বান্দরবান প্রতিনিধি
বান্দরবানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছেন প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাহাড় ধসের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। আর পাহাড় ধসে হতাহতের দুর্ঘটনা এড়াতে এবং পাহাড়ের ঝুঁকিতে মানুষ নিরাপদে সরিয়ে নিতে প্রশাসন নিয়েছে নানা উদ্যোগ। জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসন নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই সরতে রাজি হচ্ছে না ঝুঁকি পূর্ণভাবে বসবাসরত এসব লোকজন। জেলার সাতটি উপজেলা ও ২টি পৌর এলাকায় এবং ৩৩টি ইউনিয়নে পাহাড়ের পাদদেশে বাস করছেন এখনো অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করেই পাহাড় কেটে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছে এসব পরিবার। বসবাসের প্রয়োজনে অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা এবং বৃক্ষনিধনের কারণে পাহাড় ধসে ঘটছে মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা। এসব মানুষের প্রাণহানি ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সত্বেও বান্দরবানে বন্ধ হচ্ছে না পাহাড় কাটাসহ অবৈধ বসতি স্থাপন। ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রবল বর্ষণ ও ভূমি ধসে বিভিন্ন বয়সী নারী-শিশুসহ ৮৯জনেরও বেশি মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এদিকে ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের মতে, পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীরা প্রায় শ্রমিক শ্রেণীর মানুষ এবং যারা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে তাদের মধ্যে হতদরিদ্র পরিবারের সংখ্যাই বেশি। জীবিকার তাগিদে পাহাড়ের ঢালুতে পাহাড় কেটে তৈরি করা আবাসস্থলগুলোতে কম ভাড়ায় বসবাস করা যায়। কিন্তু বৃষ্টি শুরু হলেই মাইকিং করে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য অন্যত্র আবাসনের ব্যবস্থা করে না দেয়ায় নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে যেতে চান না কেউ। জীবন মৃত্যুকে হাতে নিয়ে পাহাড়কে একমাত্র সহায় হিসেবে সাথে নিয়েছে পাহাড়ের বাসিন্দারা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিবছর বর্ষাকালে পাহাড় ধস প্রতিরোধ এবং জনগণকে নিরাপদ দায়িত্বে সরে যেতে কার্যক্রম দেখা গেলে ও বর্ষা শেষে আবার সেই আগের রূপ। তাদের দাবি প্রশাসনকে হতে হবে আরও তৎপর শুধু বর্ষা আসলেই মাইকিং করে আর আশ্রয় কেন্দ্র খুলে জনগণের পাশে ছুটে গেলে হবে না পাহাড় ধসে মৃত্যু আর ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ব্যবস্থা নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদী। জেলার পরিবেশ বিদদের মতে, অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা এবং পাহাড়ের গাছ-বাঁশ বনজ সম্পদ উজাড় করার কারণেও পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে আরও অনেক পরিবার। এসব কারণে যে কোনো সময় হয়ে যেতে পারে আরও বড় ধরনের দুর্ঘটনা। পড়তে পারে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলেও। প্রতি বছরই পাহাড় ধসে বান্দরবানে প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ। তারপরেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বাস করছেন মানুষ। এসব মানুষের প্রাণহানি ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সত্বেও বান্দরবানে বন্ধ হচ্ছে না পাথর উত্তোলন এবং নির্বিচারে পাহাড় কাটা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন সংস্থার তথ্য মতে দেখা গেছে, বান্দরবানের সাতটি উপজেলায় এবং দুইটি পৌর এলাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের ঢালুতে (পাদদেশে) বসবাস করছেন অর্ধলক্ষাধিক পরিবার। যার মধ্যে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজারেরও বেশি পরিবার অতিঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বান্দরবানের পৌর পিতা মোহাম্মদ ইসলাম বেবী বলেন, বর্ষার শুরুতেই পৌরসভার পক্ষে প্রতিদিনেই মাইকিং করা হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য। তিনি বলেন, বান্দরবানের বেশিরভাগ এলাকা পাহাড়ে বেষ্টিত আর তাই পাহাড় কেটে অথবা পাহাড়ের আশেপাশেই প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে অসংখ্য নতুন নতুন স্থাপনা, তবে পাহাড়কর্তন আর ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসত রোধে প্রশাসনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। বান্দরবান মৃত্তিকা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাহবুবুল ইসলামের মতে, পাহাড় ধস তাৎক্ষনিক ঘটনা মনে হলেও এটি দীর্ঘ মেয়াদী প্রক্রিয়ার ফসল। ভূমিক্ষয়ের মাধ্যমে পাহাড়ে ফাটল তৈরি হয় এবং ধস নামে। পাহাড় ধসের অন্যতম কারণ হচ্ছে-নির্বিচারে বৃক্ষনিধন, অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা এবং উপযুক্ত পদ্ধতি অবলম্বন না করে পাহাড়ে চাষাবাদ করায়। তবে পাহাড় ধস বন্ধে বৃক্ষ নিধন এবং পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। তা নাহলে প্রতিনিয়ত প্রাণ হানির ঘটনা আরোও বাড়বে। বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শামীম হোসেন বলেন, বর্ষার শুরুতে পাহাড়ের ঝুঁকিতে বসবাসকারীদেরকে সরিয়ে যেতে মাইকিং করা হয় এবং উপজেলা পর্যায়ে নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে কমিটি রয়েছে কমিটির লোকজন পাহাড়ের পাদদেশ থেকে মানুষকে সরিয়ে নিয়ে আসেন। জেলাতে মোট ৭৯টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে এবং বিভিন্ন স্কুল কলেজকে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও জেলা সদরে একটি সাইক্লোন সেন্টার রয়েছে এবং আরও ৭৮টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে মানুষ যেন নিরাপদে থাকতে পারে। এই কর্মকর্তা আরোও বলেন পাহাড়ের উপর যারা বসবাস করছে তারা অবৈধ তবে আমরা মানুষকে বুঝানোর চেষ্টা করছি যে পাহাড়ে কোন রকম বসবাস করা যাবে না। এইটি শুধু অবৈধ না বেআইনি। দুর্যোগ কালে পাহাড় উপর থেকে নেমে না আসলে প্রয়োজনে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইপ্রয়োগ করে থাকি। পাহাড়ের ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের পুনর্বাসন প্রসঙ্গের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,পুনর্বাসনটি এতো সহজ নয় এখানে বন্দোবস্তী বন্ধ রয়েছে। কোন মানুষকে জমি দেওয়া যায় না যার কারণে ভূমি পুনর্বাসন করা সম্ভব হয় না।তবে সরকার বিভিন্ন ভাবে ঘর তৈরি করে দিচ্ছে এবং বিভিন্ন ভাবে থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। পূর্বপশ্চিমবিডি/আরএইচ