দেশে কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষনের জন্য লবনের কোনও ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। এসময় দেশে বর্তমানে ১১ লাখ ৫৭ হাজার মেট্রিক টন লবণ মজুদ রয়েছে বলেও জানানো হয়।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান তথ্য অফিসার মোঃ আবদুল জলিল স্বাক্ষতির এক বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতিবছর ঈদুল আযহায় দেশব্যাপী কোরবানির পশু সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য কম-বেশি ১ লাখ মেট্রিক টন লবণের প্রয়োজন হয়। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী গত ঈদুল আযহায় কোরবানিকৃত পশুর সংখ্যার বিপরীতে লবণের চাহিদা ছিল ৮১ হাজার ৮২০ মেট্রিক টন। ফলে মজুদকৃত লবণ দিয়ে এবারের ঈদুল আজহার চাহিদা মিটিয়ে আরও ৭ থেকে ৮ মাসের লবণের চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে। অন্যদিকে আর মাত্র ৪ মাস পর অর্থাৎ নভেম্বর, ২০২০ হতে লবণ উৎপাদনের নতুন মৌসুম শুরু হবে। ফলে দেশে লবণের কোনো ধরণের ঘাটতির আশঙ্কা নেই।
জানানো হয়, ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য দেশব্যাপী নিরবিচ্ছিন্ন লবণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে দেশের ৮টি লবণ জোনে ১৮৬টি নিবন্ধিত লবণ মিলে পুরোদমে লবণ উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে।
Post Written by : Rubel Islam
Original Post URL : https://ift.tt/3hJHAjh
Post Come trough : Nachole News | নাচোল নিউজ
মডার্নার ভ্যাকসিন চূড়ান্ত ধাপে মানুষের দেহে প্রয়োগ শুরু
কোনো রোগের ভ্যাকসিন বা টিকা তৈরির ক্ষেত্রে সাধারণত অনেকগুলো ধাপ পার হতে হয়। চূড়ান্ত ধাপে হাজার হাজার মানুষের দেহে গণহারে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ মূলত দেখা হয় সবার ব্যবহারের জন্য তা কার্যকর ও নিরাপদ কিনা। সফল হলেই ভ্যাকসিনটি গণমানুষের জন্য ব্যবহারের অনুমোদন দেয় কর্তৃপক্ষ।
আন্তর্জাতিক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মার্কিন কোম্পানি মডার্নার তৈরি কোভিড-১৯ এর সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটি চূড়ান্ত ধাপে ৩০ হাজার মানুষের দেহে প্রয়োগ শুরু হয়েছে। এর আগে করোনার সম্ভাব্য কোনো ভ্যাকসিন এত মানুষের দেহে পুশ হয়নি।
সোমবার (২৭ জুলাই) পরীক্ষা শুরুর ঘোষণা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, বছর শেষেই তাদের ভ্যাকসিন সবাই ব্যবহার করতে পারবে।
কোনো রোগের ভ্যাকসিন বা টিকা তৈরির ক্ষেত্রে সাধারণত অনেকগুলো ধাপ পার হতে হয়। চূড়ান্ত ধাপে হাজার হাজার মানুষের দেহে গণহারে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ মূলত দেখা হয় সবার ব্যবহারের জন্য তা কার্যকর ও নিরাপদ কিনা। সফল হলেই ভ্যাকসিনটি গণমানুষের জন্য ব্যবহারের অনুমোদন দেয় কর্তৃপক্ষ।
মডার্না ও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের বিজ্ঞানীদের যৌথ প্রচেষ্টায় উদ্ভাবিত করোনার সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটির পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে দেশটির ৮৯টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এর আগে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে মডার্নার ভ্যাকসিন করোনার বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করেছে বলে প্রমাণিত হয়।
অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেককে ২৮ দিনের ব্যবধানে দুটি ডোজ দেওয়া হবে। বাকি অর্ধেককে দেওয়া হবে লবণপানির একটি মিশ্রণ। তবে স্বেচ্ছাসেবী বা তাদের ইনজেকশন দেওয়া স্বাস্থ্যকর্মীরা কেউই জানবেন না কার দেহে আসলে কোনটি পুশ করা হচ্ছে। ফলাফল স্বচ্ছ রাখতেই এমন নিয়ম।
ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর বিজ্ঞানীরা নিয়মিত স্বেচ্ছাসেবীদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করবেন। বিশেষ করে, যাদের দেহে ভ্যাকসিনটি দেওয়া হয়নি তারা করোনায় আক্রান্ত হন কি না—তা দেখতে চান বিজ্ঞানীরা। সেই তুলনায় ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের মাঝে এর হার কম দেখা দিলে, প্রতিষেধকটি সফল বলে প্রমাণিত হবে।
বৃহৎ পরিসরে এই ট্রায়াল শুরুর বিষয়টি নিয়ে মার্কিন স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ট্রায়ালটি হতে হবে সব বয়সের, সব জাতির অর্থাৎ সব ধরনের মানুষের ওপর। আমরা চাই এর ফলাফল যেনো যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার যে বৈচিত্র তার প্রতিনিধিত্ব করে। এর মাধ্যমেই দেখা হবে ভ্যাকসিনটি সবার জন্য কার্যকর ও নিরাপদ কিনা।
মহামারি করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা সাড়ে ৬ লাখ ছাড়িয়েছে। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সোমবার (২৭ জুলাই) পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃতের সংখ্যা ৬ লাখ ৫০ হাজার ৯৭ জন। আর আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজার ৯৭৭ জন।
আন্তর্জাতিক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মহামারি করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা সাড়ে ৬ লাখ ছাড়িয়েছে।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সোমবার (২৭ জুলাই) পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃতের সংখ্যা ৬ লাখ ৫০ হাজার ৯৭ জন। আর আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজার ৯৭৭ জন।
মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ওয়ার্ল্ডও মিটারর্সের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দেশটিতে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৫০ হাজার ৪০২ জন মারা গেছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮৭ হাজার ৬৭৯ জন মারা গেছে ব্রাজিলে।
তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার ৭৫৯ জন মারা গেছে যুক্তরাজ্যে। মেক্সিকোতে মৃত্যুর সংখ্যা ৪৩ হাজার ৬৮০ জন। ইতালিতে করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছে ৩৫ হাজার ১১২ চর।
করোনার নতুন হটস্পট ভারতে এ পর্যন্ত মারা গেছে ৩৩ হাজার ৪৪৮ জন। ফ্রান্সে মারা গেছে ৩০ হাজার ২০৯ জন। স্পেনে মৃতের সংখ্যা ২৮ হাজার ৪৩৪ জন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমাদের বিনীত নিবেদন, অনুগ্রহপূর্বক বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত জায়গাটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।
ড. মো. লতিফুর রহমান সরকার
গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার ৪নং বরিশাল ইউনিয়নের ভগবানপুর একটি সাধারণ গ্রাম। কিন্তু দুটি কারণে এ গ্রামটি স্থানীয় সবার কাছেই পরিচিত : স্থানটি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত এবং মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক মরহুম আজিজার রহমান সরকারের এলাকা। আজিজার রহমান সরকার ছিলেন গাইবান্ধা জেলার মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বালুরঘাট লিবারেশন ক্যাম্পের সাধারণ সম্পাদক।
তিনি গাইবান্ধা থেকে এমপিএ নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৬২, ১৯৬৭ ও ১৯৭০ সালে। আজিজার রহমান সরকার নিজ বাড়িসংলগ্ন সরকারি পতিত জায়গায় গড়ে তুলেছিলেন ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, দাতব্য চিকিৎসালয়, কমিউনিটি সেন্টার এবং কৃষি ব্লক সুপারভাইজারের বাসভবন। নিজ হাতে রোপণ করেছিলেন নানা ধরনের গাছপালা।
১৯৭০ সালের নির্বাচনী সফরে বঙ্গবন্ধু রংপুরে এসে কেন্দ্রীয় নেতারাসহ আজিজার রহমান সরকারের বাড়িতে বিশ্রাম নিয়ে দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করেছিলেন। বাড়ি প্রাঙ্গণে উপস্থিত কয়েক হাজার মানুষের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সেই উপস্থিতি এবং বরিশাল ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে গড়ে ওঠা অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের কারণে ভগবানপুর গ্রামটি পলাশবাড়ীর প্রায় সবার কাছেই পরিচিত। এ প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সেবা পেয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় ও নিদারুণ অবহেলায় প্রতিষ্ঠানগুলো আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত।
তবে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বট, পাকুর ও আমসহ অনেকগুলো গাছপালা। এ জায়গায় ইউনিয়ন পরিষদের একটি পাকা ভবন থাকা সত্ত্বেও এক অদ্ভুত কারণে ইউনিয়ন পরিষদ অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, অতি সম্প্রতি জায়গাটিকে পরিত্যক্ত দেখিয়ে এবং এর জনগুরুত্ব বিবেচনা না করে একটি মহল তাদের পছন্দের কয়েকজন ব্যক্তির নামে (ভূমিহীনের কথা বলে) বরাদ্দ দিয়েছে।
এলাকাবাসী এ ঘটনায় অত্যন্ত ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ। তারা বুঝতে পারছেন না কী করে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি সংবলিত এরকম একটি ঐতিহাসিক ও জনগুরুত্বপূর্ণ জায়গা কৃষিকাজের জন্য কয়েকজনকে বরাদ্দ দেয়া যায়। জায়গাটি ১৯৪০ সালের রেকর্ডে উল্লেখ আছে দেবাস্থান এবং ১৯৯৪ সালের রেকর্ডে উল্লেখ আছে ইউনিয়ন পরিষদ এবং কৃষি ব্লক সুপারভাইজারের বাসভবন হিসেবে। এতদিন ধরে এতগুলো জনকল্যাণমূলক কাজে এ জায়গাটি ব্যবহৃত হলেও শুধু ১৯৬২ সালের রেকর্ডে ‘ডাঙ্গা’ কথাটি উল্লেখ আছে- এই দোহাই দিয়ে জমিটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিস্বার্থে কয়েকজনকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু এবং তার এক সহযোগীর স্মৃতিবিজড়িত স্থানটি একটি মহল ধ্বংসের চেষ্টা করছে, এটি খুবই দুঃখজনক। জায়গাটি রক্ষার জন্য আমরা এলাকাবাসী জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছি। আবেদনে সুপারিশ করেছেন মাননীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও স্থানীয় নেতারা। হিন্দু-মুসলিম শত শত এলাকাবাসী সম্মিলিতভাবে স্বাক্ষর করেছেন এই আবেদনে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন। কিন্তু এক অদৃশ্য কারণে এখন পর্যন্ত ফলাফল শূন্য।
শুধু তাই নয়, এলাকাবাসী উদার মনে উপজেলা প্রশাসনকে (ইউএনও) অবহিত করেছেন যে, তারা প্রয়োজনে কৃষিজমি দিতে প্রস্তুত, তবু এই বরাদ্দ দ্রুত বাতিল করে এ জায়গায় বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির উদ্দেশে জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান যেমন: হাইস্কুল, কলেজ বা কমিউনিটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা অথবা অন্য কোনো জনহিতকর কাজ করা হোক।
জায়গাটিতে যে কোনো সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে উপকৃত হবেন এলাকাবাসী এবং সেই সঙ্গে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে উপকার করা যেতে পারে ভূমিহীনদের। কিন্তু সেবামূলক কোনো প্রতিষ্ঠান না করে এভাবে এই জনসম্পদকে কয়েকজনের নামে বরাদ্দ দিলে জায়গাটি চিরতরে নষ্ট হয়ে যাবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমাদের বিনীত নিবেদন, অনুগ্রহপূর্বক বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত জায়গাটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।
লেখক, ড. মো. লতিফুর রহমান সরকার, ভগবানপুর, পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা।
১৯৭০ সালের অক্টোবর মাসের ২ তারিখ সন্ধ্যায় উঁচু বারান্দা থেকে দ্রুতগতিতে নামতে গিয়ে আমার আম্মা সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের বাঁ পায়ের হাড় ভেঙে যায়। আব্বু তাজউদ্দীন আহমদ আম্মাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। আমার তখন খুব অল্প বয়স। আম্মার এই অবস্থায় আমার প্রচণ্ড অসহায় লাগতে থাকে। আম্মা যখন ফিরে এলেন, তখন জানতে পারলাম, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্লাস্টারের সরঞ্জাম নেই, তাই প্লাস্টার করা সম্ভব হয়নি। যন্ত্রণায় কাতর আম্মার মুখ এবং আমার শিশু মনের অসহায়ত্ব আজও মনে হলে আমাকে ভাবায়।
ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি চিকিৎসার জন্য বলতে গেলে সব সময় আমাদের বাসায় অসুস্থ মানুষের আসা-যাওয়া ছিল অবারিত। আমি তাদের জন্য দোয়া করতাম, সবাই যেন সুস্থ থাকেন। সেই অবুঝ সময়েও তাদের পাশে বসে বুঝতে চেষ্টা করতাম মানুষের অসুস্থতার বেদনা। সেই সময় ঢাকা এবং আশপাশের মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল, ঢাকা মেডিকেল এবং মিটফোর্ড (সলিমুল্লাহ হাসপাতাল) হাসপাতাল। আর ছিল হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল।
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্নে, যে স্বয়ংসম্পূর্ণ সুষম বাংলাদেশের উপস্থিতি, সেখানে স্বাস্থ্য সেবা অন্যতম। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের সময় মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা অত্যন্ত গুরুত্ব পায়। দুই বছরের মধ্যে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (বর্তমান উপজেলা) নির্মাণ অগ্রাধিকার পায়। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এত সুচিন্তিত ছিল, যেন সেই এলাকার মানুষ সেখানেই সবরকম চিকিৎসা পেতে পারেন। মেডিসিন থেকে গাইনি, সার্জারি, অর্থোপেডিকস, নাক-কান-গলা, হার্ট, চোখ, শিশু, দাঁতসহ প্রয়োজনীয় প্রত্যেকটি বিভাগের চিকিৎসা এবং চিকিৎসকের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। কেউ যদি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অর্গানোগ্রাম দেখেন, বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। আমার পরিস্কার মনে আছে, ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে সকালে কাপাসিয়ায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চূড়ান্ত কাজ দেখতে যাওয়ার কথা ছিল আব্বুর।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা এবং জেলে আটক জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য থেকে সরে যায় দেশ। স্বাস্থ্যসেবাও এর বাইরে নয়। মৌলিক প্রতিষ্ঠান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গুণগত মানের কোনো উন্নয়ন হয় না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব অগ্রগতিসহ সময়ের প্রয়োজনে নতুন বহুকিছুর সংযোজন ঘটেছে চিকিৎসা ক্ষেত্রে। কিন্তু বেচারা উপজেলা কমপ্লেক্স তার কোনো সুবিধাই অর্জন করতে পারেনি। উপজেলায় স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি প্যাথলজি নেই। যে কারণে অতি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা এখানে সম্ভব হয় না যেমন- ব্লাড কালচার, ইলেকট্রোলাইট, লিপিড প্রোফাইল, ইউরিন কালচার ইত্যাদি। এ ছাড়া ব্লাড ব্যাংক নেই। কারও শরীরে রক্ত দিতে হলে এর জন্য যে স্ট্ক্রিনিং এবং ক্রস ম্যাচিং প্রয়োজন, তা হয় না। রেডিওলজি ডাক্তারের পদ না থাকায় এক্স-রে রিপোর্ট করা যায় না। আল্ট্রাসনোগ্রাম, বর্তমানে এই বিষয়টি যে কোনো ছোটখাটো ডাক্তারি পরীক্ষা কেন্দ্রে সম্ভব। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আল্ট্রাসনোগ্রাফি হয় না। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করতে হয়, গত প্রায় সাড়ে তিন-চার বছর আগে উপজেলা পর্যায়ে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর বিপরীতে সনোলজিস্ট নিয়োগ বা কোনো একজন মেডিকেল অফিসারকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এই কাজটি করার জন্য নিয়োগ বা নির্দিষ্ট করা হয়নি। ফলে মেশিনগুলো বাক্সবন্দি হয়ে অব্যবহূত পড়ে আছে।
এ ছাড়া হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য যে পরিমাণ লোকবল দরকার তা উপজেলায় নেই। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দেশব্যাপী সমন্বিত বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন জরুরি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনায় সব বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিককে অন্তর্ভুক্ত রাখা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে বিপন্ন পরিবেশ থেকে আমরা কেউ রক্ষা পাব না।
যুগের সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য সেবার যে পরিবর্তন, সংযোজন হয়েছে তাতে বর্তমানে আমাদের দেশে আরও অনেক বেশি পরিমাণে সামঞ্জস্য প্রয়োজন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হলে এর অ থেকে চন্দ্রবিন্দু পর্যন্ত বিশ্নেষণ করে উন্নত পর্যায়ে নিতে হবে। উপজেলা হলো সেই এলাকার মানুষের প্রাণকেন্দ্র- যেখানে প্রান্তিক মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ অর্থাৎ সব মানুষ যেন চিকিৎসার মতো মানবিক সেবা হাতের নাগালে পায় তার ব্যবস্থা রাখা একান্ত অপরিহার্য।
রাজধানী থেকে শুরু করে বিভাগ, জেলা, উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত চিকিৎসা কেন্দ্রের সব কেনাকাটার পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা, মানসম্মত জিনিসপত্রের কেনাকাটার নিশ্চয়তা ও প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক জিনিসটি সঠিক সময়ে নিশ্চিত করা ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে ক্রয় পদ্ধতি পরিবর্তন প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে একটি বিশেষ জাতীয় কমিটি এবং ধাপে ধাপে উপজেলা পর্যন্ত এই কমিটি বিস্তৃত হতে পারে। যেখানে বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনসম্পৃক্ততা থাকবে।
উপজেলা পর্যায়ে বেসরকারি ক্লিনিকগুলোর সার্বিক মানোন্নয়ন এবং যাচাই সংক্রান্ত একটি কমিটি আছে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি, কঠিন দেশপ্রেম, নিয়ম এবং দায়িত্বের প্রতি সর্বোচ্চ বিশ্বস্ততা এবং সেই এলাকার মানুষের নূ্যনতম সহযোগিতা ছাড়া এই পর্যায়ে যৌক্তিক কাজ করা প্রায় অসম্ভব। রাজধানীসহ বিভাগ, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সার্বিক মানোন্নয়ন এবং যাচাইয়ের জন্য স্তরে স্তরে মানসম্মত কমিটি করে কেন্দ্রীয়ভাবে স্বচ্ছতার মাধ্যমে মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা একান্ত প্রয়োজন। অনেক সময় দেখা যায় উপজেলা পর্যায়ে বেসরকারি ক্লিনিক অনুমোদন না পেলেও জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে অনুমোদন নিয়ে আসে। অসুস্থতা একজন মানুষের জীবনের বড় একটি দুঃসময়। এই দুঃসময়ে সাধারণ মানুষ যেন লোভী, দুর্নীতিপরায়ণ কিছু মানুষের দ্বারা শারীরিক এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা নিশ্চিত করার এখনই সময়। বিশেষভাবে টেকসই লক্ষ্যমাত্রা, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্য অর্জন করতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা করা একান্ত জরুরি।
আমার ক্ষুদ্র চিন্তায় আরও মনে হয়, সরকারি যে কোনো পর্যায়ের হাসপাতালে বহির্বিভাগে সরাসরি টিকিটের টাকা জমা না নিয়ে তা যদি দ্রুতগতিতে ব্যাংকের মাধ্যমে জমা নেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়, তবে এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যেত। এ ছাড়া প্রতিটি হাসপাতালে অভ্যর্থনা এবং অনুসন্ধান কেন্দ্র স্থাপন করা গেলে সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে তার প্রয়োজন অনুযায়ী ডাক্তারের কাছে যেতে পারত, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে পারত, এতে একশ্রেণির দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য বন্ধ হতো।
গত ২৮ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির দেওয়া ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের নিয়মিত আলোচনায় আমি কাপাসিয়ার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নমূলক উদাহরণযোগ্য কিছু কার্যক্রমের কথা তুলে ধরি। সেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যবীমা চালু করার বিষয়টি উল্লেখ করেছিলাম। আগামীতে সারাদেশে স্বাস্থ্যবীমা চালু করা হলে সাধারণ মানুষ অনেকটা স্বস্তি পাবে। আরও একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই, সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিকিৎসার জন্য দরিদ্র বেশ কিছু মানুষকে এককালীন ভালো অনুদান দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে এই অনুদানে সমাজসেবার সঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে যুক্ত করলে সরকার যে এত বড় অনুদান দিচ্ছে, তা মানুষ জানতে এবং বুঝতে পারত। প্রাপ্যতার দিক দিয়ে সঠিক মানুষটি নির্বাচন করা সহজ হতো।
বর্তমানে পুরো বিশ্ব এবং আমরা সম্পূর্ণ অজানা-অচেনা এক সময় অতিক্রম করছি। এতদিন আমরা ইতিহাসে গল্প পড়েছি ভয়াবহ মহামারি, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কথা। এখন তা নিরেট বাস্তবতা। কোনো দেশেরই প্রস্তুতির সুযোগ ছিল না। দীর্ঘদিনের জমে থাকা ত্রুটি-বিচ্যুতি তাই আমাদের সমাজকে নাড়া দিয়েছে বেশ খানিকটা। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আগামীর সুন্দরের স্বপ্ন দেখতে পারি। সংকটের সময়কে সুসময়ের পরিকল্পনায় কাজে লাগাতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনগণের জন্য গভীর ভালোবাসায় সিক্ত একটি মন আছে। তার সুদৃঢ় নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় স্বপ্নের স্বাস্থ্য সেবা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে, এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
প্রেমিকের সঙ্গে বাড়ি ছাড়ার পথে গণধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী
গাইবান্ধা প্রতিনিধি
দশম শ্রেণির এক ছাত্রী ভালোবাসে এক যুবককে। দুই পরিবার হয়ত মেনে নেবে না তাদের সম্পর্ক- এই ভয়ে রাতের আঁধারে প্রেমিকের সঙ্গে বাড়ি ছাড়ে মেয়েটি। পথে তারা পাঁচ দুর্বৃত্তের খপ্পরে পড়ে। দুবৃত্তরা প্রেমিককে মারধর করে ওই ছাত্রীকে ছিনিয়ে নেয়। এর পর একটি বাড়িতে নিয়ে রাত ২টা পর্যন্ত পাঁচজন মিলে তাকে ধর্ষণ করে। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ এলাকায় রোববার (২৬ জুলাই) রাতে গণধর্ষণের শিকার হয় ওই ছাত্রী।
এ ব্যাপারে রাত ৩টায় গোবিন্দগঞ্জ থানা ধর্ষিতার অভিযোগ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই অভিযান চালিয়ে ২ ঘণ্টার মধ্যে পাঁচ ধর্ষককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- উপজেলার নাওভাংগা এলাকার নীল মাহমুদের ছেলে এনামুল হক, আজিম উদ্দিনের ছেলে রেজাউল, ভোলা মিয়ার ছেলে ধলু, এজদুর রহমানের ছেলে সুমন মিয়া (২৩) ও সাহারুল কাজীর ছেলে সাদ্দাম ওরফে সুজন কাজী।
গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মেহেদী হাসান জানান, দশম শ্রেণির ছাত্রী তার প্রেমিকের সঙ্গে রাত ১২টায় বাড়ি থেকে পালিয়ে যাচ্ছিল। পথে ওই পাঁচ দুর্বৃত্ত প্রেমিককে মারধর করে ছাত্রীকে ছিনিয়ে নেয়। এর পর নাওডাঙ্গা গ্রামে ধলুর বাড়িতে নিয়ে আটকে রাখে। পরে ওই বাড়িতেই রাত ২টা পর্যন্ত পাঁচজন মিলে ওই ছাত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে তাদের খপ্পর থেকে মুক্তি পেয়ে স্কুলছাত্রীটি তার প্রেমিকের সঙ্গে গোবিন্দগঞ্জ থানায় এসে বিষয়টি অবহিত করে।
ওসি জানান, অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসআই মামুনের নেতৃত্বে গোবিন্দগঞ্জ থানাপুলিশের একটি টিম ওই ছাত্রীকে নিয়ে ধর্ষক ধলুর বাড়ি নাওডাঙ্গা গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। পরে ধলুর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অপর চার ধর্ষককে ২ ঘণ্টার মধ্যে আটক করে পুলিশ।
এ ব্যাপারে থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া ছাত্রীর ডাক্তারি পরীক্ষা, জুডিশিয়াল জবানবন্দি ও আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান ওসি মেহেদী হাসান।
বরগুনার আমতলীর বৈঠাকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লক (টয়লেট) নির্মাণে রডের পরিবর্তে বাঁশের কঞ্চি (টুনি) ব্যবহার করা হয়েছে। এতে নির্মাণের তিন বছরের মাথায় ওয়াশ ব্লক ভেঙে পড়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় গত শনিবারের ওই দুর্ঘটনার হাত থেকে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা রক্ষা পেলেও রডের পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে ওয়াশ ব্লক নির্মাণকারী ঠিকাদারকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমতলী উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বৈঠাকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াশ ব্লক নির্মাণের জন্য ২০১৫ সালে দরপত্র আহ্বান করে। ৭ লাখ টাকা ব্যয়ের ওই কাজ পান আমতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ঠিকাদার নুর জামাল। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। কাজের শুরুতে বিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ এতে বাধা দিলেও তা উপেক্ষা করে প্রভাব খাটিয়ে ঠিকাদার নুর জামাল তার কাজ চালিয়ে যান। তার ভয়ে বিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ কাজ দেখভাল করতে পারেনি। তৎকালীন উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগসাজশে ঠিকাদার নিজের ইচ্ছামাফিক রডের পরিবর্তে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ওয়াশ ব্লক নির্মাণ করেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
২০১৭ সালে ওই কাজ শেষ হলে তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলতানা রাজিয়ার কাছে প্রত্যায়নপত্র চান ঠিকাদার। কিন্তু কাজের মান ভালো না হওয়ায় প্রত্যয়নপত্র দেননি এমন দাবি প্রধান শিক্ষকের। এদিকে ওয়াশ ব্লক নির্মাণের তিন বছরের মাথায় লেন্টিন ও ওয়ালে ফাটল ধরে। ওই ফাটল মেরামতের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য এ বছর ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। গত শনিবার ওই ওয়াশ ব্লক মেরামতের কাজ শুরু করে বিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ। রাজমিস্ত্রি সুলতান হাওলাদার কাজ শুরু করতেই মুহূর্তের মধ্যে ওয়াশ ব্লকের লেন্টিন ও ওয়াল ভেঙে পড়ে। এরপরই লেন্টিন থেকে বেরিয়ে আসে রডের পরিবর্তে বাঁশের কঞ্চি।
তাৎক্ষণিক রাজমিস্ত্রি সুলতান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও এলাকাবাসীকে বিষয়টি জানান। প্রধান শিক্ষক ঘটনাস্থলে এসে ভেঙে পড়া অংশে রডের পরিবর্তে বাঁশের কঞ্চি দেখে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মজিবুর রহমানকে বিষয়টি জানান। এরপর গত রবিবার বিকেলে মজিবুর রহমান বিদ্যালয়ে এসে ভেঙে পড়া ওয়াশ ব্লক পরিদর্শন করেন। এদিকে খবর পেয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. তরিকুল ইসলাম ও ঠিকাদার নুর জামাল ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাঙা ওয়াশ ব্লক থেকে বাঁশের কঞ্চির লেন্টিন ও কঞ্চি সরিয়ে ফেলেন বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। এ সময় তারা এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়েন।
স্থানীয় বাসিন্দা মুরাদ খান, দেলোয়ার হোসেন ও এনামুল খান বলেন, ঠিকাদার নুর জামাল রডের পরিবর্তে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ওয়াশ ব্লক নির্মাণ করেছে। ঠিকাদারের বিচার দাবিও করেন তারা।
বিদ্যালয়ের দপ্তরি মো. শাওন খলিফা বলেন, ‘প্রকৌশলী মো. তরিকুল ইসলাম ও ঠিকাদার নুর জামাল এসে বাঁশ দিয়ে নির্মাণ করা ভেঙে পড়া লেন্টিন সরিয়ে ফেলেছে। আমি নিষেধ করা সত্ত্বেও তারা শোনেনি। পরে গোপনে আমি ভাঙা লেন্টিনের দুটি টুকরো লুকিয়ে রাখি।’
রাজমিস্ত্রি সুলতান হাওলাদার বলেন, ‘মেরামতের কাজ শুরু করা মাত্রই ওয়াশ ব্লকের লেন্টিন ও ওয়াল ভেঙে পড়ে। পরে দেখতে পাই লেন্টিনের মধ্যে বাঁশের কঞ্চি। ধারণা করা হচ্ছে পুরো ওয়াশ ব্লকে রডের পরিবর্তে বাঁশের কঞ্চি ব্যবহার করা হয়েছে।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলতানা রাজিয়া বলেন, ‘ঠিকাদার নুর জামাল ওয়াশ ব্লকের কাজের শুরুতেই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করেন। ওই সময় আমি নিষেধ করলে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। আমি তার কাজের কোনো প্রত্যয়ন দিইনি। এখন দেখছি রডের পরিবর্তে বাঁশ দিয়েছে।’
তবে ঠিকাদার নুর জামাল রডের পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে ওয়াশ ব্লক নির্মাণের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাকে ফাঁসানোর জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’
আমতলী উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তদন্তসাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীন বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অন্ধকার নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় তার অপরাধ ও পৈশাচিক কর্মকাণ্ড। রাতভর চলে মাদক ব্যবসার চালান আদান প্রদান। আড়িয়াল বিলে মাছ ডাকাতির সঙ্গেও জড়িত রয়েছে তার নাম। সারারাত ঘুরে বেড়ানো তার নেশা। রাত বিরাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ওই এলাকার কোনো নারী ঘর থেকে একা বের হলেই সুযোগ বুঝে সে হামলে পড়ে। কেড়ে নেয় সম্ভ্রম। রাতের আঁধারে একাধিক নারীর সম্ভ্রম কেড়ে নেওয়ার পর লোকলজ্জার ভয়ে বেশ কয়েকজন নারী এখন এলাকা ছাড়া।
এক নারী তার অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সে ওই নারীর বসতঘর রাতের আঁধারে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডের জন্য বাড়ৈখালী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের আক্তার মোড়ল (৪২) ওই এলাকায় রাতের রাজা নামেই পরিচিত। রাতের রাজা আক্তার মোড়লের বিরুদ্ধে রয়েছে মাদকসহ একাধিক মামলা।
রাজনৈতিক ছত্রছায়ার কারণে এলাকায় অপরাধ জগতে তার অবাধ বিচরণে কোনো বাধা নেই। কিন্তু দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে প্রতিবাদী হয়ে উঠে যে কেউ। তেমনি রাতের রাজা আক্তার মোড়লের কছে একাধিকবার সম্ভ্রম হারানোর পর ওই এলাকার দরিদ্র এক গৃহবধূ গত ৪ জুলাই শ্রীনগর থানায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করে প্রায় এক মাস পর ২৭ জুলাই সোমবার আক্তার মোড়লের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা গ্রহণ করে।
তবে অভিযোগটির তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্রীনগর থানার এসআই হাফিজ জানান, ওই গৃহবধূ প্রথমে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেননি। সে ফুঁসলানো ও মারামারির অভিযোগ দায়ের করে। তদন্তে গেলে সে জানায়, তাকে আক্তার মোড়ল একাধিকবার ধর্ষণ করেছে।
ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূ জানায়, তাদের এলাকার মৃত জব্বার মাদবরের ছেলে আক্তার মোড়ল (৪২) আক্তার প্রায়ই তাদের বাড়িতে আসত। কিন্তু পূর্বে থেকে তার বিরুদ্ধে জানা থাকায় ওই গৃহবধূ তাকে এড়িয়ে চলে। জুন মাসের মাঝামাঝি কোনো এক রাতে ওই গৃহবধূ প্রকৃতির ডাকে সারা দিয়ে ঘর থেকে বের হলে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা আক্তার মোড়ল তাকে ধর্ষণ করে। এই ঘটনা প্রচার করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে।
সর্বশেষ গত ৩ জুলাই রাতে ওই নারী ধর্ষিত হলে সে উপায় না দেখে বিষয়টি তার স্বামীকে জানায়। পরে পরিবারের পরামর্শে সে থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করে। ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য পুলিশ যাওয়ার কারণে আক্তার মোড়ল ওই গৃহবধূর বাড়িঘরে হামলা চালায় এবং মামলা করলে পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়।
ওই এলাকার ৬০ বছরের এক বৃদ্ধা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, প্রায় এক বছর পূর্বে সন্ত্রাসী আক্তার তার প্রবাসী ছেলের বউকে নানাভাবে ভয় দেখিয়ে অবৈধ সম্পর্ক করতে বাধ্য করে। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়ে গেলে আক্তার তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আক্তারের ভয়ে ওই বৃদ্ধার পুত্রবধূ তার নাতনীকে নিয়ে ঢাকায় ভাড়া বাসায় থাকছেন। এছাড়াও আক্তারের হাত থেকে তার আপন শ্যালিকাও রক্ষা পায়নি। সন্ত্রাসী আক্তার মোড়ল যখন তখন অস্ত্র বের করে ভয় দেখায় বলে স্থানীয় বেশ কয়েকজন অভিযোগ করে।
শ্রীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হেদায়াতুল ইসলাম ভূঞা বলেন, ধর্ষণ মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) ভোর ৪টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪৯ বছর। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান ও স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শফিউল বারী বাবু বেশ কিছু দিন ধরে অসুস্থ। তার স্বাস্থ্যের আরও অবনতি হওয়ায় সোমবার বেলা ১১টার দিকে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া হয়। এরপর রাত দেড়টার দিকে শফিউল বারী বাবুকে এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। এখানেই তার মৃত্যু হয়।
হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলীসহ স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃবৃন্দ। এর আগে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন হাবিবুর নবী খান সোহেল ও ইশরাক হোসেন।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর মৃত্যুতে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, ছাত্রদল, বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে।
এক যুবককে সড়ক দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিল একটি গাড়ি। এমনই একটি ভিডিও ভাইরাল নেট দুনিয়ায়।
ভারতের অলোক শ্রীবাস্তব নামে এক সাংবাদিক রোববার (২৬ জুলাই) ভিডিওটি পোস্ট করেন। সেটি রাস্তার ধারের এক নজরদারি ক্যামেরায় রেকর্ড হওয়া দৃশ্য। যা পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।
সেখানে দেখা যাচ্ছে, রাস্তার ধারে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক ব্যক্তি। পাশ দিয়ে দ্রুত গতিতে সব গাড়ি ছুটে যাচ্ছে।
কিন্তু বিপদ যেন ওত পেতে বসে ছিল। যুবকটি যে দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন, মাটি খোঁড়ার একটি জেসিবি মেশিন ঠিক পিছন দিক থেকে দ্রুত গতিতে ছুটে আসে। ওই যুবক রাস্তার যে দিকের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন, জেসিবি-টি তার উল্টো দিক দিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দ্রুত গতিতে সেটি যুবকের দিকে ছুটে আসে। কিছু একটা অনুমান করে ওই যুবক পিছন ফেরেন, দেখতে পান, বিপদ আসছে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ওই যুবক সময় মতো আর সরে যাওয়া সম্ভব ছিল না। মৃত্যু যেন সাক্ষাৎ তার দিকে ধেয়ে আসছে। এমন আবির্ভাব ঘটে এক মাহিন্দ্রা বোলেরো গাড়ির।
জেসিবি-টিকে নিয়ন্ত্রণ হারাতে দেখে বোলেরোর চালক কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না, তার গাড়িরও যথেষ্ট গতি ছিল। শেষ পর্যন্ত জেসিবি-তে ধাক্কা মারে মহিন্দ্র বোলেরোটি। ফলে জেসিবি-টি আর রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা ওই যুবকে ধাক্কা মারে না, প্রাণে বেঁচে যান ওই যুবক।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) সরবরাহের প্রথম দুই লটের মাস্ক আমদানি করা হলেও বাকিগুলো স্থানীয়ভাবে তৈরি করা হয়েছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ও ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী শারমিন জাহান। সোমবার (২৭ জুলাই) তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
নকল ও ত্রুটিপূর্ণ মাস্ক সরবরাহকারী শারমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সোমবার ছিল রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, মাস্ক নিয়ে মুখ খুলছেন শারমিন। তার দেওয়া তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। তিনি কোথা থেকে এবং কার মাধ্যমে মাস্ক সংগ্রহ ও সরবরাহ করেছেন, এসব জানার চেষ্টা চলছে।
তারা বলছেন, প্রথম দুই লটের মাস্ক চীন থেকে আমদানি করা হলেও বাকি মাস্কগুলো স্থানীয়ভাবে তৈরি করা হয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে আরও লোকজন জড়িত রয়েছে। তাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্ক সরবরাহ করতে গিয়ে অবৈধ পন্থা অবলম্বন করেছেন শারমিন। প্রথম দুই লটে আসল ‘এন-৯৫’ মাস্ক দিলেও পরবর্তী সময়ে লটে নকল ‘এন-৯৫’ মাস্ক দেওয়া হয়েছে।
ডিবির তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলছেন, শারমিন বিএসএমএমইউ থেকে কীভাবে মাস্ক সরবরাহের কাজটি বাগিয়ে নিয়েছেন তা জানার চেষ্টা চলছে। তার এই জালিয়াতির সঙ্গে বিএসএমএমইউর কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী জড়িত রয়েছে কি না তাও জানার চেষ্টা চলছে।
এর আগে গত ২৩ জুলাই নকল ও ত্রুটিপূর্ণ মাস্ক সরবরাহের কারণে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার শারমিন জাহানের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন বিএসএমএমইউ’র প্রক্টর অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ। ২৪ জুলাই রাজধানীর শাহবাগ থেকে শারমিনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। ২৫ জুলাই শারমিনের তিন দিন রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
শারমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রশাসন-১ শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গ্রেপ্তারের পর তাকে ঢাবির সহকারী রেজিস্ট্রার পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজে স্নাতকোত্তর করা শারমিন ২০০২ সালে ছাত্রলীগের বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের গত কমিটিতে তিনি মহিলা ও শিশুবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক ছিলেন।
শারমিন ২০১৬ সালের ৩০ জুন স্কলারশিপ নিয়ে চীনের উহানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। গত ২৩ জানুয়ারি থেকে উহানে লকডাউন শুরু হলে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তার শিক্ষা ছুটির মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি বলে জানা গেছে। এর মধ্যে চীনে থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের মার্চে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল নামে সরবরাহকারী হিসেবে ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ, ভারতীয় মিডিয়ার দাবি
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক
ভারতের অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে চিড় দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। সোমবার (২৭ জুলাই) ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যমে এমন দাবি করা হয়েছে।
আনন্দবাজার, নিউজ১৮ ও দ্য হিন্দুর প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, রাম মন্দির নির্মাণের উদ্যোগের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ভারতের এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া উচিত নয়, যা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্কে আঘাত করতে পারে।
দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্যে বলা হয়েছে, তিনি বলেন, আমরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে আঘাত হানতে এই বিষয়টি (রাম মন্দির নির্মাণ) অনুমোদন করব না। তবু আমি এখনও ভারতের কাছে দাবি জানাচ্ছি, এমন কিছু যেন না-করে, যাতে ভারত-বাংলাদেশের সুন্দর বন্ধুত্বের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। দু’পক্ষেরই উচিত কোনও রকম বিবাদ ও বিতর্ক হয়, এমন কাজ থেকে বিরত থাকা।
ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবি, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ৫ আগস্ট অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের সূচনা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরোধীদের হাতে নতুন রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে ওঠার সম্ভাবনা প্রবল। রাম মন্দির ইস্যুতে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের এমন কোনও কাজ করা ঠিক নয়, যা বাংলাদেশের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব ও সম্পর্ককে নষ্ট করে দেবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন জানিয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে প্রাথমিকের সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হয় তবে এ বছরেই প্রাথমিকের শিক্ষাবর্ষ শেষ করা হবে।
সোমবার (২৭ জুলাই) শিক্ষা সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ এডুকেশন রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ইরাব) আয়োজিত ‘করোনাকালে প্রাথমিক শিক্ষায় চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত আপাতত নেই। এই পরীক্ষা আরো অধিকতর যুগোপযোগী করার পরিকল্পনা করছে সরকার। আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। প্রায় সাড়ে ৫ মাস ধরে বন্ধ। এই দীর্ঘদিন বন্ধের যে ক্ষতি হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষায় তা কাটিয়ে উঠতে আমাদের বেশকিছু পরিকল্পনা রয়েছে।
সিলেবাস সংক্ষিপ্তকরণের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ইতিমধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং এনসিটিবি, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি ন্যাপকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা এই বিষয়ে কাজ করছেন। সিলেবাস সংক্ষিপ্তকরণের বিষয়ে এক শ্রেণি থেকে পরের শ্রেণিতে উঠতে তাদের যতটুকু পাঠযোগ্যতা দরকার, সেটি রাখা হবে। গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো থাকবে যাতে শিক্ষার্থীরা পরের শ্রেণির পাঠের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঈদুল আজহার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে বলে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এমন কোনো সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত সরকারের নেই। সরকার সিদ্ধান্ত নিলে সেটা? বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হবে।
ভার্চ্যুয়াল এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইরাব’র সভাপতি মুসতাক আহমদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় এক সাইকেল মেকানিকের দোকানে জুন মাসের বিল এসেছে ২৬ লাখ ৫৯ হাজার ১১৪ টাকা! তার দাবি, দোকানে ১টি ফ্যান ও ১টি লাইট ব্যবহারে প্রতি মাসে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আসে।
উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের শিমুলিয়া চৌরাস্তা বাজারের এমএ তুহিন কামালের সাইকেল মেকানিকের দোকানে এ বিল এসেছে।
তিনি জানান, তার মেকানিকের দোকানে ১টি ফ্যান ও ১টি লাইট ব্যবহার হয়। এত তার মসে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আসে। কিন্তু জুলাই মাসে এসে জুন মাসের যে বিল দেয়া হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ৬৯০ টাকা। বিলম্ব মাশুলসহ যার মূল্য ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ৫৯ হাজার ১১৪ টাকা।
কিশোরগঞ্জ জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মোহা. আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, এ ধরনের ’গ্রেট মিসটেক’র জন্য দায়ী ও-ই অফিসের বিলিং সহকারী শামসুন্নাহারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়েছে।
স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার নাইমুল হাসান বলেন, ঘটনাটিকে স্রেফ ‘ডাটা এন্ট্রি মিসটেক’।
চাঁদা তুলে হিন্দু ব্যক্তির শেষকৃত্য সম্পন্ন করলেন মুসলমান প্রতিবেশীরা
আন্তর্জাতিক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
টাকার অভাবে এক দরিদ্র হিন্দু ব্যক্তির শেষ যাত্রা সম্পন্ন করা যাচ্ছিল না। এসময় পাশে এগিয়ে এসে চাঁদা তুলে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করলেন মুসলমান প্রতিবেশীরা। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম জানায়, বেশ বছর কয়েক ধরে বয়সজনিত অসুখে ভুগছিলেন পশ্চিমবঙ্গের রানিতলা থানার নশিপুর মানিকডাঙার বাসিন্দা গোপাল মন্ডল। রোববার (২৬ জুলাই) সকালে তার মৃত্যু হয়।
তার স্ত্রী শোভাদেবী বলেন, স্বামীর সৎকার কিভাবে করব, তাই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। সে টাকাও নেই আমাদের।
জিয়াগঞ্জ শ্মশানে আনার জন্য গাড়ি ভাড়া, শ্মশানে দাহকাজের খরচ সহ সব মিলে হাজার কয়েক টাকা খরচ হবে। অবশেষে গোপালের অন্ত্যেষ্টিতে এগিয়ে আসেন স্থানীয় বাসিন্দা মাসাদুল হল, আফরিন শেখ, ইয়াকুব আলি সহ বেশ কয়েকজন। তারপর তারা নিজেরা চাঁদা তোলেন গ্রামে। এগিয়ে আসেন গ্রামের বাসিন্দারাও।
স্থানীয় সূত্রে খবর, রানিতলা থানার পশ্চিমবঙ্গের নশিপুরের মানিকডাঙা মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ গ্রাম। তার মধ্যে কয়েকটি হাতে গোনা হিন্দু পরিবার রয়েছে। এদিন বাঁশ কাটা থেকে গাড়ি ভাড়া সব কাজেই হাত লাগিয়েছেন আরফিনরা। জিয়াগঞ্জ শ্মশানেও এসেছিলেন ইয়াকুব আলি, আফরিন শেখরা। শ্রাদ্ধেও গোপালের পরিবারের পাশে তারা দাঁড়াবেন বলেই জানিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ভগবানগোলা-২ পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মকর্তা মিজানুল হক বলেন, গোপালকাকা আমাদের গ্রামের বাসিন্দা। আমরা শুনেই গ্রামের বাসিন্দা উপেন মণ্ডল, সুরেশ মণ্ডলকে নিয়ে আলোচনা করে সঙ্গে সঙ্গে হাত লাগাই।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমাদের বিনীত নিবেদন, অনুগ্রহপূর্বক বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত জায়গাটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।
খোলামত
ড. মো. লতিফুর রহমান সরকার
গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার ৪নং বরিশাল ইউনিয়নের ভগবানপুর একটি সাধারণ গ্রাম। কিন্তু দুটি কারণে এ গ্রামটি স্থানীয় সবার কাছেই পরিচিত : স্থানটি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত এবং মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক মরহুম আজিজার রহমান সরকারের এলাকা। আজিজার রহমান সরকার ছিলেন গাইবান্ধা জেলার মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বালুরঘাট লিবারেশন ক্যাম্পের সাধারণ সম্পাদক।
তিনি গাইবান্ধা থেকে এমপিএ নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৬২, ১৯৬৭ ও ১৯৭০ সালে। আজিজার রহমান সরকার নিজ বাড়িসংলগ্ন সরকারি পতিত জায়গায় গড়ে তুলেছিলেন ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, দাতব্য চিকিৎসালয়, কমিউনিটি সেন্টার এবং কৃষি ব্লক সুপারভাইজারের বাসভবন। নিজ হাতে রোপণ করেছিলেন নানা ধরনের গাছপালা।
১৯৭০ সালের নির্বাচনী সফরে বঙ্গবন্ধু রংপুরে এসে কেন্দ্রীয় নেতারাসহ আজিজার রহমান সরকারের বাড়িতে বিশ্রাম নিয়ে দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করেছিলেন। বাড়ি প্রাঙ্গণে উপস্থিত কয়েক হাজার মানুষের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সেই উপস্থিতি এবং বরিশাল ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে গড়ে ওঠা অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের কারণে ভগবানপুর গ্রামটি পলাশবাড়ীর প্রায় সবার কাছেই পরিচিত। এ প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সেবা পেয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় ও নিদারুণ অবহেলায় প্রতিষ্ঠানগুলো আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত।
তবে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বট, পাকুর ও আমসহ অনেকগুলো গাছপালা। এ জায়গায় ইউনিয়ন পরিষদের একটি পাকা ভবন থাকা সত্ত্বেও এক অদ্ভুত কারণে ইউনিয়ন পরিষদ অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, অতি সম্প্রতি জায়গাটিকে পরিত্যক্ত দেখিয়ে এবং এর জনগুরুত্ব বিবেচনা না করে একটি মহল তাদের পছন্দের কয়েকজন ব্যক্তির নামে (ভূমিহীনের কথা বলে) বরাদ্দ দিয়েছে।
এলাকাবাসী এ ঘটনায় অত্যন্ত ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ। তারা বুঝতে পারছেন না কী করে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি সংবলিত এরকম একটি ঐতিহাসিক ও জনগুরুত্বপূর্ণ জায়গা কৃষিকাজের জন্য কয়েকজনকে বরাদ্দ দেয়া যায়। জায়গাটি ১৯৪০ সালের রেকর্ডে উল্লেখ আছে দেবাস্থান এবং ১৯৯৪ সালের রেকর্ডে উল্লেখ আছে ইউনিয়ন পরিষদ এবং কৃষি ব্লক সুপারভাইজারের বাসভবন হিসেবে। এতদিন ধরে এতগুলো জনকল্যাণমূলক কাজে এ জায়গাটি ব্যবহৃত হলেও শুধু ১৯৬২ সালের রেকর্ডে ‘ডাঙ্গা’ কথাটি উল্লেখ আছে- এই দোহাই দিয়ে জমিটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিস্বার্থে কয়েকজনকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু এবং তার এক সহযোগীর স্মৃতিবিজড়িত স্থানটি একটি মহল ধ্বংসের চেষ্টা করছে, এটি খুবই দুঃখজনক। জায়গাটি রক্ষার জন্য আমরা এলাকাবাসী জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছি। আবেদনে সুপারিশ করেছেন মাননীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও স্থানীয় নেতারা। হিন্দু-মুসলিম শত শত এলাকাবাসী সম্মিলিতভাবে স্বাক্ষর করেছেন এই আবেদনে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন। কিন্তু এক অদৃশ্য কারণে এখন পর্যন্ত ফলাফল শূন্য।
শুধু তাই নয়, এলাকাবাসী উদার মনে উপজেলা প্রশাসনকে (ইউএনও) অবহিত করেছেন যে, তারা প্রয়োজনে কৃষিজমি দিতে প্রস্তুত, তবু এই বরাদ্দ দ্রুত বাতিল করে এ জায়গায় বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির উদ্দেশে জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান যেমন: হাইস্কুল, কলেজ বা কমিউনিটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা অথবা অন্য কোনো জনহিতকর কাজ করা হোক।
জায়গাটিতে যে কোনো সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে উপকৃত হবেন এলাকাবাসী এবং সেই সঙ্গে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে উপকার করা যেতে পারে ভূমিহীনদের। কিন্তু সেবামূলক কোনো প্রতিষ্ঠান না করে এভাবে এই জনসম্পদকে কয়েকজনের নামে বরাদ্দ দিলে জায়গাটি চিরতরে নষ্ট হয়ে যাবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমাদের বিনীত নিবেদন, অনুগ্রহপূর্বক বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত জায়গাটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।
লেখক, ড. মো. লতিফুর রহমান সরকার, ভগবানপুর, পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা।
১৯৭০ সালের অক্টোবর মাসের ২ তারিখ সন্ধ্যায় উঁচু বারান্দা থেকে দ্রুতগতিতে নামতে গিয়ে আমার আম্মা সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের বাঁ পায়ের হাড় ভেঙে যায়। আব্বু তাজউদ্দীন আহমদ আম্মাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। আমার তখন খুব অল্প বয়স। আম্মার এই অবস্থায় আমার প্রচণ্ড অসহায় লাগতে থাকে। আম্মা যখন ফিরে এলেন, তখন জানতে পারলাম, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্লাস্টারের সরঞ্জাম নেই, তাই প্লাস্টার করা সম্ভব হয়নি। যন্ত্রণায় কাতর আম্মার মুখ এবং আমার শিশু মনের অসহায়ত্ব আজও মনে হলে আমাকে ভাবায়।
ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি চিকিৎসার জন্য বলতে গেলে সব সময় আমাদের বাসায় অসুস্থ মানুষের আসা-যাওয়া ছিল অবারিত। আমি তাদের জন্য দোয়া করতাম, সবাই যেন সুস্থ থাকেন। সেই অবুঝ সময়েও তাদের পাশে বসে বুঝতে চেষ্টা করতাম মানুষের অসুস্থতার বেদনা। সেই সময় ঢাকা এবং আশপাশের মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল, ঢাকা মেডিকেল এবং মিটফোর্ড (সলিমুল্লাহ হাসপাতাল) হাসপাতাল। আর ছিল হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল।
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্নে, যে স্বয়ংসম্পূর্ণ সুষম বাংলাদেশের উপস্থিতি, সেখানে স্বাস্থ্য সেবা অন্যতম। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের সময় মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা অত্যন্ত গুরুত্ব পায়। দুই বছরের মধ্যে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (বর্তমান উপজেলা) নির্মাণ অগ্রাধিকার পায়। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এত সুচিন্তিত ছিল, যেন সেই এলাকার মানুষ সেখানেই সবরকম চিকিৎসা পেতে পারেন। মেডিসিন থেকে গাইনি, সার্জারি, অর্থোপেডিকস, নাক-কান-গলা, হার্ট, চোখ, শিশু, দাঁতসহ প্রয়োজনীয় প্রত্যেকটি বিভাগের চিকিৎসা এবং চিকিৎসকের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। কেউ যদি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অর্গানোগ্রাম দেখেন, বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। আমার পরিস্কার মনে আছে, ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে সকালে কাপাসিয়ায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চূড়ান্ত কাজ দেখতে যাওয়ার কথা ছিল আব্বুর।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা এবং জেলে আটক জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য থেকে সরে যায় দেশ। স্বাস্থ্যসেবাও এর বাইরে নয়। মৌলিক প্রতিষ্ঠান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গুণগত মানের কোনো উন্নয়ন হয় না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব অগ্রগতিসহ সময়ের প্রয়োজনে নতুন বহুকিছুর সংযোজন ঘটেছে চিকিৎসা ক্ষেত্রে। কিন্তু বেচারা উপজেলা কমপ্লেক্স তার কোনো সুবিধাই অর্জন করতে পারেনি। উপজেলায় স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি প্যাথলজি নেই। যে কারণে অতি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা এখানে সম্ভব হয় না যেমন- ব্লাড কালচার, ইলেকট্রোলাইট, লিপিড প্রোফাইল, ইউরিন কালচার ইত্যাদি। এ ছাড়া ব্লাড ব্যাংক নেই। কারও শরীরে রক্ত দিতে হলে এর জন্য যে স্ট্ক্রিনিং এবং ক্রস ম্যাচিং প্রয়োজন, তা হয় না। রেডিওলজি ডাক্তারের পদ না থাকায় এক্স-রে রিপোর্ট করা যায় না। আল্ট্রাসনোগ্রাম, বর্তমানে এই বিষয়টি যে কোনো ছোটখাটো ডাক্তারি পরীক্ষা কেন্দ্রে সম্ভব। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আল্ট্রাসনোগ্রাফি হয় না। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করতে হয়, গত প্রায় সাড়ে তিন-চার বছর আগে উপজেলা পর্যায়ে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর বিপরীতে সনোলজিস্ট নিয়োগ বা কোনো একজন মেডিকেল অফিসারকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এই কাজটি করার জন্য নিয়োগ বা নির্দিষ্ট করা হয়নি। ফলে মেশিনগুলো বাক্সবন্দি হয়ে অব্যবহূত পড়ে আছে।
এ ছাড়া হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য যে পরিমাণ লোকবল দরকার তা উপজেলায় নেই। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দেশব্যাপী সমন্বিত বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন জরুরি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনায় সব বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিককে অন্তর্ভুক্ত রাখা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে বিপন্ন পরিবেশ থেকে আমরা কেউ রক্ষা পাব না।
যুগের সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য সেবার যে পরিবর্তন, সংযোজন হয়েছে তাতে বর্তমানে আমাদের দেশে আরও অনেক বেশি পরিমাণে সামঞ্জস্য প্রয়োজন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হলে এর অ থেকে চন্দ্রবিন্দু পর্যন্ত বিশ্নেষণ করে উন্নত পর্যায়ে নিতে হবে। উপজেলা হলো সেই এলাকার মানুষের প্রাণকেন্দ্র- যেখানে প্রান্তিক মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ অর্থাৎ সব মানুষ যেন চিকিৎসার মতো মানবিক সেবা হাতের নাগালে পায় তার ব্যবস্থা রাখা একান্ত অপরিহার্য।
রাজধানী থেকে শুরু করে বিভাগ, জেলা, উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত চিকিৎসা কেন্দ্রের সব কেনাকাটার পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা, মানসম্মত জিনিসপত্রের কেনাকাটার নিশ্চয়তা ও প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক জিনিসটি সঠিক সময়ে নিশ্চিত করা ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে ক্রয় পদ্ধতি পরিবর্তন প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে একটি বিশেষ জাতীয় কমিটি এবং ধাপে ধাপে উপজেলা পর্যন্ত এই কমিটি বিস্তৃত হতে পারে। যেখানে বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনসম্পৃক্ততা থাকবে।
উপজেলা পর্যায়ে বেসরকারি ক্লিনিকগুলোর সার্বিক মানোন্নয়ন এবং যাচাই সংক্রান্ত একটি কমিটি আছে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি, কঠিন দেশপ্রেম, নিয়ম এবং দায়িত্বের প্রতি সর্বোচ্চ বিশ্বস্ততা এবং সেই এলাকার মানুষের নূ্যনতম সহযোগিতা ছাড়া এই পর্যায়ে যৌক্তিক কাজ করা প্রায় অসম্ভব। রাজধানীসহ বিভাগ, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সার্বিক মানোন্নয়ন এবং যাচাইয়ের জন্য স্তরে স্তরে মানসম্মত কমিটি করে কেন্দ্রীয়ভাবে স্বচ্ছতার মাধ্যমে মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা একান্ত প্রয়োজন। অনেক সময় দেখা যায় উপজেলা পর্যায়ে বেসরকারি ক্লিনিক অনুমোদন না পেলেও জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে অনুমোদন নিয়ে আসে। অসুস্থতা একজন মানুষের জীবনের বড় একটি দুঃসময়। এই দুঃসময়ে সাধারণ মানুষ যেন লোভী, দুর্নীতিপরায়ণ কিছু মানুষের দ্বারা শারীরিক এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা নিশ্চিত করার এখনই সময়। বিশেষভাবে টেকসই লক্ষ্যমাত্রা, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্য অর্জন করতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা করা একান্ত জরুরি।
আমার ক্ষুদ্র চিন্তায় আরও মনে হয়, সরকারি যে কোনো পর্যায়ের হাসপাতালে বহির্বিভাগে সরাসরি টিকিটের টাকা জমা না নিয়ে তা যদি দ্রুতগতিতে ব্যাংকের মাধ্যমে জমা নেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়, তবে এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যেত। এ ছাড়া প্রতিটি হাসপাতালে অভ্যর্থনা এবং অনুসন্ধান কেন্দ্র স্থাপন করা গেলে সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে তার প্রয়োজন অনুযায়ী ডাক্তারের কাছে যেতে পারত, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে পারত, এতে একশ্রেণির দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য বন্ধ হতো।
গত ২৮ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির দেওয়া ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের নিয়মিত আলোচনায় আমি কাপাসিয়ার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নমূলক উদাহরণযোগ্য কিছু কার্যক্রমের কথা তুলে ধরি। সেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যবীমা চালু করার বিষয়টি উল্লেখ করেছিলাম। আগামীতে সারাদেশে স্বাস্থ্যবীমা চালু করা হলে সাধারণ মানুষ অনেকটা স্বস্তি পাবে। আরও একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই, সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিকিৎসার জন্য দরিদ্র বেশ কিছু মানুষকে এককালীন ভালো অনুদান দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে এই অনুদানে সমাজসেবার সঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে যুক্ত করলে সরকার যে এত বড় অনুদান দিচ্ছে, তা মানুষ জানতে এবং বুঝতে পারত। প্রাপ্যতার দিক দিয়ে সঠিক মানুষটি নির্বাচন করা সহজ হতো।
বর্তমানে পুরো বিশ্ব এবং আমরা সম্পূর্ণ অজানা-অচেনা এক সময় অতিক্রম করছি। এতদিন আমরা ইতিহাসে গল্প পড়েছি ভয়াবহ মহামারি, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কথা। এখন তা নিরেট বাস্তবতা। কোনো দেশেরই প্রস্তুতির সুযোগ ছিল না। দীর্ঘদিনের জমে থাকা ত্রুটি-বিচ্যুতি তাই আমাদের সমাজকে নাড়া দিয়েছে বেশ খানিকটা। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আগামীর সুন্দরের স্বপ্ন দেখতে পারি। সংকটের সময়কে সুসময়ের পরিকল্পনায় কাজে লাগাতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনগণের জন্য গভীর ভালোবাসায় সিক্ত একটি মন আছে। তার সুদৃঢ় নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় স্বপ্নের স্বাস্থ্য সেবা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে, এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস।