ফেনীতে নারী-শিশু আদালতে ঝুলে আছে দুই হাজার মামলা
ফেনী প্রতিনিধি৬ বছর আগে দাগনভূঞা পৌরসভা সংলগ্ন বাড়িতে ডাকাত দল হানা দেয়। ডাকাতিকালে ওই পরিবারের এক নারীকে গণধর্ষণ করে দূর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার এখনো শেষ হয়নি। কেবল এ মামলাটি নয়, জেলায় ধর্ষণের ২৫৮টি মামলা আদালতে খুলে আছে। বিচারকের পদ শূন্য থাকা, সাক্ষী হাজির না হওয়া সহ নানা কারণে বিচারকাজ এগোচ্ছে না।
পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২১ সে রাতে দাগনভূঞা পৌরসভা সংলগ্ন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাজী আবদুল হকের বাড়িতে ডাকাতদল হানা দিয়েছিল। তখন ডাকাতরা গৃহপরিচারিকাকে গণধর্ষণ করে। ঘটনার সময় ৬০ ভরি স্বর্ণালংকার, মোটর সাইকেল, ৬টি মোবাইল ফোন ও এয়ারগান লুট করে। এ ঘটনায় গৃহকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন। ওই মামলায় পুলিশ রিয়াজ, সুজন, মাষ্টার ও আলাউদ্দিনকে আটকের পর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করে। জবানবন্দিতে তারা ঘটনায় জড়িত আরো কয়েকজনের নাম প্রকাশ করে। এ ঘটনায় পুলিশ আদালতে চার্জশীটও জমা দেয়।
মামলার বাদী নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, মামলা থেকে জবানবন্দিতে উঠে আসা আসামীকে বাদ দেয়ার পর আদালতে চার্জশীটে নারাজি দিয়েছিলাম। পরে আদালত পুন:তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ওই মামলায় ১১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছিল। শুরুতে গ্রেফতার হওয়া আসামীরাও জামিন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখন মামলাটি আদালতে কোন পর্যায়ে জানা নেই।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ৩ মে থেকে ফেনীতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল চালু হয়। প্রথম বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান মামুনুর রশীদ। তার দায়িত্বপালনকালীন সময়ে ট্রাইব্যুনালের ১ হাজার ১শ ৯৭টি মামলা নিষ্পত্তি করেছিলেন। গত বছরের অক্টোবরে বিচারক মামুনুর রশিদকে ঠাকুরগাঁও জেলা জজ হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে বদলী হন। সেই থেকে এই পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে অদ্যাবধি আর কোন বিচারক পদায়ন হয়নি। ইতিমধ্যে এই আদালতে ১ হাজার ২'শ ৮৬টি নারী, ২'শ ৩১টি শিশু আদালত ও ৫'শ ২টি কমপ্লেইন মামলার একটি বিশাল জট তৈরী হয়েছে। যার মধ্যে ২'শ ৩৯ জন নারী ও ১৯ জন শিশু ধর্ষণের ঘটনার মামলা রয়েছে। আর এ সকল বিচার প্রার্থীরা এখন পোহাচ্ছেন চরম বিপত্তি।
সূত্র আরো জানায়, ফেনী জেলা ও দায়রা জজ ড. বেগম জেবুন্নেসা সাময়িকভাবে নারী ও শিশু আদালতে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তবে একসাথে ৪ টি ভিন্নভিন্ন আদালতের কার্যক্রম তিনি একাই পরিচালনা করছেন।
নুর নাহার বেগম নামের ফুলগাজীর এক বাসিন্দা জানান, মেয়েকে সাথে নিয়ে প্রায় বছরখানেক ধরে আদালতে প্রতিনিয়ত আসা-যাওয়া করতে হয়। বিচারক না থাকায় বিচারপ্রক্রিয়াও এগোচ্ছে না।
আইনজীবী শাহজাহান সাজু জানান, বিচারক না থাকায় মামলার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। নিষ্পত্তি না হওয়ায় জট বেধে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, দীর্ঘসূত্রিতার কারণে আসামীরা জামিনে বেরিয়ে বাদীপক্ষকে হুমকি-ধমকি দিয়ে থাকেন।
ফেনী জেলা দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর হাফেজ আহম্মদ জানান, বিচারক না থাকায় বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তাই এই আদালতের বিচারক নিয়োগ জরুরি হয়ে পড়েছে।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম
Post Written by :
Original Post URL : https://ppbd.news/whole-country/175624/এক-বছর-ধরে-নেই-বিচারক,-ফেনীতে-নারী-শিশু-আদালতে-ঝুলে-আছে-দুই-হাজার-মামলা
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD