৪২ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন আবজাল দম্পতি
নিজস্ব প্রতিবেদকস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেন নিজের ও স্ত্রী রুবিনা খানমের নামে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও মালয়েশিয়ায় পাচার করেছেন প্রায় ৪২ কোটি টাকা। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র এবং রিমান্ডে আবজালের স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
দুদকের রেকর্ডপত্রে আবজালকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিম্ন বেতনের কর্মচারী হিসেবে উল্লেখ করে তাকে অতীব প্রভাবশালী, অর্থলোভী, প্রবঞ্চক এবং অতিশয় ধূর্ত ব্যক্তি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
আবজালের জবানবন্দি থেকে জানা গেছে, অস্ট্রেলিয়ায় তার বাড়ি ও তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
গত ২৬ আগস্ট সকালে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবজাল আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে সাত দিন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের উপ-পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম।
রিমান্ডে দেওয়া আবজালের বক্তব্য ও তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবজাল হোসেন মালয়শিয়ার মাইব্যাংক ইসলামিক বারহাদ নামের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যুগ্ম হিসাবে (হিসাব নম্বর-৫৬২৩০২৬০৯৮০৫) ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ২৮ জুলাই পর্যন্ত ৯ লাখ ২৯ হাজার ৬৭০ মালয়েশিয়ান রিংগিত জমা করেন। তার প্রত্যক্ষ সহায়তায় স্ত্রী রুবিনা খানমের নামে মালয়শিয়ার সিআইএমবি ব্যাংকের চারটি হিসাবে ২০১৩ সালের ২২ মে থেকে ২০১৬ সালের ২৮ জুলাই পর্যন্ত ২২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ রিংগিত বাংলাদেশ থেকে জমা করা হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৪ কোটি ৫১ লাখ টাকার বেশি। রিমান্ডে আবজাল এসব তথ্য স্বীকার করেছেন।
একইভাবে আবজাল হোসেন কানাডার টরেন্টোর স্কার্বরায় দ্য টরেন্টো ডমিনিয়ন ব্যাংকে ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২২ লাখ ২৩ হাজার ৬৫৫.৫০ কানাডিয়ান ডলার বাংলাদেশ থেকে পাচার করেন। পরবর্তীতে তা কানাডা থেকে অস্ট্রেলিয়াতে পাচার করেন। অস্ট্রেলিয়া অ্যান্ড নিউজিল্যান্ড ব্যাংকিং গ্রুপ লিমিটেড নামের হিসাবের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই ওই অর্থের পাশাপাশি আরো ১ লাখ ৬০ হাজার কানাডিয়ান ডলার অস্ট্রেলিয়ায় পাচার করেছেন বলে আবজালের বক্তব্য ও রেকর্ডপত্র থেকে জানা গেছে। অস্ট্রেলিয়ার পাচার করা ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৬৫৫ কানাডিয়ান ডলার দিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় বাড়িসহ অন্যান্য সম্পদ গড়েছে আবজাল দম্পতি। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় আড়াই কোটি টাকা।
অস্ট্রেলিয়া তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ প্রসঙ্গে জানা যায়, আবজাল অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অবস্থিত ওয়েস্টপ্যাক ব্যাংকিং করপোরেশনের দুটি হিসাব, অস্ট্রেলিয়া অ্যান্ড নিউজিল্যান্ড ব্যাংকিং গ্রুপ লিমিটেডের একটি হিসাব এবং কমনওয়েলথ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়ার তিনটি হিসাবে ৫৬ লাখ ৮৮ হাজার ৬৬৭ অস্ট্রেলিয়ান ডলার পাচার করেছেন। এর মাধ্যমে সিডনির তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন তিনি। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—আর-৫ ডেভেলপমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড, আর-৫ ইনভেস্টমেন্ট ফ্যামিলি ট্রাস্ট ও মিমি ট্রাভেল ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড। বাংলাদেশি মুদ্রায় বিনিয়োগের পরিমাণ সাড়ে ৩৪ কোটি টাকার বেশি।
ইতোমধ্যে আবজালের পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে মালয়েশিয়ায় সরকারের কাছে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলআর) পাঠিয়েছে দুদক। কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াতেও এমএলআর পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে দুদকের পরিচালক প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেছেন, আবজাল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ ও অর্থ পাচারের মামলা করেছে দুদক। ওই মামলায় তাকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। পাচার করা অর্থ ফেরত আনাসহ অপরাধীর বিরুদ্ধে সব আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে দুদক।
২০১৯ সালের ২৭ জুন প্রায় ২৮৫ কোটি টাকা পাচার ও হস্তান্তর এবং ৩৪ কোটি টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আবজাল হোসেন ও তার স্ত্রী রুবিনা খানমের বিরুদ্ধে দুদকের উপ-পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে যন্ত্রপাতি ও মালামাল সরবরাহের নামে ২৮৪ কোটি ৫১ লাখ ৯৬ হাজার ৭৫৫ টাকা পাচার ও হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছে।
অপর মামলায় রুবিনা খানমের বিরুদ্ধে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির তথ্য গোপনসহ মোট ৩১ কোটি ৫১ লাখ ২৩ হাজার টাকার সম্পদ এবং আবজালের বিরুদ্ধে মোট ৪ কোটি ৭৯ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। ওই বছরের ২৬ এপ্রিল কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজে অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনে সরকারের সাড়ে ৩৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ওই দম্পতিসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এরই মধ্যে তাদের ২৫টি বাড়ি-প্লট ও জমি আদালতের আদেশে ক্রোক করেছে সংস্থাটি।
রুবিনা খানম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখার স্টেনোগ্রাফার ছিলেন। পরে তিনি রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে ব্যবসা করেন। স্বামী-স্ত্রী মিলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একচেটিয়া ব্যবসা করার জন্য তারা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম
Post Written by :
Original Post URL : https://ppbd.news/court/175856/৪২-কোটি-টাকা-বিদেশে-পাচার-করেছেন-আবজাল-দম্পতি
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD