নারী ইউএনওকে হত্যাচেষ্টার মামলায় যুবলীগ নেতাসহ দুইজন কারাগারে
বরগুনা প্রতিনিধিবরগুনার আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীন রোববার (৯ আগস্ট) বিকালে আমতলী থানায় একজন আইনজীবী ও তার সহকারীর বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা ও হত্যা চেষ্টার মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেপ্তার অ্যাডভোকেট আরিফ উল হাসান (৩৩) আমতলী পৌর যুবলীগের সভাপতি। তিনি বরগুনা জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য।
গ্রেপ্তার আরেকজন রায়হান (২২) অ্যাডভোকেট আরিফ উল হাসানের সহকারী। এছাড়াও এ মামলায় সুন্দরবন-৭ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. মইনুলসহ (৪২) অজ্ঞাত আরো ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আমতলী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সৈয়দ রবিউল ইসলাম জানান, রোববার বিকেল ৫টার দিকে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে এবং এরপরই গ্রেপ্তারকৃত দুজনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে এ মামলাকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক ও রাজনৈতিক প্রভাবিত’ মামলা বলে উল্লেখ করে অ্যাড. আরিফ উল হাসানের মুক্তির দাবিতে মিছিল করেছে স্থানীয়-ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের একটি অংশ। এছাড়াও জেলা যুবলীগসহ ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ সংগঠনের ব্যানারে আরিফুল হাসানের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিভিন্ন পেশাজীবী নেতৃবৃন্দও।
এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আ্যাড. মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, ‘অ্যাড. আরিফুল হাসান সম্পূর্ণ নির্দোষ। স্থানীয় রাজনীতির একটি পক্ষের চক্রান্তের শিকার সে। ওইদিনের ঘটনার যে ভিডিও চিত্র আমরা দেখেছি তাতে অ্যাড. আরিফের কোনো ত্রুটি আমরা দেখিনি। বরং ইউএনও মনিরা পারভীন তাকে অশালীন গালিগালাজসহ মারমুখী অবস্থায় ছিলেন। এটি ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া আর কিছুই নয়।’
এ বিষয়ে অ্যাড. আরিফ উল হাসানের বাবা আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার অ্যাড, এমএ কাদের মিয়া জানান, তার ছেলে নির্দোষ। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যে মামলা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, তার ছেলে অ্যাড. আরিফ উল হাসান তার এক বন্ধুকে শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে আমতলী লঞ্চে এগিয়ে দিতে গেলে ইউএনওর সঙ্গে দেখা হয়। এসময় সে ইউএনওকে ছালাম দেয়। ইউএনও ছালাম না নিয়ে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করো?’ এক পর্যায়ে আরিফ উল হাসানকে অশালীন গালিগালাজ করেন ইউএনও মনিরা পারভীন। এ নিয়ে বাকবিতন্ডা হলে ইউএনও তাকে পুলিশে সোপর্দ করেন।
অ্যাড. এম এ কাদের মিয়া আরো বলেন, ‘আমরা ন্যায় বিচারের জন্য যাদের কাছে যাবো তারাই যদি এমন প্রভাবিত হয়ে মিথ্যে মামলা করেন তখন আমাদের আর যাওয়ার কোনো জায়গা থাকে না।’
অপরদিকে আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীন জানান, শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে সাধারণ যাত্রীদের মাঝে মাস্ক বিতরণের পাশাপাশি লঞ্চে যাতে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন না হয় সে বিষয়ে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে আমতলী লঞ্চঘাটে যান ইউএনও মনিরা পারভীন। এসময় তিনি আমতলী থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন-৭ লঞ্চে ধারণ ক্ষমতার চারগুণ বেশি যাত্রী বোঝাই দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি আর কোনো যাত্রী লঞ্চে না উঠিয়ে লঞ্চ ছেড়ে দেওয়ার জন্য লঞ্চের সুপারভাইজার মো. মইনুলকে নির্দেশ দেন।
সুপারভাইজার মইনুল তার নির্দেশ অমান্য করে লঞ্চে যাত্রী ওঠাতে থাকেন এবং কেবিনের যাত্রী রয়ে গেছে বলে অপেক্ষা করতে থাকেন। এসময় ইউএনও মনিরা পারভীন পুনরায় সুপারভাইজার মো. মইনুলকে লঞ্চ ছাড়ার কথা বললে ইউএনও মনিরা পারভিনের সঙ্গে তিনি অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং তার নির্দেশ অমান্য করেন। পরবর্তীতে তার সঙ্গে যোগ দিয়ে আমতলীর আইনজীবী ও জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য অ্যাড. আরিফ উল হাসান এবং তাঁর সহকারী মো. রায়হান তার পাশে থাকা একটি টেবিল ভেঙ্গে ফেলেন এবং ইউএনও মনিরা পারভিনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এতে তিনি পায়ে এবং কোমরে আঘাতপ্রাপ্ত হন। এসময় আমতলী থানা পুলিশকে খবর দিলে আমতলী থানার পুলিশ ওই সময়েই আইনজীবী আরিফ উল হাসান এবং তাঁর সহকারী মো. রায়হানকে আটক করে থানায় নিয়ে যান।
এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি দুটি মিছিল করেছে আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ। বিকেল ৫টার দিকে আইনজীবী আরিফ উল হাসানের মুক্তির দাবিতে শহরের সাকিব প্লাজার সামনে মিছিল করে আমতলী উপজেলা ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের একটি অংশ। এসময় বক্তব্য রাখেন আমতলী পৌর আওয়ামী লীগের সাদারণ সম্পাদক ও প্যানেল মেয়র জিএম মুছা, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন খান এবং উপজেলা যুবলগের সভাপতি জিএম উসমানী হাসান।
অন্যদিকে ওই দিন সন্ধ্যার পরে ইউএনওর ওপরে হামলার প্রতিবাদে পাল্টা মিছিল বের করে আমতলী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. মজিবর রহমান, আমতলী সদর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোতাহার উদ্দিন মৃধা, চাওড়া ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান বাদল খান, হলদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম মৃধা, কুকুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন মাসুম তালুকদার এবং আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশ।
এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ পূর্বপশ্চিমকে বলেন, ‘আমি জেনেছি আমতলীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়েছে এবং তাকে আহত করা হয়েছে। এ ঘটনায় আমতলীর ইউএনও মনিরা পারভীন ব্যক্তিগতভাবে আমতলী থানায় মামলা দায়ের করেছেন।’
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএস
Post Written by :
Original Post URL : https://ift.tt/3kssIIg
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD