অপেক্ষার প্রহর গুনছেন ২৩ হাজার শিক্ষক
নিজস্ব প্রতিবেদকদীর্ঘ ২৩ বছর শিক্ষকতার পর গত বছর আগস্টে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান যশোর চৌগাছার আরপিইউ দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আনিসুর রহমান। ডিসেম্বরে পরিবারের পক্ষ থেকে স্ত্রী মোছা. তাসলিমা খাতুন তার স্বামীর কল্যাণ ট্রাস্ট (আবেদন আইডি, এম-৯১৮৪০৩৫৩১) ও অবসর সুবিধার (এম-৩৭৭২১৪৭৯৯) টাকা পেতে আবেদন করেছেন। এ টাকার জন্য তিনি তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করছেন।
শুধু তাসলিমা খাতুন নন, জানা গেছে ২৩ হাজারের বেশি শিক্ষক ও কর্মচারী এবং তাদের পরিবার এই টাকা পেতে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। শেষ বয়সে এসে অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকা যথাসময়ে না পেয়ে শিক্ষকদের অনেকের দিন কাটছে নানা সমস্যায়। অর্থাভাবে কারো কারো মিলছে না চিকিৎসা। দিনের পর দিন এই টাকার জন্য ঘুরছেন রাজধানীর পলাশীতে ব্যানবেইস ভবনে অবস্থিত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডে।
মহামারী করোনাভাইরাসের সময়ও বৃদ্ধ বয়সে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবসরের এই অর্থের খোঁজে ঢাকায় আসছেন তারা।
তথ্য মতে, শিক্ষকদের এমপিওর (মান্থলি পে অর্ডার) ৪ শতাংশ অর্থ কেটে রাখা হয় বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিলে। আর ৬ শতাংশ কেটে রাখা হয় অবসর সুবিধা বোর্ড তহবিলে। এ তহবিলে সরকার একটি অংশ বরাদ্দ দেয়। এই টাকাই অবসরের পর পান শিক্ষক-কর্মচারীরা। এ অর্থের জন্য আবেদন করলেও তাদের অর্থ ছাড় হচ্ছে এক থেকে দুই বছর পর। যথাসময়ে টাকা ছাড় না হওয়ায় শিক্ষকদের অনেকেই মারা যাচ্ছেন অবসর ও কল্যাণ তহবিলের অর্থ হাতে না পেয়েই। সম্প্রতি ব্যানবেইস ভবনে গিয়ে দেখা গেছে শিক্ষক-কর্মচারী ও তাদের স্বজনদের দুর্দশার চিত্র।
জানা গেছে, প্রায় ১৯ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর কল্যাণ সুবিধার আবেদন অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে। আর প্রায় ২৩ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধার অর্থের জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করছেন। কল্যাণ ট্রাস্টে বর্তমানে গত বছর সেপ্টেম্বরে আবেদন নিষ্পন্নের কাজ চলছে। আর অবসর সুবিধা বোর্ডে কাজ চলছে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাসের আবেদন নিয়ে। শিক্ষকদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট যোগ হওয়া, চাহিদামাফিক অবসর সুবিধা বোর্ডে চাঁদার পরিমাণ না বাড়ার কারণে অর্থ সংকটে শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরের টাকা যথাসময়ে দেওয়া যাচ্ছে না বলে জানা গেছে।
অনিষ্পন্ন থাকা আবেদনগুলো নিষ্পন্ন করতে কল্যাণ ট্রাস্টে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ও অবসর সুবিধা বোর্ডে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন।
শিক্ষক-কর্মচারীদের যথাসময়ে কল্যাণ ও অবসর সুবিধার টাকা না পাওয়ার ব্যাপারে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু বলেন, কল্যাণ ট্রাস্টে জনবলের ঘাটতি রয়েছে। অল্পসংখ্যক কর্মকর্তা নিয়ে সেবা দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া সর্বশেষ স্কেলেই শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরের এই টাকা প্রদান করতে হয়। পে-স্কেল কার্যকরের আগে ২০১৫ সালের জুনে অবসরে যাওয়া একজন অধ্যক্ষ কল্যাণ ও অবসর মিলে পেতেন সাড়ে ২২ লাখ টাকার মতো। কিন্তু পে-স্কেল ঘোষণার পর তাকে দ্বিগুণের বেশি টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ ছাড়া ৫ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট যোগ হওয়ায় এ অঙ্ক আরো বেড়েছে।
শিক্ষক-কর্মচারীদের স্বার্থে শিক্ষাবান্ধব এ সরকারকে এই খাতে আরও বরাদ্দ দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন সাজু।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী বলেন, পে-স্কেল ও ইনক্রিমেন্টের কারণে অবসরের পর শিক্ষকদের বেশি টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে তুলনামূলক কম। তাই প্রতি মাসেই প্রায় ২০ কোটি টাকা ঘাটতি থাকছে এ বোর্ডে। শিক্ষাবান্ধব শেখ হাসিনার সরকারকে শিক্ষক-কর্মচারীদের স্বার্থে এ খাতে আরও বরাদ্দ দেওয়ার অনুরোধ জানাই।’ তিনি বলেন, করোনার মধ্যেও কল্যাণ ও অবসর সুবিধা বোর্ডের কর্মকর্তারা শিক্ষক ও কর্মচারীদের সেবা দিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু অর্থ সংকটের কারণেই তাদের টাকা পেতে কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
পূর্বপশ্চিমবিডি/অ-ভি
Post Written by :
Original Post URL : https://ppbd.news/education/175736/অপেক্ষার-প্রহর-গুনছেন-২৩-হাজার-শিক্ষক
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD