এইচএসসির আবেদন ১০ প্রতিষ্ঠানে, দ্বাদশে ওঠানোর সিদ্ধান্ত কলেজের
নিজস্ব প্রতিবেদককরোনা মহামারীর কারণে বিলম্বে একাদশ শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আগামী ৯ আগস্ট। করোনা সংকটে স্বাভাবিক সময়ের প্রায় তিন মাস পিছিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরুর দিনক্ষণ নির্ধারণ করেছে শিক্ষা প্রশাসন। ৯ আগস্ট থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম চলবে বলে রোববার (১৯ জুলাই) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এতে বলা হয়, ভর্তিসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ঢাকা শিক্ষা বোর্ডর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ভর্তির কাজটি হবে। কোনো পরীক্ষা হবে না।
এদিকে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার শুধুমাত্র অনলাইনে ১০টি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করা যাবে। মোবাইল ফোনে এসএমএস’র মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটি রোববার ঘোষণা দিয়েছে, আগামী ৯ আগস্ট থেকে অনলাইনে ভর্তির আবেদন শুরু হবে। ১৫ সেপ্টেম্বর ভর্তির সব প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। এই সময়ের মধ্যে তিন ধাপে আবেদন ও ভর্তির জন্য মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করা হবে।
রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল খায়ের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরুর সময়সূচির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণীতে অনলাইন ভর্তির কার্যক্রম আগামী ৯ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। ভর্তির যাবতীয় তথ্য শিক্ষা বোর্ডের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে এক অনলাইন মিটিংয়ে রোববার এই সিদ্ধান্ত হয়। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক।
এ সময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘মেধাবী কিন্তু আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে যেন সমস্যা না হয় সেদিকে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে।’ তাছাড়া তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই হয়তো ভর্তির ফি একসঙ্গে দিতে পারবে না। সেক্ষেত্রে তারা যেন কিস্তিতে ভর্তি ফি দিতে পারে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে।’
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির প্রধান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘সম্পূর্ণ অনলাইনে চলবে আবেদন প্রক্রিয়া। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভর্তির সব প্রক্রিয়া শেষ করব। আবেদনের শেষ সময়সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তারিখ আজ সোমবার বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষা বোর্ড জানিয়ে দেবে।’
গত বছরের মতো এবারও তিন ধাপে আবেদন ও ভর্তির জন্য মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তিন দফায় আবেদনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। তিন ধাপে তালিকা প্রকাশ করা হবে। এসব প্রক্রিয়া শেষ করা হবে ১৫ সেপ্টেম্বর।’
করোনাকালে সাধারণ ছুটির মধ্যে গত ৩১ মে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়, কিন্তু মহামারী পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি না হওয়ায় একাদশে ভর্তি প্রক্রিয়া পিছিয়ে যায়। এসএসসি ও সমপর্যায়ের পরীক্ষায় এবার পাসের হার ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ, গত বছর ছিল ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। এক বছরেই সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০ হাজার ৩০৪ জন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন।
এবার ২০ লাখ ৪০ হাজার ২৮ জন শিক্ষার্থী মাধ্যমিকের ‘এসএসসি ও সমপর্যায়ের’ পরীক্ষায় অংশ নেয়, তাদের মধ্যে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। তারাই এখন একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির অপেক্ষায় রয়েছে। প্রতিবছর ফল প্রকাশের এক সপ্তাহ পরে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। এবার সেভাবেই শিক্ষা বোর্ডগুলো ৬ জুন থেকে অনলাইনে কলেজ ভর্তি শুরু করার প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় আটকে যায় প্রক্রিয়া।
ভর্তি নীতিমালায় যা থাকছে
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এ বছর একাদশ শ্রেণীতে ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধা, প্রবাসী ও বিকেএসপি কোটা বহাল থাকছে। ভর্তি প্রক্রিয়ায় জটিলতা ও ব্যয় কমাতে এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। শুধু অনলাইনে সর্বোচ্চ ১০টি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। এবার ভর্তিতে ফি, আবেদন ফি ও ভর্তি ফি কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। ভর্তির সময় পরিবর্তন হলেও প্রকাশিত নীতিমালা অনুসারেই শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।
নীতিমালায় একাদশে বিশেষ কোটা হিসেবে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, দশমিক পাঁচ শতাংশ বিকেএসপি এবং দশমিক পাঁচ শতাংশ প্রবাসী কোটা বহাল থাকছে। এবার ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার এমপিওভুক্ত কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার টাকা। ঢাকার মধ্যে আংশিক এমপিওভুক্ত ও এমপিওবিহীন প্রতিষ্ঠানের বাংলা মাধ্যম ভর্তির জন্য ৯ হাজার ও ইংরেজি মাধ্যমের ভর্তি ফি ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হবে। সব প্রতিষ্ঠানের জন্য উন্নয়ন ফি ৩ হাজার টাকার বেশি করা যাবে না। প্রতিটি খাতে অর্থ আদায়ের ক্ষেত্রে রসিদ প্রদানের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া মফস্বল ও পৌর এলাকার জন্য ভর্তি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার টাকা, পৌর জেলা সদরে দুই হাজার টাকা, ঢাকা ব্যতীত অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় তিন হাজার টাকার বেশি নেয়া যাবে না।
নীতিমালায় অনুসারে বিগত বছরের ন্যায় এবারও অনলাইনে ১০টি কলেজ বা মাদ্রাসায় আবেদন করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এর জন্য নেয়া হবে ১৫০ টাকা। ফলে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এসএমএস করে ভর্তির জন্য আবেদন আর করা যাবে না। আগে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে প্রতিটি আবেদনের জন্য ১২০ টাকা ফি নেয়া হতো।
নীতিমালায় পরিবর্তনের বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেছেন, ভর্তি নীতিমালায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। কারণ এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়ায় নানা অনিয়ম ও ভোগান্তি তৈরি হয়। অনেক কলেজ কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীর অনুমতি ছাড়াই আবেদন করে ফেলে। পরে সব সমস্যা নিয়ে সবাই শিক্ষা বোর্ডে এসে নানা ঝামেলা করে। এ সমস্যা সমাধানে এবার মোবাইলে আবেদন প্রক্রিয়া বাতিল করে শুরু অনলাইনে আবেদনের কথা বলা হয়েছে।
গত ৮ মার্চ দেশে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার পর গত ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কয়েক দফায় দুই মাস সাধারণ ছুটির পর অফিস, কারখানা ও যানবাহন চালু এবং কিছু বিধিনিষেধ তুলে দেয়া হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়ানো হয়েছে ৬ আগস্ট পর্যন্ত।
এদিকে বর্তমানে যারা উচ্চমাধ্যমিকে পড়ছে তাদের একাদশ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে ওঠানোর সিদ্ধান্ত কলেজগুলোই নেবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেন, একাদশ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করার বিষয়টি কীভাবে করবে এটি কলেজের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখানে বোর্ডের কোনো হস্তক্ষেপ থাকে না। কাজেই এটি তারা (কলেজগুলো) তাদের নিয়মেই করবে।
বন্ধ না হলে এখন যারা উচ্চমাধ্যমিকে পড়ছে তাদের দ্বাদশ শ্রেণিতে ওঠার কথা ছিল। কিন্ত একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে ওঠার বর্ষ পরীক্ষা নিতে পারেনি অধিকাংশ কলেজ। বিচ্ছিন্নভাবে দু-একটি কলেজ গত মার্চে এই পরীক্ষা শুরু করা বা শেষ করলেও বেশির ভাগ কলেজেই তা পারেনি। ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বাদশ শ্রেণিতে ওঠানো যায়নি। যদিও কোনো কোনো কলেজ পরীক্ষা ছাড়াই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বেশির ভাগ কলেজই আনুষ্ঠানিকভাবে পদোন্নতি না দিলেও ওই সব শিক্ষার্থীদের এখন দ্বাদশ শ্রেণিতে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে।
ঢাকা কলেজের একজন শিক্ষক বলেন, গত মার্চে তাদের কলেজে বর্ষ পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। কিন্তু শেষ করা যায়নি। এখনো কাউকে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা না হলেও ওই সব শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে দ্বাদশ শ্রেণির। ঢাকা সিটি কলেজ দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য নোটিশ দিয়েছে। অবশ্য এই কলেজে বর্ষ পরীক্ষা হয়েছিল।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএস
Post Written by :
Original Post URL : https://ift.tt/2E319op
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD