শিক্ষকতার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
শিক্ষা
এইচ এম জসীম উদ্দীন‘আমি শিক্ষক আমি রক্ষক মর্যাদার। আমি নতুনের কেতন উড়ানো বাশির সূর আমি নব পল্লবে উর্বরতা সুমধুর’
শিক্ষতা এক মহান পেশা। শৈশবে দেখেছি শিক্ষকতা মানে বিলিয়ে দেওয়া, অর্থাৎ জ্ঞানের সর্বস্ব শিষ্যদের মাঝে অকৃতিম ভাবে দান করা। বিনিময়ে শুধু আত্নতৃপ্তি মাত্র। শিক্ষকতা পেশা ছিল না, ছিল ব্রত। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রীধারীরা শিক্ষকতার মহান পেশায় আত্ননিয়োগ করে গ্রামের অজো পাড়াগাঁয়ে অকাতরে জ্ঞানের আলো ছড়াতেন। চাইলেই তারা অনায়াসেই হতে পারতেন বড় আমলা আরো অনেক কিছু। কিন্ত তাদের কাছে ওসব বড় পদ পদবীর চেয়ে জ্ঞানের আলো ছড়ানোই ছিল পছন্দনীয় কাজ। ইতিহাস বলে নামমাত্র মাহিনা পেতেন, তা দিয়েই অনাহারে /অর্ধাহারে জীবনযাপন করতেন আর দিনের পর দিন ছড়িয়ে চলতেন জ্ঞানের আলো। পরম মমতায় নিজ সন্তানের মত ছাত্রকে ‘তুই’ বলে সম্ভোধন করতেন। সেই ‘তুই’ ডাক যে কত মধুর ছিল, তা আজ থেকে যারা ৩০/৪০ বছর আগে ছাত্র ছিলাম তারাই অনুধাবন করতে পারি। ছাত্রের কাছে গুরুবাক্য ছিল শিরোধার্য। কিন্ত কালের বির্বতনে আজ শিক্ষকের সন্মান তলানিতে গিয়ে ঠেকছে। আজকাল শিক্ষার্থীদের ‘তুই’ বলে সম্মোধন করলে শিক্ষককে অসামাজিক বলে ধরে নেওয়া হয়। শিক্ষকদের শাসন করার সেই ক্ষমতা এখন আর নেই, ছাত্রদের ছোট থেকেই গড়ে তুলতে পারলে বড় হয়ে তাদের ভেতর নৈতিক অবক্ষয় ঘটত না। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নানা অঘটন ঘটত না। বাদশাহ আলমগীর তার সন্তানের শিক্ষককে যে মর্যাদা দিয়েছিলেন আজ আর শিক্ষকের সে মর্যাদা নেই। নেই প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের মত অভিভাবকও যে সন্তানকে পুরোপুরি শিক্ষকের কাছে সোপর্দ করবে। শিক্ষক থেকে শিক্ষা, শিক্ষা থেকে সভ্যতা। কাজেই সভ্যতার প্রসারে চাই নিবেদিতপ্রাণ মেধাবী শিক্ষক । শিক্ষকতা একটি সৃষ্টিশীল কাজ। শিক্ষকদের সৃষ্টিশীলতা বজায় রাখতে চাই, আর্থিক নিরাপত্তা এবং উপযুক্ত মর্যাদা। বেসরকারি শিক্ষার আধুনিকায়ন ও মেধাবীদের শিক্ষকতার মহান পেশায় আকৃষ্ট করতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া সময়ের দাবী।
১) শিক্ষানীতি কাগজে কলমে নয়, বাস্তবে প্রয়োগ চাই।
২) শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা অনান্য দেশের ন্যায় করতে হবে।
৩) শিক্ষা মৌলিক অধিকার কাজেই সরকারি /বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থায় বৈষম্য দূর করতে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ সময়ের অন্যতম দাবী।
৪) ম্যানেজিং কমিটির আধুনিকায়ন দরকার এবং ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ ৩ থেকে ৫ বছর করা উচিৎ।
৫) জনবল কাঠামো সংশোধন করে যুগোপযোগী করতে হবে।
৬) করোনাকালীন শিক্ষা বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।
৭) প্রধান শিক্ষক সহ অনান্য ক্ষেত্রে উচ্চতর গ্রেড প্রবর্তন করতে হবে।
৮) শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
৯) সব উৎসব ভাতা পূর্ণাঙ্গ করতে হবে।
১০) সরকারের ডেল্টা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
১১) SDG বাস্তবায়নে শিক্ষাব্যবস্থা ডিজিটালাইজড করতে হবে।
১২) করোনা পরবর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে, শিক্ষাব্যবস্থার করণীয় নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করতে হবে।
১৩) এই পেশাকে আর্কষণীয় করতে মেধাবী শিক্ষকদের জন্য গবেষণার সুযোগ থাকতে হবে।
১৪) পারস্পরিক বদলি চালু করা যেতে পারে।
বর্তমান শিক্ষাবান্ধব
সরকার শিক্ষার উন্নয়নে অনেক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। আমরা আশাবাদী এ সরকার শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা ও উপযুক্ত মর্যাদা নিশ্চিত করবে। ছাত্রজীবন থেকেই অনেকের লক্ষ্য ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বড় সরকারি আমলা হওয়ার। আমার লক্ষ্য ছিল ভিন্ন, আমার লক্ষ্য ছিল আমি অসংখ্য ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, দেশপ্রেমিক আমলা তৈরি করব। সে জন্যই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে নিজেকে শিক্ষকতার মহান পেশায় নিয়োজিত করেছিলাম। সামান্য একজন শিক্ষক হিসাবে আমার বেশি কিছু চাওয়া নেই। আমার চাওয়া চলার মত আর্থিক নিরাপত্তা ও উপযুক্ত মর্যাদা যেন আমিও মাথা উচু করে সগৌরবে বলতে পারি। ‘শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার .....’
এইচ এম জসীম উদ্দীন প্রধান শিক্ষক আছমত আলী খান (এ কে) ইন্সটিটিউশন, বরিশাল ও সভাপতি বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি বরিশাল, মহানগর।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম
Post Written by :
Original Post URL : https://ppbd.news/education/175717/শিক্ষকতার-অতীত,-বর্তমান-ও-ভবিষ্যৎ
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD