মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) বিরুদ্দে লড়াই করে যাওয়া চিকিৎসাকর্মীদের প্রতি ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা জানাতে যুক্তরাজ্যে পালিত হলো ক্ল্যাপ ফর কেয়ারারস কর্মসূচি। দেশজুড়ে হাততালির মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর এ কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের সাথে যোগ দেন তারকারাও।
যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও অক্লান্ত পরিশ্রম করা স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি নানাভাবে ভালোবাসা জানাচ্ছে মানুষ। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি সম্মান জানাতে নীল আলোয় সেজেছে লন্ডন।
দেশবাসীর সাথে একাত্মতা জানিয়ে অংশ নেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। যিনি নিজেও করোনায় আক্রান্ত।
‘হ্যাশট্যাগ ক্ল্যাপ ফর কেয়ারারস, হ্যাশট্যাগ ক্ল্যাপ ফর এনএইচএস’ ক্যাপশন ব্যবহার করে কর্মসূচি পালন করেন বহু তারকা। স্ত্রী র্যাচেলকে সঙ্গে নিয়ে অংশ নেন জেমস বন্ড তারকা ড্যানিয়েল ক্রেইগ। সাথে ছিলেন তার সহশিল্পীরা।
চিকিৎসাকর্মীদের প্রতি সর্মথন আর ভালোবাসা জানিয়েছেন সাবেক ফুটবল তারকা ডেভিড বেকহ্যাম ও তার পরিবার।
এদিকে কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়েছে ব্রিটিশ রাজপরিবারও। ডিউক ও ডাচেস অব ক্যামব্রিজের তিন সন্তান হাততালির মধ্য দিয়ে ভালোবাসা জানায় স্বাস্থ্যকর্মীদের।
ব্রিটেনের মতো একইভাবে দেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে কানাডা। আর চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভার্চুয়াল জ্যাম সেশনে অংশ নিয়েছেন আর্জেন্টিনার সঙ্গীতাঙ্গণের সেরা তারকারা।
গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। প্রতিনিয়ত এই ভাইরাসে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এখনো কোনো টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেনি বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) বিরুদ্দে লড়াই করে যাওয়া চিকিৎসাকর্মীদের প্রতি ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা জানাতে যুক্তরাজ্যে পালিত হলো ক্ল্যাপ ফর কেয়ারারস কর্মসূচি। দেশজুড়ে হাততালির মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর এ কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের সাথে যোগ দেন তারকারাও।
যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও অক্লান্ত পরিশ্রম করা স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি নানাভাবে ভালোবাসা জানাচ্ছে মানুষ। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি সম্মান জানাতে নীল আলোয় সেজেছে লন্ডন।
দেশবাসীর সাথে একাত্মতা জানিয়ে অংশ নেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। যিনি নিজেও করোনায় আক্রান্ত।
‘হ্যাশট্যাগ ক্ল্যাপ ফর কেয়ারারস, হ্যাশট্যাগ ক্ল্যাপ ফর এনএইচএস’ ক্যাপশন ব্যবহার করে কর্মসূচি পালন করেন বহু তারকা। স্ত্রী র্যাচেলকে সঙ্গে নিয়ে অংশ নেন জেমস বন্ড তারকা ড্যানিয়েল ক্রেইগ। সাথে ছিলেন তার সহশিল্পীরা।
চিকিৎসাকর্মীদের প্রতি সর্মথন আর ভালোবাসা জানিয়েছেন সাবেক ফুটবল তারকা ডেভিড বেকহ্যাম ও তার পরিবার।
এদিকে কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়েছে ব্রিটিশ রাজপরিবারও। ডিউক ও ডাচেস অব ক্যামব্রিজের তিন সন্তান হাততালির মধ্য দিয়ে ভালোবাসা জানায় স্বাস্থ্যকর্মীদের।
ব্রিটেনের মতো একইভাবে দেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে কানাডা। আর চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভার্চুয়াল জ্যাম সেশনে অংশ নিয়েছেন আর্জেন্টিনার সঙ্গীতাঙ্গণের সেরা তারকারা।
গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। প্রতিনিয়ত এই ভাইরাসে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এখনো কোনো টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেনি বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
লক্ষ্মীপুরে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সাংবাদিক নিহত
সারাদেশ
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় সাংবাদিক রাশেদ খান হেলাল নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অপর আরোহী। রোববার (২৯ মার্চ) রাত ১০টার দিকে উপজেলার গুচ্ছগ্রাম এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত হেলাল যায়যায়দিন পত্রিকার রামগতি উপজেলা প্রতিনিধি। আহত ব্যক্তির নাম পরিচয় জানা যায়নি। তিনি একই মোটরসাইকেল আরোহী ছিলেন। গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, মোটরসাইকেলযোগে সাংবাদিক হেলালসহ দুইজন গুচ্ছগ্রামের দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় সড়কের পাশে বালুর স্তুপে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুইজনই পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই হেলাল মারা যান। আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করার জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
লক্ষ্মীপুরে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সাংবাদিক নিহত
সারাদেশ
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় সাংবাদিক রাশেদ খান হেলাল নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অপর আরোহী। রোববার (২৯ মার্চ) রাত ১০টার দিকে উপজেলার গুচ্ছগ্রাম এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত হেলাল যায়যায়দিন পত্রিকার রামগতি উপজেলা প্রতিনিধি। আহত ব্যক্তির নাম পরিচয় জানা যায়নি। তিনি একই মোটরসাইকেল আরোহী ছিলেন। গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, মোটরসাইকেলযোগে সাংবাদিক হেলালসহ দুইজন গুচ্ছগ্রামের দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় সড়কের পাশে বালুর স্তুপে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুইজনই পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই হেলাল মারা যান। আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করার জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
আল হারামাইন হাসপাতাল করোনা হাসপাতালের জন্য কমিশন করা হোক
তাজুদ্দিন তাজ
মাহতাবুর রহমান নাসির সিলেটে শীর্ষ ধনীদের একজন। আল হারামাইন গ্রুপের চেয়ারম্যান। দেশে বিদেশে বিশাল সম্পদের মালিক। বাংলাদেশ সরকারের একজন সিআইপি। একাধিক ব্যাংকের মালিক। আল হারামাইন পারফিউমের স্বত্বাধিকারী। মধ্যপ্রাচ্যে তার বিশাল ব্যবসা। মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের সম্মানিত নাগরিক ও সেদেশের গোল্ডকার্ড হোল্ডার আয়কর দাতা। সিলেটে বাড়ি করেছেন প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা খরচ করে। তিনি কত কোটি টাকার মালিক তা এই নিবন্ধের আলোচ্য নয়। আলোচ্য হল- বিশ্বের চরম র্দুদিনে সিলেটবাসীর পাশে কী তিনি আছেন?
মানব ইতিহাসের অভূতপূর্ব এই দুর্যোগের দিনে ইতোমধ্যে দেশের শীর্ষ ধনীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে এসেছেন। দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পগ্রুপ আকিজ গ্রুপ ইতোমধ্যে করোনা হাসপাতাল তৈরীর কাজ শুরু করেছে। বসুন্ধরা গ্রুপ ৫ হাজার বেডের করোনা হাসপাতাল তৈরীর ঘোষণা দিয়েছে। দেশের শীর্ষ শিল্পপতিরা ইতোমধ্যে দান অনুদান শুরু করেছেন। কিন্তু, কোথায় মাহতাবুর রহমান নাসির? তার কাছ থেকে কোন ঘোষণা এখনো শুনতে পাইনি।
এই মুহূর্তে বিশ্বেও ইতিহাসে একটি উদাহরণ তৈরীর একটি সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে শিল্পপতি মাহতাবুর রহমান নাসিরের সামনে। তার একক অর্থায়নে শত কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্বমানের একটি হাসপাতাল রয়েছে সিলেটে- যার নাম আল হারামইন হাসপাতাল। তিনি এই হাসপাতালটি সিলেটের প্রথম করোনা হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অবিলম্বে সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে পারেন।
আল হারামাইন হাসপাতাল কেন? অন্য কোন হাসপাতাল কেন নয়? আমার মতে, অতি সহজে এই হাসপাতালটিকে করোনা হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। আর তাই সরকার এই হাসপাতালটি কমিশন বা রিকউজিশন করলে দ্রুত ও স্বল্পতম সময়ে সিলেটবাসী একটি মান সম্পন্ন বিশেষায়িত করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র পেতে পারেন।
আল হারমাইন হাসপাতাল একক মালিকানায় পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। এ কারণে এই প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ দ্রুত ও স্বল্প সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। করোনা হাসপাতাল নির্মাণের জন্য রাগীব রাবেয়া বা ইবনে সিনার মত প্রতিষ্ঠানকে কমিশন করতে হলে এভাবে কোন একক সিদ্ধান্তের সুযোগ পাওয়া যাবে না।
করোনা হাসপাতাল স্থাপনের ক্ষেত্রে হাসপাতাল হিসেবে যে সব ফ্যাসিলিটিজ দরকার তার পুরোটাই রয়েছে আল হারামাইনে। এর ভবনটি তৈরী করা হয়েছে হাসপাতালের উপযোগী করে। এখানকার অভ্যন্তরীন সাজসজ্জাও বিশ্বমানের। এ কারণে এটিকে করোনা হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তুলতে নতুন করে আর কোন পরিবর্তনেরও হয়তো প্রয়োজন পড়বেনা। শুধুমাত্র করোনা চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের হাতে একটি হস্তান্তর করা হলেই চলবে। আর প্রয়োজন হবে ভ্যান্টিলেশনসহ আরো কিছু মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট স্থাপন করা। এটি করা সময় বা ব্যয় সাপেক্ষ হবে না।
করোনা চিকিৎসায় হয়তো আমাদের বিদেশী সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে। বিদেশ থেকে হয়তো ডাক্তার বা এক্সপার্ট নিয়ে আসার প্রয়োজন হতে পারে। আল হারামাইন হাসপাতালের সেটআপ পশ্চিমা বিশ্বের হাসপাতালের আদলে হওয়ায় বিদেশী চিকিৎসকরা আসলেও এখানে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন।
প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হওয়ায় বিদেশ থেকে আসা লোকজনের বা প্রবাসীদের করোনা ঝুঁকির মাত্রা অনেক বেশী। আল হারামাইন হাসপাতালের অভ্যন্তরীন সাজ সজ্জা সিলেটের অন্য বেসরকারী হাসপাতালগুলোর তুলনায় উন্নত হওয়ায় এখানে চিকিৎসা নিতে প্রবাসীরাও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- আর্থিক ক্ষতির বিষয়। সিলেটের অন্য বেসরকারী হাসপাতাল বা প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোর বেশীরভাগই যৌথ মালিকানাধীন। এগুলোর সাথে মালিকদের রুটি রুজির প্রশ্ন জড়িত। কিন্তু, আল হারামাইনের সাথে মাহতাবুর রহমান নাসিরের রুজি রুজি জড়িত নয়। এখান থেকে যে আয় হচ্ছে- তা মাহতাবুর রহমান নাসিরের মোট আয়ের তুলনায় নগন্য। সুতরাং, মাহতাবুর রহমান নাসির এই হাসপাতালের আয় থেকে বঞ্চিত হলে তার খুব বেশী ক্ষতির আশঙ্কা নেই। ফলে, সরকার চাইলেই আল হারামাইন হাসাপাতালটিকে করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিতে পারে।
অর্ন্তবর্তীকালীন বা এড-ইন্টারিম সময়ের জন্য বা দুর্যোগকালীন সময়ে বেসরকারী সম্পত্তি রিকউজিশন বা কমিশন করায় আইনগতঃ কোন বাধা নেই। সিলেটে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি বিশাল মেডিক্যাল সেট আপ রয়েছে। জনবলও রয়েছে সেনাবাহিনীর। সুতরাং, আল হারামাইন হাসপাতালকে একটি বিশেষায়িত করোনা হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকার একটি কমিশন করে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করতে পারে।
সিলেটবাসীর চরমতম এই দুর্যোগের মুহূর্তে অবিলম্বে আল হারামাইন হাসপাতাল কমিশন বা রিকুইজিশন করে করোনা হাসপাতাল গড়ে তোলা প্রয়োজন।
আল হারামাইন হাসপাতাল করোনা হাসপাতালের জন্য কমিশন করা হোক
তাজুদ্দিন তাজ
মাহতাবুর রহমান নাসির সিলেটে শীর্ষ ধনীদের একজন। আল হারামাইন গ্রুপের চেয়ারম্যান। দেশে বিদেশে বিশাল সম্পদের মালিক। বাংলাদেশ সরকারের একজন সিআইপি। একাধিক ব্যাংকের মালিক। আল হারামাইন পারফিউমের স্বত্বাধিকারী। মধ্যপ্রাচ্যে তার বিশাল ব্যবসা। মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের সম্মানিত নাগরিক ও সেদেশের গোল্ডকার্ড হোল্ডার আয়কর দাতা। সিলেটে বাড়ি করেছেন প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা খরচ করে। তিনি কত কোটি টাকার মালিক তা এই নিবন্ধের আলোচ্য নয়। আলোচ্য হল- বিশ্বের চরম র্দুদিনে সিলেটবাসীর পাশে কী তিনি আছেন?
মানব ইতিহাসের অভূতপূর্ব এই দুর্যোগের দিনে ইতোমধ্যে দেশের শীর্ষ ধনীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে এসেছেন। দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পগ্রুপ আকিজ গ্রুপ ইতোমধ্যে করোনা হাসপাতাল তৈরীর কাজ শুরু করেছে। বসুন্ধরা গ্রুপ ৫ হাজার বেডের করোনা হাসপাতাল তৈরীর ঘোষণা দিয়েছে। দেশের শীর্ষ শিল্পপতিরা ইতোমধ্যে দান অনুদান শুরু করেছেন। কিন্তু, কোথায় মাহতাবুর রহমান নাসির? তার কাছ থেকে কোন ঘোষণা এখনো শুনতে পাইনি।
এই মুহূর্তে বিশ্বেও ইতিহাসে একটি উদাহরণ তৈরীর একটি সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে শিল্পপতি মাহতাবুর রহমান নাসিরের সামনে। তার একক অর্থায়নে শত কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্বমানের একটি হাসপাতাল রয়েছে সিলেটে- যার নাম আল হারামইন হাসপাতাল। তিনি এই হাসপাতালটি সিলেটের প্রথম করোনা হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অবিলম্বে সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে পারেন।
আল হারামাইন হাসপাতাল কেন? অন্য কোন হাসপাতাল কেন নয়? আমার মতে, অতি সহজে এই হাসপাতালটিকে করোনা হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। আর তাই সরকার এই হাসপাতালটি কমিশন বা রিকউজিশন করলে দ্রুত ও স্বল্পতম সময়ে সিলেটবাসী একটি মান সম্পন্ন বিশেষায়িত করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র পেতে পারেন।
আল হারমাইন হাসপাতাল একক মালিকানায় পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। এ কারণে এই প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ দ্রুত ও স্বল্প সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। করোনা হাসপাতাল নির্মাণের জন্য রাগীব রাবেয়া বা ইবনে সিনার মত প্রতিষ্ঠানকে কমিশন করতে হলে এভাবে কোন একক সিদ্ধান্তের সুযোগ পাওয়া যাবে না।
করোনা হাসপাতাল স্থাপনের ক্ষেত্রে হাসপাতাল হিসেবে যে সব ফ্যাসিলিটিজ দরকার তার পুরোটাই রয়েছে আল হারামাইনে। এর ভবনটি তৈরী করা হয়েছে হাসপাতালের উপযোগী করে। এখানকার অভ্যন্তরীন সাজসজ্জাও বিশ্বমানের। এ কারণে এটিকে করোনা হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তুলতে নতুন করে আর কোন পরিবর্তনেরও হয়তো প্রয়োজন পড়বেনা। শুধুমাত্র করোনা চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের হাতে একটি হস্তান্তর করা হলেই চলবে। আর প্রয়োজন হবে ভ্যান্টিলেশনসহ আরো কিছু মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট স্থাপন করা। এটি করা সময় বা ব্যয় সাপেক্ষ হবে না।
করোনা চিকিৎসায় হয়তো আমাদের বিদেশী সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে। বিদেশ থেকে হয়তো ডাক্তার বা এক্সপার্ট নিয়ে আসার প্রয়োজন হতে পারে। আল হারামাইন হাসপাতালের সেটআপ পশ্চিমা বিশ্বের হাসপাতালের আদলে হওয়ায় বিদেশী চিকিৎসকরা আসলেও এখানে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন।
প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হওয়ায় বিদেশ থেকে আসা লোকজনের বা প্রবাসীদের করোনা ঝুঁকির মাত্রা অনেক বেশী। আল হারামাইন হাসপাতালের অভ্যন্তরীন সাজ সজ্জা সিলেটের অন্য বেসরকারী হাসপাতালগুলোর তুলনায় উন্নত হওয়ায় এখানে চিকিৎসা নিতে প্রবাসীরাও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- আর্থিক ক্ষতির বিষয়। সিলেটের অন্য বেসরকারী হাসপাতাল বা প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোর বেশীরভাগই যৌথ মালিকানাধীন। এগুলোর সাথে মালিকদের রুটি রুজির প্রশ্ন জড়িত। কিন্তু, আল হারামাইনের সাথে মাহতাবুর রহমান নাসিরের রুজি রুজি জড়িত নয়। এখান থেকে যে আয় হচ্ছে- তা মাহতাবুর রহমান নাসিরের মোট আয়ের তুলনায় নগন্য। সুতরাং, মাহতাবুর রহমান নাসির এই হাসপাতালের আয় থেকে বঞ্চিত হলে তার খুব বেশী ক্ষতির আশঙ্কা নেই। ফলে, সরকার চাইলেই আল হারামাইন হাসাপাতালটিকে করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিতে পারে।
অর্ন্তবর্তীকালীন বা এড-ইন্টারিম সময়ের জন্য বা দুর্যোগকালীন সময়ে বেসরকারী সম্পত্তি রিকউজিশন বা কমিশন করায় আইনগতঃ কোন বাধা নেই। সিলেটে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি বিশাল মেডিক্যাল সেট আপ রয়েছে। জনবলও রয়েছে সেনাবাহিনীর। সুতরাং, আল হারামাইন হাসপাতালকে একটি বিশেষায়িত করোনা হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকার একটি কমিশন করে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করতে পারে।
সিলেটবাসীর চরমতম এই দুর্যোগের মুহূর্তে অবিলম্বে আল হারামাইন হাসপাতাল কমিশন বা রিকুইজিশন করে করোনা হাসপাতাল গড়ে তোলা প্রয়োজন।
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার দক্ষিণ পলাশীকুড়া গ্রামে আওয়াল পাগলা নামের এক ব্যক্তি জ্বর এবং শ্বাসকষ্টে ভুগে মারা গেছেন। জানা গেছে তিন দিন অসুস্থ থাকার পর রোববার (২৯ মার্চ) দিবাগত রাতে ওই ব্যক্তি মারা গেছেন।
করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে ওই বাড়িসহ আশেপাশের কয়েকটি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করেছে প্রশাসন। করোনা পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
সোমবার (৩০ মার্চ) রক্তের নমুনা সংগ্রহের পর ওই ব্যক্তির দাফন-জানাজা হবে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম আনওয়ারুর রউফ।
ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে গত তিন দিন আগে ওই ব্যক্তি জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে নালিতাবাড়ীর গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন বলে পরিবারের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছেন ইউএনও আরিফুর রহমান। ভালুকায় তিনি নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন বলে জানা যায়।
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার দক্ষিণ পলাশীকুড়া গ্রামে আওয়াল পাগলা নামের এক ব্যক্তি জ্বর এবং শ্বাসকষ্টে ভুগে মারা গেছেন। জানা গেছে তিন দিন অসুস্থ থাকার পর রোববার (২৯ মার্চ) দিবাগত রাতে ওই ব্যক্তি মারা গেছেন।
করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে ওই বাড়িসহ আশেপাশের কয়েকটি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করেছে প্রশাসন। করোনা পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
সোমবার (৩০ মার্চ) রক্তের নমুনা সংগ্রহের পর ওই ব্যক্তির দাফন-জানাজা হবে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম আনওয়ারুর রউফ।
ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে গত তিন দিন আগে ওই ব্যক্তি জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে নালিতাবাড়ীর গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন বলে পরিবারের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছেন ইউএনও আরিফুর রহমান। ভালুকায় তিনি নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন বলে জানা যায়।
চীনের উহান থেকে বাদুড়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ ছড়িয়েছে বলে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছিলেন অনেক গবেষক। তবে বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ন্যাচারের এক গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, বনরুই থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে।
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক
পৃথিবী যেন চলমান মৃত্যু উপত্যকা, জনপদের পর জনপদ অঘোষিত বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। জীবনীশক্তি আজ শূন্যের কোঠায়। কোভিড-১৯ খ্যাত, নভেল করোনা খ্যাত প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিস্তার যেনো ঝড়ের বেগে হু হু করে বেড়ে চলেছে। মুহূর্তেই কেড়ে নিচ্ছে মানুষের প্রাণবায়ু। কতো অসহায় মানুষ! কতো অসহায় বিপুলা প্রাণের পৃথিবী। চীনের উহান থেকে বাদুড়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ ছড়িয়েছে বলে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছিলেন অনেক গবেষক। তবে বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ন্যাচারের এক গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, বনরুই থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে।
চীনে পাচার হওয়া মালয় প্রজাতির বনরুইয়ের মধ্যে করোনাভাইরাসের দুটি ধরনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ভাইরাসের সঙ্গে মিল আছে মানুষের শরীরে পাওয়া ‘কোভিড ১৯’–এর। হংকং ইউনিভার্সিটির গবেষকদের বরাত দিয়ে বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।
বনরুই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি চোরাই পথে পাচার হওয়া স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে একটি, জড়িবুটি ওষুধ তৈরিতেও এটি ব্যবহার হয়ে থাকে।
হংকং ইউনিভার্সিটির গবেষক টমি ল্যাম বিবিসিকে বলেন, চোরাই পথে আসা মালয় প্রজাতির বনরুইয়ে এ ভাইরাস পাওয়ার পর প্রশ্নটাও উঠেছে যে এই প্রজাতির বনরুইয়ের শরীরেই–বা ভাইরাস ঢুকল কীভাবে? সেটা কি পাচারের সময় আশপাশে থাকা বাদুড় থেকে এসেছিল, নাকি দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় তাদের যে প্রাকৃতিক আবাসস্থল, সেখানেই ঘটেছিল? তিনি আরও বলেন, মানুষের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির ক্ষেত্রে বনরুইয়ের ভূমিকা বুঝতে হলে আরও পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা প্রয়োজন। যদিও ‘সার্স কোভ–২’–এর প্রাদুর্ভাবের সরাসরি ‘হোস্ট’ হিসেবে বনরুইয়ের ভূমিকা আরও নিশ্চিত হওয়ার দরকার আছে। তবে ভবিষ্যতে যদি এ রকম প্রাণী থেকে মানুষে মহামারি ছড়ানো ঠেকাতে হয়, তাহলে বাজারে এসব প্রাণীর বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত।
ইকো হেলথ অ্যালায়েন্সের প্রেসিডেন্ট পিটার ডাসক নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, বনরুইয়ের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া মহামারির সম্পর্ক রয়েছে। মার্কিন এ প্রতিষ্ঠানটি বন্য প্রাণী থেকে ছড়িয়ে পড়া রোগবালাই নিয়ে গবেষণা করে থাকে।
পিটার ডাসক বলেন, ভাইরাসটি কোথা থেকে ছড়িয়েছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। সম্ভবত বাদুড় থেকে। পরে ওই বাদুড় থেকে আরও একটি স্তন্যপায়ী প্রাণীর শরীরে ছড়ায়। ওই প্রাণী চীনের উহানে বিক্রির চল আছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রখ্যাত মেডিকেল জার্নাল নেচার–এ পাঁচ বিজ্ঞানীর একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় ১৭ মার্চ। গবেষণায় বলা হয়, এসব প্রাণী নিয়ে নাড়াচাড়া করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। ভবিষ্যতে করোনাভাইরাসের মতো কোনো মারাত্মক রোগ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমাতে বন্য প্রাণীর বাজারে বনরুইয়ের মতো জন্তু বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত।
গবেষণায় বলা হয়, বাদুড়ের শরীরেও করোনাভাইরাস আছে এবং তার সঙ্গে মানুষের শরীরে সংক্রমিত ভাইরাসের আরও বেশি মিল আছে। কিন্তু ভাইরাসের একটি অংশ, যা মানুষের শরীরের কোষ ভেদ করে ভেতরে ঢুকতে ভাইরাসটিকে সহায়তা করে, তার সঙ্গে এর মিল নেই।
সহগবেষক সিডনি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এডওয়ার্ড হোমস বলেন, এর অর্থ হলো বন্য প্রাণীদের মধ্যে এমন ভাইরাস আছে, যে ভাইরাস মানুষকে সংক্রমিত করছে।
তিনি বলছেন, করোনাভাইরাসের সঙ্গে বাদুড়ের নিশ্চয়ই সম্পর্ক আছে, হয়তো বনরুইও সম্পর্কিত, তবে অন্য কোনো প্রাণীর জড়িত থাকারও জোর সম্ভাবনা আছে।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনের জুলজিক্যাল সোসাইটির অধ্যাপক এন্ড্রু কানিংহ্যাম বিবিসিকে বলছেন, এই গবেষণাপত্র থেকে একলাফে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়া ঠিক হবে না। ‘কোভিড–১৯’ উৎস এখনো অজানা। হয়তো কোনো বনরুইয়ে ভাইরাসটি প্রাকৃতিকভাবেই ছিল বা বনরুইটি ধরা এবং হত্যা করার সময় অন্য কোনো প্রাণী থেকে এসেছিল।
চীন অবশ্য করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর বন্য প্রাণীর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছে। ভিয়েতনামেও এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে দেশটির সরকার।
বাংলাদেশে তিন প্রজাতির বনরুই আছে:
বনরুই আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের স্তন্যপায়ী প্রাণী। বাংলাদেশে তিন প্রজাতির বনরুই আছে, দেশি, চীনা ও মালয়। পিঁপড়া ও পিঁপড়াজাতীয় প্রাণী খায় বলে আঁশযুক্ত পিঁপড়াভুক নামেও পরিচিত। মুখে কোনো দাঁত নেই বলে আগে দাঁতহীন স্তন্যপায়ী প্রাণীদের দলে অন্তর্ভুক্ত করা হতো।
বাংলাদেশে বনরুই চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেটে দেখা যায়। মাটিতে বাস করে বনরুই। তবে এ প্রাণীটি গাছেও চড়তে পারে। বাংলাদেশ বনরুই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কাছে প্রিয় খাবারের একটি।
বন্য প্রাণী পাচারের ওপর নজরদারি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা ‘ট্রাফিক’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর অন্তত ২০ টন বনরুই পাচার হয়। বাংলাদেশসহ এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো থেকে গত ১৬ বছরে ১৬ লাখ বনরুই পাচার হয়েছে।
চীনের উহান থেকে বাদুড়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ ছড়িয়েছে বলে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছিলেন অনেক গবেষক। তবে বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ন্যাচারের এক গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, বনরুই থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে।
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক
পৃথিবী যেন চলমান মৃত্যু উপত্যকা, জনপদের পর জনপদ অঘোষিত বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। জীবনীশক্তি আজ শূন্যের কোঠায়। কোভিড-১৯ খ্যাত, নভেল করোনা খ্যাত প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিস্তার যেনো ঝড়ের বেগে হু হু করে বেড়ে চলেছে। মুহূর্তেই কেড়ে নিচ্ছে মানুষের প্রাণবায়ু। কতো অসহায় মানুষ! কতো অসহায় বিপুলা প্রাণের পৃথিবী। চীনের উহান থেকে বাদুড়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ ছড়িয়েছে বলে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছিলেন অনেক গবেষক। তবে বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ন্যাচারের এক গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, বনরুই থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে।
চীনে পাচার হওয়া মালয় প্রজাতির বনরুইয়ের মধ্যে করোনাভাইরাসের দুটি ধরনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ভাইরাসের সঙ্গে মিল আছে মানুষের শরীরে পাওয়া ‘কোভিড ১৯’–এর। হংকং ইউনিভার্সিটির গবেষকদের বরাত দিয়ে বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।
বনরুই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি চোরাই পথে পাচার হওয়া স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে একটি, জড়িবুটি ওষুধ তৈরিতেও এটি ব্যবহার হয়ে থাকে।
হংকং ইউনিভার্সিটির গবেষক টমি ল্যাম বিবিসিকে বলেন, চোরাই পথে আসা মালয় প্রজাতির বনরুইয়ে এ ভাইরাস পাওয়ার পর প্রশ্নটাও উঠেছে যে এই প্রজাতির বনরুইয়ের শরীরেই–বা ভাইরাস ঢুকল কীভাবে? সেটা কি পাচারের সময় আশপাশে থাকা বাদুড় থেকে এসেছিল, নাকি দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় তাদের যে প্রাকৃতিক আবাসস্থল, সেখানেই ঘটেছিল? তিনি আরও বলেন, মানুষের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির ক্ষেত্রে বনরুইয়ের ভূমিকা বুঝতে হলে আরও পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা প্রয়োজন। যদিও ‘সার্স কোভ–২’–এর প্রাদুর্ভাবের সরাসরি ‘হোস্ট’ হিসেবে বনরুইয়ের ভূমিকা আরও নিশ্চিত হওয়ার দরকার আছে। তবে ভবিষ্যতে যদি এ রকম প্রাণী থেকে মানুষে মহামারি ছড়ানো ঠেকাতে হয়, তাহলে বাজারে এসব প্রাণীর বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত।
ইকো হেলথ অ্যালায়েন্সের প্রেসিডেন্ট পিটার ডাসক নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, বনরুইয়ের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া মহামারির সম্পর্ক রয়েছে। মার্কিন এ প্রতিষ্ঠানটি বন্য প্রাণী থেকে ছড়িয়ে পড়া রোগবালাই নিয়ে গবেষণা করে থাকে।
পিটার ডাসক বলেন, ভাইরাসটি কোথা থেকে ছড়িয়েছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। সম্ভবত বাদুড় থেকে। পরে ওই বাদুড় থেকে আরও একটি স্তন্যপায়ী প্রাণীর শরীরে ছড়ায়। ওই প্রাণী চীনের উহানে বিক্রির চল আছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রখ্যাত মেডিকেল জার্নাল নেচার–এ পাঁচ বিজ্ঞানীর একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় ১৭ মার্চ। গবেষণায় বলা হয়, এসব প্রাণী নিয়ে নাড়াচাড়া করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। ভবিষ্যতে করোনাভাইরাসের মতো কোনো মারাত্মক রোগ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমাতে বন্য প্রাণীর বাজারে বনরুইয়ের মতো জন্তু বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত।
গবেষণায় বলা হয়, বাদুড়ের শরীরেও করোনাভাইরাস আছে এবং তার সঙ্গে মানুষের শরীরে সংক্রমিত ভাইরাসের আরও বেশি মিল আছে। কিন্তু ভাইরাসের একটি অংশ, যা মানুষের শরীরের কোষ ভেদ করে ভেতরে ঢুকতে ভাইরাসটিকে সহায়তা করে, তার সঙ্গে এর মিল নেই।
সহগবেষক সিডনি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এডওয়ার্ড হোমস বলেন, এর অর্থ হলো বন্য প্রাণীদের মধ্যে এমন ভাইরাস আছে, যে ভাইরাস মানুষকে সংক্রমিত করছে।
তিনি বলছেন, করোনাভাইরাসের সঙ্গে বাদুড়ের নিশ্চয়ই সম্পর্ক আছে, হয়তো বনরুইও সম্পর্কিত, তবে অন্য কোনো প্রাণীর জড়িত থাকারও জোর সম্ভাবনা আছে।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনের জুলজিক্যাল সোসাইটির অধ্যাপক এন্ড্রু কানিংহ্যাম বিবিসিকে বলছেন, এই গবেষণাপত্র থেকে একলাফে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়া ঠিক হবে না। ‘কোভিড–১৯’ উৎস এখনো অজানা। হয়তো কোনো বনরুইয়ে ভাইরাসটি প্রাকৃতিকভাবেই ছিল বা বনরুইটি ধরা এবং হত্যা করার সময় অন্য কোনো প্রাণী থেকে এসেছিল।
চীন অবশ্য করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর বন্য প্রাণীর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছে। ভিয়েতনামেও এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে দেশটির সরকার।
বাংলাদেশে তিন প্রজাতির বনরুই আছে:
বনরুই আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের স্তন্যপায়ী প্রাণী। বাংলাদেশে তিন প্রজাতির বনরুই আছে, দেশি, চীনা ও মালয়। পিঁপড়া ও পিঁপড়াজাতীয় প্রাণী খায় বলে আঁশযুক্ত পিঁপড়াভুক নামেও পরিচিত। মুখে কোনো দাঁত নেই বলে আগে দাঁতহীন স্তন্যপায়ী প্রাণীদের দলে অন্তর্ভুক্ত করা হতো।
বাংলাদেশে বনরুই চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেটে দেখা যায়। মাটিতে বাস করে বনরুই। তবে এ প্রাণীটি গাছেও চড়তে পারে। বাংলাদেশ বনরুই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কাছে প্রিয় খাবারের একটি।
বন্য প্রাণী পাচারের ওপর নজরদারি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা ‘ট্রাফিক’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর অন্তত ২০ টন বনরুই পাচার হয়। বাংলাদেশসহ এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো থেকে গত ১৬ বছরে ১৬ লাখ বনরুই পাচার হয়েছে।
করোনাভাইরাসের কারণে অনেকেই হোম কোয়ারেন্টাইনে একঘেয়ে সময় কাটাচ্ছেন।
মালালার ক্ষেত্রেও তাই। হোম কোয়ারেন্টাইনে একঘেয়ে হয়ে নিজেই নিজের চুল কাটলেন। আর সেই ছবি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করলেন।
মালালা ইউসুফজাইয়ের ফ্রিঞ্জ করে কাটা চুলের ছবি শেয়ার করেছেন। অনুরাগীরাও মিষ্টি বার্তাতে ভরিয়ে দিয়েছেন কমেন্ট বক্স।
বাড়িতে নিজের চুল কাটার আগে অবশ্য তিনি তার ব্যক্তিগত চুল ও ত্বক বিশেষজ্ঞ জনাথন ভ্যান নেসের সঙ্গে শলা পরামর্শও করেছেন। কিন্তু জনাথন এইসময়ে মালালাকে একা নিজের চুল কাটতে একাধিকবার বারণ করলেও তিনি শোনেননি। খানিকটা শিশুসুলভ বায়না ধরেই নিজের লুক এক্সপেরিমেন্ট করে ফেলেছেন। তা মালালার পোস্টের নিচে তার ব্যক্তিগত চুল-ত্বক বিশেষজ্ঞ জনাথনের মন্তব্য দেখলেই বোঝা যায়।
ক্যাপশনে মালালা জনাথনের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘জনাথন ভ্যান নেস আমাকে বার বার মানা করেছিলেন কোয়ারেন্টাইনে থাকাকালীন নিজের চুল কাটা নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে! কিন্তু আমি, অবশেষে নিজেই ফ্রিঞ্জ কেটে বসলাম। আমি কি ঠিকঠাক কাটতে পেরেছি?’
প্রশ্নের উত্তরে জনাথনও বলেন, ‘বেশ পেরেছ!’
অক্সফোর্ড পড়ুয়া মালালা এখন বাড়ির বের হতে পারছেন না। তাই দিন কয়েক আগে বন্ধুদের মিস করে একটি পোস্টও করেছিলেন।
সূত্রঃ ইন্ডিয়া টুডে
ঢাকা/জেনিস
March 30, 2020 at 08:08AM Risingbd Bangla News https://ift.tt/2w1D3Xm
করোনা আতঙ্কে হিন্দু বৃদ্ধের সৎকারে কেউ এলো না, লাশ কাঁধে নিলো মুসলিমরা (ভিডিও)
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, ভয়ার্ত ভয়াল থাবা গ্রাস করেছে মুখরিত পৃথিবীবাসীকে। সর্বত্রই নিস্তব্ধ-নিথর-পাথর সময় শোকস্তব্ধ মানুষের।বিশ্বজুড়ে বর্তমানে একটাই আতঙ্ক-করোনা। অতঃপর কেউ একটু অসুস্থ হলেই কিংবা শারীরিক কোনও অসুস্থতা দেখা দিলে, অথবা কারও মৃত্যু ঘটলেই, নেপথ্যে ‘করোনা’কে দায়ী করা হচ্ছে। ভারতের বুলন্দশহরের বাসিন্দা রবিশংকরের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে মৃত্যু হয় সেই বৃদ্ধের।
প্রতিবেশীরা মনে করেছিলেন করোনা সংক্রমণের জেরেই হয়তো মৃত্যু হয়েছে রবিশংকরের। তাই শেষ দেখাটুকুও কেউ দেখতে আসেননি। পাড়া-প্রতিবেশী তো আসেনই-নি। এমনকী আত্মীয়স্বজনরা অবধি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন অসহায়, শোকাহত পরিবারটির কাছ থেকে। তাহলে, সৎকার কী করে হবে? চিন্তায় পড়ে যান রবিশংকরের পরিবার। কারণ, শ্মশান অবধি কাঁধে করে নিয়ে যাওয়ারও যে কেউ নেই!
রবিশংকরের পাড়ার পাশেই রয়েছে মুসলিম অধুষ্যিত এক এলাকা। খবর জানাজানি হতেই, একদল মুসলিম যুবক তৎক্ষণাৎ চলে আসেন মৃত হিন্দু বৃদ্ধের বাড়িতে। জানতে পারেন, কাঁধ দেওয়ার কিংবা সৎকার করার কেউ নেই। অসহায় পরিবারের চরম বিপদ দেখে ওই মুসলিম যুবকরাই তার পরিবারকে আশ্বাস দেন যে, সৎকারের সমস্ত ব্যবস্থা তাঁরাই করবেন।
মাথায় ফেজ টুপি, আর মুসলিম যুবকদের মুখে তখন ‘রামনাম সত্য হ্যায়’ ধ্বনি। কাঁধে করে শ্মশান অবধি নিয়ে রবিশংকরের সৎকারের ব্যবস্থাও তারাই করলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ভিডিওই এখন ভাইরাল। সম্প্রীতির দৃশ্যতেই মজেছেন নেটিজেনরা। বলছেন, “এটাই আমাদের প্রকৃত ভারতবর্ষ।” কেউ বা কাজী নজরুলের কবিতার লাইন উল্লেখ করে বলছেন, ‘মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান।’
এদেশে হিন্দু-মুসলিমদের লড়াই কিছু কম হয়নি। গত বছরেরই কথা। মেরুকরণের রাজনীতি নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন বিদ্বজ্জনেরা। গোমাংস বিক্রি করার জেরে খুনও হতে হয়েছে মুসলিম যুবককে। জামিয়া মিলিয়ার কথাই ধরুন কিংবা সাম্প্রতিক অতীতের জ্বলন্ত দিল্লি ইস্যু, ধ্বজাধারী রাজনীতির শিকারে এদেশে যে বার বার হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি বিঘ্নিত হয়েছে, তার উদাহরণ রয়েছে ঝুড়ি ঝুড়ি। দাবানলের মতো সমাজের সুস্থ চিন্তাভাবনাকে গ্রাস করছে বিভাজননীতি। অতীতেও করেছে। কিন্তু সম্প্রতি দেশজুড়ে এই লকডাউনের মাঝে উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরে যে দৃশ্য দেখা গেল, তাতেই ধন্য ধন্য করছেন নেটিজেনরা। আমাদের দেশে সম্প্রীতির এরকম নজিরও কিছু কম নেই বইকী! ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এগুলোই যে মানবতার দলিল হয়ে রয়ে যাবে।
করোনা আতঙ্কে হিন্দু বৃদ্ধের সৎকারে কেউ এলো না, লাশ কাঁধে নিলো মুসলিমরা (ভিডিও)
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, ভয়ার্ত ভয়াল থাবা গ্রাস করেছে মুখরিত পৃথিবীবাসীকে। সর্বত্রই নিস্তব্ধ-নিথর-পাথর সময় শোকস্তব্ধ মানুষের।বিশ্বজুড়ে বর্তমানে একটাই আতঙ্ক-করোনা। অতঃপর কেউ একটু অসুস্থ হলেই কিংবা শারীরিক কোনও অসুস্থতা দেখা দিলে, অথবা কারও মৃত্যু ঘটলেই, নেপথ্যে ‘করোনা’কে দায়ী করা হচ্ছে। ভারতের বুলন্দশহরের বাসিন্দা রবিশংকরের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে মৃত্যু হয় সেই বৃদ্ধের।
প্রতিবেশীরা মনে করেছিলেন করোনা সংক্রমণের জেরেই হয়তো মৃত্যু হয়েছে রবিশংকরের। তাই শেষ দেখাটুকুও কেউ দেখতে আসেননি। পাড়া-প্রতিবেশী তো আসেনই-নি। এমনকী আত্মীয়স্বজনরা অবধি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন অসহায়, শোকাহত পরিবারটির কাছ থেকে। তাহলে, সৎকার কী করে হবে? চিন্তায় পড়ে যান রবিশংকরের পরিবার। কারণ, শ্মশান অবধি কাঁধে করে নিয়ে যাওয়ারও যে কেউ নেই!
রবিশংকরের পাড়ার পাশেই রয়েছে মুসলিম অধুষ্যিত এক এলাকা। খবর জানাজানি হতেই, একদল মুসলিম যুবক তৎক্ষণাৎ চলে আসেন মৃত হিন্দু বৃদ্ধের বাড়িতে। জানতে পারেন, কাঁধ দেওয়ার কিংবা সৎকার করার কেউ নেই। অসহায় পরিবারের চরম বিপদ দেখে ওই মুসলিম যুবকরাই তার পরিবারকে আশ্বাস দেন যে, সৎকারের সমস্ত ব্যবস্থা তাঁরাই করবেন।
মাথায় ফেজ টুপি, আর মুসলিম যুবকদের মুখে তখন ‘রামনাম সত্য হ্যায়’ ধ্বনি। কাঁধে করে শ্মশান অবধি নিয়ে রবিশংকরের সৎকারের ব্যবস্থাও তারাই করলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ভিডিওই এখন ভাইরাল। সম্প্রীতির দৃশ্যতেই মজেছেন নেটিজেনরা। বলছেন, “এটাই আমাদের প্রকৃত ভারতবর্ষ।” কেউ বা কাজী নজরুলের কবিতার লাইন উল্লেখ করে বলছেন, ‘মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান।’
এদেশে হিন্দু-মুসলিমদের লড়াই কিছু কম হয়নি। গত বছরেরই কথা। মেরুকরণের রাজনীতি নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন বিদ্বজ্জনেরা। গোমাংস বিক্রি করার জেরে খুনও হতে হয়েছে মুসলিম যুবককে। জামিয়া মিলিয়ার কথাই ধরুন কিংবা সাম্প্রতিক অতীতের জ্বলন্ত দিল্লি ইস্যু, ধ্বজাধারী রাজনীতির শিকারে এদেশে যে বার বার হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি বিঘ্নিত হয়েছে, তার উদাহরণ রয়েছে ঝুড়ি ঝুড়ি। দাবানলের মতো সমাজের সুস্থ চিন্তাভাবনাকে গ্রাস করছে বিভাজননীতি। অতীতেও করেছে। কিন্তু সম্প্রতি দেশজুড়ে এই লকডাউনের মাঝে উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরে যে দৃশ্য দেখা গেল, তাতেই ধন্য ধন্য করছেন নেটিজেনরা। আমাদের দেশে সম্প্রীতির এরকম নজিরও কিছু কম নেই বইকী! ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এগুলোই যে মানবতার দলিল হয়ে রয়ে যাবে।
বস্তা কাঁধে নিয়ে হতদরিদ্রদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিলেন জেলা প্রশাসক
সারাদেশ
বাগেরহাট প্রতিনিধি
কোন সিনেমা কিংবা নাটক নয়, বাস্তব ঘটনা। নাটক কিংবা সিনেমায় অনেক অবাস্তব জিনিস দেখানো হয় যেটা বাস্তব জীবনে সম্ভব নয়। তবে এবার বাস্তবেই সমাজের অবহেলিত -অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ।করোনাভাইরাস নিয়ে চলমান সংকটে সরকারের দেয়া খাদ্য সাহায্য পৌঁছে দিতে কাঁধে বস্তা নিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষদের বাড়ি বাড়ি ছুটছেন তিনি। যা সমাজের অনন্য সাধারণ এবং বিরল ঘটনা।
রোববার (২৯ মার্চ) সকাল থেকে নিম্ন আয়ের মানুষদের মাঝে সরকারি খাদ্য সাহায্য বিতরণ শুরু করেছে বাগেরহাট জেলা প্রশাসন।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ জানান, সরকার করোনাভাইরাস প্রতিরোধে খাদ্য সহায়তা হিসেবে বাগেরহাট জেলায় ১০০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। রোববার থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সহায়তা দেয়া শুরু হয়েছে।
বাগেরহাট সদর, ফকিরহাট ও মোল্লাহাটসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মানুষের হাতে তুলে দেয়া প্রতি প্যাকেটে ১০ কেজি করে চাল, এক কেজি ডাল, আলু, লবণ, তেলসহ নানা ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীও রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
আশ্রয় কেন্দ্রের বাসিন্দা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শামীম মোল্লা ও রিকশাচালক রজব আলী বলেন, কয়েক দিন ধরে ঘরের বাইরে যেতে পারি না। চালসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্য ধার করে খাচ্ছি। ডিসি সাহেব চাল, ডাল দিয়েছেন। খুব উপকার হলো। রোমেচা বেগম, হাসিম হাওলাদার, নার্গিস বেগম বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে চাল, ডালসহ অনেক কিছু পেয়েছি। এতে আমাদের কয়েক দিন চলবে।
বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিনের সৌজন্যে জেলার ফকিরহাট ও মোল্লাহাট উপজেলায় তিন হাজার দরিদ্র পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। প্রতিটি প্যাকেটের গায়ে লেখা আছে কোভিড-১৯ করোনা ‘আতঙ্ক’ নয়, সচেতন হউন। আপনাদের পাশে আছি আমরা।
বস্তা কাঁধে নিয়ে হতদরিদ্রদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিলেন জেলা প্রশাসক
সারাদেশ
বাগেরহাট প্রতিনিধি
কোন সিনেমা কিংবা নাটক নয়, বাস্তব ঘটনা। নাটক কিংবা সিনেমায় অনেক অবাস্তব জিনিস দেখানো হয় যেটা বাস্তব জীবনে সম্ভব নয়। তবে এবার বাস্তবেই সমাজের অবহেলিত -অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ।করোনাভাইরাস নিয়ে চলমান সংকটে সরকারের দেয়া খাদ্য সাহায্য পৌঁছে দিতে কাঁধে বস্তা নিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষদের বাড়ি বাড়ি ছুটছেন তিনি। যা সমাজের অনন্য সাধারণ এবং বিরল ঘটনা।
রোববার (২৯ মার্চ) সকাল থেকে নিম্ন আয়ের মানুষদের মাঝে সরকারি খাদ্য সাহায্য বিতরণ শুরু করেছে বাগেরহাট জেলা প্রশাসন।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ জানান, সরকার করোনাভাইরাস প্রতিরোধে খাদ্য সহায়তা হিসেবে বাগেরহাট জেলায় ১০০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। রোববার থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সহায়তা দেয়া শুরু হয়েছে।
বাগেরহাট সদর, ফকিরহাট ও মোল্লাহাটসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মানুষের হাতে তুলে দেয়া প্রতি প্যাকেটে ১০ কেজি করে চাল, এক কেজি ডাল, আলু, লবণ, তেলসহ নানা ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীও রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
আশ্রয় কেন্দ্রের বাসিন্দা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শামীম মোল্লা ও রিকশাচালক রজব আলী বলেন, কয়েক দিন ধরে ঘরের বাইরে যেতে পারি না। চালসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্য ধার করে খাচ্ছি। ডিসি সাহেব চাল, ডাল দিয়েছেন। খুব উপকার হলো। রোমেচা বেগম, হাসিম হাওলাদার, নার্গিস বেগম বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে চাল, ডালসহ অনেক কিছু পেয়েছি। এতে আমাদের কয়েক দিন চলবে।
বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিনের সৌজন্যে জেলার ফকিরহাট ও মোল্লাহাট উপজেলায় তিন হাজার দরিদ্র পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। প্রতিটি প্যাকেটের গায়ে লেখা আছে কোভিড-১৯ করোনা ‘আতঙ্ক’ নয়, সচেতন হউন। আপনাদের পাশে আছি আমরা।
চীনে করোনার পুরো রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো খোলা হয়েছে বন্যপ্রাণীর বাজার। শুধু তাই নয় পুরোদমে বিক্রি হচ্ছে করোনাভাইরাসের অন্যতম বাহক বাদুড়। সেই সঙ্গে কুকুর, বিড়ালসহ অন্যান্য প্রাণী।
শনিবার (২৮ মার্চ ) থেকে বাজার চালু হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি স্টার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে যাওয়ার কারণে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গুলিন এবং দক্ষিণে দংগুয়ান শহরে বন্যপ্রাণী বাজার চালু হয়েছে। চালু হওয়ার পরপরই সেখানে ভীড় দেখা গেছে। এসব বাজারে অপরিচ্ছন্ন অবস্থাতেই বেচা-কেনা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে চীনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চীনের এক সাংবাদিক জানান, সবাই মনে করে চীনে করোনার প্রকোপ কমে গেছে। আর এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। এখন এটা বাইরের দেশের সমস্যা। তাই চীনারা স্বাভাবিক জীবন শুরু করছে।
চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে মহামারি করোনাভাইরাস।
অনেকের ধারণা উহানের একটি বন্যপ্রাণী বাজার থেকে ছড়িয়েছিলো প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। আর এ কারণে পুরো চীনে বন্ধ করা দেয়া হয়েছিল বন্যপ্রাণীর বাজার।
চীন থেকে ছড়িয়ে পড়লেও বর্তমানে ইতালি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ তাণ্ডব চালাচ্ছে করোনাভাইরাস। এই ভাইরাস পুরো বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন সাত লাখের বেশি মানুষ। মারা গেছেন ৩৩ হাজারেরও বেশি।
ঢাকা/জেনিস
March 30, 2020 at 08:05AM Risingbd Bangla News https://ift.tt/3auIZHf
আমি লজ্জিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী, প্লিজ... আমার মেয়েটিকে আর লজ্জা দিবেন না
মাহবুব কবির মিলন
বয়স্ক তিন ব্যক্তিকে কান ধরিয়ে উঠবস করানোর কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় পর থেকেই প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়েন যশোরের মনিরামপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসান । তার এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন জনপ্রশাসন সচিব এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ইতোমধ্যে কর্মস্থল থেকে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এবার সেই মনিরামপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসানের বাবা মাহবুব কবির মিলন তার নিজের ফেসবুকে ওই ঘটনার জন্য অনুতপ্ত, লজ্জিত এবং ক্ষমাপ্রার্থনা করে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু দেয়া হল—
আমি অনুতপ্ত, লজ্জিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। আমাদের মেয়েটির ভুলের দায় আমার, আমাদের। আমরা হয়ত পারিনি, আমাদের সন্তানদের অন্তরের গভীরে ঢুকে মানবিক মূল্যবোধ জাগাতে। আমরা পারিনি যথাযথ আদব কায়দা শেখাতে। আমরা পারিনি বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের সেবক হতে।
আমরা পারিনি আমাদের সন্তানদের নৈতিক অবক্ষয় আর মূল্যবধের পতন ঠেকাতে। আমরা পারিনি তাদেরে সত্যবাদী হয়ে গড়ে তুলতে। এ দায় একান্ত আমার।
অনেকদিন আগের কথা। আমি তখন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার অফিসের সহকারী কমিশনার। পিএস টু কমিশনার স্যারের (বাঘের চেয়েও বেশি ভয় পেতাম) রুমের সামনে দিয়ে যেতেই স্যার একটা ফাইল (তার কাজের) ধরিয়ে দিয়ে বললেন, কমিশনার স্যারের কাছে নিয়ে যেতে। এবার বাঘেরও বড় বাঘের সামনে গিয়ে হাজির হলাম। আমার একটা রোগ ছিল। উপ-সচিব থেকে সচিব স্যারদের সামনে গেলেই হাত পা কাঁপা শুরু হত। কোমর ছোট হয়ে প্যান্টের বেল্ট লুজ হয়ে প্যান্ট পড়ে পড়ে ভাব।
কমিশনার স্যার ফাইল দেখে হুঙ্কার দিয়ে আমাকে বকাবকি শুরু করলেন প্রায় পাঁচ মিনিট। রাগে তার হাত পা কাঁপছে। সামনে দুই অতিরিক্ত কমিশনার স্যার বসা। ফাইল ছুড়ে দিলেন আমার দিকে। ফাইল নিয়ে বের হয়ে আসলাম। বলার সাহস পেলাম না যে, স্যার ফাইলটা আমার নয়।
মাথা নিচু আর মুখ অন্ধকার করে পিএস স্যারের হাতে ফাইল দিয়ে বের হয়ে আসলাম। বলার সাহস পেলাম না যে, স্যার আপনার ফাইল, অথচ বকা শুনতে হল আমাকে।
এর কয়েক ঘণ্টা পর কমিশনার স্যার পিএস স্যারসহ সব অফিসারকে ডেকে বসালেন। সামনে সেই ফাইল। আবার আমার দিকে চেয়ে শুরু করলেন সেই বকাবকি। মাথা নিচু করে আবার সব শুনলাম। একবারও পিএস স্যারের দিকে তাকাবার সাহস পেলাম না।
সবাইকে বিদায় দিয়ে আমাকে থাকতে বললেন। এবার যা বললেন, আমি হা হয়ে তাকিয়ে থাকলাম স্যারের দিকে। "আমি জানি ফাইলটা তোমার নয়, যার ফাইল, সে ঠিকই জানে ভুলটা তার এবং বকাবকিও তার উদ্দেশে। তুমি মন খারাপ করবে না।
জীবনে সিনিয়রদের নিয়ে বা তাদের আচার আচরণ ভুলভ্রান্তি কারো সামনে তো দূরের কথা, নিজে নিজে বিড়বিড় করে তা বলিনি। এখন সিনিয়রদের কাজ নিয়ে ক্লোজ গ্রুপ খোলা হয়। চলে গালাগালি, চামড়া পর্যন্ত ছেলা হয় সেখানে। অংশ গ্রহণকারীদের কারো কারো চাকরির বয়স দুই এক বছর। তাল মেলায় আরও কিছু সিনিয়র।
দুঃখিত, সামনে আরও খারাপ সময় আসছে। ভয়াবহ দুঃসময়। এখন বলব না। বলব অবসরের পরে। যদি আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখেন। এ দায় আমার। একান্ত আমার। প্লিজ আমার মেয়েটিকে আর লজ্জিত এবং অপমানিত করবেন না আপনারা।
আমি লজ্জিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী, প্লিজ... আমার মেয়েটিকে আর লজ্জা দিবেন না
মাহবুব কবির মিলন
বয়স্ক তিন ব্যক্তিকে কান ধরিয়ে উঠবস করানোর কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় পর থেকেই প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়েন যশোরের মনিরামপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসান । তার এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন জনপ্রশাসন সচিব এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ইতোমধ্যে কর্মস্থল থেকে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এবার সেই মনিরামপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসানের বাবা মাহবুব কবির মিলন তার নিজের ফেসবুকে ওই ঘটনার জন্য অনুতপ্ত, লজ্জিত এবং ক্ষমাপ্রার্থনা করে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু দেয়া হল—
আমি অনুতপ্ত, লজ্জিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। আমাদের মেয়েটির ভুলের দায় আমার, আমাদের। আমরা হয়ত পারিনি, আমাদের সন্তানদের অন্তরের গভীরে ঢুকে মানবিক মূল্যবোধ জাগাতে। আমরা পারিনি যথাযথ আদব কায়দা শেখাতে। আমরা পারিনি বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের সেবক হতে।
আমরা পারিনি আমাদের সন্তানদের নৈতিক অবক্ষয় আর মূল্যবধের পতন ঠেকাতে। আমরা পারিনি তাদেরে সত্যবাদী হয়ে গড়ে তুলতে। এ দায় একান্ত আমার।
অনেকদিন আগের কথা। আমি তখন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার অফিসের সহকারী কমিশনার। পিএস টু কমিশনার স্যারের (বাঘের চেয়েও বেশি ভয় পেতাম) রুমের সামনে দিয়ে যেতেই স্যার একটা ফাইল (তার কাজের) ধরিয়ে দিয়ে বললেন, কমিশনার স্যারের কাছে নিয়ে যেতে। এবার বাঘেরও বড় বাঘের সামনে গিয়ে হাজির হলাম। আমার একটা রোগ ছিল। উপ-সচিব থেকে সচিব স্যারদের সামনে গেলেই হাত পা কাঁপা শুরু হত। কোমর ছোট হয়ে প্যান্টের বেল্ট লুজ হয়ে প্যান্ট পড়ে পড়ে ভাব।
কমিশনার স্যার ফাইল দেখে হুঙ্কার দিয়ে আমাকে বকাবকি শুরু করলেন প্রায় পাঁচ মিনিট। রাগে তার হাত পা কাঁপছে। সামনে দুই অতিরিক্ত কমিশনার স্যার বসা। ফাইল ছুড়ে দিলেন আমার দিকে। ফাইল নিয়ে বের হয়ে আসলাম। বলার সাহস পেলাম না যে, স্যার ফাইলটা আমার নয়।
মাথা নিচু আর মুখ অন্ধকার করে পিএস স্যারের হাতে ফাইল দিয়ে বের হয়ে আসলাম। বলার সাহস পেলাম না যে, স্যার আপনার ফাইল, অথচ বকা শুনতে হল আমাকে।
এর কয়েক ঘণ্টা পর কমিশনার স্যার পিএস স্যারসহ সব অফিসারকে ডেকে বসালেন। সামনে সেই ফাইল। আবার আমার দিকে চেয়ে শুরু করলেন সেই বকাবকি। মাথা নিচু করে আবার সব শুনলাম। একবারও পিএস স্যারের দিকে তাকাবার সাহস পেলাম না।
সবাইকে বিদায় দিয়ে আমাকে থাকতে বললেন। এবার যা বললেন, আমি হা হয়ে তাকিয়ে থাকলাম স্যারের দিকে। "আমি জানি ফাইলটা তোমার নয়, যার ফাইল, সে ঠিকই জানে ভুলটা তার এবং বকাবকিও তার উদ্দেশে। তুমি মন খারাপ করবে না।
জীবনে সিনিয়রদের নিয়ে বা তাদের আচার আচরণ ভুলভ্রান্তি কারো সামনে তো দূরের কথা, নিজে নিজে বিড়বিড় করে তা বলিনি। এখন সিনিয়রদের কাজ নিয়ে ক্লোজ গ্রুপ খোলা হয়। চলে গালাগালি, চামড়া পর্যন্ত ছেলা হয় সেখানে। অংশ গ্রহণকারীদের কারো কারো চাকরির বয়স দুই এক বছর। তাল মেলায় আরও কিছু সিনিয়র।
দুঃখিত, সামনে আরও খারাপ সময় আসছে। ভয়াবহ দুঃসময়। এখন বলব না। বলব অবসরের পরে। যদি আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখেন। এ দায় আমার। একান্ত আমার। প্লিজ আমার মেয়েটিকে আর লজ্জিত এবং অপমানিত করবেন না আপনারা।
মানুষ নিজের ছায়ামূর্তিকেও ভয় পেতে শুরু করেছে আজকাল। ভালোবাসার পৃথিবীতে সারি সারি মৃত্যুর মিছিল।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারী থেকে বিশ্বমারীতে রুপ নিয়েছে। পৃথিবী হয়েছে চলমান মৃত্যু উপত্যকা, জনপদের পর জনপদ অঘোষিত বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। জীবনীশক্তি আজ শূন্যের কোঠায়। কোভিড-১৯ খ্যাত, নভেল করোনা খ্যাত প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিস্তার যেনো ঝড়ের বেগে হু হু করে বেড়ে চলেছে। অজানা, অচেনা, অদৃশ্য এক কণিকা যার দৃষ্টি নেই, শব্দ নেই, বোধ নেই, বিবেক নেই, নেই ঘ্রাণ, হাত পা কোনো কিছু। আছে শুধু সৃষ্টি আর বিস্তার। মুহূর্তেই কেড়ে নিচ্ছে মানুষের প্রাণবায়ু। কতো অসহায় মানুষ! কতো অসহায় বিপুলা প্রাণের পৃথিবী।
গাণিতিক নয়, জ্যামিতিক হারে ভাইরাসটির বিস্তার ঘটছে। প্রতিনিয়ত ভাইরাসটি জিনের মিউটেশন (পরিবর্তন) ঘটাচ্ছে বিধায় চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারেও হিমশিম খাচ্ছেন। নভেল করোনা আবিষ্কৃত হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৩৮০ বার তার জিনের গঠন বদলেছে। সময় থমকে গিয়েছে ব্যস্ত কোলাহলমুখর বিশ্বের প্রতিটি শপিং মল থেকে বিনোদন পাড়া, অলিগলি থেকে রাজনীতি-অর্থনীতির সূচক থেকে উপাসনালয় পর্যন্ত। জনমানবহীন বিরানভূমি প্রতিটি রাষ্ট্র, প্রতিটি দেশ। স্বেচ্ছা লকডাউনের সংস্কৃতিতে নিপতিত পুরো বিশ্ব। ভেঙে পড়ছে ব্যবসা বাণিজ্য, উন্নয়ন অবকাঠামোসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান। বাঁচার তাগিদে লড়ছে সবাই। চীনের অভিশপ্ত উহানে উৎপক্তি হওয়া ভাইরাসটির গতি-প্রকৃতিও হেঁয়ালি-উদাসীন। কোনো স্থির চরিত্র নেই যেনো। সর্বত্র যুদ্ধ যুদ্ধ অবস্থা। সকলে তৈরি হচ্ছে যুদ্ধ জয়ের তাগিদে। প্রথম, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নৃশংসতার হৃদয় বিদারক ইতিহাস পড়েছি, জেনেছি কিন্ত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় হচ্ছে শুনতে শুনতে অবশেষে ভাইরাসজনিত তৃতীয় যুদ্ধও শুরু হয়ে গিয়েছে। বিদ্যমান পৃথিবীতে মানবসভ্যতা ভয়ানক অস্তিত্ব সংকটে আজ। বিশ্বের শীর্ষ নেতারা পারমাণবিক যুদ্ধের পরিবর্তে ভাইরাস যুদ্ধে একাট্টা হয়ে একযোগে এককাতারে থেকে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন নভেল করোনা’র বিরুদ্ধে। পারমাণবিক অস্ত্রের সবধরনের মহড়াকে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে আন্ধা এক অচেনা ভাইরাস। জমজমাট নির্ঘুম শহর-রাজপথ আক্ষেপে কাঁদছে, ঘুমিয়ে পড়েছে নয় এক দানবীয় আতঙ্কে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। রুপকথার সোনার কাঠি রুপোর কাঠিতে নয় মৃত্যু কাঠির ভয়ঙ্কর স্পর্শে সারা পৃথিবী কাঁপছে। মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে দিনকে দিন। চীন ছাপিয়ে ইতালি-স্পেন এখন নিস্তব্ধ মৃত্যুপুরী। ইতালির প্রধানমন্ত্রী Giuseppe Conte সব হারিয়ে নৈরাশ্যের সীমানায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আশান্বিত হচ্ছেন। করোনা চেনে না আপন-পর, শক্রু-বন্ধু, রাজা-প্রজা, ধনী-দরিদ্র, কোনো ধর্ম-বর্ণ, জাত-পাত নির্বিশেষে।
৮ মার্চ প্রথম বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে। তারপর থেকে চলছে সুরক্ষা-সতর্কতার নানামুখী প্রচারণা। ব্যক্তিগত পর্যায়ে, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীসহ আইইডিসিআর চব্বিশ ঘণ্টা করোনা সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে জনগণকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। হোম কোয়ারেন্টাইনে স্বেচ্ছা অন্তরীণ আজ অনিবার্য সময়ের দাবি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে সর্বাবস্থায় সহযোগিতার আশ্বাস, তবুও জনমনে আতঙ্ক কী কাটছে? অদ্ভূত এক অচেনা আঁধার ঘিরে রেখেছে সকলের হৃদয় মন।
বড়ো কন্যা দুই নাতি ও জামাইসহ ইতালির রোমে বসবাস করছে। প্রতি মুহূর্তে খবর নিচ্ছি, ভিডিও কল এ কথা বলছি, সাহস দিচ্ছি তবুও আতঙ্ক কাটছে না মন থেকে। মেয়েটাকে আজ বড় বিষন্ন আর আতঙ্কিত মনে হলো। তখন থেকে মনটা কারোরই ভালো নেই। সবই আল্লাহ ভরসা। আতঙ্ক আজ পরিবারে, বন্ধু-স্বজনের জিজ্ঞাসিত চোখে-মুখে মনে। উচ্ছ্বাস নেই, উষ্ণতা নেই আছে শুধু অসহায় দীর্ঘশ্বাস।
তবুও আশা নিয়েই বাঁচে মানুষ। করোনাভাইরাসের আগেও পৃথিবীতে বহু মহামারী-বিশ্বমারী পূর্বপুরুষেরা প্রত্যক্ষ করেছেন। প্রাচীন গ্রিসের "দ্য প্লেগ অব এথেন্স"-যেটাকে পৃথিবীর প্রথম প্লেগ মহামারীরুপে আখ্যায়িত করা হয়। যেটি ঘটেছিলো ৪৩০ খ্রী. গ্রিক ইতিহাসবিদ থুসিডাইডসের "হিস্ট্রি অব দ্য পেলোপনেসিয়ান ওয়্যার" এর বর্ণনানুযায়ী এথেন্সের সেই প্লেগে হাজার হাজার সৈন্য মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
এছাড়াও প্রাচীন এথেন্সে টাইফয়েড, টাইফাস, গুটি বসন্ত, অ্যানথ্রাক্স রোগের প্রাদুর্ভাবও ঘটেছিলো তবে মহামারী আকার ধারণ করেছিল গুটিবসন্ত। কখনও প্লেগ আকারে কখনও ইঁদুর বাহিত হয়ে ভাইরাস ছড়িয়ে প্রাণঘাতী মহামারী নিঃশব্দেই চলেছে। মৃত্যুবরণও করেছেন কোটি কোটি মানুষ। স্থায়িত্বের দিক থেকেও এসব মহামারী কখনও দশকের পর দশক আবার কখনও বা ৫০ বছর পর্যন্ত।
১৩৫১ সালে "ব্ল্যাক ডেথের" বিধ্বংসী তাণ্ডবলীলায় বলা হয়ে থাকে পুরো ইউরোপের দুই তৃতীয়াংশ মানুষ জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। গ্লোবাল বিশ্ব অর্থনীতি যতো সমৃদ্ধ হয়েছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে প্রাণঘাতী নতুন নতুন ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞান থেমে নেই, ফ্লু, গুটিবসন্ত, কলেরা, সার্স এর মতো ভয়ঙ্কর প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিরুদ্ধেও আবিষ্কৃত হয়েছে ভ্যাকসিন।
ছোটোবেলায় শুনেছি ওলাবিবি ঢুকলে নাকি গ্রামের পর গ্রাম বসন্তে উজাড় হয়ে যেতো। দেখেছি, শুনেওছি, আমার মায়েরও নাকি ছোটোবেলায় সেরকম কঠিন গুটিবসন্ত হয়েছিল। কবিরাজের কথামতো আম্মাকে কলাপাতায় শুইয়ে রেখেছিল। ভয়ঙ্কর সেই মৃত্যু থাবা থেকে আল্লাহ আমার মাকে সুস্থ করে তুলেছিলেন বলেই আমরা তার সন্তান হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলাম। আজ সে অর্থে গুটিবসন্ত লোকসমাজে নেই বললেই চলে।
আমার ছোটোবেলার আর একটা করুণ ঘটনা আজ দুদিন ধরেই আবছা আবছা হয়ে বার বার মনের পর্দায় ভেসে উঠছে। তখন মনে হয় আমি দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি। আমার জামালপুরের কাচারীপাড়ার বাসার পাশেই আর একটা নিম্নবিত্ত পরিবার বাস করতেন। পেশা হিসেবে তারা "সন পাপড়ি" বানিয়ে বিক্রি করতেন। সেই হাতে তৈরি "সন পাপড়ি" বানানোর যে শৈল্পিকতা সেটা আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতাম। আমি সেই দম্পতিকে খালা-খালু বলে ডাকতাম। আমার বাবা আমাকে কোনো বাসায় যেতে দিতেন না। কিন্ত কথিত বাসাটি আমাদের ঘরের পাশেই হওয়ায় আব্বার অগোচরেই চলে যেতাম "সন পাপড়ি" বানানো দেখতে। চিনির ঘন সিরা থেকে বড়ো থালে নিয়ে ময়দা সহযোগে দুজনে থালের দুইপ্রান্ত থেকে টেনে টেনে ক্রস করে করে একসময় সেমাই এর মতো মিহি হয়ে ঝরঝরে সন পাপড়িতে পরিণত হতো। ওনারা আমাকে কন্যাসম মনে করতেন, আদর করে খেতেও দিতেন। সেই দম্পতির জ্যেষ্ঠ ছেলে সন্তান। বয়স ঠিক জানতাম না, তবে বয়সে তরুণ, সবাই তাকে "তৈমুছ" নামেই ডাকতো। যতোদূর মনে পড়ে বিয়ের জন্য পাত্রী খোঁজা হচ্ছিলো তার। হঠাৎ করেই একদিন অসুস্থ হয়ে পড়লো সে। পাড়ায় জানাজানি হয়ে গেল তৈমুছের কলেরা হয়েছে। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত বাড়তে থাকলো কিন্তু কিছুতেই কলেরা কমছিল না। তার বাবা মা কী চেষ্টা করেছেন, কতোটুকুন করেছেন সেটা জানার মতো বয়স তখন আমার ছিল না। তবে যে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে সে রাত আমরা কাটিয়েছি সেটা মনে হয় কোনোদিনও ভোলা যাবে না। রাত যতো বাড়ছিল, ছেলেটি "পানি পানি" বলে কাতরাচ্ছিলো। নিস্তব্ধ রাতের সেই ভয়ংকর কাতরানোর শব্দ আমরা শুনতে পাচ্ছিলাম। ওদিকে আমার আব্বা আম্মাকে দেখেছি ভয়ার্ত কণ্ঠে আমাদের চার ভাইবোনকে জড়িয়ে নিয়ে উচ্চস্বরে "সালামুন কাওলাম মিরাব্বি রাহিম" পড়তে। মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে পড়েছি কিন্তু আতঙ্কিত হয়ে আব্বা আম্মার সেই দোয়া দরুদ পাঠের শব্দে আবার জেগে গিয়েছি। "মা পানি, মা পানি" শব্দ যতো শোনা যাচ্ছিল, আমাদের ভয়ও ততো বেড়ে চলেছিল। কিন্তু কী দুর্ভাগ্য কেউ তাকে একফোঁটা পানি দিতে সাহস করেন নাই। অবশেষে ভোরের আজানের সময় সব বন্ধন ছিন্ন করে সে মৃত্যুর কোলে আশ্রয় নিয়েছিল। কী অসহায় নিয়তি!! কান্নার রোল!! আমরা ভয়ে জড়সড়!!
আজ আর সেই দিন নেই, কলেরা, গুটিবসন্তে এখন আর মড়ক নেই মহামারীও নেই। আধুনিক বিশ্বে চিকিৎসাবিজ্ঞানের সফলতা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। তাই করোনা নিয়েও কোনো আতঙ্ক নয়। উৎকণ্ঠার পাশাপাশি সফলতার গল্পও কম নয়। শতবর্ষীরাও কোভিড-১৯ কে জয় করে জীবনে ফিরে এসেছে। নিজে সেরে উঠেছেন এবং অন্যদেরকেও আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। শুধুমাত্র মনোবল আর সচেতনতাই পারে অদৃশ্য এ যুদ্ধে জয়লাভ করার শক্তি যোগাতে।
ক্রিকেট কিংবদন্তী শচীন টেন্ডুলকার করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে তুলনা করেছেন টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্গে। এই ব্যাটিং জিনিয়াস বলেন, "টেস্টে দলকে জেতাতে হলে সবাই মিলে পারফর্ম করতে হবে। পার্টনারশীপ কিংবা টিমওয়ার্ক ছাড়া টেস্টে জয়লাভ করা যায় না। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সাফল্য পেতে হলে সবাই মিলে কাজ করতে হবে।"
ক্রিকেটের মতো সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন জরুরি নইলে একটু অসতর্ক হলেই সর্বক্ষেত্রে সর্বনাশ ঘটে যাবার সম্ভাবনা নিশ্চিত।
সর্বত্রই নিরাশার আঁধার এমনটি কিন্ত নয়। করোনাভাইরাসকে জয় করে সাফল্য বয়ে এনেছে এমন দেশের সংখ্যা স্বল্প হলেও আশা জাগানিয়া। দেশগুলো হচ্ছে-হংকং, ম্যাকাও, ভিয়েতনাম, রাশিয়া, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ সিঙ্গাপুরও রয়েছে এ তালিকায়।
সারাদেশ রয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণে জনগণকে আতঙ্কিত এবং ভীত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেসহ সকল বীর শহীদদের, যারা এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন। তিনি বলেন, দেশে কোনো খাদ্য ঘাটতি নেই, ওষুধ স্বল্পতাও নেই। অহেতুক গুজবে কান না দেয়ার জন্য জনগণকে আহ্বান জানান। চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ সব বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে মনিটরিং করছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তবুও বিশ্বজুড়ে চলছে অসম-অস্থির ভয়াবহ এক যুদ্ধ। প্রকাশ্য শক্রুকে চেনা যায়, প্রতিহতও করা যায়। চিরায়ত যুদ্ধের দামামা চলেছে-চলছে, জাতিতে জাতিতে, দেশে দেশে, গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে। কিন্ত নভেল করোনাভাইরাসের সাথে যুদ্ধ কোনো সাধারণ যুদ্ধ নয়, অদেখা-অচেনা শক্রর সাথে চলছে বিদগ্ধ যন্ত্রণাময় এক অন্তর্দ্বন্দ্ব। প্রাণের গ্রহ পৃথিবী আজ ভয়ানক অস্তিত্ব সংকটে। যুক্তিহীন কুসংস্কার, গুজব অস্থির মানবমনে মুহূর্তেই ছড়িয়ে জনজীবনকে করে তুলছে বিপন্ন, বিপর্যস্ত-পর্যুদস্ত। ভয়ার্ত মুখাবয়বে আতঙ্কের ছোঁয়া। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। কে জানে, কার মাঝে গোপনে বাসা বেঁধেছে মরণব্যাধি নভেল করোনা"।
তবুও, আশায় বাঁচে মানুষ। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা রাতদিন একাকার করে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারে। আমেরিকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট দাবি করছে তারা যে টিকাটি আবিষ্কার করছেন সেটির কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য ৪৫ দিন সময় লাগবে। নতুন এই জীবনদায়ী টিকাটির নাম "এমআরএনএ-১২৭৩"। এটুকু অপেক্ষা তো আমরা বিশ্ববাসী করতেই পারি (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২০ মার্চ ২০২০, ৭ চৈত্র ১৪২৬, পৃ: ০৫)।
বৈশ্বিক মহামারীর প্রেক্ষাপটে আপাততঃ জনজীবনে যে ছন্দপতন ঘটেছে তার উত্তরণ ঘটাতে জনগণকেই সচেতন হতে হবে সর্বাগ্রে। বৈশ্বিকভাবেই এর মোকাবেলা করতে হবে। মানবতার সীমানায় কোনোকিছুই আজ অন্তরায় নয়। মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁর রোষানল থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করুন। দোষারোপের সংস্কৃতি, মানুষকে হয়রানির সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে এসে একসাথে একযোগে বাঁচার জন্য লড়তে হবে সকলকে।
প্রবাসীরা কোনো আতঙ্কের নাম নয়। ওরা আমাদেরই সন্তান, পরিবার, বন্ধু-স্বজন। ওদের প্রতি কোনো বিদ্বেষ নয়, ওদের সুরক্ষায় চলুন প্রার্থনা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে। সহানুভূতির সাথে পাশে দাঁড়াই। আমাদের বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে তাঁদের পাঠানো রেমিটেন্স গতিশীল করেছে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাকে। সুতরাং রেমিটেন্স যোদ্ধাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আর সহমর্মীতা সবসময় অব্যাহত থাকবে।
মৃত্যু আতঙ্ক যখন সর্বগ্রাসী হয়ে সকল দরজাতেই কড়া নাড়ছে তখন আর ভয় কীসের? চলুন, সর্বশক্তি প্রয়োগ করে জ্বলে উঠি একবার। বৈপ্লবিক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দৈহিক দূরত্ব বজায় রেখে, মানসিকভাবে কাছে থাকি, পাশে থাকি, সবাই সবাইকে সহযোগিতার মাধ্যমে করোনা দুর্যোগকে প্রতিহত করি। স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইনে থেকে সামাজিক সুরক্ষায় অংশগ্রহণ করে দেশ বাঁচাই, বিশ্ব বাঁচাই। বিপ্লবের অদৃশ্য আগুন জ্বলতে শুরু করেছে "করোনার বিরুদ্ধে" পুরো বিশ্বব্যাপী। অদৃশ্য জয় রথের দেখা মিলবেই একসময়। ততোক্ষণ আমরা ধৈর্য ধারণ করে কায়মনোবাক্যে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকি। তিনি নিশ্চয়ই মহা ক্ষমাশীল, মহান দয়ালু।
মানুষ নিজের ছায়ামূর্তিকেও ভয় পেতে শুরু করেছে আজকাল। ভালোবাসার পৃথিবীতে সারি সারি মৃত্যুর মিছিল।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারী থেকে বিশ্বমারীতে রুপ নিয়েছে। পৃথিবী হয়েছে চলমান মৃত্যু উপত্যকা, জনপদের পর জনপদ অঘোষিত বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। জীবনীশক্তি আজ শূন্যের কোঠায়। কোভিড-১৯ খ্যাত, নভেল করোনা খ্যাত প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিস্তার যেনো ঝড়ের বেগে হু হু করে বেড়ে চলেছে। অজানা, অচেনা, অদৃশ্য এক কণিকা যার দৃষ্টি নেই, শব্দ নেই, বোধ নেই, বিবেক নেই, নেই ঘ্রাণ, হাত পা কোনো কিছু। আছে শুধু সৃষ্টি আর বিস্তার। মুহূর্তেই কেড়ে নিচ্ছে মানুষের প্রাণবায়ু। কতো অসহায় মানুষ! কতো অসহায় বিপুলা প্রাণের পৃথিবী।
গাণিতিক নয়, জ্যামিতিক হারে ভাইরাসটির বিস্তার ঘটছে। প্রতিনিয়ত ভাইরাসটি জিনের মিউটেশন (পরিবর্তন) ঘটাচ্ছে বিধায় চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারেও হিমশিম খাচ্ছেন। নভেল করোনা আবিষ্কৃত হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৩৮০ বার তার জিনের গঠন বদলেছে। সময় থমকে গিয়েছে ব্যস্ত কোলাহলমুখর বিশ্বের প্রতিটি শপিং মল থেকে বিনোদন পাড়া, অলিগলি থেকে রাজনীতি-অর্থনীতির সূচক থেকে উপাসনালয় পর্যন্ত। জনমানবহীন বিরানভূমি প্রতিটি রাষ্ট্র, প্রতিটি দেশ। স্বেচ্ছা লকডাউনের সংস্কৃতিতে নিপতিত পুরো বিশ্ব। ভেঙে পড়ছে ব্যবসা বাণিজ্য, উন্নয়ন অবকাঠামোসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান। বাঁচার তাগিদে লড়ছে সবাই। চীনের অভিশপ্ত উহানে উৎপক্তি হওয়া ভাইরাসটির গতি-প্রকৃতিও হেঁয়ালি-উদাসীন। কোনো স্থির চরিত্র নেই যেনো। সর্বত্র যুদ্ধ যুদ্ধ অবস্থা। সকলে তৈরি হচ্ছে যুদ্ধ জয়ের তাগিদে। প্রথম, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নৃশংসতার হৃদয় বিদারক ইতিহাস পড়েছি, জেনেছি কিন্ত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় হচ্ছে শুনতে শুনতে অবশেষে ভাইরাসজনিত তৃতীয় যুদ্ধও শুরু হয়ে গিয়েছে। বিদ্যমান পৃথিবীতে মানবসভ্যতা ভয়ানক অস্তিত্ব সংকটে আজ। বিশ্বের শীর্ষ নেতারা পারমাণবিক যুদ্ধের পরিবর্তে ভাইরাস যুদ্ধে একাট্টা হয়ে একযোগে এককাতারে থেকে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন নভেল করোনা’র বিরুদ্ধে। পারমাণবিক অস্ত্রের সবধরনের মহড়াকে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে আন্ধা এক অচেনা ভাইরাস। জমজমাট নির্ঘুম শহর-রাজপথ আক্ষেপে কাঁদছে, ঘুমিয়ে পড়েছে নয় এক দানবীয় আতঙ্কে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। রুপকথার সোনার কাঠি রুপোর কাঠিতে নয় মৃত্যু কাঠির ভয়ঙ্কর স্পর্শে সারা পৃথিবী কাঁপছে। মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে দিনকে দিন। চীন ছাপিয়ে ইতালি-স্পেন এখন নিস্তব্ধ মৃত্যুপুরী। ইতালির প্রধানমন্ত্রী Giuseppe Conte সব হারিয়ে নৈরাশ্যের সীমানায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আশান্বিত হচ্ছেন। করোনা চেনে না আপন-পর, শক্রু-বন্ধু, রাজা-প্রজা, ধনী-দরিদ্র, কোনো ধর্ম-বর্ণ, জাত-পাত নির্বিশেষে।
৮ মার্চ প্রথম বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে। তারপর থেকে চলছে সুরক্ষা-সতর্কতার নানামুখী প্রচারণা। ব্যক্তিগত পর্যায়ে, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীসহ আইইডিসিআর চব্বিশ ঘণ্টা করোনা সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে জনগণকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। হোম কোয়ারেন্টাইনে স্বেচ্ছা অন্তরীণ আজ অনিবার্য সময়ের দাবি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে সর্বাবস্থায় সহযোগিতার আশ্বাস, তবুও জনমনে আতঙ্ক কী কাটছে? অদ্ভূত এক অচেনা আঁধার ঘিরে রেখেছে সকলের হৃদয় মন।
বড়ো কন্যা দুই নাতি ও জামাইসহ ইতালির রোমে বসবাস করছে। প্রতি মুহূর্তে খবর নিচ্ছি, ভিডিও কল এ কথা বলছি, সাহস দিচ্ছি তবুও আতঙ্ক কাটছে না মন থেকে। মেয়েটাকে আজ বড় বিষন্ন আর আতঙ্কিত মনে হলো। তখন থেকে মনটা কারোরই ভালো নেই। সবই আল্লাহ ভরসা। আতঙ্ক আজ পরিবারে, বন্ধু-স্বজনের জিজ্ঞাসিত চোখে-মুখে মনে। উচ্ছ্বাস নেই, উষ্ণতা নেই আছে শুধু অসহায় দীর্ঘশ্বাস।
তবুও আশা নিয়েই বাঁচে মানুষ। করোনাভাইরাসের আগেও পৃথিবীতে বহু মহামারী-বিশ্বমারী পূর্বপুরুষেরা প্রত্যক্ষ করেছেন। প্রাচীন গ্রিসের "দ্য প্লেগ অব এথেন্স"-যেটাকে পৃথিবীর প্রথম প্লেগ মহামারীরুপে আখ্যায়িত করা হয়। যেটি ঘটেছিলো ৪৩০ খ্রী. গ্রিক ইতিহাসবিদ থুসিডাইডসের "হিস্ট্রি অব দ্য পেলোপনেসিয়ান ওয়্যার" এর বর্ণনানুযায়ী এথেন্সের সেই প্লেগে হাজার হাজার সৈন্য মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
এছাড়াও প্রাচীন এথেন্সে টাইফয়েড, টাইফাস, গুটি বসন্ত, অ্যানথ্রাক্স রোগের প্রাদুর্ভাবও ঘটেছিলো তবে মহামারী আকার ধারণ করেছিল গুটিবসন্ত। কখনও প্লেগ আকারে কখনও ইঁদুর বাহিত হয়ে ভাইরাস ছড়িয়ে প্রাণঘাতী মহামারী নিঃশব্দেই চলেছে। মৃত্যুবরণও করেছেন কোটি কোটি মানুষ। স্থায়িত্বের দিক থেকেও এসব মহামারী কখনও দশকের পর দশক আবার কখনও বা ৫০ বছর পর্যন্ত।
১৩৫১ সালে "ব্ল্যাক ডেথের" বিধ্বংসী তাণ্ডবলীলায় বলা হয়ে থাকে পুরো ইউরোপের দুই তৃতীয়াংশ মানুষ জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। গ্লোবাল বিশ্ব অর্থনীতি যতো সমৃদ্ধ হয়েছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে প্রাণঘাতী নতুন নতুন ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞান থেমে নেই, ফ্লু, গুটিবসন্ত, কলেরা, সার্স এর মতো ভয়ঙ্কর প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিরুদ্ধেও আবিষ্কৃত হয়েছে ভ্যাকসিন।
ছোটোবেলায় শুনেছি ওলাবিবি ঢুকলে নাকি গ্রামের পর গ্রাম বসন্তে উজাড় হয়ে যেতো। দেখেছি, শুনেওছি, আমার মায়েরও নাকি ছোটোবেলায় সেরকম কঠিন গুটিবসন্ত হয়েছিল। কবিরাজের কথামতো আম্মাকে কলাপাতায় শুইয়ে রেখেছিল। ভয়ঙ্কর সেই মৃত্যু থাবা থেকে আল্লাহ আমার মাকে সুস্থ করে তুলেছিলেন বলেই আমরা তার সন্তান হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলাম। আজ সে অর্থে গুটিবসন্ত লোকসমাজে নেই বললেই চলে।
আমার ছোটোবেলার আর একটা করুণ ঘটনা আজ দুদিন ধরেই আবছা আবছা হয়ে বার বার মনের পর্দায় ভেসে উঠছে। তখন মনে হয় আমি দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি। আমার জামালপুরের কাচারীপাড়ার বাসার পাশেই আর একটা নিম্নবিত্ত পরিবার বাস করতেন। পেশা হিসেবে তারা "সন পাপড়ি" বানিয়ে বিক্রি করতেন। সেই হাতে তৈরি "সন পাপড়ি" বানানোর যে শৈল্পিকতা সেটা আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতাম। আমি সেই দম্পতিকে খালা-খালু বলে ডাকতাম। আমার বাবা আমাকে কোনো বাসায় যেতে দিতেন না। কিন্ত কথিত বাসাটি আমাদের ঘরের পাশেই হওয়ায় আব্বার অগোচরেই চলে যেতাম "সন পাপড়ি" বানানো দেখতে। চিনির ঘন সিরা থেকে বড়ো থালে নিয়ে ময়দা সহযোগে দুজনে থালের দুইপ্রান্ত থেকে টেনে টেনে ক্রস করে করে একসময় সেমাই এর মতো মিহি হয়ে ঝরঝরে সন পাপড়িতে পরিণত হতো। ওনারা আমাকে কন্যাসম মনে করতেন, আদর করে খেতেও দিতেন। সেই দম্পতির জ্যেষ্ঠ ছেলে সন্তান। বয়স ঠিক জানতাম না, তবে বয়সে তরুণ, সবাই তাকে "তৈমুছ" নামেই ডাকতো। যতোদূর মনে পড়ে বিয়ের জন্য পাত্রী খোঁজা হচ্ছিলো তার। হঠাৎ করেই একদিন অসুস্থ হয়ে পড়লো সে। পাড়ায় জানাজানি হয়ে গেল তৈমুছের কলেরা হয়েছে। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত বাড়তে থাকলো কিন্তু কিছুতেই কলেরা কমছিল না। তার বাবা মা কী চেষ্টা করেছেন, কতোটুকুন করেছেন সেটা জানার মতো বয়স তখন আমার ছিল না। তবে যে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে সে রাত আমরা কাটিয়েছি সেটা মনে হয় কোনোদিনও ভোলা যাবে না। রাত যতো বাড়ছিল, ছেলেটি "পানি পানি" বলে কাতরাচ্ছিলো। নিস্তব্ধ রাতের সেই ভয়ংকর কাতরানোর শব্দ আমরা শুনতে পাচ্ছিলাম। ওদিকে আমার আব্বা আম্মাকে দেখেছি ভয়ার্ত কণ্ঠে আমাদের চার ভাইবোনকে জড়িয়ে নিয়ে উচ্চস্বরে "সালামুন কাওলাম মিরাব্বি রাহিম" পড়তে। মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে পড়েছি কিন্তু আতঙ্কিত হয়ে আব্বা আম্মার সেই দোয়া দরুদ পাঠের শব্দে আবার জেগে গিয়েছি। "মা পানি, মা পানি" শব্দ যতো শোনা যাচ্ছিল, আমাদের ভয়ও ততো বেড়ে চলেছিল। কিন্তু কী দুর্ভাগ্য কেউ তাকে একফোঁটা পানি দিতে সাহস করেন নাই। অবশেষে ভোরের আজানের সময় সব বন্ধন ছিন্ন করে সে মৃত্যুর কোলে আশ্রয় নিয়েছিল। কী অসহায় নিয়তি!! কান্নার রোল!! আমরা ভয়ে জড়সড়!!
আজ আর সেই দিন নেই, কলেরা, গুটিবসন্তে এখন আর মড়ক নেই মহামারীও নেই। আধুনিক বিশ্বে চিকিৎসাবিজ্ঞানের সফলতা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। তাই করোনা নিয়েও কোনো আতঙ্ক নয়। উৎকণ্ঠার পাশাপাশি সফলতার গল্পও কম নয়। শতবর্ষীরাও কোভিড-১৯ কে জয় করে জীবনে ফিরে এসেছে। নিজে সেরে উঠেছেন এবং অন্যদেরকেও আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। শুধুমাত্র মনোবল আর সচেতনতাই পারে অদৃশ্য এ যুদ্ধে জয়লাভ করার শক্তি যোগাতে।
ক্রিকেট কিংবদন্তী শচীন টেন্ডুলকার করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে তুলনা করেছেন টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্গে। এই ব্যাটিং জিনিয়াস বলেন, "টেস্টে দলকে জেতাতে হলে সবাই মিলে পারফর্ম করতে হবে। পার্টনারশীপ কিংবা টিমওয়ার্ক ছাড়া টেস্টে জয়লাভ করা যায় না। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সাফল্য পেতে হলে সবাই মিলে কাজ করতে হবে।"
ক্রিকেটের মতো সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন জরুরি নইলে একটু অসতর্ক হলেই সর্বক্ষেত্রে সর্বনাশ ঘটে যাবার সম্ভাবনা নিশ্চিত।
সর্বত্রই নিরাশার আঁধার এমনটি কিন্ত নয়। করোনাভাইরাসকে জয় করে সাফল্য বয়ে এনেছে এমন দেশের সংখ্যা স্বল্প হলেও আশা জাগানিয়া। দেশগুলো হচ্ছে-হংকং, ম্যাকাও, ভিয়েতনাম, রাশিয়া, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ সিঙ্গাপুরও রয়েছে এ তালিকায়।
সারাদেশ রয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণে জনগণকে আতঙ্কিত এবং ভীত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেসহ সকল বীর শহীদদের, যারা এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন। তিনি বলেন, দেশে কোনো খাদ্য ঘাটতি নেই, ওষুধ স্বল্পতাও নেই। অহেতুক গুজবে কান না দেয়ার জন্য জনগণকে আহ্বান জানান। চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ সব বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে মনিটরিং করছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তবুও বিশ্বজুড়ে চলছে অসম-অস্থির ভয়াবহ এক যুদ্ধ। প্রকাশ্য শক্রুকে চেনা যায়, প্রতিহতও করা যায়। চিরায়ত যুদ্ধের দামামা চলেছে-চলছে, জাতিতে জাতিতে, দেশে দেশে, গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে। কিন্ত নভেল করোনাভাইরাসের সাথে যুদ্ধ কোনো সাধারণ যুদ্ধ নয়, অদেখা-অচেনা শক্রর সাথে চলছে বিদগ্ধ যন্ত্রণাময় এক অন্তর্দ্বন্দ্ব। প্রাণের গ্রহ পৃথিবী আজ ভয়ানক অস্তিত্ব সংকটে। যুক্তিহীন কুসংস্কার, গুজব অস্থির মানবমনে মুহূর্তেই ছড়িয়ে জনজীবনকে করে তুলছে বিপন্ন, বিপর্যস্ত-পর্যুদস্ত। ভয়ার্ত মুখাবয়বে আতঙ্কের ছোঁয়া। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। কে জানে, কার মাঝে গোপনে বাসা বেঁধেছে মরণব্যাধি নভেল করোনা"।
তবুও, আশায় বাঁচে মানুষ। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা রাতদিন একাকার করে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারে। আমেরিকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট দাবি করছে তারা যে টিকাটি আবিষ্কার করছেন সেটির কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য ৪৫ দিন সময় লাগবে। নতুন এই জীবনদায়ী টিকাটির নাম "এমআরএনএ-১২৭৩"। এটুকু অপেক্ষা তো আমরা বিশ্ববাসী করতেই পারি (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২০ মার্চ ২০২০, ৭ চৈত্র ১৪২৬, পৃ: ০৫)।
বৈশ্বিক মহামারীর প্রেক্ষাপটে আপাততঃ জনজীবনে যে ছন্দপতন ঘটেছে তার উত্তরণ ঘটাতে জনগণকেই সচেতন হতে হবে সর্বাগ্রে। বৈশ্বিকভাবেই এর মোকাবেলা করতে হবে। মানবতার সীমানায় কোনোকিছুই আজ অন্তরায় নয়। মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁর রোষানল থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করুন। দোষারোপের সংস্কৃতি, মানুষকে হয়রানির সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে এসে একসাথে একযোগে বাঁচার জন্য লড়তে হবে সকলকে।
প্রবাসীরা কোনো আতঙ্কের নাম নয়। ওরা আমাদেরই সন্তান, পরিবার, বন্ধু-স্বজন। ওদের প্রতি কোনো বিদ্বেষ নয়, ওদের সুরক্ষায় চলুন প্রার্থনা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে। সহানুভূতির সাথে পাশে দাঁড়াই। আমাদের বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে তাঁদের পাঠানো রেমিটেন্স গতিশীল করেছে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাকে। সুতরাং রেমিটেন্স যোদ্ধাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আর সহমর্মীতা সবসময় অব্যাহত থাকবে।
মৃত্যু আতঙ্ক যখন সর্বগ্রাসী হয়ে সকল দরজাতেই কড়া নাড়ছে তখন আর ভয় কীসের? চলুন, সর্বশক্তি প্রয়োগ করে জ্বলে উঠি একবার। বৈপ্লবিক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দৈহিক দূরত্ব বজায় রেখে, মানসিকভাবে কাছে থাকি, পাশে থাকি, সবাই সবাইকে সহযোগিতার মাধ্যমে করোনা দুর্যোগকে প্রতিহত করি। স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইনে থেকে সামাজিক সুরক্ষায় অংশগ্রহণ করে দেশ বাঁচাই, বিশ্ব বাঁচাই। বিপ্লবের অদৃশ্য আগুন জ্বলতে শুরু করেছে "করোনার বিরুদ্ধে" পুরো বিশ্বব্যাপী। অদৃশ্য জয় রথের দেখা মিলবেই একসময়। ততোক্ষণ আমরা ধৈর্য ধারণ করে কায়মনোবাক্যে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকি। তিনি নিশ্চয়ই মহা ক্ষমাশীল, মহান দয়ালু।