শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নীতিমালা না মেনে শিক্ষক বদলির অভিযোগ
পুরাতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারি শিক্ষকদের সদ্য জাতীয়করণকৃত স্কুলগুলোতে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চলতি দায়িত্ব দেওয়ার আদেশ দেওয়া হলে এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন সদ্য জাতীয়করণকৃত স্কুলের শিক্ষকরা। এর প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ২২ এপ্রিল সরকার মামলাধীন বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগ করতে নিষেধাজ্ঞা দেন।
সারাদেশ
জয়পুরহাট প্রতিনিধিজয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে সরকারি নিয়ম নীতির উপেক্ষা করে শিক্ষক বদলির অভিযোগ পাওয়া গেছে শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম ও পাঁচবিবি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, পাঁচবিবি উপজেলার সদ্য জাতীয়করণকৃত দোঘড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারজানাকে তার বাড়ি থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের আরেকটি সদ্য জাতীয়করণকৃত মোলান রশিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক ফারজানা অভিযোগ করেন, আমার কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করলে আমি অপারগতা প্রকাশ করি। এতে আক্রোশে সহকারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম ও পাঁচবিবি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে প্রভাবিত হয়ে এই বদলির আদেশ দেন।
এদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পুরাতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারি শিক্ষকদের সদ্য জাতীয়করণকৃত স্কুলগুলোতে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চলতি দায়িত্ব দেওয়ার আদেশ দেওয়া হলে এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন সদ্য জাতীয়করণকৃত স্কুলের শিক্ষকরা। এর প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ২২ এপ্রিল সরকার মামলাধীন বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগ করতে নিষেধাজ্ঞা দেন।
পরে একই বছরের ১৫ মে সরকার ওই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করলে ২০১৮ সালের ১২ জুন পাঁচবিবি উপজেলায় ৩২ জনসহ জেলায় ১১২ জন পুরাতন সরকারি স্কুলের সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরই অংশ হিসাবে ফারজানাকে দোঘড়া বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তখন থেকে গত ২৪ মাস ধরে অর্থাৎ ২০২০ সালের ২৪ জুন পর্যন্ত তিনি যথারীতি ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
কিন্ত ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর যে সকল বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদের বিপরীতে আদালতে মামলা চলমান আছে সেই সব প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদায়ন না করতে সরকার পরিপত্র জারি করে।
কিন্তু ওই পরিপত্রে যোগদানকৃত প্রধান শিক্ষককে অন্যত্র বদলি বা সরে নেওয়ার কথা উল্লেখ না থাকা ও ওই বিদ্যালয়ের বিষয়টি আদালতে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আইন বিভাগের পরামর্শ না নিয়েই ৮ মাস পর জাতীয়করণকৃত দোঘড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারজানাকে পরিপত্রের আদেশ না মানা ও মামলা চলমান থাকা অবস্থায় একই উপজেলার মোলান রশিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তৌফিকুজ্জামান স্বপদে কর্মরত থাকলেও তাকে না জানিয়ে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার সেজে ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক ফারজানার বদলির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেন। সহকারী শিক্ষা অফিসারের এমন নিয়ম বর্হিভূত কাজে পাচঁববি উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম সহযোগিতা করেন বলেও অভিযোগ করেন ফারজানা।
অভিযোগগুলো অস্বীকার করে পাঁচবিবি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বদলি করার ক্ষমতা আমার নেই, আমি শুধু প্রস্তাবনা দিয়েছি। শিক্ষিকার সুবিধামত স্কুলেই তাকে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের আইন বিভাগের পরামর্শের ব্যাপারটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিষয়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারি আব্দুল হাকিম জানান, পাঁচবিবির ফারজানার বদলিটি ইচ্ছাকৃতভাবে সাইফুল স্যার করেছেন, যা তিনি পারেন না। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কর্মস্থলে থাকাবস্থায় ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন ও সরকারি নিয়ম পরিপন্থি বদলীর প্রক্রিয়ায় স্বাক্ষর করার ব্যাপারে সহকারি শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, অর্থনৈতিক ব্যাপার এখানে নেই সেহেতু ভারপ্রাপ্ত হিসেবে বদলির প্রক্রিয়াটি একটি নিয়মিত চিঠি হিসেবে দিয়েছি। বদলির ব্যাপারে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার দায়িত্ব আমার নয়।
তবে এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌফিকুজ্জামান জানান, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
রাজশাহী বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মুঠোফোনে জানান, আমার কাছে যে প্রস্তাবনা আসে তার মধ্যে শিক্ষিকার আবেদনও ছিল। আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে শূন্য পদে বদলি করা হয়।
জয়পুরহাট জেলা জজ আদালতের সরকারী কৌশলী এ্যাড. নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, বিদ্যালয়ের বিষয়টি আদালতে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় বদলি করা আদালতকে অবমাননা করা। এ কাজ যেই করবে আদালত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।
জেলা প্রশাসক শরীফুল ইসলাম জানান, সহকারি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা যদি ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পানও তারপরও তিনি শুধু রুটিন ওয়ার্ক করতে পারেন মাত্র। এ ধরনের বদলির প্রক্রিয়ার কোন কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে পারেন না।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম
Post Written by :
Original Post URL : https://ift.tt/3juGqJA
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD