১৯৭৫ সালের ৩০ জুলাই। ওদিন ব্রাসেলসের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। সঙ্গে দুই শিশুসন্তান জয়-পুতুল ও ছোটবোন শেখ রেহানা। এ সফর ছিল একেবারে অনিচ্ছাকৃত।
৩০ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট। ঢাকার সঙ্গে একবারই যোগাযোগ হয় শেখ হাসিনার। সেটা ১১ আগস্ট টেলিফোনে, মায়ের সঙ্গে। মমতাময়ী মা সেদিন বড় মেয়েকে বলেছিলেন এক নিদারুণ কষ্টের কথা।
‘তোর আব্বা আমাকে শেখ শহীদের বিয়েতে যেতে দেননি। তাঁর বোঝা উচিত ছিল শহীদ আমার একমাত্র বোনের ছেলে।’ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কান্নাভেজা কন্ঠে এ কথাগুলো উচ্চারিত হয়েছিল বড়মেয়ে শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে। মেয়েকে বলেন, ‘জয়-পুতুল ছাড়া যে আমার সময় কাটেনা, দ্রুত দেশে ফিরে আয়।’ কিন্তু ফেরা আর হয়ে ওঠেনা। ৩ দিনের ব্যবধানে বয়ে যায় বাংলাদেশের ওপর এক রোজকেয়ামত। বাবা-মা-ভাই-ভাবী কেউ বেঁচে নেই। হত্যা করা হয়েছে সবাইকে। স্ত্রী হিসাবে স্বামীর মনরক্ষার জন্যই শেখ হাসিনার পশ্চিম জার্মানিতে যাওয়া।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম উপাচার্য ড. আব্দুল মতিন চৌধুরী শেখ হাসিনার বিদেশ যেতে মানা করেছিলেন। গেলেও তা ১৫ আগস্টের পর। শেখ হাসিনা তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এম এ ক্লাশের শিক্ষার্থী। ছুটি মঞ্জুর করাতে মুখোমুখি হলে উপাচার্য এ আদেশ দিয়েছিলেন।
১৫ আগস্ট মহামান্য রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘আচার্য’ হিসাবে প্রথম বরণ করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মেয়ে শুধু নও, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হয়ে ঐতিহাসিক বরণ-উৎসব রেখে তুমি বিদেশ যেতে পারো না। শেখ হাসিনা বলেছিলেন, স্যার, আমি ১৫ আগস্ট পর্যন্ত থেকে যেতে চেষ্টা করবো। জাতির পিতাকে বরণ করার স্বপ্নে উন্মুখ হয়ে বিশেষ মহিমায় সজ্জিত হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়। যে বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের ছাত্র শেখ মুজিবের ছাত্রত্ব কেড়ে নিয়েছিল-১৯৪৯ সালে। সেদিন শেখ হাসিনা দ্বিধাগ্রস্ত মন নিয়ে বাসায় ফেরেন। স্যারের কথাগুলো মা-কে বলেন। মা বলেন, ‘শিক্ষকের আদেশ শিরোধার্য।’ মানে যাবার সিদ্ধান্ত বাতিল। কিন্তু ওদিনই সন্ধ্যায় টেলিফোন স্বামী ড. ওয়াজেদের। শেখ হাসিনা উপাচার্যের আপত্তির কথা জানান তাঁকে। শিশুপুত্র জয় তখন প্রচন্ড জ্বরে ভুগছিল। সেটাও বললেন। কিন্তু কাজ হলো না। বরং রাগস্বরে বাজার-সদায় করাসহ ছুটি নেয়ার কথা বললেন। শেখ হাসিনা স্ত্রী হিসাবে স্বামীর মুখের ওপর আর না করতে পারলেন না। ৩০ জুলাই-১৯৭৫ পুত্রকন্যা ও ছোটবোনকে নিয়ে আকাশ পথে উড়ে গেলেন পশ্চিম জার্মানিতে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা স্মৃতিচারণমূলক এক প্রবন্ধে লিখেছেন, এমন রোজ কেয়ামতের দিন, কোনদিন যেন কারো জীবনে কখনো না আসে। যেমনটি আমার জীবনে এসেছে। মাঝেমধ্যে মনে উদয় হয় সেদিন যদি ভিসি স্যারের কথা অমান্য না করে ঢাকায় থেকে যেতেন, তাহলে আমার জন্য সেটাই ভালো হতো। বেঁচে থাকা এই জীবনটাতে সে কি যন্ত্রণা তা প্রকাশ করার ভাষা নেই।
শেখ হাসিনা লিখেছেন, সব হারিয়ে এমন বেঁচে থাকতে তো আমি চাইনি। প্রতিদিন পলে পলে দ্বগ্ধ হওয়া, সব হারানোর প্রচন্ড দাবদাহ সমস্ত অন্তরজুড়ে যে তুষের আগুনের ধিকিধিকি জ্বলনীর জীবন, এ জীবন তো আমি চাইনি। এর চেয়ে মা, বাবা, ভাই ও ভাবীদের সঙ্গে আমিও চলে যেতে পারতাম, তাহলে প্রতিদিনের অসহনীয় যন্ত্রণা থেকে তো বেঁচে যেতাম। আমার জন্য সেটাই ভালো হতো। আমি সেদিন কেন যে স্যারের নিষেধ শুনলাম না, আমি সেই কেনোর জবাব খুঁজে ফিরি। আমার দৃষ্টি ঝাঁপসা হয়, আমায় কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। দলপাকানো বেদনায় আমার কন্ঠ রুদ্ধ হয়। স্মৃতির নিদারুণ কষাঘাতে জর্জরিত হই।
শেখ হাসিনা লিখেছেন, আমার সেই স্যার ড. আব্দুল মতিন চৌধুরীও নিস্তার পাননি। ২৩ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে তাঁকে অপসারণ করে মিথ্যা মামলায় কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশে ফেরার পর একবার তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়। সেটা ২৩ জুন সন্ধ্যায় শিক্ষাবিদ মাজাহারুল ইসলামের বাসায়। আমাকে এক সংবর্ধনা দেন তিনি। কিন্তু নিয়তি কি নিষ্ঠুর! সেই প্রিয় স্যার পরের দিন পৃথিবী থেকেই চিরবিদায় নেন। ডায়েরির পাতায় আমার জীবনের সব চাইতে করুণ ও বেদনাঘন হাহাকার পরিপূর্ণ একটি বিশেষ স্মৃতি রয়েছে মহান ওই মানুষটিকে নিয়ে। ভীষণ ব্যস্ত দিনেও যখন আমি কদাচিৎ একা বসে ভাবি তখন ফেলে আসা জীবনের স্বপ্নমধুর কিংবা বিষাদ-বেদনার স্মৃতির অর্গল তখনই উন্মুক্ত হয়। আমি বেদনায় বিমূঢ় হয়ে যাই।
শেখ হাসিনা লিখেছেন, সমব্যথায় অংশীদার হয়ে আমার ছোট বোন শেখ রেহানা বেঁচে আছে। আমার মতো প্রচন্ড শোকের দাব-দাহকে বুকের গভীরে ছাইচাপা দিয়ে। যা নিরন্তর কেবল আমাদের অন্তরকে ক্ষত বিক্ষত করে। স্মৃতির দংশন একমাত্র আমি ছাড়া আর কাউকে কখনোই সহ্য করতে হয়নি। সৃষ্টিকর্তার কাছে আমার প্রার্থনা, আমার মতো যেন কাউকে কখনোই এমন ভয়ানক স্মৃতিচারণ করতে না হয়। মানুষের কিছু কিছু স্মৃতি থাকে যা কখনো অর্ন্তহিত হয় না। এমনকি ম্লান বা হাল্কাও হয় না। আমি যেন প্রত্যক্ষ করি, স্যারের সঙ্গে সেই কথোপকথনের দৃশ্য। তখনই প্রচন্ড যন্ত্রণা অনুভব করি আমার সমস্ত বুক জুড়ে। অন্তর কেবল প্রচন্ড শূণ্যতায় আর্তনাদ করে। বুকের মধ্যে দুমড়েমুচড়ে একাকার হয়ে যায়। চোখের দৃষ্টি অজান্তেই ঝাঁপসা হয়। আমি আমার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি।
কবিগুরুর সেই অমর বাণীই যেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জন্য চির সত্যঃ ‘‘এমন একান্ত করে চাওয়া / এ-ও সত্য / এমন একান্ত ছেড়ে যাওয়া/ সেই সেই মতো/ এ দু’য়ের মাঝে/ তবু কোনখানে আছে কোন মিল/ নহিলে নিখিল/এতবড় নিদারুণ প্রবঞ্চনা/ হাসিমুখে এতকাল বহিতে পারিত না/ সব তার আলো/ কেটে কাটা পুষ্পসম/ এতদিনে হয়ে যেত কালো।’’
ব্রিফিংয়ের সময় হোয়াইট হাউজের সামনে গোলাগুলি, নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে ট্রাম্পকে
করোনাভাইরাস নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্রিফিংয়ের সময় হোয়াইট হাউজের সামনে গোলাগুলির ঘটনা ঘটায় তাকে নিরাপদে সরিয়ে নেয় সিক্রেট সার্ভিস।
সোমবার হোয়াইট হাউজের কাছে সেভেন্টিন্থ স্ট্রিট এবং পেন্সিলভানিয়া এভিনিউ নর্থওয়েস্ট সড়কে গোলাগুলি হয়। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া এক সিক্রেট সার্ভিস কর্মকর্তাসহ দুজনকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এ ঘটনার পর হোয়াইট হাউজ সাময়িকভাবে লকডাউন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শিরা জানায়, এসময় দুটি গুলির শব্দ শোনা যায়। প্রায় ১০ মিনিট পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে জানিয়ে আবারও ব্রিফিংয়ে ফিরে আসেন ট্রাম্প। তবে হোয়াইট হাউজের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় নি বলে এক টুইট বার্তায় দাবি করেছে সিক্রেট সার্ভিস।
Post Written by : Rubel Islam
Original Post URL : https://ift.tt/2Ch62cJ
Post Come trough : Nachole News | নাচোল নিউজ
রাজধানী বৈরুতের উপকণ্ঠে ভয়াবহ দুই বিস্ফোরণের জের ধরে পদত্যাগ করলেন লেবাবনের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব। ‘দুর্নীতির মহামারি’কেই গত সপ্তাহের ওই বিস্ফোরণের কারণ আখ্যা দিয়ে সরে দাঁড়ালেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
বৈরুতের সমুদ্রবন্দর এলাকার ৪ আগস্টের ওই জোড়া বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে দুই শতাধিক ব্যক্তির, আহত হয়েছেন ছয় হাজারেরও বেশি মানুষ। নিহতদের মধ্যে পাঁচ জন বাংলাদেশিও রয়েছেন। আহতদের মধ্যেও রয়েছেন শতাধিক বাংলাদেশি ব্যক্তি।
আলজাজিরার খবরে বলা হয়, সোমবার (১০ আগস্ট) টেলিভিশনে দেওয়া জাতির উদ্দেশে ভাষণে দিয়াব পদত্যাগের ঘোষণা দেন। জোড়া বিস্ফোরণকে ‘অপরাধ’ অভিহিত করে তিনি বলেন, দুর্নীতি যেভাবে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে, তার ফলশ্রুতিতেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিস্ফোরণের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আসার আহ্বান জানান তিনি।
লেবানন সরকারের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, বন্দর এলাকায় অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মজুত থেকে ওই বিস্ফোরণ ঘটে। ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই বিস্ফোরক দ্রব্যগুলো বন্দরে পড়ে আছে। গত কয়েক বছর ধরেই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে লেবানন। এর মধ্যে বিস্ফোণের এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ লেবাননবাসী। এরই মধ্যে বিস্ফোরণের ঘটনার কারণেও লেবানন সরকারের পদত্যাগ দাবি করেও বিক্ষোভ করেছেন লেবানিজ নাগরিকরা।
ওই ঘটনার জের ধরে এর আগে লেবাননের আইনমন্ত্রী মারিয়া ক্লাউদে নাজিম, তথ্যমন্ত্রী মানাল আব্দেল সামাদ ও পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রী ড্যামিয়ানোস কাত্তার সরকারে তাদের নিজ নিজ পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন আগেই। প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াবের ওপরও চাপ বাড়ছিল পদত্যাগের জন্য।
এ পরিস্থিতিতে সোমবার মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব। ওই বৈঠকের পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী হামাদ হাসান ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, সরকারকে নিয়ে পদত্যাগ করতে পারেন লেবানিজ প্রধানমন্ত্রী। সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে আনুষ্ঠানিকভাবে সে ঘোষণাই দিলেন হাসান দিয়াব।
এদিকে, লেবাননের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থার তথ্য বলছে, দেশটির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল টোনি সালিবাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে বিচার বিভাগ। জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসা কোনো তথ্য না জানালেও বার্তা সংস্থাটি বলছে, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে।
অন্যদিকে বন্দরে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মজুতের বিষয়ে পৃথক একটি তদন্ত দল কাজ শুরু করেছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় লেবাবনের কাস্টমস বিভাগের প্রধান, তার পূর্বসূরী ও বন্দরের প্রধানসহ ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। সাবেক দুই মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট অনেক বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
Post Written by : Rubel Islam
Original Post URL : https://ift.tt/3krgPT3
Post Come trough : Nachole News | নাচোল নিউজ
স্পেনের ৮১ বছরের সাবেক রাজা হুয়ান কার্লোস সোমবার (৩ আগস্ট) তার ছেলে এবং বর্তমান রাজা ফিলিপের উদ্দেশ্যে ছোটো একটি চিঠি লিখে উধাও হয়ে যান।
ঐ চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘অতীতে আমার ব্যক্তিগত জীবনের কিছু অধ্যায়ের জেরে জনমনে যে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে’ তাতে তিনি মনে করছেন দেশত্যাগ এখন তার জন্য সঙ্গত যাতে তার ছেলে শান্তিতে কাজ করার সুযোগ পান।
রাজা ফিলিপে তার বাবার দেশত্যাগের খবর এক বিবৃতিরে মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়ার পর থেকে গত কয়েকদিন ধরে সারা বিশ্বের মিডিয়াতে জল্পনা চলছিল হুয়ান কার্লোস কোথায় পালিয়েছেন?
কিছু মিডিয়ায় খবর বের হয় সাবেক এই স্প্যানিশ রাজা ডমিনিকান রিপাবলিকের একটি বিলাসবহুল অবকাশ কেন্দ্রে গিয়ে উঠেছেন। কিছু মিডিয়ায় রিপোর্টে ছাপা হয় তিনি পর্তুগালে চলে গেছেন যেদেশে তিনি তার তারুণ্য ও যৌবনের বড় একটি সময় কাটিয়েছেন।
তারপর এখন শীর্ষ স্প্যানিশ মিডিয়া এনআইইউএস তাদের এক অনুসন্ধানী রিপোর্টে বলছে রাজা কার্লোস সোমবার ব্যক্তিগত একটি বিমানে করে আবুধাবিতে এসে নামেন এবং সেখানেই আছেন। প্রমাণ হিসাবে তারা ছবিও ছাপিয়েছে।
ঐ পত্রিকাটি বলছে, প্যারিস থেকে একটি ব্যক্তিগত বিমান স্পেনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ভিগোতে এসে নামে। তারপর সেখানে থেকে সাবেক এই রাজা এবং তার ব্যক্তিগত কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে আবুধাবিতে উড়ে আসে।
আবুধাবির আল বাতিন বিমানবন্দর থেকে তাকে হেলিকপ্টারে করে সরকারী মালিকানাধীন বিলাসবহুল এমিরেটস প্যালেস হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই হোটেলের একটি পুরো ফ্লোর জুড়ে সহযোগীদের নিয়ে রয়েছেন পলাতক এই সাবেক রাজা।
হুয়ান কার্লোসের সাথে আবুধাবির ক্ষমতাধর যুবরাজ যায়েদ বিন আল নাহিয়ানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
গতকাল (শনিবার) থেকে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে আবুধাবির সরকার, এমিরেটস প্যালেস হোটেল কর্তৃপক্ষ এবং স্পেনের রাজপ্রাসাদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও - কেউই কোনো কথা বলছে না।
কেন তিনি পালালেন?
নির্বাসিত স্প্যানিশ রাজা ত্রয়োদশ আলফোনসোর নাতি হুয়ান কার্লোসের জন্ম ইটালির রোমে। তিনি প্রথম স্বদেশে আসার সুযোগ পান ১৯৪৮ সালে ডিসেম্বরে। তখন তার বয়স ছিল ১০।
১৯৭৫ সাল থেকে টানা প্রায় ৪০ বছর রাজসিংহাসনে থাকার পর ২০১৪ সালে সালে তিনি রাজমুকুট তুলে দেন তার ছেলে ফিলিপের হাতে।
২০১২ সালে মেয়ে ক্রিস্টিনার স্বামীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত শুরু হওয়া ছাড়াও দেশের অর্থনৈতিক মন্দার ভেতর বিপুল অর্থ ব্যয় করে আফ্রিকায় হাতি শিকারে যাওয়ার ইস্যু নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার তিনি সরে দাঁড়ান।
তারপর এ বছর জুনে তার নিজের বিরুদ্ধেই বিশাল এক দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়।
সৌদি আরবে মক্কা ও মদিনার ভেতর দ্রুতগতির রেল যোগাযোগ সম্পর্কিত একটি প্রকল্পের সূত্রে তিনি সাবেক সৌদি বাদশাহ আবদুল্লার কাছ থেকে ১০ কোটি ডলার ঘুষ নিয়েছেন - এমন একটি রিপোর্ট সুইজারল্যান্ডের লা ট্রিবিউন পত্রিকায় খবর বেরোয়।
এরপর জুন মাসে স্পেনের সুপ্রিম কোর্ট ঐ অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত শুরুর অনুমোদন দেয়। সুইজারল্যান্ড সরকারও এ নিয়ে একটি তদন্ত শুরু করেছে।
সাবেক এই রাজা প্রথম থেকেই কোনো দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে গেলেও, সোমবার তিনি গোপনে দেশ ছেড়ে চলে যান।
সৌদি সরকারের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ছাড়াও সুইজারল্যান্ডে বিশাল অঙ্কের টাকা পাচার সম্পর্কিত একটি অভিযোগের তদন্তের সাথেও হুয়ান কার্লোসের নাম জড়িয়েছে।
স্পেনে প্রতিক্রিয়া কী হচ্ছে?
দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত চলার ভেতর এভাবে সাবেক রাজা কার্লোসের দেশত্যাগের পর স্পেনে সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের প্রয়োজন এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে বিতর্কের ঝড় উঠেছে।
কাতালোনিয়া প্রদেশের পার্লামেন্টে শুক্রবার রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি নিন্দা প্রস্তাব পাশ হয়েছে। সেসময় কাতালোনিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম তোরা সংসদে বলেন, “স্প্যানিশ বা কাতালান - কারোরই এই মাপের একটি কেলেঙ্কারি সহ্য করা উচিৎ নয়।“
রাজতন্ত্র বাতিল করে স্পেনকে প্রজাতন্ত্র ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ হচ্ছে।
স্পেনে শেষবার রাজতন্ত্র বাতিল করা হয় ১৯৩১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর ঠিক আগে। গৃহযুদ্ধ শেষের পর ১৯৩৯ সালে ক্ষমতা দখল করেন সামরিক একনায়ক জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো।
এরপর যুবরাজ হুয়ান কার্লোস বেশ কিছু কার্যত বন্দি অবস্থায় থাকরেও কালে কালে জেনারেল ফ্রাঙ্কোর ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন তিনি।
১৯৬৯ সালে জেনারেল ফ্রাঙ্কো হুয়ান কার্লোসকে তার উত্তরসূরি হিসাবে ঘোষণা করেন।
১৯৭৫ সালে জেনারেল ফ্রাঙ্কোর মৃত্যুর দুদিনের মাথায় হুয়ান কার্লোস ক্ষমতা নিলেও, তিনি ফ্রাঙ্কোর নীতির বিপরীতে গিয়ে স্পেনকে গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যান এবং ঘোষণা দেন স্পেন হবে শুধুই সাংবিধানিক একটি রাজতন্ত্র।
তবে ১৯৮২ সালে সোশালিস্টরা নির্বাচনে জিতে ক্ষমতা নেওয়ার পর রাজা কার্লোসের রাজনৈতিক প্রভাব একেবারেই হ্রাস পায়। তারপরও তিনি জনপ্রিয় ছিলেন এবং তাকে দেখা হতো স্পেনের ঐক্যের একটি প্রতীক হিসাবে।
অবশ্য গণতন্ত্র-পন্থী হিসাবে তার যে সুনাম এবং জনপ্রিয়তা ছিল, কালে কালে তা দুর্নীতি এবং ভুল রাজনৈতিক বিবৃতির কারণে ক্ষুণ্ণ হতে থাকে।
পর্যবেক্ষকরা এখন বলতে শুরু করেছেন দুর্নীতির তদন্তের মধ্যে এভাবে দেশ থেকে পালানোর ঘটনায় এখন বিশ্বের অবশিষ্ট রাজতন্ত্রগুলোর অন্যতম স্পেনের রাজতন্ত্র অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছে। খবর: বিবিসি বাংলা।
বিশ্বজুড়ে করোনার সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। কয়েকটি দেশ ছাড়া বেশিরভাগ দেশই ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধ করতে পারেনি। এ অবস্থায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ছাড়িয়ে গেল।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ২৩ হাজার ১৬। এর মধ্যে মারা গেছে ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৯৭৬ জন। তবে করোনা থেকে সুস্থতার হারও কম নয়। ইতোমধ্যেই আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই সুস্থ হয়ে উঠেছে। করোনা থেকে সুস্থতার সংখ্যা ১ কোটি ২৮ লাখ ৯৭ হাজার ৮১৩।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনার উপস্থিতি ধরা পড়ে। এখন পর্যন্ত ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে তাণ্ডব চালাচ্ছে এই ভাইরাস। তবে করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির সবগুলো অঙ্গরাজ্যেই করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫২ লাখ।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫১ লাখ ৯৯ হাজার ৪৪৪। এর মধ্যে মারা গেছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬১৭ জন।
তবে দেশটিতে ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছে ২৬ লাখ ৬৪ হাজার ৭০১ জন। সেখানে বর্তমানে করোনার অ্যাক্টিভ কেস ২৩ লাখ ৬৯ হাজার ১২৬। অপরদিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে ১৭ হাজার ৮১২ জন।
এদিকে সংক্রমণে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্রাজিল। দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৫৮২। এর মধ্যে মারা গেছে ১ লাখ ১ হাজার ১৩৬ জন। ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছে ২১ লাখ ১৮ হাজার ৪৬০ জন।
অপরদিকে, তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ২২ লাখ ১৪ হাজার ১৩৭। এর মধ্যে মারা গেছে ৪৪ হাজার ৪৬৬ জন। তবে ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছে ১৫ লাখ ৩৪ হাজার ২৭৮ জন।
রাশিয়ায় এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৫৩৬। এর মধ্যে মারা গেছে ১৪ হাজার ৯৩১ জন। তবে আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৬ লাখ ৯৩ হাজার ৪২২ জন।
এদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকায় এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লাখ ৫৯ হাজার ৮৫৯। এর মধ্যে মারা গেছে ১০ হাজার ৪০৮ জন। তবে দেশটিতে ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছে ৪ লাখ ১১ হাজার ৪৭৪ জন।
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
কেরালায় প্রবল বৃষ্টিপাত ও ভূমিধসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৪৬ জনে। রোববার দিনভর আরও ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এদের মধ্যে রয়েছে ছ’মাস বয়সী একটি শিশু। এখনো কয়েকভাগে অব্যাহত তল্লাশি অভিযান। কেননা, ইদ্দুকি জেলায় নিখোঁজ রয়েছেন আরও ২৪ জন।
টানা বৃষ্টিপাতের পর শুক্রবার জেলাটিতে ঘটে ভয়াবহ ভূমিধস। তাতে ৩০টির মতো ঘরবাড়ি মাটিচাপা পড়ে, ভেসে যায় চারটি চা বাগান এলাকা। সে সময় ৮২ জন নিখোঁজের তথ্য দেয়া হয় প্রশাসনকে। এদের মধ্যে মাত্র ১২ বাসিন্দাকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়। কেরালা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যক পরিবারকে দু’লাখ রূপি ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার পর্যন্ত কেরালার বিভিন্ন জেলায় ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে জাতীয় আবহাওয়া অধিদফতরের।
Post Written by : Rubel Islam
Original Post URL : https://ift.tt/30FCoat
Post Come trough : Nachole News | নাচোল নিউজ
সাবমেরিন কেবলের জটিলতায় রোববার (৯ আগস্ট) সকাল থেকে দেশের ইন্টারনেটে ধীরগতি ছিল। দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল লাইন মেরামত শেষে প্রায় ১২ ঘণ্টা পর স্বাভাবিক গতিতে ফিরেছে ইন্টারনেট।
রোববার মধ্যরাত থেকে ইন্টারনেটের স্বাভাবিক গতি পাওয়া যাচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান বলেন, রাত ১২টার পর মেরামত শেষে পুনরায় স্বাভাবিক গতি ফিরে এসেছে ইন্টারনেটে।
এর আগে, দুপুরে বালু তুলতে গিয়ে দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন মশিউর রহমান জানিয়েছিলেন, স্থানীয় লোকজন এক্সকাভেটর দিয়ে বালু তুলতে গিয়ে সাবমেরিন কেবলের (এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৫) পাওয়ার সাপ্লাই ও অপটিক্যাল ফাইবার ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বিএসসিসিএল এর মেরামতের কাজ করছে। মেরামত শেষ হলে স্বাভাবিক গতিতে ফিরবে ইন্টারনেট।
আজকের এই দিনে জন্মগ্রহণ করায় পাশ্চাত্যমতে আপনি সিংহ রাশির জাতব্যক্তি। আপনার ওপর আজ রাশি অধিপতি রবি, সেনাপতি মঙ্গল ও দেবগুরু বৃহস্পতির প্রভাব বিদ্যমান। আপনার সঙ্গে বৃশ্চিক রাশির বন্ধুত্ব শুভফল প্রদান করবে। দীর্ঘদিনের ভাঙা প্রেম ও বন্ধুত্ব শুভফল প্রদান করবে। লৌকিকতায় যেমন ব্যয় হবে তেমনি উপহার সামগ্রীও প্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা।
মেষ [২১ মার্চ-২০ এপ্রিল]
হাত বাড়ালেই নিত্যনতুন সুযোগ এসে হাজির হবে। দাম্পত্য সুখ শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করবে। সহকর্মী ও অংশীদারদের পূর্ণ ফল প্রাপ্ত হবেন। অপরিচিত কাউকে আশ্রয় দেওয়া খাল কেটে কুমির আনার সমান হবে।
বৃষ [২১ এপ্রিল-২০ মে]
গৃহবাড়িতে কোন না কোন মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান হবে। ভাইবোনদের কাছ থেকে ভরপুর সাহায্য সহযোগিতা প্রাপ্ত হবেন। দূর থেকে আসা কোন সংবাদ বেকারদের মুখে হাসি ফোটাবে। শত্রু ও বিরোধীপক্ষের পাতা ফাঁদে তারা নিজেরাই ঘায়েল হবে।
মিথুন [২১ মে-২০ জুন]
দীর্ঘদিনের আটকে থাকা বিল পাস ও পাওনা টাকা আদায় হবে। শ্রম মেধা প্রযুক্তি ও কৌশলের পূর্ণ ফল প্রাপ্ত হবেন। অংশীদারদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের কলহ বিবাদের মীমাংসা হবে। গৃহবাড়ি অতিথি সমাগমে মুখর হয়ে থাকবে।
কর্কট [২১ জুন-২০ জুলাই]
দুর্যোগের মেঘ সরে গিয়ে সুদিনের সূর্য উদিত হবে। নিত্যনতুন প্ল্যানপ্রোগ্রাম আর স্বপ্নস্বাধ পূরণের পথ খুলবে। গৃহবাড়িতে নতুন আসবাবপত্র বস্ত্রালঙ্কার ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীর পসরা সাজবে। পিতা-মাতার স্বাস্থ্য ভালোর দিকে যাবে।
সিংহ [২১ জুলাই-২০ আগস্ট]
টাকা-পয়সা হাতে আসার আগেই খরচের খাত তৈরি হয়ে যাবে। চোরচিটিংবাজ অজ্ঞানপার্টি লুটতরাজ প্রভৃতির খপ্পর থেকে বাঁচতে নিজেকে গুটিয়ে রাখা সমীচীন হবে। সংকটকালে বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-পরিজন মজা দেখবে।
কন্যা [২২ আগস্ট-২২ সেপ্টেম্বর]
বিবাহযোগ্যদের পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রেমীযুগলের জন্য দিনটি স্মরণীয় বরণীয় ও রেকর্ড সৃষ্টিকারী দিবস হিসেবে গণ্য হবে। গৃহবাড়ি অতিথি সমাগমে মুখর হয়ে থাকবে। অপরিচিত কাউকে আশ্রয় দেওয়া নির্বুদ্ধিতার পরিচয় হবে।
তুলা [২৩ সেপ্টেম্বর-২২ অক্টোবর]
দুর্ঘটনা ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নিজেদে গুটিয়ে রাখা শ্রেয় হবে। শরীর স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে পড়ায় চিকিৎসানির্ভর হয়ে পড়তে পারেন। অবশ্য শ্রমিক কর্মচারীদের মনে মালিকপ্রীতি দেখা দেবে। প্রেম বন্ধুত্ব বিনোদন শুভ।
বৃশ্চিক [২৩ অক্টোবর-২১ নভেম্বর]
ভাগ্যলক্ষ্মী প্রসন্ন হওয়ায় সফলতা আপনার চরণ স্পর্শ করবে। দূর থেকে আসা কোন সংবাদে গোটা পরিবারে খুশির জোয়ার বইবে। কর্মের সুনাম যশ পদোন্নতির পথ সুগম করবে। দীর্ঘদিনের ভাঙা প্রেম জোড়া লাগবে।
ধনু [২২ নভেম্বর-২০ ডিসেম্বর]
শুভাশুভ মিশ্র ফল প্রদান করবে। আয় বুঝে ব্যয় করুন নচেৎ সঞ্চয়ে হাত পড়বে। গৃহবাড়ি অতিথি সমাগমে মুখর হয়ে থাকবে। আশ্রিত প্রতিপালিত ব্যক্তি ও শ্রমিক কর্মচারীদের প্রতি তীক্ষ নজর রাখুন। সংকটকালে সাহায্য পাবেন।
মকর [২১ ডিসেম্বর-১৯ জানুয়ারি]
দীর্ঘদিনের দাম্পত্য ও পারিবারিক কলহ বিবাদের মীমাংসা হবে। গৃহবাড়ি ভূমি সম্পত্তি ও যানবাহন ক্রয়ের স্বপ্ন অচিরেই সুপ্রশস্ত হবে। সন্তানদের ক্যারিয়ার অধ্যয়ন ও স্বাস্থ্যবিষয়ক দুশ্চিন্তার অবসান হবে। প্রেমীযুগলের সাবধানে চলতে হবে।
কুম্ভ [২০ জানুয়ারি-১৮ ফেব্রুয়ারি]
শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি তীক্ষ রজর রাখা শ্রেয় হবে। গুপ্ত ও প্রকাশ্য শত্রুরা স্বজনদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আপনার গোপন প্রেম ও অনুচিত কাজবাজ ফাঁস করে দিতে পারে। লম্বা দূরত্বের সফরে নিজে ড্রাইভ করা থেকে বিরত থাকুন।
মীন [১৯ ফেব্রুয়ারি-২০ মার্চ]
শিক্ষার্থীদের জন্য নিত্যনতুন সুযোগ এসে হাজির হবে। পিতা-মাতার কাছ থেকে ভরপুর সাহায্য সহযোগিতা প্রাপ্ত হবেন। সন্তানরা আজ্ঞাবহ হয়ে থাকবে। বেকার যুবক যুবতীদের কর্মের আশায় হন্যে হয়ে ছুটে বেড়াতে হবে।
ফেনীতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৪শ ছাড়িয়েছে। প্রায় চার মাসে এত রোগী শনাক্ত হওয়ায় জেলাবাসীর মনে উদ্বেগ বিরাজ করছে। রোববার (৯ আগস্ট) জেলায় ১৫ জনের শরীরে কোভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, নোয়াখালীর আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে ৭০টি নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন আসে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ৫ জন, দাগনভুঞায় ৪ জন, ছাগলনাইয়ায় ৪ জন, সোনাগাজীতে ১ জন, পরশুরামে ১ জন। জেলায় পর্যন্ত কোভিড রোগী শনাক্ত হয় ১ হাজার ৪শ ১৫ জন।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, রোববার পর্যন্ত ৭ হাজার ৩শ ৭৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি), চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় এবং নোয়াখালী আবদুল মালেক মেডিকেল কলেজের ল্যাবে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ৭ হাজার ২শ ৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩৩ জন। জেলায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৯৭৬ জন সুস্থ হয়েছেন। ২৫ জনকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় ১৫৫ জন রোগী টেলিমেডিসিন সেবা নিয়েছেন। এ পর্যন্ত জেলায় ৩৯ হাজার ৬১২ জন রোগী টেলিমেডিসিন সেবা গ্রাহক করেছেন।
গত ১৬ এপ্রিল জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের পশ্চিম মধুগ্রামে প্রথম এক যুবক কোভিড-১৯ আক্রান্ত হন।
মেজর সিনহা হত্যা পরিকল্পনার একটি স্ট্যাটাস ভাইরাল, তোলপাড়
ওসি প্রদীপের বক্তব্যসহ কিছু ভিডিও রেকর্ড করার কারণে মেজর সিনহাকে অনুসরণ করে হত্যা করা হয়। ইলিয়াস কোবরার সঙ্গে ঘটনার দিন ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতের কয়েকবার যোগাযোগ হয়। আতিথেয়তার নামে নানা কৌশলে সেদিন বিকেল সাড়ে চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত মেজর সিনহাকে নির্জন পাহাড়েই নিজ হেফাজতে রেখেছিলেন ইলিয়াস কোবরা।
জাতীয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
‘জাস্ট গো’ ইউটিউব চ্যানেলে কক্সবাজার এলাকার ইয়াবার আদ্যোপান্ত তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। টানা কয়েক দিন ইয়াবা বাণিজ্যের নেপথ্য কাহিনি নিয়ে ডকুমেন্টারি তৈরি করছিলেন মেজর সিনহা। কোনো ধরনের ঝঞ্ঝা ছাড়াই সময় পার করছিলেন। তবে শেষ মুহূর্তে টেকনাফের ওসি প্রদীপ কুমার দাশের সাক্ষাৎকার রেকর্ড করাটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় মেজর সিনহার জন্য।
রোববার (৯ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের ক্রাইম রিপোর্টার সাঈদুর রহমান রিমনের একটি স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এই মর্মান্তিক ঘটনার সঙ্গে বাংলা চলচ্চিত্রের খল অভিনেতা ইলিয়াস কোবরার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে সাঈদুর রহমান রিমনের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। তবে এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন ইলিয়াস কোবরা।
সাঈদুর রহমান রিমন লিখেছেন, “ওসি প্রদীপের ভিডিও সাক্ষাৎকারেই সর্বনাশ ঘটে!
প্রত্যক্ষদর্শী ও একাধিক সূত্র অনুযায়ী, ক্রসফায়ারের নামে নৃশংসভাবে খুন করা অসংখ্য মানুষের রক্তে রঞ্জিত প্রদীপ কুমারও ভিডিও সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় বারবারই কেঁপে উঠেন। মেজর সিনহার তথ্যবহুল প্রশ্নের পর প্রশ্নে চরম অস্বস্তিতে পড়েন ওসি। নানা অজুহাতে ভিডিও সাক্ষাৎকার এড়ানোর সব কৌশল খাটিয়েও ব্যর্থ ওসি প্রদীপ বাধ্য হয়েই প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে থাকেন, ভিডিওচিত্রে মেজরের উদঘাটন করা নানা তথ্যের সামনে সীমাহীন নাস্তানাবুদ হন তিনি।
মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের দিন বিকেল চারটার দিকে টেকনাফের বহুল বিতর্কিত ওসি প্রদীপ কুমার দাস ওই ডকুমেন্টারি ভিডিও সাক্ষাৎকারের ফাঁদে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্র জানায়, ক্রসফায়ারে অতিমাত্রায় উৎসাহী ওসি প্রদীপ ও তার সহযোগিরা ইয়াবা বাজারজাত ও পাচারের ক্ষেত্রেও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভূমিকার কথা স্বীকার করতেও বাধ্য হন। সফল সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেই মেজর সিনহা আর একদণ্ড সময় ক্ষেপণ করেননি। ঝড়ের বেগে থানা থেকে বেরিয়ে এসে নিজের গাড়িতে উঠে বসেন। তার সঙ্গে ভিডিও রেকর্ডিংয়ে ব্যস্ত থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতও ক্যামেরা, ট্রাইপড, ব্যাগ গোছাতে গোছাতেই ছুটে গিয়ে গাড়িতে উঠতেই টেকনাফ সদর ছেড়ে গাড়িটি ছুটতে থাকে উত্তর দিকে, বাহারছড়ার পথে। বাহারছড়া সংলগ্ন মারিসঘোণা এলাকাতেই বসবাস করেন চলচ্চিত্রের ফাইটিং গ্রুপ পরিচালনাকারী ইলিয়াস কোবরা। হঠাত তার টেলিফোনে করা আমন্ত্রণ পুরোপুরি এড়িয়ে যেতে পারেননি মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এদিকে থানা থেকে মেজর সিনহা বেরিয়ে যেতেই ওসি প্রদীপ অচিরেই বড় রকমের বিপদের আশঙ্কায় তৎক্ষনাত কক্সবাজারের এসপি মাসুদকে ফোন করে বিস্তারিত জানিয়ে দেন। সব শুনে এসপি নিজেও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কয়েক মিনিটেই এসপির নির্দেশনায় তৈরি হয় মেজর সিনহার নৃশংস হত্যার নিশ্ছিদ্র পরিকল্পনা। আলাপ আলোচনা শেষে এসপি-ওসি এমনভাবেই ত্রিমুখী মার্ডার মিশন সাজিয়েছিল- সেই ফাঁদ থেকে মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের প্রাণে বাঁচার কোন সুযোগই ছিল না।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চলচ্চিত্রের ফাইটিং গ্রুপের পরিচালক ইলিয়াস কোবরেক দায়িত্ব দেওয়া হয়, আতিথেয়তার নামে নানা কৌশলে সন্ধ্যা পর্যন্ত মেজর সিনহাকে তার নিভৃত পাহাড়ি গ্রামে আটকে রাখার। চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার পরিচিতি থাকলেও ইলিয়াস কোবরা ইদানিং ‘ক্রসফায়ার মিট মিমাংসার দালালি’ কাজেই সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। ক্রসফায়ারের তালিকায় নাম থাকার গুজব ছড়িয়ে অসংখ্য মানুষকে গোপনে ওসি প্রদীপের সঙ্গে সমঝোতা করিয়ে দিয়ে টেকনাফের শীর্ষ দালাল হিসেবে বেশ নামডাক ছড়িয়ে পড়েছে কোবরার। তবে ক্রসফায়ারের কবল থেকে জীবন বাঁচানোর সমঝোতায় ওসি প্রদীপ হাতিয়ে নিয়েছেন ১০ লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে দালালির কমিশন হিসেবে ইলিয়াস কোবরাকেও মাথাপিছু এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পাইয়ে দিয়েছেন প্রদীপ।
ওসিসহ পুলিশ প্রশাসনের কাছে পরীক্ষিত দালাল ইলিয়াস কোবরা ঠিকই তার উপর অর্পিত দায়িত্ব অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। মারিসঘোণায় নিজের বাগানবাড়ি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখার নামে ইলিয়াস কোবরা সেদিন বিকেল সাড়ে চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত নির্জন পাহাড়েই নিজ হেফাজতে রেখেছিলেন মেজর সিনহাকে। এ সময়ের মধ্যে মেজরের অবস্থান, কতক্ষণ পর কোন রাস্তায় কোথায় যাবেন সেসব তথ্য জানিয়ে কোবরা ৯টি এসএমএস পাঠান ওসিকে।
গণপিটুনিতে হত্যার জন্য প্রস্তুত রাখা হয় গ্রামবাসীকে, ওসি বাহিনী অবস্থান নেয় দক্ষিণের বড়ডিল পয়েন্টে- আর উত্তরদিকের শামলাপুর চেকপোস্টে ওৎ পেতেছিলেন খুনি লিয়াকতের বাহিনী।
পরিকল্পনা মাফিক সন্ধ্যা ৭ টার দিকেই টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাস তার পছন্দের দুই এসআই ও দুই কনস্টেবল নিয়ে নিজের সাদা নোহায় এবং আরো ৫/৭ জন পুলিশ সদস্য অপর একটি মাইক্রোবাসে হন্তদন্ত অবস্থায় থানা থেকে মেরিন ড্রাইভওয়ে ধরে উত্তর দিকে ছুটতে থাকে। ওসি বাহিনী বাহারছড়া-কক্সবাজারের পথে শামলাপুর পুলিশ ক্যাম্পে যাওয়ার পথেই ইলিয়াস কোবরার নতুন খবর আসে। ওসি প্রদীপকে ফোন করে তিনি জানান, এ মুহূর্তে মেজর সিনহা ও তার ভিডিওম্যান সিফাত মারিসঘোণার পাহাড় চূড়ায় উঠছেন। পাহাড়ের উপর থেকে মেরিন ড্রাইভওয়ে, টেকনাফ সদর, নাফ নদী-মিয়ানমার সীমান্ত এবং দক্ষিণ দিকে সমুদ্রের বিস্তির্ণ অংশ দেখা যায়। গভীর সমুদ্রের দিক থেকে ছোট বড় ইঞ্জিনবোটগুলো সার্চ লাইটের আলো ফেলে ফেলে সমুদ্র সৈকতের দিকে আসতে থাকে, আবার ডজন ডজন ইঞ্জিনবোট সমুদ্র সৈকত ছেড়ে গভীর সমুদ্রের দিকেও যেতে থাকে। পুরো দৃশ্যপটের ভিডিওচিত্র ধারন করাটাই হচ্ছে তার ডকুমেন্টারির শেষ দৃশ্য। এ দৃশ্যপটের সঙ্গে নেপথ্য কন্ঠ জুড়ে দিতে চান মেজর সিনহা। তিনি বলতে চান রাত যত গভীর হয়, আধারে নিমজ্জিত হয় সমুদ্রের মাইলের পর মাইল জলরাশি, ঠিক তখনই টেকনাফ সীমান্ত ঘেষা জনপদের কয়েকশ' মানুষ জেগে উঠেন, তারা মেতে উঠেন অন্যরকম কর্মযজ্ঞে।শত শত ইঞ্জিনবোট হঠাত করেই যেন সমুদ্রের পানি ফুঁড়ে উঠে আসে উপরে, এদিক সেদিক ঘোরাফেরা করেই ট্রলারগুলো অজ্ঞাত গন্তব্যে ছুটে যায় ইঞ্জনের কর্কশ শব্দ তুলে, ধোঁয়া ছেড়ে। তখন এসব ট্রলারের প্রতিটাই হয়ে উঠে কোটি কোটি টাকার দামি। কোনো ট্রলারে থাকে পাচারের শিকার নারী-পুরুষ, কোনোটা আবার ভরাট হয় লাখ লাখ পিস ইয়াবায়। আবার গভীর সমুদ্রে অপেক্ষমাণ মাদার ভেসেল থেকে কোনো কোনো ট্রলারে নামিয়ে আনা হয় একে-৪৭ রাইফেল, থাকে আরজিএস গ্রেনেডের ছড়াছড়ি।
ইলিয়াস কোবরা ফোনে ওসিকে জানান, মেজর সাহেব পাহাড় থেকে নেমে কিছু সময়ের জন্য মেরিন ড্রাইভওয়ে ব্যবহার করে টেকনাফের দিকে যেতে পারেন-তারপর সেখান থেকে ফিরে যাবেন হিমছড়ির রিসোর্টে। এটুকু শুনেই ওসি প্রদীপ তার গাড়ি থামিয়ে দেন বাহারছড়া পৌঁছানোর আগেই। মারিসঘোণা থেকে টেকনাফ যাওয়ার পথে তিন কিলোমিটার দূরের বড়ডিল নামক স্থানে ওসি ও তার সঙ্গীদের দুটি মাইক্রো থামিয়ে পূর্ণ প্রস্তুতিতে অপেক্ষমাণ থাকেন সবাই। এরমধ্যেই ওসি প্রদীপ কুমার মরিসঘোণা এলাকার দুই জন সোর্স ছাড়াও ক্রসফায়ার বাণিজ্যের টাকা সংগ্রহকারী এজেন্ট বলে কথিত আব্দুল গফুর মেম্বার, হাজী ইসলাম, মুফতি কেফায়েতউল্লাহ ও হায়দার আলীকে ফোন করে জানান, মারিসঘোণা পাহাড়ের চূড়ায় বেশ কয়েকজন ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জড়ো হয়েছে। তারা কেউ পাহাড় থেকে নামার চেষ্টা করলেই যেন এলাকার লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে ডাকাত ডাকাত চিৎকার জুড়ে দেয়া হয় এবং যাদেরকে হাতেনাতে পাবে তাদেরকেই যেন গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলা হয়। বাকি সবকিছু ওসি দেখবেন এবং এজন্য তিনি মারিসঘোণার দিকে রওনা দিয়েছেন বলেও জানানো হয় তাদের।
ওসির কাছ থেকে পাওয়া এমন খবর ওসির এজেন্টরা পাহাড় সংলগ্ন চারপাশের বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে ছড়িয়ে দিয়ে লাঠিসোটায় সজ্জিত হয়ে তারা অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু চৌকষ সেনা অফিসার সিনহা পাহাড়ের চূড়ায় থাকাবস্থায়ই চারপাশে সাজ সাজ রব দেখে সতর্ক হয়ে উঠেন এবং এ কারণেই টর্চ লাইট না জ্বালিয়ে অন্ধকারের মধ্যেই ধীরলয়ে পাহাড় থেকে নিচে নেমে আসেন। ঠিক তখনই বেশ সংখ্যক গ্রামবাসী ডাকাত ডাকাত চিৎকার জুড়ে দিয়ে তাদের চারপাশ থেকেই ধাওয়া দিতে থাকে। কিন্তু মেজর সিনহা তার সহযোগির হাত চেপে ধরে প্রশিক্ষণের দক্ষতা অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই প্রায় আধা কিলোমিটার জায়গা পেরিয়ে পাকা সড়কে পৌঁছে যান এবং দ্রুত নিজের গাড়িতে উঠেই উত্তরদিকে হিমছড়ির দিকে রওনা হন।
বাহারছড়ার মারিসঘোণা থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরেই শামলাপুরের সেই পুলিশ চেকপোস্ট। ওসির নির্দেশে যেখানে এসআই লিয়াকতসহ একদল পুলিশ আরো আগে থেকেই ওৎ পেতে অপেক্ষায় ছিল-সেখানেই পৌঁছে যায় মেজর সিনহার গাড়িটি। গাড়িটির খুব কাছে অস্ত্র তাক করে মেজরকে হাত তুলে সামনের দিকে মুখে করে নেে আসার নির্দেশ দেন তিনি। আর গাড়ি থেকে নামতেই অব্যর্থ নিশানায় লিয়াকত পর পর চারটি বুলেট বিদ্ধ করেন মেজর সিনহার দেহে। ফলে লুটিয়ে পড়েন তিনি।
এদিকে বড়ডিল এলাকায় অপেক্ষমান ওসি বাহিনী মেজরের উত্তরদিকে রওনা দেয়ার খবর শুনেই শামলাপুর ক্যাম্পের দিকে রওনা দেন। যে কারণে লিযাকতের গুলিতে মেজর মাটিতে লুটিয়ে পড়ার ১৫/১৬ মিনিটের মধ্যেই ওসি বাহিনী সেখানে পৌঁছাতে সক্ষম হন। কারণ, টেকনাফ থানা থেকে শামলাপুর চেকপোস্ট পর্যন্ত যেতে প্রাইভেটকারে ৪০/৪৫ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু তিনি মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরের বড়ডিল এলাকায় থাকায় ১৫/১৬ মিনিটেই চেকপোস্টে পৌঁছেই মেজর সিনহার লুটিয়ে পড়া দেহখানাকে পা দিয়ে চেপে ধরে নিজের আগ্নেয়াস্ত্র থেকে পর পর দুটি গুলি বর্ষণ করে লাথি মেরে নিথর দেহখানাকে রাস্তার ধারে ফেলে দেন।
ত্রিমুখী হত্যা মিশনের ব্যাখ্যা দিয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একদিকে মারিসঘোণা গ্রামে ওসি প্রদীপের নিজস্ব এজেন্টদের দ্বারা ডাকাত ডাকাত চিৎকার জুড়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু সেখান থেকে জীবন বাঁচিয়ে মেজর সিনহা যদি টেকনাফের দিকে রওনা হতেন তাহলে তিন কিলোমিটার সামনে বড়ডিলে পৌঁছেই তিনি ওসি বাহিনীর নির্বিচার গুলিতে বেঘোরে জীবন হারাতেন। অন্যদিকে মেজর তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে হিমছড়ি রিসোর্টের দিকে রওনা দিলেও শামলাপুরে তার জীবন কেড়ে নিতে এসআই লিয়াকতের টিমকেও পূর্ণ প্রস্তুতিতে রাখা হয়। আসলে কোনো বিকল্প উপায় অবলম্বন করেই মেজর সিনহা যাতে প্রাণ নিয়ে ফিরতে না পারেন তা ১০০ ভাগ নিশ্চিত করেই পাকা পরিকল্পনা আঁটেন এসপি মাসুদ। ওসি প্রদীপের নেতৃত্বে তা বাস্তবায়িত হয়েছে অব্যর্থভাবেই।”
ইলিয়াস কোবরার বাড়ি মেরিন ড্রাইভের পাশে বাহারছড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নোয়াখালীপাড়ায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, নিজ ওয়ার্ডের মাদক প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ইলিয়াস কোবরা ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতের সঙ্গে আতাত করে মানুষকে হয়রানি করেন।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ইলিয়াস কোবরা তাকে একটি স্পর্শকাতর মামলায় ফাঁসানোর অপচেষ্টা চলছে বলে দাবি করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমি জানতামই না যে মেজর সিনহা নামে কেউ আছে। আমি জীবনে স্বপ্নেও তাকে দেখিনি। কেন জানি না এক সাংবাদিক এমন বড় একটি ঘটনার সঙ্গে আমার নাম জড়িয়ে কাল্পনিক কথা লিখছে। আমি নিজেই মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করি। মসজিদ কমিটিতেও আছি। এসব কারণে এলাকার কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে আছে।’
প্রশ্নের জবাবে ইলিয়াস কোবরা আরো বলেন, ‘লিয়াকতের সঙ্গে আমার পরিচয় আছে। তার বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রটির মধ্যেই আমাদের এলাকা। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়। সাবেক মেজরের মৃত্যুর দিনও তার সঙ্গে কথা হয়েছে। আমার নামেই এখানে একটা বাজার আছে। সেখানে কমিটির অফিসে বসে ছিলাম। মোহাম্মদ নামে একজন সদস্য বলেন, একটি বস্তা পাওয়া গেছে। তখন লিয়াকত সাহেবকে ফোন করলে এসে নিয়ে যান। টেকনাফ থানার এসআই হাসান আমাদের সেই সদস্যকে নিয়ে গেছেন। তখন আমি তাকে বললাম, যিনি দেখে জানিয়েছে, তাকেই যদি নিয়ে যান তাহলে খবর দেবে কে? পরে দুবার ফোন দিয়ে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করি। তারা ছেলেটিকে ৫৪-এ চালান দেয়। সে গতকাল শনিবার জামিনে ছাড়া পেয়েছে।’
স্থানীয়রা বলছে, মিয়ানমারের রাখাইনের আদি নিবাস থেকে বাহারছড়ায় আসার পর বাংলা চলচ্চিত্রে খল অভিনেতা হিসেবে নাম করেন ইলিয়াস কোবরা। বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলেও টেকনাফ এলাকায় রাজনীতিসহ নানা কাজে দাপুটে ভূমিকা ছিল তার। মাঝে এলাকায় দেখা না গেলেও গত পাঁচ বছর ধরে আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। প্রদীপ কুমার টেকনাফ থানার ওসি হিসেবে যোগ দেওয়ার পরই ইলিয়াস কোবরা বাহারছড়া ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মাদক নির্মূল কমিটির সভাপতি মনোনীত হন। মেরিন ড্রাইভের পাশে নোয়াখালীপাড়ার পৈতৃক বসতিতে ‘ইলিয়াস কোবরা বাজার’ নামে একটি বাজারও চালু করেন। উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া নিজের নামে এ রকম বাজার বসানোর কারণে আদালতে মামলাও চলছে।
অভিযোগ রয়েছে, ইলিয়াস কোবরা মাদক নির্মূল কমিটির সভাপতি হলেও তার পরিবারের অনেক স্বজন ইয়াবা কারবারে জড়িত। এমনকি নিজের ভাই রফিক কোবরা রাজধানী ঢাকা ও টেকনাফ থানার ইয়াবা মামলার আসামি। আরেক ভাই শামশু কোবরার দুই ছেলেও ঢাকা এবং চট্টগ্রামের ইয়াবা মামলার আসামি। তাঁরা সবাই ইয়াবা মামলায় জেলে আটক ছিলেন।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব বিষয় এসেছে, তা আমাদেরও নজরে এসেছে। তা ছাড়া মিডিয়াতে যেগুলো আসছে সবই আমলে নিয়ে তদন্ত করছি। এগুলো খতিয়ে দেখা হবে।’
তিনি আরো বলেন, চার আসামিকে গতকাল জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সাবেক ওসি প্রদীপ কুমারসহ দুই আসামিকে আজ সোমবার রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হবে। আরেক আসামিকে পরে নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
১৯৭৫ সালের ৯ই আগস্ট মৃত্যুর মাত্র ছয় দিন পূর্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এই দিন তিনি জাতীয় স্বার্থে দেশের বৃহৎ পাঁচটি গ্যাস ক্ষেত্র-তিতাস, বাখরাবাদ, রশীদপুর, কৈলাশটীলা ও হবিগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রভাবশালী বহুজাতিক তেল কোম্পানি শেল ইন্টারন্যাশনালের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে কিনে নিয়েছিলেন। জাতির পিতার এই পদক্ষেপ ছিল বাঙ্গালীর মুক্তি সংগ্রামের অংশ হিসেবে জাতীয় স্বার্থে তাঁরই গৃহীত সাংবিধানিক, আইনি ও নীতিগত সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত বাস্তবায়ন।
একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত অন্যতম চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নীতি অনুযায়ী আমাদের মতো অর্থনীতিতে ১% জিডিপি বৃদ্ধির জন্য ১.৮%-২% জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির প্রয়োজন হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কর্তৃক গৃহীত কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ ও তাঁর সরকার প্রণীত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক কিছু সাংবিধানিক বিধান, আইন ও নীতিমালা এদেশের জ্বালানি নিরাপত্তার মূলস্তম্ভ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সংবিধানের ১৪৩ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশীয় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদের উপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা (Permanent Sovereignty Over Natural Resources) প্রতিষ্ঠা করেন। এই আইনি অধিকারের ধারণাটি তৎকালীন সময়ে আন্তর্জাতিক আইন অঙ্গনে খুবই নতুন ছিল। ঔপনিবেশিক শক্তি ও বহুজাতিক কোম্পানী সমূহের অনুকূলে খনিজ ও জ্বালানি সম্পদের উপর প্রদত্ত ইজারা ভিত্তিক মালিকানা জাতীয় স্বার্থে বাতিল করে জারি করা বঙ্গবন্ধুর এই বিধান সমকালীন সময়ে পৃথিবীর খুব কম দেশই তাদের সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করতে পেরেছিল। বঙ্গবন্ধুর এই পদক্ষেপ ছিল তাঁরই নেতৃত্বে বাঙ্গালীর মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী মাইলফলক অর্জন। জাতির পিতা গ্রামীণ উন্নয়ন এবং নগর ও গ্রামা লের জীবন যাত্রার মানের বৈষম্য দূর করার জন্য গ্রামা লে বিদ্যুতায়নের বিষয়টিকে সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ঘোষনা করেন (অনুচ্ছেদ-১৬)। বঙ্গবন্ধুর এই বৈপ্লবিক ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। তৎকালীন তৃতীয় বিশ্বে এটি একটি অনুসরণীয় মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতির আদেশ নং-২৭ এর মাধ্যমে দেশের তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ খনিজ, তেল ও গ্যাস কর্পোরেশন (বিএমওজিসি) গঠন করেন। ১৯৭৪ সালে এর সংক্ষিপ্ত নামকরন করা হয় ‘পেট্রোবাংলা’। তিনি জ্বালানি খাতকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে পেট্রোলিয়াম আইন ও পেট্রোলিয়াম পলিসি প্রণয়ন করেন। উক্ত আইন ও পলিসির আওতায় তিনি দেশীয় কোন মূলধন বা বিনিয়োগ ছাড়াই বিদেশী/বহুজাতিক কোম্পানীর মাধ্যমে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনের লক্ষ্যে ‘উৎপাদন বন্টন চুক্তি’ পদ্ধতি বাংলাদেশে প্রবর্তন করেন। বর্তমানে সারা বিশ্বে এই মডেলটি বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় হলেও ঐ সময়ে পৃথিবীর অনেক দেশই এই মডেলটির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ নং-৫৯ এর মাধ্যমে দেশের সর্বত্র বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য বিদ্যুৎখাত পূনঃগঠন করেন। জাতির পিতা ১৯৭৫ সালের ১৪ মার্চ The ESSO Undertaking Acquisition Ordinance 1975 এর মাধ্যমে বাংলাদেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের ESSO Eastern Inc.- কে অধিগ্রহন করে এদেশে জ্বালানি তেল মজুদ, সরবরাহ ও বিতরনে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহন করেন। বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত এই সকল স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান সমূহই আজও এদেশের তেল সেক্টরের জ্বালানি নিরাপত্তা বলয় হিসেবে কাজ করছে। বঙ্গবন্ধু তাঁর দৃঢ় মনোবল, মেধা, সাহস ও সুকৌশলের মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ৯ আগষ্ট বহুজাতিক কোম্পানী শেল ইন্টারন্যাশনালকে পাঁচটি বৃহৎ গ্যাসক্ষেত্র (তিতাস, বাখরাবাদ, রশিদপুর, কৈলাশটিলা ও হবিগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র) মাত্র ১৭.৮৬ কোটি টাকায় বাংলাদেশের কাছে বিক্রয় করতে বাধ্য করেছিলেন, যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে ১২ লক্ষ কোটি টাকা। এটি কেবল আর্থিক মূল্য; এর অর্থনৈতিক মূল্য তার চেয়ে বহুগুন বেশি। স্বাধীন বাংলাদেশে গত চার দশকে যতটুকু শিল্পায়ন তথা অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে, তার মূল চালিকা শক্তি ছিল বঙ্গবন্ধুর নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করা গ্যাস ক্ষেত্রগুলো। মোটা দাগে বলতে গেলে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশে এ যাবত যা কিছু উন্নয়ন হয়েছে, তার সবটুকুই বঙ্গবন্ধু কর্তৃক প্রদত্ত গ্যাস সম্পদের কারণে। আজ বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতসহ যে কয়েকটি খাতে আমরা বিশ্বে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছি, এর মূল কারণই ছিল জাতির পিতা দেয়া গ্যাস সম্পদ।
পঁচাত্তরের পর মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বিরোধী শক্তি ক্ষমতাসীন হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা অবহেলার শিকার হয়। ১৯৯৬-২০০১ সালে শেখ হাসিনার সরকারের সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। পরবর্তীতে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় লুটপাটের ফলে আবারও জ্বালানি খাত মুখ থুবড়ে পড়ে। ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে দেশ আবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ (মধ্যম আয়ের দেশ) ও রূপকল্প- ২০৪১ (উন্নত দেশের মর্যাদা) অর্জনে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, গোটা উন্নয়নশীল বিশ্বের একমাত্র সরকার প্রধান যিনি জ্বালানিনিরাপত্তার বিষয়টিকে জাতীয় নিরাপত্তার সমার্থক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি সরকার প্রধান হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্র ও উন্নয়ন সহযোগী এই মডেলটির প্রশংসা করেছেন। শেখ হাসিনার সরকার এক দশকে দেশে ব্যাপক ভিত্তিক শিল্পায়ন, বিনিয়োগ, উন্নয়ন কর্মকান্ড ও নানামূখী পদক্ষেপের মাধ্যমে অব্যহতভাবে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা করে বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধন করেছেন। এক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ অন্যতম প্রধান নিয়মক হিসেবে কাজ করেছে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার মাধ্যমে সরকারের উন্নয়নের এই ধারাকে অব্যহত রাখার ক্ষেত্রে এই সময়ে জ্বালানির সংস্থানই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শেখ হাসিনার সরকার সর্বোচ্চ আন্তরিকতা, সাহস, কৌশল ও দক্ষতার সাথে কর্মপদক্ষেপ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করেছে।
অতীতের সরকারগুলোর জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের উপর অত্যধিক নির্ভরশীলতার ভ্রান্তনীতি পরিবর্তন করে শেখ হাসিনার সরকার জ্বালানির বহুমুখীকরণের Diversification নীতি গ্রহণ করেছে। এই ব্যবস্থায় দেশের জ্বালানি মিশ্রনে দেশীয় গ্যাস সম্পদের পাশাপাশি কয়লা, আমদানীকৃত এলএনজি, পরমানবিক বিদ্যুৎ, তরল জ্বালানি, আন্ত:রাষ্ট্রীয় জ্বালানি বানিজ্যের মাধ্যমে আহরিত জ্বালানি/বিদ্যুৎ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে একটি টেকসই ‘জ্বালানি ঝুড়ি’ (Fuel Basket) গড়ে তোলা হচ্ছে। এটিই আন্তর্জাতিক বেষ্ট প্র্যাকটিস হিসেবে স্বীকৃত। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ যাতে কয়লা ভিত্তিক বৃহত্তর বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করতে না পারে, সেজন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। এ সকল প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনার সরকার জাতীয় স্বার্থে বৃহৎ কয়লা ভিত্তিক প্রকল্পসহ প্রয়োজনীয় সকল প্রকল্প বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল। জ্বালানি ভিত্তিক এই প্রকল্প গুলোর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার মহেশখালী ও মাতারবাড়ীতে একটি এবং পায়রাতে একটি ‘এনার্জি হাব’ গড়ে তুলছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সেক্টরে শেখ হাসিনার সরকার বৈপ্লবিক সাফল্য দেখিয়েছে। পৃথিবীর কম দেশই এতো অল্প সময়ে এ রকম সাফল্য দেখাতে পেরেছে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ২২৮ কিলোওয়াট যা বর্তমানে দাড়িয়েছে ৪৭০ কি:ও: (দ্বিগুনেরও বেশী)। একই সময়ে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতাভুক্ত ছিল মোট জনসংখ্যার ৪৭% যা বর্তমানে দাড়িয়েছে প্রায় ৯৮%। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ৩২৬৭ মে:ও: বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে। বর্তমানে সরকারের বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষমতা ২০ ৮১৩ মে:ও:। শেখ হাসিনা সরকার সমগ্র উন্নয়নশীল বিশ্বকে তাক লাগিয়ে এ বছরের ডিসেম্বর এর মধ্যেই দেশের সকলের জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে যাচ্ছে।
ঐতিহাসিকভাবে জাতীয় ও আ লিক জ্বালানি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় আন্ত:রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বানিজ্য একটি গুরুত্বপূর্ন পদ্ধতি হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম রাষ্ট্রনায়ক যিনি ‘এনার্জি ডিপ্লোমেসি’-কে আন্তর্জাতিক, আ লিক, উপ-আ লিক ও দ্বি-পাক্ষিক পর্যায়ে প্রধান্য দিয়ে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ভারত থেকে নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ আনার জন্যে ভেড়ামারায় যে ক্রসবর্ডার ইন্টারকানেকশন স্থাপিত হয়েছে, সেটি শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিন এশিয়া তথা উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এছাড়া ভারতের ত্রিপুরার সাথেও ক্রসবর্ডার ইন্টারকানেকশন স্থাপিত হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের মোট সরবরাহকৃত বিদ্যুতের ৬-৭% (১১৬০ মে:ও:) ভারত থেকে আসছে যা দেশের উৎপাদিত বিদ্যুতের গড় মূল্যের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী। এছাড়া ভারতের ঝাড়খন্ড ও ত্রিপুরা থেকে যথাক্রমে ১৪৯৬ ও ৩৪০ মে:ও: বিদ্যুৎসহ মোট ১৮৩৬ মে:ও: বিদ্যুৎ আমদানীর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভারতের সাথে বাংলাদেশের যে ক্রসবর্ডার ইন্টারকানেকশন স্থাপিত হয়েছে, বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই ইন্টারকানেকশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া , ভুটার ও নেপাল থেকে জল বিদ্যুৎ আনার কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের এই উদ্যোগে ভারত অংশীদার বা পার্টনার হিসেবে থাকছে। আ লিক ও উপ-আ লিক পর্যায়ে জ্বালানি ভিত্তিক সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরীর লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ‘সার্ক ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট ফর এনার্জি কো-অপারেশন (ইলেকট্রিসিটি)’-তে যুক্ত হয় এবং বিম্সটেক এর সদস্য দেশগুলোর সাথে গ্রীড ইন্টারকানেকশন বিষয়ে সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষর করে। শেখ হাসিনার এই উদ্যোগের ফলে ২০৪১ সাল নাগাদ আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ বানিজ্য ও রিজিওনাল গ্রীড থেকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পরিমান বিদ্যুৎ পাবে।
জাতির পিতা ১৯৭২ সালে সংবিধানের ১৪৩ (১) (খ) অনুচ্ছেদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় জলসীমার অন্তর্বর্তী মহাসাগর ও বাংলাদেশের মহিসোপানে অবস্থিত সকল খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের উপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশের সমুদ্র ও সমুদ্রসীমা রক্ষার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে ‘The Territorial Waters and Maritime Zones Act’ প্রণয়ন করেন। পরবর্তীকালের সরকারগুলো এই বিষয়ে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। সমুদ্র ও সমুদ্রসীমা রক্ষায় শেখ হাসিনা ২০০১ সালে জাতিসংঘের ১৯৮২ সালের সমুদ্র আইন (UNCLOS) অনুসমর্থন (Ratification) করেন। এই সমুদ্র আইন অনুসমর্থনের ফলেই বঙ্গোপসাগরে আমাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ ও সাহসী নেতৃৃত্ব এবং সফল এনার্জি ডিপ্লোমেসির কারণে আমরা মিয়ানমার ও ভারতের দাবীর বিরুদ্ধে বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে পৃথিবীর খুব কম দেশই এত সফলভাবে সমুদ্রের উপর তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। শেখ হাসিনার এই সমুদ্র জয়ের ফলে ‘দক্ষিণ এশিয়ার নর্থ সী’ (North Sea of South Asia) খ্যাত বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস সম্পদ আহরণের মাধ্যমে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কার্যক্রম কার্যকরী ও সুদক্ষভাবে পরিচালনা করছে। বর্তমানে ৭টি সমুদ্র ব্লকে আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানীসমূহ একক ও যৌথভাবে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। দেশে তেল-গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন ১৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট (২০০৮ সালে) হতে ২৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীতকরণসহ মোট গ্যাস সরবরাহ ৩২৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে (এলএনজি সহ) উন্নীত করেছে। এ সময়ে সরকার ৪টি নতুন গ্যাসক্ষেত্র (শ্রীকাইল, সুন্দরপুর, রূপগঞ্জ, ভোলা নর্থ) আবিস্কার করেছে। তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ২০১১ সালে ‘গ্যাস উন্নয়ন তহবিল’ গঠন করে, যার আওতায় দেশের গ্যাস সেক্টরে বর্তমানে ২১টি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এছাড়া গ্যাস সেক্টরকে সার্বিক সহায়তার জন্য ২০১৫ সালে সরকার ‘এনার্জি সিকিউরিটি ফান্ড’ নামে আরেকটি তহবিল গঠন করে।
এটি দুঃখজনক যে, ২০০৪-২০০৫ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকারের ‘মিয়ানমার-বাংলাদেশ-ভারত ত্রিদেশীয় গ্যাস পাইপলাইন’ প্রকল্প থেকে সরে আসার অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে প্রাপ্ত মিয়ানমারের গ্যাস থেকে বি ত হলো। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছিল। আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য যে, ঐ সময়ে বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমারের সাথে দীর্ঘমেয়াদী গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পে অংশগ্রহন করলে মিয়ানমার পরবর্তীতে রোহিঙ্গা ইস্যুর মতো একটি প্রকট মানবিক সংকট চাপিয়ে দেয়ার মতো আচরণ আমাদের সাথে করতে পারতো না। কারণ আন্তর্জাতিক জ্বালানি আইন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নীতি অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদী আন্তঃরাষ্ট্রীয় জ্বালানি বানিজ্য ভূ-রাজনীতিকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। খালেদা জিয়ার সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে মিয়ানমার থেকে গ্যাস পাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করলেও ২০০১ সালে নির্বাচনের পর দেশের সীমিত গ্যাস সম্পদ বিদেশে রপ্তানীর উদ্যোগ গ্রহন করেছিল। কারণ নির্বাচনের পূর্বে গ্যাস রপ্তানির মুচলেকা দিয়ে বিএনপি-জামাত ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিল। অথচ শেখ হাসিনা ২০০০ সালে জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সীমিত জাতীয় সম্পদ গ্যাস রপ্তানীর সিদ্ধান্তের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদে নিজস্ব ব্যবহারের জন্য গ্যাস মজুদের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। দেশের স্বার্থে গৃহীত তাঁর এই সিদ্ধান্তের কারনেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে ২০০৩ সালের অক্টোবরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্রতিরোধের মুখে খালেদা জিয়ার সরকার ইতোপূবে তাঁরই গৃহীত গ্যাস রপ্তানীর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়।
জাতির পিতা যে গ্যাস সম্পদ আমাদেরকে দিয়ে গিয়েছিলেন, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা তথা সার্বিক উন্নয়নের জন্য সেই সম্পদ রক্ষা করেছিলেন তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনা। এই তথ্য বঙ্গবন্ধুর কাছে অজানা ছিল না যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তর ঠাণ্ডা লড়াইয়ের (Cold War) সময়ে বিশ্বব্যাপি কিছু জাতীয়তাবাদী নেতা নিজেদের দেশে বহুজাতিক কোম্পানির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রাকৃতিক ও জ্বালানি সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন, তাদের কেও কেও হত্যার শিকারও হয়েছিলেন। সেটি জানা সত্ত্বেও, তিনি ঔপনিবেশিক শক্তি ও বহুজাতিক কোম্পানী সমূহের অনুকূলে খনিজ ও জ্বালানি সম্পদের উপর প্রদত্ত ইজারা ভিত্তিক মালিকানা জাতীয় স্বার্থে বাতিল করে সংবিধানের ১৪৩ অনুচ্ছেদে এ সম্পর্কিত বিধান অন্তর্ভুক্ত করেন। এই ধরণের বিধান সমকালীন সময়ে পৃথিবীর খুব কম দেশই তাদের সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করতে পেরেছিল। জাতির পিতা প্রবর্তিত এই সাংবিধানিক বিধানের আলোকে পরবর্তীতে তিনিই নানামুখি আইনি, নীতিগত, নির্বাহী ও রেগুলেটরি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি আত্ম নির্ভরশীল ও শক্তিশালী জ্বালানি খাত তৈরি করে গিয়েছিলেন, যার মূল লক্ষ্য ছিল এদেশকে অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে নিয়ে মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করা। এটিই ছিল বঙ্গবন্ধু সূচিত বাঙালীর মুক্তি সংগ্রামের অন্যতম মূল লক্ষ্য। জাতির পিতার পরে শেখ হাসিনাই একমাত্র রাষ্ট্রনায়ক যিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও বাধা ঊপেক্ষা করে জাতির পিতার এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নানামূখী কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকারণের নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে শুধু দুটি নাম দেদীপ্যমান - জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আর রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা।
লেখক: রাজনীতিবিদ, আইনজ্ঞ, গবেষক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
বিল গেটসের বৃহৎ প্রতিশ্রুতি দরিদ্র দেশে করোনা টিকা সরবরাহ
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক
গরিব দেশগুলো যাতে কম খরচে টিকা পেতে পারে, সে জন্য নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। করোনার টিকা উদ্ভাবনের পেছনে তিনি তার অর্থসম্পদ খরচ করে চলেছেন।
প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট রিকোডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিল গেটসের কথাবার্তার ওপর যতটা আলোকপাত করা হচ্ছে, ততটা তার প্রচেষ্টার ওপর করা হচ্ছে না।
গত শুক্রবার বিল গেটস বলেছেন, যদি কার্যকর টিকা পাওয়া যায়, তবে বিশ্বের দরিদ্র মানুষগুলোকে তা সরবরাহের জন্য তিনি ও তার দাতব্য সংস্থা ১৫ কোটি ডলার দান করবেন।
করোনাভাইরাসের প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধনী বিল গেটসের অন্যতম বৃহৎ প্রতিশ্রুতি এটি। দ্য গেটস ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এ অর্থ বৃহত্তম টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউটকে দেওয়া হচ্ছে। এ অর্থে ১০ কোটি ডোজ টিকা তৈরি করা হবে। প্রতি ডোজ টিকার দাম ধরা হতে পারে মাত্র ৩ মার্কিন ডলার। গত দুই দশকে টিকা তৈরির ক্ষেত্রে শীর্ষ নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে এগিয়ে আছেন বিল গেটস। ভ্যাকসিন তৈরির প্রচেষ্টায় এরই মধ্যে ৪০০ কোটি ডলার খরচ করেছেন তিনি।
বিল গেটস মার্কিন সরকারকে বার্তা দিয়ে বলেছেন, মার্কিন সরকারের শুধু তাদের নাগরিকদের নিয়ে ভাবলেই চলবে না। টিকার জাতীয়তাবাদ বাদ দিয়ে আরও দাতব্যকাজে এগিয়ে আসতে আইনপ্রণেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
দীর্ঘদিন ধরে বিল গেটস উদ্বেগ জানিয়ে বলছেন, ধনী দেশগুলো যদি অতিরিক্ত খরচ করে চিকিৎসাব্যবস্থা নিজেরা হস্তগত করে, তবে গরিব দেশগুলো চিকিৎসার অভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে।
চলতি সপ্তাহে ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেন, টিকার বিষয়টি কেবল যাতে ধনী দেশগুলোর হাতে না যায়, তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যেসব টিকা উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য সাশ্রয়ী দামে তৈরি করা যাবে, তিনি সেগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও নোভাভ্যাক্সের টিকা। এ টিকা দুটি কম খরচে সহজে উৎপাদন করা যায়।
রিকোড জানিয়েছে, বিল গেটস তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ খরচ করে টিকার সর্বনিম্ন দামের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এসব টিকা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট তৈরি করবে এবং ৯১টি স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশে দেওয়া হবে।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় সাত আসামির মধ্যে তিনজনের সাতদিন করে রিমান্ড ও চারজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন বিচারক। তবে চার আসামির জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হলেও কক্সবাজারের টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ তিন আসামিকে গত তিনদিনেও রিমান্ডে নেয়া যায়নি।
মামলার এক নম্বর আসামি বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলী, দুই নম্বর আসামি টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তিন নম্বর আসামি পুলিশের সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিতকে সাতদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পাশাপাশি পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন বিচারক।
কক্সবাজার কারাগারের জেল সুপার মোকাম্মেল হোসেন বলেন, শনিবার (৮ আগস্ট) আদালতের আদেশের কপি কারাগারে এসে পৌঁছায়। নথিপত্র আসার পর র্যাব সদস্যরা চার আসামিকে জেলগেটে শনিবার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। রোববার দ্বিতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু অপর তিন আসামিকে এখনো রিমান্ডের জন্য ডাকা হয়নি। তারা কারাগারেই রয়েছেন।
তিন আসামির রিমান্ড সম্পর্কে জানতে মুঠোফোনে কল করেও মামলার তদন্তকারী সংস্থার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে র্যাবের একটি সূত্র জানায়, তদন্ত কর্মকর্তা সুবিধামতো সময়ে আসামিদের রিমান্ডে নেবেন। স্পর্শকাতর মামলা বিধায় সবকিছু গুছিয়ে তারপরই আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে হয়তো। আবার ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশকিছু অডিও ক্লিপ ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। উঠে এসেছে নানা তথ্য। সেসব বিষয়ও খতিয়ে দেখছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা। সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে বিস্তারিত তথ্য বের করা হবে। এজন্য আসামিদের রিমান্ডে নিতে বিলম্ব হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম থেকে ওসি প্রদীপকে গ্রেফতার করে পুলিশ। চট্টগ্রাম থেকে তাকে বিকেল ৫টার দিকে কক্সবাজার আদালতে পৌঁছায় পুলিশ। তাকে আনার আগেই বিকেল পৌনে ৪টার দিকে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকতসহ মামলার ছয় আসামিকে আদালতে নেয়া হয়। আসামিদের আদালতে হাজির করার আগে পুরো এলাকায় নেয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তা। সাংবাদিকদের পাশাপাশি আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করেন বিপুলসংখ্যক উৎসুক জনতা।
জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পর মামলার তদন্তকারী সংস্থা র্যাব-১৫ এর সেকেন্ড ইন কমান্ডার (টুআইসি) মেজর মেহেদী হাসান আসামিদের ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রিমান্ড শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে মামলার প্রধান আসামি লিয়াকত আলী, দ্বিতীয় আসামি ওসি প্রদীপ ও তৃতীয় আসামি এসআই নন্দলাল রক্ষিতের সাতদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বাকি চার আসামি কনস্টেবল সাফানুর, কামাল, মামুন এবং এএসআই লিটন মিয়াকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন বিচারক। রাত সাড়ে ৮টায় আসামিদের কারাগারে নেয়া হয়।
পরে শুক্রবার (৭ আগস্ট) মামলার আসামি টেকনাফ থানা পুলিশের সদ্য সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ সাত পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এর আগের দিন বুধবার রাত ১০টায় টেকনাফ থানায় আদালতের নির্দেশে মেজর সিনহার বড় বোনের করা হত্যা মামলাটি নথিভুক্ত হয়। ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ টেকনাফের বিচারক তামান্না ফারহার আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন সিনহার বোন শারমিন। পরে আদালত ৩০২/২০১ ও ৩৪ ধারায় করা ফৌজদারি আবেদন টেকনাফ থানাকে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন। এছাড়া বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলার তদন্তভার কক্সবাজারের র্যাব-১৫ এর অধিনায়ককে দিতে সুপারিশ করা হয়। মামলায় পরিদর্শক লিয়াকত, ওসি প্রদীপসহ নয় পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়।
প্রসঙ্গত, দুই বছর আগে সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়া সিনহা মো. রাশেদ খান ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য গত প্রায় একমাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় ছিলেন। আরো তিন সঙ্গীকে নিয়ে তিনি উঠেছিলেন নীলিমা রিসোর্টে। গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন।