আছে জন্মদিন, নেই শুধু সেই আনন্দ
মো. আশিকুর রহমান'হ্যাপি বার্থডে টু ইউ' এই বাক্যটি বলতে পারে না এমন মানুষের সংখ্যা পৃথিবীতে খুবই নগন্য। মানুষের বিবেক বুদ্ধি হওয়ার পূর্বেই উপরিউক্ত বাক্যটি দিয়েই প্রথম শুভেচ্ছা জানায় মানুষ। আই লাভ ইউ! আই মিস ইউ! এই শব্দগুলো দিয়ে উইশ করতে মানুষের অনেক চিন্তা ভাবনা করতে হয় কিন্তু 'হ্যাপি বার্থডে টু ইউ' বলতে মানুষের এতোটা ভাবতে হয় না, কারণ এটি এমন একটি উইশ, যা অবুঝ শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সীকেও নিদ্বিধায় করা যায়। বাক্যটি ছোট থেকেই যেমন সবার প্রিয় তেমনি তার সাথে মিশে থাকে হাজারো স্মৃতি। গল্প, আড্ডা, গান, নাচ সবই যেনো বাক্যটির বাহ্যিক রূপ। একজন মা যখন একটি সন্তানের প্রথম জন্মদিন পালন করেন তখন তিনি সেই দিনটিতেই স্বর্গের সুখ অনুভব করেন। এরপর প্রতি বছরই দিনটিকে নিয়ে তার পরিবারের থাকে বিভিন্ন পরিকল্পনা। সন্তানটি যখন বড় হয়ে স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তখন সেই আনন্দ যেন শতগুণে বেড়ে যায়। চারিদিকে বন্ধু বান্ধবীদের আনন্দ উল্লাস আর দুষ্টুমিতে বছরে একাধিকবার জন্মদিন পালনের ইচ্ছে জাগে! এমনই আনন্দের জোয়ার বয়ে যেত সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) শিক্ষার্থীদের জন্মদিনে।
বাদামতলা, ক্লাসরুমসহ ক্যম্পাসের বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই জন্মদিন পালনে মেতে উঠতো শিক্ষার্থীরা। অনেকেই ট্রিট দিতে ক্যানটিন কাপাতেও ভুল করতো না। কিন্তু সম্প্রতি করোনাভাইরাস সবকিছু থমকে দিয়েছে! করোনার ভয়াল থাবা থেকে বাঁচতে আজ নিস্তব্ধ গবি ক্যাম্পাস। তবু দিন কেটে যাচ্ছে। প্রতি বছরের মতো হাজারো শিক্ষার্থীদের আছে জন্মদিন, নেই শুধু চিরচেনা ক্যাম্পাসের সেই আনন্দ উল্লাস! এ বিষয়ে আরও জানার চেষ্টা করেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. আশিকুর রহমান।
প্রিয় ক্যাম্পাস ছেড়ে কেমন কেটেছে এবার করোনাময় জন্মদিন? বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তৃষা মন্ডল নিপা বলেন, জন্মদিনের আনন্দ যেন একধাপ বাড়িয়ে দেয় বন্ধুদের উপস্থিতি। করোনার কারণে যদিও ক্যাম্পাসে জন্মদিন পালন হয়নি এই বছর তথাপি আপুর হাতের বানানো কেক আর ফ্যামিলির সাথে উৎযাপন করা জন্মদিন মন্দ ছিল না। বেশ উপভোগ করেছি এপ্রিল ১৮’র প্রিয় সেই দিনটি, কিন্তু ক্যাম্পাস ও বন্ধুদের জন্য একটি শূন্যতা কাজ করেছে সব সময়।
জন্মদিন নিয়ে কথা হয় প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সজিব মোড়লের সাথে। তিনি জানান, যদিও আমি কখনো জন্মদিন পালন করিনি, অর্থাৎ কেক কাটিনি কিন্তু এই বছরের জন্মদিন নিয়ে মনের মধ্যে ছিল বিভিন্ন পরিকল্পনা। গত প্রায় এক বছর থেকে আমাদের ব্যাচের সব বন্ধুদের জন্মদিন পালন করা হচ্ছে খুব ধুম ধাম করে, যেখানে আমাদের ডিপার্টমেন্টের প্রধানসহ সকল শিক্ষকগণ ও ছোট ভাই বোনেরাও উপস্থিত থাকতো। যা দেখে আমার মনেও জন্মদিনটা সবাইকে নিয়ে একটু অন্য রকম করে পালন করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এর মধ্যেই করোনা চলে আসলো। এবার আর আশা পূরণ হলো না! শিক্ষকগণ আর ছোট ভাই বোন, বন্ধুদের নিয়ে জন্মদিন পালনও হলো না।
করোনার কারণে আনন্দ উল্লাসহীন জন্মদিন পালন করেছেন এমন শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অনেক।
এমনই আরেকজন ফিজিওথেরাপি বিভাগ থেকে সদ্য পাসকৃত ইন্টার্নশিপে থাকা ডা. সুরঞ্জন বৈদ্য (পি.টি)। তিনি বলেন, পরিবার ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর সম্মানিত শিক্ষকমন্ডলী, সহপাঠী, সিনিয়র, জুনিয়র সবাইকে নিয়ে তৈরি হয় নতুন পরিবার। ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বেশি মিস করি আমার জন্মদিন উৎযাপন। রাত ১২টা বাজার সাথে সাথে বন্ধুদের কেক নিয়ে সারপ্রাইজ দেওয়া, তারপর ক্লাসে সহপাঠী ও শিক্ষকমন্ডলীর সাথে জন্মদিন উদযাপন এবং রাতে সিনিয়র, জুনিয়র সবাইকে নিয়ে বিরিয়ানি রান্না করে খাওয়া। কিন্তু এবার করোনার কারণে সবই রয়ে গেছে মিস করার খাতায়।
ভিন্নধর্মী এমন জন্মদিনের আগমণ মানতে পারছেন না কোনো শিক্ষার্থী। তবু বিধাতার নিয়ম মানতে বাধ্য। তবে সবার বিশ্বাস, খুব দ্রুতই এই মহামারি বিদায় নেবে। জন্ম নিবে নতুন এক পৃথিবী।
মো. আশিকুর রহমান,
বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম
Post Written by :
Original Post URL : https://ift.tt/2PO8R8m
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD