‘স্কুল বন্ধ, খেলা হাইত ন’পারির এতাল্লাই মাছ ধরিদিই’
চট্টগ্রাম প্রতিনিধিদূর থেকে দেখে মনে হবে ছোটোখাটো একটি পুকুর বা ডোবা। কিন্তু তা নয়, এটি চট্টগ্রামের আনোয়ারা সরকারি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ। যে মাঠে হৈ চৈ করে খেলা করার কথা কোমলমতি শিশুদের, সেই মাঠে মাছ ধরছে কয়েকজন শিশু। বর্তমানে স্কুলের মাঠে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে হয়ে আছে কাদামাটি।
আনোয়ারা সরকারি আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠটি দীর্ঘদিন ধরে পানিতে তলিয়ে থাকলেও কর্তৃপক্ষের নেই কোন নজর। অবহেলা দীর্ঘদিন ধরে পানিতে ভাসছে মাঠটি। এমতাবস্থায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ ক্রীড়াপ্রেমীরা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের যে সময়টা ক্রিকেট বা ফুটবল লেখায় মগ্ন থাকার কথা অথচ এই মাঠের কারণে তাদেরকে সময় দিয়ে হচ্ছে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার আড্ডা অথবা রাস্তার ধারে মোবাইল ফোনে। এই আড্ডা থেকেই শিক্ষার্থীরা নেশার জগতে পা রাখছে।
সরেজমিনে আনোয়ারা সরকারি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের চারদিকে বসতবাড়ি গুলো উঁচু হওয়ায় সব পানি এসে জমা হয় স্কুল মাঠে। তাই সামান্য বৃষ্টি হলেই স্কুল মাঠটি পুকুরে পরিণত হয়। বর্ষা মৌসুমে সারাক্ষণ পানি জমে থাকার কারণে কেঁচো, সাপ ও পোকামাকড়ের আস্তানায় পরিণত হয়েছে মাঠটি। পানি ও কাদা মাটিতে শিশুদের মাছ ধরতেও দেখা গেছে। এছাড়া করোনাকালে বিকেল হলেই দেখা যেত এই মাঠে আনোয়ারা সদর ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা নানা বয়সী ক্রীড়াপ্রেমীদের। উপজেলা প্রশাসনের বড় ধরনের সভা, সমাবেশ ও নিয়মিত সব ধরনের খেলাধুলাও হয় এই মাঠে। অথচ প্রয়োজনীয় বিশাল এ মাঠটি যেন এখন অভিভাবকশূন্য। অল্প বৃষ্টি হলেই মাঠটিতে জমে হাঁটুপানি। আর বর্ষা মৌসুম ও জোয়ারের পানিতে মাছ চাষ ও ধান চাষের জন্য উপযোগী হয়ে এখন খেলাধুলার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে ক্রীড়াপ্রেমীদের পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। স্থানীয় গ্রামবাসী ও সচেতন মহল বিদ্যালয়ের মাঠটি দ্রুত সংস্কারের দাবি করেন।
ক্লাস টু’তে পড়ে মোহাম্মদ সাব্বির তার বন্ধুদের নিয়ে প্রতিদিন সকাল বেলা মাঠে আসে মাছ ধরতে। সে বলে, ‘এহন স্কুল বন্ধ, বাড়ির খেলা হাইবার জাগা নাই, মাঠতও খেলা হাইত ন পারির পানিল্লাই, এতাল্লাই এনডে মাছ ধরিদিই’। (এখন স্কুল বন্ধ, বাড়িতে খেলা করার জায়গা নেই। মাঠেও খেলা করা যাচ্ছে না পানির জন্য। এ জন্য এখানে মাছ ধরছি)।
ক্রীড়া শিক্ষক মোহাম্মদ এনাম বলেন, আনোয়ারা উপজেলায় ফুটবল খেলোয়ার তৈরি হওয়ার মতো অনেক প্রতিভা রয়েছে। শুধু উপযোগী একটি মাঠের অভাবে খেলোয়ার তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। যে মাঠ রয়েছে সেটি এ উপজেলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাঠ। বছরের ৬ মাস জমে থাকে জোয়ারের পানি আর কাদা মাটি। সামান্য বৃষ্টি ও বর্ষার পানির কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও উপজেলার আশপাশের খেলোয়াড়রা করতে পারে না অনুশীলন। এতে অনুশীলনের সুযোগ থাকলেও তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে খেলোয়াররা। জরুরি ভিত্তিতে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধির কাছে মাঠ সংস্কারের জোর দাবি করছি।
আনোয়ারা সরকারি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নাছির উদ্দিন বলেন, আমাদের বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হওয়ার পর থেকে সরকারি নির্দেশনা ছাড়া বিদ্যালয়ের উন্নয়নের কোনো কাজ বা সংস্কার বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে করা যাবে না। তাই মাঠসহ নানা উন্নয়নের কাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। সরকারি নির্দেশনা পেলে এসব সংস্কার কাজ করা হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হওয়ার পরে বিদ্যালয়ের ফান্ডের টাকার উপর সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। সেজন্য কোনো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি এখনো। মাঠটি সংস্কার করা অতি জরুরি। খেলাধুলা ছাড়াও সরকারি সকল অনুষ্ঠান এ মাঠেই করা হয়। আশা করছি, খুব শীঘ্রই মাঠটি সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএস
Post Written by :
Original Post URL : https://ift.tt/3hUwbO9
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD