কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ বিড়ি ফ্যাক্টরির মালিকের বিরুদ্ধে
সারাদেশ
জামালপুর প্রতিনিধিপুরাতন ব্যান্ডরোল ব্যবহার ও উৎপাদন কম দেখিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে ৩০ নং রশিদা বিড়ি ফ্যাক্টরির মালিক ইদ্রিস মিয়ার বিরুদ্ধে।
ইতোমধ্যে জামালপুর ও শেরপুরে রশিদা বিড়ি ফ্যাক্টরিতে একাধিক অভিযানে পুরাতন ব্যান্ডরোল ব্যবহারে প্রমাণ পেয়েছে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। সর্বশেষ গত ৩ সেপ্টেম্বর রাতে দেওয়ানগঞ্জের হারুয়াবাড়িতে রশিদা বিড়ি ফ্যাক্টরিতে অভিযান পরিচালনা করে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কর্মকর্তা। এ সময় বিপুল পরিমান পুরাতন ব্যান্ডরোল উদ্ধার এবং ফ্যাক্টরির উৎপাদনের আসল ও নকল হিসাবের খাতাপত্র জব্দ করেছেন।
শেরপুরের শিল্পপতি ইদ্রিস মিয়ার মালিকানাধীন ৩০নং রশিদা বিড়ির জামালপুর, শেরপুর ও ময়মনসিংহ জেলায় একাধিক বিড়ি ফ্যাক্টরি রয়েছে। প্রতিটি ফ্যাক্টরিতে ব্যবহার করা পুরাতন ব্যান্ডরোল পুনরায় ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়াও প্রতিটি ফ্যাক্টরিতে উৎপাদন কম দেখিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে ৩০ নং রশিদা বিড়ি ফ্যাক্টরির মালিক ইদ্রিস মিয়ার বিরুদ্ধে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে দেওয়ানগঞ্জের হারুয়াবাড়িতে ৩০নং রশিদা বিড়ি ফ্যাক্টরিতে অভিযান পরিচালনা করেন কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট জামালপুরের বিভাগীয় কর্মকর্তা শেখ মোঃ মাসুদুর রহমান। রাত প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপি পরিচালিত এই অভিযানে পূর্বে ব্যবহৃত পুরাতন ১৭ হাজার ব্যান্ডরোল, আসল ও নকল হিসাবপত্রের লাল কাপড়ে মোড়ানো দলিলাদি ২৫টি, পুরাতন ব্যান্ডরোল লাগানো ৬ হাজার ৪০০ প্যাকেট বিড়ি, বিভিন্ন হিসাবের লুজসীর্ট জব্ধ করেন। এ সময় ব্যান্ডরোল সংক্রান্ত্র রেজিস্ট্রার দেখতে চাওয়া হলে তা দেখাতে ব্যর্থ হন ওই ফ্যাক্টরির ম্যানেজার সেলিম রেজা।
রোববার ৩০নং রশিদা বিড়ির দেওয়ানগঞ্জের হারুয়াবাড়ি ফ্যাক্টরির ম্যানেজার সেলিম রেজা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট জামালপুরের বিভাগীয় কর্মকর্তা বরাবর সংক্ষিপ্ত বিচার আদেশের মাধ্যমে আটককৃত পণ্য ছাড় করতে লিখিত আবেদন করেছেন। ওই আবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, গত ৩ সেপ্টেম্বর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট জামালপুরের বিভাগীয় দপ্তরের প্রিভেন্টিভদল কর্তৃক জব্ধ করা ব্যান্ডরোলগুলো পূর্বে ব্যবহৃত ছিল। যা মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ওই আবেদনে। ২০ টাকার কোর্ট ফি লাগানো ওই আবেদনে ভবিষতে পুরাতন ব্যান্ডরোল আর ব্যবহার করবেন না বলেও অঙ্গীকার করেন রশিদা বিড়ির ম্যানেজার সেলিম রেজা।
এ ব্যাপারে ৩০নং রশিদা বিড়ির হারুয়া বাড়ি ফ্যাক্টরির ম্যানেজার সেলিম রেজার সাথে মোবাইলে কথা বললে তিনি জানান, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট জামালপুরের বিভাগীয় কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করেছেন ফ্যাক্টরিতে। তারা কিছু খাতাপত্র নিয়ে গেছেন। এটা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের নিয়মিত কাজ। এটা কোন বিষয় না।
এ ব্যাপারে কথা বলতে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট জামালপুরের বিভাগীয় কর্মকর্তা শেখ মোঃ মাসুদুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জানা গেছে, শেরপুরের শিল্পপতি ইদ্রিস মিয়ার ৩০নং রশিদা বিড়ির দু’টি ফ্যাক্টরিতে গত ২৯ জুলাই অভিযান চালিয়ে পুরাতন ব্যান্ডরোল লাগানো প্রায় ৪ লাখ প্যাকেট বিড়ি জব্দ করে র্যাব। ওইদিন রাতে শেরপুর সদর ও শ্রীবরদী উপজেলার দু’টি ফ্যাক্টরিতে এনএসআই, র্যাব-১৪ এবং জেলা প্রশাসন যৌথ অভিযান চালিয়ে এসব প্যাকেট জব্দ করে। এ সময় দুই কারখানার সহকারী ব্যবস্থাপক শফিউল আলম ও রুবেল শাহরিয়ারকে আটক করা হয়।
অভিযোগ উঠেছে, একটি ব্যান্ডরোলের সরকারি মূল্য ৮ টাকা। ৩০নং রশিদা বিড়ির মালিক বাজার থেকে ৫০ পয়সা দিয়ে পুরাতন ব্যান্ডরোল কিনে এসব ব্যান্ডরোল বিড়ির প্যাকেটে লাগিয়ে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন। রশিদা বিড়ি ফাক্টরির ৩০ দিনে ব্যান্ডরোল ক্রয় করার কথা ৯ কোটি ৬০ লাখ টাকার। কিন্তু শেরপুর জেলা পোস্ট অফিসের একটি সূত্র জানায়, চলতি বছরের জুলাই মাসে শেরপুর পোস্ট অফিস থেকে রশিদা বিড়ি কর্তৃপক্ষ ১ কোটি ৩১ লাখ ২২ হাজার টাকার ব্যান্ডরোল ক্রয় করেছে। সেই হিসেবে রশিদা বিড়ি থেকে প্রতিমাসেই ৮ কোটি ২৮ লাখ ৭৮ হাজার টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া ৩০নং রশিদা বিড়ি ফ্যাক্টরির মালিক ইদ্রিস মিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকার দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ নেবে এমন প্রত্যাশা জামালপুর-শেরপুরের সচেতন মহলের।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম
Post Written by :
Original Post URL : https://ppbd.news/whole-country/172666/কোটি-কোটি-টাকা-সরকারি-রাজস্ব-ফাঁকির-অভিযোগ-বিড়ি-ফ্যাক্টরির-মালিকের-বিরুদ্ধে
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD