ভ্যাকসিন পাওয়ার দৌঁড়ে বাংলাদেশ কতদূর?
পূর্বপশ্চিম ডেস্কএকটি ভ্যাকসিনই আপাতত করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ভরসা বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। পৃথিবীতে স্প্যানিশ ফ্লু, কলেরা, গুটি বসন্ত, সোয়াইন ফ্লু, ইবোলা এরকম আর কোনও মহামারির সময় একটি প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য মানুষ এতটা সংগ্রাম করেনি।
যেসব দেশের গবেষণা করে একটি ভ্যাকসিন আবিষ্কারের সক্ষমতা নেই- এটি পাওয়ার জন্য তাদের লড়তে হবে বিশ্বের উন্নত ও ধনী দেশগুলোর সাথে।
আবিষ্কার হওয়া মাত্রই কিভাবে এই ভ্যাকসিন দ্রুততার সাথে পাওয়া যাবে সে নিয়ে বাংলাদেশও কাজ করছে।
ভ্যাকসিন পাওয়ার দৌঁড়ে বাংলাদেশ কতদূর?
ভ্যাকসিন খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সাথে সরকারের স্বাস্থ্য বিষয়ক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সোমবার একটি বৈঠক হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো: আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ক্ষেত্রে যারা একটু এগিয়ে আছে- যেমন যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না, গ্যাভি দ্যা ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স, চীন - পৃথিবীর যে দেশই ভ্যাকসিন ট্রায়ালে এগিয়ে আছে তাদের সাথে কিভাবে একটু যোগাযোগ রক্ষা করা যায় সেই ব্যাপারে চেষ্টা চলছে। এটা নিয়েই আমরা আজ কথা বলেছি।
তিনি জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআর,বি এই যোগাযোগ তৈরি করার ব্যাপারে সাহায্য করবে।
প্রতিষ্ঠানটির আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে যোগাযোগ রয়েছে সেটি কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে বাংলাদেশ।
মান্নান বলছেন, তাদের বহু স্পেশালিষ্ট রয়েছে যারা সরাসরি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে কাজ করছেন। তাদেরকে যোগাযোগ তৈরি করার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করা। তারাও চেষ্টা করবে বলেছে।
তিনি দাবি করছেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সবচেয়ে সফল ভ্যাকসিনটি কিভাবে দ্রুততার সাথে পাওয়া সম্ভব সে ব্যাপারে বাংলাদেশ সঠিক পথেই এগিয়ে রয়েছে।
ভ্যাকসিন আনতে দরকারে অর্থ খরচ
পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এরকম ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ভ্যাকসিন দ্রুত পাওয়ার জন্যে বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই ইউরোপে অর্থ বিনিয়োগ করেছে। ভ্যাকসিনের ব্যাপারে কয়েকটি দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ বজায় রাখছে পররাষ্ট মন্ত্রনালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
তবে মো: আব্দুল মান্নান বলছেন, করোনাভাইরাসের যে ভ্যাকসিনটির সফল পরীক্ষা হবে, সেটি পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ‘দরকারে’ অর্থ খরচ করবে।
তিনি বলছেন, অর্থ দিয়ে কিনতে হলে অর্থের উৎস কি হবে সেটি এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। তবে এর আগে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বেশকটি সাহায্য সংস্থার সাথেও কথা বলেছে।
ভ্যাকসিন বণ্টনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
যেসব দেশের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের সক্ষমতা নেই অথবা ক্রয় ক্ষমতাও যাদের সীমিত তাদের ক্ষেত্রে যাতে বৈষম্য তৈরি না হয়, ভ্যাকসিন শুধু অর্থ ক্ষমতার বিষয় হয়ে না দাঁড়ায় - সেজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৯০টি দেশের একটি তালিকা তৈরি করেছে।
যারা বিনামূল্যে ভ্যাকসিন পাবে - বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই তালিকায় বাংলাদেশের নামও রয়েছে। এক্ষেত্রে কোনও দেশের মাথাপিছু আয় কত সেটি বিবেচনা করা হয়েছে এবং এই ভ্যাকসিন দেয়া হবে একটি দেশের চাহিদা অনুযায়ী।
ক্লিনিকাল ট্রায়ালে অংশগ্রহণ
ব্রাজিল ও ভারতসহ বিশ্বের অনেকগুলো দেশ ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী দেশের হয়ে মানবদেহে এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালানোর জন্য ক্লিনিকাল ট্রায়ালে অংশ নিচ্ছে।
আর এজন্য তারা ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশও চীনের সাথে এরকম একটি ক্লিনিকাল ট্রায়ালে যুক্ত হচ্ছে এমনটা শোনা গেলেও সেটির ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। যা বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন পাওয়ার দৌড়ে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে দিতে পারতো।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ হেলথ সায়েন্সেস-এর এপিডোমলজি বিভাগের প্রধান ডা. প্রদীপ কুমার সেন গুপ্ত বলছেন, আমরা ভ্যাকসিন কিছু সংখ্যায় পাবো। তবে হ্যাঁ, ট্রায়ালে অংশগ্রহণ করলে আমাদের অবস্থানটা আর একটু ভাল যায়গায় থাকতো।
তার ভাষায়, ভ্যাকসিন আসার আগে আজ হোক বা কাল হোক বাংলাদেশকে ক্লিনিকাল ট্রায়ালে যোগ দিতে হবে। ভ্যাকসিন বাজারে আসার আগে অনেকগুলো ধাপ পার হতে হয়। জাতিগত বৈচিত্র্য অনুযায়ীও এর পরীক্ষা দরকার হয়। কারণ একএক জাতির মানুষের জীন ভিন্ন, তাদের উপর ভাইরাস ও ঔষধের প্রভাবও ভিন্ন হয়। তাই বাংলাদেশেও ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হতে হবে।
বাংলাদেশে যারা এটি আগে পাবেন
ভ্যাকসিন আবিষ্কার হওয়ার পর বাংলাদেশ সেটি আনতে সমর্থ হলেও দেশের ভেতরেও অগ্রাধিকার দেয়া হবে ঝুঁকিতে থাকা মানুষজনকে। এর মধ্যে রয়েছেন, যারা সরাসরি কোভিড-১৯ মহামারি প্রতিরোধে চিকিৎসা সেবার সাথে জড়িত, যাদের বয়স ষাটোর্ধ্ব, যাদের নানা ধরনের জটিল শারীরিক সমস্যা রয়েছে যেমন কিডনি, হৃদযন্ত্র, ফুসফুসের জটিল রোগে ভুগছেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং গর্ভবতী নারী তারা অগ্রাধিকার পাবেন।
অর্থাৎ যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি - তারা অগ্রাধিকার পাবেন।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের বেশি ঝুঁকিতে থাকা মানুষ মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ।
বাংলাদেশের জন্য করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন কতটা জরুরি
সারা বিশ্বের প্রায় দুইশটির মতো কোম্পানি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান এখন করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারে কাজ করে যাচ্ছে।
যার মধ্যে মানবদেহে ট্রায়ালে এগিয়ে রয়েছে, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড, চীনের সিনোভ্যাক, যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না, অস্ট্রেলিয়ার মারডক চিলড্রেনস রিসার্চ ইন্সটিটিউট। ছয়টি ভ্যাকসিন ক্লিনিকাল ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপে রয়েছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলছেন, বাংলাদেশের জন্য একটি ভ্যাকসিন খুবই দরকার কারণ বাংলাদেশ অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ। এত দীর্ঘদিন ধরে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে সবকিছু বন্ধ রেখে মানুষকে ঘরে রাখা খুবই সমস্যার একটি বিষয়। কারণ জীবন টিকিয়ে রাখতে হলে জীবিকাও লাগবে।
‘পৃথিবীর কোন দেশ থেকে কবে এই ভাইরাস চলে যাবে সেটাতো বলা মুশকিল। সংক্রমণ যদি দীর্ঘ দিনের জন্য থাকে তাহলে ভ্যাকসিন দিয়ে যদি এর সংক্রমণে একটা হস্তক্ষেপ করতে পারা যায় তাহলে কিছু জনগোষ্ঠী অন্তত নিরাপদে থাকতে পারলো।’ খবর: বিবিসি বাংলা।
পূর্বপশ্চিমবিডি/অ-ভি
Post Written by :
Original Post URL : https://ift.tt/33NItUc
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD