টাকা আত্মসাতসহ ২৮ অভিযোগ হাবিপ্রবির প্রফেসর ড. শাহাদতের বিরুদ্ধে
সারাদেশ
দিনাজপুর প্রতিনিধিদুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতসহ ২৮টি অভিযোগের প্রেক্ষিতে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবির) মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ শাহাদৎ হোসেন খানকে তার অতিরিক্ত দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব শাখার পরিচালক (হিসাব) থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) হাবিপ্রবি রেজিষ্ট্রার প্রফেসার ডা. ফজলুল হক অতিরিক্ত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিশ্চিত করে বলেন, অব্যাহতিপত্রে কোন কারণ লেখা না থাকলেও অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে প্রফেসর ড. মোঃ শাহাদৎ হোসেন খানকে তার অতিরিক্ত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে হাবিপ্রবি’র শিক্ষক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদ হাবিপ্রবির উপাচার্য বরাবরে বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ এনে স্বারক লিপি প্রদান করেন। স্বারক লিপিতে যে কয়টি অনিয়ম উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ শাহাদৎ হোসেন খানের বিরুদ্ধে সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানানো হয়।
স্বারকলিপি দেয়ার পর উপাচার্য আবুল কাশেম গত ১৯ সেপ্টেম্বর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। আলোচনার পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর প্রফেসর ড. মোঃ শাহাদৎ হোসেন খানকে তার অতিরিক্ত দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব শাখার পরিচালক (হিসাব) থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের দেয়া স্বারক লিপিতে সংযুক্ত অভিযোগ থেকে জানা যায় যে, প্রফেসর ড. মোঃ শাহাদৎ হোসেন খান হাবিপ্রবির শহীদ তাজউদ্দীন হলের হল সুপার হিসাবে গত ১ জুলাই ২০১১ থেকে ২ ফ্রেবুয়ারী ২০১৩ পর্যন্ত ১ বছর ৮ মাস দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি ২৫ লক্ষ ২৪ হাজার ১৮৫ টাকা ভাউচার ও ক্যাশ বহি বিহিন ব্যয় করেন। যাতে আভ্যন্তরিণ অডিট আপত্তি রয়েছে । ছাত্র পরামর্শক হিসাবে দায়িত্ব পালনের সময় গত ২৮/১১/২০১৫ ইং তারিখে ওয়ালটন শোরুম থেকে টিএসসির নীচ তলার কেফেটেরিয়ার জন্য বেশ কিছু ইলেক্ট্রিক সামগ্রী ক্রয় করেন। যার মধ্যে ২৮ হাজার ৭০০ টাকা মূল্যের একবটি ডিপ ফ্রিজের টাকা পরিশোধ করেননি। এ ব্যাপরে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে হাবিপ্রবির রেজিষ্ট্রার বরাবর অভিযোগ দাখিল করেছেন। ২০১৪ থেকে ২০১৫ সালের দিকে শরীরচর্চা পরিচালক থাকা কালীন ৭০ হাজার টাকা উত্তোলন করে সমন্বয় করেননি। তবে শোনা যাচ্ছে যে, বর্তমার শরীর চর্চার পরিচালকের মাধ্যমে তা সমন্বয় না করে গত ২৪ জুন ২০২০ ইং তারিখে তা নিজে নিজে সমন্বয় করেছেন। যা সম্পন্ন নিয়ম বহিঃভূত।
হাবিপ্রবির মরহুম প্রফেসর ড. মোঃ আলমগীর হোসেন অসুস্থ থাকাকালীন সময় চিকিৎসা সহায়তার হিসাবে ছাত্রদের দেয়া ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা ১৩ মাস পর তৎকালীণ ভিসির হস্তক্ষেপে প্রফেসর ড. মোঃ আলমগীর হোসেনের স্ত্রী প্রফেসর ড. মোছাঃ আফোরজা খাতুন শিলাকে পরিশোধ করেন। ২০১৮ সালে ভর্তি পরীক্ষার সময় প্রফেসর ডাঃ মোঃ ফজলুল হকের কাছ থেকে ২৬ হাজার টাকা নিলেও তা পরিশোধ করেননি। জুলাই ২০২০ ইং তারিখে হাবিপ্রবির সেন্ট্রাল মসজিদের সম্প্রসারণে নিয়ম বহিভূত ভাবে ১০ লক্ষা টাকা ব্যয় করেন। যা পরিচালক প্লানিং কে অবহিত করা হয়নি। তা ছাড়া যাতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি না দিতে হয় সে জন্য ১০ লক্ষ টাকাকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে খরচ করা হয়।
কোভিট-১৯ মহামারির সময় প্রয়োজন না থাকলেও অযাচিত ভাবে নিজেকে জড়িয়ে অগ্নিনির্বাপক গ্যাস সিলিন্ডার ক্রয় করেন। যার প্রয়োজনীয়তা আদৌও নেই। ২০১৭ সালে গাড়ী পোড়ানোর ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেংকারীর অভিযোগ রয়েছে। সে সময় তিনি আর্টিস্টিক কং থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়েছেন। যা পরে ওই কোম্পানী থেকে প্রকৌশল শাখার এক প্রকৌশলীকে অভিযোগ করেছেন। ২০১৪ সালে শিক্ষা সফরে ময়মনসিংহে যাওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীরা আহত হয়। সে সময় আহত ছাত্রছাত্রীদের চিকিৎসা সহায়তা তৎকালিন ছাত্র উপদেষ্টার মাধ্যমে হল সুপাররা টাকা পাঠালেও তা দীর্ঘদিন আটকে রেখে পরবর্তীতে আংশিক টাকা আহত ছাত্রদের পরিবারকে দেন। বাকি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. আফজাল হোসেনের স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও প্রশাসনকে বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে অস্থিতিশিল রাখার মত ১৮টি অভিযোগ তুলেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদ।
আরো জানা গেছে, প্রফেসর ড. মোঃ শাহাদৎ হোসেন খান বিশ্ববিদ্যালয়ের সব্বোর্চ নীতি নির্ধারনী বোর্ড অর্থাৎ রিজেন্ট বোর্ডের একাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক মনোনিত সদস্য। কিন্তু তার এই কার্যক্রমে হাবিপ্রবির শিক্ষক কর্মকর্তারা হতবাগ হয়েছে। তারা বলছেন আমরা প্রফেসর ড. মোঃ শাহাদৎ হোসেন খানের কাছ থেকে এমনটা আশা করিনি।
এ ব্যাপরে জানতে চাইলে প্রফেসর ড. মোঃ শাহাদৎ হোসেন খান বলেন, আমি ২৫ বছর ধরে হাবিপ্রবিতে আছি। এতো দিন কোন অভিযোগ উঠেনি। যে সংগঠন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের আমি সহ সভাপতি। এই অভিযোগ সম্পন্ন ঈশ্বার্নিত হয়ে করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগামীতে ভিসি হওয়ার জন্য ১০ জনের তালিকা পাঠানো হয়েছে। তাদের কাছে শুনেছি সেই তালিকায় আমারও নাম রয়েছে। সে কারণে উদ্দ্যেশ্য মূলকভাবে এই অভিযোগগুলো আনা হয়েছে। এগুলো সম্পন্ন মিথ্যা ও বানোয়াট।
এ ব্যাপরে জানতে চাইলে হাবিপ্রকির রেজিষ্ট্রার প্রফেসর ডা. মোঃ ফজলুল হক জানান, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। প্রফেসর ড. মোঃ শাহাদৎ হোসেন খানকে তার অতিরিক্ত দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব শাখার পরিচালক (হিসাব) থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। নতুন করে ওই পদে লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম
Post Written by :
Original Post URL : https://ppbd.news/whole-country/175062/টাকা-আত্মসাতসহ-২৮-অভিযোগ-হাবিপ্রবির-প্রফেসর-ড.-শাহাদতের-বিরুদ্ধে
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD