মেয়ে প্রেমিকের সাথে চলে যাওয়ায় অপহরণের মামলা
ইউপি চেয়ারম্যান জামেদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর ছেলে ও মেয়ের পরিবার আমার কাছে এসেছিল। মেয়ের অভিভাবকরা জানান মেয়েকে ফেরত দিলে আমরা মামলা করব না। কিন্তু পরে শুনি মেয়ের পরিবার মামলা করেছেন।
পঞ্চগড় প্রতিনিধিপঞ্চগড়ে মিথ্যা অপহরণ মামলায় প্রতিবেশীকে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে হবিবর রহমান নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার পামুলি ইউনিয়নের মোসলেম পাইকান পাড়ায় এই ঘটনা ঘটেছে।
গত রোববার (৯ আগস্ট) হবিবর রহমান দেবীগঞ্জ থানায় তার মেয়ে শারমিন আক্তারকে অপহরণের দায়ে পার্শ্ববর্তী দন্ডপাল ইউনিয়নের উত্তর এনায়েতপুর, সর্দারপাড়া ও লক্ষ্মীনারায়নী এলাকার ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী দন্ডপাল ইউনিয়নের উত্তর এনায়েতপুর এলাকার আজমগীর হোসেনের ছেলে লায়ন ওরফে নয়ন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, হবিবরের মেয়ে শারমিন আক্তারকে মামলার ১নং আসামী নয়ন অনেকদিন থেকে উত্যক্ত করে আসছিল। বিষয়টি নয়নের পরিবারকে জানালে তারা কোন ব্যবস্থা নেননি। ৪ আগস্ট (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় শারমিন তার বড় চাচার বাসায় যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হলে পথে নথিতে উল্লেখিত ৬ জন আসামি জোর করে মেয়েটিকে ব্যাটারি চালিত থ্রি হুইলারে উঠিয়ে নেয়। এরপর থেকে নয়ন ও শারমিনের আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
তবে সরেজমিনে গিয়ে অনুসন্ধানে ভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে। একই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অন্তত ৮ জন পূর্বপশ্চিমকে জানিয়েছেন মামলার বিষয়টি ভিত্তিহীন।
ছেলের প্রতিবেশী মোসলেম পাইকান এলাকার ষাটোর্ধ বৃদ্ধা লতিফা ও ছখিনা পূর্বপশ্চিমকে বলেন, শারমিনের প্রায় আড়াই মাস আগে বিয়ে হয়েছে ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার শিবগঞ্জ পারপুগিপাড়া এলাকায়। কিন্তু মেয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় এখন তার পরিবার বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করছেন। নয়নের সাথে তার প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি আমরা পরে জানতে পারি। শারমিন যদি নয়নের সাথে চলেও যায় তাহলে সে তার নিজ ইচ্ছায় গেছে। এখানে অপহরণের ঘটনা ঘটেনি।
একই কথা বলেন শারমিনের আরেক প্রতিবেশী ধান ব্যবসায়ী আবু বক্কর। তিনি পূর্বপশ্চিমকে বলেন, প্রায় দুই মাস আগে হবিবর তার মেয়ের জামাইকে ফ্রিজ ও মোটরসাইকেল দেয়ার জন্য আমার কাছে ধান বিক্রি করেছিলেন। আর আজ সব অস্বীকার করছেন। নয়ন-শারমিনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক থেকে থাকলে সেটা তাদের নিজস্ব বিষয়। কিন্তু অপহরণের মিথ্যা মামলা দিয়ে তার বাবা, চাচাসহ আরো তিন প্রতিবেশীকে হয়রানি করা হচ্ছে।
ছেলের বড় বোন মনি বলেন, নয়ন আর শারমিনের মধ্যে আগে থেকে প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি আমরা বুঝতে পারিনি। মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) ঘটনার দিন বাবা আমার স্বামী রশিদুলকে মুঠোফোনে কল করে বলেন শারমিন বাসায় নেই, নয়নের সাথে বাসা থেকে চলে গেছে। তখন আমার স্বামীসহ বিষয়টি খোঁজ নিতে বাবার বাসায় আসি। বাসায় আসার পর আমার ভাইয়ের সাথে দেখা হয়নি। আমাদের কাউকে কিছু না বলেই সে বাড়ি থেকে চলে গেছে। পরে জানতে পারি আমাদের হয়রানির জন্য অপহরণের মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে মেয়ের বাবা। যেখানে আমার স্বামীকেও আসামি করা হয়েছে। অথচ আমার শ্বশুরবাড়ি বোদা উপজেলাধীন সর্দারপাড়া। বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) আদালতে জামিন আবেদন করলে আমার বাবা ও স্বামীকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। এখন শ্বশুরবাড়িতে সারা জীবনের জন্য ছোট হয়ে থাকব আমি।
পামুলি ইউপি চেয়ারম্যান ফজলে হায়দার বলেন, বাদী হবিবর রহমান বা তার পরিবারের তরফ থেকে আমার সাথে এই বিষয়ে কোন কথা হয়নি। ঘটনার দিন গ্রাম পুলিশ হামিদুর আমাকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানিয়েছিলেন।
দন্ডপাল ইউপি চেয়ারম্যান জামেদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর ছেলে ও মেয়ের পরিবার আমার কাছে এসেছিল। মেয়ের অভিভাবকরা জানান মেয়েকে ফেরত দিলে আমরা মামলা করব না। কিন্তু পরে শুনি মেয়ের পরিবার মামলা করেছেন।
মেয়ের বড় ভাই রুবেল, ছোট ভাই আপেল ও ফুপাতো ভাই শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে। আমাদের বোনের পূর্বে কোন বিয়ে হয়নি। অপহরণের ঘটনাটি সত্য। মেয়েকে ফিরিয়ে দিবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু পরে উপায়ন্তর না পেয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু পুরো এলাকাবাসী মেয়ের পূর্বে বিয়ে হয়েছে এবং কেন ছেলের পরিবারের হয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন- এমন প্রশ্নে মেয়ের ফুপাতো ভাই শরিফুল ইসলাম রেগে গিয়ে নিজেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ইউনিয়ন শাখার সভাপতি পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকদের দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে বলেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দেবীগঞ্জ থানার এসআই আব্দুর রাজ্জক পূর্বপশ্চিমকে বলেন, প্রাথমিকভাবে অপহরণের বিষয়টি সত্য বলে মনে হয়েছে। তবে মামলাটি এখনো তদন্তাধীন। তাই তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম
Post Written by :
Original Post URL : https://ift.tt/2E1ACrw
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD