সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন নিয়েই এটিই ব্যবহার করে এনজিও’র ভুয়া লাইসেন্স দেখিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবৈধভাবে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে শ্যামলী গ্রাম উন্নয়ন সংস্থা। জেলার নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের পুরোটাই ও কসবা ইউনিয়নের আংশিক এলাকায় ৪ বছর ধরে প্রায় ২ হাজার পরিবারের সাথে প্রতারণা করে আসছে সংস্থাটি। দুই হাজার সদস্য বিশিষ্ট ভুয়া এনজিও নামধারী প্রতিষ্ঠান শ্যামলী গ্রাম উন্নয়ন সংস্থায় সদস্যদের জমাকৃত মূলধনের পরিমাণ কোটি টাকার বেশি। নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ফুরশেদপুর বাজারে এর প্রধান কার্যালয়। সভাপতি মো. হযরত আলী ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মো. আহাদ আলীকে রাখা হয়েছে, যারা দুজনই সংস্থার মালিক। এছাড়াও আরো ৩ কর্মী রয়েছে যারা মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করেন এবং এই ৫ জনের বেতন হিসেবেই খরচ মাসে ৯২ হাজার টাকা। ২০০৯ সালে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর হতে নিবন্ধন প্রাপ্তির পর ২০১৬ সাল হতে এ অবৈধ ঋণ কার্যক্রম শুরু করে শ্যামলী গ্রাম উন্নয়ন সংস্থা।
সংস্থার অন্যতম মালিক ও সাজানো সাধারণ সম্পাদক আহাদ আলী জানান, ফতেপুর ও কসবা ইউনিয়নের ফুরশেদপুর, আলিসাপুর, গজালবাড়ি, বিষ্মপুর, শিংরইল, মির্জাপুর এলাকায় এই অবৈধ ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে শ্যামলী গ্রাম উন্নয়ন সংস্থা। সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন নিয়ে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, না ঋণ কার্যক্রম করা যাবে না। তবে এমআরএ আবেদন ছাড়লেই আবেদন করবো। সমাজসেবা থেকে আমাদের তলব করা হয়েছিল এবং ঋণ কার্যক্রম করা যাবে না বলে জানানো হয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পরেও কেন তা অব্যাহত রেখেছেন? এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। সমাজসেবা অধিদপ্তরের যেহেতু নিবন্ধন রয়েছে, তাই সংস্থার অন্যতম মালিক ও সাজানো সাধারণ সম্পাদক আহাদ আলীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, করোনাকালে তারা কি ধরনের সমাজসেবা করেছন এবং মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন কি না? এই প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারেননি সংস্থার অন্যতম মালিক আহাদ আলী।
এলাকার সচেতন মহল এই সংস্থার এমন অবৈধ ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, সমাজসেবার নিবন্ধন নিয়ে কিভাবে কোটি টাকার কারবার করছে তারা। এমনকি ১৮ শতাংশ হারে লাভ দেয়ার কথা বলে জনগণের আমানত সংগ্রহ করছে ভুয়া এনজিও নামধারী প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও দুই মালিক হযরত আলী অষ্টম শ্রেণী ও আহাদ আলী এইচএসসি পাস। জনসাধারণ না বুঝে তাদের প্রতারণার ফাদে পা দিয়ে অতিরিক্ত লাভের আশায় লক্ষ লক্ষ টাকা জমা রাখছে। যেকোন সময় এসব বিপুল পরিমান অর্থ নিয়ে উধাও হবে শ্যামলী গ্রাম উন্নয়ন সংস্থা, এমনটাই আশঙ্কা করছেন অনেকেই। সংস্থাটির সমাজসেবা অধিদপ্তর ও ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া আর কোন কিছুই নেয়। তারপরেও কিভাবে এসব অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করছে শ্যামলী গ্রাম উন্নয়ন সংস্থা এবং এই সংস্থার অবৈধ কাজের দায়ভার কে নেবে? প্রশ্ন সচেতন মহলের।
এবিষয়ে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর কার্যালয়ের সমাজসেবা কর্মকর্তা (রেজিষ্ট্রেশন) মো. নুরুল ইসলাম বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তর শুধুমাত্র স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার নিবন্ধন দেয়। কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন দেয়া সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাজ নয়। তাই অলাভজনক ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নামে নিবন্ধন নিয়ে কোন সংস্থা যদি ঋণ কার্যক্রন পরিচালনা করে, তাহলে তা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ ও নিয়ম বর্হিভূত। তিনি আরো জানান, জেলায় প্রায় দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠান এমন অনিয়ম করছে বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন নিয়ে অবৈধ ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রায় ৭৫টি সংস্থাকে তলব করা হয়েছে এবং তাদের এসব কার্যক্রমের তথ্য ঢাকায় প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এসব ভুয়া এনজিও’র বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
Post Written by : Admin
Original Post URL : https://ift.tt/2SXtTTr
Post Come trough : নাচোল নিউজ