শেখ বাবুল আহাম্মেদ হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ
বৈশ্বিক করোনাভাইরাসের সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গরিব ও অসহায়দের জন্য কাজ করছেন সরকারি জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার কর্মীরা। দিনরাত একাধারে ২৪ ঘন্টা আইনি সহায়তা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দিয়ে শহর থেকে গ্রামের তৃনমুল অসহায় ও গরীব মানুষের দুঃখ-দুর্দশা মুছে দেওয়ার সেবায় নিয়োজিত লিগ্যাল এইড কর্মীরা।
২০১০ সালে বিনামূল্যে অসহায় মানুষদের আইনী সেবা দিয়ে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে আইনমন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সরকারি আইনগত প্রদান সংস্থা (লিগ্যাল এইড)। রাজধানীর বেইলী রোডে অবস্থিত জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদানকারি সংস্থার অফিসসহ ৬৪টি জেলা কার্যালয়ে দিনদিনই বাড়ছে এ কর্মসূচির সফলতা ও সুফল ভোগী মানুষের সংখ্যা। ফলে বিনামুল্যে আইনি সহায়তা নিতে প্রতিদিন জাতীয় হেল্প লাইন কলসেন্টারের ‘১৬৪৩০’ নম্বরে বা সরাসরি যোগাযোগ করছেন বিচারপ্রার্থীরা। গ্রামের অসহায় দরিদ্র নারী-পুরুষ আইনি সহায়তা পেয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন। অসহায় নারীরা পুনর্বাসিত হয়ে ফিরে পাচ্ছেন তাদের সুখের দাম্পত্য জীবন ও সংসার।
গাজীপুরের কালিয়াকৈরের আয়েশা খানম সরকারি আইনগত প্রদান সংস্থার সহায়তা পেয়ে ফিরে পেয়েছেন হারানো দাম্পত্য জীবন। এখানকার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে আইনি সহায়তায় তিনি তার অধিকার ফিরে পেয়েছেন বলে জানান আয়েশা। এমনিভাবে খুলনার বৈঠাঘাটা উপজেলার ঝর্না বেগম তার স্বামীর সংসারে পুনর্বাসিত হয়েছেন। হাসি ফুটেছে তার মুখে। তিনি জানান, সরকারি আইনি সহায়তায় তার দুঃখের জীবন থেকে সুখের জীবনে ফিরে আসার সুযোগ করে দিয়েছে। এভাবে সারাদেশে হাজার হাজার অসহায় ও দরিদ্র মানুষকে বিনামুল্যে আইনী সহায়তা দিয়ে ভাগ্য বদলের কাজ করছে সরকারি জাতীয় আইনগত প্রদান সংস্থা।
আইনমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দশ বছরে পাঁচ লাখ ২১ হাজার ৪৮১ জন দরিদ্র-অসচ্ছল মানুষকে বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা প্রদান করেছে সরকার। ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে এ সহায়তা দেওয়া হয়। একই সময়ে সংস্থাটি ৩৮ কোটি ২৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা ৫২৫ জন দরিদ্র-অসহায় মানুষকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে দিতে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি প্রায় উনআশি হাজার আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল কারাবন্দিকে আইনি সহায়তা দেয়া হয়েছে। একই সময়ে সংস্থাটি ১ লাখ ৩০ হাজার ৪৯২ টি লিগ্যাল এইড মামলা নিষ্পত্তি করেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনাভাইরাসের সময় গত চার মাসে সাাড়ে ১৪ হাজার বিচার প্রার্থীকে আইনি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে প্রায় তিন কোটি টাকা অসচ্ছল দরিদ্র মানুষকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেওয়া হয়। নিস্পত্তি করা হয়েছে ৪ হাজার মামলা।
এ বিষয়ে জাতীয় আইনগত প্রদান সংস্থার পরিচালক (জেলা জজ) মো. সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘মহামারি করোনার সময় আমরা বসে নেই। এই দুঃসময়ে অসহায় মানুষকে আইনি সেবা দিতে ২৪ ঘন্টা হেল্পলাইন কলসেন্টার খোলা রাখা হয়েছে। তিন শিফটে আমাদের কর্মীরা সারাক্ষণ কাজ করছেন।’ তিনি বলেন, ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আইনি সেবা/পরামর্শ ও তথ্য সেবা দেওয়া হচ্ছে।
সংস্থাটি বিগত ১০ বছরে ৬৪টি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে, সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে, জাতীয় হেল্প লাইন কলসেন্টারের ‘১৬৪৩০’ নম্বরে ফোন কল এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম শ্রমিক আইনগত সহায়তা সেলের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত কারাগারে আটক ব্যক্তি, আইনজীবী নিয়োগে অসামর্থ ও নির্যাতিতরা বিনামুল্যে এ সহায়তা পেয়ে থাকেন।
আইন মন্ত্রী আনিসুল হকের নির্দেশনায় জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার জাতীয় হেল্প লাইন কলসেন্টার (১৬৪৩০) বর্তমানে করোনাভাইরাসের সময়ও ২৪ ঘন্টা খোলা রাখা হয়েছে। আইনি সহায়তা সহজ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে এ কল সেন্টার উদ্বোধনের পর থেকে আইনি পরামর্শ সেবা অব্যাহত রয়েছে।
এ ছাড়া ‘ডিজিটাল লিগ্যাল এইড’ সেবা প্রদানের জন্য ২০১৮ সালের অক্টোবরে ‘বিডি লিগ্যাল এইড’ নামে একটি অ্যাপ চালু করা হয়। এতে দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে অ্যাপটির সাহায্যে ঘরে বসেই বিনা খরচে আইনি সহায়তা পাচ্ছেন অসহায় ও অসচ্ছল বিচারপ্রার্থীরা।
Post Written by : Younus Ali
Original Post URL : https://ift.tt/32KBivw
Post Come trough : Nachole News | নাচোল নিউজ