এক মাসে ১৫ কিশোরী নিখোঁজ, উদ্ধার ৪
সংসারের র্দুবস্থা দেখে হয়তো অনেক কিশোরী না বুঝে পছন্দের ছেলের সঙ্গে চলে যাচ্ছে। অথবা অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদেরকে পিতা-মাতা বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করার কারণেও এমনটি হতে পারে।
ফেনী প্রতিনিধিফেনীর সোনাগাজীতে গত এক মাসে ১৫ কিশোরী ও দুই গৃহবধূ নিখোঁজের শিকার হয়েছেন। নিখোঁজ কিশোরীদের বয়স ১৩-২০ বছর। তারা সবাই উপজেলা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ-দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্রী। উপজেলার চর মজলিশপুর, বগাদানা, চর দরবেশ, চর চান্দিয়া, পৌরসভা, সোনাগাজী সদর ও আমিরাবাদ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৫ কিশোরী নিখোঁজ হয়। সর্বশেষ মঙ্গলবার উপজেলার চর মজলিশপুর ও সেনেরখিল এলাকা থেকে নবম ও দশম শ্রেণির দুই ছাত্রী নিখোঁজ হয়।
নিখোঁজ ১৫ জনের মধ্যে চারজনকে ফেনী, চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে নিখোঁজের সব ঘটনা ছিল প্রেম ঘটিত। এসব ঘটনায় থানায় কিশোরীদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় নিখোঁজ ডায়েরী করা হয়েছে।
মঙ্গলবার নিখোঁজ হওয়া দুই কিশোরীর পরিবার জানায়, নিখোঁজ দুই কিশোরীর মধ্যে উপজেলার সেনেরখিল এলাকার নবম শ্রেণির ছাত্রী জেসমিন আক্তার ভোর চারটার দিকে প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আর ঘরে ফিরেনি। মাকসুদা আক্তার নামে অপর কিশোরী উপজেলার চর মজলিশপুর এলাকার বাড়ি থেকে সকাল দশটার দিকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। স্বজনরা তাদেরকে বিভিন্নস্থানে খুঁজে না পেয়ে রাতে থানায় এসে নিখোঁজ ডায়েরী করেন।
নিখোঁজ কিশোরীদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় করা ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়, কোনো কোনো কিশোরী বিদ্যালয়ে বা মাদরাসা থেকে সাজেশান আনতে, কেউবা উত্তরপত্র জমা দিতে, কয়েকজন বান্ধবী, বোন ও নানার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার এমনকি দু’জন বাজারে আসার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়েছে। এছাড়া উপজেলার চর মজলিশপুর ও আহম্মদপুর মায়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে নিখোঁজ হয়েছে বলে ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া গত জুলাই মাসে ৫ জন এবং আগষ্ট মাসে আট জন কিশোরী নিখোঁজ হয়েছে।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নার্গিস আক্তার বলেন, করোনাকালে দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অলসতা সৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে অনেক পরিবারে অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল হয়ে গেছে। সংসারের র্দুবস্থা দেখে হয়তো অনেক কিশোরী না বুঝে পছন্দের ছেলের সঙ্গে চলে যাচ্ছে। অথবা অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদেরকে পিতা-মাতা বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করার কারণেও এমনটি হতে পারে।
তিনি বলেন, উপজেলায় বাল্য বিবাহ, নারী নির্যাতন প্রতিরোধসহ নারীদের আত্মকর্মস্থান সৃষ্টির লক্ষে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। বাবা-মা ও কিশোরীদের অসচেতনতার কারণে না বুঝে অনেক কিশোরী অল্প বয়সে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া কিশোরীদের ভবিষ্যত সুফল হবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে বিদ্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে নিয়ে ছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদেরকে লেখা-পড়াসহ সামাজিক অবক্ষয় রোধে সচেতন করা হবে।
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম বলেন, গত এক মাসে থানায় ১৫টি নিখোঁজ ডায়েরী হয়েছে। নিখোঁজদের মুঠোফোনের কল লিষ্ট যাচাই-বাছাই ও প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে চারজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। অন্যদের অবস্থানও নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, উদ্ধার হওয়া কিশোরীরা বলছে প্রেমের সম্পর্কের কারণে পছন্দের ছেলের সঙ্গে তারা বিয়ে করার জন্য পালিয়ে গেছে। পারিবারিক অসচেতনতার কারণে এমনটি হচ্ছে। এছাড়া গত দুইদিনে দুই গৃহবধূসহ গত একমাসে উপজেলায় পারিবারিক কলহের জের ধরে তিন নারী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আরও একজন নারী পানিতে ডুবে মারা গেছে। তিনি এসব সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহবান জানান।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম
Post Written by :
Original Post URL : https://ppbd.news/whole-country/175287/এক-মাসে-১৫-কিশোরী-নিখোঁজ,-উদ্ধার-৪
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD