‘মাহবুব কবিরের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয়েছিল বড় এক কর্মকর্তার’
পূর্বপশ্চিম ডেস্করেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলনকে ওএসডি (অন স্পেশাল ডিউটি) করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে (অতিরিক্ত সচিব) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলির আদেশ দেয়া হয়েছে।
মেধাবী ও কর্মঠ কর্মকর্তা হিসেবে ব্যাপক সুনাম রয়েছে মাহবুব করিমের। বিশেষ করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি ব্যাপক প্রশংসিত হন। চলতি বছরের ২৫ মার্চ এক প্রজ্ঞাপনে তাকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে বদলির আদেশ দেয়া হয়। এই মন্ত্রণালয়ে যোগদানের পর বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছেন আলোচিত এই অতিরিক্ত সচিব। বিশেষ করে রেলের টিকিট, নিয়োগ, বদলি এসব নিয়ে বেশ সোচ্চার ছিলেন। এছাড়া টিকেট কালোবাজারি বন্ধে তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
মাহবুব কবির মিলনকে ওএসডি করার পর সামাজিকমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা দেখা যাচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ তাকে ওএসডির প্রতিবাদ করছে। মাহবুব কবির মিলন রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর রেলে পরিবর্তন আনার ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েছেন। ১৩০ বছরের রেলে যে পরিবর্তন আসেনি এমন অনেক কাজ করেছেন তিনি। এসব বিষয় নিয়ে রেলের কর্মকর্তারাও তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। এমনকি এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে তার হাতাহাতি হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার তাকে ওএসডি করার পর এমন একটি ঘটনাসহ রেলে মাহবুব কবিরের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন সময় টেলিভিশনের সাংবাদিক নাজমুস সালেহী। তার স্ট্যাটাসটি পূর্বপশ্চিমের পাঠকের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো- ‘ এদেশের মানুষের কাছে এক পরিচিত মুখ মাহবুব কবির মিলন। নিরাপদ খাদ্য থেকে তার দেশ প্রেমের নিদর্শন বাংলার মানুষ দেখেছে। রাত দিন নিরলস পরিশ্রম করে খাদ্য নিরাপদ করতে লড়াই করে গেছেন। সেই সময় জীবন বাজি রেখে নিয়েছেন যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ। তার দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত আর দৃঢ়চেতা মনোভাবের কারণে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে সেখানে। যতটুকুই বা সুফল তার সবটুকুই মাহবুব কবিরের অবদান। তখন উনার সাথে আমার খুব বেশী পরিচয় নেই। পত্রিকায় তার খবর পড়তাম আর স্বপ্ন দেখতাম, নিশ্চয় আমার দেশও একদিন ঘুরে দাঁড়াবে। মিলনরা এই ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, উনারাই গড়বেন দুর্নীতি মুক্ত আগামীর বাংলাদেশ। ফেসবুকে তিনি বিভিন্ন অনিয়ম আর দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। অনিয়মের বিরুদ্ধে উন্মুক্ত লেখালেখি করেন। জনমত যাচাই করে শুরু করেন কাজ। অল্প দিনেই ফেসবুকে হুহু করে বাড়তে থাকে তার ফ্যান ফলোয়ার। যে কোন অনিয়ম নিয়ে কেউ একটা কিছু পোস্ট দিলেই তা সমাধানে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। হয়ে ওঠেন আস্থার প্রতীক। সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে এত জনপ্রিয় আর কেউ আছেন বলে জানা নাই। উনি যেন অল্প দিনেই হিরো হয়ে ওঠেন। হাজার হাজার মানুষ তার শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে যায়। তার গৃহীত পদক্ষেপ আর সাহসী কাজ কর্মে সহজেই মন জয় করে নেন সবার। ছোট বড় সবাই যে কোন অনিয়মের কথা প্রাণখুলে বলতে পারতেন। সবার কাছে হয়ে ওঠেন প্রিয় "মিলন স্যার"।
তখনও সরাসরি মাহবুব কবির মিলনের সাথে আমার কথা হয়নি। তবে অনলাইনে তার এক্টিভ কাজ কর্ম আর সাহসিকতা দেখে মুগ্ধ হই। চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি তার মত জনপ্রিয় আমলা আর এই মূহুর্তে একটিও নেই। আমার কথার সাথে দ্বিমত পোষণ কেউ করবে বলে মনে হয়না। গণমাধ্যম কর্মীরা মিলন সম্পর্কে কেউ কোন অভিযোগ তুলতে পারবে বলে মনে হয়না। মিলন খুবই স্বচ্ছ সৎ ও দেশ প্রেমিক একজন কর্মকর্তা হিসেবে ইতোমধ্যেই মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন।
লোকটার সাথে কথা বলার ইচ্ছা বহুদিনের। কিন্ত হয়ে উঠছিলো না। আমার রিপোর্টিংয়ের আগ্রহ বরাবরই রেলপথ মন্ত্রণালয়। নিউজের কাজে মাঝে মধ্যেই রেলভবনে যেতে হয়। একদিন রেল ভবনে গিয়ে দেখি মাহবুব কবির মিলন, লোভ সামলাতে পারলাম না। সালাম দিয়ে আমার পরিচয় দিয়ে কথা বললাম। দেখলাম খুবই বাস্তববাদী ভদ্র এক মানুষ। কথায় ব্যবহারে নেই আমলাসুলভ আচরণ। এক ধরনের সরলতা তাকে জড়িয়ে রাখে। নিরহংকার সাদামাটা একটা মানুষ। তবে কথায় তেজ আছে, আছে দেশপ্রেম। শুনালেন তার পরিকল্পনার কথা।
জানতে পারলাম রেলের কেউ না হয়েও গত ৫/৬ বছর ধরে রেল উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। কখনও যাত্রীদের পক্ষ থেকে "যাত্রীবান্ধব" রেলের জন্য সব অনিয়ম তুলে ধরছেন। আবার কখনও সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে দিচ্ছেন পরিকল্পনা। এভাবে তার নিরলস চেষ্টায় ৫/৬ বছরে রেলের অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়। তিনি রেলের কেউ নন, অথচ শুধু দেশপ্রেমের কারণে রেলের উন্নয়নে বিভিন্ন ফোরামে কথা বলে আসছিলেন। এসব কথা প্রথম পরিচয়েই জানালেন তিনি। আমিও ভাবলাম যেহেতু স্যার রেল নিয়ে কাজ কর তার সাথে ভালো সম্পর্কে হলে আমার নিউজে সহায়ক হবে। উনার সাথে অনেক কথা হলো। ভাবলাম এমন একজন লোক যদি রেলে আসে তাইলে কতই না ভালো হত। উনার সাথে সেই দেখার পর আর দেখা নাই অনেক দিন।
অনেকদিন পর হঠাত একদিন পত্রিকায় দেখি রেলের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পাচ্ছেন মাহবুব কবির মিলন। মনটা খুশিতে ভরে উঠলো l ফোনে উনার সাথে কথা হল। বললেন অনেক দিনের ইচ্ছা রেলপথ মন্ত্রণালয় কাজ করার আল্লাহ আমাকে সেই সুযোগ দিয়েছেন তোমরা পাশে থেকো। আমি বললাম স্যার সবসময় আপনার সাথে আছি। আপনার সব ভালো কাজে পাশে পাবেন।
রেলপথ মন্ত্রণালয় মাহবুব কবিরের আগমনের সবাই যেমন খুশি হয়েছিল, তার চাইতে বেশি খুশি হয়েছিল রেল যাত্রীরা। যারা দীর্ঘদিন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল, আর আমরা যারা গণমাধ্যমকর্মী তারাও একটু আশার আলো দেখলাম। অনেক বছর ধরে লোকসানে থাকা প্রতিষ্ঠানটি এবার কিছুটা হয়তো ঘুরে দাঁড়াবে মাহবুব কবির মিলন কে কেন্দ্র করে। উন্নয়ন ঘটবে রেলের এমন আশা করতে থাকলাম সকল গণমাধ্যম কর্মীরা।
রেলপথ মন্ত্রণালয় যোগদান করে মাহবুব কবির মিলন নানামুখী উদ্যোগ নিতে শুরু করলেন। তার ফেসবুকের লেখালেখি থেকে জানতে পারি তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জাতীয় পরিচয় ছাড়া টিকিট নিষিদ্ধ হয়। শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রির চালু হয়। তিনি রেলের ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার চালুর উদ্যোগ নেন। যাত্রীদের কথা শোনার জন্য আলাদা অ্যাপ চালু করেন। ১৩০ বছর ধরে হাতে হাতে দেয়া হত রেলের বেতন মাহবুব কবির ইএফটি প্রবর্তন করেন। হারিয়ে যাওয়া ভূমি উদ্ধারে আত্মনিয়োগ করেন। মাহবুব কবির মিলনের কাছে শুনেছি কাজ করতে গিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা একজনের সাথে এই সমস্ত বিষয়ে তর্কাতর্কিও হয়েছে তার।
মিলন শুধু অল্প সময়ে যাত্রী সেবার কাজ করেননি রেলের উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছিলেন। মিলনের মত এক জন সৎ কর্মকর্তাকে ওএসডি করায় আশ্চর্য হয়েছি। কষ্ট পেয়েছি।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএস
Post Written by :
Original Post URL : https://ift.tt/33yOqo3
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD