তুলির আঁচড়ে সাজছে দেবী দুর্গা
অভি মণ্ডলতুলির আঁচড়ে সাজছে দেবী দুর্গা, এরই মাঝে বেশিরভাগ প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ। এখন দিনরাত রং তুলির কাজ করছেন শিল্পীরা। মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে স্থাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনেই চলছে পুজোর আয়োজন। করোনা আতঙ্কের আবহেই বুধবার (২১ অক্টোবর) থেকে শুরু হচ্ছে বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এদিন দেবীর বোধন।
এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর মহালয়া অনুষ্ঠিত হয়। পুরাণ মতে, এদিন দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। মহালয়ার ছয় দিন পর পূজা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এবার তা অনুষ্ঠিত হয়নি। আশ্বিন মাস মল (মলিন) মাস হওয়ায় এবার দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে প্রায় এক মাস পর ২১ অক্টোবর থেকে।
এবার সারাদেশে ৩০ হাজার ২২৫টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুর্গাপূজা। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৩৯৮টি। অন্যদিকে ঢাকা মহানগরে এ বছর পূজা মণ্ডপের সংখ্যা ২৩৩টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিলো ২৩৭টি। ঢাকা বিভাগে সাত হাজার ১৪টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর অনুষ্ঠিত হয়েছিল সাত হাজার ২৭১টি মন্দিরে। গত বছরের তুলনায় চট্টগ্রাম বিভাগে এবার ৫৫০টি কম মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। এ বিভাগে এবার পূজা অনুষ্ঠিত হবে তিন হাজার ৯০৬টি।
খুলনা বিভাগে চার হাজার ৬৮৯টি, সিলেট বিভাগে দুই হাজার ৬৪৬টি, ময়মনসিংহ বিভাগে এক হাজার ৫৮৪টি, বরিশাল বিভাগে এক হাজার ৭০১টি, রংপুর বিভাগে পাঁচ হাজার ২৫০টি এবং রাজশাহী বিভাগে তিন হাজার ৪৩৫টি মণ্ডপে এবার দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
পঞ্জিকা মতে, ২০২০ সালে মা দুর্গার আগমন হচ্ছে দোলায়। দোলায় চড়ে বাপের বাড়ির উদ্দেশে স্বামীর ঘর থেকে রওনা দেবেন তিনি। ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের মতে, দোলায় আগমন এর অর্থ মড়ক। ফলে পূজার বা তার পরবর্তী সময়েও মহামারির পরিস্থিতি বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মায়ের গমন এবার গজে। অর্থাৎ হাতিতে চড়ে মা বাপের ঘর ছেড়ে পাড়ি দেবেন স্বর্গে। গজে চড়ে গমনের ফল শুভ হয়। তবে এই বছরের পূজা অন্যান্য বছরের মতো নয়। করোনা আতঙ্কের আবহেই এবার দেবীপক্ষের সূচনা হয়। আর মহামারির দুর্যোগ মাথায় নিয়েই এবার হচ্ছে মাতৃবন্দনা।
পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি বলেন, আসন্ন দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন পূজামণ্ডপে সমবেত সবার স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ যে গাইডলাইন প্রণয়ন করেছে, তা মেনেই দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, সাত্বিক মতে, ধর্মীয় বিধান মেনেই দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। জীবন হচ্ছে আগে। নিজে সংক্রমিত হব না, অন্যদেরও হতে দেব না।
গাইডলাইনে করোনা সংক্রমণ রোধে এবার দুর্গাপূজায় শোভাযাত্রা ও প্রসাদ বিতরণ থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জনসাস্থ্য-১ অধিশাখার উপসচিব ডা. মো. শিব্বির আহমদ ওসমানী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে গাইডলাইন মেনে চলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
নির্দেশনায় মন্দির প্রাঙ্গণে নারী-পুরুষের প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ পৃথক ও নির্দিষ্ট থাকার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া পূজামণ্ডপে আগত ব্যক্তিদের নির্দিষ্ট দূরত্ব (কমপক্ষে দুই হাত) বজায় রেখে লাইন করে সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ এবং প্রণাম শেষে বের হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। সম্ভব হলে পুরো পথ পরিক্রমা গোল চিহ্ন দিয়ে নির্দিষ্ট করে দেওয়ার কথাও নির্দেশনায় বলা হয়।
পুষ্পাঞ্জলি প্রদানের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে এবং ভক্তের সংখ্যা অধিক হলে একাধিকবার পুষ্পাঞ্জলির ব্যবস্থা করতে হবে উল্লেখ করে নির্দেশনায় আরো বলা হয়, পূজামণ্ডপে আগত সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। মাস্ক ছাড়া কাউকে পূজামণ্ডপে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। এছাড়া মন্দিরের প্রবেশপথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য থার্মাল স্ক্যানারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
পূর্বপশ্চিমবিডি/অ-ভি
Post Written by :
Original Post URL : https://ppbd.news/national/177230/তুলির-আঁচড়ে-সাজছে-দেবী-দুর্গা
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD