ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধী মুঈনুদ্দীনের মামলা
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক‘যুদ্ধাপরাধী’ আখ্যা দিয়ে টুইট করায় ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে যুক্তরাজ্যে পলাতক আলবদর নেতা চৌধুরী মুঈনুদ্দীন।
ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রীতির বিরুদ্ধে ৬০ হাজার পাউন্ড ক্ষতিপূরণ চেয়ে গত মাসে হাইকোর্টে মামলা করেন যুদ্ধাপরাধী মুঈনুদ্দীন।
গত বছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের টুইটার অ্যাকাউন্টে কমিশন ফর কাউন্টারিং এক্সট্রিমিজমের ‘চ্যালেঞ্জিং হেইটফুল এক্সট্রিমিজম’ বিষয়ক নথি শেয়ার করা হয়। সেখানে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধসহ গুরুতর ফৌজদারি অপরাধের জন্য তাকে দায়ী করে মানহানি করা হয়েছে বলে মুঈনুদ্দীনের দাবি।
এ যুদ্ধাপরাধীর মামলার অভিযোগে বলা হয়, ওই নথিটি প্রথমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ের টুইট থেকে প্রকাশ করা হয়। পরে সেটি ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল, বিবিসির সাংবাদিক মিশাল হুসেইন, মানবাধিকারকর্মী পিটার ট্যাটচেলসহ অনেকেই রিটুইট করেছেন।
‘চ্যালেঞ্জিং হেইটফুল এক্সট্রিমিজম’ বিষয়ক ওই প্রতিবেদনে ইউরোপীয় ডেটা সংরক্ষণ বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে এবং অবৈধভাবে তার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে বলে রিট মামলায় দাবি করেন মুঈনুদ্দীন।
গত বছর অক্টোবরে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন গত ২০ মার্চ পর্যন্ত কমিশনের ওয়েবসাইটে ছিল। মুঈনুদ্দিনের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে অস্বীকারও করেছিল কমিশন। তবে পরে এই যুদ্ধাপরাধীর সম্পর্কিত সব তথ্য মুছে ফেলা হয়।
বিষয়টিকে ‘বিচারাধীন’ হিসেবে বর্ণনা করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখপাত্র।
২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ শিক্ষক, ছয়জন সাংবাদিক ও তিন চিকিৎসকসহ ১৮ বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয় দুই বদর নেতা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের বিরুদ্ধে।
জামায়াতে ইসলামী তখনকার সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের পলাতক এ দুই কেন্দ্রীয় নেতার মধ্যে মুঈনুদ্দীন যুক্তরাজ্যে ও আশরাফুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্রে আছেন।
আশরাফুজ্জামান ও মুঈনুদ্দীন ১৯৭১ সালের ১১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কীভাবে আল বদর সদস্যদের নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও হত্যার পর বধ্যভূমিতে লাশ গুম করেছিলেন তা রায়ে উঠে এসেছে।
পলাতক এ দুই বদর নেতা বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াননি। আত্মসমর্পণ না করায় তারা আপিলের সুযোগ হারালেও এখন পর্যন্ত তাদের ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করা যায়নি।
একাত্তরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে সর্বোচ্চ সাজার রায়ের পর সাড়ে ছয় বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও পলাতক এই যুদ্ধাপরাধীকে দেশে ফেরানো যায়।
যুক্তরাজ্য মৃত্যুদণ্ডকে সমর্থন করে না বলে মুঈনুদ্দীন সেখানে বহাল তবিয়তে আছেন। আর আশরাফুজ্জামানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে তাদের ফিরিয়ে আনতে সরকার ‘সর্বোচ্চ চেষ্টা’ করে যাচ্ছে বরাবরই দাবি করা হচ্ছে।
স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবী হত্যায় জড়িত থাকার ও জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন নর্থ লন্ডনে বসবাসকারী চার সন্তানের জনক মুঈনুউদ্দিন।
তার দাবি, তিনি যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে যুক্ত নন। ১৯৭১ সালের সহিংসতায় জড়িতদের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। এমনকি জামায়াতে ইসলামীর ব্রিটিশ শাখার সঙ্গেও তার কোনো যোগসূত্র নেই বা তিনি কখনো জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাও ছিলেন না।
ব্রিটিশ লিবারেল ডেমোক্র্যাট লর্ড কার্লাইলকে উদ্ধৃত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়কে প্রশ্নবিদ্ধ করেন এই যুদ্ধাপরাধী। কার্লাইল এই আদালতকে ‘উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়’ আখ্যা দিয়ে মুঈনের বিরুদ্ধে রায়কে ‘হাস্যকর’ বলেছেন।
মুঈনুউদ্দিন ২০০৩ সালে মুসলিম কাউন্সিল অব গ্রেট ব্রিটেন প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন। ইস্ট লন্ডন মসজিদের ভাইস চেয়ারম্যান থাকাকালে প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে ক্যামেরাবন্দি হয়েছিলেন তিনি।
পূর্বপশ্চিমবিডি/জেডআই
Post Written by :
Original Post URL : https://ift.tt/2Cwa4OD
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD