শাহজালাল মাজারে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা নসাৎ
সিলেট প্রতিনিধিপুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের তিন দিনের অভিযানে গ্রেফতার জঙ্গিরা সিলেটে ভয়াবহ নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল বলে জানা গেছে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি ঢাকার পল্টনে পুলিশের ওপর হামলা এবং পুলিশের মোটরসাইকেলে শক্তিশালী বোমা রাখার সঙ্গেও তারা জড়িত ছিল। পুলিশ জানায়, নব্য জেএমবির আঞ্চলিক প্রধানসহ গ্রেফতার পাঁচ জঙ্গি শাহজালাল (রহ.) মাজারসহ সিলেটের বড় বড় স্থাপনায় হামলা করে আইএসের ঘোষিত ‘বেঙ্গল উলায়াত’-এর জানান দিতে চেয়েছিল। গ্রেফতারের পর তাদের মোবাইল ফোনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। জঙ্গিদের সেই পরিকল্পনা সফল হতে দেয়নি পুলিশ। শনিবার রাত থেকে মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) ভোর পর্যন্ত নগরী ও এর আশপাশের এলাকা থেকে জঙ্গিদের গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানায়, গত রোববার থেকে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) এবং পুলিশ সদর দফতরের ল'ফুল ইন্টারসেপশন সেল (এলআইসি) যৌথভাবে এ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে মেট্রোপলিটন পুলিশও সহযোগিতা করে।
গ্রেফতার জঙ্গিরা হলো- নব্য জেএমবির সিলেটের আঞ্চলিক প্রধান ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাইমুজ্জামান, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সানাউল ইসলাম সাদি, মদনমোহন কলেজের শিক্ষার্থী মির্জা সায়েম, সিএনজি চালক জুয়েল ও রুবেল। তাদের সবাইকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) উপ-পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, বুধবার তাদেরকে আদালতে হাজির করা হতে পারে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হবে।
জানা গেছে, নগরীর মিরাবাজারের উদ্দীপন ৫১ নম্বর বাসা থেকে নাইমুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়। তার বাবা আমিরুজ্জামান সিলেট ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার। নগরীর জালালাবাদ এলাকার লোহানী হাউস ৪৫/১০ থেকে সাদিকে গ্রেফতার করা হয়। তার বাবার নাম মঈনুল ইসলাম। নগরীর বারখলা এলাকার রূপালী-১১ নম্বর বাসা থেকে সায়েমকে গ্রেফতার করা হয়। দক্ষিণ সুরমার বাইপাস এলাকা থেকে সিএনজি চালক জুয়েল এবং মদিনা মার্কেট এলাকা থেকে রুবেলকে গ্রেফতার করা হয়।
২৬ জুলাই রাতে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্কয়ারের পাশে মোটরসাইকেল রেখে দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক পুলিশের একজন সার্জেন্ট। রাত পৌনে ৯টার দিকে মোটরসাইকেলের কাছে গিয়ে তিনি দেখেন, সেখানে একটি পলিথিন ব্যাগ ঝুলছে। ভেতরে ‘গ্রেনেডসদৃশ’ একটি বস্তু দেখে তিনি দ্রুত পুলিশ বক্সে খবর দেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল গিয়ে বোমা নিষ্ক্রিদ্ধয় করে। ২৫ জুলাই প্রায় একই সময়ে পল্টন মোড়ে কে বা কারা একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশ কর্মকর্তা সাইফুল বলেন, ওই ঘটনায় পল্টন থানায় মামলা হয়েছে। ওই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সিলেটে নব্য জেএমবির পাঁচ সদস্যকে আমরা গ্রেফতার করেছি।
পুলিশের অপর একটি সূত্রের দাবি, গ্রেফতার পাঁচজনের মোবাইল ফোনে থাকা তথ্য থেকে জানা গেছে, কথিত আইএসের মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা ‘বেঙ্গল উলায়াত’ ঘোষণার লক্ষ্যে কাজ করছিল। এ জন্য সিলেটের হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে হামলা করে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়ার পরিকল্পনা করছিল। পাঁচজনেরই সিলেটে নিজের বাসা থাকা সত্ত্বেও শাহজালাল (রহ.) মাজারের পাশে ও নগরীর টিলাগড় এলাকায় দুটি বাসা ভাড়া নিয়েছিল তারা।
সূত্রের দাবি, চারজনকে দলে টেনেছিলেন নাইমুজ্জামান। এর মধ্যে শুধু সাদিকে তিনি সামনাসামনি দেখেছেন। অন্যদের সঙ্গে গোপন অ্যাপের মাধ্যমে তার যোগাযোগ হতো। ২০০৪ সালে শাহজালাল (রহ.) মাজারে ব্রিটিশ হাইকমিশানরের ওপর যে হামলা হয়েছিল তার চেয়েও বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। এমন পরিকল্পনার কথা স্বীকারও করেছে গ্রেফতার জঙ্গিরা। হামলার জন্য জঙ্গিদের অপারেশনাল টিমও নির্ধারণ হয়ে গিয়েছিল। হামলার সব সরঞ্জামও তারা সংগ্রহ করেছিল। এগুলো উদ্ধারে অভিযানে নেমেছে পুলিশ।
এদিকে, মঙ্গলবার রাতে সায়েমকে নিয়ে নগরীর টিলাগড়ের বাসার ফ্লাটে অভিযান চালায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। এসময় বাসার মালিক শাহ মো. শামদ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।
পরে সাংবাদিকদের শাহ মো. শামদ আলী জানান, ‘দুই মাস আগে নাইম ও সায়েম তার কাছে এসে বাসা ভাড়া নেওয়ার ব্যাপারে আলাপ করে। ওই সময় তারা এক মাসের ভাড়া অগ্রিম দিয়ে দেয়।
তারা সেখানে একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেন্টার করতে চান বলে জানিয়েছিলেন। এজন্য চুক্তিনামা তৈরি করে পরে আসার কথা জানালেও তারা যোগাযোগ করেনি। তবে গত মাসের ২ তারিখে আরো এক মাসের ভাড়া পরিশোধ করে যায় বলে জানান তিনি।
কে এই নাইমুজ্জামান
পুলিশের ভাষায় নাইমুজ্জামান নব্য জেএমবির সিলেটের আঞ্চলিক প্রধান। জামায়াত পরিচালিত নগরীর শাহজালাল জামেয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়াশোনা করে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। স্কুলে পড়ার সময় তিনি শিবির পরিচালিত ফুলকুঁড়ির বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে অংশ নিতেন। তার মা এই স্কুলটির শিক্ষিকা। তার বোনও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ছাত্রী সংস্থার কর্মী।
তার সহপাঠীরা জানান, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি নিয়মিত ছিলেন। এরপরই হঠাৎ অনিয়মিত হয়ে পড়েন। সহপাঠীদের তথ্যানুযায়ী তার ফেসবুকের একটি আইডি পাওয়া গেছে। কিন্তু সেখানে নাইমুজ্জামানের পরিবর্তে নাম ব্যবহার করেছেন সুলতান বিন আরিফ (সুলতান শেখ)। কিন্তু সেই আইডিতে তার ছবির বদলে ভারি ভারি অস্ত্রের ছবি ব্যবহার হয়। মঙ্গলবার বিকালে নাইমুজ্জামানদের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা আমিরুজ্জামানের সঙ্গে কথা হয়। আমিরুজ্জামান জানান, তার ছেলে এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কি না, তার জানা নেই। তবে মাঝেমধ্যে বাসায় তার নামাজের সাথীদের নিয়ে আসত।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এমএস
Post Written by :
Original Post URL : https://ift.tt/3fWOssx
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD