দূতাবাস পাপুলের মনের আশা পূরণ করতো!
পূর্বপশ্চিম ডেস্কমানব ও অর্থপাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেপ্তার লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে সহায়তা করার অভিযোগ কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশি প্রবাসীদের কেউ তার অপকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুললে আর রক্ষা নেই। কিংবা কারো সঙ্গে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব হলে তাদের উপর নির্মম নির্যাতনের পর করতেন দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা। কুয়েতস্থ বাংলাদেশি দূতাবাসের মাধ্যমে অভিনব কৌশলে তাকে কুয়েত ছাড়া করা হতো।
অভিযোগ রয়েছে, রাষ্ট্রদূতের মদতে দূতাবাস পাপুলের দেয়া নাম অনুযায়ী প্রবাসীদের কালো তালিকাভুক্ত করতে চিঠি দিতো কুয়েত সরকারকে। বিশ্বে যেখানে দেশের মানুষের জন্য দূতাবাসগুলো লড়াই করে, সেখানে বাংলাদেশ দূতাবাস নিজ দেশের মানুষকে কালো তালিকাভূক্ত করতে কুয়েত সরকারকে চিঠি দেয়।
গত দেড় বছরে কমপক্ষে এমন ১৫ জনকে কালো তালিকাভুক্ত করে দেশে পাঠিয়েছে দূতাবাস। এর মধ্যে ৮ জনের নাম ও প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে কামরুল হাসান বাবুল, মিজানুর রহমান, এহসানুল হক খোকন, আবদুস সাত্তার, সফিকুল ইসলাম সফিক, জাফর আহম্মেদ, আব্দুস সাত্তার ও আরেক শ্রমিক। তাদের প্রথম তিনজন গণমাধ্যমকর্মী ও বাকি পাঁচজন ব্যবসায়ী। অভিযোগ রয়েছে, ব্যবসায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার ও তার অপকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলায় তাদের এই কালো তালিকাভুক্ত করতে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশস্থ কুয়েত দূতাবাস।
কুয়েতে প্রবাসী সূত্রে জানা যায়, গত বছর নভেম্বরে কুয়েত মসজিদ কমপ্লেক্স পরিচ্ছন্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং জাতীয় বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাজের দরপত্র আহ্বান করে কুয়েত সরকার। তিনবছর চুক্তিতে মসজিদ কমপ্লেক্স কাজের জন্য প্রায় ১ হাজার এবং বিমান চলাচল কাজের জন্য ৩০০ কর্মী নিয়োগ দেয়া হবে। এই উন্মুক্ত দরপত্র অহ্বান করলে অংশ নেয় দুই দেশের যৌথ মালিকানা কোম্পানি জেএম গ্রুপ অব কোম্পানি কুয়েত। এ প্রতিষ্ঠানের অন্যতম মালিক ও প্রবাসী বাংলাদেশি জাফর আহম্মেদকে সরে আসার জন্য চাপ দিতে থাকে পাপুল। কিন্তু তারপরও তিনি দরপত্রে অংশ নেন। এ ঘটনার এক মাস পর জাফর আহম্মেদকে কুয়েত সিআইডিতে তলব করা হয়। সিআইডি ডেকে তাকে জানান, তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে মামলা আছে। তাকে দেশে ফিরে যেতে হবে। বাংলাদেশ দূতাবাস তার মামলার বিষয়টি জানিয়ে চিঠি দেয়। পরে তাকে ২১ দিন আটকে রেখে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। অথচ বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। জাফর আহম্মেদ বলেন, পাপুল ব্যবসায়ীকভাবে আমার সাথে না পেরে রাষ্ট্রদূতকে ব্যবহার করেছে।
শহিদ ইসলাম পাপুলের অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও অনিয়মের খবর প্রকাশের জন্য বাংলাদেশি প্রবাসী সাংবাদিকদের একটি অংশের ওপর দূতাবাস ও পাপুল বরাবরই ক্ষিপ্ত ছিলেন। শুধু তাই নয়, পাপুলের ব্যবসায়ীক প্রতিদ্বন্দ্বীর ওপর ক্ষিপ্ত ছিলো দূতাবাস।
কুয়েতে গ্রোসারি ব্যবসায়ী সফিকুল ইসলাম। দীর্ঘ ২৫ বছর ছিলেন কুয়েতে। তার সঙ্গে প্রত্যক্ষ কোনো দ্বন্দ্ব ছিলো না দূতাবাস বা পাপুলের। কিন্তু বিস্মিল্লাহ ট্রাভেলসের মালিক আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে পাপুলের ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এর সূত্র ধরেই সফিকুল ইসলাম, আব্দুস সাত্তার, বাংলাদেশি আরেক শ্রমিককে দেশে পাঠিয়ে দেয় দূতাবাস।
সফিক বলেন, পাপুলের সঙ্গে আমার চেনা-পরিচয় ছিল। এর বাইরে কিছু ছিল না। অথচ সাত্তারের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক তাই আমাকে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। সাত্তারের অফিসে একদিন আড্ডা দিচ্ছিলাম। এ সময় সিআইডি’র লোকজন বিনা কারণে আমাদের ধরে নিয়ে যায়। এখনো আমার পরিবার কুয়েতে অথচ আমি দেশে।
দূতাবাসের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কালো তালিকাভুক্ত করে প্রবাসীদের সিআইডি’র মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালাম বলেন, এটা আমি করতে পারি না। আমি সিআইডিকে কখনো এমন অভিযোগ করিনি। আমি সর্বোচ্চ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠাতে পারি। কালো তালিকাভুক্ত কয়েকজনের নাম বললে, তিনি তাদের চিনেন না বলে জানান।
পূর্বপশ্চিমবিডি/জেডআই
Post Written by :
Original Post URL : https://ift.tt/39tAJI5
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD