আসছে শীত মৌসুম। চিকিৎসকসহ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতের সময় যেকোনও ভাইরাসজনিত রোগ বাড়ে। এ সময়ে মানুষের শরীরে ইমিউনিটি কমে যায়। এ কারণে শীতে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবা বেশি; যদি আমরা সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করি।
গত ২৮ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদফতরের নবনিযুক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম কোভিড-১৯ নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক জাতীয় কমিটির সঙ্গে অনলাইন সভা করেন।
সেখানে আট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আট সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। ওই সভার নথি সূত্রে জানা যায়, সেখানে করোনাবিষয়ক ৭টি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে ৩ নম্বরেই রয়েছে শীতকালের করোনা পরিস্থিতি।
সেখানে মহাপরিচালক বলেন, “সামনেই শীতের মৌসুম, সবাই ভাবছে শীতের সময় ‘সেকেন্ড ওয়েব বা দ্বিতীয় ঢেউ’ আসতে পারে।” এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক জাতীয় কমিটির মতামত কী এবং অধিদফতর এর জন্য কী করতে পারে তা জানতে চান মহাপরিচালক। পরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয় ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ এর জন্য এখনি প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। এখনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারলে সংক্রমণ কমানো যাবে। কন্টাক্ট ট্রেসিং, কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন জোরদার ও তদারকি করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
একইসঙ্গে সেখানে জনগণকে সচেতন করতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে বলেও প্রশ্ন ওঠে। সেই সঙ্গে কী কী পদক্ষেপ নিলে করোনার নমুনা পরীক্ষা বাড়বে, সে বিষয়ে মহাপরিচালক জানতে চান কমিটির সদস্যদের কাছে। পরে সিদ্ধান্ত হয়, আইন করে মাস্ক পরানো এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম করতে হবে। একইসঙ্গে এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে কমিউনিটি এনগেজমেন্ট বাড়াতে হবে। প্রতিটি উপজেলায়, সিটি করপোরেশনে, ওয়ার্ডে কমিউনিট গ্রুপ করতে হব; যারা স্বাস্থ্যবিধির নিয়ম মেনে চলতে এলাকার মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবে।
শুরু থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলে এসেছে করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে মানুষকে ঘরের ভেতরে থাকতে এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো পদক্ষেপ ভাইরাসের সংক্রমণের গতি কমিয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। যদিও এগুলোকে প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ‘এটা জিততে সাহায্য করবে না।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও বলেছে, ‘জয় পেতে হলে আমাদের আগ্রাসী আরও সুনির্দিষ্ট কৌশল গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি সন্দেহভাজন ব্যক্তির পরীক্ষা করতে হবে। শনাক্ত হওয়া প্রত্যেক ব্যক্তিকে আইসোলেশন ও যত্নে রাখতে হবে। আর তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে কোয়ারেন্টিনে রাখতে হবে।’
বাতাস করোনাভাইরাস ট্রান্সমিশনের অন্যতম বাহক বলে জানান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী। তিনি বলেন, ‘শীতের সময় ঘর বদ্ধ থাকে এবং ভেন্টিলেশন কম থাকে বলে এসব রোগ বাড়ে। শীতে অনেকে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রাখে, সেটা বাসা বাড়ি এবং অফিসগুলোতেও। এতে করে সবার হাঁচি কাশি আবদ্ধ ঘরের বাতাসে জমা হয়। তাই সংক্রমণ কমাতে ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে।’
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা সেকেণ্ড ওয়েভ বলবো কীনা প্রশ্নে অধ্যাপক লিয়াকত আলী বলেন, ‘ফার্স্ট ওয়েভের পরে একটা সুপার ইমপোজড সুপার ওয়েভ আসবে… ।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ‘রেট অব পজিটিভিটি’ বা সংক্রমণের হার পাঁচের নিচে নামলে ‘প্যান্ডেমিক কন্ট্রোলে’ আছে বলে ধরা হয়।
বর্তমানে দেশে করোনার উপস্থিতি কী অবস্থায় রয়েছে জানতে চাইলে অধ্যাপক লিয়াকত আলী বলেন, ‘শুরু থেকেই কোনও নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। শুরুর দিকে যদি পদক্ষেপ গ্রহণ করে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যেত, তাহলে হয়তো একটা ঢেউ উঠে সেটা নিচে নেমে যেত। কিন্তু সেটা দেশে হয়নি। তখন যদি নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়ে রোগী শনাক্ত করে তাদের আইসোলেশন করে তাদের কন্টাক্টে আসাদের কোয়ারেন্টিন করা যেত, তাহলে কিন্তু সংক্রমণ কমতো। কিন্তু আমরা তো সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণেই আনতে পারিনি।’ ‘আমাদের দেশে প্রো লং হচ্ছে, ফ্লাকচুয়েশন হচ্ছে।’-বলেন অধ্যাপক লিয়াকত আলী।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘শীতের সময় আবহাওয়ার কারণে সর্দি কাশি বেশি হয়, আবার যেকোনও ছোঁয়াচে রোগ শীত ও বর্ষাতে বেশি হয়। একইসঙ্গে হিউমিলিটি যখন ড্রাই থাকে, তখন সেটা বাতাসে বেশিক্ষণ থাকে। এ জন্য সংক্রমণের সম্ভাবনাও বাড়ে।’
তিনি বলেন ‘অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট যাদের থাকে, তাদের শীতের সময়ে এসব রোগের টেন্ডেসি বাড়ে। এর কারণে ভাইরাসের শিকার হলে সেটা সিভিয়ার হয়ে যায়। তাই আমরা শীতকালের বিষয়ে বেশি কনসার্ন।’
শীতে যে সেকেন্ড ওয়েভ আসতে পারে আর সেটা প্রথম ওয়েভের চেয়ে বেশিও হতে পারে মন্তব্য করে ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘শীতের আগে সংক্রমণের হার কমে গেলেও শীতের সময়ে আরেকটা ঢেউ আসতে পারে।’
Post Written by : Rubel Islam
Original Post URL : https://ift.tt/351ndLv
Post Come trough : নাচোল নিউজ