ইতিহাসের উজ্জ্বল নক্ষত্র তাজউদ্দীন আহমদের জন্মদিন আজ
নিজস্ব প্রতিবেদকবাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা তাজউদ্দীন আহমদের ৯৫তম জন্মদিন আজ। ১৯২৫ সালের এই দিনে (২৩ জুলাই) গাজীপুর জেলার অন্তর্গত কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
মৌলভী মো. ইয়াসিন খান ও মেহেরুননেসা খানের এই সন্তান ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী বাংলাদেশ বা মুজিবনগর সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সহধর্মিণী সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন আমৃত্যু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।
তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৪৩ সালে মুসলিম লীগের রাজনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হন। ১৯৪৪ সালে তিনি বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি গঠিত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের (বর্তমানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। ১৯৫০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে তিনি ভাষা আন্দোলনকালে গ্রেপ্তার হন এবং কারা নির্যাতন ভোগ করেন।
তিনি পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ১৯৫১ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত এ সংগঠনের নির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ছিলেন এবং পরে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৪ সালে রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে কারাগারে থাকা অবস্থায় এলএলবি পাস করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১৯৬৬ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী।
১৯৭০ সালে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ভারতে যান এবং প্রবাসী সরকার গঠনের চিন্তা করেন। ৪ এপ্রিল দিল্লীতে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাজউদ্দীনের আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়। ১০ এপ্রিল আগরতলায় সরকার গঠন করার উদ্যোগ নেন। এই সরকার স্বাধীন সার্বভৌম ‘গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার’। স্বাধীনতার সনদ (Charter of Independence) বলে এই সরকারের কার্যকারিতা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে তাজউদ্দীন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তিনি মুক্তিযুদ্ধকে সফল সমাপ্তির দিকে নিয়ে যেতে অসামান্য অবদান রাখেন।
তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন একজন সৎ ও মেধাবী রাজনীতিবিদ। দেশের মানুষ তাকে ভালোবেসে ডাকতেন বঙ্গতাজ বলে।পাকহানাদারদের কাছ থেকে দেশ মুক্ত হলে ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর তাজউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে এলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তিনি অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে ঢাকা-২২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় বাজেট পেশ ও প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন তাজউদ্দীন আহমদ।
১৯৭৪ সালের ২৬ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এরপর তাজউদ্দীন আহমদ গ্রেপ্তার হন এবং ৩ নভেম্বর কারাগারের ভেতরে আরও তিন জাতীয় নেতাসহ নিহত হন।
পূর্বপশ্চিমবিডি/জেডআই
Post Written by :
Original Post URL : https://ift.tt/2BrqZRY
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD