কোনো কাজকর্ম না করায় প্রতিনিয়ত তাচ্ছিল্যের সঙ্গে স্বামী আব্দুল জব্বারকে মারধর করতেন গৃহবধূ স্মৃতি খাতুন (২৭)। পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডের একটি বেভারেজ কোম্পানিতে কাজ করে সংসার চালাতেন স্মৃতি। পারিবারিক অভাব-অনটনসহ নানা কারণে স্বামী জব্বারকে কঠোর ভৎর্সনা করতেন তিনি। স্ত্রী এই ভৎর্সনা জব্বারকে মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্থ করে তুলেছিলো। নিত্য এসব যন্ত্রণা থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়ার জন্য খাবার স্যালাইনে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অচেতনের পর শ্বাসরোধ করে স্ত্রীকে হত্যা করেন স্বামী জব্বার।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস বিফ্রিংয়ে লালপুর উপজেলার চাঞ্চল্যকর গৃহবধু স্মৃতি খাতুনের হত্যারহস্য উন্মোচনকালে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা।
গত ২১ জুলাই অভিযান চালিয়ে লালপুর উপজেলার ভাদুর বটতলা এলাকা থেকে ঘাতক স্বামী আব্দুল জব্বারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই ঘটনায় আব্দুল জব্বার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আব্দুল জব্বার লালপুর উপজেলার মোহরকয়া গ্রামের ইসাহাক প্রামানিক ওরফে ইমরাজ আলীর ছেলে।
পুলিশ সুপার বলেন, পারিবারিক বিভিন্ন কারণে স্বামী জব্বারের স্ত্রী স্মৃতি খাতুনের কলহ লেগেই থাকতো। কথা ও আচরণে পেরে না ওঠায় প্রায়ই জব্বারকে মারধর করতেন স্মৃতি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্মৃতিকে হত্যার পরিকল্পনা করেন জব্বার। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৬ জুলাই রাতে স্ত্রী স্মৃতি খাতুন অসুস্থবোধ করলে তাকে স্যালাইন পানির সঙ্গে ১০টি ঘুমের বড়ি গুঁড়া করে খাওয়ান জব্বার। কয়েকঘণ্টা পর স্মৃতি পুরোপুরি অচেতন হলে বালিশচাপা দিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। হত্যার পর মরদেহ বাড়ির পাশে পুকুরে ফেলে দেন তিনি। পরদিন দুপুরে ওই পুকুর থেকে স্মৃতির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওইদিন স্মৃতির পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়ের করা হলে গত ২১ জুলাই অভিযান চালিয়ে লালপুর উপজেলার ভাদুর বটতলা এলাকা থেকে আব্দুল জব্বারকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
‘পদ্মার চরের মধ্যে এমন সুন্দর একখান স্কুলঘর বানাইছিল, এক্কেবারে দেখার মতন। নদী ভাঙতে ভাঙতে কাছে চইলা আইলে গত দুই-তিন বছর ধইরা সারা শিবচর থোন মানুষ আসত দেখতে। স্কুলের সামনে খাড়াইয়া (দাঁড়িয়ে) ছবি তুলত। কিন্তু আইজ সব শ্যাষ হইয়া গেল। পদ্মার পেটে চইলা গেল। আমরা খালি চাইয়া চাইয়া দ্যাকলাম। আহারে, খুব কষ্ট লাগতাছে।’ এভাবেই বর্ণনা দিচ্ছিলেন পদ্মাপারের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব আসমত আলী। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিলীন হয়ে যায় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বন্দরখোলা ইউনিয়নের নুরুদ্দিন মাদবরকান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ভবনটি।
অন্যদিকে চাঁদপুরের রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের নবনির্মিত তিনতলা ওমর আলী স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টারটিও অবশেষে নদীগর্ভে চলে গেছে। বৃহস্পতিবার ভোরে পানির তীব্র স্রোতে এটি দেবে যায়। প্রতিবছর প্রমত্তা পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েন এ ইউনিয়নের বাসিন্দারা। ভিটেবাড়ি হারিয়ে এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে তাদের দিন কাটছে।
জানা গেছে, পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মাদারীপুরের শিবচরের সাত ইউনিয়নে নদীভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন উপজেলার বন্দরখোলা, কাঁঠালবাড়ি ও চরজানাজাতের নদীতীরের বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্দরখোলা ইউনিয়নের এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ভবনটি পদ্মায় চলে যায়। বুধবার গভীর রাত থেকে স্কুলটির ভাঙন শুরু হয়। এ ছাড়া ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে বন্দরখোলা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। বন্দরখোলা ইউনিয়ন পরিষদ ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ইতোমধ্যেই শতাধিক পরিবার গবাদিপশু, মালামাল অন্যত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে আড়িয়াল খাঁ তীরবর্তী সন্ন্যাসীরচর, শিরুয়াইল, নিলখী ও বহেরাতলা দক্ষিণেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত নদীতে বিলীন হয়েছে সাড়ে চার শতাধিক ঘরবাড়ি। এসব এলাকায় ২১টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৩ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
বিলীন হওয়া স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মো. আফজাল হোসেন বলেন, এটি শিবচরের বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল। এ চরকে স্কুল, বিদ্যুৎ, পাকা সড়কসহ আধুনিক সুবিধা দিয়ে সাজানো হয়। গত তিন বছর চিফ হুইপ স্কুলসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোকে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু এবার বন্যা মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় স্কুলটি আর রাখা গেল না। দৃষ্টিনন্দন স্কুল ভবনটি এখন শুধুই স্মৃতি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, চরের স্কুলটিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে। কিন্তু ২-৩ বছর স্কুলটি রক্ষা করা গেলেও এ বছর আর সম্ভব হলো না। জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে অন্য স্থাপনা রক্ষার চেষ্টা চলছে।
এদিকে গত এক সপ্তাহে চাঁদপুরের রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে বাদ পড়েনি ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ ছোট-বড় বাজার। গত ১৭ জুলাই পদ্মার গ্রাসের মুখে পড়ে তিনতলা রাজরাজেশ্বর ওমর আলী হাই স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টারটি। এক সপ্তাহ পর বৃহস্পতিবার এটি পুরোপুরি নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
রাজরাজেশ্বর ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সফিউল্লাহ সরকার বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে পানির স্রোতে তিন তলা বিশিষ্ট ভবনটি পানিতে ডুবে যায়।
তিনি জানান, গত রোববার থেকে বিদ্যালয় ভবনটি নদীর মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকলেও বৃহস্পতিবার সকালে ভবনটি নদীতে তলিয়ে যায়। ভবন হারিয়ে বিদ্যালয়ের ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর লেখাপড়া হুমকির মধ্যে পড়েছে। আমরা চাই অচিরেই এই চরাঞ্চলের ছেলে-মেয়েদের জন্য একটি ভাসমান বিদ্যালয় স্থাপন করা হোক।
রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হজরত আলী জানান, এই ভবনটির সাইড সিলেকশনের সময় নদী এখান থেকে ৪/৫ কিলোমিটার দূরে ছিল। গত দুই মাস আগে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন তলা বিশিষ্ট বিদ্যালয় ভবন কাম আশ্রয় কেন্দ্রটি গত বছর জানুয়ারি মাসে নির্মাণকাজ শুরু হয়। এর আগে বিদ্যালয়টি ১১ বার নদী ভাঙনের শিকার হয়।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বাবুল আখতার বলেন, রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নটি চারপাশে পদ্মা-মেঘনা দ্বারা বেষ্টিত। বর্তমানে পদ্মা-মেঘনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি বৃদ্ধি ও প্রচণ্ড স্রোতে নবনির্মিত ভবনটি পানিতে তলিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ভবনটি নির্মাণের ক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো ধরনের পরামর্শ নেওয়া হয়েছিল কিনা, তা আমার জানা নেই। জেলার ইব্রাহিমপুর, হানারচর, রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
করোনায় সুস্থ না হওয়া রোগীর সংখ্যায় অষ্টম বাংলাদেশ
জাতীয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
মহামারি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত সুস্থ না হওয়া রোগীর সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বব্যাপী বর্তমানে অষ্টম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এ মুহূর্তে দেশে শনাক্তকৃত করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ না হওয়া রোগীর সংখ্যা ৯৪ হাজারের বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত দেশে নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে মোট ২ লাখ ১৬ হাজার ১১০ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ২১০ জন। অন্যদিকে এ মুহূর্তে দেশে এখনো সুস্থ না হওয়া রোগী রয়েছেন ৯৪ হাজার ৯৯ জন।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সুস্থ না হওয়া রোগীর এ সংখ্যা নিয়ে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন অষ্টম। তালিকার শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নাম। দেশটিতে এখনো সুস্থ না হওয়া রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ ১২ হাজার ৩০১। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। অন্যদিকে এ তালিকায় এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে শুধু ভারত। সুস্থ না হওয়া রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় দেশটির অবস্থান এখন তৃতীয়। প্রতিবেশী দেশটিতে বর্তমানে সুস্থ না হওয়া রোগীর সংখ্যা ৪ লাখ ২৯ হাজার ৪৯। এছাড়া দেশটিতে সংক্রমণের হার প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। সুস্থ না হওয়া রোগীর তালিকায় শীর্ষস্থানে থাকা অন্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, কলম্বিয়া, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা ইত্যাদি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে এখন পর্যন্ত সুস্থ না হওয়া রোগীদের মধ্যে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর সাধারণ শয্যায় চিকিৎসা নিচ্ছে ৪ হাজার ২৪৮ জন। আইসিইউতে ভর্তি আছে ৩০৩ জন। বাকিরা বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরো ২ হাজার ৮৫৬ জন করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নিয়মিত এক অনলাইন বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, এ সময় দেশে নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিতদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে আরো ৫০ জনের। তাদের মধ্যে ৪১ জন পুরুষ ও নয়জন নারী। এ নিয়ে দেশে করোনায় মৃতের নিশ্চিতকৃত সংখ্যা দাঁড়ালো ২ হাজার ৮০১-এ।
অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা আরো জানান, এ ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১২ হাজার ৯২টি। পরীক্ষা করা হয়েছে ১২ হাজার ৩৯৮টি। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়াল ১০ লাখ ৭৯ হাজার ৭-এ। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। এ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সুস্থ হয়েছে আরো ২ হাজার ৬ জন। এ নিয়ে দেশে সংক্রমণ নিশ্চিতের পর সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১ লাখ ১৯ হাজার ২০৮-এ। মোট শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৫ দশমিক ১৬ শতাংশ। একই সঙ্গে মোট শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৩০ শতাংশে।
লকডাউনে স্বামীর সঙ্গ না পাওয়ায় মেডিকেল ছাত্রীর আত্মহত্যা
হোস্টেলে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ডেন্টাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী (২৬)। মানসী মণ্ডল নামের ওই ছাত্রীর ঘরের ভেতর থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে হোস্টেলে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ডেন্টাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী (২৬)। মানসী মণ্ডল নামের ওই ছাত্রীর ঘরের ভেতর থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেই সুইসাইড নোটে লেখা ছিল, জীবনের প্রতি আসক্তি হারিয়ে গিয়েছিল। তার স্বামী দূরে বেঙালুরু শহরে থাকেন। মার্চ থেকে তাদের দেখা হয়নি। বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) দুপুর সোয়া ১টার দিকে বন্ধ ঘরের দরজা ভেঙে মানসী মণ্ডলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ভারতের সংবাদমাধ্যম জি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, মানসিক অবসাদে ভোগার কথা বন্ধু ও রুমমেটদের একাধিকবার বলেছিলেন মানসী।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে সোয়া ৯টার দিকে বন্ধুদের ফোন করেন মানসী। বন্ধুদের জানান, তিনি এখনই কলেজে যাচ্ছেন না, কয়েকটা ওষুধ খেয়ে তারপর যাবেন। কিন্তু তারপর আর তাকে কলেজে আসতে না দেখে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়।
হোস্টেলের ঘরে খোঁজ করতে এসে ঘরের দরজা খুলতে পারেননি লেডিস হোস্টেলের সুপার। বিষয়টি তিনি তখনই কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানান। সেইসময় এই ডেন্টাল কলেজকে করোনা হাসপাতাল হিসেবে তৈরির জন্য বৈঠক চলছিল।
সুপারের কাছ থেকে খবর পেয়েই বৈঠক ছেড়ে সকলে ছোটেন লেডিস হোস্টেলে। খবর দেওয়া হয় স্থানীয় থানায়। পুলিশ এসে ডাকাডাকিতে সাড়া না মিললে দরজা ভাঙা হয়। এ সময় মানসী মণ্ডলের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় পুলিশ।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, পুরুলিয়ার বাসিন্দা মানসী মণ্ডল নর্থ বেঙ্গল ডেন্টাল কলেজের ছাত্রী ছিলেন। পরে তিনি ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারির জন্য স্নাতকোত্তর কোর্স করতে আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজে সুযোগ পান। এখানেই পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি (পিজিটি) হিসেবে দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছিলেন তিনি।
শুটিংয়ে টাকা না দিয়ে মারধর করার অভিযোগে আশরাফুল ইসলাম আলম ওরফে হিরো আলমের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জুনিয়র আর্টিস্ট নয়ন মণ্ডল ওরফে জুনিয়র মিশা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
বাদীর জবানবন্দি গ্রহণের পর তেজগাঁও থানা পুলিশকে মামলা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার মেট্রোপলিট ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুর রহমান।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. মকিম মণ্ডল বলেন, মারধরসহ কয়েকটি অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩২৩/৩২৫/৩৭৯ ও ৫০৬ ধারায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। আদালত তেজগাঁও থানা পুলিশকে আগামী ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
নয়ন মণ্ডল ওরফে জুনিয়র মিশা বলেন, “আমি হিরো আলমের সঙ্গে ‘সাহসী হিরো আলম’ ছবিতে দ্বিতীয় খলনায়ক হিসেবে অভিনয়ের জন্য ১৫ হাজার টাকায় চুক্তি করি। চুক্তি অনুযায়ী, গাজীপুরের মনপুরা শুটিং স্পটে অভিনয় করতে যাই। সেখানে কিছুদিন অভিনয় করি। এর মধ্যে ঢাকায় আসার সময় হিরো আলম আমার হাতে ৫০০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলেন, বাকি টাকা পরে দেব। আমি বাসায় এসে কিছুদিন পর তার মোবাইলে ফোন দেই। তিনি ফোনে আমাকে বলেন, কিসের টাকা পাবি তুই। তুই কোনো টাকা পাবি না।”
নয়ন মণ্ডল আরো বলেন, ‘এরপর হিরো আলম আমার ফোন ধরত না। গাজীপুরে ছবির শুটিংস্থলে টাকা চাইলে হিরো আলম আমাকে শুটিংয়ের দা দিয়ে আঘাত করে, কিল-ঘুষি মারে। আমি সেখান থেকে চলে আসি। এরপর ১৯ জুন এফডিসিতে মানববন্ধনে অংশ নিতে যাই। হিরো আলম আমাকে সেখানে মারধর করেন। হিরো আলমের লোকজনের ভয়ে আমি জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছি। তাই আমি আদালতে মামলাটি করি।’
‘বাহ! সমুদ্রের ঢেউ দেখছি ঢাকায় বসে, পয়সা খরচ করে যেতে হবে না কক্সবাজার’, ‘বিজয়নগর নদীর পানি বিপদসীমার দুই ফুট উপর দিয়ে বইছে’, ‘পৃথিবীতে এই প্রথম দেখা গেল দ্বিতল নদী’, ‘টাঙ্গুয়ার হাওর দেখতে যাব কেন, কাছেই মিরপুর হাওর আছে না? - মাঝারি মাত্রার বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়া ঢাকার নানা এলাকা আর মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভারের ছবি এবং ভিডিও পোস্ট করে তার সাথে নেটিজেনরা এই ধরনের মন্তব্য জুড়ে দিয়ে সয়লাব করে দিচ্ছেন ফেইসবুক।
টিকে থাকার ক্ষমতা মানুষকে এতদূর নিয়ে এসেছে। মানুষ প্রায় সব পরিস্থিতির সাথে নিজেকে অভিযোজিত করে ফেলতে পারে। সে কারণেই বাংলাদেশের মতো একটা দেশ যেখানে সবকিছু ভেঙে পড়েছে এমন একটা দেশেও মানুষ বেঁচে থাকে। আমরা এখন আমাদের যাপিত জীবনের যাবতীয় বীভৎসতা নিয়ে ট্রোল করি, মজা করি। এভাবেই আমরা বেঁচে থাকা শিখছি এই দেশে।
সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা এবং দুর্নীতির কারণে যখন করোনার মতো এক ভয়াবহ ব্যাধির মহামারিতে আমাদের জীবন সংশয়ে, তখন বৃষ্টিতে একটা তলিয়ে যাওয়া শহরের মাঝে দাঁড়িয়ে আমাদের মজা করারই কথা হয়তো। মানুষ ধরে নিয়েছে সবকিছু থেকে ক্রমাগত আরও খারাপের দিকে যাবে, তাই মেনে নেয়ার জন্য যা যা করা দরকার তাই করছে সবাই। বেঁচে থাকা সুন্দর, হোক সেটা নিকৃষ্টতম পরিস্থিতিতেও। পরবর্তী আলোচনায় যাবার আগে ওয়াসাকে নিয়ে একটা গবেষণা প্রতিবেদনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ দেখে নেয়া যাক।
গত বছর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ‘ঢাকা ওয়াসা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ঢাকা ওয়াসার পানির নিম্নমানের কারণে ৯১ শতাংশ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে পান করেন। গৃহস্থালি পর্যায়ে পানি ফুটিয়ে পানের উপযোগী করতে প্রতি বছর আনুমানিক ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাসের অপচয় হয়।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায় বস্তি এলাকায় ৭১.৯ শতাংশ, আবাসিক এলাকায় ৪৫.৮ শতাংশ, বাণিজ্যিক এলাকায় ৩৪.৯ শতাংশ ও শিল্প এলাকায় ১৯ শতাংশ চাহিদা অনুযায়ী পানি পান না। এছাড়া সার্বিক সেবাগ্রহীতাদের ৪৪.৮ শতাংশ চাহিদা অনুযায়ী পানি পান না।
ওয়াসার অনিয়ম ও দুর্নীতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, সেবাগ্রহীতাদের ৮৬.২ ভাগ ওয়াসার কর্মচারী এবং ১৫.৮ ভাগ দালালকে ঘুষ দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে পানির সংযোগ গ্রহণে ২০০ থেকে ৩০০০০ টাকা, পয়ঃলাইনের প্রতিবন্ধকতা অপসারণে ৩০০ থেকে ৪৫০০ টাকা, গাড়িতে করে জরুরি পানি সরবরাহ করার ক্ষেত্রে ২০০ থেকে ১৫০০ টাকা, মিটার ক্রয়/পরিবর্তন করতে ১০০০ থেকে ১৫০০০ টাকা, মিটার রিডিং ও বিল সংক্রান্ত বিষয়ে ৫০ থেকে ৩০০০ টাকা এবং গভীর নলকূপ স্থাপনে এক লাখ থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হয়।
যাচ্ছেতাই মানের পানি দেয়ার পরও গত ১২ বছরে অন্তত ১৩ বার পানির দাম বেড়েছে। ২০০৯ সালে যে পানির দাম ছিল পৌনে ৬ টাকা, এখন তা ১৪ টাকা ৪৬ পয়সা। করোনার অভিঘাতে যখন অসংখ্য মানুষ কাজ হারিয়েছে, অসংখ্য মানুষ বেতন পাচ্ছে না তখন ওয়াসা ২৫ শতাংশ পানির দাম বাড়িয়েছে। ওদিকে অন্য কোনো নিরপেক্ষ সংস্থার হিসাবের কথা বাদই দেই, ওয়াসার হিসাবেই ঢাকা শহরের ৮০ শতাংশ এলাকা এখনও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার বাইরে।
আসা যাক ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার কথায়। কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে যখন ঢাকা শহর সমুদ্রে পরিণত হয়, তখন ওয়াসা থেকে জানানো হয় ঢাকার আশপাশে নদীতে পানি বেশি বলে পানি নিষ্কাশন দেরিতে হচ্ছে।
ডিএসসিসি মেয়র ২২ জুলাই সকালে এক ভার্চুয়াল সভায় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছিলেন, জলাবদ্ধতা নিয়ে সেবা সংস্থাগুলো যে তথ্য দিচ্ছে, তা সঠিক নয়। এরপর ঢাকার দুই মেয়র স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে নিয়ে সরেজমিনে পরিদর্শনে যান বিভিন্ন এলাকা। সেখানে গিয়ে মন্ত্রীকে তারা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন পানি নিষ্কাশনের পথে আবর্জনা ভরা, অনেকগুলো পথ বন্ধ করে রাখা হয়েছে ইত্যাদি।
দক্ষিণের মেয়র যথার্থভাবেই বলেন, ‘ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব ওয়াসা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)। কিন্তু তারা এটি করতে ব্যর্থ হয়েছে।’ এরপর দুই মেয়র ওয়াসার হাতে থাকা খালগুলোর সংস্কারের এখতিয়ার সিটি কর্পোরেশনের অধীনে চান, কারণ উত্তরের মেয়র এর ভাষায়, ‘রাস্তায় পানি জমলে গালি আমাদের শুনতে হয়’।
আমাদেরও বলার কথা আছে অনেক। বাদ দেই সেগুলো। সরকারি দলের দুই মেয়র যখন ওয়াসাকে আপাদমস্তক ব্যর্থ বলছেন, তখন কী বলার থাকে আর?
তথাকথিত উন্নয়নের বয়ান তৈরি করার জন্য সরকার ক্ষমতায় থাকার ধারাবাহিকতার কথা বলে সব সময়। তারা বলে এক নাগাড়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় না থাকলে সব পরিকল্পনা ঠিকঠাকমতো বাস্তবায়ন করা যায় না। একেবারেই ভুল যুক্তি, কিন্তু এই তর্কে ঢুকছি না এখন। আলোচনার সুবিধার্থে ধরে নেই এটা সঠিক যুক্তি।
এই দেশে বর্তমান সরকার যতদিন ক্ষমতায় আছে, ওয়াসা এমডি ঠিক ততদিন তার পদে আছেন। এক দশকের বেশি সময় তিনি এবং তার সরকার ক্ষমতায় আছেন, কিন্তু এই ধারাবাহিকতা জনগণের কল্যাণ কোনো রকম প্রভাব রাখেনি। অবশ্য তিনি যে পদাসীন হচ্ছেন ‘ভিন্ন’ কোনো উদ্দেশ্যে সেটা তার নিয়োগ প্রক্রিয়া দেখেই অনেকটা বোঝা যাচ্ছিল।
এমডি নিয়োগের জন্য ওয়াসা বোর্ড ২০০৯ সালে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনে অথবা সিনিয়র পর্যায়ে সাধারণ প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ২০ বছরের আবশ্যিক অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। ওই সময় এই পদের জন্য তাকসিম এ খানের জমা দেয়া জীবনবৃত্তান্ত অনুযায়ী, পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনে তার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। হ্যাঁ, ইন্টারভিউর ডাক পাবারও যোগ্যতা নেই এমন একজন এমডি পদের জন্য নির্বাচিত হলেন।
তাকসিম এ খান দায়িত্ব নেবার পর থেকেই ওয়াসার অধোগতি শুরু হয়েছে। সেবার মান কমেছে, ওয়াসা দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু এটা বাংলাদেশ, তাই অপসারিত হবার পরিবর্তে পুরষ্কৃত হয়েছেন তিনি, পর পর পাঁচবার ওয়াসার এমডি নিযুক্ত হয়েছেন। কোন ক্ষমতাবলে এটা হয়, এটা কি আমাদের অজানা?
সরকারি দল থেকে ‘নির্বাচিত’ মেয়ররা এখন যখন খুব শক্তভাবে তার বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন, তার ব্যর্থতার কথা বলছেন, হয়তো এই বছরের অক্টোবরে তার মেয়াদ শেষ হবার পর তাকে আর পুনর্নিয়োগ করা হবে না। ওয়াসা কি সুন্দরভাবে চলতে শুরু করবে এরপর? কিছুদিন আগে প্রচন্ড সমালোচনার মুখে যেমন সরিয়ে দেয়া হলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কি ঠিক হতে শুরু করবে তাতে?
একজন তাকসিম এ খান কে আমরা দেখতে পাই, তাই তাকে নির্দিষ্ট করে হয়তো আমরা কথা বলতে পারি। কিন্তু লুটপাট, অদক্ষতা অযোগ্যতা সবকিছু মিলিয়ে একটা শহরকে নরকে পরিণত করার পরও ওয়াসার দায়িত্বে দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় তাকে যারা রাখে তারা আরেকজন তাকসিমকেই বসাবেন এখানে। দুই কোটি মানুষের জীবনকে কিছুটা স্বাচ্ছন্দে রাখার চাইতে অন্য সব হিসেব-নিকেশ তাদের কাছে অনেক বেশি বড়।
একজনকে সরিয়ে আরেকজনকে বসানোর মাধ্যমে বরং সরকার এক ধরণের ‘আইওয়াশ’ দিতে পারে- তারা মানুষের কল্যাণে ব্যবস্থা নিচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকেই এখনকার ওয়াসা এমডির পদত্যাগ বা অপসারণ চাইলেও তার ‘শুভাকাঙ্খী' হয়ে আমি চাই তিনি পদে থাকুন আমৃত্যু। আমি জানি জনগণের প্রকৃত কল্যাণের সদিচ্ছা ছাড়া সমালোচনার কারণে তাকে সরানো আর না সরানোর মধ্যে বিন্দুমাত্র কোনো পার্থক্য নেই।
সোনার দামে নতুন রেকর্ড হচ্ছে একের পর এক। বিশ্ববাজারে সোনার দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় দেশের বাজারেও নতুন করে এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারে শুক্রবার থেকে সোনার দাম বাড়ছে ভরিতে ২ হাজার ৯১৬ টাকা। এতে ভালো মানের এক ভরি স্বর্ণের দাম দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৭৩ হাজার টাকা। দেশের ইতিহাসে স্বর্ণের এটিই সর্বোচ্চ দাম। বৃহস্পতিবার স্বর্ণের নতুর দাম নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
এক মাসের ব্যবধানে দেশের বাজারে আবারও বাড়লো সোনার দাম। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই অলংকার তৈরির এ ধাতুর দাম এখন আকাশচুম্বী। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারেও বেড়েছে বলে জানিয়েছে বাজুস।
সংগঠনের সভাপতি দিলিপ কুমার আগারওয়ালা বলেন, বিশ্ববাজারে গত এক মাসে ১৩০ ডলার দাম বেড়েছে। দুই মাসে বেড়েছে ২০০ ডলার। গত ছয় মাসে সোনার দাম বেড়েছে মোট ৪২৫ ডলার। এ কারণে দেশের বাজারেও এর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, গত তিনদিনে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বেড়েছে ১০০ ডলার। করোনাভাইরাসের জন্য ব্যবসা স্থবির। অনেকে নিরাপদ বিনিয়োগের জায়গা পাচ্ছেন না। এই আস্থাহীনতার কারণেই সোনাকে একমাত্র ভরসা মনে করে কিনছেন কেউ কেউ। চাহিদা বাড়ার কারণেই দাম বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, এখন আমদানির সুযোগ দেওয়া হলেও পুরোপুরি সুবিধা পেতে আরও সময় লাগবে। সবাই যখন আমদানি করবে তখন আন্তর্জাতিক বাজার দরেই দেশের বাজারেও সোনা বেচাকেনা হবে।
বাজুস নির্ধারিত নতুন মূল্য তালিকায় দেখা গেছে, সবচেয়ে ভাল মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনা (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) শুক্রবার থেকে বিক্রি হবে ৭২ হাজার ৭৮৩ টাকা দরে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এর দাম ছিল ৬৯ হাজার ৮৬৭ টাকা। ২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা বিক্রি হবে ৬৯ হাজার ৬৩৪ টাকা দরে, যা আগে ছিল ৬৬ হাজার ৭১৮ টাকা। ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনা বিক্রি হবে ৬০ হাজার ৮৮৬ টাকা দরে, যা আগে ছিল ৫৭ হাজার ৯৭০ টাকা। আর সনাতনি সোনা প্রতি ভরি বিক্রি হবে ৫০ হাজার ৫৬৩ টাকা দরে, যা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ছিল ৪৭ হাজার ৫৮৯ টাকা।
ছুটির দিনে মিরাজ একটু দেরি করেই হাঁটতে যায়। সকালের এই হাঁটাহাঁটিটা শরীরের সাথে সাথে তার মনটাকেও চনমনে রাখে সারাদিন। ক'দিন যাবত ঘুম ভেঙেই দেখতে পাচ্ছে আকাশের মুখ ভার, ছেঁড়া ছেঁড়া বৃষ্টি। শ্রাবণের বৃষ্টি বোধহয় এমনই বোঝা ভার। তার স্ত্রী নিরুপমার মতন।
নিরুপমার কথা মনে হতেই মিরাজের একটু অপরাধ বোধ হয়। বেচারা নিরুপমা সংসার সামলাতে যেয়ে নিজের জন্য সময় বের ক'রে উঠতে পারে না। আর কেমন যেন নিজের প্রতি খেয়ালও কম। কেমন মুটিয়ে যাচ্ছে ছিপছিপে শ্যামলা তন্বী সেই মেয়েটা। নাহ, এবার থেকে মাঝে মধ্যে নিরুপমাকে পার্কে হাঁটতে নিয়ে আসবে জোর করেই।
এইসব ভাবতেই বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। মিরাজ দৌড়ে পার্কের গেটের কাছে এক প্রশস্ত ছাউনির নিচে এসে দাঁড়ায়। দেখে আরো অনেকেই এখানে আশ্রয় নিয়েছে। ঝড়ো বাতাসে কেঁপে কেঁপে উঠছে ফুলবতী বোগেন ভেলিয়ার ঝাড়। বেশ শীত লাগছে। ও মাথার পানি ঝেড়ে ফেলে। ঝুম বৃস্টি নামে। মাঠের জমা জল নুড়ি, বালি, ঘাস ভাসিয়ে নিয়ে তিরতির স্রোতে পায়ের কাছে এসে জমছে। মিরাজ পা সরিয়ে একটু পিছনে যায়।
প্রচণ্ড শব্দে বজ্রপাত হলো কোথাও। এক মেয়েলি গলার চিৎকার শুনে মিরাজ তাকায় সেদিকে। দেখে মিরাজের পাশে অল্পবয়সি এক যুগল দাঁড়িয়ে। লম্বা একহারা গড়নের ঝাঁকড়া চুলের ছেলেটা দেয়ালে হেলান দিয়ে আছে। আর ছোটখাটো গড়নের ১৮-২০ বছরের সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ এক তরুণী ছেলেটার বুকে মাথা রেখে আছে। মেয়েটা ওর দু' হাত দিয়ে ছেলেটাকে আঁকড়ে ধ'রে আছে ভয়ে। মেয়েটার চুলে ছেলেটা ধীরে ধীরে আঙুল দিয়ে বিলি কেটে দিচ্ছে । কি মায়াময় অপার্থিব দৃশ্য! বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা শোভন নয়। মিরাজ দূরে গাছের ডালে বসা ভেজা কাক দেখতে থাকে।
ওর মনে পরে যায় নিরুপমার সাথে প্রেমের সেই দিনগুলির কথা। না, চোখে পরার মতন বিশেষ কিছুই ওদের কারোরই ছিল না। তবুও বিশ্ববিদ্যালয়ের দু ব্যাচ জুনিয়র নিরুপমার সাথে মিরাজের প্রেম হয়ে গেল। ওদের প্রথম দেখার দিনটাও ছিল এক ঝুম বৃষ্টি দুপুরে কার্জন হলের বারান্দায়।
আরেকটা দিনের কথাও বেশ মনে আছে। সবে তখন তিন মাস ওদের প্রেমের বয়স। বিশ্ববিদ্যালয় ঈদের ছুটিতে বন্ধ হয়ে গেছে। নিরুপমা পরদিন বাড়ি যাবে। তখনও মোবাইল আসেনি। কতোদিন কথা হবে না, দেখা হবে না। আগের রাতে মিরাজ দীর্ঘ এক চিঠি লিখে ফেলে । সকালে বাসস্ট্যন্ডে বিদায় দিতে যেয়ে নিরুপমার হাতে চিঠিটা দিয়ে আসবে ।
মিরাজ বাসস্ট্যান্ডে যেয়ে দেখে নিরুপমা আগে এসে জানালার ধারের সীটে বসেছে। মিরাজকে দেখে হাত নাড়ে ও। হাত দিয়ে কপালের চুল সরাতে সরাতে ওর দিকে তাকিয়ে নিরুপমা একটু হাসে। এই প্রথম মিরাজ খেয়াল করে হাসলে মেয়েটার গালে টোল পরে।
বাস চলতে শুরু করে দেয়। মিরাজের বুক হুহু করে উঠে। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়। কাক ভেজা হয়ে সেদিন ও বাড়ি ফিরে। চিঠিটা সেদিন আর নিরুপমাকে দেয়া হয়নি। প্যান্টের পকেটে থাকা চিঠিটা ভিজে লিখাগুলি প্রায় ঝাপসা হয়ে গেছে।
সেই প্রায় ২০ বছর আগের কথা। আজ এই রমনা পার্কে অচেনা প্রেমিক জুটি কত কথাই না মনে করিয়ে দিল। মেয়েটির গলা শোনা যায় : - আমি বৃষ্টির স্ট্যাটাস দিয়েছি - ‘এঞ্জয়িং রেইন’ -- আমি তোর আগেই দিয়ে দিয়েছি। ইটস রেইনিং, সো নাইস! দেখ কত লাইক কমেন্ট চলে এসেছে। ছেলেটার গলা।
আকাশ পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। মিরাজ ছাউনি থেকে বের হয়ে বাসার দিকে পা বাড়ায়। নিরুপমা দরজা খুলে দেয়। এক হাতে কপালের চুল সরাতে সরাতে বলে মিরাজকে বলে : -- একেবারে বৃস্টি থামলেই আসতে। ভিজে গেছো তো। আজ তোমার তো আর অফিসে যাবার তাগাদা নেই।
মিরাজ তোয়ালেতে মাথা মুছতে মুছতে বলে - ওখানে আর দাঁড়াতে একদম ভাল লাগছিল না। আচ্ছা নিরু, তোমার কি মনে পরে বৃষ্টির দিনে আমরা ছাতা ভাঁজ করে ইচ্ছে ক’রে দোলাতে দোলাতে রাস্তায় ভিজতাম? লোকজন আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতো।
নিরুপমা হেসে উঠে। রান্নাঘর থেকে খিচুরির ভুরভুর গন্ধ ভেসে আসছে। মিরাজের চোখ খুশিতে চকচক করে উঠে। - নিরু, আমাদের সেই বিখ্যাত বৃষ্টি ভেজা চিঠিটা কোথায়? -- আছে। ওটার তো শুধু সম্বোধনটুকু ছাড়া কিছুই পড়ার উপায় নেই। - নিয়ে আস না প্লিজ -- এই ব'লে মিরাজ ভিতরের ঘরে আসে।
আধবোজা জানালা দিয়ে হালকা বৃষ্টির ছাঁট আসছে। সুরমা রঙ আকাশ। ঘরের মধ্যে ছায়া ছায়া। ‘শ্রাবণের ধারার মতন’ গানটা শুনতে ইচ্ছে করে মিরাজের। ও মোবাইলের ইউ টিউবে গান খোঁজে।
নিরুপমা ঘরে ঢুকে। হাতে সেই বিবর্ণ চিঠিটি। : নাও তোমার সেই চিঠি। তবে আজ একটা কথা বলি। সেদিন তোমায় দিবার জন্য আমিওএকটা চিঠি লিখে নিয়ে গিয়েছিলাম। বাসটা ছেড়ে দিল। তোমায় দিতে ভুলে গেলাম। বাড়ি যেয়ে বাবার ভয়ে চিঠিটা ছিঁড়ে ফেলতে হলো।
মিরাজের জানতে ইচ্ছে করে নিরুর ওই চিঠিতে কি ছিল। আবার মনে হয় না থাক। কিছু চিঠি থাক না পাওয়া থাক, কিছু কথা না পড়াই থাক। কিছু রহস্য থাকুক না! নিরুপমাকে কাছে টানে মিরাজ।
বিছানার এক প্রান্তে গড়াগড়ি যাচ্ছে মিরাজের লিখা ‘ওগো নিরুপমা’ সম্বোধনের সেই বৃষ্টি ধোঁয়া চিঠিটি।
রান্নাঘর থেকে খিচুরির পোড়া গন্ধ ভেসে আসে। বাইরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। ঘরে তখন প্রচণ্ড ঝড়!
‘আচ্ছা আপনি কি আমাকে এখনো মিস করেন?’ প্রশ্নকর্তা নাওশীর আলম সাহেবের প্রাক্তন স্ত্রী। নাম সেজুতি। বিচ্ছেদের নয় বছর পর আজই প্রথম দেখা। দেখা হওয়াটা নিতান্তই দূর্ঘটনা। হবার কোনো কথা ছিল না। সেজুতি টাঙ্গাইল যাচ্ছিল। হঠাৎ করেই ময়মনসিংহ এসে গাড়িটা খারাপ হয়ে গেল। ঠিক হতে ঘণ্টা চারেক সময় লাগবে। সময় কাটানোর জন্য টাউন হলের এদিক কোনো হোটেল রেস্টুরেন্ট খোঁজছিলেন। একটা মোটামুটি মানের রেস্টুরেন্টে ঢুকে দেখলেন নাওশীর আলম সাহেব বেশ আয়েসি ভঙ্গিতে ম্যাগাজিন পড়ছিলেন। ঐ মুহুর্তে নাওশীর আলমের চোখ সেজুতিকে এড়িয়ে যেতে পারে নি। সেজুতি অবশ্য এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে সেজুতি বলে উঠলো, আরে, আপনি? নাওশীর আলম সাহেবকে তখন উচ্ছ্বসিত মনে হয় নি। ইশারাতে বুঝিয়ে দিলেন হ্যাঁ আমি।
কি হল, আপনি কি আমাকে এখনো মিস করেন? নাওশীর আলম হালকা দাঁত বের করে হেসে বললেন, হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন? সেজুতিকে এখন বিব্রত মনে হচ্ছে। এই প্রশ্ন সে কেন করলো? আসলে, আপনি যখন ওয়েটারকে টাকা দিচ্ছিলেন তখন আপনার মানি ব্যাগে মানে আমার ছবি দেখেছি। তাই একটু আগ্রহ করেই প্রশ্নটা করলাম।
সেজুতি ভাবছে ধ্যাঁত শুধু শুধু প্রশ্নটা করলা কেন? মিস করলে যতটানা কষ্ট পেত এখন বলতে গেলে তার থেকে আরো বেশি কষ্ট পাবে। তারপর সারাদিন মানুষটা এটা নিয়েই ভাববে।
- ব্যাপারটা তোমাকে বলি।আসলে বাসায় তোমার স্মৃতি বললে আমার মানি ব্যাগের সাদাকালো তোমার ছবিটাই আছে। অন্যসব গুলো তুমি সেই কালবৈশাখীর রাতেই নিয়ে চলে গেছে। আমাদের মেয়ে এখনো তোমাকে বা এই ছবি দেখেন নি।তোমাকে চেনেও না। ভেবেছি জীবনের কোনো একটা সময়ে মেয়েকে এটা দেখাবো। মেয়ে তো আমাকে দেখেছেই সেই ছোট বেলায়। - দূর্ভাগ্য হল যে তার কোনো স্মৃতিই মনে নেই। বলা যেতে পারে তার মাকে সে এখনো দেখে নি। " সে কি জানে তার মা কোথায়?" - হ্যাঁ জানে।সে জানে তুমি ওপারে।
সেজুতি খানিকটা নিরব হয়ে গেল। কথাটা শুনে মনও খারাপ হয়েছে। তবে কথাটার যুক্তি আছে। ওপারে থাকা মানুষগুলোর কথা মানুষ একদিন দুদিন মনে করে।কিন্তু চোখের আড়ালে থাকা মানুষ গুলোর কথা প্রায়ই মনে হয়। আর ব্যাপারটা যদি এমন হয় তার মা রাতের আঁধারে পেছনের দরজা দিয়ে অন্য কারো হাত ধরে চলে যাওয়া। তাহলে সেই মানুষটার কথা মনে না করা অনেক ভাল।
সেজুতি একটু চাপা হাসি দিয়ে বলল,একদম সঠিক কথা বলেছ। খুব ভাল কথা। এবার নাওশীর সাহেব আর সেজুতির বিচ্ছেদের ব্যাপারটায় আসা যাক। তখন বসন্তকাল। ফুলে ফলে গাছগাছালি ভরে থাকার কথা। কোকিলের কুহু কুহু শব্দ, কৃষ্ণচূড়া ফুলে ভরপুর থাকার কথা। কিন্তু তখন কোনো কোকিল কুহু করে গান করেনি। কৃষ্ণচূড়া গাছে ফুল ফুটে নি। সেই বসন্তে রাতের আকাশে চাঁদ ছিল না।ছিল না এক মুঠো জোছনা। ঠিক এমনি একটি সময়ে বিয়ে হয় তাদের। সেজুতির বয়স সবে ষোল।নিতান্তই অল্পবয়সী মেয়ে। অবশ্য নাওশীর আলমের বয়স তখন ছাব্বিশ সাতাশের মতো হবে। পদার্থবিজ্ঞানের মতো একটা রসকসহীন বিষয়ে পিএইচডি করছিল জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ে। নাওশীরের পরিকল্পনা ছিল একদম পিএইচডির পাঠ চুকিয়ে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে জয়েন করে বিয়ে করবে।
নাওশীরের বাবা ছিলেন ময়মনসিংহের জজকোর্টের একজন বিচারপতি। অর্ডার অর্ডার টাইপ মানুষ।যা বলবে তাই শুনতে হবে। তিনি একবার চিঠি দিয়ে বললেন দ্রুত বাংলাদেশে আসতে। সঙ্গে কমপক্ষে দুমাসের ছুটি নিয়ে। দেশে আসা যাবে কিন্তু দু মাসের ছুটি একটু বেশি যায়। প্রফেসরকে বিয়ে করবে কথা বলে দুমাসের ছুটি নিয়ে দেশে ফিরে। দীর্ঘ ছুটি নিয়ে ব্যাপারটা নাওশীর বুঝতে পেরেছিল।
একদিন সকালে নাওশীর তাদের ময়মনসিংহের বাসার বারান্দায় কফির মগ হাতে দাড়িয়ে আছে। নাওশীরের বাবা গাজী সালাউদ্দীন সাহেবও বারান্দায় আসলেন। তাদের বাসান্দাটা বেশ বড়। তিনি বারান্দাতে রাখা ইজি চেয়ারটাতে বসে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বসলেন। বাবা, আসসালামু আলাইকুম? কখন বারান্দায় আসলে লক্ষ্য করিনি। তিনি গম্ভীর ভঙ্গিতে বললেন, তাতো করবেই না। দিনদিন তোমার খামখেয়ালিপনা ভাব প্রকর হচ্ছে। বিদেশে কিভাবে পিএইচডি করছ জানি না। ভাবছি তোমাকে একটা বিয়ে দিয়ে দিব। কি বল? - আমি কিছু বলি না বাবা। তুমি একটা হাঁদারাম। তোমার কি কোনো পছন্দের মেয়ে আছে? থাকলে বলো? - না বাবা। তোমার মতো হাঁদারাম মার্কা ছেলের সাথে কোন মেয়ে প্রেম করবে? তুমি কি কখনো প্রেমের কবিতা পড়েছ বা লিখ নি। তবে আমার এক বন্ধুর মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে দিব ভাবছি। গাজী সালাউদ্দীন সাহেব কথা থামিয়ে পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটি সাদাকালো ফটোগ্রাফ নাওশীরের দিকে এগিয়ে দিলেন। এ্যাই যে দেখো। পছন্দ না হবার মেয়ে নয়। নাম টা যেনো কি? ভুলে গেছি। মাথায় শুধু আইনের ধারা ঘুরপাক খায়। আচ্ছা যাক গে নাম বড় ব্যাপার না! তোমার পছন্দ হয়েছে কিনা বল? - আপনার পছন্দই আমার পছন্দ। কিসব মেয়েছেলেদের মতো কথা শিখেছ। এগুলো মেয়েদের মুখে মানায়।
সত্যি বলতে নাওশীরের বিয়ে করার কোনো ইচ্ছেই ছিল না। পার্সপোর্ট সাইজের সাদাকালো ফটোগ্রাফের ষোড়শী মেয়েটি আবেগ মেশানো মায়াকারা চোখের চাহনি থাকে পুরোপুরি মুগ্ধ করেছিল। সেই মুহুর্ত নাওশীরের অন্তরে একটি বিচিত্র প্রেম ধ্বনি বেজে উঠেছিল।
ধুমধাম করে বিয়ে হল। পুরো আকাশ আতশবাজির বিস্ফোরণে আলোকিত হচ্ছে। চাচাত খালাত বোনেরা নববধুর পাশে বসে রূপের প্রশংসায় ব্যস্ত। নাওশীর রুমে প্রবেশ করতেই খালাত-চাচাত বোনেরা একরাশি হেসে কিছু দুষ্টুযুক্ত কথা বলে বের হয়ে গেল।
নাওশীরের দরজা লাগাতে বেশ লজ্জা করছে।এই সময়টা মানিয়ে নেয়া বেশ কষ্টকর। ষোড়শী ফটোগ্রাফের সেই মেয়েটা এখন তার সামনেই বসা। ইচ্ছে হচ্ছে তাকে ভালবাসার কথা বলা। একটু আলিঙ্গন করা বা একটা চুমু খাওয়া। এসবের কিছুই হল না। নাওশীর বিছানায় গিয়ে বসল। আচ্ছা, সেজুতি তুমি এসএসসিতে কয়টাতে লেটার মার্ক পেয়েছ? - চারটাতে,গণিত বাংলা, ইতিহাস ও ভুগোলে। নাওশীর আলম মনে মনে ভাবছে বাসর ঘরে কোথায় ভালবাসার কথা বলব তা না বাসরঘরে পড়াশুনার কথা বলা শুরু করেছি।নিজে সারাজীবন বই কলমের সাতে কাটিয়েছে দেখে কি প্রেম ভালবাসা কি তাকে ত্যাগ করেছে। প্রায় সোয়া ঘন্টা ধরে চলা এসব অবাঞ্ছনীয় কথা বার্তা বলার পর সেজুতি বলল, আমার ঘুম পাচ্ছে। আপনি শুয়ে পড়ুন। মুহর্তের মধ্য লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ল সেজুতি। সাথে নাওশীর আলমও শুলো। কিন্তু তার ঘুম পায়নি। এপাশ ওপাশ করে কাটিয়ে দিল রাত্রি।
ছুটি প্রায় শেষের দিকে।সেজুতির ভিসা হয়ে গেছে। তবে নাওশীরের সাথে সেজুতির সম্পর্কটা এখনো সেভাবে হয়ে উঠে।অবশ্য নাওশীর তাকে আয়েশ করে এখনো ভালবাসার কথা বলতে পারছে না। কিন্তু সে বলতে চায়। কেন জানি বলতে গেলে হয়ে উঠে না। কিন্তু আড়ালে আড়ালে সেজুতিকে সে অনেক ভালবাসে তা চিন্তার বাইরে। এসব কি সেজুতি লক্ষ্য করে না? তাকে বেশিভাগ সময়ই নিরব থাকে। একাএকা বারান্দার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে থাকে। একাএকা খেতে বসে এইসব। নাওশীর ভাবে হয়তো কিশোরী বয়সের কারণে এখনো বিয়ের ব্যাপারটা সেভাবে বুঝে উঠতে পারে নি। তবে তার বাবার সঙ্গে বেশ প্রাণবন্তভাবে কথা বলে, রসিকতা করলে হাসে, টেবিলে আয়েশ করে খাবার বেড়ে দেয়। কিন্তু সেজুতি কেন বুঝতে পারছে না তার লুকোনো ছোট ছোট ভালবাসাকে।
সেজুতি জার্মানিতে এসেছে প্রায় ৬ মাস হলো।খুশির খবর যে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পিএইচডির এত চাপ যে বাসায় এসে সেজুতিকে ভালবাসার কথা বলতে ইচ্ছা করে না। সারাদিন সেজুতি বাসায় থাকে। মাঝে মধ্যে গভীর রাতে একা একা চাপা কান্না করে। চিঠি পড়ে পড়ে অনেক সময় কাঁদে। ব্যাপারটা তখনো নাওশীর বুঝে উঠতে পারে নি। এই ছয়মাসে তাকে এই বন শহরটা ঘুরাতে নিয়ে যায়নি। একদিন শুধু কাছের একটা পার্কে ঘুরতে গিয়েছিল। সেদিন সেজুতি অবাক চোখে এই প্রবাসের সৌন্দর্য উপভোগ করছিল।
অন্তঃসত্ত্বার সময় প্রায় শেষেরদিকে। সেজুতি জোরাজুরি করায় তাকে অবশেষে ছুটি নিয়ে নাওশীর তাকে দেশে ফিরলো। তাদের ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়েছে।মেয়ের নাম মায়ের নামের সাথে মিলিয়ে রাখা হল সাজিয়া। দেখতে একদম তার মায়ের মতো হয়েছে।
দাদা গাজী সালাউদ্দীনের দিনভর তার নাতনীকেই নিয়ে আছে। বাবা নাওশীর প্রথম বাচ্চার বাবা। মনে মনে বাবা হওয়ার ব্যাপারটা মেনে নিলেও কাজকর্মে বাচ্চা মেয়েকে আদর করতে পারছে। কেন এমনটা হচ্ছে সেও জানে না।
একমাস পর। রাতে কালবৈশাখী ঝড়ে তাদের বাসার সামনের গাছে প্রচুর আম পড়েছে। একদম ভোরে নাওশীর উঠে দেখে বাসায় সেজুতি নেই। সোফার উপরে একটা কাগজের উপর কলম রাখা।
চিঠিতে লিখা, আপনাকে প্রিয় বলতে পারছি না। কারণ ওরকম কোনো স্মৃতি নেই আপনাকে প্রিয় বলার।আমি চলে যাচ্ছি আমার পুরনো প্রেমিকের কাছে। আমাকে খোঁজার চেষ্টা করবেন না। আমাকে ক্ষমা করো এই রাতের আধারে পেছনের দরজা দিয়ে চল যাওয়ার জন্য। কারণ আমি সকালের আলোতে বাবার সামনে আসতে পারব না। আর সাজিয়াকে আপনি মানুষ করিবেন।
ইতি সেজুতি
নাওশীরের মন চরম ভাবে অবনতি হতে শুরু করল। সাজিয়াকে পালবে কে? একটু পরপর শুধু কান্না করে। অবশেষে তার এক খালা সাজিয়াকে পালতে শুরু করেন। নাওশীর এসব কষ্ট ভুলতে আবার জার্মানিতে চলে আসল। পিএইচডি এর প্রতি কোনো মন নেই। মিডটার্মে ফেল করেছে। একদিন আলমারিতে দরকারি কাগজ খোঁজতে গিয়ে একটা চিঠি চোখে পড়লো।
চিঠিটা সেজুতি প্রেমিকের আবেগ মেশানো ভালবাসার কথা লেখা। তখন নাওশীর আলম বুঝতে পেরেছে অল্পবয়সী মেয়েদের ভালবাসা কতটা তীব্র হয়। তখন এরকম ইঙ্গিত রয়েছে দেশে এসে কোনোভাবে তার প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়া। অল্পবয়সী প্রেমগুলী সত্যিই ভয়ঙ্কর হয়। তাদের যতই ভালবাসার কথা শুনানো যাবে প্রেমিকের প্রতি প্রেমিকার ভালবাসা ততই তীব্র হবে। যেটা সেজুতির প্রেমিক সঠিকভাবেই করতে পেরেছে। নাওশীর বুঝেছে যে অপ্রকাশিত ভালবাসার কোনো সৌন্দর্য নেই। একমাত্র প্রকাশিত ভালবাসার মধ্যেই রয়েছে সৌন্দর্য।
এরপর সে আর পিএইচডি এর পাঠ চুকাতে পারে নি।মেয়ে সাজিয়ার প্রতি ভালবাসা অনুভব করে দেশে ফিরল। যেন মেয়েটি তার ভালবাসা থেকে না দূরে থাকে। কারণ অপ্রকাশিত ভালবাসার মধ্যে সৌন্দর্য থাকেনা, প্রকাশিত ভালবাসাতেই থাকে সৌন্দর্য। তবে এটা সত্যি যে অপ্রকাশিত ভালবাসার সৌন্দর্য খুব মানুষই বুঝতে পারে।
আচ্ছা শোন সেজুতি, সাজিয়ার স্কুল ছুটি হবে। আমাকে একটু যেতে হবে। - আমি যদি যাই সমস্যা হবে? না সমস্যা হবে না - আসলে মেয়েটিকে অনেক দেখতে ইচ্ছে করে জানেন। কিন্তু........ কথা থামিয়ে দিয়ে নাওশীর বলল, চলো, স্কুল ছুটি বেশি দেরী নয়।
মুসলিম গার্লস হাই স্কুলের সামনে তারা দুজন দাড়িয়ে আছে। স্কুলের ছাত্রীরা একে একে বের হয়ে আসছে। সাজিয়াও আসছে। গলায় একটা ওয়াটার পট ঝুলানো। নাওশীর আলমকে দেখে একটা দৌড় দিয়ে চলে আসল। সাজিয়ে এসে বলল, বাবা আমি ফার্স্ট হয়েছি।এ ই যে রেজাল্ট কার্ড। সাজিয়া রেজাল্ট কার্ড বাড়িয়ে দিয়ে বলল, বাবা,এই আন্টি না কে? - কেউ না। আমার অফিসের কলিগ। কিন্তু ওনার চোখে পানি কেন? নাওশীর আলম তাকিয়ে দেখল আসলেই সেজুতির চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছে। - ওনার একটি মেয়ে হারিয়ে গিয়েছে তো এজন্য মা।
সেজুতি সাজিয়াকে বুকে টেনে নিল। কপালে ও গালে চুমু খেল। ব্যাগ থেকে একটা চকলেট বক্স আর আইসক্রিম বের করে দিয়ে বলল, নাও মা এগুলো। নাওশীর আলমের ইশারাতে সাজিয়া সেগুলো নিল।তবে প্রথমে সে নিতে চায় নি। আন্টি, আপনি কাঁদবেন না। দেখবেন একদিন ঠিকই আপনার মেয়েকে খুজে পাবেন।
নাওশীর আলম সাজিয়াকে বলল, মা তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো, আমি আসছি।
সাজিয়া খুশি মনে চলে আইসক্রিম খেতে খেতে গাড়ির দিকে যাচ্ছে। সেজুতি বললো, জানেন সাজিয়ার এই বয়সে আমি ঠিক এরকমই ছিলাম। আমার কাছে সেবয়সের একটা ফটোগ্রাফ আছে। নাওশীর মানি ব্যাগ থেকে সেজুতির সাদাকালো ষোড়শী ফটোগ্রাফটা এগিয়ে দিয়ে বললো, এটা নিয়ে নাও। এখন আর দরকার নেই। ইচ্ছে ছিল জীবনের কোন একটা পর্যায়ে ফটোটা দেখিয়ে বলতাম এটা তোমার মায়ের ছবি। কিন্তু এখন তার মাকে সে দেখেছে ফেলেছে। এটা এখন মূল্যহীন। - কিন্তু সে তো জানে না আমি যে তার মা। তুমি কি চাও সে জানুক এখন?
সাজিয়া এখনো জানে না। ঐ মহিলাটা তার মা ছিল। একদিন নিশ্চয়ই জানবে। সেদিন হয়তো নাওশীর সাহেব একটা হাতপাতালে ভর্তি থাকবেন। নানান রোগ শরীরে বাসা বাঁধবে। সেদিন নাওশীর আলম বলবে, সাজিয়া মা, ঐ যে ছোটোবেলায় তুমি এক আন্টিকে দেখেছিলে না সেটিই তোমার মা। তখন তার রিয়েকশন কি হবে?
কি হবে? সাজিয়া কি তার মাকে খুঁজবে। হয়তো খুঁজবে। না হয় কোনো একদিন এই ছোট্ট দেশে নাগরিক ব্যস্ততার মাঝে আকস্মিকভাবে দেখা হয়ে যাবে। হয়তো নাওশীর আলম তখন ফেরারি পাখি হয়ে থাকবে ওপারে। যেমনটা ছোট্ট সাজিয়া তার মা সম্পর্কে জানে।
শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে গুজব ছড়ালে আইনি ব্যবস্থা: শিক্ষামন্ত্রী
জাতীয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
শিক্ষা সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে গুজব ছড়ালে বা গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
‘বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষা বোর্ড’ নামে একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে- ‘ঈদের পর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার।' এ বিষয়টি গুজব বলে বুধবার (২২ জুলাই) বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষামন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বৃহস্পতিবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি রয়েছে আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে আনুষ্ঠানিকভাবে বা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। এ বিষয়ে আগে থেকেই কেউ কোনো গুজব ছড়ালে, মিথ্যা প্রচারণা চালালে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক শ্রেণির মানুষ শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে মিথ্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ঈদের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে আমরা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। অথচ আমাদের নাম দিয়ে, কখনও জাতীয় শিক্ষা বোর্ড নামে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে জাতীয় শিক্ষা বোর্ড নামে কোনো শিক্ষা বোর্ড নেই।
এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সচেতন থাকতে অনুরোধ জানান শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, যখন সময় হবে, আমরা গণমাধ্যমের সাহায্যে জানিয়ে দেব, কখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে, কখন পরীক্ষা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও র্যাবকে এ সংক্রান্ত গুজব ও মিথ্যা প্রচারণাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
ঢালিউড কুইন খ্যাত অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস। ঈদুল আজহায় তার অভিনীত ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২’ সিনেমাটি মুক্তির কথা ছিলো। কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে সিনেমা হল বন্ধ থাকায় তা আর হচ্ছে না।
তবে অপু ভক্তদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ এবারের ঈদে অপু অভিনীত ডজন খানেক সিনেমা টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচার হবে।
নাগরিক টেলিভিশনে অপু অভিনীত ‘স্বামীর সংসার’, ‘টাকার চেয়ে প্রেম বড়’, ‘তুমি স্বপ্ন তুমি সাধনা’, ‘তোমার জন্য মরতে পারি’, ‘মন যেখানে হৃদয় সেখানে’, ‘মায়ের হাতে বেহেশতের চাবি’, ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’, ‘সন্তান আমার অহংকার’, ‘তুমি আমার মনের মানুষ’, ‘রাজা বাবু’, ‘লাভ ম্যারেজ’ প্রচার হবে।
ঈদের প্রথম দিন থেকে পরবর্তী সপ্তম দিন পর্যন্ত সকাল ৯টা, দুপুর ১২টা, বিকেল ৩টা, সন্ধ্যা ৬টা এবং রাত ১২টা ২৫ মিনিটে এসব সিনেমা প্রচার হবে বলে টেলিভিশন সূত্রে জানা যায়। এছাড়াও দেশের অন্যান্য টেলিভিশনে অপু বিশ্বাস অভিনীত একাধিক সিনেমা প্রচার হবে বলে জানা গেছে।
Post Written by : Admin
Original Post URL : https://ift.tt/3hwEVcy
Post Come trough : Nachole News | নাচোল নিউজ
মুরাদনগরে মি. ফানের তরুণরা অসহায় মা-ছেলেকে দিলেন নতুন ঘর
সারাদেশ
মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
নিদানী বেগম (৬৮)। স্বামী চরু মিয়ার মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৩০ বছর আগে। স্বামীর মৃত্যুর পর শেষ সম্বল হিসেবে পেয়েছেন থাকার একটি মাত্র ঘর। আর সেখানেই খেয়ে না খেয়ে ২ ছেলে ও ২ মেয়েকে নিয়ে জীবনের বাকিটা পথ এগোতে থাকেন। আজ ছেলে এবং মেয়েরা বড় হয়েছে। বিয়ে দেয়া হয়েছে ২ মেয়েকে। দুই ছেলেও বিয়ে করেছেন। তাদের সংসারেও এসেছে নতুন অতিথি।
এরই মধ্যে বড় ছেলে তাজু মিয়া (৫০) বাবার রেখে যাওয়া ভিটেতে ভিটি পাকা করে বানিয়েছেন দু’টি ঘর। আর সেখানে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বেশ ভালোই আছেন। তবে ছোট ছেলে দিলু মিয়া (৪০) বেশি একটা ভালো নেই। মানসিক প্রতিবন্ধি হওয়ায় বাবার রেখে যাওয়া বসত ঘরেই স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকেন মায়ের সঙ্গে।
কষ্ট হলেও কোন রকমে বাবার রেখে যাওয়া পুরনো ঘরেই দিন পার করছিলো নিদানী বেগম ও তার ছেলে দিলু মিয়ার পরিবার। তাদের এই সামান্ন ভালো থাকাটাও যেন মেনে নিতে পারেনি প্রকৃতি। গেলো কয়েক মাস আগে একটি ঝড়ে স্বামী চরু মিয়ার রেখে যাওয়া শেষ সম্বল বসত ঘরটিও হেলে পরে। কি আর করার মা আর ছেলের যেখানে দু’বেলা খাবার খেতে কষ্ট হয় সেখানে ঘর মেরামত সেটি দুঃস্বপ্ন ছাড়া তো আর কিছুই না।
তবে বড় ছেলের ভিটি পাকা ঘরে মায়ের জায়গা না হলেও নিদানী বেগমের খাবারের প্রতি খুব দায়িত্বশীল ছেলে তাজু মিয়া। স্ত্রীকে সাফ বলে দেয়া হয়েছে মাকে যেন ঠিকঠাক তিন বেলা খাবার দেয়া হয়। এটাই বা নিদানী বেগমের জন্য কম কিসে। স্বামীর বসত ঘরে থাকতে গিয়ে যত কষ্টই হোক না কেন ছেলে তাজু মিয়াতো খাবার দিচ্ছে, না দিলেইবা কি করার ছিলো।
সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরে থাকা অসম্ভব হয়ে যায় মা ছেলের। তাদের এমন অবস্থা দেখেও আশপাশের আত্মীয়-স্বজন জনপ্রতিনিধি কিংবা এলাকার বিত্তশালীরা এগিয়ে আসেনি কেউ।
নিদানী বেগম ও তার ছেলের এই পরিস্থিতি মি. ফান সংগঠনের একজন সদস্যের চোখে পড়লে সে সাথে সাথে সংগঠনের বাকী সদস্যদের বিষয়টি দ্রুত জানায়। খবর পেয়ে সংগঠনের সদস্যরা কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দক্ষিণ দিলালপুর শুশুণ্ডা গ্রামে নিদানী বেগমের বাড়িতে গিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
শুরু হয় দেশে ও বিদেশে থাকা সংগঠনের সদস্যদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহের কাজ। তারই ধারাবাহিকতায় গত এক সপ্তাহের প্রচেষ্টায় ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি নতুন ঘর তৈরি করে বুধবার (২২ জুলাই) দুপুরে নিদানী বেগম ও তার ছেলে দিলু মিয়ার হাতে তুলে দেয়া হয় সেই ঘরের মালিকানা। আর সেই স্বপ্নের কুটিরের নাম দেয়া হয়েছে ‘ছায়ানীড়’ (২)। তাদের এমন উদ্যোগকে সালাম জানিয়েছে এলাকার সচেতন মহল। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে সংগঠনের সাথে জড়িতদের বাবা-মাও যেন এখন গর্ববোধ করছে তাদের সন্তানদের নিয়ে।
ইতোপূর্বে মি. ফান সংগঠনের সদস্যরা মোচাগাড়া গ্রামেও একটি নতুন ঘর তৈরি করে দিয়েছে। এছাড়াও এলাকায় বেশ কিছু প্রশংসনীয় কাজ করেছে তারা। অসুস্থ মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেয়া, শীতবস্ত্র বিতরণ, নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ, এতিম ছাত্রদের পোশাক প্রদানসহ জরুরি প্রয়োজনে অসুস্থ ব্যক্তিদের নিজ খরচে রক্ত প্রদানও করে আসছে সংগঠনের সদস্যরা।
ইয়াবাসহ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া দুই ছাত্রলীগ নেতাকে বহিস্কার করেছে সংগঠনটি।
সারাদেশ
ফেনী প্রতিনিধি
ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলায় ইয়াবাসহ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া দুই ছাত্রলীগ নেতাকে বহিস্কার করেছে সংগঠনটি।
বুধবার (২২ জুলাই) রাতে পাঠান নগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন টিটু ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. আরাফাত হোসেন সাদ্দামকে বহিষ্কার করা হয়।
উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি জিয়াউল হক দিদার ও সাধারণ সম্পাদক শওকত হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সংগঠন পরিপন্থী ও শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত ধাকায় তাদের পাঠাননগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার (২১ জুলাই) রাত পৌনে ৯টার দিকে উপজেলার শুভপুর সাহেবের হাট থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৯৬ পিচ ইয়াবা, ১৫ হাজার ৫শ টাকা, ইয়াবা সেবনের সরঞ্জামাদি, একটি হকিস্টিক এবং স্টিলের চেইন জব্দ করা হয়।
চম্পক নগর বিজিবি ক্যাম্পের হাবিলদার আবদুল করিম বাদী হয়ে ৬ জনকে আসামি করে থানায় মাদক আইনে মামলা করেছেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সবার জন্য মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পরিপত্র প্রত্যাহার চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
বুধবার (২২ জুলাই) রাজধানীর আল মুতমাইন্নাহ মা ও শিশু হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার ডা. মুহম্মদ আব্দুল আলী মারুফের পক্ষে আইনজীবী শেখ ওমর শরীফ এ নোটিশ পাঠান। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, গত ২১ জুলাই স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে মাস্ক ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে। পরিপত্রে প্রতিটি কর্মস্থলে কর্মরত ব্যক্তি ও জনসমাবেশ চলাকালীন আবশ্যিকভাবে মাস্ক পরা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এমন ঢালাওভাবে মাস্ক পরিধানের নির্দেশনা কোনোক্রমেই বিজ্ঞানসম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মত কোনো পদক্ষেপ নয়।
নোটিশে আরও বলা হয়, ঢালাওভাবে মাস্ক ব্যবহার করা বিপজ্জনক হতে পারে বলে জানিয়েছে খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। নোটিশ পাওয়ার ৩ কার্যদিবসের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে জারিকৃত এ সংক্রান্ত পরিপত্রটি প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।
বরিশাল নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার আন্তঃজেলা ডাকাত দলের তিন সদস্যকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদি হয়ে ডাকাতি মামলা দায়ের করেছে। বুধবার (২২ জুলাই) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
ডাকাতরা হলেন, বরিশালের বাকেরগঞ্জের কর্ণকাঠী ইউনিয়নের বারেক হাওলাদারের ছেলে ৩ ডাকাতি মামলার আসামি ফিরোজ হাওলাদার, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ভাষানচর ইউনিয়নের শাজাহান মাতুব্বরের ছেলে ডাকাতিসহ ১৪ মামলার আসামি লিটন মাতুব্বর ও বরিশাল মেট্রোপলিটন এয়ারপোর্ট থানাধীন হরিপাশা এলাকার শাজাহান মোল্লার ছেলে ডাকাতিসহ ৭ মামলার আসামি লিটন মোল্লা।
কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাত আনুমানিক ৩টার দিকে সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার রাসেল আহম্মেদের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। এ সময় নগরীর বিএম কলেজ রোডস্থ সোবহান মিয়ার পুল এলাকাসহ আরও কয়েকটি এলাকা থেকে ওই তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এসময় তাদের কাছ থেকে রাম দা, বগি দা ও বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন করে নগরীতে ডাকাতি কার্যক্রম চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল তারা।
ওসি আরও জানান, এ ঘটনায় এসআই রুমান বাদি হয়ে গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে ডাকাতি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
পূর্ব আফগানিস্তানে এক বিমান হামলায় ৪৫ জন নিহত হয়েছে। বুধবারের (২২ জুলাই) ঐ হামলায় নিহতদের মধ্যে বেসামরিক নাগরিক ও তালেবান যোদ্ধা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পূর্ব আফগানিস্তানে এক বিমান হামলায় ৪৫ জন নিহত হয়েছে। বুধবারের (২২ জুলাই) ঐ হামলায় নিহতদের মধ্যে বেসামরিক নাগরিক ও তালেবান যোদ্ধা রয়েছে।
হেরাতে বিভিন্ন হামলার সঙ্গে জড়িত ছয়জন গুরুত্বপূর্ণ তালেবান কমান্ডার ছিল এই আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু।
হেরাত প্রদেশের আদরাস্কান জেলার গর্ভনর আলী আহমেদ ফারিকের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানায়, নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে আটজন বেসামরিক নাগরিক।
তিনি বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর বিমান হামলায় খাম জিয়ারাট এলাকায় ৪৫ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে তালেবান যোদ্ধাও রয়েছে। তবে বাকি ৩৭ জনের মধ্যে কতজন বেসামরিক নাগরিক বা তালেবান এটা স্পষ্ট নয়।
এক বিবৃতিতে তালেবান মুখপাত্র ক্কারী মোহাম্মদ ইউসেফ আহমাদী বলেন, হেরাতে দুটি বিমান হামলায় আটজন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছে।
দুই দফা হামলার কথা স্থানীয় দুইজন কর্মকর্তাও নিশ্চিত করেছেন। আহমদীর মতে, এই ধরনের হামলার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে যারা জেল থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায় তাদের অস্ত্র তুলে নিতে বাধ্য করছে।
দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফে জানানো হয়, আফগান বাহিনীর হাতে বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের ফলাফল প্রকাশ্যে জানানো হবে।
পার্শ্ববর্তী গুজারা জেলার কর্মকর্তা হাবিব আমিনিও এই ঘটনায় ৪৫ জন নিহত ও অনেক আহতের খবর নিশ্চিত করেছেন। তবে দেশটিতে অবস্থান করা মার্কিন বাহিনীর এক মুখপাত্র জানান, বুধবারের হামলার সঙ্গে তারা জড়িত নয়।
উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে শান্তি চুক্তির জন্য আফগানিস্তান, মার্কিন বাহিনী ও তালেবানদের মধ্যে অস্ত্র বিরতিও চলে। ওই সময় বন্দিমুক্তির দাবি ওঠে। এই প্রক্রিয়াও ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত হচ্ছিল।