ষোড়শী ফটোগ্রাফ
শাহরিয়ার রহমান‘আচ্ছা আপনি কি আমাকে এখনো মিস করেন?’ প্রশ্নকর্তা নাওশীর আলম সাহেবের প্রাক্তন স্ত্রী। নাম সেজুতি। বিচ্ছেদের নয় বছর পর আজই প্রথম দেখা। দেখা হওয়াটা নিতান্তই দূর্ঘটনা। হবার কোনো কথা ছিল না। সেজুতি টাঙ্গাইল যাচ্ছিল। হঠাৎ করেই ময়মনসিংহ এসে গাড়িটা খারাপ হয়ে গেল। ঠিক হতে ঘণ্টা চারেক সময় লাগবে। সময় কাটানোর জন্য টাউন হলের এদিক কোনো হোটেল রেস্টুরেন্ট খোঁজছিলেন। একটা মোটামুটি মানের রেস্টুরেন্টে ঢুকে দেখলেন নাওশীর আলম সাহেব বেশ আয়েসি ভঙ্গিতে ম্যাগাজিন পড়ছিলেন। ঐ মুহুর্তে নাওশীর আলমের চোখ সেজুতিকে এড়িয়ে যেতে পারে নি। সেজুতি অবশ্য এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে সেজুতি বলে উঠলো, আরে, আপনি? নাওশীর আলম সাহেবকে তখন উচ্ছ্বসিত মনে হয় নি। ইশারাতে বুঝিয়ে দিলেন হ্যাঁ আমি।
কি হল, আপনি কি আমাকে এখনো মিস করেন? নাওশীর আলম হালকা দাঁত বের করে হেসে বললেন, হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন? সেজুতিকে এখন বিব্রত মনে হচ্ছে। এই প্রশ্ন সে কেন করলো? আসলে, আপনি যখন ওয়েটারকে টাকা দিচ্ছিলেন তখন আপনার মানি ব্যাগে মানে আমার ছবি দেখেছি। তাই একটু আগ্রহ করেই প্রশ্নটা করলাম।
সেজুতি ভাবছে ধ্যাঁত শুধু শুধু প্রশ্নটা করলা কেন? মিস করলে যতটানা কষ্ট পেত এখন বলতে গেলে তার থেকে আরো বেশি কষ্ট পাবে। তারপর সারাদিন মানুষটা এটা নিয়েই ভাববে।
- ব্যাপারটা তোমাকে বলি।আসলে বাসায় তোমার স্মৃতি বললে আমার মানি ব্যাগের সাদাকালো তোমার ছবিটাই আছে। অন্যসব গুলো তুমি সেই কালবৈশাখীর রাতেই নিয়ে চলে গেছে। আমাদের মেয়ে এখনো তোমাকে বা এই ছবি দেখেন নি।তোমাকে চেনেও না। ভেবেছি জীবনের কোনো একটা সময়ে মেয়েকে এটা দেখাবো। মেয়ে তো আমাকে দেখেছেই সেই ছোট বেলায়। - দূর্ভাগ্য হল যে তার কোনো স্মৃতিই মনে নেই। বলা যেতে পারে তার মাকে সে এখনো দেখে নি। " সে কি জানে তার মা কোথায়?" - হ্যাঁ জানে।সে জানে তুমি ওপারে।
সেজুতি খানিকটা নিরব হয়ে গেল। কথাটা শুনে মনও খারাপ হয়েছে। তবে কথাটার যুক্তি আছে। ওপারে থাকা মানুষগুলোর কথা মানুষ একদিন দুদিন মনে করে।কিন্তু চোখের আড়ালে থাকা মানুষ গুলোর কথা প্রায়ই মনে হয়। আর ব্যাপারটা যদি এমন হয় তার মা রাতের আঁধারে পেছনের দরজা দিয়ে অন্য কারো হাত ধরে চলে যাওয়া। তাহলে সেই মানুষটার কথা মনে না করা অনেক ভাল।
সেজুতি একটু চাপা হাসি দিয়ে বলল,একদম সঠিক কথা বলেছ। খুব ভাল কথা। এবার নাওশীর সাহেব আর সেজুতির বিচ্ছেদের ব্যাপারটায় আসা যাক। তখন বসন্তকাল। ফুলে ফলে গাছগাছালি ভরে থাকার কথা। কোকিলের কুহু কুহু শব্দ, কৃষ্ণচূড়া ফুলে ভরপুর থাকার কথা। কিন্তু তখন কোনো কোকিল কুহু করে গান করেনি। কৃষ্ণচূড়া গাছে ফুল ফুটে নি। সেই বসন্তে রাতের আকাশে চাঁদ ছিল না।ছিল না এক মুঠো জোছনা। ঠিক এমনি একটি সময়ে বিয়ে হয় তাদের। সেজুতির বয়স সবে ষোল।নিতান্তই অল্পবয়সী মেয়ে। অবশ্য নাওশীর আলমের বয়স তখন ছাব্বিশ সাতাশের মতো হবে। পদার্থবিজ্ঞানের মতো একটা রসকসহীন বিষয়ে পিএইচডি করছিল জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ে। নাওশীরের পরিকল্পনা ছিল একদম পিএইচডির পাঠ চুকিয়ে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে জয়েন করে বিয়ে করবে।
নাওশীরের বাবা ছিলেন ময়মনসিংহের জজকোর্টের একজন বিচারপতি। অর্ডার অর্ডার টাইপ মানুষ।যা বলবে তাই শুনতে হবে। তিনি একবার চিঠি দিয়ে বললেন দ্রুত বাংলাদেশে আসতে। সঙ্গে কমপক্ষে দুমাসের ছুটি নিয়ে। দেশে আসা যাবে কিন্তু দু মাসের ছুটি একটু বেশি যায়। প্রফেসরকে বিয়ে করবে কথা বলে দুমাসের ছুটি নিয়ে দেশে ফিরে। দীর্ঘ ছুটি নিয়ে ব্যাপারটা নাওশীর বুঝতে পেরেছিল।
একদিন সকালে নাওশীর তাদের ময়মনসিংহের বাসার বারান্দায় কফির মগ হাতে দাড়িয়ে আছে। নাওশীরের বাবা গাজী সালাউদ্দীন সাহেবও বারান্দায় আসলেন। তাদের বাসান্দাটা বেশ বড়। তিনি বারান্দাতে রাখা ইজি চেয়ারটাতে বসে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বসলেন। বাবা, আসসালামু আলাইকুম? কখন বারান্দায় আসলে লক্ষ্য করিনি। তিনি গম্ভীর ভঙ্গিতে বললেন, তাতো করবেই না। দিনদিন তোমার খামখেয়ালিপনা ভাব প্রকর হচ্ছে। বিদেশে কিভাবে পিএইচডি করছ জানি না। ভাবছি তোমাকে একটা বিয়ে দিয়ে দিব। কি বল? - আমি কিছু বলি না বাবা। তুমি একটা হাঁদারাম। তোমার কি কোনো পছন্দের মেয়ে আছে? থাকলে বলো? - না বাবা। তোমার মতো হাঁদারাম মার্কা ছেলের সাথে কোন মেয়ে প্রেম করবে? তুমি কি কখনো প্রেমের কবিতা পড়েছ বা লিখ নি। তবে আমার এক বন্ধুর মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে দিব ভাবছি। গাজী সালাউদ্দীন সাহেব কথা থামিয়ে পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটি সাদাকালো ফটোগ্রাফ নাওশীরের দিকে এগিয়ে দিলেন। এ্যাই যে দেখো। পছন্দ না হবার মেয়ে নয়। নাম টা যেনো কি? ভুলে গেছি। মাথায় শুধু আইনের ধারা ঘুরপাক খায়। আচ্ছা যাক গে নাম বড় ব্যাপার না! তোমার পছন্দ হয়েছে কিনা বল? - আপনার পছন্দই আমার পছন্দ। কিসব মেয়েছেলেদের মতো কথা শিখেছ। এগুলো মেয়েদের মুখে মানায়।
সত্যি বলতে নাওশীরের বিয়ে করার কোনো ইচ্ছেই ছিল না। পার্সপোর্ট সাইজের সাদাকালো ফটোগ্রাফের ষোড়শী মেয়েটি আবেগ মেশানো মায়াকারা চোখের চাহনি থাকে পুরোপুরি মুগ্ধ করেছিল। সেই মুহুর্ত নাওশীরের অন্তরে একটি বিচিত্র প্রেম ধ্বনি বেজে উঠেছিল।
ধুমধাম করে বিয়ে হল। পুরো আকাশ আতশবাজির বিস্ফোরণে আলোকিত হচ্ছে। চাচাত খালাত বোনেরা নববধুর পাশে বসে রূপের প্রশংসায় ব্যস্ত। নাওশীর রুমে প্রবেশ করতেই খালাত-চাচাত বোনেরা একরাশি হেসে কিছু দুষ্টুযুক্ত কথা বলে বের হয়ে গেল।
নাওশীরের দরজা লাগাতে বেশ লজ্জা করছে।এই সময়টা মানিয়ে নেয়া বেশ কষ্টকর। ষোড়শী ফটোগ্রাফের সেই মেয়েটা এখন তার সামনেই বসা। ইচ্ছে হচ্ছে তাকে ভালবাসার কথা বলা। একটু আলিঙ্গন করা বা একটা চুমু খাওয়া। এসবের কিছুই হল না। নাওশীর বিছানায় গিয়ে বসল। আচ্ছা, সেজুতি তুমি এসএসসিতে কয়টাতে লেটার মার্ক পেয়েছ? - চারটাতে,গণিত বাংলা, ইতিহাস ও ভুগোলে। নাওশীর আলম মনে মনে ভাবছে বাসর ঘরে কোথায় ভালবাসার কথা বলব তা না বাসরঘরে পড়াশুনার কথা বলা শুরু করেছি।নিজে সারাজীবন বই কলমের সাতে কাটিয়েছে দেখে কি প্রেম ভালবাসা কি তাকে ত্যাগ করেছে। প্রায় সোয়া ঘন্টা ধরে চলা এসব অবাঞ্ছনীয় কথা বার্তা বলার পর সেজুতি বলল, আমার ঘুম পাচ্ছে। আপনি শুয়ে পড়ুন। মুহর্তের মধ্য লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ল সেজুতি। সাথে নাওশীর আলমও শুলো। কিন্তু তার ঘুম পায়নি। এপাশ ওপাশ করে কাটিয়ে দিল রাত্রি।
ছুটি প্রায় শেষের দিকে।সেজুতির ভিসা হয়ে গেছে। তবে নাওশীরের সাথে সেজুতির সম্পর্কটা এখনো সেভাবে হয়ে উঠে।অবশ্য নাওশীর তাকে আয়েশ করে এখনো ভালবাসার কথা বলতে পারছে না। কিন্তু সে বলতে চায়। কেন জানি বলতে গেলে হয়ে উঠে না। কিন্তু আড়ালে আড়ালে সেজুতিকে সে অনেক ভালবাসে তা চিন্তার বাইরে। এসব কি সেজুতি লক্ষ্য করে না? তাকে বেশিভাগ সময়ই নিরব থাকে। একাএকা বারান্দার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে থাকে। একাএকা খেতে বসে এইসব। নাওশীর ভাবে হয়তো কিশোরী বয়সের কারণে এখনো বিয়ের ব্যাপারটা সেভাবে বুঝে উঠতে পারে নি। তবে তার বাবার সঙ্গে বেশ প্রাণবন্তভাবে কথা বলে, রসিকতা করলে হাসে, টেবিলে আয়েশ করে খাবার বেড়ে দেয়। কিন্তু সেজুতি কেন বুঝতে পারছে না তার লুকোনো ছোট ছোট ভালবাসাকে।
সেজুতি জার্মানিতে এসেছে প্রায় ৬ মাস হলো।খুশির খবর যে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পিএইচডির এত চাপ যে বাসায় এসে সেজুতিকে ভালবাসার কথা বলতে ইচ্ছা করে না। সারাদিন সেজুতি বাসায় থাকে। মাঝে মধ্যে গভীর রাতে একা একা চাপা কান্না করে। চিঠি পড়ে পড়ে অনেক সময় কাঁদে। ব্যাপারটা তখনো নাওশীর বুঝে উঠতে পারে নি। এই ছয়মাসে তাকে এই বন শহরটা ঘুরাতে নিয়ে যায়নি। একদিন শুধু কাছের একটা পার্কে ঘুরতে গিয়েছিল। সেদিন সেজুতি অবাক চোখে এই প্রবাসের সৌন্দর্য উপভোগ করছিল।
অন্তঃসত্ত্বার সময় প্রায় শেষেরদিকে। সেজুতি জোরাজুরি করায় তাকে অবশেষে ছুটি নিয়ে নাওশীর তাকে দেশে ফিরলো। তাদের ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়েছে।মেয়ের নাম মায়ের নামের সাথে মিলিয়ে রাখা হল সাজিয়া। দেখতে একদম তার মায়ের মতো হয়েছে।
দাদা গাজী সালাউদ্দীনের দিনভর তার নাতনীকেই নিয়ে আছে। বাবা নাওশীর প্রথম বাচ্চার বাবা। মনে মনে বাবা হওয়ার ব্যাপারটা মেনে নিলেও কাজকর্মে বাচ্চা মেয়েকে আদর করতে পারছে। কেন এমনটা হচ্ছে সেও জানে না।
একমাস পর। রাতে কালবৈশাখী ঝড়ে তাদের বাসার সামনের গাছে প্রচুর আম পড়েছে। একদম ভোরে নাওশীর উঠে দেখে বাসায় সেজুতি নেই। সোফার উপরে একটা কাগজের উপর কলম রাখা।
চিঠিতে লিখা, আপনাকে প্রিয় বলতে পারছি না। কারণ ওরকম কোনো স্মৃতি নেই আপনাকে প্রিয় বলার।আমি চলে যাচ্ছি আমার পুরনো প্রেমিকের কাছে। আমাকে খোঁজার চেষ্টা করবেন না। আমাকে ক্ষমা করো এই রাতের আধারে পেছনের দরজা দিয়ে চল যাওয়ার জন্য। কারণ আমি সকালের আলোতে বাবার সামনে আসতে পারব না। আর সাজিয়াকে আপনি মানুষ করিবেন।
ইতি সেজুতি
নাওশীরের মন চরম ভাবে অবনতি হতে শুরু করল। সাজিয়াকে পালবে কে? একটু পরপর শুধু কান্না করে। অবশেষে তার এক খালা সাজিয়াকে পালতে শুরু করেন। নাওশীর এসব কষ্ট ভুলতে আবার জার্মানিতে চলে আসল। পিএইচডি এর প্রতি কোনো মন নেই। মিডটার্মে ফেল করেছে। একদিন আলমারিতে দরকারি কাগজ খোঁজতে গিয়ে একটা চিঠি চোখে পড়লো।
চিঠিটা সেজুতি প্রেমিকের আবেগ মেশানো ভালবাসার কথা লেখা। তখন নাওশীর আলম বুঝতে পেরেছে অল্পবয়সী মেয়েদের ভালবাসা কতটা তীব্র হয়। তখন এরকম ইঙ্গিত রয়েছে দেশে এসে কোনোভাবে তার প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়া। অল্পবয়সী প্রেমগুলী সত্যিই ভয়ঙ্কর হয়। তাদের যতই ভালবাসার কথা শুনানো যাবে প্রেমিকের প্রতি প্রেমিকার ভালবাসা ততই তীব্র হবে। যেটা সেজুতির প্রেমিক সঠিকভাবেই করতে পেরেছে। নাওশীর বুঝেছে যে অপ্রকাশিত ভালবাসার কোনো সৌন্দর্য নেই। একমাত্র প্রকাশিত ভালবাসার মধ্যেই রয়েছে সৌন্দর্য।
এরপর সে আর পিএইচডি এর পাঠ চুকাতে পারে নি।মেয়ে সাজিয়ার প্রতি ভালবাসা অনুভব করে দেশে ফিরল। যেন মেয়েটি তার ভালবাসা থেকে না দূরে থাকে। কারণ অপ্রকাশিত ভালবাসার মধ্যে সৌন্দর্য থাকেনা, প্রকাশিত ভালবাসাতেই থাকে সৌন্দর্য। তবে এটা সত্যি যে অপ্রকাশিত ভালবাসার সৌন্দর্য খুব মানুষই বুঝতে পারে।
আচ্ছা শোন সেজুতি, সাজিয়ার স্কুল ছুটি হবে। আমাকে একটু যেতে হবে। - আমি যদি যাই সমস্যা হবে? না সমস্যা হবে না - আসলে মেয়েটিকে অনেক দেখতে ইচ্ছে করে জানেন। কিন্তু........ কথা থামিয়ে দিয়ে নাওশীর বলল, চলো, স্কুল ছুটি বেশি দেরী নয়।
মুসলিম গার্লস হাই স্কুলের সামনে তারা দুজন দাড়িয়ে আছে। স্কুলের ছাত্রীরা একে একে বের হয়ে আসছে। সাজিয়াও আসছে। গলায় একটা ওয়াটার পট ঝুলানো। নাওশীর আলমকে দেখে একটা দৌড় দিয়ে চলে আসল। সাজিয়ে এসে বলল, বাবা আমি ফার্স্ট হয়েছি।এ ই যে রেজাল্ট কার্ড। সাজিয়া রেজাল্ট কার্ড বাড়িয়ে দিয়ে বলল, বাবা,এই আন্টি না কে? - কেউ না। আমার অফিসের কলিগ। কিন্তু ওনার চোখে পানি কেন? নাওশীর আলম তাকিয়ে দেখল আসলেই সেজুতির চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছে। - ওনার একটি মেয়ে হারিয়ে গিয়েছে তো এজন্য মা।
সেজুতি সাজিয়াকে বুকে টেনে নিল। কপালে ও গালে চুমু খেল। ব্যাগ থেকে একটা চকলেট বক্স আর আইসক্রিম বের করে দিয়ে বলল, নাও মা এগুলো। নাওশীর আলমের ইশারাতে সাজিয়া সেগুলো নিল।তবে প্রথমে সে নিতে চায় নি। আন্টি, আপনি কাঁদবেন না। দেখবেন একদিন ঠিকই আপনার মেয়েকে খুজে পাবেন।
নাওশীর আলম সাজিয়াকে বলল, মা তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো, আমি আসছি।
সাজিয়া খুশি মনে চলে আইসক্রিম খেতে খেতে গাড়ির দিকে যাচ্ছে। সেজুতি বললো, জানেন সাজিয়ার এই বয়সে আমি ঠিক এরকমই ছিলাম। আমার কাছে সেবয়সের একটা ফটোগ্রাফ আছে। নাওশীর মানি ব্যাগ থেকে সেজুতির সাদাকালো ষোড়শী ফটোগ্রাফটা এগিয়ে দিয়ে বললো, এটা নিয়ে নাও। এখন আর দরকার নেই। ইচ্ছে ছিল জীবনের কোন একটা পর্যায়ে ফটোটা দেখিয়ে বলতাম এটা তোমার মায়ের ছবি। কিন্তু এখন তার মাকে সে দেখেছে ফেলেছে। এটা এখন মূল্যহীন। - কিন্তু সে তো জানে না আমি যে তার মা। তুমি কি চাও সে জানুক এখন?
গাড়ি চলছে। সাজিয়া আইসক্রিম খাচ্ছে। নাওশীর আলম রেজাল্ট কার্ডে চোখ বুলাচ্ছে। বাবা, জানো। ঐ আন্টির নাকটা একদম আমার মতো? - তাই? হুঁ
সাজিয়া এখনো জানে না। ঐ মহিলাটা তার মা ছিল। একদিন নিশ্চয়ই জানবে। সেদিন হয়তো নাওশীর সাহেব একটা হাতপাতালে ভর্তি থাকবেন। নানান রোগ শরীরে বাসা বাঁধবে। সেদিন নাওশীর আলম বলবে, সাজিয়া মা, ঐ যে ছোটোবেলায় তুমি এক আন্টিকে দেখেছিলে না সেটিই তোমার মা। তখন তার রিয়েকশন কি হবে?
কি হবে? সাজিয়া কি তার মাকে খুঁজবে। হয়তো খুঁজবে। না হয় কোনো একদিন এই ছোট্ট দেশে নাগরিক ব্যস্ততার মাঝে আকস্মিকভাবে দেখা হয়ে যাবে। হয়তো নাওশীর আলম তখন ফেরারি পাখি হয়ে থাকবে ওপারে। যেমনটা ছোট্ট সাজিয়া তার মা সম্পর্কে জানে।
লেখক: শাহরিয়ার রহমান, শিক্ষার্থী, ক্যান্ট. পাবলিক কলেজ, ময়মনসিংহ।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএস
Post Written by :
Original Post URL : https://ift.tt/3fWK0L2
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD