বনরুই থেকে করোনা ছড়িয়েছে: গবেষণা
চীনের উহান থেকে বাদুড়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ ছড়িয়েছে বলে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছিলেন অনেক গবেষক। তবে বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ন্যাচারের এক গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, বনরুই থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে।
পূর্বপশ্চিম ডেস্কপৃথিবী যেন চলমান মৃত্যু উপত্যকা, জনপদের পর জনপদ অঘোষিত বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। জীবনীশক্তি আজ শূন্যের কোঠায়। কোভিড-১৯ খ্যাত, নভেল করোনা খ্যাত প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিস্তার যেনো ঝড়ের বেগে হু হু করে বেড়ে চলেছে। মুহূর্তেই কেড়ে নিচ্ছে মানুষের প্রাণবায়ু। কতো অসহায় মানুষ! কতো অসহায় বিপুলা প্রাণের পৃথিবী। চীনের উহান থেকে বাদুড়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ ছড়িয়েছে বলে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছিলেন অনেক গবেষক। তবে বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ন্যাচারের এক গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, বনরুই থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে।
চীনে পাচার হওয়া মালয় প্রজাতির বনরুইয়ের মধ্যে করোনাভাইরাসের দুটি ধরনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ভাইরাসের সঙ্গে মিল আছে মানুষের শরীরে পাওয়া ‘কোভিড ১৯’–এর। হংকং ইউনিভার্সিটির গবেষকদের বরাত দিয়ে বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।
বনরুই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি চোরাই পথে পাচার হওয়া স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে একটি, জড়িবুটি ওষুধ তৈরিতেও এটি ব্যবহার হয়ে থাকে।
হংকং ইউনিভার্সিটির গবেষক টমি ল্যাম বিবিসিকে বলেন, চোরাই পথে আসা মালয় প্রজাতির বনরুইয়ে এ ভাইরাস পাওয়ার পর প্রশ্নটাও উঠেছে যে এই প্রজাতির বনরুইয়ের শরীরেই–বা ভাইরাস ঢুকল কীভাবে? সেটা কি পাচারের সময় আশপাশে থাকা বাদুড় থেকে এসেছিল, নাকি দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় তাদের যে প্রাকৃতিক আবাসস্থল, সেখানেই ঘটেছিল? তিনি আরও বলেন, মানুষের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির ক্ষেত্রে বনরুইয়ের ভূমিকা বুঝতে হলে আরও পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা প্রয়োজন। যদিও ‘সার্স কোভ–২’–এর প্রাদুর্ভাবের সরাসরি ‘হোস্ট’ হিসেবে বনরুইয়ের ভূমিকা আরও নিশ্চিত হওয়ার দরকার আছে। তবে ভবিষ্যতে যদি এ রকম প্রাণী থেকে মানুষে মহামারি ছড়ানো ঠেকাতে হয়, তাহলে বাজারে এসব প্রাণীর বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত।
ইকো হেলথ অ্যালায়েন্সের প্রেসিডেন্ট পিটার ডাসক নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, বনরুইয়ের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া মহামারির সম্পর্ক রয়েছে। মার্কিন এ প্রতিষ্ঠানটি বন্য প্রাণী থেকে ছড়িয়ে পড়া রোগবালাই নিয়ে গবেষণা করে থাকে।
পিটার ডাসক বলেন, ভাইরাসটি কোথা থেকে ছড়িয়েছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। সম্ভবত বাদুড় থেকে। পরে ওই বাদুড় থেকে আরও একটি স্তন্যপায়ী প্রাণীর শরীরে ছড়ায়। ওই প্রাণী চীনের উহানে বিক্রির চল আছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রখ্যাত মেডিকেল জার্নাল নেচার–এ পাঁচ বিজ্ঞানীর একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় ১৭ মার্চ। গবেষণায় বলা হয়, এসব প্রাণী নিয়ে নাড়াচাড়া করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। ভবিষ্যতে করোনাভাইরাসের মতো কোনো মারাত্মক রোগ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমাতে বন্য প্রাণীর বাজারে বনরুইয়ের মতো জন্তু বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত।
গবেষণায় বলা হয়, বাদুড়ের শরীরেও করোনাভাইরাস আছে এবং তার সঙ্গে মানুষের শরীরে সংক্রমিত ভাইরাসের আরও বেশি মিল আছে। কিন্তু ভাইরাসের একটি অংশ, যা মানুষের শরীরের কোষ ভেদ করে ভেতরে ঢুকতে ভাইরাসটিকে সহায়তা করে, তার সঙ্গে এর মিল নেই।
সহগবেষক সিডনি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এডওয়ার্ড হোমস বলেন, এর অর্থ হলো বন্য প্রাণীদের মধ্যে এমন ভাইরাস আছে, যে ভাইরাস মানুষকে সংক্রমিত করছে।
তিনি বলছেন, করোনাভাইরাসের সঙ্গে বাদুড়ের নিশ্চয়ই সম্পর্ক আছে, হয়তো বনরুইও সম্পর্কিত, তবে অন্য কোনো প্রাণীর জড়িত থাকারও জোর সম্ভাবনা আছে।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনের জুলজিক্যাল সোসাইটির অধ্যাপক এন্ড্রু কানিংহ্যাম বিবিসিকে বলছেন, এই গবেষণাপত্র থেকে একলাফে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়া ঠিক হবে না। ‘কোভিড–১৯’ উৎস এখনো অজানা। হয়তো কোনো বনরুইয়ে ভাইরাসটি প্রাকৃতিকভাবেই ছিল বা বনরুইটি ধরা এবং হত্যা করার সময় অন্য কোনো প্রাণী থেকে এসেছিল।
চীন অবশ্য করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর বন্য প্রাণীর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছে। ভিয়েতনামেও এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে দেশটির সরকার।
বাংলাদেশে তিন প্রজাতির বনরুই আছে:
বনরুই আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের স্তন্যপায়ী প্রাণী। বাংলাদেশে তিন প্রজাতির বনরুই আছে, দেশি, চীনা ও মালয়। পিঁপড়া ও পিঁপড়াজাতীয় প্রাণী খায় বলে আঁশযুক্ত পিঁপড়াভুক নামেও পরিচিত। মুখে কোনো দাঁত নেই বলে আগে দাঁতহীন স্তন্যপায়ী প্রাণীদের দলে অন্তর্ভুক্ত করা হতো।
বাংলাদেশে বনরুই চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেটে দেখা যায়। মাটিতে বাস করে বনরুই। তবে এ প্রাণীটি গাছেও চড়তে পারে। বাংলাদেশ বনরুই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কাছে প্রিয় খাবারের একটি।
বন্য প্রাণী পাচারের ওপর নজরদারি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা ‘ট্রাফিক’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর অন্তত ২০ টন বনরুই পাচার হয়। বাংলাদেশসহ এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো থেকে গত ১৬ বছরে ১৬ লাখ বনরুই পাচার হয়েছে।
পূর্বপশ্চিমবিডি/জিএম
বনরুই থেকে করোনা ছড়িয়েছে: গবেষণা
চীনের উহান থেকে বাদুড়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ ছড়িয়েছে বলে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছিলেন অনেক গবেষক। তবে বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ন্যাচারের এক গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, বনরুই থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে।
পূর্বপশ্চিম ডেস্কপৃথিবী যেন চলমান মৃত্যু উপত্যকা, জনপদের পর জনপদ অঘোষিত বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। জীবনীশক্তি আজ শূন্যের কোঠায়। কোভিড-১৯ খ্যাত, নভেল করোনা খ্যাত প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিস্তার যেনো ঝড়ের বেগে হু হু করে বেড়ে চলেছে। মুহূর্তেই কেড়ে নিচ্ছে মানুষের প্রাণবায়ু। কতো অসহায় মানুষ! কতো অসহায় বিপুলা প্রাণের পৃথিবী। চীনের উহান থেকে বাদুড়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ ছড়িয়েছে বলে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছিলেন অনেক গবেষক। তবে বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ন্যাচারের এক গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, বনরুই থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে।
চীনে পাচার হওয়া মালয় প্রজাতির বনরুইয়ের মধ্যে করোনাভাইরাসের দুটি ধরনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ভাইরাসের সঙ্গে মিল আছে মানুষের শরীরে পাওয়া ‘কোভিড ১৯’–এর। হংকং ইউনিভার্সিটির গবেষকদের বরাত দিয়ে বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।
বনরুই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি চোরাই পথে পাচার হওয়া স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে একটি, জড়িবুটি ওষুধ তৈরিতেও এটি ব্যবহার হয়ে থাকে।
হংকং ইউনিভার্সিটির গবেষক টমি ল্যাম বিবিসিকে বলেন, চোরাই পথে আসা মালয় প্রজাতির বনরুইয়ে এ ভাইরাস পাওয়ার পর প্রশ্নটাও উঠেছে যে এই প্রজাতির বনরুইয়ের শরীরেই–বা ভাইরাস ঢুকল কীভাবে? সেটা কি পাচারের সময় আশপাশে থাকা বাদুড় থেকে এসেছিল, নাকি দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় তাদের যে প্রাকৃতিক আবাসস্থল, সেখানেই ঘটেছিল? তিনি আরও বলেন, মানুষের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির ক্ষেত্রে বনরুইয়ের ভূমিকা বুঝতে হলে আরও পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা প্রয়োজন। যদিও ‘সার্স কোভ–২’–এর প্রাদুর্ভাবের সরাসরি ‘হোস্ট’ হিসেবে বনরুইয়ের ভূমিকা আরও নিশ্চিত হওয়ার দরকার আছে। তবে ভবিষ্যতে যদি এ রকম প্রাণী থেকে মানুষে মহামারি ছড়ানো ঠেকাতে হয়, তাহলে বাজারে এসব প্রাণীর বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত।
ইকো হেলথ অ্যালায়েন্সের প্রেসিডেন্ট পিটার ডাসক নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, বনরুইয়ের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া মহামারির সম্পর্ক রয়েছে। মার্কিন এ প্রতিষ্ঠানটি বন্য প্রাণী থেকে ছড়িয়ে পড়া রোগবালাই নিয়ে গবেষণা করে থাকে।
পিটার ডাসক বলেন, ভাইরাসটি কোথা থেকে ছড়িয়েছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। সম্ভবত বাদুড় থেকে। পরে ওই বাদুড় থেকে আরও একটি স্তন্যপায়ী প্রাণীর শরীরে ছড়ায়। ওই প্রাণী চীনের উহানে বিক্রির চল আছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রখ্যাত মেডিকেল জার্নাল নেচার–এ পাঁচ বিজ্ঞানীর একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় ১৭ মার্চ। গবেষণায় বলা হয়, এসব প্রাণী নিয়ে নাড়াচাড়া করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। ভবিষ্যতে করোনাভাইরাসের মতো কোনো মারাত্মক রোগ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমাতে বন্য প্রাণীর বাজারে বনরুইয়ের মতো জন্তু বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত।
গবেষণায় বলা হয়, বাদুড়ের শরীরেও করোনাভাইরাস আছে এবং তার সঙ্গে মানুষের শরীরে সংক্রমিত ভাইরাসের আরও বেশি মিল আছে। কিন্তু ভাইরাসের একটি অংশ, যা মানুষের শরীরের কোষ ভেদ করে ভেতরে ঢুকতে ভাইরাসটিকে সহায়তা করে, তার সঙ্গে এর মিল নেই।
সহগবেষক সিডনি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এডওয়ার্ড হোমস বলেন, এর অর্থ হলো বন্য প্রাণীদের মধ্যে এমন ভাইরাস আছে, যে ভাইরাস মানুষকে সংক্রমিত করছে।
তিনি বলছেন, করোনাভাইরাসের সঙ্গে বাদুড়ের নিশ্চয়ই সম্পর্ক আছে, হয়তো বনরুইও সম্পর্কিত, তবে অন্য কোনো প্রাণীর জড়িত থাকারও জোর সম্ভাবনা আছে।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনের জুলজিক্যাল সোসাইটির অধ্যাপক এন্ড্রু কানিংহ্যাম বিবিসিকে বলছেন, এই গবেষণাপত্র থেকে একলাফে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়া ঠিক হবে না। ‘কোভিড–১৯’ উৎস এখনো অজানা। হয়তো কোনো বনরুইয়ে ভাইরাসটি প্রাকৃতিকভাবেই ছিল বা বনরুইটি ধরা এবং হত্যা করার সময় অন্য কোনো প্রাণী থেকে এসেছিল।
চীন অবশ্য করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর বন্য প্রাণীর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছে। ভিয়েতনামেও এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে দেশটির সরকার।
বাংলাদেশে তিন প্রজাতির বনরুই আছে:
বনরুই আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের স্তন্যপায়ী প্রাণী। বাংলাদেশে তিন প্রজাতির বনরুই আছে, দেশি, চীনা ও মালয়। পিঁপড়া ও পিঁপড়াজাতীয় প্রাণী খায় বলে আঁশযুক্ত পিঁপড়াভুক নামেও পরিচিত। মুখে কোনো দাঁত নেই বলে আগে দাঁতহীন স্তন্যপায়ী প্রাণীদের দলে অন্তর্ভুক্ত করা হতো।
বাংলাদেশে বনরুই চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেটে দেখা যায়। মাটিতে বাস করে বনরুই। তবে এ প্রাণীটি গাছেও চড়তে পারে। বাংলাদেশ বনরুই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কাছে প্রিয় খাবারের একটি।
বন্য প্রাণী পাচারের ওপর নজরদারি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা ‘ট্রাফিক’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর অন্তত ২০ টন বনরুই পাচার হয়। বাংলাদেশসহ এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো থেকে গত ১৬ বছরে ১৬ লাখ বনরুই পাচার হয়েছে।
পূর্বপশ্চিমবিডি/জিএম