মুখ খুলছেন সাহেদ, নাম বলছেন ঘনিষ্ঠদের
নিজস্ব প্রতিবেদককরোনাভাইরাস পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনায় গ্রেপ্তার রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম প্রতারণা করতে এমন কোনো শাখা বা সেক্টর বাকি রাখেনি। তার বিচরণ ছিল প্রতারণার প্রতিটি স্তরেই। এবার বেরিয়ে আসছে প্রতারণার জগতে সাহেদের ঘনিষ্ঠজনদের নাম।
সাহেদের উত্থান থেকে সর্বশেষ গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত তাকে বিভিন্ন সুবিধার বিনিময়ে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন এমন ব্যক্তির তালিকা এখন তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে। ১০ দিনের রিমান্ডে থাকা সাহেদ এরই মধ্যে এ সম্পর্কে আদ্যোপান্ত বর্ণনা করেছেন তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে। কীভাবে তাদের সঙ্গে পরিচয়, কীভাবে তাদের কাজে লাগিয়েছেন কিংবা তাদেরকে দেওয়া সুবিধাগুলো কী ছিল।
অন্যদিকে, প্রতারণার এই জাদুকরের জাতীয় পরিচয়পত্র সাময়িক স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। নিজেকে আড়াল করতে সাহেদ করিম নাম পরিবর্তন করে নতুন করে মোহাম্মদ সাহেদ ধারণ করেছেন।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কাজে সাহেদ অন্তত ৫ জন বক্তির সহায়তা নিতেন। পরবর্তীতে নিজের কৌশল এবং তাদেরকে বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে বাগিয়ে নিতেন বিভিন্ন কাজ। তাদেরই একজনের পরামর্শে সর্বশেষ কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে চুক্তি করেন সাহেদ। সব অপকর্মকে পেছনে ফেলে টার্গেট ছিল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন। রানা প্লাজা ধসের ঘটনার মতোই তিনি বেছে নিয়েছিলেন করোনাকালীন রোগীর সেবার সাইনবোর্ড। একে পুঁজি করেই ভবিষ্যতে নিজের আখের গোছানোর কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। তবে অতি লোভের কারণে তার সবকিছু ভেস্তে গেছে।
সূত্র বলছে, সাহেদের নামে এতগুলো মামলা থাকার পরও তিনি কীভাবে বঙ্গভবনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের দাওয়াত পেতেন তাও খতিয়ে দেখছে অনেকগুলো সংস্থা।
এ ছাড়া মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও রিজেন্ট হাসপাতালের মতো একটা অবৈধ হাসপাতালের সঙ্গে কীভাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের চুক্তি হলো এ বিষয়টি বারবারই সামনে আসছে। কারা নেপথ্য থেকে কলকাঠি নাড়ছে সে সম্পর্কিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। কীভাবে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটিতে সদস্য পদ বাগিয়ে নিয়েছিলেন তাও রীতিমতো ভাবিয়ে তুলছে ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দাদের। একই সঙ্গে নিজের প্রতারণা আড়াল করতে কাদের কীভাবে সন্তুষ্ট করতেন জিজ্ঞাসাবাদে সাহেদের দেওয়া তথ্যে রীতিমতো বিস্মিত তারা।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, দেখুন আমরা অনেক তথ্যই পেয়েছি সাহেদের কাছ থেকে। তার উত্থানের পেছনে অনেকের নামও বলেছে সে। তবে সেগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি। এর আগে এ বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
করোনাভাইরাসের পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া, সরকারের কাছে বিল দেওয়ার পর আবার রোগীর কাছ থেকেও অর্থ নেওয়াসহ রিজেন্ট হাসপাতালে নানা অনিয়মের খবর সম্প্রতি প্রকাশ্য হয়েছে র্যাবের অভিযানের মধ্য দিয়ে। গত সপ্তাহে ওই অভিযানের পর রিজেন্টের দুটি হাসপাতাল বন্ধ করে দেয় র্যাব। ওই হাসপাতালের অনুমোদনও বাতিল করা হয়।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গত বুধবার (১৫ জুলাই) সকালে সাতক্ষীরা দেবহাটা সীমান্ত এলাকা থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।পরে বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। সাহেদকে জিজ্ঞাসাবাদে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গোয়েন্দা পুলিশ এখন তাকে দশ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
পূর্বপশ্চিমবিডি/জেডআই
Post Written by :
Original Post URL : https://ift.tt/3jmbXhn
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD