করোনায় দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা
অনেক শিক্ষক বিপদে পড়ে পেশা পরিবর্তন করেছেন। কেউ বিক্রি করছেন রাস্তার কাছে ফলমূল। সংসার চালাতে আবার কেউ বাধ্য হয়ে দিনমজুরি করছেন।
নিজস্ব প্রতিবেদককরোনাভাইরাস মহামারীর কারণে টানা সাড়ে পাঁচ মাস দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলছে ছুটি। এমতাবস্থায় দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন বেসরকারি স্কুল-কলেজের নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকা অবস্থায় প্রাইভেট-টিউশনি করে সংসার চালিয়ে নিতেন এ শিক্ষকরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সে পথও বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক শিক্ষক বিপদে পড়ে পেশা পরিবর্তন করেছেন। কেউ বিক্রি করছেন রাস্তার কাছে ফলমূল। সংসার চালাতে আবার কেউ বাধ্য হয়ে দিনমজুরি করছেন।
কিন্ডারগার্টেন স্কুল থেকে উচ্চশিক্ষার স্তরে অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের অনেক শিক্ষকও এমপিওভুক্তি না হওয়ায় অত্যন্ত সংকটে জীবন পার করছেন। সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন নারী শিক্ষক-কর্মচারীরা। না খেয়ে থাকলেও কাউকে বলতে পারছেন না।
এদিকে, সরকার ৮০ হাজারের বেশি নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে প্রণোদনা বিতরণ করেছে। তবে নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের বৃহৎ অংশ এই তালিকার বাইরেই রয়ে গেছেন।
তথ্যমতে, সারা দেশে তিন শতাধিক এমপিওভুক্ত ডিগ্রি কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সে প্রায় ৫ হাজার নন এমপিও শিক্ষক রয়েছেন। দীর্ঘ ২৮ বছরেও জনবল কাঠামো না থাকায় এসব কোর্সের শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিও সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা সরকার এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও কোনো আর্থিক সুবিধা পান না।
বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফোরামের আহ্বায়ক নেকবর হোসাইন বলেন, বিধিমোতাবেক নিয়োগ দিয়েও আমাদের এমপিওভুক্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। একই সঙ্গে অন্য ডিগ্রি কলেজে যোগদান করে পরে প্রতিষ্ঠান সরকারি হওয়ায় কোনো কোনো শিক্ষক ক্যাডার মর্যাদা পেয়েছেন। অন্যদিকে আমরা জনবল কাঠামোতেই আসতে পারিনি। তাই এমপিওভুক্তও হতে পারিনি আমরা।
‘জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮’ সংশোধন করে এমপিও ভুক্তির উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. মামুনুর রশিদ খোকন বলেন, এই শিক্ষকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মহাবিপদে পড়েছেন। এ শিক্ষকদের অনেককে অনাহার-অর্ধাহারে ঘরে থাকতে হচ্ছে। করোনার এ সময়ে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বাঁচতে অনেকে দিনমজুরি করছেন।
তিনি বলেন, ৪ হাজার ১৫৯ প্রাথমিক বিদ্যালয় এখনো জাতীয়করণের বাইরে রয়েছে। করোনার এ সময়ে এসব স্কুলের ১৬ হাজারের বেশি শিক্ষক কোনো প্রণোদনা পায়নি।
তিনি সরকারের কাছে প্রণোদনা ও স্কুল দ্রুত জাতীয়করণের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান।
গত এপ্রিলে ২ হাজার ৫৭০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য সরকার গেজেট প্রকাশ করলেও প্রায় চার হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা এখনো এ তালিকার বাইরে রয়ে গেছেন।
নন এমপিও শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মাহমুদন্নবী ডলার বলেন, বিপুল সংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারী বর্তমানে করোনাকালে অত্যন্ত অমানবিক জীবন-যাপন করছেন।
তিনি সরকারের কাছে এমপিওভুক্তির উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান।
দেশের স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরাও সংকটে রয়েছেন এই করোনার সময়ে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগ শিক্ষক কোনো বেতন পান না। অল্প কিছু শিক্ষক নামকাওয়াস্তে কিছু টাকা পান সরকারের কাছে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রাইভেট টিউটররাও। চরম অর্থকষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের।
এদিকে বেশিরভাগ কিন্ডারগার্টেন স্কুল ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত হওয়ায় করোনাকালে ভাড়া দিতে না পারায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে রাজধানীর জুরাইন আলমবাগের স্কলার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, নলেজ হেভেন আইডিয়াল স্কুল, জুরাইন পাইলট স্কুল, নূরে মদিনা কিন্ডারগার্টেন, ব্রাইট কেজি স্কুল, এন পি মিনি ইংলিশ স্কুল, জুরাইন আইডিয়াল কিন্ডারগার্টেন অন্যতম।
প্রসঙ্গত, করোনা মহামারিতে গত ১৭ মার্চ থেকে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত টানা সাড়ে পাঁচ মাস দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলছে ছুটি। জানা গেছে, আগামী সেপ্টেম্বরে খুলতে পারে- সেটা ধরে নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।
পূর্বপশ্চিমবিডি/জেডআই
Post Written by :
Original Post URL : https://ift.tt/3kEVd5R
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD