গত কয়েকদিনের তুমুল বৃষ্টিতে বেহাল অবস্থায় পড়েছে ভারতের বাণিজ্যনগরী মুম্বাই। বৃষ্টির সঙ্গে গতকাল বুধবার (৫ আগস্ট) যোগ হয়েছে ঝড়ো হাওয়া। গতকাল সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ ১০৭ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বয়ে গেছে শহরের ওপর দিয়ে। শহরের প্রধান দু'টি লেকের পানি উপচে পড়েছে। বিদ্যুৎহীন বিস্তীর্ণ এলাকা।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গত কয়েকদিনের তুমুল বৃষ্টিতে বেহাল অবস্থায় পড়েছে ভারতের বাণিজ্যনগরী মুম্বাই। বৃষ্টির সঙ্গে গতকাল বুধবার (৫ আগস্ট) যোগ হয়েছে ঝড়ো হাওয়া।
বুধবার সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ ১০৭ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বয়ে গেছে শহরের ওপর দিয়ে। শহরের প্রধান দু'টি লেকের পানি উপচে পড়েছে। বিদ্যুৎহীন বিস্তীর্ণ এলাকা।
বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারে নামানো হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর। সব মিলিয়ে শহরে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আপাতত মুম্বাইয়ের এই বিপদ কাটার কোনো লক্ষণ নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। বৃহস্পতিবারও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে তারা। বেশ কয়েকটি এলাকায় অস্থায়ী ত্রাণ শিবিরও খোলা হয়েছে।
পানি জমে বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি গাছ পড়েও রাস্তা বন্ধ হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে বাড়ির বাইরে না বের হওয়ার আবেদন করেছে রাজ্য সরকার।
পাকিস্তানের করাচিতে জামাত-ই-ইসলামীর রাজনৈতিক সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় গ্রেনেড হামলার ঘটনায় অন্তত ৩৯ জন জখম হয়েছেন। সে দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ডন নিউজ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পাকিস্তানের করাচিতে জামাত-ই-ইসলামীর রাজনৈতিক সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার (৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় গ্রেনেড হামলার ঘটনায় অন্তত ৩৯ জন জখম হয়েছেন। সে দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ডন নিউজ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
পাকিস্তানের জামাত-ই-ইসলামীর মুখপাত্র জানিয়েছেন, গুলশান-ই-ইকবাল এলাকায় গতকালের সমাবেশের মূল জায়গা টার্গেট করা হয়েছিল। সিন্ধু প্রদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর গণমাধ্যম সমন্বয়কারী মিরান ইউসুফ বলেছেন, আহত ৩৯ জনের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। তবে এখন পর্যন্ত কেউ মারা যায়নি।
করাচি পুলিশ বলছে, গুলশান-ই-ইকবাল এলাকায় সমাবেশের মূল জায়গা নিশানা করেছিল হামলাকারীরা।
জামাত-ই-ইসলামীর মুখপাত্র জানান, মোটরসাইকেলে থাকা দুই ব্যক্তি ট্রাকের সামনে গ্রেনেড মেরে পালিয়ে যায়। ওই গ্রেনেড ফাটলে ৩৯ জন জামাত সমর্থক জখল হয়।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা সাজিদ সাদোজাই বিস্ফোরণস্থলে প্রাথমিক তদন্তের পর জানিয়েছেন, হামলা চালাতে আরজিডি-১ গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছে। ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছিল এক বছর আগে, ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট। ওই দিনের স্মরণে বুধবার সমাবেশের আয়োজন করেছিল জামাত-ই-ইসলামী।
পাকিস্তানের নিষিদ্ধ সংগঠন সিন্ধুদেশ রেভ্যুলিউশনারি আর্মি (এসআরএ) করাচিতে গ্রেনেড হামলার দায় স্বীকার করেছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এক পোস্টে হামলা চালানোর কথা তারা স্বীকার করে।
ডন নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আল মুস্তাফা হাসপাতালে পাঁচজন, জিন্নাহ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল সেন্টারে সাতজন, আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে ১১ জন এবং লিকায়ত ন্যাশনাল হাসপাতালে ১০ জন আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বার্তা সংস্থা এএফপি, জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় ও ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য মতে ব্রাজিলে মৃত্যুর সংখ্যা ৯৭ হাজার ৪১৮ জনে দাঁড়িয়েছে। বৈশ্বিক মৃত্যুর তালিকায় দ্বিতীয়স্থানে আছে লাতিন আমেরিকার দেশটি।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
করোনাভাইরাসের অন্যতম হটস্পট ব্রাজিলে মৃত্যুর সংখ্যা লাখের আরও কাছে চলে এসেছে। আর আড়াই হাজারের মতো মৃত্যু হলেও সংখ্যাটি ছয় সংখ্যার ঘরে পৌঁছাবে।
বার্তা সংস্থা এএফপি, জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় ও ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য মতে ব্রাজিলে মৃত্যুর সংখ্যা ৯৭ হাজার ৪১৮ জনে দাঁড়িয়েছে। বৈশ্বিক মৃত্যুর তালিকায় দ্বিতীয়স্থানে আছে লাতিন আমেরিকার দেশটি।
২১ কোটি ২০ লাখের জনগণের দেশটিতে করোনার প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে গত ফেব্রুয়ারিতে। সেখান থেকে মৃত্যুর সংখ্যা লাখে পৌঁছাতে সময় লাগছে পাঁচ মাস সময় লাগছে।
মৃত্যুর মতো আক্রান্তের তালিকায়ও বৈশ্বিক তালিকায় দ্বিতীয়স্থানে আছে দেশটি, ২৮ লাখ ৬২ হাজার ছাড়িয়েছে।
করোনাভাইরাসে ব্রাজিল পর্যুদস্ত হয়ে পড়লেও তাতে গুরুত্ব নেই দেশটির প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো। তার দৃষ্টিতে করোনা সামান্য ফ্লু জাতীয় রোগ।
এদিকে, আক্রান্তের তালিকায় শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে মোট আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ৪৯ লাখ ৭৩ হাজার। মৃত্যু ছাড়িয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার।
আক্রান্তের তালিকায় তৃতীয়স্থানে আছে ভারত, ১৯ লাখ ৬৩ লাখ। মৃত্যুতে পঞ্চমস্থানে আছে দেশটি, ৩৯ হাজার ৮০০ ছুঁই ছুঁই।
বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৮৯ লাখ ছাড়িয়েছে, মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭ লাখ ১১ হাজার। সুস্থতার সংখ্যা ১ কোটি ২১ লাখ।
ভোলার মনপুরায় সরকারি ভিজিডির ১৩ বস্তা চালসহ এক ইউপি সচিবকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার (৫ আগস্ট) সরকারি চাল পাচারকালে প্রথমে স্থানীয় জনতা জব্দ করে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে চাল জব্দ করে।
সারাদেশ
ভোলা প্রতিনিধি
ভোলার মনপুরায় সরকারি ভিজিডির ১৩ বস্তা চালসহ এক ইউপি সচিবকে আটক করেছে পুলিশ।
বুধবার (৫ আগস্ট) সরকারি চাল পাচারকালে প্রথমে স্থানীয় জনতা জব্দ করে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে চাল জব্দ করে।
এই ঘটনায় জড়িত মনপুরা ইউনিয়নের সচিব অহিদুর রহমান পলাতক থাকলেও পরে পুলিশ বিশেষ অভিযানে চালিয়ে সন্ধ্যা ৬ টায় তাকে আটক করে। এছাড়াও রিকাশার ড্রাইভার হেলালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, দুপুর সাড়ে ৩ টায় মনপুরা ইউনিয়নের সরকারি ১৩ বস্তা চাল ইউপি সচিব অহিদুর রহমান রিকশাযোগে পাচারকালে হাজিরহাট ইউনিয়নের আনসার চেয়ারম্যানের বাড়ির দরজার সামনে জনতা আটক করে।
এ সময় রিকশা ড্রাইভার হেলালকে জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, রামনেওয়া লঞ্চঘাটে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে আসার পথে মনপুরা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব অহিদুর রহমান রিকশা থামিয়ে ১৩ বস্তা চাল উঠিয়ে দেন। পরে ওই চাল হাজিরহাট ইউনিয়নের আনসার চেয়ারম্যানের বাড়ির শহিদুল্লার ঘরে রাখতে বলে।
এ বিষয়ে মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা চরফ্যাসনের উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন জানান, ঘটনার তদন্ত শেষে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন কোভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। বুধবার (৫ আগস্ট) রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলার সিভিল সার্জন মাহফুজুর রহমান সরকার।
সারাদেশ
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন কোভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন।
বুধবার (৫ আগস্ট) রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলার সিভিল সার্জন মাহফুজুর রহমান সরকার।
সাবেক পানিসম্পদ ও খাদ্যমন্ত্রী নিজ ফেসবুক পেজেও এ খবর জানিয়ে লিখেন, করোনা টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। দ্রুত সুস্থতার জন্য দোয়াপ্রার্থী। ঈশ্বর সহায় হবে।
এই সংসদ সদস্য ছাড়াও জেলায় নতুন করে আরও আটজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৩৭। মারা গেছে আটজন।
সিভিল সার্জন মাহফুজুর রহমান সরকার বলেন, তার দেহে সোডিয়াম ডেফিসিয়েন্সি দেখা দিলে গত ৩ অগাস্ট নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও সেদিন জেলা থেকে আরও ৬৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বুধবার রাতে দিনাজপুর থেকে প্রাপ্ত রিপোর্টে রমেশ সেনসহ ৯ জনের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়।
সিভিল সার্জন জানান, রমেশ চন্দ্র সেনের কোনও উপসর্গ নেই। তাকে নিজ বাড়িতেই আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। ঘরেই চিকিৎসা হচ্ছে তার। বাড়ির বাকিরা সুস্থ আছেন।
‘সাহেদুল ইসলাম সিফাতের ছোটবেলা থেকে শখ ছিলো ফটোগ্রাফি ও অভিনয় করা। সে কারণে আমরা তাকে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ফ্লিম ও মিডিয়া বিভাগে ভর্তি করি। নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খান তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও ধারণ করার জন্য সিফাতকে নিয়ে যান টেকনাফে। সেখানে একটি রিসোর্টে অবস্থান করে একমাস ধরে ডকুমেন্টরি ভিডিও তৈরি করছিলেন তারা। তবে ফেরার পথে গত ৩১ জুলাই রাত ৯টায় টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে এক পুলিশ কর্মকর্তার গুলিতে নিহত হয় অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। সাবেক ওই সেনা কর্মকর্তার সাথে একই গাড়িতে ফিরছিলো আমার নাতি সিফাত। পুলিশ তাদের দোষ ধামাচাপা দিতে আমার নাতিকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করে। আমিসহ দেশবাসী বিশ্বাস করে পুলিশের নাটকের বলিরপাঠা হলো আমার নাতি সিফাত।’
পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন গ্রেপ্তার হওয়া নিহত সাবেক মেজর সিনহার সাথে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতের নানা এনায়েত কবির হাওলাদার। তিনি বরগুনা জেলার বামনা সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। বুধবার (৫ আগস্ট) রাতে তার বাসবভনে এ প্রতিবেদকের কাছে এসব কথা বলেন তিনি।
এসময় তিনি আরো বলেন, টেকনাফ থানা পুলিশ নিজেরা বাঁচতে তাঁর নাতিসহ আরো দুজন সহপাঠীকে এই ঘটনার বলিরপাঠা বানানো হচ্ছে। সিফাতের স্বপ্ন পুলিশের সাজানো নাটকে আজ ধংস হতে চলেছে। সিফাত জীবনে একটি সিগারেটও খায়নি অথচ তাকে মাদক দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। মেজর সিনহা ওকে খুব ভালোবসত। ওর মাধ্যমে সিনহা তাঁর ইউটিউব চ্যানেলটি তৈরির কাজ শুরু করে।
নিহত সাবেক মেজর সিনহা রাশেদ খানের সাথে একই গাড়িতে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতের বাড়ি বরগুনার বামনা উপজেলার কলাগাছিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম নুর মোস্তফা মা লন্ডন প্রবাসী মোসা. শিলা খান। সিফাত এ বছর স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফ্লিম ও মিডিয়া বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এর আগে তিনি বামনা সরকারি সারওয়ারজান পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও বামনা কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করেন।
সিফাতের নানা বলেন, সিফাত টেকনাফে যাওয়ার সময় সিনহার তথ্য চিত্রের বিভিন্ন দিক নিয়ে আমার সাথে কথা বলেছে। ও আমায় বলে নানু আমি ফটোগ্রাফি নিয়ে কাজ পড়াশুনা করে একদিন নাম করা ফটোগ্রাফার হবো। তোমরা দোয়া করো আমি সিনহা স্যারের সাথে টেকনাফে শুটিং করতে যাচ্ছি। ওখানে একমাস থাকবো। তোমার নাতিকে একদিন দেশ চিনবে।
তিনি কষ্টের স্বরে বলেন, আজ আমার নাতিকে সত্যি দেশ চিনলো তবে পুলিশের সাজানো নাটকের আসামি হিসাবে। আমি আমার নাতির মুক্তি চাই। আপনারা আমার নাতিকে এনে দিন। সরকার আমার নাতিকে পুলিশের হাত থেকে ফিরিয়ে দিন।
এদিকে বুধবার বামনা সরকারি সারওয়ারজান পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সিফাতের সহপাঠীরা সিফাতের মুক্তির দাবীতে বামনা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করতে চাইলে পুলিশের টহলে ওই মানবন্ধন করতে সফল হয়নি তারা। বামনা থানা পুলিশ দুজন সহপাঠীকে মানববন্ধন না করার জন্য হুমকিও প্রদান করে বলে জানায় ওই সহপাঠীরা।
বামনা থানার ওসি ইলিয়াস আলী তালুকদারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাবেক মেজর সিনহা টেকনাফে নিহতে হয়েছেন। সেখানেই মামলা হয়েছে যার তদন্ত চলমান। এর চেয়ে বেশিকিছু আমার জানা নেই।
পেন্ডেমিক বিশ্বে কালের পেন্ডুলামের টিক টিক ধ্বনি শত বিপত্তির মুখেও নিত্য সম্মুখে অগ্রসরমান। থেমে নেই মুখর জীবনের আহ্বান। বিপর্যস্ত-বিপন্ন মানব সম্প্রদায় করোনাকালের মৃত্যুভয়কে সঙ্গে নিয়েই মনোজাগতিক জটিল পরিবর্তিত পরিস্থিতির মাঝেই ধুঁকে ধুঁকে টিকে আছে। রুগ্ণ ব্যাধিগ্রস্ত পৃথিবী ইতিমধ্যেই সাত লক্ষাধিক মানুষের করুণ মৃত্যু প্রত্যক্ষ করেছে। সর্বত্রই নির্বাক মূঢ়তা, বিষণ্নতা, ঝড়-জল -বন্যার ভয়াবহতা গৃহবন্দী মানুষকে করেছে আরো অস্থির-অসহিষ্ণু। সমাজবদ্ধ জীবনে মানুষ অভ্যস্ত হলেও একাকীত্ব-নির্জনতাকে মানুষ গভীরভাবে উপভোগ করে। মগ্ন চৈতন্যের নিবিড়তায় হারিয়ে যেতে যেতে আপন সত্তাকে জাগ্রত করার প্রয়াস পায়। তবে সেটিও নেহায়েতই বৃত্তবন্দী ছক থেকে বেরিয়ে ক্ষণিকের অবসরযাপনে এমন আনন্দ তাঁকে প্রশান্তির প্রলেপ বুলিয়ে দেয়। কিন্ত অনিশ্চিত জীবনে অভিশপ্ত করোনার অপরিণামদর্শী লকডাউনের সেই শুরু থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসন আর ব্যস্ত ত্রস্ত জীবনে হঠাৎ ভাটা লেগে থমকে চমকে যাওয়া মানুষ আতঙ্কে-বিরক্তিতে-অস্বস্তিতে ডুবে শ্বাসরুদ্ধকর এমন পরিস্থিতিতে পরিত্রাণ শুধু নয় মানসিকভাবে বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
মান-মনস্তত্ত্ব, বৈচিত্র্যে ভরা মনোজাগতিক জীবনের রহস্যজাল বড়ো দুর্ভেদ্য । কিশোরী বেলায় বিটিভিতে Mysterious Island নামে একটা ইংরেজী সিরিয়াল খুব আগ্রহভরে পরিবারের সাথে দেখতাম; তখন বুঝিনি জটিল জীবনের পরতে পরতে শুধু রহস্যই নয়; ভাঙ্গা-গড়া, বিষাদ-অবসাদ, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, অহিসং-সহিংসতার মোড়কে মুখ আর মুখোশের বিচিত্র প্রতিচ্ছবি। রিয়েল-আনরিয়েলের অকাট্যতার নগ্ন উন্মাদনা। সুদৃশ্য পরিপাটি মুখাবয়বের পেছনে লোলুপতার লকলকে রক্তাক্ত জিহ্বা। আজও কিছু মানুষের মধ্যে আদিমতার-নৃশংসতার সর্বগ্রাসী মনোবৃত্তি করোনাকালের মৃত্যুভয়কেও হার মানায়।
করোনা যেখানে চিরায়ত জীবনধারার ইতিবাচক দিকগুলোকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে প্রথাসিদ্ধ জীবনের বিরুদ্ধে সেখানে কতক মানুষরুপী অমানুষের দোর্দণ্ড তাণ্ডবে বিষাদগ্রস্ত গৃহবন্দী জীবনেও নেমে এসেছে নারী-শিশুর ওপর নিপীড়ন নির্যাতনের খড়গ। অধ্যাপক আহমদ শরীফের নারী ভাবনার মতো করে বলতে হয়, নারী নির্যাতনের ও মানসিকভাবে নারী নিপীড়নের মূলে রয়েছে সুপ্রাচীনকাল থেকে পুরুষ প্রধান সমাজের নানা নীতি নিয়ম, রীতি রেওয়াজ এবং দেশকালগত নানা বিশ্বাস সংস্কারের মধ্যে সম্ভোগ্য-সম্ভোক্তা সম্পর্কটাই মুখ্য। (দর্শন ও প্রগতি , বর্ষ ২৯ , ১ম ও ২য় সংখ্যা পৃ: ৮৫)। উদ্ধৃতির বিশ্লেষণের গভীরে প্রবেশ না করেও দেখা যাচ্ছে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বেড়েই চলেছে আশঙ্কাজনক হারে। গত মে (২০২০) মাসে এই হার অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় ৩১ শতাংশ বেশি। পারিবারিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত, নিপীড়ন-নিগ্রহ, কলহ-বিবাদ তথা শারীরিক- মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন নারীরা। বিপরীত চিত্র যে নেই সেটি কিন্ত এ সময় আর হলফ করে বলা যাবে না। সেজন্যই home sweet home ই বলি আর আমার ঘর আমার বেহেশতই বলি না কেন কার্যতঃ সকলের ক্ষেত্রে বিষয়টা তেমন নয়। দীর্ঘ গৃহবন্দীত্বের সময়টাতে একসাথে, এক ছাদের নীচে স্বামী-স্ত্রী অবস্থানকালে যাপিতজীবনের নানান প্রাসঙ্গিক-অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণার পাশাপাশি গৃহকর্মের অনিবার্য-অবধারিত কাজকর্ম দাম্পত্য সম্পর্কের মাঝে এক ধরণের মনস্তাত্বিক তিক্ততার সৃষ্টি করেছে। মানুষ আর যা-ই হোক একঘেয়েমি জীবনব্যবস্থায় বেশিদিন অভ্যস্ত থাকতে পারে না। দাম্পত্য সম্পর্কের বাইরেও থাকে ভিন্ন প্রেক্ষাপট বিপরীতের নানান অনুষঙ্গ। বলেছি তো মানব মনস্তত্ত্ব বড়ো জটিল। মানুষ তার নিজস্ব অবস্থানকে ছাপিয়ে বহু সত্তায়, বহু মাত্রায় আত্মিকভাবে অবস্থান করে। একইসাথে কল্পনার জগতে নিজেকে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে উপল ভাঙ্গা চঞ্চলতায় অবগাহন করে আত্মতৃপ্তি লাভ করে। সেক্ষেত্রে দাম্পত্য সম্পর্কে পাশের মানুষটি যদি পরষ্পরকে না বোঝেন তাঁর কাজের মর্যাদা-মূল্যায়ন না করেন তাহলে সে ঘর-সংসার হয়ে ওঠে দুর্বিষহ এক কারাগার। আপন ধ্যানের পরশ পাথরে "ভালোবাসা'' শব্দটি তাদের জীবন থেকে বিলুন্ঠিত হতে থাকে। ভঙ্গুর মনের বিষন্নতার অনিবার্য পরিণতি ভোগ করতে হয় নিরপরাধ অবুঝ শিশুদেরকে। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে দাম্পত্য দূরত্ব-ব্যবধান, ফলশ্রুতিতে এসব তিক্ততা বিবাহ বিচ্ছেদের মতো ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত গ্রহণকে তরান্বিত করে। জানা যায়, লকডাউনে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে অনলাইন পারিবারিক মামলা এবং বিবাহ বিচ্ছেদের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউজ লেটারের তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, বাংলাদেশে যৌন নিপীড়ন ও পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেড়েছে বহুগুণে। গত জুন মাসে (২০২০) দেশে ৭১০টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ছিলো ৬ শতাংশ। (প্রথম আলো, ২৫ জুলাই, ২০২০)। নিপীড়িত নারীদের ৯৭.৪ শতাংশই পারিবারিক সহিংসতা তো বটেই বেশি ঘটেছে স্বামীর হাতে। তাছাড়া, শিশুশ্রম, শিশু নির্যাতন, ছোটোখাট বিষয়কে কেন্দ্র করে শিশুদের ওপর অমানবিক-মধ্যযুগীয় কায়দায় শাস্তি প্রদান, হাসপতালে শিশু চুরি, নবজাতককে রাস্তায়-ডাস্টবিনে ফেলে যাওয়ার মতো হৃদয়হীন ঘটনা তো বেশুমার ঘটে চলেছে। শুধু স্বামী সংসারে নারী নির্যাতিতা নয়, নারীরা বিশেষতঃ কিশোরী থেকে প্রাপ্ত-অপ্রাপ্ত বয়স্ক তো রয়েছেই ধর্ষিতার তালিকায় রয়েছেন প্রতিবন্ধী নারীরাও। স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের পর্যবেক্ষণে নারী ও শিশু নির্যাতনের কারণ হিসেবে উঠে আসে- মানুষের ঘরে আটকে পড়া, কাজ না থাকা, আয় কমে যাওয়া, খাবারের সংকট, ঋণের চাপ এবং কোথাও কোথাও মাদকের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব নির্যাতন বেড়েছে। ঝুঁকি বেড়েছে নারীদের সামাজিক ক্ষেত্রেও। যাহোক, এসব চিত্র একটি দেশের একটি রাষ্ট্রের মানবিক মূল্যবোধের দৈন্যতাকেই উন্মুক্ত করে, মনস্তাত্বিক মনোবৃত্তির পক্ষাঘাতগ্রস্ততাকেই প্রকাশিত করে। সুশিক্ষার আকালকে বড়ো বেশি স্পষ্ট করে তোলে। মানুষ মনুষ্যবৃত্তির আড়ালে পশুবৃত্তিটাকে লালন পালন করে যাপিতজীবনে অশুভ দিকগুলোকে প্রকার-প্রকরণে বহুমাত্রিকতায় বৈধতা প্রদান করে চলেছে।
একে তো করোনাকাল ! তারওপর সামাজিক সুরক্ষার আকাল। কথিত দুবৃত্তদের দুবৃত্তায়নকে বিনাশ সাধনে সরকার নানামুখী সতর্কবার্তা ও শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করে চলেছেন। শুধু তাই নয় ত্রাণ, সেবা-পরিষেবা, আর্থিক অনুদান-প্রণোদনাসহ সুরক্ষার সব রকম সহযোগিতা সরকার দিয়ে যাচ্ছেন করোনা অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্তদের তো বটেই বন্যায় বানভাসি অসহায়দের মাঝেও। করোনাকালে উজানের ক্রমাগত ঢলে বন্যায় প্লাবিত জনপদ যেনো মড়ার ওপর খাড়ার ঘা।
নিস্তরঙ্গ-বিষাদগ্রস্ত পৃথিবীতে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এই মহামারীর প্রভাব যেনো শুষ্ক বনভূমিতে দাবদাহের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট মানসিক সমস্যাকে সুনামির সঙ্গে তুলনা করেছেন। বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহিত কামালের মতে, মানসিক রোগের মহামারী শুরু হয়েছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে করোনা ভাইরাসের চলমান ক্রমাগত আতঙ্ক, পরিচিত বৃত্তের বাইরে জীবনকে অভ্যস্ত করা, রোগাক্রান্ত হওয়ার হুমকি, আইসোলেশনের একাকীত্ব, চাকরী হারানোর ভয়, প্রিয় মানুষটিকে কাছে না পাবার হতাশা, নতুন করে মাত্রা পেয়েছে দাবিকৃত নতুন আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতা, অনিশ্চয়তা উল্লেখযোগ্য।
করোনাকাল স্পর্শের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলোকেও করে তুলেছে প্রশ্নবিদ্ধ। এমন ভয়ঙ্কর সংকটকালে আপনজনদের একটু স্পর্শই মানুষকে দিতে পারতো শক্তি ও স্বস্তি। মনোবিদ স্টিভ কোলের মতে, যৌথতার সবচেয়ে শক্তিশালী নিরাপত্তা সংকেত হচ্ছে স্পর্শ। এই শারীরিক স্পর্শ ও স্নেহময় স্পর্শকে আপনি বিবেচনা করতে পারেন মৌলিক নিদর্শন হিসেবে যা বলবে কেউ একজন আছে যে আপনাকে নিয়ে চিন্তিত (বণিক বার্তা, ৩০ মে)। হারিয়ে যেতে চলেছে স্পর্শ অনুভবের সেই নির্ভরতার নিরাপদ আশ্রয়গুলো। যেখানে স্পর্শই একমাত্র ভাষা কোনটা ভালোবাসার আর কোনাটা ঘৃণা বা প্রত্যাখানের। কোভিড মানব মনোজগতে জলোচ্ছ্বাসের ভয়ঙ্কর ঘূর্ণন বৃত্ত তৈরি করে চলেছে।
ডা: মোহিত কামাল আরো বলেন, এরই মধ্যে মেন্টাল এপিডেমিক শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্ত করোনায় বিশ্বব্যাপী মৃত্যুহার এতো বেশি যে বিষয়টি "আন্ডারমাইন" হচ্ছে। যখন মৃত্যুহার কমে যাবে তখন মানসিক দুরবস্থার বিষয়টিও দৃশ্যমান হবে।
সায়েন্টিফিক আমেরিকার মতে, ইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো মনস্তাত্বিক পরীক্ষায় পৃথিবী। জীবিত মানুষ মৃতের মিছিলে শরীক হয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্নটিকে জিইয়ে রেখে চলেছে বড়ো দুরু দুরুদুরু বক্ষে; যেনো মৃতের জন্য রোদন নয়, আজরাইলের ঘর চেনার জন্য ক্রন্দন।
মনো বিশ্লেষকরা বলেন, মানসিক চাপ মানুষের মধ্যে এক ধরণের আবেগের সৃষ্টি করে যা তাকে অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় পতিত করে; ফলে রাগ, ক্ষোভ, বিরক্তি, অবসাদগ্রস্ততা, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা, সিদ্ধান্তহীনতায় অসহায় মানুষ ভুগতে থাকে। এমন পরিস্থিতিকে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানে 'সাইকোলজিক্যাল ডিজরাপশন' বলা হয়ে থাকে।
সূত্রমতে, চীনের উহান নগরী যেখান থেকে মারণী করোনা প্রথম উদ্ভূত হয়েছিলো। এক জরিপ বলছে, সেখানকার ৩৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী মানসিক সমস্যায় ভুগছে। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ন্যান্সি সিনের মতে, যতোই দিন যাচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা প্রতিনিয়ত অবনতির দিকেই যাচ্ছে। অবস্থা যেদিকেই মোড় নিক না কেনো, মৃত্যু-স্মারক চিহ্নিত এই জীবনে দেশ কাল, জাতি, ধর্ম, বর্ণ-লৈঙ্গিক পার্থক্য ঘুচিয়ে বেঁচে যাওয়া মানুষগুলোকে হতে হবে আরো সাহসী আরো সংবেদনশীল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বার্তা অনুযায়ী, মানসিক সমস্যা ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংকট হয়ে উঠবে। তদুপরিও করোনাক্রান্ত পৃথিবীর বিমূঢ়তাকে সমস্ত প্রাণশক্তি নিয়ে মোকাবিলা করার মানসে পুরো বিশ্বের সদিচ্ছা ও শুভশক্তিকে প্রয়োগ করে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বৃহত্তর মানবকল্যাণের স্বার্থে সমন্বিত সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণই পারে এ মহাবিপর্যয়কে রুখে দিতে; জীবনকে জাগাতে।
লেখক: অধ্যাপক দর্শন বিভাগ ও শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, সরকারি তিতুমীর কলেজ।
দেশের বাজারে আবারো সোনার দাম বেড়েছে। এবার ভরি প্রতি দাম বাড়ানো হয়েছে ৪ হাজার ৪৩২ টাকা। বুধবার (৫ আগস্ট) বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি (বাজুস) থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) থেকে নতুন দামে বিক্রি হবে অলঙ্কার তৈরির এ ধাতু।
বাজুস নির্ধারিত নতুন মূল্য তালিকায় দেখা গেছে, ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৭ হাজার ২১৫ টাকা। বুধবার পর্যন্ত এ মানের স্বর্ণের দাম রয়েছে ৭২ হাজার ৭৮৩ টাকা।
২১ ক্যারেটের প্রতি ভরির দাম ধরা হয়েছে ৭৪ হাজার ৬৬ টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬৯ হাজার ৬৩৪ টাকা।
একইভাবে ১৮ ক্যারেটের ভরির দাম পড়বে ৬৫ হাজার ৩১৮ টাকা। বর্তমানে দাম রয়েছে ৬০ হাজার ৮৮৬ টাকা।
সনাতন পদ্ধতিতে স্বর্ণ প্রতি ভরির দাম ধরা হয়েছে ৫৪ হাজার ৯৯৫ টাকা। বুধবার পর্যন্ত দাম রয়েছে ৫০ হাজার ৫৬৩ টাকা।
অপরিবর্তিত রয়েছে ২১ ক্যারেট ক্যাডমিয়াম রূপার দাম। প্রতি ভরি বিক্রি হচ্ছে ৯৩৩ টাকায়।
বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে ইউএস ডলারের প্রাধান্য খর্ব, তেলের দর পতন ও নানাবিধ অর্থনৈতিক সমীকরণের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ কোঠায় অবস্থান করছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশীয় বুলিয়ন মারেবকটেও সোনার দাম বেড়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে সোনার দাম বাড়ানো হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত জুয়েলারি মালিকরা নতুন দামে সোনা বিক্রি করবেন।
এর আগে সর্বশেষ ২৩ জুলাই সব ধরনের সোনার দাম প্রতি ভরিতে তিন হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছিল। তার এক মাসে আগে ২২ জুন সোনার দাম বাড়ানো হয় ভরিতে ৫ হাজার ৭১৫ টাকা।
লেবাননের বৈরুতে বিস্ফোরণে ঘটনায় দুইজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এ বিস্ফোরণের ঘটনায় আরো বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২১ জন সদস্যসহ ৯৯ জন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। যে দুজন বাংলাদেশি মারা গেছেন তারা হলেন, মেহেদি হাসান রনি ও মিজানুর রহমান। মিজানের গ্রামের বাড়ি মাদারিপুর আর মেহেদির বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
মেহেদি হাসান বৈরুতের আশরাফিয়া এলাকার একটি আট তলা ভবনের নিচ তলায় থাকতেন। কাজ করতে সেখানকারই একটি স্পেনিস সুপার শপে। তার সঙ্গে থাকতেন আরেক বাংলাদেশি সুজন হোসেন। তিনিও ওই এলাকার একটি জুস কারখানার শোরুমে কাজ করেন। সুজন জানান, তাদের বাসা থেকে বিস্ফোরণের স্থল বৈরুত পোর্ট তিন কিলোমিটার দূরে। ‘আমি বাসা থেকে বের হয়ে আমার কর্মস্থলে যাচ্ছিলাম। আমার রুমমেট তখন কর্মস্থলে ছিল। আমি হেঁটেই যাচ্ছিলাম। সন্ধ্যা ৬টার একটু বেশি হবে। ঠিক তখনই বিস্ফোরণের শব্দ। দূরে ধোঁয়া আর আগুনের শিখা। আমার চারপাশের ভবনের কাঁচ, জানালা সব ভেঙে পড়ছিল। আমি দ্রুত একটি গাছের নিচে আশ্রয় নেই,’ বললেন সুজন।
এর কিছুক্ষণ পর বিস্ফোরণের শব্দ থেমে গেলে তিনি শোরুমে যান। গিয়ে দেখেন শোরুমটি ধংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। তিনি তার রুমমেট মেহেদির আহত হওয়া ও হাসপাতালে নেওয়ার খবর পান। পরে মেহেদি মারা যান। তার অফিস থেকে মেহেদির অফিস দুই মিনিটের হাঁটা পথ। সুজন বলেন, ‘ওই ভবনে আরো অনেকে ছিলেন। তাদের অধিকাংশ বের হতে পারলেও মেহেদি বের হতে পারেনি। সম্ভবত কাঁচ ভেঙে পড়ায় তার আঘাতে সে মারা যান।’
মেহেদির লাশ এখন মাউন্ট লেভেন হসপিটালে আছে। সুজন বলেন, ‘আমি এই ভয়াবহ বিস্ফোরণের দৃশ্য নিজ চোখে দেখেছি। আমি বেঁচে আছি। কিন্তু আমার রুমমেট ভাইতো মারা গেল। আমি সেই ভয়াবহ দৃশ্য ভুলতে পারছি না।’
বাড়ি থেকে ডেকে শত শত মানুষের সামনে স্কুলছাত্রকে হত্যা
সারাদেশ
নরসিংদী প্রতিনিধি
থেমে গেছে সব কোলাহল। স্তব্ধ হয়ে গেছে পরিবারের সব আনন্দ। ঈদ আনন্দ রূপ নিয়েছে বিষাদে। বাড়িজুড়ে কান্না আর আহাজারি। শোকে বিহ্বল স্বজনরা। সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় মা-বাবা। শোকের ছায়া নেমে এসেছে গ্রামজুড়ে। এই চিত্র মেঘনা নদীবেষ্টিত চরাঞ্চল নরসিংদীর কালাইগোবিন্দপুর গ্রামে। দশম শ্রেণির ছাত্র ফারহান আহমেদ ওরফে অনীককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে শত শত মানুষের সামনে সহপাঠীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টার দিকে সদর উপজেলার নাগরিয়াকান্দি এলাকায় ঈদ উপলক্ষে মেঘনা নদীতে নৌ ভ্রমণে গিয়ে অনীককে পিটিয়ে হত্যা করে বন্ধুরা। এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সোমবার সদর উপজেলার নাগরিয়াকান্দি এলাকায় শেখ হাসিনা সেতুতে বেড়াতে যায় কালাইগোবিন্দপুর এলাকার শহিদুল্লাহ মিয়ার ছেলে সাটিরপাড়া কালিকুমার উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ফারহান আহমেদ ওরফে অনীক (১৫)। ওই সময় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দড়ি নবীপুর গ্রামের আজিজুল, শ্রাবণ, আরিফ ও মাইন উদ্দিনের সঙ্গে অনীকের ঝগড়া হয়। পরে আশপাশের লোকজন তাদের নিবৃত করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এ ঘটনার এক দিন পর মঙ্গলবার আজিজুল, শ্রাবণ, আরিফ, মাইন উদ্দিন, ইয়াসিন, সাগর, বাদশাসহ একটি কিশোর গ্রুপ নৌকাযোগে পিকনিক করতে নাগরিয়াকান্দি এলাকায় শেখ হাসিনা সেতুতে আসে। বিকাল ৪টার দিকে অনীককে ফোন করে সেতুতে আসতে বলে বন্ধু আরিফ এবং ঝগড়া সমস্যার সমাধান করা হবে বলে আশ্বাস দেয়।
এমন খবরের ভিত্তিতে অনীক সেখানে যায়। যাওয়ার পরপরই ওৎপেতে থাকা আরিফ ও তার বন্ধুরা মিলে অনীককে নৌকার কাঠ দিয়ে পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে তার মাথায় সজোরে আঘাত করে তারা। পরে অনীককে পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ অনীকের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সদর হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা সাতজনের নাম উল্লেখ করে সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। ঘটনার পরপরই পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে। গতকাল বাদ আসর জানাজা শেষে অনীকের মরদেহ দাফন করা হয়।
এদিকে আনন্দ ভ্রমণের সময় দুই নৌকার লোকজনের মারামারির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ইয়াসিন সরকার প্রকাশিত সেই ভিডিওতে দেখা যায়, লাঠি, বাঁশ ও কাঠ নিয়ে মারামারি করছে। ভিডিওতে এক কিশোরের মাথায় সজোরে কাঠ দিয়ে আঘাত করতে দেখা যায়।
নিহত কিশোরের বাবা শহিদুল্লাহ মিয়া বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অনিক প্রায়ই নানুবাড়ি অর্থাৎ কালাইগোবিন্দপুর যেত। গতকাল সকালেও সেখানে গিয়েছিল সে। ওই এলাকায় তার বয়সীরা নৌকাভ্রমণে গেছে খবর পেয়ে বিকেল পাঁচটার দিকে আরও তিনজনের সঙ্গে সেতুর নিচে যায় সে।
নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার দত্ত বলেন, হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে আটক ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। এ ছাড়া ওই কিশোরের মৃত্যুর কারণ ও পারিপার্শ্বিক ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে।
প্রেমিকার কাছে হিরো সাজতে হাফেজকে প্রহার, ভিডিও ভাইরাল
পরিত্যক্ত একটি পুরনো ভবনে এক কিশোর গ্যাংয়ের চার সদস্য মিলে এক হাফেজকে ৪৭ মিনিট ধরে অমানুষিক মারধর করেছে।
সারাদেশ
শেরপুর প্রতিনিধি
শেরপুর পৌরসভার পরিত্যক্ত একটি পুরনো ভবনে এক কিশোর গ্যাংয়ের চার সদস্য মিলে এক হাফেজকে ৪৭ মিনিট ধরে অমানুষিক মারধর করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার (৩ আগস্ট) দুপুরে। ওই হাফেজের নাম আশিকুর রহমান পাপ্পু (১৫)। পাপ্পু সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের কানাশাখোলার বলবাড়ী এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে।
নির্মমভাবে প্রহারের ভিডিওটি শেরপুরে ভাইরাল হয়ে যায় মুহূর্তেই। প্রহারের এমন নির্মমতা দেখে মানুষের আফসোসের শেষ নেই। বিষয়টি টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে।
ঘটনার দিন রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হলো শহরের বটতলা এলাকার গোলাম মাহবুবের ছেলে সিয়াম (১৬), আমিনুল ইসলাম বাবুলের ছেলে শুভ (১৬), বেলাল হোসেনের ছেলে আরমান (১৫) ও সুজন মিয়ার ছেলে সাজেদুল ইসলাম নাসিম (১৭)। মামলার বাদী ভিকটিমের বাবা মোহাম্মদ আলী।
কারাগারে পাঠানোর এক দিনের মাথায় বুধবার দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক মো. আখরুজ্জামান উভয় পক্ষের শুনানি শেষে গ্রেপ্তার চারজনকে জামিন দিয়েছেন। এই কিশোর গ্যাংয়ের অপকর্ম ও দুর্বল মামলার ধারা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন শেরপুর জজ আদালতের পিপি চন্দন কুমার পাল এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের পিপি গোলাম কিবরিয়া বুলু।
জানা গেছে, শহরের গৃর্দা নারায়ণপুরে অবস্থিত শের আলী গাজী। এর পেছনে বসবাসকারী এক মেয়েকে ভালোবাসে ওই হাফেজ পাপ্পুর বন্ধু শুভ। পাপ্পু মেয়েটির মোবাইলে খুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠায়। বিষয়টি প্রেমিক শুভ জানতে পেরে পাপ্পুর ওপর ক্ষিপ্ত হয়। প্রেমিকার কাছে হিরো সাজতে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের নিয়ে পাপ্পুকে বেদম প্রহার করে শুভ। পরে এ ঘটনার ভিডিও প্রেমিকার কাছে পাঠিয়ে দেয় সে।
এদিকে আসামিদের জামিন হওয়ার পর থেকেই তুমুল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে মানুষের মধ্যে। বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট নাগরিক রাজনীতিক কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা বলেন, ‘আমরা বিস্মিত হয়েছি। যদি আইনের ফাঁক গলে এভাবে ক্ষমা পেয়ে যায় তবে অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হবে সমাজ।’
পিপি অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পাল ও অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া বুলুু বলেন, ওই ভিডিও এবং হাসপাতালে ভর্তি-সংক্রান্ত কাগজ বাদীপক্ষ সরবরাহ করেনি। মামলার দুর্বল ধারা ও আসামিদের বয়স কম বিবেচনায় আদালত জামিন দিয়েছে। শাস্তি না হলে কিশোর অপরাধীরা আরো উৎসাহিত হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে ১৯৪৯-এর ৫ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। গতকাল ছিল তার ৭২-তম শুভ জন্মদিন। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে শেখ কামাল দ্বিতীয়। তিনি শাহীন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী ও সংগঠক হিসেবে ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলন এবং ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে শেখ কামাল সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। আমার স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে ’৬৯-এর অগ্নিঝরা গণআন্দোলনের স্মৃতি। যে আন্দোলনে শেখ কামালের প্রতিদিনের উপস্থিতি ছিল সবার জন্য তুমুল উৎসাহব্যঞ্জক। এই আন্দোলনে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংগঠিত করে মিছিলসহ বটতলায় সমবেত হতেন। আমার পরম স্নেহভাজন ছিলেন শেখ কামাল। মনে পড়ে, ’৬৯-এ পাকিস্তান সামরিক জান্তা সরকার ধর্মীয় উগ্রতার পরিচয় দিয়ে রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করে। শেখ কামাল তখন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীদের সংগঠিত করেন এবং রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি খ্যাতিমান শিল্পী জাহিদুর রহিমকে দিয়ে বিভিন্ন সভা ও অনুষ্ঠানে গাওয়ানোর উদ্যোগ নেন। বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতার সন্তান তিনি, জন্ম থেকেই তার ধমনিতে নেতৃত্বগুণ আর বাঙালি জাতীয়তাবোধের চেতনা। তার প্রতিবাদের ভাষা ছিল রবীন্দ্রসংগীত। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে যখন যেখানে সুযোগ পেয়েছেন, সেখানেই বিশ্বকবির গান গেয়ে অহিংস প্রতিবাদের অসাধারণ উদাহরণ রেখেছেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে ছাত্রসমাজকে সংগঠিত করে হাতিয়ার তুলে নিয়ে দেশমাতৃকার মুক্তির যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীর এডিসি ছিলেন শেখ কামাল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে সংগঠিত করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার আশাবাদ ছিল, দেশ স্বাধীন হলে বাংলাদেশের ক্রীড়াক্ষেত্রের ছবিটাই পাল্টে দেবেন এবং দেশকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করবেন। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া দেশ পুনর্গঠনে নিজের অসামান্য মেধা ও অক্লান্ত কর্মক্ষমতা নিয়ে জাতির পিতার আদর্শ বুকে ধারণ করে ঝাঁপিয়ে পড়েন শেখ কামাল। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি সেনাবাহিনী ত্যাগ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান। সেখান থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে শেখ কামালের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি ছায়ানট থেকে সেতার শিক্ষার তালিম নেন। পড়াশোনা, সংগীতচর্চা, অভিনয়, বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা থেকে শুরু করে বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতিকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরার চেষ্টায় সদা-সর্বদা নিয়োজিত ছিলেন শেখ কামাল। অধ্যয়নের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল তার পদচারণে ছিল মুখর। স্বাধীনতার পর শেখ কামাল তার বন্ধুদের সহযোগে প্রতিষ্ঠা করেন নাট্যদল ‘ঢাকা থিয়েটার’ এবং আধুনিক সংগীত সংগঠন ‘স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে তিনি ছিলেন সুপরিচিত সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠক এবং অভিনেতা। আবাহনী ক্রীড়া চক্র প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি দেশের ক্রীড়াজগতে স্মরণীয় হয়ে আছেন। ‘স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী’র প্রতিষ্ঠাও তাকে অমরত্ব দান করেছে। প্রকৃতপক্ষে শেখ কামাল ছিলেন একজন ক্রীড়া ও সংস্কৃতিমনা সুকুমার মনোবৃত্তির মানুষ। তিনি কখনো ব্যবসায়িক কার্যকলাপে জড়িত হননি, অনর্থক ছোটেননি অর্থের পেছনে।
শাহীন স্কুলের ছাত্র থাকাকালে স্কুলের প্রতিটি খেলায় তিনি ছিলেন অপরিহার্য। এর মধ্যে ক্রিকেট ছিল তার প্রিয়। তৎকালের অন্যতম উদীয়মান পেসার ছিলেন তিনি। ‘আজাদ বয়েজ ক্লাব’ তখন কামালদের মতো উঠতি প্রতিভাদের আশ্রয়স্থল। এখানেই শেখ কামাল প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলেছেন দীর্ঘদিন। দেশ স্বাধীনের পর ’৭২-এ ‘আবাহনী সমাজকল্যাণ সংস্থা’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংস্থার নামে সংগঠিত করেন ফুটবল দল ‘ইকবাল স্পোর্টিং’, আর ক্রিকেট, হকির দল ‘ইস্পাহানী স্পোর্টিং’। পরে এসব দলের সমবায়ে নবোদ্যমে যাত্রা করে ‘আবাহনী ক্রীড়া চক্র’। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি এ খেলাগুলোয় বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল কামালের। তার স্বপ্ন ছিল একদিন আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশ হবে অপরাজেয় অপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রীড়াশক্তি। সত্যিই সে বেঁচে থাকলে সেটা সম্ভব ছিল। স্বপ্ন তার দৃষ্টিসীমা ছাড়িয়ে বিস্তৃত হয়েছিল বহুদূর অবধি। ফুটবলের উন্নতির জন্য ’৭৩-এ আবাহনীতে বিদেশি কোচ বিল হার্টকে নিযুক্ত করেন। যোগ্যতা, দক্ষতা আর দেশপ্রেমের অসামান্য স্ফুরণে শেখ কামাল অল্প দিনেই বদলে দিয়েছিলেন সদ্যস্বাধীন একটা দেশের ক্রীড়া ক্ষেত্র। শুধু ক্রীড়াই নয়, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সব শাখাতেই ছিল তার মুনশিয়ানা ও অসামান্য সংগঠকের ভূমিকা।
শেখ কামালের নবপরিণীতা বধূ সুলতানা খুকু ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। দেশজোড়া খ্যাতি ছিল তার। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তার পরিচিতি ছিল এক প্রতিভাবান অ্যাথলেট হিসেবে। নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছিলেন। ’৭৫-এর ১৪ জুলাই যেদিন গণভবনে শেখ কামাল ও শেখ জামাল দুই ভাইয়ের বিয়ে হয় সেদিন আমি সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারিনি। কেননা তার তিন দিন আগে ১১ জুলাই আমার বড় ভাই পিজি হাসপাতালে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) মৃত্যুবরণ করেন। আমি তখন ভোলায়। বিয়ের দিন ভোলার পুলিশ স্টেশনে ফোন করে বঙ্গবন্ধু আমার খবর নিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘জামাল-কামালের বিয়ের আসরে সবাই আছে। শুধু তুই নাই।’ কত বড় মহান নেতা, যে আমার মতো ক্ষুদ্র কর্মীর কথাও সেদিন তিনি ভোলেননি। বিয়ের অল্প কিছুদিন পর ১৫ আগস্ট, ’৭৫-এ সেনাবাহিনীর কতিপয় বিশ্বাসঘাতক উচ্ছৃঙ্খল সদস্যের হাতে পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাতা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও নববিবাহিতা দুই বধূ, দুই ভাই শেখ জামাল, শেখ রাসেলসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নির্মম মৃত্যুকে বরণ করতে হয়।
জাতির পিতা যৌবনের বারোটি বছর কারান্তরালে কাটিয়েছেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে থেকেও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যগণ কখনোই কোনো খেদোক্তি প্রকাশ করেননি। বরং পরিবারের সদস্যরা সেসব সগৌরবে মেনে নিয়ে বাঙালির জাতীয় মুক্তি-সংগ্রামের অংশে পরিণত হয়েছেন। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, দেশ স্বাধীনের পর কুচক্রী মহল শেখ কামালের বিরুদ্ধে মিথ্যা-বানোয়াট অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করেছিল। যা ছিল সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং বাস্তবে টেকেনি।
শেখ কামালের আচার-আচরণ কেমন ছিল সে সম্পর্কে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবুল ফজল রচিত ‘শেখ মুজিব : তাঁকে যেমন দেখেছি’ গ্রন্থ থেকে কিছু অংশ তুলে ধরছি। নাতিদীর্ঘ এই গ্রন্থটির ৪৭-৪৮ এ দুই পৃষ্ঠাজুড়ে আছে একটি স্মৃতিচারণামূলক লেখা। লেখাটির শিরোনাম ‘শেখ কামাল : স্মৃতিচারণ’। তিনি লিখেছেন, ‘১৭ই মার্চ শেখ সাহেবের জন্মদিন। স্বাধীনতার পর ছাত্রলীগ প্রতি বছর এ দিনটি পালন করে থাকে। ১৯৭৪-এর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হওয়ার জন্য ঢাকার ছাত্রলীগ আমাকে অনুরোধ জানায়। আমি রাজি হলাম, তবে দিনে দিনে ফিরে আসতে চাই এ শর্তে। তারা সেভাবে বিমানের টিকেট পাঠিয়ে দিয়েছিল।
১৭ তারিখ ঢাকা বিমানবন্দরে নেমে আমি চিন্তা করতে লাগলাম, ওরা আমাকে নিতে আসবে কিনা, এলেও আমি চিনতে পারবো কিনা। ওদের কারো সঙ্গে তো আমার দেখা নেই। ...একধারে দেখলাম একটা ছিপছিপে গোঁফওয়ালা ছেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বেশ লম্বা বলে সহজে চোখে পড়ে। ছেলেটাকে আমি চিনতে পারলাম না। লাউঞ্জের প্রবেশপথে ছেলেটি এগিয়ে এসে বলে : “আপনাকে নিতে এসেছি।” বলেই আমার হাত থেকে ব্যাগটি আমার আপত্তি অগ্রাহ্য করে নিজের হাতে নিয়ে নিল। নিশ্চিন্ত হওয়ার জন্য জিজ্ঞাসা করলাম : তুমি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এসেছ? “জ্বী হ্যাঁ।” নম্র কণ্ঠে জবাব দিলো ছেলেটি।
ওর পেছনে পেছনে হেঁটে এসে একটা গাড়িতে উঠে বসলাম। ড্রাইভারের সিটে গিয়ে বসলো ও নিজে এবং শুরু করলো ড্রাইভ করতে। তার আগে ও জেনে নিয়েছে আমি কোথায় উঠবো। গাড়িতে তৃতীয় ব্যক্তি নেই। কিছুদূর যাওয়ার পর আমার মনে হঠাৎ কৌতূহল হলো, জিজ্ঞাসা করলাম : তুমি কী করো? বললে : “অনার্স পরীক্ষা দিয়েছি সোশিয়োলজিতে।” ঢাকা থেকে? “জ্বী হ্যাঁ।” শেখ সাহেবের সঙ্গে ছেলেটির দৈহিক সাদৃশ্য আমার মনে ধীরে ধীরে স্পষ্টতর হয়ে উঠেছিল। জিজ্ঞাসা করলাম : তোমার নাম। “শেখ কামাল।” ও তুমি আমাদের শেখ সাহেবের ছেলে।’ এই ছিলেন শেখ কামাল। জাতির পিতার সন্তান হওয়া সত্ত্বেও তার মধ্যে কোনো অহমিকাবোধ ছিল না। তিনি ছিলেন বিনয়ী ও মার্জিত। দাম্ভিকতা ছিল তার স্বভাববিরুদ্ধ। পরোপকারী ও বন্ধুবৎসল শেখ কামালের বিনম্র আচরণে মুগ্ধ হতো সবাই।
পরিশেষে, কামালের শৈশবের একটি স্মৃতি উদ্ধৃত করছি। যে স্মৃতিকথাটি পাঠ করলে দুই চোখ পানিতে ভরে আসে, অশ্রু সংবরণ দুঃসাধ্য হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ শিরোনামের লেখায় এই স্মৃতি উল্লেখ করেছেন। ‘১৯৪৯ সালে আমার আব্বা গ্রেফতার হন। আমি তখন খুবই ছোট্ট আর আমার ভাই কামাল কেবল জন্মগ্রহণ করেছে। আব্বা ওকে দেখারও সুযোগ পাননি। একটানা ১৯৫২ সাল পর্যন্ত তিনি বন্দী ছিলেন। সে সময় আমাদের দুই ভাইবোনকে নিয়ে আমার মা দাদা-দাদির কাছেই থাকতেন। একবার একটা মামলা উপলক্ষে আব্বাকে গোপালগঞ্জ নিয়ে যাওয়া হয়। কামাল তখন অল্প কথা বলা শিখেছে। কিন্তু আব্বাকে ও কখনো দেখেনি, চেনেও না। আমি যখন বারবার আব্বার কাছে ছুটে যাচ্ছি আব্বা-আব্বা বলে ডাকছি ও শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে। গোপালগঞ্জ থানায় একটা বড় পুকুর আছে, যার পাশে বড় খোলা মাঠ। ওই মাঠে আমরা দুই ভাইবোন খেলা করতাম ও ফড়িং ধরার জন্য ছুটে বেড়াতাম। আর মাঝে মাঝেই আব্বার কাছে ছুটে আসতাম। অনেক ফুল, পাতা কুড়িয়ে এনে থানার বারান্দায় কামালকে নিয়ে খেলতে বসেছি। ও হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, “হাসু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি।” কামালের সেই কথা আজ যখন মনে পড়ে আমি তখন চোখের পানি রাখতে পারি না।’
ঘাতকের বুলেট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করার মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। ঘাতকেরা চেয়েছিল বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করতে। তারা জানত জাতির পিতার সন্তানরা মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ধারক-বাহক। সেজন্য তারা শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেল কাউকেই রেহাই দেয়নি। সেদিন জাতির পিতার দুই কন্যা বিদেশে থাকায় ঘাতকের বুলেট তাদের স্পর্শ করতে পারেনি। ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকান্ডের পর ’৮১-তে আমরা দলীয় ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার হাতে শহীদের রক্তে ভেজা দলীয় পতাকা তুলে দিই। সেই পতাকা যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে হাতে তুলে নিয়ে জাতির পিতার আদর্শ সমুন্নত রেখে তিনি আজ দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে আসীন করার যে স্বপ্ন শেখ কামাল দেখতেন সেই অসমাপ্ত কাজটিও তাঁরই পৃষ্ঠপোষকতায় সাফল্যের সঙ্গে করে চলেছেন।
শেখ কামালের জন্মদিনে যুবলীগের শ্রদ্ধা, মিলাদ ও খাবার বিতরণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব শহীদ শেখ কামালের ৭১ তম জন্মবাষির্কী পালন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। দিনটি উপলক্ষ্যে বুধবার (৫ আগস্ট) শেখ কামালের প্রতিকৃতি ও কবরে শ্রদ্ধা, কোরআন খতম, মিলাদ দোয়া ও দুঃস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করেছে সংগঠনটি।
দিনের শুরুতে ধানমন্ডিস্থ আবাহনী মাঠে শেখ কামালের প্রতিৃকতিতে শ্রদ্ধা জানান যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। এরপর সিনিয়র নেতাদের নিয়ে বনানীস্থ কবর স্থানে শ্রদ্ধা জানান এ শীর্ষ দুই নেতা।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, বঙ্গবন্ধুর জ্যৈষ্ঠপুত্র শেখ কামাল যুবসমাজের আইডল। তিনি আজীবন এ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন। তার দেখানো পথে যুবলীগের নেতাকর্মীরা মানবতার সেবায় সব সময় মাঠে থাকবে, আজকের দিনে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
এরপর গুলিস্থানস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কোরআন খতম, মিলাদ দোয়া ও দুঃস্থদের খাবার বিতরণ করেছে বাংলাদেশ যুবলীগ। এতে অংশ নেন আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
এছাড়া যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম বদি, ফজলুল হক আতিক, ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তর এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল, সাধারন সম্পাদক মো. ইসমাইল হোসেন, দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইনউদ্দিন রানা, ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক রেজাউল করিম রেজাসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, আগস্ট মাস আমাদের অত্যন্ত বেদনার। আগস্ট জুড়ে যুবলীগ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। শেখ কামালের ত্যাগের আদর্শ ধারণ করে যুবলীগের প্রতিটি ইউনিট তার সাধ্যমত এসব কর্মর্সূচি পালন করবে। আগস্টের কর্মসূচির নামে যুবলীগের কেউ, কারো কাছ থেকে অর্থ আদায় করবে না। কোথাও এমন ঘটনা ঘটলে কারো যুবলীগের ঠাঁই হবে না।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক দুলাল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। বুধবার (৫ আগস্ট) রাত ১১টা ২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান বলে আইন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে গত ২৭ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক দুলাল। এরপর সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি জহিরুল হক আইন ও বিচার বিভাগের সচিব হিসেবে নিয়োগ পান। চাকরির মেয়াদ শেষ হলে ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট তাকে দুই বছরের জন্য সচিব হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে অবসরোত্তর ছুটি বাতিল করে ওই পদে নিয়োগ দেওয়া হয় তাকে। এরপর দুই বছর চুক্তিভিত্তিক দায়িত্ব পালন শেষ করে ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট তিনি পুরোপুরি অবসরে চলে যান।
আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক ১৯৫৮ সালের ৮ আগস্ট সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার দুগালি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মৃত ফজলুল হক ও মা শামসুন নাহার। ১৯৭৫ সালে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড থেকে এসএসসি ও একই বোর্ড থেকে ১৯৭৭ সালে এইচএসসি পাস করেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে তিনি এলএলবি (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। পৃথক শোক বার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন তারা।
বৈরুত বন্দরে বিস্ফোরণের ঘটনার পর রাজনৈতিক নেতারা দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি করেছেন। একই সঙ্গে তারা এর জন্য বন্দরের কর্মকর্তাদের দিকে অভিযোগের তীর নিক্ষেপ করেছেন। তবে কাস্টমস কর্মকর্তারা আঙ্গুল তুলেছেন রাজনৈতিক নেতাদের দিকে। তাদের দাবি, বন্দর থেকে বিপজ্জনক অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সরিয়ে নিতে তারা বারবার সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু সরকারের কানে সেই সতর্কবার্তা যায়নি।
বন্দরের ১২ নম্বর ওয়্যারহাউজে খোলামেলা ফেলে রাখা হয়েছিল এই রাসায়নিক। যার পরিণতিতে ধ্বংসপ্রায় রাজধানী। প্রাণ গেছে শতাধিক মানুষের।
২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে বাতুমি থেকে রাসায়নিকবাহী একটি জাহাজ আটক করে লেবানন কর্তৃপক্ষ। রাশিয়ার ব্যবসায়ী ইগর গ্রেচুশকিন দুই হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জর্জিয়া থেকে মোজাম্বিকে পাঠাচ্ছিলেন জাহাজটিতে করে ।
মস্কোর রেন টিভি জানিয়েছে, গ্রেচুশকিনের জাহাজটি আটক করা হয়েছিল এবং রপ্তানি সংক্রান্ত কাগজপত্র যথাযথ পাওয়া যায়নি।
লেবানন কর্তৃপক্ষ রাসায়নিকের নিরাপত্তার জন্য নাবিকদের জাহাজে থাকতে বাধ্য করে। পরে অনশন ধর্মঘট শুরু করলে তাদেরকে জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
নাবিকরা ওই সময় জানায়, মোটরবাইক ভক্ত গ্রেচুশকিন দেউলিয়া হয়ে গেছেন এবং তিনি জাহাজটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় ফেলে গেছেন। এরপর জাহাজের অধিকাংশ কনটেইনার বন্দরের ১২ নম্বর ওয়্যারহাউজে রাখা হয়।
বৈরুতের এই বিস্ফোরণের ঘটনায় কর্মকর্তাদের পাশাপাশি গ্রেচুশকিনকে বিচারের কাঠগড়ায় লেবানন কর্তৃপক্ষ দাঁড় করাতে পারে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।
পদ্মা নদীতে চামড়া ফেলার ঘটনা তদন্তে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
রাজশাহী প্রতিনিধি
বিক্রি করতে না পেরে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে কোরবানির চামড়া ফেলে দেয়ার ঘটনা তদন্ত করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ঈদের পর দিন সাখাওয়াত হোসেন নামে এক মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী নগরীর বুলনপুর এলাকায় পদ্মা নদীতে এক ভ্যান ছাগলের চামড়া ফেলে দেন। সেই ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নজরে আসলে রাজশাহী জেলা প্রশাসনকে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
রোববার সকালেই নদীতে চামড়া ফেলে দেয়ার ছবি ও ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে ইন্টারনেটে। বিষয়টি ওই দিনই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নজরে আসে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিষয়টি তদন্তের জন্য সোমবারই রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হককে দায়িত্ব দেয়া হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি টিমকে সঙ্গে নিয়ে বিষয়টির সরেজমিন তদন্ত করেন। পরে সেদিনই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শরিফুল হক বলেন, যিনি চামড়া নদীতে ফেলেছেন তিনি রাজশাহীর একজন মৌসুমি ব্যবসায়ী। চামড়া কেনাবেচা কিংবা সংরক্ষণে তার অভিজ্ঞতা নেই। তিনি ছাগলের চামড়া কেনার পর নাটোর ও রাজশাহীতে বিক্রির চেষ্টা করেন। কিন্তু বিক্রি করতে পারেননি, সংরক্ষণ করতেও জানেননি। তাই চামড়ায় পচন ধরে। এ কারণে তিনি নদীতে ফেলে দেন।
তিনি আরও জানান, তার কাছে মনে হয়েছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চামড়া নদীতে ফেলা হয়েছে। সে কারণে ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি চামড়া বিক্রি করতে না পারলে আমাদের জানাতে পারতেন অথবা মাটিতে পুঁতে ফেলতে পারতেন। তিনি নদীতে চামড়া ফেলে পরিবেশের দূষণ করেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে বলা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহীর উপপরিচালক মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, পরিবেশ আইন অনুযায়ী, কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে দূষণ আসলেই হয়েছে কি না সেটা আগে দেখতে হবে। সে জন্য নদীর যে স্থানে চামড়া ফেলা হয়েছে সেখান থেকে তিন বোতল পানি সংগ্রহ করা হয়েছে। সেই পানি পরীক্ষার জন্য বুধবার বগুড়ার ল্যাবে পাঠানো হবে।
নদীর স্রোতে চামড়া ফেলার দুই দিন পর সেখানকার পানিতে দূষণের মাত্রা বোঝা যাবে কি না জানতে চাইলে মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, সেটা পরীক্ষার পরই বলা যাবে। এটা আমাদের প্রক্রিয়া। আমরা আইন অনুযায়ী পানি পরীক্ষা করছি। পানি পরীক্ষার পর যে প্রতিবেদন পাওয়া যাবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে টানা পাঁচদিন বন্ধের পর আবারও দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু হয়েছে। হিলি পানামা পোর্ট লিংকের সহকারী ব্যবস্থাপক অশিক কুমার শার্নাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দিনাজপুর প্রতিনিধি
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে টানা পাঁচদিন বন্ধের পর আবারও দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু হয়েছে। হিলি পানামা পোর্ট লিংকের সহকারী ব্যবস্থাপক অশিক কুমার শার্নাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিল। পাঁচদিন বন্ধের পর আবারও মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকাল থেকে যথারীতি নিয়মে বন্দরের আমদানি-রপ্তানির সব কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ভারতীয় মালবাহী ট্রাকগুলো বন্দরে প্রবেশ করছে এবং আনলোড হয়ে দেশি ট্রাকগুলো লোড হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেড়ে যাওয়া শুরু করেছে।