চলে গেলেন দেশের প্রথম নারী আলোকচিত্রী সাইদা খানম
জাতীয়
নিজস্ব প্রতিবেদকচেলে গেলেন দেশের প্রথম নারী আলোকচিত্রী সাইদা খানম। সোমবার (১৭ আগস্ট) দিবাগত রাত পৌনে তিনটার দিকে রাজধানীর বনানীতে নিজ বাসায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নইলাহি রাজিউন)।
তার স্বজন নিশাত জাহান রানা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। সোমবার রাতে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
সাইদা খানমের বাবার বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙায় হলেও তার জন্ম পাবনায়, ২৯ ডিসেম্বর ১৯৩৭ সালে। স্থিরচিত্রী হিসেবে শুরু করেন কাজ। সেই সময় পূর্ব বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশ) তিনিই ছিলেন একমাত্র ও প্রথম নারী আলোকচিত্রী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য ও লাইব্রেরি সায়েন্সে মাস্টার্স করেন। বাবা আবদুস সামাদ খান, মা নাছিমা খাতুন।
১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সেমিনার লাইব্রেরিতে লাইব্রেরিয়ান হিসেবে কাজ করেছেন। প্রেস আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। দুটো জাপানি পত্রিকাসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তার তোলা আলোকচিত্র মুদ্রিত হয়েছে।
১৯৫৬ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশ নেন সাইদা খানম। ওই বছরই জার্মানিতে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড কোলন পুরস্কার পান তিনি। এর পরই বাংলাদেশে আলোচনায় আসেন। এরপর ভারত, জাপান, ফ্রান্স, সুইডেন, পাকিস্তান, সাইপ্রাস ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয়। জাপানে ইউনেসকো অ্যাওয়ার্ড, অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার, বেগম পত্রিকার ৫০ বছর পূর্তি পুরস্কার, বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সম্মানসূচক ফেলোসহ বিভিন্ন পুরস্কার ও স্বীকৃতি পান তিনি।
১৯৬২ সালে ‘চিত্রালী’ পত্রিকার হয়ে একটি অ্যাসাইনমেন্টে গিয়ে বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার ও অস্কারজয়ী সত্যজিৎ রায়ের ছবি তুলে সমাদৃত হন সাইদা খানম। পরে সত্যজিতের তিনটি ছবিতে আলোকচিত্রী হিসেবেও কাজ করেন তিনি।
বাংলা একাডেমি ও ইউএনবির আজীবন সদস্য সাইদা খানম ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে ঢাকার আজিমপুর এলাকায় অস্ত্র হাতে প্রশিক্ষণরত নারীদের ছবি তোলেন। ১৬ ডিসেম্বরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের (পরে শেরাটন ও রূপসী বাংলা) সামনে পাকিস্তানি সেনারা গোলাগুলি শুরু করে। খবর পেয়ে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে সেখানকার ছবি তুলতে যান তিনি। প্রচণ্ড গোলাগুলির কারণে সেদিন অবশ্য ছবি তুলতে পারেননি। সেদিন একজন নারী আলোকচিত্রী হিসেবে তার সাহস দেখে সবাই বিস্মিত হন।
শেষ বয়সেও যেখানে যেতেন সঙ্গে নিয়ে যেতেন ক্যামেরা। বিয়ে না করা দেশের প্রথম এই আলোকচিত্রী থাকতেন বনানীতে। সেখানেই গতরাতে না ফেরার দেশে চলে যান তিনি।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম
Post Written by :
Original Post URL : https://ift.tt/3iPHE1r
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD