দুপুরে ঘুম পায় কেন ? বিশেষ করে লাঞ্চ করবার পর । যারা অফিসে কিংবা কাজে থাকেন, ভালো করেই ব্যাপারটি বুঝেন ।
শরীর তখন চায় একটু ঘুমাতে । পাশে কেউ থাকলে ইচ্ছে করে বলতে মাথা খানি টিপে দিতে ।
বাঙালির ভাত ঘুম অনেকের কাছে পরিচিত । বিশেষ করে দেশী গৃহবধূদের কাছে ।
ইটালি, গ্রীক, স্পেনে দুপুর থেকে বিকেলবেলা দুই থেকে তিন ঘন্টা পর্যন্ত অনেক দোকানপাট, মার্কেট, অফিস বন্ধ, থাকে । সময়টিকে তারা বলে Siesta । উত্তর ইতালিতে বলে Riposo । সময়টি লাঞ্চের পরে বিশ্রামের জন্য ।
আরো অনেক দেশেই এরকম কিছু পদ্ধতি আছে । বাঙালি একা ভাত খেয়ে দুপুরে ঘুম দেয় না । ইংরেজিতে এমন ঘুমকে বলে Nap ।
শরীরে একটি ঘড়ি আছে । বিজ্ঞানের ভাষায় ঘড়িটিকে বলে Circadian Rhythm । এটি শরীরের অনেক কাজের সময়সূচী নিয়ন্ত্রণ করে ।
কোষের কাজ করতে অনেক শক্তির প্রয়োজন হয় । সঠিক সময়ে মজুদ শক্তি যোগানের উদ্দেশ্যে এই ঘড়ি শরীরের বিভিন্ন অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে শক্তি অপচয় রোধ করে । যেমন শরীরকে ঘুমিয়ে সেই শক্তিকে সঞ্চয় করতে চেষ্টা করে পরদিন এর জন্য । এই ঘড়ি ঘুম পাড়িয়ে দেয় যথাসময়ে । ঘুম এনে দিতে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ বের করতে সাহায্য করে । নাম মেলাটোনিন ।
Circadian Rhythm কোষের ঘড়ি হলে তাকে নিয়ন্ত্রণ করবার একটা মাস্টার ঘড়ি আছে আবার । সেটি থাকে মস্তিষ্কে । হাইপোথ্যালামাস নামক মস্তিষ্কের একটি অংশে 20000 স্নায়ু কোষ দিয়ে তৈরি একটি ছোট্ট অংশের নাম Suprachiasmatic nucleus । এই মাস্টার ঘড়ি বা প্রধান ঘড়িটি ঘুম আনতে প্রধান নিয়ন্ত্রণকর্তা । সংক্ষেপে একে বলে SCN ।
সূর্য যখন মাথার উপরে, সাথে তাপমাত্রা বেড়ে যায়, সাথে দুপুরবেলা সচরাচর আমরা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বেশি খাই, সাথে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে শরীরে যে পরিমাণ পানি পানের দরকার তার কমই পান করি আমরা এই সময়ে । সাথে SCN প্রতি 10-12 ঘন্টা অন্তর শরীরকে একটি বড় সিগন্যাল দেয় বিশ্রামের । এই সবগুলো কারণে দিনের মধ্যে সময়ে ঠিক দুপুরে খাওয়ার পর শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে দিতে SCN মেলাটোনিন সিক্রেট করে । আর তাতেই ঘুম ঘুম ভাব আসে । সাথে যদি কাজের চাপ, আগের রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত সময় কাটানো, কম ঘুম হওয়া, সবমিলিয়ে শরীর তখন বিশ্রাম নিতে চায় । কারণ তা না হলে কোষের পরবর্তী কাজগুলো ঠিকমতো হতে পারে না।
আপনি চান আর না চান, এমন করে শরীর নিজেই একটি সময়সূচী মেনে নিয়ে তাকে ঠিক রাখে ।
এর থেকে বের হওয়ার উপায় হল : আগের রাতে ভালো ঘুম হওয়া, দুপুরে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার না খেয়ে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, বেশি পরিমাণ পানি পান, এবং রুমের কৃত্রিম আলোতে একটানা বেশিক্ষণ কাজ না করে সময় সময় সূর্যের আলোর মুখোমুখি হয়ে শরীরে মেলাটোনিন সিক্রেট হওয়ায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা । এইগুলো করেও সুযোগ থাকলে 15 থেকে 20 মিনিট নিরবে কোথাও চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিলে শরীর বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠে ।
মধ্যদুপুরে মনে হয় প্রথম সকাল ।
© অপূর্ব চৌধুরী । চিকিৎসক এবং লেখক । জন্ম বাংলাদেশ, বসবাস ইংল্যান্ড । গ্রন্থ ৭ । উল্লেখযোগ্য বই : অনুকথা, জীবন গদ্য, বৃত্ত ।
Post Written by : Rubel Islam
Original Post URL : https://ift.tt/3fC9M6m
Post Come trough : Nachole News | নাচোল নিউজ