দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ জিততে পেসারদের বিশেষ কিছু করতেই হতো। দুই পেসার শরিফুল ইসলাম ও তামজীম হাসান টুর্নামেন্টজুড়েই পালন করেছেন সে দায়িত্ব।
শরিফুল ৫ ম্যাচ বল করে ৩.৬৪ ইকোনমি রেটে উইকেট নেন ১০টি। তামজীম ৫ ম্যাচে ৭ উইকেট, ইকোনমি রেট ৪.৫৭। ফাইনালে অভিষেক দাসও বেশ সফল। আগ্রাসি মানসিকতা, বাউন্স নিখুঁত লাইন-লেংথ, প্রয়োজনে একটু সুইং—কী ছিল না পেসারদের বোলিংয়ে!
গতিময় বাউন্সি উইকেটে বাংলাদেশের এই পেস-প্রদর্শনীতে পর্দার আড়ালে থেকে যিনি কাজ করেছেন, তাঁর নাম মাহবুব আলী, বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বোলিং কোচ। গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন যুব বিশ্বকাপে পেসারদের সাফল্যের পেছনের গল্প—
প্রশ্ন: দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের পেসারদের সাফল্যের রহস্য কী?
মাহবুব: সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের ছেলেরা ভয় পায়নি। প্রতিটি ছেলে মানসিকভাবে অনেক দৃঢ়। দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনে মানিয়ে নেওয়াটা কঠিন হলেও ওরা ওদের স্কিল পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছে।
প্রশ্ন: সে জন্য তো নিশ্চয়ই বিশেষ প্রস্তুতির দরকার ছিল। সেই প্রস্তুতিটা কি ছিল?
মাহবুব: দেখুন, দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যেও কিন্তু একেক ভেন্যুর কন্ডিশন একেক রকম। পচেফস্ট্রুম যেমন সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ হাজার ৪০০ ফুট ওপরে। আবার জোহানেসবার্গ ৫ হাজার ফুট ওপরে।
ওখানে তো বল করার সময় নিশ্বাসই বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হতো ছেলেদের। ছেলেরা অনেক কষ্ট করেছে এ রকম কন্ডিশনে মানিয়ে নিতে। তা ছাড়া নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড সফরে বোলিং করার অভিজ্ঞতা ওদের সাহায্য করেছে।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপের জন্য আর কী প্রস্তুতি নিয়েছিলেন দলের পেসাররা?
মাহবুব: দেড় বছর ধরেই আমরা বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা জানতাম দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে ঘাস আছে, উইকেট বাউন্সি। সে জন্য আমরা বাংলাদেশের কোন কোন এলাকার উইকেটগুলো মোটামুটি এ রকম, সেগুলো খুঁজে বের করেছি।
এটা ঠিক যে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো উইকেট আমরা বাংলাদেশে পাব না। কিন্তু খুলনা, বগুড়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের উইকেটগুলো কিছুটা হলেও বাউন্সি। আমরা তাই এসব জায়গায় অনুশীলন ক্যাম্প করেছি। ম্যাচ খেলেছি।
এ ছাড়া নেটে ওদের নতুন ও পুরোনো বলে ম্যাচ পরিস্থিতিতে বল করাতাম। নতুন, পুরোনো বল মিলিয়ে প্রতিটা বোলারের ১০ ওভার বোলিং আলাদা আলাদা পরিস্থিতিতে ভাগ করা থাকত।
প্রশ্ন: পেসারদের কোন দিকগুলোয় আপনি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন?
মাহবুব: সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি গতির ওপর। এরপর লাইন-লেংথ। কারণ ওই ধরনের উইকেটে শুধু ভালো জায়গায় বল ফেললেই হয় না, গতিটাও গুরুত্বপূর্ণ।
তাতে ওদের গতির ভালো উন্নতিও হয়েছে। বিশ্বকাপের আগেও আমাদের পেসাররা ১২০-১২২ থেকে ১২৫-১২৬ কিমি গতিতে বল করত। বিশ্বকাপে তো ১৩৮ কিমি গতিতে বল করেছে।
আমার লক্ষ্য হলো, এই পেসারদের দিয়ে আমি ১৪০ কিমি গতির ওপরে বল করাব। এ ছাড়া গুড লেংথ এবং ব্যাক অফ লেংথ—এ দুটি জায়গায় কাজ করেছি। আমাদের হাতে এসবের জন্য সময় খুব বেশি ছিল না।
সে জন্য যখনই নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড বা শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোয় খেলতে গেছি, আমি চেষ্টা করেছি ওদের উইকেটে ছেলেদের স্কিল নিয়ে বাড়তি কাজ করতে। কারণ, ও রকম উইকেট, কন্ডিশন তো আমি দেশে পাব না! ছোট ছোট এই সেশন আমাদের অনেক এগিয়ে দিয়েছে।
প্রশ্ন: আপনার পেসারদের শক্তির জায়গা কোনগুলো?
মাহবুব: ডেথ ওভারের বোলিং ওদের একটা অন্যতম শক্তির জায়গা। ডেথ ওভারে ওরা খুব ভালো ইয়র্কার মারতে পারে, যেটা করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা অনেক পেসারও হাফভলি বা ফুলটস দিয়ে ফেলে। আরেকটা তো আগেই বললাম—মানসিক শক্তি।
প্রশ্ন: স্পিনারদের জন্য তো আলাদা কোচ ছিল না। তাঁদেরও কি আপনিই দেখভাল করেছেন?
মাহবুব: হ্যাঁ, ওদের নিয়েও আমিই কাজ করেছি। চেষ্টা করেছি ওদেরও প্রয়োজন মতো সাহায্য করতে। শামীম পাটোয়ারী যেমন আগে শুধু নেটে বল করত। ম্যাচে ওকে আমরা আক্রমণে আনতাম না।
শ্রীলঙ্কা সফরেও সে বল করেনি। কিন্তু ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড সফর থেকে ও বল করা শুরু করে। বিশ্বকাপেও শামীমের অফ স্পিন আমাদের কাজে লেগেছে। একটা বিষয় না বললেই নয়, আমাদের নেটে কিন্তু দলের প্রায় সব খেলোয়াড় বল করত।
যে যেটা পারে। আমি ওদের বলেছি, শুধু একটা করলে হবে না। অলরাউন্ডার হতে হবে। কার ভেতরে কী আছে বলা যায় না। এভাবে বল করতে করতেই দেখা যাবে একজন ভালো বোলার বেরিয়ে এসেছে। শামীম পাটোয়ারী যেমন বেরিয়ে এল।
শেষ প্রশ্ন। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর পচেফস্ট্রুমের মাঠে জাতীয় পতাকা নিয়ে একটু বেশিই আবেগাপ্লুত মনে হয়েছে আপনাকে। বিশেষ কোনো কারণ?
মাহবুব: বাংলাদেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, পতাকা ওড়াতে এর চেয়ে বড় কারণ আর কি লাগে! তবে হ্যাঁ, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ইতিহাসের সঙ্গে আমার পরিবারের সামান্য হলেও যোগসূত্র আছে।
লাল বৃত্তের মাঝখানে সোনালি রঙের মানচিত্র আঁকা বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকার রূপকার ছিলেন শিব নারায়ণ দাস। কুমিল্লায় সেদিন আর যে দুজন ব্যক্তি তাঁকে জাতীয় পতাকার নকশা করতে সাহায্য করেছিলেন, তাঁদের একজন মাস্টার ওহাব।
আরেকজন আমার বাবা অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী। আব্বা ছিলেন কুমিল্লা আর্ট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা। হতে পারে এসব কারণে জাতীয় পতাকা হাতে সেদিন একটু বেশিই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম।সূত্রঃ-প্রথম আলো
Post Written by : Rubel Islam
Original Post URL : https://ift.tt/3jJUnn1
Post Come trough : নাচোল নিউজ