বাড়ি থেকে ডেকে শত শত মানুষের সামনে স্কুলছাত্রকে হত্যা
সারাদেশ
নরসিংদী প্রতিনিধিথেমে গেছে সব কোলাহল। স্তব্ধ হয়ে গেছে পরিবারের সব আনন্দ। ঈদ আনন্দ রূপ নিয়েছে বিষাদে। বাড়িজুড়ে কান্না আর আহাজারি। শোকে বিহ্বল স্বজনরা। সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় মা-বাবা। শোকের ছায়া নেমে এসেছে গ্রামজুড়ে। এই চিত্র মেঘনা নদীবেষ্টিত চরাঞ্চল নরসিংদীর কালাইগোবিন্দপুর গ্রামে। দশম শ্রেণির ছাত্র ফারহান আহমেদ ওরফে অনীককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে শত শত মানুষের সামনে সহপাঠীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টার দিকে সদর উপজেলার নাগরিয়াকান্দি এলাকায় ঈদ উপলক্ষে মেঘনা নদীতে নৌ ভ্রমণে গিয়ে অনীককে পিটিয়ে হত্যা করে বন্ধুরা। এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সোমবার সদর উপজেলার নাগরিয়াকান্দি এলাকায় শেখ হাসিনা সেতুতে বেড়াতে যায় কালাইগোবিন্দপুর এলাকার শহিদুল্লাহ মিয়ার ছেলে সাটিরপাড়া কালিকুমার উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ফারহান আহমেদ ওরফে অনীক (১৫)। ওই সময় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দড়ি নবীপুর গ্রামের আজিজুল, শ্রাবণ, আরিফ ও মাইন উদ্দিনের সঙ্গে অনীকের ঝগড়া হয়। পরে আশপাশের লোকজন তাদের নিবৃত করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এ ঘটনার এক দিন পর মঙ্গলবার আজিজুল, শ্রাবণ, আরিফ, মাইন উদ্দিন, ইয়াসিন, সাগর, বাদশাসহ একটি কিশোর গ্রুপ নৌকাযোগে পিকনিক করতে নাগরিয়াকান্দি এলাকায় শেখ হাসিনা সেতুতে আসে। বিকাল ৪টার দিকে অনীককে ফোন করে সেতুতে আসতে বলে বন্ধু আরিফ এবং ঝগড়া সমস্যার সমাধান করা হবে বলে আশ্বাস দেয়।
এমন খবরের ভিত্তিতে অনীক সেখানে যায়। যাওয়ার পরপরই ওৎপেতে থাকা আরিফ ও তার বন্ধুরা মিলে অনীককে নৌকার কাঠ দিয়ে পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে তার মাথায় সজোরে আঘাত করে তারা। পরে অনীককে পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ অনীকের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সদর হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা সাতজনের নাম উল্লেখ করে সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। ঘটনার পরপরই পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে। গতকাল বাদ আসর জানাজা শেষে অনীকের মরদেহ দাফন করা হয়।
এদিকে আনন্দ ভ্রমণের সময় দুই নৌকার লোকজনের মারামারির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ইয়াসিন সরকার প্রকাশিত সেই ভিডিওতে দেখা যায়, লাঠি, বাঁশ ও কাঠ নিয়ে মারামারি করছে। ভিডিওতে এক কিশোরের মাথায় সজোরে কাঠ দিয়ে আঘাত করতে দেখা যায়।
নিহত কিশোরের বাবা শহিদুল্লাহ মিয়া বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অনিক প্রায়ই নানুবাড়ি অর্থাৎ কালাইগোবিন্দপুর যেত। গতকাল সকালেও সেখানে গিয়েছিল সে। ওই এলাকায় তার বয়সীরা নৌকাভ্রমণে গেছে খবর পেয়ে বিকেল পাঁচটার দিকে আরও তিনজনের সঙ্গে সেতুর নিচে যায় সে।
নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার দত্ত বলেন, হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে আটক ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। এ ছাড়া ওই কিশোরের মৃত্যুর কারণ ও পারিপার্শ্বিক ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএস
Post Written by :
Original Post URL : https://ift.tt/2PsAtj9
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD