ব্যাংকের চেকে শাহেদের ২৫ রকম স্বাক্ষর!
নিজস্ব প্রতিবেদককরোনার ভুয়া রিপোর্ট প্রদান, ভুয়া রিপোর্ট দিয়েও সরকার এবং রোগীর কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ বহুমুখি প্রতারক রিজেন্ট হাসপাতলের চেয়ারম্যান শাহেদ ব্যাংকের চেককে প্রতারণার কাজেব্যবহার করতেন। ব্যাংকের চেকে তার২৫ ধরনের স্বাক্ষর দিয়ে প্রতারণার প্রমাণ পেয়েছে র্যাব। যেসব স্বাক্ষরের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় বিল পরিশোধ করতেন শাহেদ, তার মধ্যে একটি স্বাক্ষরের সঙ্গে অন্য স্বাক্ষরের কোনো মিল ছিল না।
আনুসন্ধানে জানা গেছে, ভুয়া স্বাক্ষরে চেক বাউন্স হাওয়া শাহেদের বিরুদ্ধে সারা দেশে ৫৬টি চেক প্রতারণার মামলাও হয়েছে। ট্রান্সকম গ্রুপকেও এমন একটি প্রতারণার চেক প্রদান করায় তার বিরুদ্ধে মামলা করে তারা।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, সরাসরি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওও রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে তারা করোনা পরীক্ষা করার চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছেন।
করোনাকালে ১০ হাজার রোগীর করোনা টেস্টের নমুনা সংগ্রহ করে রিজেন্ট হাসপাতাল। মাত্র ৪ হাজার ২৬৪টি নমুনা সরকারিভাবে টেস্ট করে রিপোর্ট দেয়। বাকি ৫ হাজার ৭৩৬টি পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট প্রদান করা হয়। রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের চুক্তি অনুযায়ী, বিনামূল্যে করোনা টেস্ট ও চিকিৎসা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১০ হাজার টেস্টের বিপরীতে রিজেন্ট প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ ছাড়া ভর্তি রোগীপ্রতি এক লাখ েেক আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা বাবদ বিল করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার শুধু জুন মাসে সরকারের কাছে চিকিৎসা বিল বাবদ পাঠানো হয় এক কোটি ৯৬ লাখ টাকার হিসাব। সেবার নামে এভাবেই অনৈতিকভাবে অর্থ আদায় করে রিজেন্টের চেয়ারম্যান শাহেদ।
মানুষের জীবন নিয়ে খেলার সাথে জড়িত আন্তর্জাতিকমানের ‘সুশীল’ প্রতারক শাহেদকে এখন পর্যন্ত আটক করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই বিশ্ব প্রতারক গ্রেফতার না হওয়ায় মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে, ঘুরপাক খাচ্ছে নানা সন্দেহ। যদিও সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের শীর্ষ ব্যক্তিরা বলে আসছেন, শাহেদ দেশেই আছে এবং শিগগির ধরা পড়বেন।
এ প্রসঙ্গে পুলিশের আইজিপি ড. বেনজির আহমেদ বলেন, শাহেদ দেশেই আছে। তাকে ধরা পড়তেই হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত শাহেদ গ্রেফতার না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত অভিযান চলবে।
গত সোমবার (৬ জুলাই) র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। পরীক্ষা ছাড়াই করোনার সনদ দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছিল তারা। র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত অন্তত ছয় হাজার ভুয়া করোনা পরীক্ষার সনদ পাওয়ার প্রমাণ পায়। একদিন পর গত মঙ্গলবার (৭ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশে র্যাব রিজেন্ট হাসপাতাল ও তার মূল কার্যালয় সিলগালা করে দেয়। রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে ওই দিনই উত্তরা পশ্চিম থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়।
এরই মধ্যে তার ব্যাংক হিসাব তলব করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিট)। করোনা টেস্টের নামে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া ও ভূতুড়ে বিল ধরিয়ে দিয়ে রোগীদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায়, মারধরসহ নানা অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালটির চেয়ারম্যান মো. শাহেদসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সোমবার গ্রেফতার হওয়া আট জন রয়েছেন। শাহেদসহ ৯ জন এখনো পলাতক রয়েছেন।
পূবপশ্চিম-এনই
Post Written by :
Original Post URL : https://ift.tt/38OtvxX
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD