সাবরিনার সম্পৃক্ততার কথা পুলিশকে জানান স্বামী আরিফ
করোনাভাইরাস পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ ও ভুয়া ফলাফল দেওয়ার ঘটনায় ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর সম্পৃক্ততার কথা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছেন তার স্বামী আরিফুল হক চৌধুরী।
নিজস্ব প্রতিবেদককরোনাভাইরাস পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ ও ভুয়া ফলাফল দেওয়ার ঘটনায় ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর সম্পৃক্ততার কথা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছেন তার স্বামী আরিফুল হক চৌধুরী।
তারপরই তথ্যপ্রমাণ সাপেক্ষে সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে গণমাধ্যমকে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. মাহমুদ খান।
তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আরিফ দাবি করেন, করোনার নমুনা পরীক্ষার জালিয়াতির ঘটনায় সাবরিনাসহ চারজনকে চাকরিচ্যুত করেন তিনি। তবে একজন সিইও হয়ে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানকে চাকরিচ্যুত করতে পারেন কি না, সে ব্যাপারে জানতে চাইলে কোনো উত্তর দিতে পারেননি আরিফ।
নমুনা পরীক্ষা না করেই ভুয়া ফল দেওয়ার ঘটনায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেকেজির সিইও আরিফসহ চারজনকে আগেই গ্রেপ্তার করা হয়। আর রোববার (১২ জুলাই) গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকে।
পুলিশ কর্মকর্তা মো. মাহমুদ খান বলেন, ওভাল গ্রুপের সিইও আরিফুল চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় জানান, করোনার নমুনা পরীক্ষার জালিয়াতির সঙ্গে আমাদের অফিসের কিছু লোক জড়িত ছিল। যখন আমি বিষয়টি জানতে পারি, তখন তাদের আমি টার্মিনেট করেছি। তারা হলেন, আমার ওয়াইফ (সাবরিনা আরিফ চৌধুরী), যিনি চেয়ারম্যান ছিলেন, তাকে আমি টার্মিনেট করেছি।
কিন্তু সিইও হয়ে কীভাবে চেয়ারম্যানকে টার্মিনেট করলেন? পুলিশ কর্মকর্তার এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি আরিফ।
পুলিশ কর্মকর্তা মাহমুদ খান আরও বলেন, চিকিৎসক সাবরিনা বারবারই অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার ফলাফল জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত নন। কিন্তু আরিফুল চৌধুরীসহ অন্যরা জানিয়েছেন, জেকেজির সবকিছু জানতেন চিকিৎসক সাবরিনা আরিফ চৌধুরী। তিনি বলার চেষ্টা করছেন, তিনি জেকেজির চেয়ারম্যান নন। কিন্তু তিনিই যে জেকেজির মুখপাত্র, সেটি সবাই জানেন। তিনি নিজে ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রচারণা চালিয়েছেন। কথা বলেছেন। আর তিনি যে জেকেজি থেকে বেরিয়ে গেছেন, এমন কোনো পদত্যাগপত্র তো তিনি জমা দেননি। ওভাল গ্রুপ ও জেকেজি হেলথ কেয়ার কোম্পানির কাগজপত্র জব্দের চেষ্টা করা হচ্ছে।
করোনার নমুনা সংগ্রহ ও ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে গত ২৩ জুন জেকেজি হেলথ কেয়ারের কর্মচারী হুমায়ুন কবির ও তার স্ত্রী তানজিনা পাটোয়ারীকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও থানা-পুলিশ। পরের দিন ২৪ জুন হুমায়ুন কবির ও তানজিনা ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে হুমায়ুন কবীর জেকেজি হেলথ কেয়ারে চাকরি করার সময় কীভাবে করোনার নমুনা সংগ্রহ করা এবং ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করেছেন, সে ব্যাপারে সবিস্তারে তুলে ধরেন। হুমায়ুন বলেছেন, আরিফুল চৌধুরীর নির্দেশেই জেকেজি হেলথ কেয়ারের অফিসে বসে করোনার ভুয়া রিপোর্ট বানাতেন।
তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন জানান, জেকেজির অফিস থেকে জব্দ করে করোনার নমুনা পরীক্ষার ফলাফল যে ভুয়া, সেটি আমরা নিশ্চিত হয়েছি। ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়াটিভ (আইদেশি) ল্যাবটি আমাদের জানিয়েছে, জেকেজি যে নমুনার পরীক্ষা ফলাফল দিয়েছিল, এমন কোনো ফলাফল তারা দেননি। জেকেজি জালিয়াতি করে ভুয়া পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছে।
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। কোনো আর্থিক লেনদেন না করার শর্তে শুধু নমুনা সংগ্রহ করার জন্য জেকেজি হেলথ কেয়ারকে অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অনুমোদনের পর নারায়ণগঞ্জ, ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনসসহ অন্তত ৪৪টি স্থানে বুথ স্থাপন করে করোনার নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করে। প্রথম কিছুদিন বুথের মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহ করলেও পরে প্রতিষ্ঠানটি হোম সার্ভিসের নামে ব্যবসা শুরু করে।
তেজগাঁও বিভাগের সহকারী কমিশনার মাহমুদ খান জানান, নমুনা সংগ্রহ ও ভুয়া ফলাফল দেওয়ার বিষয়টি আরিফুল চৌধুরী কনফিডেন্টলি করেছেন। আরিফুলরা চিন্তা করছেন, আমরা বুথের মাধ্যমে পুলিশকে সেবা দিচ্ছি। বিভিন্ন বড় বড় জায়গায় সেবা দিচ্ছি। আমাদের কেউ জিজ্ঞাসাবাদ করবে না। প্রথম কিছুদিন জেকেজি নিয়ম মেনে নমুনা সংগ্রহ করলেও পরে তারা ব্যবসা শুরু করে। করোনার নমুনা সংগ্রহের কাজটি চিকিৎসক সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর মাধ্যমে পায় জেকেজি। আগে আরিফুল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ব্যবসা করতেন।
২০১৫ সালে সাবরিনাকে বিয়ে করার পর আরিফুল স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন ব্যবসায় আসেন। ওভাল গ্রুপের আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আছে। তাদের একটি বুটিক হাউসও আছে। করোনার এই সময়ে তাদের অন্য কাজ নেই। শুধু জেকেজি হেলথ কেয়ারের ওপর নির্ভর করেই সব চলছে।
করোনার নমুনা পরীক্ষার জালিয়াতির মামলায় আদালতের অনুমতি নিয়ে জেকেজির সিইও আরিফুলসহ চারজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে আরিফুল ও জেকেজির প্রধান সমন্বয়ক সাঈদ চৌধুরী করোনার নমুনা সংগ্রহ ও ভুয়া ফলাফল দেওয়ার ব্যাপারে তথ্য দেন। দুজনের কেউ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তবে জেকেজির গুলশানের কার্যালয় থেকে আরিফুলের দেখানো মতে কয়েকটি কম্পিউটার ও করোনা পরীক্ষার ফলাফলের কাগজ জব্দ করে পুলিশ।
প্রতারণার আরও তিনটি মামলা
করোনার নমুনা পরীক্ষায় জালিয়াতি ছাড়াও জেকেজি হেলথ কেয়ারের সিইও আরিফুল চৌধুরীর নামে আরও তিনটি প্রতারণার মামলা আছে। গত মাসে দুটি মামলা করা হয়। এর আগে ২০১২ সালে রমনা থানায় একটি প্রতারণা মামলা হয়।
করোনার নমুনা সংগ্রহের কাজে মোহাম্মদপুরের তোতা মিয়া নামের এক ব্যক্তির প্রতিষ্ঠান থেকে ভাড়ায় ১২টি ল্যাপটপ নেয় জেকেজি হেলথ কেয়ার। ভাড়ায় কম্পিউটার নেওয়া হলেও টাকা পরিশোধ করেনি জেকেজি হেলথ কেয়ার, ল্যাপটপও ফেরত পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। এ নিয়ে তোতা মিয়া গত ২৫ জুন আরিফুল চৌধুরীকে আসামি করে তেজগাঁও থানায় মামলা করেছেন।
একইভাবে মেহেদী হাসান নামের এক ব্যক্তি আরিফুল চৌধুরীর নামে আর্চওয়ে ভাড়ার টাকা না পেয়ে মামলা করেছেন।
পূর্বপশ্চিম-এইচএইচ
Post Written by :
Original Post URL : https://ift.tt/38QGjnj
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD