। কালুরঘাট বেতারে তাঁর স্বকণ্ঠ ঘোষণা অনেককে উজ্জীবিত করেছিল। আমার সমস্যা আমি যেমন মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানকে পাকিস্তানের এজেন্ট বলতে পারি না, ভাবতে পারি না, ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে জিয়াউর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধের হিরো বলতে পারি না। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের হিরো তারা কেউ বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে নই। বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করলে আমরা সবাই জিরো। জিরোতে জিরোতে জিরো মিললে অর্থবহ কিছু হয় না। প্রথম জিরোর আগে শক্তিশালী এক স্তম্ভ লাগে। আমরা কেউ তা ছিলাম না। এখন অনেকে অনেক কিছু হয়েছে। অনেকেই বুঝতে চায় না জিয়াউর রহমান অন্যদের মতো একজন সেক্টর কমান্ডার। জিয়াউর রহমান সরকার ছিলেন না, সরকার ছিল মুজিবনগর। জিয়াউর রহমান বীরউত্তম খেতাব পেয়েছেন, আমিও ও রকম একটা খেতাব পেয়েছি। তবে আমি একমাত্র বেসামরিক বাঙালি, অন্য সবাই সামরিক ব্যক্তি। সেই বীরত্বসূচক খেতাবও দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর সরকার। বঙ্গবন্ধু সরকারের বীরউত্তম হয়ে মুজিবনগর বিপ্লবী সরকারের নির্দেশমতো কাজ করে আমরা কেউ মুজিবনগরকে বা স্বাধীনতার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে পার করে যেতে পারি না। তাই যেমন আমি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানকে অস্বীকার করতে পারি না, মুক্তিযুদ্ধের নেতা পিতাকেও অস্বীকার করতে পারি না।
জনাব শাজাহান সিরাজের বাড়ি টাঙ্গাইলে। আমরা প্রায় একসঙ্গে বড় হয়েছি। টাঙ্গাইলের নেতা ছিলেন ফজলুল করীম মিঠু, আল মুজাহিদী, ফজলুর রহমান ফারুক, লতিফ সিদ্দিকী। শাজাহান সিরাজের নাম ’৬২ সালের আগে খুব একটা শোনা যায়নি। ’৬২ সালের পরও টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ মানে বৃহত্তর ময়মনসিংহের মূল নেতা ছিলেন লতিফ সিদ্দিকী। আমাদের বাড়ির ভাঙা বৈঠকখানায় শাজাহান সিরাজকে বক্তৃতা শেখাতেন লতিফ সিদ্দিকী। কীভাবে হাত-পা ছুড়তে হয়, কীভাবে কথা বলতে হয় এর অনেক তালিম হয়েছিল আমাদের বাড়ির বৈঠকখানায়। রাজনীতি কখনো সরল রেখায় চলে না। ছাত্রলীগের রাজনীতিও সরল রেখায় চলেনি। লতিফ সিদ্দিকী থাকেন জেলে জেলে, শাজাহান সিরাজ তখন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতা। ’৭০ সালে ছাত্রলীগের সম্মেলনে লতিফ সিদ্দিকীর সাধারণ সম্পাদক হওয়ার কথা ছিল। ইকবাল হলের মাঠের সেই সম্মেলনে আমরা অনেকেই ছিলাম। অধ্যাপক নীলিমা ইব্রাহিম প্রধান অতিথি ছিলেন। গভীর রাত পর্যন্ত কমিটি হতে পারছিল না। যখন কমিটির নাম ঘোষণা করা হয় সাধারণ সম্পাদক পদে শাজাহান সিরাজ, সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী। প্রায় সবাই বিস্মিত হয়েছিল। ময়মনসিংহের খালেদ খুররমরা প্রতিবাদ করেছিল, আমরা তার সঙ্গে সুর মিলিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। পরে যখন সম্পূর্ণ প্যানেল ঘোষণা হলো সেখানে লতিফ সিদ্দিকীর স্থান হয়নি। ওই কমিটিতেও আমার তিনজন সহকর্মী কার্যনির্বাহী সদস্য হয়েছিল। ওর পরে কেন্দ্রের যত কমিটি হয়েছে, সব কমিটিতে আমার অনেক কর্মী নেতা হয়েছে, সদস্য হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য রাজনীতিতে যার কাছে আমাদের হাতেখড়ি সেই লতিফ সিদ্দিকী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও হতে পারেননি, যেমনটা আমিও পারিনি। ’৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে কালিহাতী থেকে লতিফ সিদ্দিকী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হয়েছিলেন। আবার ’৭৩ সালে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনে কালিহাতী থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সে সময় জাসদের শাজাহান সিরাজ মশাল মার্কা নিয়ে দাঁড়ান। ’৭০-এ লতিফ সিদ্দিকীর প্রতিদ্বন্দ্বী মুসলিম লীগ নেতার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। কিন্তু ’৭৩-এ শাজাহান সিরাজের সঙ্গে তেমনটি হয়নি। ’৭৩-এর নির্বাচনে কয়েকটি জায়গায় এখনকার মতো কারচুপি হয়েছিল। তার মধ্যে দাউদকান্দিতে খন্দকার মোশতাক আহমদের সিটে রশীদ ইঞ্জিনিয়ারের ব্যালট বাক্স হেলিকপ্টারে করে হাইজ্যাক করা হয়েছিল। এখনকার মতো তখন মোবাইল এবং হেলিকপ্টার ভূরি ভূরি ছিল না। কিন্তু এর মধ্যেও অমনটা হয়েছিল। এ কারণে বঙ্গবন্ধু ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু ক্ষুব্ধ হলে কী হবে, এখন যেমন নেত্রী শেখ হাসিনার ক্ষুব্ধ হয়েও তেমন কিছু করার থাকে না, দু-এক ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুরও তেমন কিছু করার ছিল না। তবে সারা দেশে নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়েছিল। নির্বাচনের ফল ঘোষণার শুরুতে লতিফ ভাই পাঁচ-ছয় বার এগিয়ে ছিলেন। সে ভোট কমতে কমতে যখন ফলাফল প্রকাশ হলো তখন বিশ-বাইশ শর ব্যবধান ছিল। প্রায় সারা রাত ফল প্রকাশে লতিফ ভাইয়ের তেমন উৎকণ্ঠা ছিল না। একসময় আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, প্রথম ঘোষণার ফলাফল বেশি না এসে যদি কম আসত তাহলে রাতটা কেমন পীড়াদায়ক হতো? সে যাক, সবই আল্লাহর ইচ্ছা। শাজাহান সিরাজের সঙ্গে আমাদের পারিবারিক দ্বন্দ্ব ছিল না। যা ছিল সবই রাজনৈতিক। তাই কেন যেন বলতে ইচ্ছা করে গণবাহিনীর টাঙ্গাইলের নেতা খন্দকার আবদুল বাতেন কত আওয়ামী লীগার, কত মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছে তাকে যদি আওয়ামী লীগ কোলে তুলে নিতে পারে, তবে শাজাহান সিরাজকে নিয়ে এত কৃপণতা কেন? সরকারিভাবে তাঁকে যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হয়নি। সেজন্য মহানায়ক তোফায়েল আহমেদের লেখা আমাকে অভিভূত করেছে। বাংলাদেশ থাকলে ছাত্রনেতারা থাকবেন, যুবনেতারা থাকবেন, জাতীয় নেতারা থাকবেন। রাজনৈতিক নেতৃত্ব অস্বীকার করে মুক্তিযুদ্ধে কোনো বাহবা কুড়ানো যাবে না। নূরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ, আ স ম আবদুর রব, আবদুল কুদ্দুস মাখন, সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মণি, আবদুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদ এঁরা বাংলাদেশের সারথি। স্বাধীন দেশে মত-পথের যত ভিন্নতাই থাক স্বাধীনতায় এঁরা প্রত্যেকেই একটি স্তম্ভ। খুঁটি ছাড়া ঘর দাঁড়ায় না, তেমনি এঁদের ছাড়া চলবে কেমন করে? শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, কে এম ওবায়দুর রহমান, খালেদ মোহাম্মদ আলী, নীলফামারীর রউফ এঁদের স্বাধীনতা থেকে বাদ দেওয়ার পথ কোথায়? শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ভারতের পার্লামেন্টের যৌথ সভায় বাংলাদেশের ওপর ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট বক্তৃতা করেছিলেন। এ ইতিহাস অস্বীকার করার উপায় কী। মত-পথের ভিন্নতা থাকতে পারে, কারও অবদান অস্বীকার করলে সত্যকে এবং ইতিহাসকে অস্বীকার করা হয়। শাজাহান সিরাজও তেমনি একজন ইতিহাসের স্তম্ভ। তাঁকে অস্বীকার না করাই ভালো।
একজন বড় প্রিয় মানুষ অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ চলে গেলেন। পূর্ণ বয়স ছিল তাই তাঁর চলে যাওয়া নিয়ে মনে তেমন দুঃখ নেই। কিন্তু আপনজন হারালে খুব খারাপ লাগে, হতাশায় বুক ভরে যায়, চারদিক অন্ধকার মনে হয়। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ তেমনই একজন আপনজন, প্রিয়জন। কী করে তাঁর আপন হয়েছিলাম জানি না। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মতো, হুজুর মওলানা ভাসানীর মতো সামনে গেলে আকুল হয়ে যেতেন। তিনি বিএনপি সমর্থক ছিলেন। কিন্তু দলকানা ছিলেন না। বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করতেন না। তাঁর এক প্রিয় শিষ্য আবদুল হাই শিকদার খুবই চটপটে মানুষ। আমার কাছে দু-একবার বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অবহেলা করতে চেয়েছেন। তাঁকে বলেছিলাম, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনো খারাপ কথা বললে আমাকে পাবেন না। ভদ্রলোক বুদ্ধিমান, সংযত হয়েছিলেন। পরে সেটা তাঁর আন্তরিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এ ব্যাপারে এমাজউদ্দীন স্যার একদিন বলেছিলেন, ‘বাবা কাদের! আমরা বছরের পর বছর চেষ্টা করেও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে হাই শিকদারকে যেখানে সংযত করতে পারিনি, তুমি কী এমন করলে সে সংযত হয়ে গেল?’ স্যারকে বলেছিলাম, তেমন কী আর করব, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নাহক কথা বললে আমার সহ্য হয় না। তাই আমার অনুভূতি তাঁকে জানিয়েছিলাম। আজও মনে পড়ে, আমার স্ত্রী বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের কেবিন ব্লকে ভর্তি ছিলেন। স্যার তাঁর নাতনিকে নিয়ে এসেছিলেন। সে কি দরদ, কি আকুতি! একজন ভালো মানুষ চলে গেলেন জাতীয় দুর্যোগে যাঁর পাশে গিয়ে বসা যেত, কথা বলা যেত। তাঁর আমাদের ছেড়ে যাওয়া এক জাতীয় ক্ষতি। খুব সহজে এ ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়। আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করুন, বেহেশতবাসী করুন।
লেখক: রাজনীতিক।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএস
Post Written by :
Original Post URL : https://ift.tt/30y4zXA
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD