যে কারণে ইতালিতে মৃত্যু হার এতো বেশি
আমিনুল ইসলামমহামারি করোনাভাইরাস মৃত্যুপুরী বানিয়ে ফেলেছে ইতালিকে। এই ভাইরাসে দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছে ৯২ হাজার ৪৭২ জন। প্রাণ হারিয়েছে রেকর্ড ১০ হাজার ২৩ জন। শনিবার একদিনেই মারা গেছে ৮৮৯ জন।
১৫ ফেব্রুয়ারি ইতালিতে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি সেখানে প্রথম মৃতের ঘটনা ঘটে। এরপর মাত্র ৩৬ দিনের ব্যবধানে ১০ হাজার মৃত্যুবরণ করেছে। শুক্রবার দিন রেকর্ড ৯১৯ জন মারা যায় সেখানে।
করোনাভাইরাস বিশ্বের ১৯৯টি দেশে ছড়িয়েছে। কিন্তু ইতালিতে মৃতের হার এতো বেশি কেন? এর পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
প্রথমত, ইতালি বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ যেখানে সবচেয়ে বেশি বয়স্ক মানুষ বাস করে। এক্ষেত্রে জাপানের পরেই তাদের অবস্থান। আর করোনাভাইরাস বয়স্ক মানুষদের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ইতালির মানুষের গড় বয়স ৭৮ (সূত্র : স্বাস্থ্যসংস্থা)! সে কারণে আক্রান্তদের বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না। যদিও ব্যতিক্রম কিছু ঘটনাও রয়েছে। ১০২ বছর বয়সী ইতালিকা গ্রোন্দোনা করোনা জয় করে বাড়ি ফিরেছেন। ১০১ বছর বয়সে আরো একজন করোনা জয় করেছেন সেখানে।
দ্বিতীয়ত, ইতালি ছয় সপ্তাহ আগে লকডাউন করলেও সেখানকার মানুষ সেটা মানেনি। চীনের মতো তারা কড়াকড়িভাবে লকডাউন করতে পারেনি। আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকায় একটা সময় লকডাউন না মানায় জরিমানা শুরু হয়। জরিমানার পরিমাণ বাড়তে বাড়তে এখন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ডলারে ঠেকেছে (প্রায় ৩ লাখ টাকা)। তবুও তাদের ঘরে রাখা যাচ্ছে না। বর্তমানে কেউ বিনা প্রয়োজনে বাইরে বের হলে তাকে সরাসরি জেল-হাজতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
তৃতীয়ত, ভয়ঙ্কর তথ্য হচ্ছে ইতালিতে আক্রান্ত ও মৃতের পরিমাণ আরো অনেক বেশি। যে সংখ্যাটা প্রকাশ পাচ্ছে সেটা প্রকৃত নয়। ইতালি এখন কেবল সবচেয়ে খারাপ অব্স্থা যাদের তাদের পরীক্ষা করছে। সবাইকে করতে পারছে না। সে কারণেও বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। প্রতিদিন ৫ হাজারের মতো টেস্ট করে তারা। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। হাজার হাজার ইতালিয়ান পরীক্ষার অপেক্ষায় ঘরে বসে আছেন। একটা সময় স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল না। ছিল না প্রয়োজনীয় লোকবল। সে কারণে তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে টেস্ট করতেও পারেনি। তাতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে হু হু। বেড়েছে মৃতের সংখ্যাও। তবে আশার বিষয় হচ্ছে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসছে। হয়তো চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে মৃতের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। কারণ, ইতালিতে করোনাভাইরাস পিক পয়েন্টে আছে। এখান থেকে নিম্নমুখী হবে।
ঢাকা/আমিনুল