সিফাত-শিপ্রাকে মুক্তি দেয়ার আকুতি স্বজনদের
নিজস্ব প্রতিবেদককক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের তথ্যচিত্র নির্মাণের দুই সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা রানী দেবনাথকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে তাদের পরিবার।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বাসিন্দা শিপ্রার বাবা বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা নবকুমার দেবনাথ বলেন, আমার মেয়ের তো কোনো দোষ ছিল না। সে সবসময়ই চুপচাপ স্বভাবের। নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ তো অনেক পরের কথা। আমার মেয়েকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে ঘটনাস্থলে ছিল না। সে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
তিনি বলেন, সম্প্রতি সে অনলাইনে পরীক্ষাও দিয়েছে। সে যদি অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকতো তাহলে এতদিন ওখানে থাকতে পারতো না। ফিল্ম এর কাজের জন্য জুলাই মাসের তিন তারিখ মেজর সিনহাসহ ওরা চারজন কক্সবাজারে যায়। তারা তিনজনই শিক্ষার্থী। একসঙ্গে লেখাপড়া করে এবং সিনেমার কাজ করে। ৩০ জুলাই রাতে সিনহাকে অস্বাভাবিকভাবে গুলি করে মারা হয়। এবং আমার মেয়ে তখন রেস্ট হাউজে ছিল। ঘটনার দিন রাত ২টায় তার রেস্ট হাউজে গিয়ে পুলিশ তল্লাশি চালায়। এবং অবৈধভাবে তাকে গ্রেপ্তার করে। আমার মেয়ে প্রতিবাদ করেছিল ‘কেন আপনারা খুন করলেন তাকে। কি অপরাধে খুন করেছেন’।
নবকুমার দেবনাথ বলেন, শিপ্রাকে মাদকদ্রব্য দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। ওর সঙ্গে তাহসিন রিফাত নূর নামে আরেক শিক্ষার্থী ছিল। পুলিশ সদস্যের আত্মীয় হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়। আমার মেয়েকে অন্যায়ভাবে আটকে রেখেছে। আমার মেয়ের সম্পর্কে আমিতো জানি। কারণ আমি একজন সাবেক বিজিবি কর্মকর্তা হিসেবে এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানি। বাবা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করে বলতে চাই, আমার মেয়েকে এই ধরনের চক্রান্ত থেকে রেহাই দেন।
তিনি বলেন, ঈদের দিন সর্বশেষ শিপ্রার সঙ্গে আমার কথা হয়। তখন থানায় ছিল। কিন্তু আমাকে কিছুই জানায়নি। একাধিকবার ফোন দেয়ার পর সে আমাকে জানায়, আমি ভালো আছি। চিন্তা করোনা। একটা সমস্যায় আছি। তখন জানতে চাই কি সমস্যা। আমি হার্ট ও স্পাইনাল সমস্যায় ভুগছি। বাধ্য হয়ে চাকরি ছেড়ে অবসরে এসেছি। শিপ্রার গ্রেপ্তারের বিষয় গণমাধ্যমের বরাতে ৩ আগস্ট জানতে পারি। দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে সে বড়। ছোট ছেলে শুভজিত প্রান্ত শ্রেয় ভারতে আইটি ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ছে। শিপ্রার শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তার মা পূর্ণিমা দেবনাথ। পাঁচদিন ধরে শিপ্রার মায়ের খাওয়া-দাওয়া বন্ধ। স্ট্রোক করার মতো অবস্থা।
জানা গেছে, ঢাকার রামপুরা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন শিপ্রা দেবনাথ।
সিফাতের স্বজনরাও দাবি করেছেন, পুলিশ নিজেদের রক্ষা করতে সিফাতের নামে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। যে জীবনে সিগারেট খায়নি সে মাদক নেবে এমনটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম এন্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী শিপ্রা ও সিফাত। বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি ও নিরাপত্তা চেয়ে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীরা। এতে শিক্ষার্থীরা চারটি দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হলো- শিপ্রা ও সিফাতের সার্বিক নিরাপত্তা এবং নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে, মেজর (অব.) সিনহা হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং মানসিক প্রহসন থেকে মুক্তি দিতে হবে।
শিপ্রা ও সিফাতের সহপাঠী ফয়জুল ইসলাম বলেন, ওরা একটা তথ্যচিত্র বানানোর জন্য যায়। সিফাত-শিপ্রা আমার ব্যাচমেট। আমরা একসঙ্গে অনলাইনে মিডটার্ম পরীক্ষাও দিলাম। শিপ্রা পরিচালক ও সিফাত সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে ওই প্রজেক্টে ছিল। সিফাত ও শিপ্রার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তা মিথ্যা। দ্রুত ওদের মুক্তি চাই।
মানববন্ধনে বলা হয়, গত ৩১ জুলাই কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ রোডে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ খান নিহত হন। তথ্যচিত্র নির্মাণের জন্য সেখানে মেজর সিনহার সঙ্গে অবস্থান করছিলেন সিফাত এবং শিপ্রা রানী। সেখান থেকে দু’জনকেই আটক করে পুলিশ।
পূর্বপশ্চিমবিডি/জেডআই
Post Written by :
Original Post URL : https://ift.tt/31wvCmy
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD