প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন নিয়ে জটিলতা
সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড হয়েছে ১৩তম। তবে শিক্ষকদের নিয়োগকালীন শিক্ষাগত যোগ্যতা দু'রকম থাকায় সবাই এই স্কেলে বেতন পাবেন কিনা, তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে সংশয়।
নিজস্ব প্রতিবেদকসারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড হয়েছে ১৩তম। তবে শিক্ষকদের নিয়োগকালীন শিক্ষাগত যোগ্যতা দু'রকম থাকায় সবাই এই স্কেলে বেতন পাবেন কিনা, তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে সংশয়।
কয়েকজন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক (স্নাতকের নিচে), তারা ১৩তম গ্রেডে বেতন পাওয়ার যোগ্য নন।
আবার কেউ কেউ মনে করছেন, সরকারি প্রজ্ঞাপনে যেহেতু সুনির্দিষ্টভাবে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিচারে কে পাবেন আর কে পাবেন না- তা নির্ধারণ করে দেওয়া নেই, সংগত কারণে সব সহকারী শিক্ষকই বর্ধিত বেতনের সুবিধা পাবেন বলে প্রতীয়মান হয়। শেষের মতের সঙ্গেই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বড় অংশ একমত।
অন্যদিকে বেশ কয়েকজন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্পষ্টীকরণ পত্র জারি করা দরকার। নতুবা এই বিভ্রান্তি থেকেই যাবে।
এবিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম আল হোসেন বলেন, শিক্ষকরা সবাই যাতে সুবিধা পান, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি।
তবে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিক্ষকরা সবাই বর্ধিত বেতনের সুবিধা পাবেন না। কারণ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্বীকৃত প্রাথমিক শিক্ষকদের সর্বশেষ নিয়োগবিধি-২০১৯ অনুযায়ী, সহকারী শিক্ষকদের যোগ্যতা কমপক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে। এ নিয়োগবিধি অনুসারে এর চেয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডে বেতন দেওয়ার সুযোগ নেই। বর্তমানে সারাদেশে ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে তিন লাখ ৫২ হাজার সহকারী শিক্ষক কর্মরত। তাদের ৬০ শতাংশই নারী।
আগের নিয়োগবিধিতে নারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক ও পুরুষদের জন্য স্নাতক নির্ধারণ করা ছিল। এ কারণে ১৩তম গ্রেডে বেতন পাওয়ার যোগ্যতা কমপক্ষে স্নাতক দ্বিতীয় শ্রেণি নির্ধারণ করা হলে সহকারী শিক্ষকদের বড় অংশই ১৩তম গ্রেড প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবেন। যাদের মধ্যে অধিকাংশ নারী শিক্ষক।
জাতীয় বেতন স্কেলের ১১তম গ্রেডে বেতনের দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করার পর গত ৯ ফেব্রুয়ারি এই শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডে বেতন দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
১৩তম গ্রেডের প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে এই গ্রেডের সুবিধাপ্রাপ্তি নিয়ে নানা জটিলতা দেখা দেয়। কারণ, চিরায়ত নিয়মে বেতন নিম্নধাপে নির্ধারণ করলে শিক্ষকদের বেতন বর্তমানের চেয়েও কমে যাচ্ছিল। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিবের হস্তক্ষেপে ১৩তম গ্রেডের উচ্চধাপে বেতন নির্ধারণ করায় সে জটিলতার সমাধান হয়। কিন্তু এবার সব সহকারী শিক্ষকের এই সুবিধা দেওয়া নিয়ে নতুন করে তালগোল পাকিয়ে গেছে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, প্রজ্ঞাপনে ২০১৯ সালের নিয়োগবিধির তফসিলের (২-এর গ) কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু নিয়োগবিধি ২০১৯-এর ১০-এর ১ ও ২-এর রহিতকরণ ও হেফাজতকরণ কলামে উল্লেখ আছে, ২০১৩ নিয়োগবিধি রহিতকরণ সত্ত্বেও উক্ত বিধিমালার অধীন যে সকল কার্যক্রম নিষ্পন্ন হয়েছে, তা এই বিধিমালার (২০১৯) অধীন সম্পন্ন হয়েছে বলে গণ্য হবে এবং এই বিধিমালা জারির তারিখে অনিষ্পন্ন সকল কার্যাদি যতদূর সম্ভব এই বিধিমালার অধীন নিষ্পন্ন করতে হবে।
তাই এই বিধিমালা অনুসারে সারাদেশের সব সহকারী শিক্ষকই ১৩তম গ্রেডের সুবিধা পাবেন। এই শিক্ষক নেতা বলেন, ২০১৪ সালের উন্নীত স্কেলের প্রজ্ঞাপনেও এমন শর্ত ছিল। কিন্তু তখনও কোনো সহকারী শিক্ষক উন্নীত স্কেল থেকে বঞ্চিত হননি। আমরা চাই, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় হিসাবরক্ষণ অফিসের সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা, যাতে সব শিক্ষকের ১৩তম গ্রেডে বেতনপ্রাপ্তি নিশ্চিত হয়।
গত রোববার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর মতিঝিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল প্রাথমিক ক্লাসরুম এবং প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা শিগগিরই নতুন গ্রেডে বেতন পাবেন। নতুন বেতন কাঠামোর ডিও (ডিমান্ড অব অর্ডার) ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে গেছে। সেখান থেকে সম্মতি দেয়া হলে তারা নতুন গ্রেডে বেতন পাবেন। আশা করি, শিগগিরই সেটা হয়ে যাবে।
চলতি মাসের ৯ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন কাঠামো ১৩তম গ্রেডে উন্নীত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১১০০০-২৬৬৯০ (গ্রেড-১৩) নির্ধারণ করা হলো, যা বিদ্যমান বেতনস্কেল ১০২০০-২৪৬৮০ (গ্রেড-১৪ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) এবং ৯৭০০-২৩৪৯০ (গ্রেড-১৫ প্রশিক্ষণবিহীন)। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০১৯ এর যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এ আদেশ কার্যকর হবে।
পূর্বপশ্চিমবিডি/জেডআই
Post Written by :
Original Post URL : https://ift.tt/3iRjy6z
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD