সাহেদের মুখোমুখি সাবরিনা
নিজস্ব প্রতিবেদকজোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ারের (জেকেজি) করোনা টেস্ট কেলেঙ্কারির তদন্ত করতে গিয়ে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে ডিবি পুলিশ। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী আরিফুল হক চৌধুরী করোনার নমুনা সংগ্রহে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তি করলেও জেকেজির ট্রেড লাইসেন্স তার এক বোনের নামে বলে জানতে পেরেছে ডিবি। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে মার্চে চুক্তি করলেও গত জুনে জমা দেওয়া হয় ওই লাইসেন্সটি। তাতেও আবার পুরোনো তারিখ বসানো হয়েছে। পরে সেটি আরিফের স্ত্রী জেকেজির চেয়ারম্যান (চেয়ারপারসন) ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী প্রভাব খাটিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জমা দেন।
তদন্ত-সংশ্নিষ্ট সূত্র বলছে, আরিফ ও সাবরিনাকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি তাদের মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপসহ নানা ডিভাইসেও প্রযুক্তিগত তদন্ত চালানো হয়েছে। এসব ডিভাইসে নানা অপরাধের প্রমাণ মেলার পাশাপাশি অনেক প্রভাবশালীর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রক্ষার তথ্য পাওয়া গেছে। নানা স্তরের এসব প্রভাবশালী আরিফ-সাবরিনার করোনা টেস্ট কেলেঙ্কারির বিষয়ে জানতেন কিনা- তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
আরিফের বোনের নাম প্রকাশ না করে সূত্র জানায়, জেকেজির ট্রেড লাইসেন্সধারী আরিফের বোনকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এর বাইরে আরিফ-সাবরিনার অপরাধে সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়ায় আরও কয়েকজনকে আইনের আওতায় নেওয়ার চেষ্টা চলছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তেজগাঁও বিভাগের ডিসি গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, চার দিনের রিমান্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ায় রোববার আরিফকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ সোমবার সাবরিনাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, রিমান্ডে জেকেজির করোনা কেলেঙ্কারির বিষয়ে অনেক তথ্য মিলেছে। এসব তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।
সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, আরিফকে কারাগারে পাঠানো হলেও ডিবি আদালতে তার জবানবন্দি নেওয়ার আবেদন করেনি। আজ সাবরিনার জবানবন্দি নেওয়ার আবেদন করার সম্ভাবনাও কম। তবে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্নেষণ করে আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তাদের গ্রেপ্তার করে হেফাজতে নিতে পারলে জেকেজি কেলেঙ্কারির অনেক অজানা তথ্য বের হতে পারে। এরপর আরিফ ও সাবরিনাকে আবারও হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করা হতে পারে। সব তথ্য হাতে পাওয়ার পর আরিফ ও সাবরিনার জবানবন্দির বিষয়ে চিন্তা করা হবে।
আরিফ ও সাবরিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট ডিবি সূত্র জানায়, তারা অনেক প্রভাবশালীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন। তারা ভেবেছিলেন, তাদের দুর্দিনে ওই ব্যক্তিরা তাদের পাশে দাঁড়াবে। ওই ব্যক্তিদের জোরেই আরিফ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দাপট দেখাতেন। সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় পিপিই, গগলস বা গ্লাভস দিতে না পারলেও আরিফ তাদের প্রভাবেই জেকেজির জন্য এসব সামগ্রী প্রয়োজনের তুলনায় বেশি নিতে পেরেছিলেন। পরে এসব সুরক্ষাসামগ্রী তিতুমীর কলেজ থেকে উদ্ধার করা হয়। সাবরিনা প্রভাবশালীদের সঙ্গে তার একজন রোগীর নামে নিবন্ধন করা সিমকার্ড দিয়ে কথা বলতেন। তাছাড়া ফেসবুক মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমেও তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও চিকিৎসকদের একটি সংগঠনের প্রভাবশালী কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন।
ডিবি সূত্র জানায়, জেকেজির করোনার ভুয়া সনদ বিক্রি করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন সাবরিনা ও আরিফ জিজ্ঞাসাবাদে। তবে এই অপকর্মের জন্য তারা পরস্পরকে দায়ী করেছেন। সাবরিনা দাবি করেছেন, তিনি আরিফের অবৈধ কাজের বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানিয়েছিলেন। আবার আরিফ বলেছেন, তার এই কাজের টাকা সাবরিনা নিয়মিত পেতেন। হৃদরোগ হাসপাতালে সাবরিনার কর্মস্থলে একটি অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করেন তিনি। তখন তার সঙ্গে দূরত্বের সৃষ্টি হয়। এর পরই সাবরিনা নিজে ভালো সেজে বিভিন্ন জায়গায় তার নামে অভিযোগ করতে থাকে।
এদিকে করোনাভাইরাস টেস্ট জালিয়াতির মামলায় রিমান্ডে থাকা রিজেন্ট হাসপাতাল কেলেঙ্কারির হোতা মোহাম্মদ সাহেদের মুখোমুখি করা হয়েছিল সাবরিনাকে। দু'জনের অপরাধ অভিন্ন বলে তাদের মুখোমুখি করা হয় বলে ডিবি সূত্র জানায়। তবে তারা একে অপরকে চেনেন না বলে তখন দাবি করেছেন। যদিও তারা যে পূর্ব পরিচিত সেই তথ্য ডিবির হাতে রয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন জানিয়েছেন, গত শনিবার সাবরিনা ও সাহেদকে কিছুক্ষণের জন্য মুখোমুখি করা হয়েছিল।
করোনাভাইরাসের পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া, সরকারের কাছে বিল দেওয়ার পর আবার রোগীর কাছ থেকেও অর্থ নেওয়াসহ রিজেন্ট হাসপাতালে নানা অনিয়মের খবর সম্প্রতি প্রকাশ্য হয় র্যাবের অভিযানের মধ্য দিয়ে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে আসা এবং টেলিভিশনে আলোচনা অনুষ্ঠানে মুখ দেখানো রিজেন্টের চেয়ারম্যান সাহেদকে ১৫ জুলাই র্যাব গ্রেপ্তার করে।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. সাবরিনাকে গত ১২ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয়। তিনিও টেলিভিশনে মুখ দেখাতেন স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠানে। সাবরিনার স্বামী আরিফুল চৌধুরী ছিলেন ওভাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার- সংক্ষেপে জেকেজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা না করিয়ে অর্থের বিনিময়ে ভুয়া সনদ দেওয়ার অভিযোগে আরিফুলকে গ্রেপ্তারের পর তার স্ত্রী সাবরিনাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আরো পড়ুন: সাহেদের সঙ্গে নিয়মিত পার্টি করতেন ডা. সাবরিনা
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএস
Post Written by :
Original Post URL : https://ift.tt/2Cwabd1
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD