যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীরকে নিয়ে নানা প্রশ্ন
সারাদেশ
পূর্বপশ্চিম ডেস্কদিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলী শেখকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় আটকের পর ছাড়া পাওয়া উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ওই জাহাঙ্গীর। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা এবং অভিযোগ রয়েছে থানায়। ইউএনও’র ওপর হামলার ঘটনার কারণ হিসাবে স্থানীয় বাসিন্দারা নানামুখি কথা উপস্থাপন করছেন। এগুলোর অন্যতম হচ্ছে অবৈধ বালু উত্তোলন, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ এবং হাট-বাজারের ইজারা। এসব একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন ঘোড়াঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রাফে খোন্দকার শাহেনশাহ। আর তার ডান হাত হিসাবে পরিচিত জাহাঙ্গীর।
বালুমহাল, খাস জমি দখল, মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজিতে নানা সময়ে বাধা দিয়ে আসছিলেন ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম। এসব বাধাই কাল হয়ে দাঁড়ায়।
হামলার মূল কারণ হিসাবে এমনটাই মনে করছেন এলাকাবাসী। ঘটনাটি চুরির উদ্দেশ্যে বলে মানতে নারাজ সাধারণ মানুষ। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করা হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। গভীর রাতে বাসভবনে হামলা চালানো হয় পরিকল্পিতভাবেই।
সরজমিনে জানা যায়, ঘোড়াঘাটের কলোনিপাড়া এলাকায় বেশ কিছু খাস জমি আছে। সেই খাস জমি বিভিন্ন সময় উপজেলা চেয়ারম্যান ও ঘোড়াঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাফে খোন্দকার শাহেনশাহ নিয়ম বহির্ভূতভাবে দখলে নিতে চেষ্টা করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম বরাবরেই এসব অবৈধ দখলে বাধা প্রদান করেছেন। এসব কারণেই ওই নেতা ইউএনও’র উপর আগে থেকেই ক্ষিপ্ত ছিলেন।
এলাকাবাসী বলছেন, এসব কারণেই এ হামলা।
স্থানীয় একটি মসজিদ কমিটির সদস্য রুহুল আমিন বাবলু বলেন, ইউএনওকে আমরা অনেক কাছে থেকে দেখেছি। তার সঙ্গে অনেক অনুষ্ঠানে ছিলাম। তিনি খুবই নিষ্ঠার সঙ্গে এখানে দায়িত্বপালন করে আসছেন। অন্যায়েন সঙ্গে তিনি কখনোই আপস করেননি।
তিনি ক্ষমতাশীন দলের কিছু নেতার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, কান টানলে মাথা আসে। প্রশাসন যদি সেই কান টানে তাহলে আসল ঘটনা বের হয়ে আসবে।
তিনি জাহাঙ্গীরকে ছেড়ে দেয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, তাকে কেনো ছেড়ে দিল সেটি কারোরই বোধে আসছে না। তাকে ছেড়ে দেয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্ন নানা কৌতুহল দেখা দিয়েছে।
উপজেলা চত্বরের পাশের একজন ব্যবসায়ী আনিছুর রহমান বলেন, এই ঘটানকে আমরা সাধারণ ঘটনা হিসাবে দেখছি না। এটি অবশ্যই দলীয় লোকজনের দ্বারাই ঘটেছে। সাধারণ কোনো চোর বা অন্য কেউ অবশ্যই একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার গায়ে হাত দিতে পারে না।
তিনি মনে করেন, এই ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার উদ্দেশ্যে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আলোচিত এই জাহাঙ্গীর চলতি বছর ১৩ মে ঘোড়াঘাট পৌরসভার আব্দুস সাত্তার মিলনের উপরেও প্রকাশ্যে হামলা করেছিল। সেই হামলার ঘটনাতেও তার বিচার হয়নি। একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে পুরো উপজেলার মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে এই চিহ্নিত সন্ত্রাসী। পুলিশ প্রশাসনের সামনেই বীরদর্পে এমন অপকর্ম চালালেও তার বিরুদ্ধে নীরব সবাই। কার ইশারায় জাহাঙ্গীর অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে তা স্পষ্ট হলেও আইনের আওতায় আসছে না কেউ।
এদিকে উপজেলার রানীগঞ্জ বাজার এলাকায় নুনদহ ঘাটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিলেন সিংড়া ইউনিয়নের যুবলীগ সভাপতি মাসুদ রানা। সেখানে ইউএনও ওয়াহিদা খানম বেশ কিছুদিন আগে বালু উত্তোলনের সরঞ্জাম পুড়িয়ে দেন। ফলে ইউএনও’র ওপর ক্ষিপ্ত হন যুবলীগ নেতা মাসুদ রানা। এ ছাড়াও এ বছর ১৪ মে ইউএনও’র কাছে মুক্তিযোদ্ধা সায়েদ আলীর জামাতা আবিদুর রহমান জমি দখল ও চাঁদা দাবি করার অভিযোগ করেন জাহাঙ্গীর আলম ও মাসুদ রানার বিরুদ্ধে। অভিযোগগুলো ওয়াহিদা খানম গুরুত্ব দিয়ে দেখেন। সেই সঙ্গে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের বিষয়ে তৎপরতা চালান।
এসব বিষয়ে জানতে আবদুর রাফে খোন্দকার শাহেনশাহর মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ঘোড়াঘাট পৌরসভার মেয়র আব্দুস সাত্তার মিলন বলেন, আমি ঘটনার পর ইউএনও’র শয়নকক্ষ পর্যন্ত গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখি রক্তাক্ত মেঝে। ঘরের কোনো কিছুই নষ্ট হয়নি। এতে স্পষ্ট যে চুরি বা ডাকারির জন্য দুর্বৃত্তরা ওই ঘরে যায়নি। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই গিয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, ঘোড়াঘাটে এসিল্যান্ড না থাকায় ওই দপ্তরের দায়িত্বেও ছিলেন ইউএনও। ভূমি নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন জনের সঙ্গে তার মতবিরোধ থাকতে পারে। সেই মতবিরোধের জেরেও হামলার ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে।
তিনি মনে করেন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তদন্ত করলেই মূল আসামির সন্ধান মিলবে।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি নবীরুল ইসলাম ও সান্টু কুমার বিশ্বাসের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় দিনাজপুরের আমলী আদালত-৭ এর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিশির কুমার বসুর আদালতে দুই আসামি নবীরুল ইসলাম এবং সান্টু কুমার বিশ্বাসকে হাজির করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দিনাজপুর ডিবির ওসি ইমাম আবু জাফর আসামিদের বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত তাদের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হামলার ঘটনায় আরো তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, শনিবার বিকেলে ঘোড়াঘাট উপজেলা সংলগ্ন সাগরপুর গ্রামের নিজের বাড়ি থেকে আশরাফুল ইসলাম ওরফে শাওন (৩৬), শ্যামল (৩৫) ও সুলতান (৩৩) নামে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে ঘোড়াঘাট থানার পুলিশ। ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া প্রধান সন্দেহভাজন যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা আসাদুল ইসলামের ভাই আশরাফুল।
প্রসঙ্গত, বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) রাতে ইউএনও ওয়াহিদার সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে ওয়াহিদা ও তার বাবার ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। পরে ইউএনওকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। এরপর তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে তাকে ঢাকায় আনা হয়। তিনি বর্তমানে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পূর্বপশ্চিমবিডি/জেডআই
Post Written by :
Original Post URL : https://ift.tt/3lWusdu
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD