তবে এত নিয়ম মেনে শেষ পর্যন্ত মাত্র ২৫ জন অতিথি উপস্থিত থাকতে পেরেছিলেন।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের জন্য করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করেছে আরব আমিরাতের একটি পরিবার। আমন্ত্রণপত্রে বলে দেয়া হয়েছে, বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হলে অবশ্যই করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে। দেশটির রাস আল-খাইমাহ নামক এলাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে। এ খবর দিয়েছে গালফ টুডে।
খবরে বলা হয়, বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে কনের বাড়িতে। শুক্রবার রাতে ওই বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। অংশ নেয়া সবাইকে করোনা টেস্ট করতে হয়েছে এবং এর ফলাফল নেগেটিভ তা নিশ্চিত করেই তাদেরকে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেয়া হয়েছে। পরিবারটি জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের 'বিচক্ষণ' শাসকের নির্দেশনা মেনেই অতিথিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এমন নিয়ম ঠিক করেছেন তারা।
এর আগে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে, দেশের সবাইকে সরকারঘোষিত নির্দেশনাগুলোকে মেনে চলতে হবে। এরমধ্যে রয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা, মাস্ক পরিধান, বড় সমাবেশ এরিয়ে চলা।
তবে এত নিয়ম মেনে শেষ পর্যন্ত মাত্র ২৫ জন অতিথি উপস্থিত থাকতে পেরেছিলেন। তবে উৎসবমুখর পরিবেশেই বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন অংশগ্রহণকারীরা।
মেজর (অব.) সিনহা হত্যা: এবার সেই ল্যাপটপকে ঘিরে নতুন রহস্য
ল্যাপটপে কি এমন দৃশ্য সংরক্ষণ করা আছে যার কারণে গোটা ল্যাপটপটিই গায়েব হয়ে যায়?
জাতীয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
কোথায় সেই ল্যাপটপ? যে ল্যাপটপের সার্ভারে টেকনাফে ধারণ করা নানা দৃশ্য সংরক্ষণ করে রাখা ছিল। ইউটিউব চ্যানেল জাস্ট গো’র জন্য ধারণ করা কি ছিল সেসব দৃশ্যে। অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যাকাণ্ডের পর নীলিমা রিসোর্টে অভিযান চালিয়ে পুলিশ এ ল্যাপটপ নিয়ে যায়। নীলিমা রিসোর্টের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ সেখানে অভিযান চালাচ্ছে এবং ল্যাপটপসহ আরো কিছু জিনিস নিয়ে যাচ্ছে। অথচ এরপর থেকেই সেই ল্যাপটপের হদিস নেই। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সিনহার এ ল্যাপটপে কি এমন দৃশ্য সংরক্ষণ করা আছে যার কারণে গোটা ল্যাপটপটিই গায়েব হয়ে যায়? মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, সিনহার যে ল্যাপটপ ও হার্ডডিস্ক ছিল সেগুলোতে অনেক ডকুমেন্ট ছিল। সেগুলো কী উদ্দেশ্যে গায়েব করা হলো তা খতিয়ে দেখছে তদন্তকারীরা।
ওদিকে চলতি বছরের ৭ মাসে পাঁচবার টেকনাফ গিয়েছিলেন সিনহা।
গত বছরও তিনি সেখানে গিয়েছিলেন একাধিকবার। এতে ওই এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। বিষয়টি পরিবারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। মেরিন ড্রাইভে গুলির ঘটনার পর নীলিমা রিসোর্টে অভিযান চালায় পুলিশ। আর সে সময় ল্যাপটপসহ আরো কিছু জিনিস পুলিশ নিয়ে আসে। সেগুলো কোথায় রয়েছে তা আজ পর্যন্ত কেউ জানাতে পারেনি। এ ব্যাপারে তদন্তকারীরা তদন্ত করছে বলে সূত্র জানিয়েছে। ঘটনার সময় সিনহার গাড়িতে সিফাতও ছিলেন। সিনহাকে গুলি করার পর সিফাতকে কেন পুলিশ গুলি করেনি? তাহলে কি সিনহাকে গুলির বিষয়টি পূর্ব পরিকল্পিত? তদন্তকারীদের কাছেও বিষয়টি পূর্ব পরিকল্পিত মনে হচ্ছে। এ মামলার আসামি পুলিশের কথিত সাক্ষী আয়াজ উদ্দিন, নুরুল আমিন ও নিজাম উদ্দিনসহ ৭ আসামিকে গতকাল শুক্রবার থেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে র্যাব।
অন্য আসামিরা হলো- কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন এবং এএসআই লিটন মিয়া। আদালত তাদের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। পুলিশের তিন সাক্ষী র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে যে, পুলিশের আদেশেই তারা পুলিশের দায়ের করা মামলায় সাক্ষী হয়েছেন। তাদের সাক্ষী হওয়াতে বাহাড়ছড়া তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকতের চাপ ছিল। র্যাব জানিয়েছে, এদের জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াও পর্যায়ক্রমে অন্য সাক্ষীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
গত ৩১শে জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা। এ ঘটনায় নিহতের বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমারসহ ৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। এ বিষয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ গতকাল দুপুরে জানান, আদালতের আদেশে পুলিশের ৩ সাক্ষীকে শুক্রবার থেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস জানান, সিনহা চলতি বছরেই ৫ বার কক্সবাজারের টেকনাফে গিয়েছিলেন। এতে তার সেখানে অনেক ফ্রেন্ড তৈরি হয়েছিল। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।
সিনহা হত্যাকাণ্ডের মূল মোটিভ বের করতে চায় তদন্তকারী সংস্থা। পরিচয় দেয়ার পরও কেন তাকে গুলি করা হলো তা অনুসন্ধান করছে তারা। এ ছাড়াও সিনহা বর্ডার গার্ড এবং একাধিক চেকপোস্ট পার হওয়ার পরও এপিবিএনের চেকপোস্টে কেন পরিদর্শক লিয়াকত তাকে গুলি করলো? এর কারণ উদ্ঘাটনে কাজ করছে তারা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, তদন্তকারী কর্মকর্তারা মামলার মূল মোটিভ উদ্ঘাটনে কাজ করছে। এ ছাড়াও জেলার এসপি সিনহার পরিচয় জানার পরও কেন তিনি বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজালেন তাও তদন্তের আওতায় এনেছেন তারা।
সূত্র জানায়, ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে সিনহার বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় মদ, ইয়াবা ও অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। পরে বাহাড়ছড়া থানার পরিদর্শক লিয়াকত নিজ উদ্যোগে পুলিশের দায়ের করা মামলায় মারিশবুনিয়ার বাসিন্দা এবং স্থানীয় পুলিশের সোর্স বলে পরিচিত আয়াজ উদ্দিন, নুরুল আমিন ও নিজাম উদ্দিনকে সাক্ষী বানানো হয়। তারা সাক্ষী হওয়ার পর এলাকায় প্রচার করেছেন যে, একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা পুলিশের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। তার কাছ থেকে মদ, ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে।
সাগরে সাঁতার কাটার সময় আচমকা বিশাল এক হাঙ্গরের আক্রমণের মুখে পড়েন স্ত্রী, তা দেখে চুপচাপ বসে থাকতে পারেননি স্বামী। সার্ফবোর্ড নিয়ে দ্রুত ছুটে যান আর লাফিয়ে পড়েন হাঙ্গরের ওপর, ক্রমাগত কিল-ঘুষি মেরে ভয়ঙ্কর প্রাণীটিকে বাধ্য করেন স্ত্রীকে ছেড়ে দিতে।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের শেলি সৈকতে ঘটেছে এ ঘটনা। ভুক্তভোগী স্ত্রীর নাম শ্যান্টেল ডয়েল (৩৫) এবং তার স্বামীর নাম মার্ক র্যাপ্লে।
পোর্ট ম্যাকুয়েরের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ডয়েলকে সম্ভবত ১০ ফুট লম্বা ও হিংস্র কোনও গ্রেট হোয়াইট শার্ক আক্রমণ করেছিল। হাঙ্গরের কামড়ে তার ডান পা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নিউ সাউথ ওয়েলসের সার্ফ লাইফ সেভিংয়ের প্রধান নির্বাহী স্টিভেন পিয়ার্স সাহসী মার্ক র্যাপ্লের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার প্রশংসা করে বলেন, এই ব্যক্তি বোর্ড থেকে হাঙ্গরটির ওপর লাফিয়ে পড়ে স্ত্রীকে ছেড়ে দেয়ার জন্য মারতে থাকে, এরপর সৈকতে ফিরে আসতে সহায়তা করে। এটা সত্যিই বীরত্বপূর্ণ।
নিউ সাউথ ওয়েলস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চিকিৎসাকর্মীরা পৌঁছানোর আগেই ডয়েলকে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক সেবা দেন সৈকতে থাকা লোকজন। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তার অবস্থা এখন স্থিতিশীল।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, গত একমাসের মধ্যে এটি অস্ট্রেলীয় উপকূলে তৃতীয়বার হাঙ্গরের হামলার ঘটনা। সূত্র: বিবিসি।
সেই সুর ও সংগীতের সুরকার কিংবদন্তি আলাউদ্দিন আলী চলে গেলেন। অনেক দুর্দান্ত গানের সুর দিয়েছেন তিনি। আমাদের জমানার জনপ্রিয় বেশির ভাগ গানের সুরই তাঁর।
অনেক দিন অসুস্থ ছিলেন। চলে গেলেন হুট করে। আহারে! মানুষের জীবন কেন এত ক্ষণস্থায়ী হয়? মৃত্যুর আগে হুমায়ূন আহমেদ আক্ষেপ করেছেন বারবার। সামান্য একটা কচ্ছপের আয়ু সাড়ে তিন শ বছর। আর মানুষ কে কখন চলে যাবে কেউ জানে না। করোনা জীবনকে আরও তুচ্ছ করে দিয়েছে। জীবন আর মৃত্যুকে টেনে এনেছে পাশাপাশি।
কত মানুষকে হারাচ্ছি ইয়ত্তা নেই। কেউ যাচ্ছেন নিয়মিত অসুখে। কেউ করোনাভাইরাসে। আগামীর দিনগুলো আমাদের সামনে কঠিনতম। কে বাঁচব কে থাকব জানি না। পৃথিবীর স্বাভাবিকতা হারিয়ে গেছে। কোনো দিন ফিরবে, তার নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। ব্যস্ততম বিমানবন্দর জেএফকের একটি ছবি শেয়ার করেছিলাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। চারদিকে সুনসান নীরবতা। জনমানবের চিহ্ন নেই অথচ বিমানবন্দরটি ছিল ২৪ ঘণ্টা ব্যস্ত। সারা দুুনিয়ার ফ্লাইট এসে থামত। কয়েক মাস কোনো ফ্লাইটই ওড়েনি। এখন টুকটাক চলছে। কিন্তু বেশির ভাগ টার্মিনাল আর বোর্ডিং ব্রিজ বন্ধ। সারা দুনিয়ার একই হাল। বিশ^ কোন দিকে যাচ্ছে কেউ জানি না। বলতে পারছি না করোনার ভ্যাকসিন বিশ্ববাসীর কাজে আদৌ আসবে কিনা। সাধারণ মানুষ ভ্যাকসিনের নাগাল পাবে কিনা। নিশ্চয়তা নেই কোনো কিছুর। অনিশ্চয়তা নিয়েই কবি শামসুর রাহমান লিখেছিলেন, ‘বদলে যাচ্ছে, চোখের সামনে
পৃথিবীটা খুব বদলে যাচ্ছে।
যা কিছু প্রবল আঁকড়ে ছিলাম,
সেই সব কিছুই মায়া মনে হয়। ’
মায়ার বন্ধনের শেষ লড়াইটা এখন করছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। করোনাভাইরাস রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী চেনে না। ক্ষমতাবান বোঝে না। আলাদা করে থেকেও প্রণব মুখার্জি করোনায় আক্রান্ত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। অসাধারণ মানুষটি বাংলাদেশের নড়াইলের জামাই। ১৯৭১ থেকে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। রাষ্ট্রপতি পদ ছাড়ার পরও গিয়েছিলাম দিল্লির রাজাজি রোডে তাঁর বাড়িতে। এ বাড়িতেই এ পি জে আবদুল কালাম থাকতেন রাষ্ট্রপতি হিসেবে। প্রণব মুখার্জি মানুষের রাজনীতি করেন। মানুষ ছাড়া থাকতে পারেন না। তাঁর গ্রেটার কৈলাসের বাড়িতে মানুষের পদচারণ ছিল সারাক্ষণ। রাষ্ট্রপতি ভবনকে একদা তিনি সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দিয়েছিলেন। এ গুণের প্রশংসা নরেন্দ্র মোদিও করেছেন। পন্ডিত, সজ্জন এ মানুষটিকে ঘিরে আজ গভীর উৎকণ্ঠা। বাংলাদেশের এই বন্ধুর রোগমুক্তি কামনা করছি। প্রার্থনা করছি তিনি যেন সুস্থ হয়ে ওঠেন। এ দুনিয়ায় আমরা কেউই থাকব না। এ জগৎসংসার বড্ড বেশি ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু ভালো থাকার সময় আমরা তা বুঝি না। প্রণব মুখার্জির সঙ্গে অনেক কিছু নিয়ে বিভিন্ন সময় অনেক কথা হয়েছে। উপমহাদেশের মুরুব্বির মতো ছিলেন তিনি। পাকিস্তানের নওয়াজ শরিফ, বেনজির ভুট্টো, শ্রীলঙ্কার চন্দ্রিকার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল। আলাপে নেপালের কথা কিংবা বাদ যায়নি বাংলাদেশের অনেক কিছুও। তিনি বঙ্গবন্ধু পরিবারের আপনজন ছিলেন। জিয়াউর রহমান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়েও গল্প করেছেন একবার। জেনারেল মইন বিষয়ও বাদ যায়নি। সেসব আড্ডার কিছু অংশ লিখেছি। অনেক কিছু লেখা হয়নি। সময় সুযোগ পেলে হয়তো লিখব। মাঝে মাঝে ভাবী, জীবনের পরতে পরতে জমে থাকা সবকিছু কি একজন সংবাদকর্মী লিখতে পারে? অথবা একজন রাজনীতিবিদ বলতে পারে? শ্যাওলার মতো ভিতরে অনেক কিছু জমে থাকে অব্যক্ত হয়ে। প্রকাশ পায় না। শুধু অব দ্য রেকর্ড নয়, অন দ্য রেকর্ডেরও অনেক কাহন থেকে যায় অপ্রকাশিত।
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অনেক জীবনী পড়েছি। তাঁকে নিয়ে বায়োগ্রাফির সংখ্যা অনেক। ছায়াসঙ্গী পুপুল জয়করের লেখা ইন্দিরার জীবনী করোনাকালে আবার পড়লাম। ইন্দিরার সঙ্গে পুপুলের সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বের। দুজনের অনেক ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণাও আছে বইতে। বাদ যায়নি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ড ও ইন্দিরা গান্ধীর সতর্কবার্তা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইন্দিরা চিন্তিত হয়ে ওঠেন উপমহাদেশের আগামী নিয়ে। এমনকি নিজের নিরাপত্তা নিয়েও উৎকণ্ঠা ছিল। শিশু রাসেলের হত্যা তাঁকে ব্যথিত করেছে। ষড়যন্ত্র সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুকে আগেই সতর্ক করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী ও ‘র’। হিমালয় হৃদয়ের বঙ্গবন্ধু সবকিছু উড়িয়ে দিয়েছেন। ভাবতেও পারেননি তাঁকে কোনো বাঙালি হত্যা করতে পারে। সারা জীবন লড়ে দেশটা প্রতিষ্ঠা করেছেন। তারা কী করে তাঁর বিপক্ষে যাবে! ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং-র-এর তখন প্রধান ছিলেন রামেশ্বর নাথ কাও। ১৯৭৪ সালে আর এন কাও খবর পান বাংলাদেশে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে। আর পুরো ষড়যন্ত্র হচ্ছে প্রতিরক্ষা বাহিনীর অভ্যন্তরে। দিন দিন ষড়যন্ত্রের ডালপালা বিকশিত হচ্ছে। র-এর প্রধান দ্রুত সবকিছু জানাতে সাক্ষাৎ করেন ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে। সব শুনলেন ইন্দিরা। তারপর আর এন কাওকে বললেন, তুমি দ্রুত বাংলাদেশ যাও। সবকিছু মুজিবকে অবহিত কর। ঢাকায় এলেন কাও। ছদ্মবেশ নিয়ে গেলেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে। সরকারপ্রধানের সাদামাটা নিরাপত্তাহীন জীবন তাঁকে বিস্মিত করে। এ বিস্ময় নিয়েই সাক্ষাৎ ইতিহাসের মহানায়কের সঙ্গে। বাকিটা পুপুল জয়করের বই থেকে কাও-এর মুখে শোনা যাক। ‘আমরা বাগানের মধ্যে পায়চারি করছিলাম। আমি মুজিবকে বলি, তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আমাদের কাছে তথ্য আছে। কিন্তু তিনি ছিলেন পাইপমুখে খোশমেজাজে। বলা যায় প্রাণবন্ত, সব সময়ের মতো রমরমা ভাব। আমার কথার জবাবে বললেন, “আমার কিছুই হতে পারে না, ওরা আমার লোক”। ’ চক্রান্তকে পাত্তাই দিলেন না বঙ্গবন্ধু। কাও বিস্মিত হলেন তাঁর কথা শুনে। বঙ্গবন্ধু তাঁকে ঢাকায় ভালোভাবে খাওয়া-দাওয়া করতে বললেন। ছদ্মবেশ নিয়েও মজা করলেন। দিল্লি ফিরে গেলেন কাও। সবকিছু জানালেন ইন্দিরা গান্ধীকে।
’৭৫ সালের মার্চে কাও আবার ঢাকা নিয়ে উদ্বেগজনক রিপোর্ট পান। একদিকে ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে সরকার উৎখাতের বৈঠক, অন্যদিকে রাজনীতিতেও নানামুখী ষড়যন্ত্র। সেনাছাউনিতে সরকারবিরোধী বৈঠকে অংশগ্রহণকারীর অনেকেই নিয়মিত আসত ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে। বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব তাদের পুত্রস্নেহ নিয়ে ভাত খাইয়ে দিতেন। এদেরই একজন ছিলেন মেজর ডালিম। ‘অটোবায়োগ্রাফি অব ইন্দিরা গান্ধী’ বইতে পুপুল লেখেন, ‘কাওয়ের কাছে খবর পৌঁছে গোলন্দাজ বাহিনীতে মুজিবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র সংগঠিত হচ্ছে। এবার ইন্দিরা দ্রুতবেগে মুজিবকে অবহিত করেন সবকিছু। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করতে অসম্মত হন। তিনি তো বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, জাতির পিতা। তিনি তাঁর আপন লোকদের দ্বারা গুপ্তহত্যার শিকারে পরিণত হতে পারেন না। র-এর প্রতিবেদনগুলোয় লেখা ছিল, বাইরের দেশের শক্তি কর্তৃক ষড়যন্ত্রের কর্মসূচি পরিকল্পিত ও পরিচালিত হচ্ছে। ’ বঙ্গবন্ধু কোনো কিছুই বিশ্বাস করলেন না। বরং দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যাপকভাবে কাজ শুরু করেন সারা দেশে। মানুষের মুখে হাসি ফোটাতেই তাঁর নতুন লড়াই। আর বঙ্গবন্ধুর আস্থা ও বিশ্বাস ছিল তাঁকে ঘিরে কোনো কিছু হতে পারে না। তাঁর ওপর কোনো বাঙালি আঘাত করতে পারে না। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আঘাতের সাহস রাখেনি। আর বাংলাদেশের ছেলে-ছোকরারা কী করবে!
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইন্দিরার বাসভবনে যান পুপুল জয়কর। লাল কেল্লায় পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। তিনি ভাষণ তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু তাঁর মন ভালো ছিল না। উৎকণ্ঠা আর আতঙ্ক দেখা দেয় ইন্দিরার মনে। পুপুলকে বললেন, ‘মুজিব হত্যা হচ্ছে ষড়যন্ত্রের প্রথম অংশ। এ ঘটনা উপমহাদেশকে ডুবিয়ে দেবে। মুজিব চলে গেলেন। পরের টার্গেট হব আমি। ’ ইন্দিরা শিশু রাসেলের হত্যার খবর পান কিছুটা বিলম্বে। তিনি উৎকণ্ঠিত হন। রাহুল গান্ধী অনেকটা রাসেলের বয়সী। ইন্দিরা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না শিশু রাসেলকে ওরা নিস্তার দেয়নি। আগামী দিনে রাহুলকে নিয়েও এমন হতে পারে। ষড়যন্ত্রকারীরা আমাকে ও আমার পরিবারকে ধ্বংস করতে চায়। আমি গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলো এত দিন অগ্রাহ্য করেছি। আগামী দিনে আমি কাকে বিশ্বাস করব?’ বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড ইন্দিরাকে বিস্মিত ও হতাশ করে। লৌহমানবী নিজেকে নিয়ে চিন্তিত হন। নিজের সতর্কতা নিয়েও কথা বলেন ব্যক্তিগত পরামর্শকদের সঙ্গে। কিন্তু ষড়যন্ত্রের রাজনীতির কালো ছায়া এ উপমহাদেশ থেকে বিদায় নেয়নি। সে ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় একদিন নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয় ইন্দিরা গান্ধীকে। ঘটনার ভিন্নতা থাকতে পারে। কিন্তু উপমহাদেশের অনেক হত্যাকান্ডের নিষ্ঠুরতার মিল কোথায় যেন রয়েছে। যার হিসাব মেলানো কঠিন।
এ হিসাব বেনজির ভুট্টোও মেলাতে পারেননি। ১৯৭১ সালে জুলফিকার আলী ভুট্টোর বিতর্কিত আচরণ কার্যক্রমেও বেনজির ছিলেন বাবার সমর্থক। বেনজির তখন ভাবতে পারতেন না পাকিস্তান আর্মি খুন-ধর্ষণসহ এত বর্বরতা করতে পারে বাংলাদেশে। ভুট্টো পরিবারের প্রতি নিষ্ঠুরতা থেকেই পাকিস্তানি আর্মির বর্বরতা বুঝতে পারেন বেনজির। আত্মজীবনীতে তিনি কিছুটা তুলে ধরেন। সে সময় ডিসেম্বরে বাংলাদেশের পক্ষে ভারতের অবস্থান নিয়ে বাবা-মেয়ের কথা হচ্ছিল। বাবা মেয়েকে বললেন, ‘তুমি কি মনে কর, নিরাপত্তা পরিষদ ভারতের নিন্দা করবে এবং ভারতের সেনা প্রত্যাহারের তাগিদ দেবে?’ মেয়ে বললেন, ‘কেন নয়?’ জবাবে জুলফিকার আলী বললেন, ‘পিংকি! তুমি আইনের একজন ভালো ছাত্রী হতে পারো এবং আমি একজন হার্র্ভার্ড গ্র্যাজুয়েটের মতকে অস্বীকার করব না। কিন্তু তুমি ক্ষমতার রাজনীতি সম্পর্কে কিছুই জানো না। ’ বেনজির আসলে তখনো অনেক কিছু অনুধাবন করতে পারেননি। এ ঘটনার কয়েক বছর পরই সিমলা চুক্তির সময় বাবার সঙ্গে ছিলেন বেনজির। ইন্দিরা গান্ধীর ব্যক্তিত্ব কাছ থেকে দেখেন সেদিন। তখনো বেনজির জানেন না তাঁর পরিবারের জন্য কী ট্র্যাজেডি অপেক্ষা করছে। বেনজির পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কন্যা তখন। একবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সময় পাকিস্তান গিয়ে এক অনুষ্ঠানে পরিচিত হন সেনাপ্রধান জিয়াউল হকের সঙ্গে। তাঁর বাবার নিযুক্ত সেনাপ্রধান। এ নিয়ে বেনজির লেখেন, ‘৭৭ সালের ৫ জানুয়ারি আমি জিয়ার সঙ্গে সামনা-সামনি পরিচিত হই। পরবর্তীকালে এ লোকটিই আমাদের সবার জীবন আকস্মিকভাবে বদলে দেয়। জিয়াকে দেখে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম। আমি মনে মনে জেমস বন্ডের মতো দীর্ঘ, উগ্র, ইস্পাতসৈন্যকে কল্পনা করছিলাম পাকিস্তানে আমার বাবার সেনাপ্রধান হিসেবে। কিন্তু আমার সামনে দাঁড়ানো জেনারেল ছিলেন, খাটো, নার্ভাস, আত্মবিশ্বাসহীন একজন লোক। ছয়জনকে ডিঙিয়ে গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ’
বেনজিরের ধারণাও বদলে দিয়ে ’৭৭ সালের ৫ জুলাই পাকিস্তানে সেনা অভ্যুত্থান হলো। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের বাড়ি ঘেরাও হলো। এ সময় একজন পুলিশ সদস্য জীবন নিয়ে পালাতে অনুরোধ করলেন ভুট্টোকে। তিনি পালালেন না। বরং জুলফিকার আলী ভুট্টো ফোনে পেয়ে যান জেনারেল জিয়াকে। সেনাপ্রধান তাঁকে বললেন, ‘আমি দুঃখিত স্যার, আমাকে এটা করতে হলো। আপনাকে কিছু সময়ের জন্য নিরাপদ হেফাজতে রাখব। নব্বই দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন করাব। আপনি আবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন। আপনাকে আমি স্যালুট করব। ’ তার পরের ইতিহাস সবার জানা। জুলফিকার আলী ভুট্টো সে সুযোগ আর পাননি। তাঁর বিরুদ্ধে পুরনো খুনের অভিযোগ আনা হলো। খুনের অভিযোগ এনে ফাঁসি দেওয়া হলো। ঝুঁকি নিয়ে বাবাকে দেখতে এসে আটক হলেন বেনজিরও।
ইতিহাস বড় নিষ্ঠুর! অভিশাপের রাজনীতি এ উপমহাদেশকে বারবার আঘাত করেছে। বেনজির ভুট্টোর জীবনটা ছিল ভীষণ ট্র্যাজেডির। ভুট্টো পরিবারের ছেলেগুলোকে দেশ ছাড়তে হয়েছিল। বেনজির বারবার কারাভোগ করেছেন। আটক হয়ে লড়েছেন সেনাশাসনের বিরুদ্ধে। একদিন মুক্তি পেলেন। প্রধানমন্ত্রী হলেন। ক্ষমতা হারালেন। আবার প্রধানমন্ত্রী হলেন। কিন্তু ট্র্যাজেডি তাঁর পিছু ছাড়ল না। নিজের ভাইয়ের মেয়ে অভিযোগের আঙ্গুল তুললেন তাঁর দিকে। বেনজিরের ক্ষমতাকালে খুন হন তাঁর আপন ভাই মুরতুজা। ভাই-বোনের সম্পর্ক তখন ভালো ছিল না ক্ষমতার দ্বন্দ্বে। আসিফ আলী জারদারি এ আগুনে আরও ঘি ঢালেন। ফাতিমা ভুট্টো তাঁর বাবার মৃত্যু নিয়ে আঙ্গুল তুললেন ফুফু বেনজিরের বিরুদ্ধে। কথা বলেন আসিফ আলী জারদারিকে নিয়ে। বেনজিরের শেষটাও করুণ। ক্ষমতার রাজনীতির হিসাব-নিকাশের চড়া দাম দিলেন বেনজির নিজেও। হত্যা আর খুনের রাজনীতি দেখতে দেখতেই তাঁকেও জীবন দিতে হলো। উপমহাদেশকে বারবার আঘাত করেছে রাজনীতির এ নিষ্ঠুরতা। রাজীব গান্ধীর হত্যা ও বাংলাদেশের একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা সবকিছুর ধারাবাহিকতা। আমরা খুব সহজে অতীত ভুলে যাই। মনে রাাখি না অনেক কিছু। হিংসা-বিদ্বেষ আমাদের শেষ করে দিচ্ছে। অথচ নিয়তির নিষ্ঠুর খেলা কেউ ঠেকাতে পারেনি কোনো দিন। প্রকৃতির এটাই যেন নিয়ম।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর খুনিদের সবাই বঙ্গভবনে আশ্রয় নেন। বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাকের পাশের ভিআইপি স্যুটে (দ্বিতীয় তলা) তারা অবস্থান করতেন। জেনারেল জিয়াউর রহমান নিয়মিত সেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করতেন। নারকীয় এই হত্যাকান্ডের পুরস্কার হিসেবে খুনিদের একটি করে পদোন্নতি এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে চাকরি দেওয়া হয়। তাদের সব চাহিদা পূরণে দেখভাল করতেন খোদ জিয়াউর রহমান। তাদের পরামর্শেই মূলত সেনাবাহিনী ও রাষ্ট্রযন্ত্রের সবকিছু চলত। গত বছর ১২ এপ্রিল ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের আগে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ। তার জবানিতে বেরিয়ে এসেছে আরও অনেক চাঞ্চল্যকর অজানা কাহিনি। গত বছর ৮ এপ্রিল গভীর রাতে রাজধানীর গাবতলী এলাকা থেকে খুনি মাজেদকে গ্রেফতার করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ২২ থেকে ২৩ বছর ধরে পরিচয় গোপন করে তিনি কলকাতায় ছিলেন বলে জানায় পুলিশ। গতকাল সকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনলাইনে জবানবন্দির একটি ভিডিও ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তা ভাইরাল হয়ে যায়। দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বাংলাদেশিদের চিন্তাধারায় নতুন করে ধাক্কা দেয় মাজেদের জবানবন্দি।
জবানবন্দিতে ইতিহাসের গর্হিত এই হত্যাকান্ডে নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টি বারবার আড়াল করার চেষ্টা করে গেছেন মাজেদ। তবে খুনিদের দেওয়া সব ধরনের সুবিধা কেন ভোগ করেছেন এর কোনো উত্তর দেননি। বারবার বলার চেষ্টা করেছেন, জুনিয়র অফিসার থাকার কারণে তিনি সবকিছু জানতেন না। সিনিয়রদের নির্দেশেই তিনি সবকিছুতে অংশ নিয়েছেন। বঙ্গভবনের স্কটের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সেনেগালের রাষ্ট্রদূত হিসেবে তার পোস্টিং হলেও সেনেগাল তার পছন্দ হয়নি। পরবর্তী সময়ে ১৯৮০ সালে মাজেদের ইচ্ছানুযায়ী তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে উপসচিব পদমর্যাদায় বিআইডব্লিউটিসিতে পদায়ন করেন। সব শেষ যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ে পরিচালক করা হয় মাজেদকে।
ফাঁসির আগে দেওয়া দীর্ঘ জবানবন্দিতে এই খুনি উল্লেখ করেছেন, খুনিদের সব ধরনের কাজেরই বৈধতা দেওয়া হয়। মূলত তাদের মাধ্যমেই সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পান জিয়াউর রহমান। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপ্রধান হন। খুনি মেজর (বরখাস্ত) শাহরিয়ার অন্য একজনের স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে লিবিয়ায় চলে যান। মেজর বজলুল হুদা বিয়ে না করেই নারায়ণগঞ্জের এক মেয়েকে নিয়ে লিবিয়ায় যান। পরবর্তী সময়ে সেনা তত্ত্বাবধানে তাদের কাগজপত্র তৈরি করে লিবিয়ায় পাঠানো হয়।
১৫ আগস্ট কালরাতের বিষয়ে মাজেদ উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে। এর পর থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি পদক্ষেপের ওপর নজরদারি করে খুনিরা। এরই অংশ হিসেবে আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় মাঝেমধ্যেই ব্যাডমিন্টন খেলতে যেতেন মাজেদ। অপেক্ষাকৃত জুনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে তিনিও খুনিদের সঙ্গে ছিলেন। সবাই বঙ্গবন্ধুর সেই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে ঢুকলেও এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী প্রথম বঙ্গবন্ধুকে গুলি করেন। তারপর রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন বঙ্গবন্ধুর পরিবারের অন্য সদস্যদের একে একে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেন। পরদিন স্টেশন সদর দফতরে গিয়ে তৎকালীন স্টেশন কমান্ডার কর্নেল হামিদের সঙ্গে দেখা করে ইউনিটে যোগ দিতে চাইলেও কর্নেল হামিদ তাকে যোগদান করতে না দিয়ে বেতার ভবনে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
ইতিহাসের ওই নারকীয় হত্যাযজ্ঞে তৎকালীন জিয়াউর রহমানের পরোক্ষ সমর্থন ছিল উল্লেখ করে মাজেদ বলেন, ‘আগের রাতে হত্যাযজ্ঞ শেষে পরদিন পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জিয়াউর রহমান সাহেব সকাল ১০টা-১১টার দিকে ক্যান্টনমেন্ট অডিটরিয়ামে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের সব জওয়ান ও অফিসারকে অ্যাড্রেস করেন। ওইখানে উনি (জিয়াউর রহমান) মটিভেট করেন, যে ঘটনা গত রাতে ঘটে গেছে তোমরা সেসব নিয়ে কোনো রকম মাথা ঘামাবে না। তোমরা সব চেইন অব কমান্ডে ফিরে যাও। সবাই কাজকর্ম করো। এটা জাতির ব্যাপার, এটা আমাদের ব্যাপার নয়।’
মাজেদ বলেন, তখন বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটা সিপাহিও ক্যুর বিষয়ে জানতেন না। তাদের কোনো অফিসারও এতে ইনভলবড ছিলেন না। তবে ওই বেঙ্গল রেজিমেন্টের দুজন-তিনজন রিটায়ার্ড অফিসার ছিলেন। আর বাকিরা ট্যাংক রেজিমেন্ট, আর্মার্ড কোরের লোক। তিনি (জিয়াউর রহমান) বক্তৃতা দিয়েছেন, মটিভেট করেছেন। সমর্থন না থাকলে আগ বাড়িয়ে তিনি করতে যাবেন কেন? রেগুলার ওরাই ডিক্টেক্ট করত সবকিছু। হুকুম চালাত ওইখান থেকে। ওরা যা-ই চাইত তা-ই উনি করে দিতেন।
আর্মির চেইন অব কমান্ড ছিল না উল্লেখ করে মাজেদ বলেন, ‘উনি (জিয়াউর রহমান) বঙ্গভবনে খুনিদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতেন এবং খুনিরাও তার সঙ্গে ওইখান থেকে যোগাযোগ করতেন ডাইরেক্ট। তখন আর্মির চেইন অব কমান্ড বলতে কিছু ছিল না। ওরাই চালাতেন প্র্যাকটিকালি। ওইখান থেকে। মাঝখানে সেনা হেডকোয়ার্টারে একবার আমি ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে উনাকে (জিয়াউর রহমান) আমার জন্য একটি সিভিল সার্ভিসের ব্যাপারে অনুরোধ করেছিলাম। ইন্টারভিউতে তিনি (জিয়াউর রহমান) প্র্যাকটিকালি এই ক্যুর ব্যাপারে পক্ষপাতসুলভ কথাবার্তা বলছেন। বোঝা গেছে, ক্যুর সমর্থকদের সঙ্গে উনার (জিয়াউর রহমান) সব ধরনের যোগাযোগ ছিল।’
বিদেশে মিশনে চাকরির বিষয়ে মাজেদ বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে যখন বিদেশে যাওয়ার প্রশ্ন এলো, তখন তিনি (জিয়াউর রহমান) দফায় দফায় বঙ্গভবনে মিলিটারি সেক্রেটারি, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন। এগুলো আমরা দূরে থেকে দেখেছি। পরে (জিয়াউর রহমান) বললেন, এখানে (বঙ্গভবনে) যে সমস্ত অফিসার আছে তারা সবাই বিদেশে যাবে। তাদের কাগজপত্র তৈরি করার জন্য তৎকালীন মিলিটারি সেক্রেটারি ব্রিগেডিয়ার মাশহুর হককে নির্দেশ দেন তিনি। ওই সময় আমি বঙ্গভবনে স্কট ডিউটিতে ছিলাম। পরবর্তী সময়ে আমাদের ব্যাংককে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে যাওয়ার পরই জিয়াউর রহমান সাহেব পুরো ক্ষমতা নিয়ে নেন। কিছুদিন পর আমাদের লিবিয়ায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে আমরা শুনলাম রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের নেতৃত্বে কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে মেরে ফেলা হয়েছে। রিসালদার বলছিল, তার সঙ্গে দুইটা সিপাইও ছিল। সিপাইরা তো ওইখানে যাওয়ার কথা নয়।’
জবানবন্দিতে মাজেদ উল্লেখ করেন, ‘লিবিয়ায় যাওয়ার পরে বলা হলো সবার ফরেইন সার্ভিস হবে। পুরস্কার হিসেবে জিয়াউর রহমান সবাইকে ফরেইন সার্ভিস দেবেন। একটা করে প্রমোশনও দিয়ে দেবেন। কিছুদিন পরে (আমার একজ্যাক্ট ডেইট মনে নাই) জেনারেল জিয়াউর রহমানের প্রতিনিধি হিসেবে জেনারেল নুরুল ইসলামকে (শিশু) আমাদের কাছে পাঠানো হয়। কার কার কোথায় ফরেইন পোস্টিং হবে সেই চয়েজ নিতেই তিনি গেছেন ওইখানে।’
বিদেশি মিশনে চাকরিপ্রাপ্ত অনেকেরই যোগ্যতা ছিল না জানিয়ে মাজেদ বলেন, ‘উনার (জিয়াউর রহমান) সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই তাদের একটা করে প্রমোশন জাম্পড এবং একটা করে ফরেইন প্রাইজ পোস্টিং দেওয়া হয়েছিল। তবে ওই অফিসারদের অনেকেই ফরেইন সার্ভিসের জন্য কোয়ালিফাইড ছিলেন না, এমনকি কেউ কেউ গ্র্যাজুয়েটও ছিলেন না। তাদের বেশির ভাগই স্বল্পমেয়াদি কমিশনড অফিসার ছিলেন। তাদের (ক্যু অফিসারের পরিবার) বঙ্গভবন থেকেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল লিবিয়ায়। অনেকে বিয়ে না করেও তার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে গেছেন। মেজর শাহরিয়ার অন্যের স্ত্রীকে নিয়ে চলে যান। মেজর হুদা নারায়ণগঞ্জের এক মেয়েকে বিয়ে না করেই সঙ্গে নিয়ে যান। পরে এসব অবৈধ কাজের বৈধ কাগজপত্র তৈরি করে লিবিয়ায় পাঠানো হয়।’
ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ প্রসঙ্গে মাজেদ বলেন, ‘খুনিদের বঙ্গভবনে অবস্থানের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ। আমরা শুনেছি যে উনি (শহীদ খালেদ মোশাররফ) বলছেন, ওই মেজররা শুধু শুধু বঙ্গভবনে বসে থাকবে কেন? তারা চলে আসবে। ইউনিটে চলে আসবে। তারা কমান্ডে ফিরে আসবে। ওইটা তার (খালেদ মোশাররফের) একটা ন্যায্য দাবি। সঠিক দাবি। চেইন অব কমান্ড। চেইন অব কমান্ড ছাড়া ফোর্স চলে নাকি? তবে শহীদ খালেদ মোশাররফকে যারা শহীদ করেছে, তাদের পেছনেও ক্যু পার্টির সমর্থন ছিল। জিয়াউর রহমান এলে ডাইরেক্ট লিফট দিয়ে দোতলায় উঠে (ভিআইপি স্যুইট) যেতেন। সেখানেই ক্যু পার্টির সঙ্গে তার কথোপকথন হইত।’
প্রসঙ্গত, গত বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি ও মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকরের আগে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পাঁচ খুনি এখনো পালিয়ে আছেন। তাদের মধ্যে এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী কানাডায় এবং এ এম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। অন্য তিনজন খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম ও মোসলেহ উদ্দিনের অবস্থান সম্পর্কে সরকারের কাছে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই। এ ছাড়া ফাঁসির দন্ডাদেশপ্রাপ্ত আরেক আসামি আজিজ পাশা ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান।
দেশের ৭৪তম স্বাধীনতা দিবসে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। লাল কেল্লার থেকে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া বার্তায় তিনি বলেছেন, দেশে করোনার তিনটি ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে। সবুজ সংকেত পেলে প্রত্যেক ভারতীয়র কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছে দিতে রোডম্যাপও তৈরি করা হয়ে গেছে জানান তিনি।
এছাড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে ন্যাশনাল ডিজিটাল হেলথ মিশন ঘোষণা করেছেন মোদি এবং বলেছেন প্রত্যেক নাগরিককে দেওয়া হবে হেলথ আইডি। ভ্যাকসিনের অগ্রগতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘পরীক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে তিনটি ভ্যাকসিন। যখন বিজ্ঞানীরা সবুজ সংকেত দেবেন, তখনই আমরা উৎপাদন শুরু করবো। অল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে ভ্যাকসিন প্রত্যেক ভারতীয়র কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, এর জন্য আমরা রোডম্যাপ তৈরি করেছি।’
ভ্যাকসিন তৈরি করতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটছে ভারত। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের অনুমোদন নিয়ে মানবদেহে ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত বায়োটেক ইন্টারন্যাশনাল। এছাড়া জিডাস ক্যাডিলা ও সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া পরীক্ষা চালাচ্ছে।
লাল কেল্লা থেকে টানা সপ্তমবার স্বাধীনতা দিবসে বক্তব্য রাখলেন মোদি, তবে আবহ ঠিক গত কয়েক বছরের মতো ছিল না। খুব কম সংখ্যক অতিথি এসেছিলেন এবং তাদের প্রত্যেকের মুখে ছিল মাস্ক। স্কুলের শিশুরা ছিল না। অন্তত ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রেখে আসন সাজানো হয়েছিল এবং মিলিটারি ড্রিলেও ছিল সামাজিক দূরত্ব।
স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে শুরুতেই করোনাযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান মোদি, ‘আমরা অদ্ভুত সময় পার করছি। আজ মহামারির কারণে এই লাল কেল্লায় শিশুদের দেখতে পাচ্ছি না। পুরো জাতির পক্ষ থেকে আমি সব করোনাযোদ্ধাদের ধন্যবাদ জানাই। স্বাস্থ্যকর্মীদের সবাইকে যারা কর্মী, ডাক্তার ও নার্স- দেশসেবায় তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ১৩০ কোটি ভারতীয় সংকল্প সঙ্গে নিয়ে আমরা এই সংকট জয় করবো।’
দীর্ঘদিনের বিরহ বাস কাটলো সৃজিত-মিথিলা দম্পতির। একে অপরের দেখা পেলেন। করোনার কারণে দুই বাংলার এ দুই তারকা রপ্ত হতে পারেন।
অবশেষে ভালোবাসাই মিলিয়ে দিল কলকাতার চলচ্চিত্র পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় ও বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলাকে। ১৫ অগস্ট, ভারতের স্বাধীনতা দিবসের দিন বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পার করে শ্বশুরবাড়ির গিয়েছেন মিথিলা। এ খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন সৃজিত।
স্ত্রী মিথিলার কলকাতায় আসার খবর জানিয়ে ফেসবুকে সৃজিত লিখেছেন, '১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্টে ঘৃণার কারণে অনেকেই সীমান্ত পার হয়েছিলেন। ২০২০ সালের ১৫ অগস্ট ভালোবাসার জন্য দুজন ফের সীমানা পার হলো।'
এই পোস্টের সঙ্গে পেট্রাপোল সীমান্ত পার করে মিথিলা ও তার মেয়ে আইরাকে এদেশে নিয়ে আসার বেশ কয়েকটি ছবিও পোস্ট করেছেন সৃজিত। আজ শনিবার সকালে সীমান্তের প্রয়োজনীয় নিয়মকানুন মেনেই বাংলাদেশ থেকে ভারতে যান মিথিলা ও তার মেয়ে আইরা।
প্রসঙ্গত, গেল বছরের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন হিন্দু-মুসলিম মৈত্রী বার্তা দিয়ে বিয়ে করেন সৃজিত-মিথিলা। তবে বিয়ের পর মধুচন্দ্রিমা সেরে বাংলাদেশে মেয়ে আইরাকে নিয়ে ফিরে যান মিথিলা। তারপর থেকে সৃজিত-মিথিলা দুজনে আলাদাই ছিলেন করোনার কারণে।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ নিহতের ঘটনায় আজ গণশুনানি করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। সকাল ১০টায় টেকনাফের শ্যামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জের কার্যালয়ে এই শুনানি শুরু হবে।
এ বিষয়ে ১২ আগস্ট সন্ধ্যায় একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। নির্ধারিত সময় প্রত্যক্ষদর্শীদের উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাজাহান আলী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা নিহতের ঘটনায় ২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। এদিকে গতকাল আলোচিত এ হত্যা মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের সিনিয়র এএসপি খায়রুল ইসলাম শামলাপুরের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় ঘটনার বর্ণনা দেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
Post Written by : Rubel Islam
Original Post URL : https://ift.tt/3iEjiaS
Post Come trough : Nachole News | নাচোল নিউজ
নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জে আরও নতুন করে ১৯ জনের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার ১৪ জন, শিবগঞ্জ উপজেলার ৪ জন ও ভোলাহাট উপজেলার ১ জন।
সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, এ নিয়ে ১৫ আগস্ট শনিবার পর্যন্ত মোট আক্রান্তর সংখ্যা দাঁড়ালো ৫৮৮ জন। ৫৮৮ জনের ভেতর সুস্থ হয়েছেন ৩৭২ জন। বাকীদের চিকিৎসা চলছে। আর মারা গেছে নারীসহ ১০ জন।রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ৬৬ টি পরীক্ষার বিপরীতে ১৯ জনের রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরদ উপজেলায় ১৪ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। এরা হচ্ছে, পৌর এলাকার ১৩ নং ওয়ার্ডের পিটিআই মাস্টার পাড়ার ৩৪ বয়সের ১ ব্যক্তি, বারঘরিয়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড তাঁতীপাড়ার ৬৫ বয়সের ১ বৃদ্ধ, পৌর এলাকার ১৪ নং ওয়ার্ড চাঁদলাই জোড় বাগানের ৪০ বছর বয়সের ১ জন, ১২ নং ওয়ার্ডের চরমোহনপুর এলাকার ২৪ বছর বয়সের ১ নারী।
বারঘরিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর ২৫ বছর বয়সের ১ জন। তার বাড়ি ভোলাহাট উপজেলায়। বর্তমানে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে আইসোলেশনে আছেন। পৌর এলাকার ৪ নং ওয়ার্ডের দ্বারিয়াপুর বিশ্বাস পাড়ার ৫৮ বছরর ১ বৃদ্ধ।
পৌর এলাকার ১৪ নং ওয়ার্ডের আজাইপুর মহল্লার ৩২ বছর বয়সের ১ যুবক, আধুনিক সদর হাসপাতালের ১ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স। তার বাড়ি নাটোর জেলায়। বর্তমানে তিনি বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
বারঘরিয়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ২৮ বছর বয়সের ১ জন। তিনি সদর আধুনিক হাসপাতালের ডাক্তার। গোবরাতলা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য। আশা ব্যাংকের একজন মাঠকর্মী। তার বাড়ি চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নে। বয়স ৪০ বছর।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসের গাড়ীচালক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তার বাড়ি বারঘরিয়া ইউনিয়ন এর লক্ষীপুরে। পৌর এলাকার ১৩ নং ওয়ার্ডের রেহাইচর এলাকার ৫৫ বছর বয়সের ১ জন বৃদ্ধা। ১৪ নল ওয়ার্ডের আজাইপুর মহল্লার ৬৫ বছরের আরেক বৃদ্ধা।
এদিকে শিবগঞ্জ উপজেলায় পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ৪ জনের। আর অন্য ১জন ভোলাহাট উপজেলার। শিবগঞ্জ উপজেলার ছত্রাজিতপুর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড জাহাঙ্গীর পাড়ার ৬৪ বছর বয়সের অবসরপ্রাপ্ত কাস্টমস অফিসার, নামো বহলাবাড়ির ৪০ বছর বয়সের ১ জন ব্যবসায়ী, কানসাট ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড শিবনগরের ৪৫ বছর বয়সের ১ গৃহিণী, লাউঘাটা ধাইনগর ৬ নং ওয়ার্ডের ৭০ বছর বয়সের ১ জন বৃন্ধা।
বারঘরিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর ২৮ বছর বয়সের ১ জন অফিস সহায়ক। তার বাড়ি ভোলাহাট উপজেলায়। বর্তমানে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ডরমেটরিতে আইসোলেশনে আছেন। -কপোত নবী।
Post Written by : Admin
Original Post URL : https://ift.tt/322oKOm
Post Come trough : Nachole News | নাচোল নিউজ
এই গরমে ছোট-বড় সবারই দেহের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এতে ত্বকে ফুটে ওঠে লালচে কালো ভাব। ডাবের পানি দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা কমিয়ে শরীরকে রাখে ঠাণ্ডা। ডাবের পানি যে কোনো কোমল পানীয় থেকে অধিক পুষ্টিসমৃদ্ধ।
কারণ, এটি সৌন্দর্যচর্চার প্রাকৃতিক মাধ্যম ও চর্বিবিহীন পানীয়। ডাবের পানি মিষ্টি হওয়া সত্ত্বেও ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য উপকারী।
ডাব নিয়মিত খেলে কিডনি রোগ হয় না। আবার কিডনি রোগ হলে ডাবের পানি পান করা সম্পূর্ণ নিষেধ। কারণ কিডনি অকার্যকর হলে শরীরের অতিরিক্ত পটাশিয়াম দেহ থেকে বের হয় না। ফলে ডাবের পানির পটাশিয়াম ও দেহের পটাশিয়াম একত্রে কিডনি ও হৃৎপিণ্ড দুটোই অকার্যকর করে। এ অবস্থায় রোগীর মৃত্যু অনিবার্য।
তাই যাদের দেহে প্রচুর পটাশিয়াম আছে এবং বের হয় না তাদের ডাবের পানি পান করা ঠিক না? ডাবের পানি রোগীকে পান করানোর আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
দেহে ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের অভাব হলে এবং বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ হলে ডাক্তার ডাবের পানি পান করার পরামর্শ দেন। ডায়রিয়া বা কলেরা রোগীদের ঘনঘন পাতলা পায়খানা ও বমি হলে দেহে প্রচুর পানি ও খনিজ পদার্থের ঘাটতি দেখা যায়। ডাবের পানি এই ঘাটতি অনেকাংশেই পূরণ করতে পারে। নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে দেহে আয়রনের ঘাটতি পূরণ হয়।
রক্ত তৈরি করার জন্য আয়রন হলো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত তৈরি হলে প্রতিটি অঙ্গ হবে শক্তিশালী, ফলে কর্মশক্তিও বাড়বে। দেহে আয়রনের পরিমাণ ঠিক থাকলে ত্বক হবে উজ্জ্বল ও মসৃণ।
ডাবের পানিতে খনিজ লবণ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাসের উপস্থিতিও উচ্চমাত্রায়। এসব খনিজ লবণ দাঁতের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়
দাঁতের মাড়িকে করে মজবুত। অনেকের দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে। মাড়ি কালচে লাল হয়ে যায়। হাসি বা কথা বলার সময় তা দেখা যায়।
Post Written by : Rubel Islam
Original Post URL : https://ift.tt/2FnU2at
Post Come trough : Nachole News | নাচোল নিউজ
মিশরের উপহার দেয়া ট্যাংক যেভাবে মুজিব হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছিল
জাতীয়
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক
১৯৭৪ সালে মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার আল সাদাত বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে ৩০টি ট্যাংক উপহার দিয়েছিলেন। অথচ সেই ট্যাংক শেখ মুজিবকে হত্যার কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট।
শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের সাথে হত্যার সময় ঘাতক সেনা কর্মকর্তারা শহরে ত্রাস সৃষ্টির জন্য সেসব ট্যাংক ব্যবহার করেছিল। যদিও সেসব ট্যাংকে কোন গোলাবারুদ ছিল না।
মিশর কেন ট্যাংক উপহার দিয়েছিল?
১৯৭৩ সালে আরব ইসরায়েল যুদ্ধের সময় সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ আরবদের সমর্থন দিয়েছিল। আরবদের প্রতি সমর্থন এবং ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে মিশরে চা পাঠিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।
আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার আল সাদাত বাংলাদেশের পাঠানো উপহারের কথা ভোলেননি। ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিশরের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে আসেন।
তখন আনোয়ার আল সাদাতের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবকে জানানো হয় যে মিশর বাংলাদেশকে ৩০টি ট্যাংক উপহার দিতে চায়। উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের অস্ত্রভাণ্ডার গড়ে তোলা।
পাকিস্তানী সাংবাদিক অ্যান্থনী মাসকারেণহাস তার লেখা ‘বাংলাদেশ: আ লিগ্যাসি অব ব্লাড’ বইতে সে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।
সে বইটির বাংলা অনুবাদ করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ রক্তের ঋণ’ শিরোনামে। ১৯৮৮ সালে অনুবাদ করা সে বইটি প্রকাশ করেছে হাক্কানি পাবলিশার্স।
অ্যান্থনী মাসকারেণহাস-এর বর্ণনা অনুযায়ী শেখ মুজিবুর রহমান ট্যাংক গ্রহণ করতে খুব একটা রাজি ছিলেন না। কিন্তু পররাষ্ট্র দপ্তর এবং মন্ত্রীরা তাকে বোঝাতে সক্ষম হন যে মিশরের উপহার ফিরিয়ে দেয়া ঠিক হবে না।
এই ট্যাংকগুলো নিয়ে আসার জন্য তৎকালীন সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল মিশর সফরে যায়। ১৯৭৪ সালের জুন মাস নাগাদ এসব ট্যাংক বাংলাদেশে আসে।
তখন ঢাকা ব্রিগেড কমান্ডার ছিলেন, মইনুল হোসেন চৌধুরী, যিনি মেজর জেনারেল হিসেবে অবসর নিয়েছেন এবং ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা ছিলেন। ২০১০ সালে জেনারেল চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন।
তার লেখা ‘এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য: স্বাধীনতার প্রথম দশক’ বইতে মিশরের উপহার দেয়া ট্যাংক সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে।
জেনারেল মইনুল লিখেছেন, তিনি শেখ মুজিবের কাছে মতামত দিয়েছিলেন যে, মিশর থেকে দেয়া ট্যাংকগুলো ঢাকায় রাখার প্রয়োজন নেই এবং প্রশিক্ষণ দেবার সুযোগ-সুবিধা নেই।
‘একদিন কথা প্রসঙ্গে আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে ট্যাংকগুলোকে উত্তরবঙ্গের রংপুর সেনানিবাসে পাঠানোর প্রস্তাব করি। ..কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আমার কথার কোন গুরুত্ব দেননি। দু:খজনক হলেও সত্যি, ১৯৭৫ সালে মুজিব হত্যার সময় ওই ট্যাংকগুলোই ব্যবহার করা হয়েছিল।’
মুজিব হত্যাকাণ্ড ও মিশরের দেয়া ট্যাঙ্ক
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ভোর চারটার দিকে ঘাতক ফারুক রহমানের সহযোগী এবং অনুগত সৈন্যরা পরিকল্পনা অনুযায়ী সংগঠিত হতে লাগলো। ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে রাতের আঁধারে এতো বড় ধরণের প্রস্তুতি গোয়েন্দারা টের পায়নি কেন সেটি আজও এক বিরাট প্রশ্ন।
জড়ো হওয়ার আধাঘণ্টার মধ্যেই ফারুক রহমান তার বাহিনী নিয়ে যাত্রা শুরু করলো।
সাংবাদিক অ্যন্থনী মাসকারেণহাস’র বর্ণনা অনুযায়ী গন্তব্যের পথে ফারুক ক্যান্টনমেন্টের গোলাবারুদের সাব-ডিপোর সামনে থামলো। সে ধারণা করেছিল সেখানে ট্যাংকের গোলাবারুদ এবং মেশিনগানের কিছু বুলেট পাওয়া যাবে। কামানের ব্যারেলের ধাক্কায় ডিপোর দরজা খোলা হলো।
কিন্তু সেখানে গোলাবারুদ বা মেশিনগানের বুলেট কিছুই পাওয়া যায়নি।
মাসকারেণহাস লিখেছেন, সুতরাং ধোঁকা দিয়ে কার্যসিদ্ধি করা ছাড়া আর কোন গতি রইলো না।
ফারুকের ট্যাংক বহর যখন এগিয়ে যাচ্ছিল তখন ৪র্থ এবং ১ম বেঙ্গল পদাতিক বাহিনীর একদল সৈন্যের সাথে তাদের দেখা হলো। এ সময়ে তারা প্রাত:কালীন পিটি করতে বের হয়েছিল। কিন্তু ফারুকের নেতৃত্বে ট্যাংক বহর প্রশিক্ষণ এলাকা ছাড়িয়ে শহরের মূল সড়কের দিকে গেলেও কারো মনে কোনও প্রশ্ন জাগেনি।
ফারুক রহমানসহ ঘাতকদের মনে তৎকালীন রক্ষীবাহিনী নিয়ে উদ্বেগ ছিল। তারা ভেবেছিল, মুজিবকে হত্যা করতে গেলে রক্ষীবাহিনীর তরফ থেকে প্রতিরোধ আসতে পারে।
সেজন্য ক্যান্টনমেন্ট থেকে ট্যাংকের বহর নিয়ে বের হয়ে ফারুক রহমান গিয়েছিল শেরে বাংলা নগরে রক্ষীবাহিনীর সদরদপ্তরে। আরেকটি দল গিয়েছিল শেখ মুজিব, শেখ ফজলুল হক মনি এবং আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়িতে।
তখন রক্ষীবাহিনীর উপপরিচালক ছিলেন আনোয়ার উল আলম। ২০১৩ সালে তার লেখা ‘রক্ষী বাহিনীর সত্য-মিথ্যা’ বই প্রকাশিত হয়।
সে বইতে তিনি লিখেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট ভোররাতে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের টেলিফোনে তার ঘুম ভাঙ্গে।
শেখ মুজিবুর রহমান তাকে বলেন, শহীদ, মনির (শেখ মনির) বাসায় কালো পোশাক পরা কারা যেন অ্যাটাক করেছে। দেখ তো কী করা যায়?
এরপর বিভিন্ন মারফত তিনি জানতে পারেন যে রাষ্ট্রপতির বাসায় হামলা হয়েছে। তার বাড়ির পাশেও একটি গোলা এসে পড়ে।
আনোয়ার উল আলম লিখেছেন, ঢাকা বিমানবন্দরের দেয়াল ভেঙ্গে কয়েকটি ট্যাংক রক্ষী বাহিনীর প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছে। আমরা বুঝতে পারি, সেনাবাহিনীর একটি অংশ বিদ্রোহ করেছে এবং তারাই অভ্যুত্থান সংগঠিত করছে।
‘আমরা সঙ্গে সঙ্গে রক্ষীবাহিনীর সবাইকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিই। সরোয়ার (তৎকালীন রক্ষীবাহিনীর উপপরিচালক) দেশের বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে রক্ষীবাহিনীর সদস্যদের তৈরি থাকতে বলেন।’
আলমের বর্ণনা অনুযায়ী ঢাকায় প্রতিরোধ গড়ার মতো কোন শক্তি রক্ষীবাহিনীর ছিল না।
ট্যাংক নিয়ে ধোঁকা দিয়েছিল ফারুক রহমান
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সকাল ১০:৩০ মিনিটের দিকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারে কর্নেল সাফায়াত জামিলের রুমে আসেন সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি পরবর্তীতে ব্রিগেডিয়ার হিসেবে অবসর নেন এবং ২০০৭ সালে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন তার ‘বাংলাদেশ: রক্তাক্ত অধ্যায় ১৯৭৫-৮১’ বইতে।
ব্রিগেডিয়ার হোসেন লিখেছেন, সেখানে কিছুক্ষণ পরে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশারফ এবং তার একটু পরে মেজর ফারুক রহমান (হত্যাকারী) আসেন।
ট্যাংকের কালো পোশাক পরিহিত অবস্থায় মেজর ফারুক সে রুমে প্রবেশ করেন। মেজর ফারুক তখন বলেন, তার ট্যাংকে কোন গোলাবারুদ নেই।
ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত লিখেছেন, এই প্রথম আমি জানলাম যে, ফারুকের কোন ট্যাংকেরই মেইন গানের কোন গোলাবারুদ রাতের অভিযানের সময় এবং প্রায় সকাল ১০টা পর্যন্ত ছিল না। .... ফারুক আরো জানালো গোলাবারুদ না থাকা সত্ত্বেও তারা খালি ট্যাংক নিয়ে সকলকে, এমনকি রক্ষীবাহিনীকেও ফাঁকি দিতে পেরেছে।’
‘১৫ই আগস্টে যখন বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে হামলা করা হয় তখন ফারুক দুটো ট্যাংক নিয়ে শেরেবাংলা নগরে রক্ষীবাহিনী হেডকোয়ার্টার ঘিরে ফেলে এবং সেখানে উপস্থিত ব্যাটালিয়নকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে।’
শেখ মুজিবকে হত্যা জন্য ফারুক রহমান যেসব ট্যাঙ্ক নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছিলেন সেগুলোতে কোন গোলাবারুদ ছিলনা। সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেণহাসের বইতেও এ তথ্য উঠে এসেছে।
তার সাথে কথোপকথনের ভিত্তিতে মাসকারেনহাস লিখেছেন, ফারুক আমাকে পরে জানিয়েছিল, মনস্তাত্ত্বিক অস্ত্র হিসেবে ট্যাংকগুলো যে কতটা কার্যকরী তা খুব কম লোকই জানে। ট্যাংক দেখে জীবনের ভয়ে পালাবার চেষ্টা করবে না, এমন সাহসী লোক খুব কম পাওয়া যাবে।
ফারুক যখন ট্যাংক নিয়ে রক্ষীবাহিনীর সদরদপ্তরের দিকে যাচ্ছিল তখন তার মনেও সন্দেহ এবং উদ্বেগ ছিল। যেহেতু ট্যাংকে কোন গোলাবারুদ ছিলনা সেজন্য ফারুক রহমার তার সহযোগীদের বলেছিল চোখে মুখে সাহসী ভাব ফুটিয়ে রাখতে।
অ্যান্থনী মাসকারেণহাসকে ফারুক রহমান বলেন, আমরা যখন ওদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন রক্ষীবাহিনীর লোকেরা অবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে দেখছিল। আমরা তাদের দিকে তীক্ষ্ণ-ভাবে তাকিয়ে ছিলাম। সে ছিলো এক ভয়ঙ্কর অবস্থা। আমি ড্রাইভারকে বললাম, ওরা যদি কিছু করতে শুরু করে, দেরি না করে তাদের উপরেই ট্যাংক চালিয়ে দেবে।
‘তার আর দরকার হয়নি।...নিজেদের সামনে হঠাৎ ট্যাঙ্ক দেখে, ওরা গায়ের মশা পর্যন্ত নাড়াবার সাহস পেল না।’
অ্যান্থনী মাসকারেনহাসের সাথে সাক্ষাৎকারে ফারুক রহমান স্বীকার করেন, ঐ অবস্থায় কেউ যদি তাকে সত্যিকারভাবে প্রতিরোধ করতে চাইতো, তাহলে তার কিছুই করার থাকতো না। খবর: বিবিসি বাংলা।
রাশিফলের মাধ্যমে জেনে নিন কেমন যাবে আপনার আজকের দিনটি। তবে মনে রাখবেন জ্যোতিষ যাই বলুক, আপনার ভাগ্যের নির্ধারক কিন্তু আপনি নিজেই!
মেষ (মার্চ ২১-এপ্রিল ১৯)
সকাল থেকে বুকের যন্ত্রণায় কষ্ট পেতে পারেন। অপরের কোনো কথার জন্য অশান্তি বাড়তে পারে। আজ পুরনো দিনের কোনো আশা ভঙ্গ হতে পারে। আজ সন্তানের কোনো ভালো জিনিস আপনাকে অবাক করবে।
বৃষ (এপ্রিল ২০-মে ২০)
আজ চিন্তা বাড়তে পারে। স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকুন। বাড়ির বাইরে গেলে কোনো বিপদে পড়তে পারেন। খুব বেশি জরুরি কাজ না থাকলে বাইরে না যাওয়াই ভালো।
মিথুন (মে ২১-জুন ২০)
আজ প্রিয় মানুষের দেখা পেতে পারেন। বাইরে বের হলেই মাত্রাছাড়া ব্যয় হতে পারে। আপনি কোনো কাজে বন্ধুর সাহায্য পেতে পারেন। প্রতিবেশীদের সঙ্গে খুব বুঝে কথা বলুন।
কর্কট (জুন ২১-জুলাই ২২)
কারো সঙ্গে বিবাদে না জড়ানোই ভালো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুঁদ না হয়ে থেকে সৃজনশীল কাজ করতে পারেন। এসব কাজ পরবর্তীতে উপকারে আসবে আপনার।
সিংহ (জুলাই ২৩- আগস্ট ২২)
আজ প্রেম শুভ। ভালো কোনো কাজের সন্ধান পেতে পারেন। কোনো ধরনের আড্ডা না দেয়াই ভালো, বিবাদের আশঙ্কা আছে। স্ত্রীর প্রেরণা আপনাকে উদ্যমী করে তুলবে। নিজের কারো শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে চিন্তা হতে পারে।
কন্যা (আগস্ট ২৩-সেপ্টেম্বর ২২)
আজ বাড়িতে কোনো দামি জিনিস নষ্ট হতে পারে। অসৎ সঙ্গ ত্যাগ না করলে সংসারে সমস্যা হতে পারে। আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করা মুশকিল। আপনার অজান্তে গুপ্ত শত্রু বৃদ্ধি পেতে পারে।
তুলা (সেপ্টেম্বর ২৩-অক্টোবর ২২)
আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখুন। প্রয়োজনে কিছুটা সময় নিন, ভাবুন। স্যোশাল এনগেজমেন্ট রাখুন। শরীরে ছোটখাটো সমস্যা থাকবে। বাসার সবাইকে নিয়ে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে আড্ডা দিন।
বৃশ্চিক (অক্টোবর ২৩-নভেম্বর ২১)
দাম্পত্য কলহ মিটে গিয়ে সুখের দিন আসবে। স্বামী-স্ত্রী মিলিত কোনো কাজে সফলতা পাবেন। প্রেমের ব্যপারে কোনো চিন্তা বাড়তে পারে। মাথার যন্ত্রণা বাড়তে পারে।
ধনু (নভেম্বর ২২- ডিসেম্বর ২১)
জীবজন্তু থেকে সাবধানতা বজায় রাখুন। একটু বুদ্ধির ভুল আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে। আজ কারো কাছে আত্মসমর্পণ করলে আপনার পক্ষে ভালো হবে। আজ সারাদিন কাজের চাপ বাড়তে পারে।
মকর (ডিসেম্বর ২২- জানুয়ারি ১৯)
কারো কোনো পরামর্শ আপনার জীবনের মোর ঘুরিয়ে দিতে পারে। অর্থ ব্যয়ে আরো সংযমী হওয়া প্রয়োজন। এই সময় ব্যবসায়ীদের কোনো কিছুতেই বিনিয়োগ করা ঠিক হবে না।
কুম্ভ (জানুয়ারি ২০- ফেব্রুয়ারি ১৮)
কারো কাছ থেকে হঠাৎ কোনো উপহার পেতে পারেন। বাবার শরীর নিয়ে একটু চিন্তা থাকবে। বাড়তি কোনো ব্যবসার কথা না ভাবাই শ্রেয়। রাস্তার লোকের সঙ্গে হঠাৎ বিবাদ হতে পারে, তাই ঘরে থাকাই ভালো।
মীন (ফেব্রুয়ারি ১৯- মার্চ ২০)
বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে ভালো কোনো খবর আসতে পারে। সংসারে আচরণ সংযত করে চলুন। ভ্রমণের উদ্দেশ্য বাতিল করুন। বাড়িতে দূরের কোনো আত্মীয়ের সমাগম ঘটবে।
ইউপি চেয়ারম্যান জামেদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর ছেলে ও মেয়ের পরিবার আমার কাছে এসেছিল। মেয়ের অভিভাবকরা জানান মেয়েকে ফেরত দিলে আমরা মামলা করব না। কিন্তু পরে শুনি মেয়ের পরিবার মামলা করেছেন।
পঞ্চগড় প্রতিনিধি
পঞ্চগড়ে মিথ্যা অপহরণ মামলায় প্রতিবেশীকে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে হবিবর রহমান নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার পামুলি ইউনিয়নের মোসলেম পাইকান পাড়ায় এই ঘটনা ঘটেছে।
গত রোববার (৯ আগস্ট) হবিবর রহমান দেবীগঞ্জ থানায় তার মেয়ে শারমিন আক্তারকে অপহরণের দায়ে পার্শ্ববর্তী দন্ডপাল ইউনিয়নের উত্তর এনায়েতপুর, সর্দারপাড়া ও লক্ষ্মীনারায়নী এলাকার ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী দন্ডপাল ইউনিয়নের উত্তর এনায়েতপুর এলাকার আজমগীর হোসেনের ছেলে লায়ন ওরফে নয়ন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, হবিবরের মেয়ে শারমিন আক্তারকে মামলার ১নং আসামী নয়ন অনেকদিন থেকে উত্যক্ত করে আসছিল। বিষয়টি নয়নের পরিবারকে জানালে তারা কোন ব্যবস্থা নেননি। ৪ আগস্ট (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় শারমিন তার বড় চাচার বাসায় যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হলে পথে নথিতে উল্লেখিত ৬ জন আসামি জোর করে মেয়েটিকে ব্যাটারি চালিত থ্রি হুইলারে উঠিয়ে নেয়। এরপর থেকে নয়ন ও শারমিনের আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
তবে সরেজমিনে গিয়ে অনুসন্ধানে ভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে। একই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অন্তত ৮ জন পূর্বপশ্চিমকে জানিয়েছেন মামলার বিষয়টি ভিত্তিহীন।
ছেলের প্রতিবেশী মোসলেম পাইকান এলাকার ষাটোর্ধ বৃদ্ধা লতিফা ও ছখিনা পূর্বপশ্চিমকে বলেন, শারমিনের প্রায় আড়াই মাস আগে বিয়ে হয়েছে ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার শিবগঞ্জ পারপুগিপাড়া এলাকায়। কিন্তু মেয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় এখন তার পরিবার বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করছেন। নয়নের সাথে তার প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি আমরা পরে জানতে পারি। শারমিন যদি নয়নের সাথে চলেও যায় তাহলে সে তার নিজ ইচ্ছায় গেছে। এখানে অপহরণের ঘটনা ঘটেনি।
একই কথা বলেন শারমিনের আরেক প্রতিবেশী ধান ব্যবসায়ী আবু বক্কর। তিনি পূর্বপশ্চিমকে বলেন, প্রায় দুই মাস আগে হবিবর তার মেয়ের জামাইকে ফ্রিজ ও মোটরসাইকেল দেয়ার জন্য আমার কাছে ধান বিক্রি করেছিলেন। আর আজ সব অস্বীকার করছেন। নয়ন-শারমিনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক থেকে থাকলে সেটা তাদের নিজস্ব বিষয়। কিন্তু অপহরণের মিথ্যা মামলা দিয়ে তার বাবা, চাচাসহ আরো তিন প্রতিবেশীকে হয়রানি করা হচ্ছে।
ছেলের বড় বোন মনি বলেন, নয়ন আর শারমিনের মধ্যে আগে থেকে প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি আমরা বুঝতে পারিনি। মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) ঘটনার দিন বাবা আমার স্বামী রশিদুলকে মুঠোফোনে কল করে বলেন শারমিন বাসায় নেই, নয়নের সাথে বাসা থেকে চলে গেছে। তখন আমার স্বামীসহ বিষয়টি খোঁজ নিতে বাবার বাসায় আসি। বাসায় আসার পর আমার ভাইয়ের সাথে দেখা হয়নি। আমাদের কাউকে কিছু না বলেই সে বাড়ি থেকে চলে গেছে। পরে জানতে পারি আমাদের হয়রানির জন্য অপহরণের মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে মেয়ের বাবা। যেখানে আমার স্বামীকেও আসামি করা হয়েছে। অথচ আমার শ্বশুরবাড়ি বোদা উপজেলাধীন সর্দারপাড়া। বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) আদালতে জামিন আবেদন করলে আমার বাবা ও স্বামীকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। এখন শ্বশুরবাড়িতে সারা জীবনের জন্য ছোট হয়ে থাকব আমি।
পামুলি ইউপি চেয়ারম্যান ফজলে হায়দার বলেন, বাদী হবিবর রহমান বা তার পরিবারের তরফ থেকে আমার সাথে এই বিষয়ে কোন কথা হয়নি। ঘটনার দিন গ্রাম পুলিশ হামিদুর আমাকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানিয়েছিলেন।
দন্ডপাল ইউপি চেয়ারম্যান জামেদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর ছেলে ও মেয়ের পরিবার আমার কাছে এসেছিল। মেয়ের অভিভাবকরা জানান মেয়েকে ফেরত দিলে আমরা মামলা করব না। কিন্তু পরে শুনি মেয়ের পরিবার মামলা করেছেন।
মেয়ের বড় ভাই রুবেল, ছোট ভাই আপেল ও ফুপাতো ভাই শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে। আমাদের বোনের পূর্বে কোন বিয়ে হয়নি। অপহরণের ঘটনাটি সত্য। মেয়েকে ফিরিয়ে দিবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু পরে উপায়ন্তর না পেয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু পুরো এলাকাবাসী মেয়ের পূর্বে বিয়ে হয়েছে এবং কেন ছেলের পরিবারের হয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন- এমন প্রশ্নে মেয়ের ফুপাতো ভাই শরিফুল ইসলাম রেগে গিয়ে নিজেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ইউনিয়ন শাখার সভাপতি পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকদের দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে বলেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দেবীগঞ্জ থানার এসআই আব্দুর রাজ্জক পূর্বপশ্চিমকে বলেন, প্রাথমিকভাবে অপহরণের বিষয়টি সত্য বলে মনে হয়েছে। তবে মামলাটি এখনো তদন্তাধীন। তাই তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
চলে গেলেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর। করোনায় আক্রান্ত অবস্থায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (১৫ আগস্ট) সকাল ৯টা ১০ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
শনিবার (১৫ আগস্ট) শিল্পীর পারিবারিক বন্ধু আলোকচিত্রী মোহাম্মদ আসাদ এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, মুর্তজা বশীর দীর্ঘদিন ধরেই হৃদরোগ, ফুসফুস ও কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন।
মুর্তজা বশীরের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন৷ শুক্রবার তার করোনা পজিটিভ আসে৷ শুক্রবার থেকে তার পালস পাওয়া যাচ্ছিল না৷ পরে শনিবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন৷
চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর ভাষাবিদ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর ছেলে। তিনি ১৯৩২ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন।
বরেণ্য চিত্রশিল্পীকে এর আগেও বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা নিয়ে একাধিকবার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
চিত্রকলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ১৯৮০ সালে একুশে পদক পান মুর্তজা বশীর। একই কাজে স্বাধীনতা পুরস্কার পান ২০১৯ সালে। কর্মজীবনে তিনি দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
বাংলাদেশে বিমূর্ত ধারার চিত্রকলার অন্যতম পথিকৃৎ মুর্তজা বশীরের ‘দেয়াল’, ‘শহীদ শিরোনাম’, ‘পাখা’, ‘রক্তাক্ত ২১শে’ শিরোনামের চিত্রকর্মগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পেইন্টিং ছাড়াও ম্যুরাল, ছাপচিত্রসহ চিত্রকলার বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করেছেন তিনি। এছাড়া লিখেছেন বই এবং গবেষণা করেছেন মুদ্রা ও শিলালিপি নিয়েও।
‘ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠাই ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন’
জাতীয়
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠাই ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন। তাই আমাদের দায়িত্ব হবে জ্ঞানগরিমায় সমৃদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর অসম্পূর্ণ কাজকে সম্পূর্ণ করে বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন।
আবদুল হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠাই ছিল তাঁর স্বপ্ন। তাই আমাদের দায়িত্ব হবে জ্ঞানগরিমায় সমৃদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর অসম্পূর্ণ কাজকে সম্পূর্ণ করে বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা। তাহলেই আমরা চিরঞ্জীব এই মহান নেতার প্রতি যথাযথ সম্মানপ্রদর্শন করতে পারবো।
তিনি বলেন, এবছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। ২০২১ সালে আমাদের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হবে। এ দুটি জাতীয় অনুষ্ঠান বাঙ্গালি জাতির ইতিহাসে অনন্য মাইলফলক। আমি মনে করি এ দুটি অনুষ্ঠান যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য ও মর্যাদার সাথে উদযাপনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতির উন্নয়নে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্য-আয়ের এবং ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘রূপকল্প-২০২১’, ‘রূপকল্প-২০৪১’ ও ‘ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০’ ঘোষণা করেছেন। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমি দলমতনির্বিশেষে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাই। আসুন, জাতীয় শোক দিবসে আমরা জাতির পিতাকে হারানোর শোককে শক্তিতে রূপান্তর করি এবং তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আত্মনিয়োগ করি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ গোটাবিশ্ব আজ করোনা মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। করোনার প্রভাবে সারাবিশ্ব আজ স্থবির হয়ে পড়েছে। জীবনযাত্রা, কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য, আন্তঃদেশীয় যাতায়াতসহ অর্থনীতি এক মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশ সরকার করোনাপরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি দেশবাসীকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। ‘ভয় নয়, সতর্কতা’ এ মূলমন্ত্রকে ধারণ করে জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
আগামীকাল জাতীয় শোক দিবস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকী। বাঙালি জাতির ইতিহাসে ১৫ আগস্ট এক কলঙ্কজনক অধ্যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের এদিনে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ঘাতকচক্রের হাতে ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শাহাদাতবরণ করেন। একই সাথে শহিদ হন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ অনেক নিকট আত্মীয়। এমন ঘটনা কেবল দেশের ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেও বিরল। আমি শোকাহত চিত্তে তাঁদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে সকল শহিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
আবদুল হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা মহান স্বাধীনতার রূপকার। ১৯৪৮ সালে ভাষার দাবিতে গঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বসহ ১৯৫২ এর মহান ভাষা আন্দোলন ’৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন ’৫৮ এর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ’৬২ শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলন, ’৬৬ এর ৬-দফা, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ’৭০ এর নির্বাচনসহ বাঙালির মুক্তি ও অধিকার আদায়ে পরিচালিত প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন। এজন্য তাঁকে বারবার কারাবরণ করতে হয়।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে ছিলেন আপোষহীন। ফাঁসির মঞ্চেও তিনি বাংলা ও বাঙালির জয়গান গেয়েছেন। দীর্ঘ চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এই মহান নেতা ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার উদ্দেশে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, যা ছিল মূলত স্বাধীনতার ডাক। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং তাঁরই নেতৃত্বে দীর্ঘ নয়মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বিজয় অর্জন করি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ আজ অভিন্ন সত্তায় পরিণত হয়েছে। ঘাতকচক্র জাতির পিতাকে হত্যা করলেও তাঁর নীতি ও আদর্শকে মুছে ফেলতে পারেনি। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন জাতির পিতার নাম এ দেশের লাখো-কোটি বাঙালির অন্তরে চির অমলিন, অক্ষয় হয়ে থাকবে।