পাখির কলকাকলিতে ঘুম ভাঙে যে শহরের!
পূর্বপশ্চিম ডেস্কপ্রতিদিন সকালে পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠা একটি শহরের নাম মিরপুর। কুষ্টিয়ার মিরপুর। আশেপাশের যেখানেই থাকুক না কেন ভোর হতেই অসংখ্য পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙে এই শহরের মানুষের। এসব পাখির বেশিরভাগই শালিক। চড়ুইও আছে অনেক। তবে একসঙ্গে এত শালিক সচরাচর চোখে পড়ে না অন্য কোথাও।
ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই এসব পাখির গন্তব্য মিরপুর পৌরবাজার। খাবারের সন্ধানে ছুটে আসে তারা। বরং বলা যায়, দলবেঁধে সকালের নাশতা করতে আসে এরা। নাশতা বা খাবারও মেলে অনেক আইটেমের। সিঙ্গারা, সমুচা পুরি, মোগলাই, ভাত, তরকারি, রুটি, পরোটা, ভর্তা, পাউরুটি, বিস্কুট-অনেক কিছুই। সবার পেটপুরে ভোজ মেলে এখানে। খাওয়া শেষ হলেই আবার নিজ গন্তব্যে উড়ে যায় শালিকের দল। কেউ তাদের আসতে বা যেতে বাধা দেয় না। নিত্য সকালে এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয় মানুষ। অনেকে উৎসাহী হয়ে আরও খাবার দেন। সাধারণ দোকানিরা তো বটেই বাজারের বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরাঁ মালিকরাও পাখিপ্রেমী। তাদের উদ্বৃত্ত বাসি খাবার প্রতিদিন তারা পাখিদের মাঝে বিলি করে দেন।
বই থেকে জানা যায়, শালিক পাখি বেশ কয়েক প্রজাতির হয়। এর মধ্যে গো শালিক বা গোবরে-শালিক, ঝুঁটি শালিক, ভাত শালিক, গাঙ শালিক, বামন শালিক এসব নাম রয়েছে। এই বাজারে এগুলোর প্রায় প্রতিটি জাতেরই দেখা মেলে। সামাজিক পাখি হিসেবে শালিকের বেশ সুনাম রয়েছে।
সকালবেলা এক শালিক দেখলে নাকি মন্দ কপাল, জোড়া শালিক দেখলে ভাগ্য সুপ্রসন্ন। কিন্তু একসঙ্গে অসংখ্য অজস্র শালিক দেখলে? জ্যোতিষ কিংবা আদ্যিকালের গ্রামীণ ভাগ্যগণনাকারীরা এ বিষয়ে তেমন কিছু লিখে যাননি। তবে একটা কথা সত্য, শালিক সামাজিক পাখি। তাই সে একা থাকতে পছন্দ করে না। এমন প্রবাদের হয়তো বা সত্যিকারের কোনও মানে নেই; কিন্তু সামাজিক থাকো, একলা চলো না-এমন ইঙ্গিত আছে। সহস্র শালিক একসঙ্গে দেখা মিরপুরবাসী সেক্ষেত্রে নিশ্চয়ই ভাগ্যবান।
স্থানীয়রা জানান, সারা বছরই মিরপুর বাজার ও এর আশপাশের এলাকায় এসব শালিক পাখির দেখা মেলে। তবে শীত মৌসুমে পাখির সংখ্যা কিছুটা বেড়ে যায়। খুব ভোর থেকেই খাবারের জন্য পাখিরা বিভিন্ন দোকানের সামনে এসে জড়ো হতে থাকে। খাবার খাওয়া শেষ হলেই ফিরে যায় পাখিরা।
স্থানীয় মিরপুর বাজারের আনন্দ হোটেলের মালিক আনন্দ দেবনাথ বলেন, ‘এখানে ভোর হলেই পাখিরা আহার করার জন্য আসে। আমি চেষ্টা করি আমার দোকানের বাসি যেসব খাবার যেমন সিঙারা, পুরি, মোগলাই-এগুলো কেটে আমি তাদের খেতে দেই।’
তিনি আরও বলেন, আগে পাখি কিছুটা কম এলেও এখন পর্যাপ্ত পরিমাণ পাখি বাজারে খাবারের জন্য আসে। এই বাজারের অন্যান্য দোকানিরাও পাখিদের খাবার দেয়। এই খাবারের আশায় প্রচুর পরিমাণ পাখি মিরপুর বাজারে আসে।
পাখিপ্রেমী আনন্দ দেবনাথ আরও বলেন, ‘আমি সকাল হলে যেখানেই থাকি না কেন, পাখিগুলোর কথা আমার মনে থাকে। আর আমি আমার কর্মচারীদের বলে দেই বাসি যে খাবার থাকবে সেটি পাখিদের দিয়ে দিতে।’
মিরপুর বাজারের চা বিক্রেতা ইসা হক বলেন, ‘আমার দোকানের সামনে কিছু পাখি আসতো। এই পাখিগুলোকে আমি খাবার দিতাম। এই খাবার দেওয়া দেখে এখন অনেক পাখি আসে সকাল বেলা। আমার খাবার দেওয়া দেখে আমার দোকানের কাস্টমাররাও তাদের খাবার দেয়। একইসাথে হোটেল মালিকরাও তাদের বেচে যাওয়া খাওয়ার দেয়।’
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল করিম বলেন, আমি প্রতিদিন বাজারে আসি নাশতা করতে। এসে দেখি অগণিত পাখিকে দোকানদাররা সবাই খেতে দেয়। এটা দেখে আমার খুবই ভালো লাগে। আমি মুগ্ধ হয়ে এসব দৃশ্য দেখি।
কুষ্টিয়ার সাগরখালী আদর্শ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মো. মশিউর রহমান বলেন, আমাদের এলাকাতে বিপুল সংখ্যক শালিক পাখি দেখা যায়। এরা প্রতিদিন ভোরে মিরপুর বাজারে খাবারের সন্ধানে আসে। স্থানীয় দোকানদার, ব্যাবসায়ীরাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এদের খাবার দেন। যখন এই পাখিগুলো মিরপুর বাজারের দিকে উড়ে আসে তখন সেখানে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
এই কলেজ শিক্ষক আরও বলেন, এদের যে খাবার দেওয়া হয় সব তো খায় না। কিছু আবার বর্জ্য হয়ে পরিবেশ একটু নষ্ট হয় তবে মানুষ তাতে তেমন কিছু মনে করে না। বরং সবাই পাখিগুলোকে ভালোবাসে। কেউ তাড়িয়ে দেয় না। এরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম
Post Written by :
Original Post URL : https://ppbd.news/whole-country/175296/পাখির-কলকাকলিতে-ঘুম-ভাঙে-যে-শহরের!
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD