ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কবি জসীম উদ্দীন হলের মাঠে গাঁজা গাছ পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ রোববার ঢাবি শিক্ষার্থীদের একটি ফেসবুক গ্রুপে ওই গাছ নিয়ে পোস্ট করেন হলের এক শিক্ষার্থী। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গাছটি জসীম উদ্দীন হল মাঠের উত্তর-পূর্ব কোণে ছিল বলে একাধিক শিক্ষার্থী নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগ আছে, রাতে জসীম উদ্দীন হল মাঠের উত্তর-পূর্ব কোণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বহিরাগতরা নিয়মিত গাঁজা সেবন করতেন। ধারণা করা হচ্ছে, গাঁজা সেবনের পরে বীজ যেখানে সেখানে ফেলায় এ গাছটির জন্ম হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ঢাবি শিক্ষার্থী জুনায়েদ সাদ্দাম বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজনে আজ ক্যাম্পাসে এসেছিলাম। ভাবলাম হলের দিক থেকে একটু ঘুরে আসি। জসীম উদ্দীন হলের মাঠে দাঁড়িয়ে হঠাৎ চোখ একটি গাছের দিকে আটকে গেল। এরপর দেখি এক বিশাল গঞ্জিকা বৃক্ষ! বিষয়টি আমি পাশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত গার্ডকে জানিয়েছি এবং প্রক্টর স্যারকেও জানানোর জন্য ফোন করেছিলাম। কিন্তু স্যার ব্যস্ত আছেন বলে জানিয়েছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কবি জসীম উদ্দীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুর রশীদ বলেন, ‘আমি খোঁজ নিয়েছিলাম। সেটি তুলে ফেলা হয়েছে।’
তিনি দাবি করেন, গাছটি জসীম উদ্দীন হলের সীমানায় পড়ে না।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘আমি জানি না। তবে তা যদি সত্যি হয়, তাহলে সেটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেখছে এবং আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।'
অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিংকে নিয়ম-নীতির মধ্যে আনা জরুরি : তথ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ফেসবুক-ইউটিউবসহ অনলাইনের ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে নিয়ম-নীতির মধ্যে আনা জরুরি। কারণ ওটিটি প্ল্যাটফর্মের আনসেন্সরড নানা কনটেন্ট বিতর্ক তৈরি করছে।
রোবাবার (৫ জুলাই) সচিবালয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইন স্ট্রিমিংপ্ল্যাটফর্মগুলোকে নিয়ম-নীতির মধ্যে আনা সংক্রান্ত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবে রূপায়িত হওয়ার পাশাপাশি আমরা দেখেছি আমাদের দেশে এমনকি সারা পৃথিবীতে অনলাইনে কিছু বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। এগুলো নিয়ে এখন আইনগতভাবে একইসঙ্গে নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে আমাদের পড়তে হচ্ছে।আগে যে বিষয়গুলো সঙ্গে আমরা সম্পৃক্ত ছিলাম না, যেই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতাম না, সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় আমরা যেটি দেখতে পাচ্ছি সেটি হচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বর্তমান যুগের একটি বাস্তবতা, এই প্লাটফর্ম ব্যবহার করে সেখানে বিনোদন থেকে শুরু করে নানা কিছু স্ট্রিমিং হচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখতে পেয়েছি এই নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকার সঠিকভাবে ট্যাক্স পাচ্ছে না। এটি একটা ক্রমবর্ধমান ক্ষেত্র, এখানে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হচ্ছে। ওটিটি প্লাটফর্মে ২ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু সরকার সেখান থেকে কোন ট্যাক্স পাচ্ছে না।
ওটিটি প্ল্যাটফর্মের অপব্যবহার হচ্ছে উল্লেখ করে ডা. হাছান মাহমুদ বলেন, ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের নানা কনটেন্ট নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এগুলো আনসেন্সরডভাবে সেখানে যাচ্ছে। অনেক কনটেন্টই আমাদের সমাজ-ব্যস্তবতার পরিপন্থি।
মন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা একটি সমন্বিত সভা করে এগুলোকে একটি নিয়ম নীতির মধ্যে আনার লক্ষ্যে আজকে আমরা এই সভাটি আহ্বান করেছি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্যান্য গুলো ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা কোম্পানি যারা সার্ভিস প্রোভাইডার তাদের কাছে চলে যাচ্ছে। নেটফ্লিক্সের কাছে যাচ্ছে, ইউটিউবের কাছে যাচ্ছে এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলে যাচ্ছে। অথচ সেখান থেকে যেভাবে ট্যাক্স পাওয়ার কথা আমরা সেভাবে পাচ্ছি না।
ভারতে ফেসবুক কোম্পানি হিসেবে রেজিস্টার্ড হয়েছে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, যদিও বাংলাদেশে এখনো হয়নি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ক্রমাগত প্রচেষ্টার প্রেক্ষিতে তারা এখানে একটি এখানে অফিস খোলা ও এজেন্ট নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কিন্তু তারা এখনও কোম্পানি করেনি।
তিনি বলেন, এ সমস্ত বিষয়গুলোকে একটি নিয়ম নীতির মধ্যে আনা প্রয়োজন। এটি এমন একটি মাধ্যম যে মাধ্যমকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রত্যেকটি মানুষের কাছে চলে যাচ্ছে। মানুষ এই মাধ্যমটি এখন বেশি ব্যবহার করছে। এই মাধ্যমটি ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজ বিনির্মাণের যেমন সুযোগ আছে, সমাজকে অস্থিতিশীল করারও সুযোগ আছে।
অনলাইনের নীতিমালা নিয়ে ওই সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান যুক্ত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব নূর-উর-রহমান, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক, বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
পাঁচ মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানে সচিব পদে রদবদল হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় রোববার রাতে (৫ জুলাই) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামালকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়েছে। কিছুদিন আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে এ মন্ত্রণালয়ের সচিবের পদ শূন্য হয়।
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সপ্তম ব্যাচের কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে বাণিজ্যে স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৬ সালে ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। ১৯৮৮ সালে সহকারী সচিব হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন তিনি। ২০০০ সালে নেদারল্যান্ডস থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
মোস্তফা কামাল ঢাকার ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ থেকে এনডিসি কোর্স সম্পন্ন করেন। এছাড়া ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস’ থেকে জাতীয় নিরাপত্তা ও উন্নয়ন কৌশল বিষয়েও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুন্সী শাহাবুদ্দীন আহমেদকে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান (সচিব মর্যাদা), মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খানকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান (সচিব) তপন কান্তি ঘোষকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারন ইউনিটের মহাপরিচালক এম বদরুল আরেফীনকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে পদায়ন করা হয়েছে।
আলাদা আদেশে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেনকে জ্যেষ্ঠ সচিব করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ আবদুল লতিফ এ প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন।
গত ২৬ জুন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থী মজনু অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ক্ষনিকা ছাত্রাবাস ছেড়ে দিতে চাইলে একই বিভাগের শিক্ষক ও মেস মালিক ড.সাইফুল ইসলাম মেসে থাকা কেয়ারটেকারকে তালা লাগাতে নির্দেশ দেন এবং ভাড়া পরিশোধ না করা পর্যন্ত মজনুকে রুমে প্রবেশের নিষেধ করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানায় শিক্ষার্থী মজনু মিয়া। অভিযোগের প্রেক্ষিতে আজ রবিবার( ৫ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিন(৩) সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে যারা আগামী ৭ দিনের ভেতর তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হস্তান্তর করবে।
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন- করোনার এই পরিস্থিতে শিক্ষার্থী মজনু যে অভিযোগটি করেছে সেটি ঘটে থাকলে তা অমানবিক। অন্যদিকে শিক্ষক ড.সাইফুল ইসলাম এক বিবৃতির মাধ্যমে ঘটনাটি মিথ্যাচার বলেও অভিযোগ তুলেছেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্র পরামর্শক ও উপদেষ্টা ড. শেখ সুজন আলীকে আহ্বায়ক, প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধানকে সদস্য-সচিব ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সহঃ প্রক্টর শাহজাদা আহসান হাবীবকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। যারা আগামী ৭দিনের ভিতর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন। প্রতিবেদন দেখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. শেখ সুজন আলী বলেন- আমরা দ্রুতই তদন্ত করবো এবং তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করবো। আমরা প্রকৃত ঘটনাটি তুলে ধরতে পারবো বলে আশা রাখি।
কপোত নবী,চাঁপাইনবাবগঞ্জঃ
যে ফুল কয়েক বছরে একবার ফোটে, সেই ফুল নিয়ে সবার কৌতূহল থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তেমনই একটি ফুল ”নাইট কুইন”। মিষ্টি মনোহরিণী সুবাস, দুধসাদা রং, স্নিগ্ধ ও পবিত্র পাপড়ি আর সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে এই ফুল পরিচিত।
রাতের আঁধারে নিজের সৌন্দর্য মেলে ধরে সকাল হওয়ার আগেই ঝরে পড়ে নাইট কুইন। তাই এই একটি ফুলের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয় ফুল প্রেমীদের। আমাদের দেশে দুর্লভ প্রজাতির ফুল হিসেবেই গণ্য করা হয় নাইট কুইনকে।
এ বিষয়ে রেজা টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজা জানান, ‘নাইট কুইন খুবই দুষ্প্রাপ্য ফুল। বিভিন্ন ফুলের গাছ আমাদের বাড়িতে আছে। গত বছর আমার টবে ৪ টি নাইট কুইন ফুল ফুটেছিলো। এবারো ফুটেছে।
তিনি আরো জানান, সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে গাছটি লাগিয়েছিলাম। ফুলের সৌন্দর্য আমাকে খুব আকৃষ্ট করে। আমাদের সকলের উচিত গাছ লাগিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা।’ পরিবারের সবাই এটি পছন্দ করেন।
রকি খান নামে এক ব্যবসায়ী জানান, শখ করেই নাইট কুইন ফুল গাছ সংগ্রহ করেছিলাম। রোববার দিবাগত রাতে সে নাইট কুইন ফুল ফোটে। খুব ভাল লাগছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বেশ কিছু বাড়িতে টবে নাইট কুইন ফুল গাছ লাগিয়েছেন।
নাইট কুইনের বৈজ্ঞানিক নাম পেনিওসিরাস গ্রেজ্জি। বিরল ক্যাকটাস জাতীয় এ ফুলটির বৈশিষ্ট্য অন্যান্য ফুলের তুলনায় একটু আলাদা। বছরের মাত্র একদিন এবং মধ্যরাতে পূর্ণ বিকশিত হয়। আর শেষরাতেই জীবনাবসান ঘটে।
পাথরকুচির মতো পাতা থেকেই এই ফুলগাছের জন্ম হয়। আবার পাতা থেকেই প্রস্ফুটিত হয় ফুলের গুটি। ১৫ দিন পর গুটি থেকে কলি হয়। যে রাতে ফুলটি ফুটবে, সেদিন বিকেল থেকেই কলি অদ্ভুত সুন্দর রূপে সাজে। ধীরে ধীরে অন্ধকার যখন চারিদিকে ঘিরে ধরে, ঠিক তখন নিজের সৌন্দর্যে স্বমহিমায় প্রকাশিত হয় ফুলটি। এর সুবাসে তীব্রতা না থাকলেও অদ্ভুত মিষ্টি মাদকতা আছে, যা পুষ্পপ্রেমীদের সবসময়ই টানে।
Post Written by : Rubel Islam
Original Post URL : https://ift.tt/2VP6t4w
Post Come trough : Nachole News | নাচোল নিউজ
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়াধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশনায় ও পরিচালক (প্রশাসন) এর তত্ত্বাবধানে প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মোঃ মাসুম আরেফিন, বিকাশ চন্দ্র দাস ও সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার মণ্ডল কর্তৃক ঢাকা মহানগরীর
মগবাজার, রামপুরা বাজার, মালিবাগ বাজার,খিলগাঁও বাজার,মধুবাগ বাজার, শাহজাহানপুর বাজারে তদারকি করা হয়। তদারকিকালে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, অধিকমূল্যে পণ্য ও ঔষধ বিক্রয়, নকল স্যানিটাইজার বিক্রিসহ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন বিরোধী বিভিন্ন অপরাধে ৫টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪,০০০ টাকা জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট পাইকারি ব্যবসায়ীদের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন মেনে ব্যবসা পরিচালনার জন্য মাইকিং করে সচেতন করা হয়।
মাননীয় বানিজ্য মন্ত্রী জনাব টিপু মুনশি এমপি বাজার তদারকির বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করেন এবং বাণিজ্য সচিব মহোদয়ের নেতৃত্বে গঠিত বাজার মনিটরিং সংক্রান্ত টাস্কফোর্স নিয়মিত তদারকি কার্যক্রমে নির্দেশনা প্রদান করেন।
এ প্রসঙ্গে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) বাবলু কুমার সাহা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্যাশ মেমো সংরক্ষণ করতে, পণ্যের মূল্য তালিকা দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করতে এবং নকল ও ভেজাল স্যানিটাইজার পণ্য বিক্রয় হতে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান।
এছাড়াও জনস্বার্থে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঢাকাসহ সারাদেশে নিয়মিত ও বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে এবং এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে মর্মে জানান তিনি।
Post Written by : Rubel Islam
Original Post URL : https://ift.tt/2ZzzsdO
Post Come trough : Nachole News | নাচোল নিউজ
মুক্তিযুদ্ধের সাব সেক্টর কমাণ্ডার মেজর (অব) শওকত আলী (৬৮) বীর প্রতীক মারা গেছেন। শনিবার (৪ জুলাই) চট্টগ্রাম সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
শওকত আলীর ছেলে মো. ইমরান মোরশেদ আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বিকাল পাঁচটা ৫৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবা মারা গেছেন। তিনি হার্ট, লিভার ও কিডনি রোগে ভুগছিলেন। গত ১০ দিন ধরে সিএমএইচে ভর্তি ছিলেন।
রোববার (৫ জুলাই) দুপুরে বন্দর নগরীর গরিব উল্লাহ শাহ মাজারে জানাজা শেষে সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে বলে জানান মো. ইমরান মোরশেদ আলী।
নগরীর নাসিরাবাদ এলাকায় মেজর (অব) শওকত আলীর পরিবার বসবাস করে। তার পৈত্রিক নিবাস নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলার কট্টেশ্বর গ্রামে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শওকত আলী চট্টগ্রামে অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ১৯৭১ এর এপ্রিলে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন।
ফেনী নদীর নিকটবর্তী এলাকায় অপারেশনের সময় পাকিস্তানী সেনাদের শেল এসে পরে তার সামনে। একটি স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয় তার ডান পায়ের গোড়ালির নিচে। পরে গৌহাটি বেইজ হাসপাতালে অপারেশন করে তা বের করে আনা হয়।
এরপর ১৯৭১ সালের মে মাসে রিক্রুট হন সেনাবাহিনীতে। তারপর সাড়ে চার মাস ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেন। ১২ অক্টোবর সেকেন্ড ল্যাফটেনেন্ট হিসেবে যোগ দেন ১ নম্বর সেক্টরে। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর রফিকুল ইসলাম। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি যুদ্ধ এবং হেঁয়াকো-নাজিরহাট এলাকায় একাধিক লড়াইয়ে অংশ নেন।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ফজলুল হক (৬৮) নামে এক মুয়াজ্জিনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (৪ জুন) দুপুরে উপজেলার কাকিনা বাজার এলাকায় অবস্থিত মসজিদ চত্তরে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে।
নিহত মুয়াজ্জিন ফজলুল উপজেলার কাকিনা বাজার এলাকার বাসিন্দা। এছাড়া তিনি প্রায় ৪০ বছর ধরে কাকিনা কেন্দ্রীয় মসজিদে মুয়াজ্জিনের দ্বায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
এ বিষয়ে কাকিনা ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল হক জানান, শনিবার দুপুরে মসজিদের আশে পাশের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন। এ সময় তিনি বিদ্যুতের তারে আটকে যান। পরে তার আত্মচিতকারে আশেপাশের লোকজন আসার আগেই তিনি ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান বলে জানান তিনি। এছাড়া তার মরদেহ উদ্ধার করে সন্ধ্যায় দাফন সম্পন্ন করা হয়।
গোপালগঞ্জে নতুন করে ৩৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। যা জেলায় এক দিনে সর্বোচ্চ। এ নিয়ে জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৭৯৯ জনে।
রোববার (৫ জুলাই) সকালে গোপালগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ১৭ জন, মুকসুদুপুর উপজেলায় আটজন, টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ছয়জন ও কোটালীপাড়া উপজেলায় তিনজন রয়েছে। আক্রান্তদের আইসোলেশন ওয়ার্ডে নেওয়া হয়েছে। তাদের পরিবারের সদস্যদের হোম কেয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, জেলা থেকে মোট ৫ হাজার ৫৮৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মোট আক্রান্তদের মধ্যে গোপালগঞ্জ সদর, টুঙ্গিপাড়া, মুকসুদপুর, কোটালীপাড়া ও কাশিয়ানী উপজেলায় মোট ১২ জন মারা গেছেন। ৪৩১ জন সুস্থ হয়েছেন। ৩৫৬ জন জেলার বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
করোনা আক্রান্ত ৭৪৩ জনের মধ্যে সদর উপজেলায় ২২৬ জন, মুকসুদপুর উপজেলায় ১৭৯ জন, কাশিয়ানী উপজেলায় ১৫১ জন, টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ১২২ জন ও কোটালীপাড়া উপজেলায় ১২১ জন রয়েছেন। এরমধ্যে ডাক্তার, নার্সসহ ৬৯ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
জাপানে কোভিড-১৯-এ মৃত্যুর সংখ্যা কেন এত কম? মৃত্যু নিয়ে এ ধরনের প্রশ্ন খারাপ শোনালেও এ নিয়ে এখন নানা তত্ত্ব আলোচনায় উঠে আসছে। কেউ বলছে এর পেছনে রয়েছে জাপানীদের মন-মানসিকতা, তাদের সংস্কৃতি, আবার কারো মত হল জাপানীদের ইমিউনিটি অসাধারণ।
কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর হার ওই অঞ্চলে জাপানেই যে সর্বনিম্ন তা কিন্তু নয়। মৃত্যুর খুবই কম হার নিয়ে ওই এলাকায় বরং গর্ব করার মত দেশগুলো হল দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, হংকং এবং ভিয়েতনাম।
কিন্তু ২০২০ এর গোড়ার দিকে, জাপানে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল দেশটিতে ওই সময়ে সার্বিকভাবে গড় মৃতের হারের চেয়ে কম। এপ্রিল মাসে সম্ভবত কোভিডের কারণে টোকিও-তে গড় মৃত্যুর হার ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় এক হাজার বেশি। তারপরেও বছরের প্রথম দিকের হিসাবের ওপর ভিত্তি করে অনুমান করা হচ্ছে, জাপানে এ বছর মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২০১৯ এর থেকে কম হবার সম্ভাবনাই বেশি।
এটা খুবই বিস্ময়কর, কারণ কোভিড-১৯এ মৃত্যুর হার বাড়ার অনেকগুলো সম্ভাবনা জাপানের ক্ষেত্রে রয়েছে। অথচ জাপান কিন্তু তার প্রতিবেশি দেশগুলোর মত সর্বশক্তি দিয়ে এই ভাইরাস মোকাবেলায় নামেনি।
ফেব্রুয়ারি মাসে উহানে করোনাভাইরাসের প্রকোপ যখন তুঙ্গে, যখন শহরটির হাসপাতাল রোগীর ভিড়ে উপচে পড়েছে, যখন চীন থেকে ভ্রমণের ব্যাপারে সারা বিশ্ব দেয়াল তুলে দিয়েছে, তখন জাপান তার সীমান্ত বন্ধ করেনি।
ভাইরাস যখন দ্রুত ছড়াচ্ছে, তখন অল্প দিনের মধ্যেই এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে কোভিডে মারা যাচ্ছে মূলত বয়স্করা, জনসমাগম থেকে এই ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি এবং আক্রান্তের কাছাকাছি বেশি সময় কাটালে আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপক আশংকা।
জাপানের ক্ষেত্রে এর সবগুলো রয়েছে অর্থাৎ মাথা পিছু বয়স্ক মানুষের সংখ্যা পৃথিবীর যে কোন দেশের চেয়ে জাপানে বেশি। জাপানের বড় বড় শহরগুলোতে জনসংখ্যা ব্যাপক- শহরগুলো মানুষের ভিড়ে ঠাসা।
টোকিওতে বাস করে তিন কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ এবং বেশিরভাগ মানুষের জন্য চলাচলের একমাত্র বাহন হল ভিড়ে ঠাসা শহরের ট্রেন পরিষেবা। জাপান এমনকী সেসময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ - 'টেস্ট, টেস্ট, টেস্ট' উপেক্ষা করেছে। এমনকী এখনও জাপানে পরীক্ষা করা হয়েছে মাত্র ৩ লাখ ৪৮ হাজার মানুষকে- যা জাপানের জনসংখ্যার ০.২৭%।
ইউরোপের দেশগুলোতে যে মাত্রায় লকডাউন দেয়া হয়েছে, জাপানে সেভাবে কোন লকডাউন হয়নি।শুধু এপ্রিলের গোড়ায় জাপানের সরকার একবার জরুরি অবস্থা জারি করেছিল। ঘরের ভেতর থাকার জন্য কোন বাধ্যতামূলক নির্দেশ জারি হয়নি । শুধু অনুরোধ জানানো হয়েছিল এবং সেটা ছিল মানুষের স্বেচ্ছানির্ভর। জরুরি নয় এমন দোকানপাট ও ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছিল, কিন্তু তা না মানলে কোন আইনি ব্যবস্থা বা শাস্তির বিধান রাখা হয়নি।
তাহলে অন্যান্য অনেক দেশের মত সীমান্ত বন্ধ না করে, কঠোর লকডাউন না দিয়ে, ব্যাপক হারে পরীক্ষা না চালিয়ে আর কড়া কোয়ারেন্টিন না দিয়েও জাপান কীভাবে মৃত্যুর সংখ্যা এত কম রাখতে পারল? জাপানে প্রথম কোভিড ধরা পড়ার ৫ মাস পরেও, জাপানে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা- বিশ হাজারের নিচে, মৃতের সংখ্যা ১ হাজারের কম।
জাপানে ওই জরুরি অবস্থা তুলে নেয়া হয়েছে এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা দ্রুত ফিরে এসেছে। জাপানে বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের ওপর চালানো টেস্টিং এবং টোকিওতে সরকার এ পর্যন্ত যেসব মানুষকে অপরিকল্পিতভাবে পরীক্ষা করেছে, সেসব পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে খুব কম সংখ্যক মানুষের মধ্যে এই জীবাণু রয়েছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনেজা আবে গত মাসের শেষের দিকে যখন জরুরি অবস্থা তুলে নেবার কথা ঘোষণা করেন তখন তিনি বেশ গর্বের সঙ্গে এটাকে জাপান মডেল হিসাবে উল্লেখ করেন এবং বলেন অন্য দেশের জাপান থেকে শেখা উচিত।
জাপানের উপ প্রধানমন্ত্রী তারো আসোর কথা যদি আপনি বিশ্বাস করতে চান তাহলে তার মত হল এটা জাপানীদের আদর্শ আচরণের কারণে। তিনি বলেন, জাপানের সাফল্যের কারণ নিয়ে অন্য দেশের নেতারা তাকে প্রশ্ন করেছিলেন। তার উত্তরকে অনেকেই অবশ্য কিছুটা তির্যক মনে করেন- 'আমি তাদের বলেছিলাম: আপনার এবং আমার দেশের মানুষের আচরণের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তারা শুনে চুপ করে গিয়েছিলেন।'
আসো যে শব্দটা ব্যবহার করেছিলেন সেটা হল মিন্ডো -তিনি বলেছিলেন তফাৎটা মিন্ডোতে। মিন্ডোর আক্ষরিক অর্থ মানুষের মান যদিও অনেকে বলছেন তিনি সংস্কৃতিগত মানের কথা বলেছেন।
ঐতিহাসিকভাবে জাপানীরা মনে করে জাতি হিসাবে তারা উঁচুতে এবং সাংস্কৃতিক আভিজাত্যের বিষয়টাও তাদের মজ্জাগত। তবে তার এই মন্তব্যের জন্য আসো সমালোচিত হয়েছেন।
তবে তার মন্তব্যের বিষয়টি বাদ দিলেও জাপানের বহু মানুষ এবং অনেক বিজ্ঞানীও মনে করেন জাপানের ক্ষেত্রে একটা কিছু আছে যা আলাদা। একটা কিছু যা কোভিড-১৯ থেকে জাপানের মানুষকে রক্ষা করেছে।
টোকিও ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক তাতসুহিকো কোদামা জাপানের রোগীদের ওপর এই ভাইরাসের প্রভাব নিয়ে কাজ করেছেন। তার ধারণা জাপানে হয়ত আগে কোভিড হয়েছে। কোভিড-১৯ নয়, তবে একইধরনের জীবাণুর অতীত সংক্রমণ জাপানের মানুষকে ঐতিহাসিক ইমিউনিটি দিয়েছে।
তার ব্যাখ্যা এরকম: মানুষের শরীরে যখন কোন ভাইরাস ঢোকে তখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং তখন শরীর অ্যান্টিবডি তৈরি করে এবং ওই অ্যান্টিবডি ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। অ্যান্টিবডি হয় দুই ধরনের - আইজিএম এবং আইজিজি। আক্রমণকারী ভাইরাস নতুন না পুরনো তার ওপর নির্ভর করে কোনধরনের অ্যান্টিবডি সেক্ষেত্রে কাজ করবে।
তিনি বলছেন, 'কোন ভাইরাস যদি প্রথমবার আক্রমণ করে তখন প্রথমে সক্রিয় হয়ে ওঠে আইজিএম অ্যান্টিবডি, পরবর্তীতে সক্রিয় হয় আইজিজি। আর কেউ যদি এমন ভাইরাসের শিকার হয়, যে ভাইরাস শরীরে আগেও আক্রমণ করেছিল, তখন সেক্ষেত্রে ইমিউন ব্যবস্থা পরিচিত ভাইরাসের মোকাবেলায় দ্রুত সক্রিয় হয়ে আইজিজি অ্যান্টিবডি ব্যবহার করে।'
অধ্যাপক তাতসুহিকো কোদামা বলছেন, 'পরীক্ষার ফলাফল দেখে আমরা খুবই অবাক হয়েছি যে সব রোগীর ক্ষেত্রে প্রথমেই দ্রুত সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে আইজিজি অ্যান্টিবডি, এরপর আইজিএম অ্যান্টিবডিও সক্রিয় হয়েছে কিন্তু সেটা পাওয়া গেছে খুবই সামান্য পরিমাণে। এর মানে হল আগে একইধরনের ভাইরাস এদের সবার শরীরে ঢুকেছিল।'
তিনি আরও মনে করছেন ওই এলাকায় যেহেতু আগে সার্স-এর সংক্রমণ হয়েছিল তাই শুধু জাপানেই নয় চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় মৃত্যুর হার অপেক্ষাকৃত কম দেখা গেছে। সূত্র: বিবিসি
বিশ্বব্যাপী চলছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। এ ভাইরাসটির তাণ্ডবে অসহায় হয়ে পড়েছে গোটা বিশ্ব। প্রতি মুহূর্তে বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী করোনা শনাক্ত মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ১৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে করোনা নিয়ে আপডেট দেয়া ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ড ও মিটার।
রোববার (৫ জুলাই) সকাল আটটা পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৭৭০ জনে। আর মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৩৯১ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ৬৪ লাখ ৩৯ হাজার ১১৬ জন।
এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮৮ হাজার ৬১৬ জন। মারা গেছেন ৪২৫৮ জন। আর একই সময়ে সুস্থ হয়েছেন এক লাখ ৪১ হাজারের বেশি মানুষ।
চীনের উহানে করোনা সংক্রমণ সৃষ্টি হলেও এখন অদৃশ্য এই ভাইরাসটির বেশি প্রকোপ আমেরিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায়। ইউরোপের কিছু দেশেও ফের ভাইরাসটির সংক্রমণ বেড়েছে। নতুন করে আক্রান্তের রেকর্ড হয়েছে চীন-জাপানেও। ফলে দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করেছে, অনেকে দেশে করোনার সংক্রমণের মাত্রা মারাত্মক ঊর্ধ্বমুখী। তাই করোনা প্রতিরোধের পদক্ষেপ দ্বিগুণ করতে হবে।
করোনা নিয়ে আপডেট দেয়া ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের দেওয়া তথ্যমতে, রোববার সকাল পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৬ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৮৮ হাজারের বেশি মানুষ।
এছাড়া বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৩৯১ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৪২৫৮ জন। করোনা থেকে মোট সুস্থ হয়েছেন ৬৪ লাখ ৩৯ হাজার ১১৬ জন। যার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন এক লাখ ৪১ হাজার ২০৫ জন।
করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে প্রথম অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২৯ লাখ ৩৫ হাজার ৭৭০ জন। যুক্তরাষ্ট্রে করোনার আঘাতে মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩১৮ জনের। করোনায় মোট মৃতের দিক থেকেও প্রথমে রয়েছে দেশটি। দেশটিতে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১২ লাখ ৬০ হাজার ৪০৫ জন।
করোনায় আক্রান্তের থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্রাজিল। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ ৭৮ হাজার ৩৭৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ৬৪ হাজার ৩৬৫ জনের। আর এ পর্যন্ত ব্রাজিলে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৯ লাখ ৭৮ হাজার ৬১৫ জন।
করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। রাশিয়ায় মোট ৬ লাখ ৭৪ হাজার ৫১৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ১০ হাজার ২৭ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৮৭৯ জন।
লকডাউন শিথিলের পর থেকে চতুর্থ অবস্থানে থাকা ভারতে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে হু হু করে। ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৯০৪ জন আর করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৯ হাজার ২৭৯ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৪ লাখ ৯ হাজার ৬২ জন।
সংক্রমণ বাড়ছে বাংলাদেশেও। ১৮ নম্বর অবস্থানে থাকা বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৫৯ হাজার ৬৭৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৯৯৭ জনের। আর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭০ হাজার ৭২১ জন।
করোনা পরিস্থিতিতে ভাইরাসটি প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে দ্বিগুণ পদক্ষেপ নিতে সব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক টেডরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস। বিশেষ করে দুই আমেরিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে সতর্ক করেছেন তিনি।
চীনের উহান থেকে শুরু হয়ে বিশ্বব্যাপী মহামারি রূপ ধারণ করা করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে ডেকে আনতে পারে মৃত্যু।
করোনাভাইরাসের কারণে মানুষজন ব্যাংকে সঞ্চয় করা কমিয়ে দিয়েছেন। বেশিরভাগ মানুষ নগদ অর্থ হাতে রাখতে শুরু করেছেন। চলতি বছরের এপ্রিল শেষে ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে মানুষের হাতে নগদ অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে বড় অংকের আমানত কমেছে ব্যাংক খাতে। এপ্রিল শেষে দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। জানুয়ারি শেষেও আমানতের পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা। অথচ প্রতি মাসে দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের গড় প্রবৃদ্ধি হয় ১০ শতাংশ হারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে এপ্রিল শেষে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে মানে জনগণের হাতে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৭৭ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। আগের বছরের (২০১৯) একই সময়ে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা বা ২৩ শতাংশের বেশি।
হিসাব বলছে, সরকারের সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগের পরিমাণ কমেছে ৭৫ শতাংশের মতো। সুদের হার বেশি হওয়ার কারণে ব্যক্তিগত বিনিয়োগের বড় আস্থার নাম সঞ্চয়পত্র। পরিবার, পেনশনারসহ দশটিরও বেশি স্কিমে আমানত রাখা যায় সঞ্চয়পত্রে। হিসাব বলছে, চলতি বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ হয়েছে ২ হাজার ২শ’ ৪০ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৯শ’ ৯২ কোটি টাকা, মার্চে ১ হাজার ৫শ’ ৩৬ কোটি টাকা, এপ্রিলে ৬২১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে বিক্রি হয়েছে ১০ হাজার ৫৮০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। আগের বছরের (২০১৮-১৯) একই সময়ে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৩ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমেছে ৭৫ শতাংশের মতো।
এ বিষয়ে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সামছুন্নাহার বেগম বলেন, সঞ্চয়পত্রের সব ধরনের স্কিম মিলে এখন একটি সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কেউ চাইলেও ৫০ লাখ টাকার বেশি কিনতে পারবেন না। টিআইএন সার্টিফিকেট ও জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এসব কারণে বিক্রি কমেছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, সার্বিকভাবে সঞ্চয় কমে গেছে। আয় কমা এবং বেকারত্ব বাড়ার ফলে ব্যক্তিগত সঞ্চয় কমেছে। অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো না চলায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও সঞ্চয় কমেছে।
সঞ্চয় কমার আরও একটি কারণ হলো নগদ টাকার চাহিদা বেড়েছে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ অনিয়শ্চতা। চলমান করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে শুধু সরকারের সঞ্চয়পত্রে নয়, এই সময় ব্যাংকে টান পড়েছে আমানতেরও। এপ্রিল শেষে দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। জানুয়ারি শেষেও আমানতের পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা। অথচ প্রতিমাসে দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতের গড় প্রবৃদ্ধি হয় ১০ শতাংশ হারে।
বেসরকারি ব্যাংক এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, অনেক মানুষের চাকরি চলে গেছে অথবা বেতন কমে গেছে। আর তা না হলে বেতন পেতে একটু দেরি হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে মানুষের সঞ্চয়ের ওপরেই চাপটা পড়েছে। আমরা ডিপোজিট কমে যাওয়ার আভাস পাচ্ছি।
প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাহেল আহমেদ বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক আমানতের মধ্যে সরকারি আমানত আগের চেয়ে কিছুটা কমে গেছে। সার্বিকভাবে আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ব্যক্তি আমানতকারীরা ব্যাংকের ঝুঁকি বিবেচনায় রেখেই টাকা জমা রাখছেন।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, তিনমাসে ৬৫ হাজার কোটি টাকার আমানতের পতন আমরা দেখতে পাচ্ছি, এটা কিন্তু শুভ লক্ষণ নয়। এটা সবাইকে চিন্তা করতে হবে ব্যাংকিং খাতের আমানত কমে গেলে অর্থনীতি ভালো থাকতে পারে না। ব্যাংকিং খাতের সামর্থ্য কমে যাচ্ছে ও ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। সামগ্রিকভাবে এটা অর্থনীতির জন্য দুঃসংবাদ।
গলায় ফাঁস ও বিষাক্তদ্রব্য সেবনে বরিশালে তিনজনের মৃত্যু
বরিশাল প্রতিনিধি
বরিশালে গলায় ফাঁস ও বিষাক্তদ্রব্য সেবন করে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে শুক্রবার (৩ জুলাই) পলাশ হাজরা (৪০) ও মহিমা আক্তার (১৭) এবং শনিবার (৪ জুলাই) মো. রাব্বি (১৭) বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।
হাসপাতাল ও কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মৃত তিনজনের মধ্যে বরিশাল নগরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের খালেদাবাদ কলোনী এলাকার পলাশ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
অপরদিকে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বারপাইকা গ্রামের জহিরের মেয়ে মহিমা ও বরিশাল সদরের নবগ্রাম রোড সরদারপাড়ার দুলাল হাওলাদারের ছেলে রাব্বির বিষাক্তদ্রব্য সেবনে মৃত্যু হয়েছে।
কোতোয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বশির আহম্মেদ জানান, এ ঘটনায় তিনটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।
করোনায় থমকে গেছে টিকা কার্যক্রম, ঝুঁকিতে আড়াই লাখ মা ও শিশু
নিজস্ব প্রতিবেদক
বৈশ্বিক করোনায় তৈরি হওয় অচলাবস্থায় টিকা কার্যক্রম থমকে গেছে। এপ্রিল থেকে জুন, টানা তিন মাস দেশের প্রায় আড়াই লাখ মা ও শিশু ১০ ধরনের টিকা নেয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এতে বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখোমুখি তারা।
নিয়মিত টিকা না নেওয়ায় বেড়ে যাতে পারে ১০টি রোগের প্রকোপ। এগুলো হচ্ছে- যক্ষ্মা, ডিফথেরিয়া, হুপিং কাশি, মা ও নবজাতকের ধনুষ্টংকার, হেপাটাইটিস-বি, হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি, নিউমোনিয়া, পোলিও মাইলাইটিস, হাম ও রুবেলা। যদিও স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, ঝরে পড়া মা-শিশুর টিকা পর্যায়ক্রমে পরে দিলেও অসুবিধা হবে না। ইতোমধ্যে সে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
শূন্য থেকে ১৮ মাস বয়সী সব শিশু এবং ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী সন্তান ধারণক্ষম সব নারীকে প্রয়োজনীয় টিকা নেয়ার গুরুত্বের কথা বলে আসছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।সম্পূর্ণ টিকার ডোজ নেয়ার পর মা-শিশু নিরাপদ থাকে। যদি তিনটি ডোজের দুটি সম্পন্ন হওয়ার পর একটা বাদ পড়ে খুব বড় সমস্যা হবে না। তবে দ্রুত সেই টিকা গ্রহণ করাটা ভালো। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, টিকা না দেয়ার সময়টা দীর্ঘ হলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ত। ইতোমধ্যে আমরা প্রত্যেকটা টিকাদান কেন্দ্র চালু করেছি। ভয় পাওয়ার কিছু নেই, যারা গত তিন মাসে শিশুদের টিকা দেননি তারা পরেও দিতে পারবেন। বাদ পড়াদের সংখ্যাটি মোট মা ও শিশুর ১৫-২০ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, এপ্রিল থেকে জুন মাসে টিকাদান প্রক্রিয়া থেকে ঝরে পড়েছে প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ মা এবং শিশু। অর্থাৎ স্বাভাবিক সময় ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ মা-শিশুকে টিকা দেয়া সম্ভব হতো। করোনার কারণে গত ২ মাসে তা ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মা, শিশু ও কৈশোর স্বাস্থ্য কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর মো. শামসুল হক বলেন, টিকাদান কর্মসূচির কিছুটা ছন্দপতন ঘটেছে। সেটার বাস্তব কারণও আছে। তা হল করোনাভাইরাস। সে কারণে টিকাদান টার্গেটের ১০ শতাংশ কমেছে। যদি টিকা কর্মসূচি ভেঙে পড়ে তাহলে নিউমোনিয়া হামের মতো রোগগুলোর কারণে শিশুমৃত্যু বাড়বে। কিন্তু সেটা তখনই ভয়ের হতো যখন বছরের পর বছর টিকা দেয়া সম্ভব না হতো। আমাদের ক্ষেত্রে তা হয়নি। এপ্রিল থেকে জুন তিন মাসে প্রায় আড়াই লাখ শিশু নিয়মিত টিকা পায়নি কিন্তু চলতি মাসে তা আবারও চালু করা গেছে।
তিনি আরও বলেন, তিনি মাসে যেসব শিশু বাদ পড়েছে তাদের তালিকা আছে। মাকে সচেতন হতে হবে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এ পরিচালক বলেন, অনেকে ঢাকা শহর ছেড়ে চলে গেছেন। তারা চলে যাওয়ার সময় টিকার কাগজটিও হয়তো নিয়ে যাননি। ফলে তারা ফিরে এলেই আবারও তাদের নিয়মিত করে নেয়া যাবে। কেন্দ্রের পরামর্শকদের কাছে গেলেই সেটি সম্ভব হবে। তিনি বলেন, আমাদের ভ্যাকসিনের কমতি নেই। আগামীতিন মাসের স্টক আছে।
জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) বলছে, শুধু এপ্রিলে নিয়মিত টিকাদান থেকে প্রায় অর্ধেক শিশু বাদ পড়ে। করোনা প্রতিরোধে দেয়া সাধারণ ছুটির সময় বাসায় অবরুদ্ধ থাকার কারণে শিশুরা টিকা পায়নি। ইউনিসেফের হিসেবে এপ্রিলে প্রায় ১ লাখ ৪১ হাজার মা-শিশু টিকা পায়নি। মে মাসেও টিকা বঞ্চিতের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। সরকারি হিসাবের চেয়ে ইউনিসেফের হিসাবের পার্থক্য আছে।
এই করোনাকালে কোনো ভালো খবর পাই না। দিনটা শুরু হয় মৃত্যুর খবর দিয়ে। আবার ঘুমাতে যাই কারও চলে যাওয়ার খবর শুনে। ব্যবসায়ী আজমত মইনের কথা বলি। দারুণ মানুষ ছিলেন। কখনো কোনো অনুষ্ঠানে দেখা হলে নিজেই এগিয়ে এসে কথা বলতেন। ভীষণ বিনয়ী। তার মৌলভীবাজারের চা-বাগানেও গিয়েছিলাম। করোনাকালে প্রথমে মারা গেলেন আজমত মইনের বাবা গোলাম মইন। এরপর আক্রান্ত হলেন তিনি। অবস্থার অবনতি হলো হুট করে। আজমত মইন চলে গেলেন। বাবা আর বড় সন্তানে থেমে থাকল না এই পরিবারের ওপর আঘাত। এরপর ছোট ভাইটিও মারা যান। এক পরিবার থেকেই চলে গেলেন তিনজন। এভাবে অনেক পরিবার তাদের প্রিয়জনকে হারাচ্ছেন এখন। স্বামী-স্ত্রী দুজনই চলে গেছেন অনেক পরিবারে। আবার কেউ হারাচ্ছেন সন্তান। হায়! মানুষের মৃত্যু কত সহজ হয়ে গেছে। বেঁচে আছি এর চেয়ে বড় খবর যেন আর কিছু না।
বড় অদ্ভুত সময় পার করছে সবাই। শুধু করোনায় নয়, এমনিতেও অনেকে মারা যাচ্ছেন। ব্যবসায়ী লতিফুর রহমান গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন। ফিরে আসার কথা ছিল ঢাকায়। কিন্তু এলেন না। চলে গেলেন ঘুমের মাঝে। সাংবাদিক ফারুক কাজীও গেলেন একইভাবে। সহকর্মী মাশুক চৌধুরীর বিষয়টি ছিল আলাদা। করোনাকালের শুরুতে গত মার্চে তাকে বললাম, আপনার শরীরটা ভালো নেই। অনেক অসুখ-বিসুখে ভুগছেন। অফিসে আসার দরকার নেই। বাসায় ছিলেন তিনি। মাঝে খবর দিলেন বাসায় মন টেকে না। অফিসে আসতে চান। সম্মতি দিলাম না। রোজার ঈদের আগে আমি আক্রান্ত হলাম করোনায়। অফিসে যাওয়া বন্ধ হলো। ঈদের ছুটি শেষে মাশুক ভাই অফিসে এলেন। আইসোলেশন থেকে খবর পেলাম তার অফিসে আসার। খবর পাঠালাম আসার দরকার নেই। অফিসে আসা বন্ধ করলেন। কিছুদিন পর অসুস্থ হলেন। হাসপাতালে গেলেন। করোনা টেস্ট নেগেটিভ। কিন্তু নিউমোনিয়া। ব্যস, খুব দ্রুত চলে গেলেন। এই মানুষটির সঙ্গে পরিচয় ’৮৬ সাল থেকে। সাদামাটা মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিভাগে পাস করে দৈনিক গণকণ্ঠে যোগ দেন। পরে দৈনিক সংবাদ, দৈনিক দেশসহ অনেক পত্রিকায় কাজ করেছেন। আমার সঙ্গে একদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবে দেখা। জানতে চাইলাম কেমন আছেন? জবাব শুনে বুঝলাম বেশি ভালো নেই। এরপর আমার অনুরোধে বাংলাদেশ প্রতিদিনে যোগ দেন। বছর তিন আগে অফিসে কাজ করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এ্যাপোলো হসপিটালসে পাঠালাম তখনই। আশঙ্কায় ছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠলেন। অফিস করতেন। কাজ করতেন মন দিয়ে। এই করোনাকাল আর অতিক্রম করতে পারেননি কবি মাশুক চৌধুরী। চলে গেলেন চিরতরে। আর আসবেন না কোনো দিন।
নিজেও এবার কঠিন সময় পার করেছি। হয়তো আপাতত রক্ষা পেয়েছি পরম করুণাময়ের অসীম রহমত ও দয়ায়। মানুষের অনেক দোয়া ছিল। প্রার্থনা ছিল। দেশ-বিদেশ সবখানে প্রিয়জনদের উৎকণ্ঠা ছিল। আজ মনে হচ্ছে, সবার ভালোবাসা ছিল বলেই বেঁচে আছি। জীবনে অনেকবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়েছি বারবার। রক্ষা করেছেন আল্লাহ রব্বুল আলামিন। সবসময় স্বাভাবিকভাবে সবকিছু মোকাবিলা করেছি। কোনো দিন ভীত হইনি। জীবন-মৃত্যুর মালিক একজনই। যখন সময় হবে যেতে হবেই। মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে জেগে উঠে চিন্তা করতাম আমি কি বেঁচে আছি?
বিছানা থেকে উঠে হাঁটাহাঁটি করতাম। নানা চিন্তা ভর করত মনে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছিল মন চাঙা রাখার। একবার ভেঙে পড়লে সব শেষ হয়ে যায়। জীবন-মৃত্যুর কঠিনতম সময় পার করেছি। জানি না আগামী দিনগুলো কেমন যাবে। কীভাবে কাটবে। পৃথিবী থেকে ৫ লাখের বেশি মানুষ চলে গেছেন। আর ফিরবেন না। বাংলাদেশে শুরুতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মৃত্যুবিভীষিকায় মানুষ এখন স্বাভাবিকভাবে সবকিছু মোকাবিলার চেষ্টা করছেন। বাস্তবতা মেনে নিয়েছেন সবাই। চিন্তা করছেন আগামীর কাঠিন্য নিয়ে। জীবন ও জীবিকা নিয়ে। ছয় মাস আগেও কেউ ভাবেননি এমন হবে। সময় সবকিছু বদলে দিয়েছে। সেদিন শুনলাম একজন নারীর মৃত্যু খবর। দুই সন্তানই থাকেন আমেরিকায়। বয়স্ক মানুষটি একাকী থাকেন ঢাকার অভিজাত এলাকায়। এই করোনাকালে তিনি চলে গেলেন। দুই সন্তানের কেউই আসতে পারেননি। যোগ দিতে পারেননি মায়ের শেষ বিদায়ের অনুষ্ঠানে। মানুষ আসলেই নিঃসঙ্গ। আমাদের সব আছে। কিন্তু কিছুই নেই। চলে যাওয়ার সময় কিছুই থাকে না। দিন দিন সময় আরও বদলে যাচ্ছে। যা ভাবী না তা-ই হচ্ছে। মানুষের চিন্তাভাবনায়ও চলে এসেছে অনেক পরিবর্তন। কিন্তু সে পরিবর্তন এত বড় আকাশকে ছুঁয়ে দেখতে পারেনি। মানুষের মনের সংকীর্ণতা দূর করতে পারেনি। করোনাকালেও প্রতিহিংসার বিষ ছড়িয়ে রেখেছে চারপাশে। আপন-পর বলে এখানে কিছু নেই। স্বার্থপরতার আড়ালে সবকিছু ঢেকে গেছে। মানবতাকে করছে প্রশ্নবিদ্ধ। সম্পর্কের বন্ধনগুলোকে করছে আলগা। কেউ জানি না কোথায় ছিলাম আর কোথায় যাচ্ছি? শেষ জমানার কথা বলা আছে কোরআনে। আছে কিয়ামতের কথাও। হাশরের ময়দানে সবাই থাকবে নিজেকে নিয়ে। মুখে উচ্চারণ করবে ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি। আপনজনদের চিনবে না। প্রিয়জন বলে কিছু থাকবে না। সবাই নিজের হিসাব-নিকাশ করবে। এখন কি সেই সময় এসে গেছে? কেউ কাউকে চেনে না। হিংসা-বিদ্বেষ, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা কোনো কিছু থামেনি। নষ্টদের উল্লাসনৃত্য আরও বেড়েছে। হারিয়েছে সামান্য সৌজন্যবোধটুকুও। চিকিৎসাসেবা নিয়েও চলছে বাণিজ্য। কীসের জন্য সব করছে কেউ জানে না।
বাস্তবতা থেকেও শিক্ষা নেয় না কেউ। বোঝে না চলে গেলে কিছুই সঙ্গে যাবে না। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে গেলে কেউ পাশে থাকবে না। মৃত্যুর পর কেউ কাছে আসবে না। জানাজাও হবে না ঠিকভাবে। একটা অস্বাভাবিক সময় পার করছি আমরা। আক্রান্তের পরই শুরু হয় নিঃসঙ্গ নিষ্ঠুর জীবন। নিজের সঙ্গে নিজের একটা লড়াই। করোনা রোগীর ধারেকাছে আপনজনরা ঘেঁষে না। মৃত্যুর পর কোনোমতে দাফন হয়। কারও দাফন করে প্রশাসন বা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। পরিবারের কেউ যোগ দেন না। সবাই নিজেকে রক্ষা করতে ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি করছেন। মনে রাখুন আজ অন্য কেউ আক্রান্ত। কাল আপনি হবেন না কোনো গ্যারান্টি নেই। ক্ষমতা-অর্থবিত্ত কোনো কাজেই আসছে না। হাসপাতালে এখন কঠিন সময় পার করছেন অনেক প্রভাবশালী। অসহায়ভাবে দিন কাটছে তাদের। অনেকে ফিরে আসবেন কিনা চিকিৎসক জানেন না।
বাস্তব ভীষণ কঠিন। তার পরও চারপাশটা ভীষণ জটিল। করোনা আমাদের অনেক অনুভূতি নষ্ট করে দিচ্ছে। মানবতা হারাচ্ছে। চিন্তাশক্তি নষ্ট হচ্ছে। স্বপ্নরা শেষ হচ্ছে। কিন্তু শেষ হচ্ছে না দাম্ভিকতা আর অহংকার। মানবতা নিয়ে আলাপ করে লাভ নেই। ভাবতে পারেন একজন করোনা রোগীর হাত-পা বেঁধে রেখেছিলেন একটি বেসরকারি হাসপাতালের লোকজন। বিল দিতে না পারার কারণেই এ নিষ্ঠুরতা। কী ভয়াবহ একটা সমাজে বাস করছি। মানুষের ভালোবাসা এখন সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে সীমিত। বাস্তব এখনো কঠিন। আর কঠিন বলেই রাস্তা বা বৃদ্ধাশ্রমে বাবা-মাকে রেখে যায় সন্তান। অথচ লোক দেখানো কার্যক্রমও অনেক। কিন্তু দুনিয়া থেকে হারিয়েছে মানবিকতা। অসত্য আর অনাচার বেড়েছে সবখানে। কীভাবে সবকিছু বদলাবে, কোনো দিন আর বদলাবে কিনা জানি না। শুধু বুঝি, যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ। আর খারাপ বলেই করোনা নিয়েই ব্যবসা হচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আটক করছে প্লাজমা আর টেস্ট প্রতারকদের। বের হচ্ছে স্বাস্থ্য আর আর্থিক খাতের বিভিন্ন সিন্ডিকেট কাহিনি।
প্রত্যাশা ছিল, এই সময়ে খারাপ কিছু দেখব না। কিন্তু সবকিছু দেখতে হচ্ছে। শুনতে হচ্ছে। ভালো খবরই এখন কম পাচ্ছি। চারদিক থেকে আসছে অনাচারের কাহিনি। অন্যায়-অপকর্মই যেন স্বাভাবিকতা। হিংসা-বিদ্বেষ আর চিন্তার অমিলে সবকিছু শেষ করে দেওয়ার বড় অদ্ভুত প্রতিযোগিতা। মাঝে মাঝে আশার আলোর সন্ধান করি। অপেক্ষায় থাকি একটা ভালো খবরের। না, কোনো সুখবর আসে না। খারাপ খবরের মাঝে আমাদের বাস। আশার আলোর কোনো বাতিঘর নেই। লুটেরাদের উল্লাসনৃত্য নীরবে হজম করতে হয়। সবকিছু বড় অচেনা। চিৎকার করে বলতে মন চায়- এই অচেনা পৃথিবী হিংসুটে ঈর্ষাপরায়ণদের। আমার নয়। কোনো কিছুই বলা হয় না। প্রিয়জনরা পরামর্শ দেন কম কথা বলার। চারদিকে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলায় লিপ্তরাই ভালো আছে। তাদের আছে জাদুর কাঠি। এ কাঠি ছুঁইয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। তাই শামসুর রাহমানের মতো কাউকে অভিশাপ দিই না। প্রার্থনা করি, ভয়ঙ্কর লুটেরারা ভালো থাকুক। সুখে থাকুক। ওদের যারা দেখে রাখেন তারাও ভালো থাকুন। কবি শামসুর রাহমানের মতো কিছু বলব না। শামসুর রাহমান লিখেছিলেন- ‘আজ এখানে দাঁড়িয়ে এই রক্ত গোধূলিতে
অভিশাপ দিচ্ছি।
আমার বুকের ভেতর যারা ভয়ানক কৃষ্ণপক্ষ
দিয়েছিল সেঁটে।’
না, কোনো অভিশাপ নয় আর। ওদের নিয়ে সবাই ভালো থাকুন। কাউকে প্রশ্ন করব না বঙ্গবন্ধু কি ওদের জন্য দেশটা স্বাধীন করেছিলেন? আমার ভাই কি ওদের জন্য যুদ্ধে গিয়েছিলেন? আমাদের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধারা ঘাঁটি করেছিলেন আজকের এই চিত্রের জন্য? না, কোনো প্রশ্ন আর নয়। স্বপ্নকে জাগিয়ে নিয়ে চলতে চাই। হতাশার মাঝে আলোর রশ্মি দেখতে চাই। দিনরাত অনেক তরুণকে দেখছি করোনাকালে মানুষের জন্য কাজ করতে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সম্মুখযোদ্ধারা লড়াই করছেন। তাদের চাওয়া-পাওয়া নেই। তারা দেশকে ভালোবাসেন। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সংবাদকর্মীদের অভিবাদন। জীবনের ঝুঁকি আরও অনেক মানুষই নিচ্ছেন। রাত জেগে অনেক নারীই খাবার তৈরি করেন। দিনে অ্যাপসে অর্ডার নেন। তারপর নিজেই পৌঁছে দিচ্ছেন সে খাবার।
মানুষ লড়ছে। জীবন-জীবিকার জন্য লড়াই করা প্রতিটি মানুষকে অভিনন্দন। তারাই বাঁচিয়ে রাখবেন আগামীর বাংলাদেশ। পাশাপাশি আশার আলো তৈরি করছে আসিফ মাহমুদ, বিজন শীলদের সৃষ্টিশীলতা। জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রচ- মানসিক শক্তি দেখে মুগ্ধ হই। অনুপ্রেরণা পাই। সবাই জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো সবকিছু হজম করে জেগে উঠতে পারেন না। অনেকে নীরবে বুকভরা কষ্ট আর অভিমান নিয়েই বেঁচে থাকেন। কিন্তু সবকিছু স্বাভাবিকভাবে নিয়ে এ বয়সেও লড়তে পারেন জাফরুল্লাহ। করোনায় শুরু থেকেই কাজ করছেন। লড়ছেন মানুষের জন্য। আক্রান্ত হলেন। অসুস্থতা থেকে কিছুটা ভালো হয়েই গেলেন বনানী গোরস্থানে মোহাম্মদ নাসিমের কবর জিয়ারত করতে। এ কাজটিতে অনেক মানুষ খুশি হননি। সমালোচনাও করলেন কেউ কেউ। তিনি থামলেন না। মিডিয়ার সামনে কথা বললেন। শরীর খারাপ হলো। আবার গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন। ডাক্তার বললেন, আপনার শরীর ভালো না। এভাবে বের হবেন না। তিনি বললেন, আচ্ছা। কিন্তু একাত্তরের এই যোদ্ধাকে কে থামাবে! কিছুক্ষণ শুয়ে থাকেন। আবার কাজ করেন। এবার দেখতে গেলেন করোনায় আক্রান্ত নিষ্ঠাবান বাম রাজনীতিবিদ হায়দার আকবর খান রণোকে। ঢাকা মেডিকেলে বন্ধু রণোর শয্যাপাশে অনেকক্ষণ ছিলেন। ডাক্তারদের বলে এলেন যে কোনো প্রয়োজনে তাঁকে ডাকতে। তিনি ছুটে আসবেন। এমনকি আর্থিক প্রয়োজনেও। এভাবে সবাই পারে না।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী ১৯৭১ সালে ব্রিটেনে ছিলেন। পাকিস্তানি পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলে অনেক কষ্টে আসেন যুদ্ধের ময়দানে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য হাসপাতাল তৈরি করেন। সে হাসপাতাল তৈরি সহজ ছিল না। সব কাঠিন্য জয় করলেন। তাঁর হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের সেবায় কাজ করেন সুলতানা কামালসহ অনেকে। স্বাধীনতার পর দেশের স্বাস্থ্য ভাবনায় নতুন চিন্তা নিয়ে গেলেন বঙ্গবন্ধুর কাছে। বঙ্গবন্ধু তাঁর কাজের স্বীকৃতি দিলেন। গণস্বাস্থ্য নামটা বঙ্গবন্ধুর দেওয়া। কাজটা এগিয়ে নিতে জমিও দেন। সেই থেকে জাফরুল্লাহ লড়ছেন স্বাস্থ্য খাত ও স্বাস্থ্যনীতি নিয়ে। এই লড়াকু যোদ্ধার জন্য শুভ কামনা। প্রার্থনা করছি তাঁর সুস্থতার জন্য।
আমাদের একটু আশার আলো দরকার। বিশ^ আজ এক নতুন চ্যালেঞ্জে। মানুষ অনেকটা দিশাহারা। এই কঠিন সময়ের কীভাবে উত্তরণ হবে কেউ জানি না। এখন আশার আলো হারিয়ে গেলে চলবে না। আশার আলো ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারবে না। যেদিন আশার আলো নিভে যাবে সেদিন মানুষও শেষ হয়ে যাবে। অন্ধকারে আলোর রশ্মি দরকার। কিছুটা রশ্মি নিয়ে এলেন একজন আসিফ মাহমুদ। জানালেন, বাংলাদেশও এগিয়ে আছে ভ্যাকসিন আবিষ্কারে। কী হবে জানি না। সফলতা কামনা করি আসিফ মাহমুদের। আসিফ মাহমুদ, বিজন শীলরা চেষ্টা করছেন। এ চেষ্টা সম্ভাবনার। এ সম্ভাবনাকে নিয়েই চলতে চাই সুন্দর কিছুর প্রত্যাশায়। সৌজন্য: বাংলাদেশ প্রতিদিন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চারটি সহযোগী সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। সম্মেলনের সাত মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি কৃষক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগ। গেল বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে এ চারটি সংগঠনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় জানুয়ারির মধ্যে কমিটি ঘোষণার কথা বলা হলেও পরে তা মার্চ মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু মার্চেই দেশে হানা দেয় প্রাণঘাতি করোনা। দেশজুড়ে তৈরি হওয়া অচলাবস্থায় থমকে সহযোগী চার সংগঠনে পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন প্রক্রিয়া।
করোনা প্রতিরোধে টানা দুমাসের সাধারণ ছুটি শেষে সবকিছু ধাপে ধাপে পুনরায় সচল হলেও সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি গঠনে কথা আওয়ামী লীগের কোনো নেতাই মুখে আনছেন না। এতে করোনার প্রভাবে তৈরি হওয়া মানসিক চাপের সঙ্গে সহযোগী সংগঠনের পদপ্রত্যাশী ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের ভেতর বিরাজ করছে হতাশা। কেউ কেউ এরই মধ্যে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ারও চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন।
গতবছর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমারোহে ৬ নভেম্বর কৃষক লীগ, ৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের একমাত্র ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগ, ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও বহুল আলোচিত-সমালোচিত যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেস হয় ২৩ নভেম্বর। আর ও ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন হয়। সম্মেলনের পরপরই আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হলেও আটকে যায় চার এ সহযোগী সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি।
এর মধ্যে র্দীর্ঘ সাত বছর পর অনুষ্ঠিত হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন। এতে দলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহকে সভাপতি ও আফজালুর রহমান বাবুকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। তিন মাস আগে ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেওয়া হয় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু জানান, তিন মাস আগে আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিয়েছি। বিষয়টি আমাদের নেত্রী দেখছেন। করোনার কারণেই হয়তো ঘোষণা হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী যখন অনুমতি দেবেন তখনই এ কমিটি ঘোষণা করা হয়।
অপর সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের ১১১ সদস্যর কমিটি জমা দেওয়া হয় সম্মেলনের এক সপ্তাহের মধ্যেই। তারপর বিভিন্ন রাজনৈতিক জটিলতা এবং মুজিববর্ষের কারণে তাৎক্ষণিক কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। আর চলতি বছরে যুক্ত হয়েছে মহামারি করোনা। সবকিছু মিলেই আটকে আছে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিও। সংগঠনটির সভাপতি সমীর চন্দ্র বলেন, পুরোনো গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি ও সম্পাদকসহ আমরা ১১১ সদস্যের কমিটি জমা দিয়েছি। এর মধ্যে আর ঘোষণা দেওয়া হয়নি। আশা করছি, করোনা সংক্রমণ কেটে গেলে আমাদের কমিটি ঘোষণা হবে।
আওয়ামী যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেসে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির বড় ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশকে দলের চেয়ারম্যান ও যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা। সম্মেলনের আগে সন্ত্রাসী চাঁদাবাজি ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডের দায়ে সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা রয়েছেন কারাগারে। সব মিলিয়ে এবার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন দলের দুই নীতি নির্ধারক। আর এরই মধ্যে মহামারি করনোর কারণে আটকে যায় সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা।
একই পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগ। শ্রমিক নিয়ে কাজ করা এ সংগঠনটিরও সাংগঠনিক কর্মকান্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। গেল বছর ৯ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক মন্টুকে সভাপতি ও আজম খসরুকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। এছাড়া ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগেরও সম্মেলন হয়েছে গত বছর।
আওয়াম লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোতে সম্মেলনের পর পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে নেতাকর্মীদের যে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছিল তার দীর্ঘসূত্রতায় তৃণমূলে হতাশা বাড়ছে।
একটা সময় বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য পাট ও পাটজাত সামগ্রীর পরের অবস্থান ছিল চামড়া শিল্প। পাটজাত পণ্যের পতনের পর নব্বই দশকে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত হিসেবে তৈরি পোশাকশিল্পের উত্থান হয়, তখনও দ্বিতীয় রপ্তানীকারক খাতে দীর্ঘদিন অবস্থান ধরে রেখেছিল চামড়া শিল্প। কিন্তু বছর চারেক হলো চামড়াশিল্পের ধস নেমেছে। এটি এমন পর্যায়ে পৌছায় যে, গতবছর কোরবানির ঈদে এক লাখ টাকার উপরে কেনা গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ টাকায়। একলাখের নিচে কেনা গরুর দাম দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টাকা। এবারও গরুর চামড়া দর না বাড়ার আশঙ্কা করছেন আড়তদাররা।
সরকারের হস্তক্ষেপে ট্যানারি মালিকরা চামড়া সংগ্রহ শুরু করলেও আড়তেরমোটা অংকের বকেয়া পড়ে আছে আগের মতোই। গত বছরের চামড়া বিক্রি বাবদ ট্যানারি মালিকদের দেওয়া চেক আজও ক্যাশ হয়নি। আড়তদারদের হিসাব অনুযায়ী এখনও ২৫০ কোটি টাকা বকেয়া আটকে আছে। চামড়া সংগ্রহের পুঁজি না থাকায় পর্যপ্ত চামড়া সংগ্রহ সম্ভব নয়, আর এই সুযোগ ফড়িয়া ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা কারসাজিতে পানির দামে চামড়া কেনার পাঁয়তারা চলছে।
চামড়া বাজারকে এবার করোনা মহামারীও প্রভাবিত করবে। কারণ করোনা দূর্যোগে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক সংকটে পেশাদার চামড়া ব্যবসায়ীদের হাতে নগদ টাকা নেই। বকেয়া আর ব্যাংক ঋণ না পেলে তাদের পক্ষে চামড়া সংগ্রহ সম্ভব না। এতে গতবারের চেয়েও চামড়ার দাম কমে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানালেন তারা।
আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার চাহিদা বাড়ছে বলে বলা হয়েছে ব্রিটেনভিত্তিক জরিপ প্রতিষ্ঠান জাস্ট স্টাইল। সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশগুলোতে গবাদি পশুর উৎপাদন সেভাবে বাড়ছে না। অন্য ফসল চাষের জন্য সেখানে গবাদিপশু উৎপাদনে পর্যাপ্ত জমি পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু পাদুকাশিল্পে চামড়ার চাহিদা বাড়ছে। হ্যান্ড ব্যাগ আর মিনিয়েচার সামগ্রীতে চামড়ার চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ চামড়ার চাহিদার মূলস্রোত থেকে ছিটকে গেছে সিন্ডিকেট দৌরাত্ম্য ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে।
তৃণমূল পর্যায়ে বিক্রেতা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের চামড়ার ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার পেছনে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার পাশাপাশি সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে কাঁচা চামড়ার দাম কমেছে ৭৫ শতাংশ। অথচ চামড়াজাত সব পণ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। তাহলে কাঁচাচামড়ার দাম কমছে কেন, লাখ টাকায় কেনা গরুর চামড়া কেন ২০০ টাকার বেশি দাম বলছে ফড়িয়ারা?
আড়াতদারদের পাওনা পরিশোধ বা ঋণ প্রদানের মাধ্যমে এই অচলায়তন ভাঙা সম্ভব নয় বলে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বাংক ঋণ আর বকেয়া পাওনা পরিশোধের পাশাপাশি প্রশাসনের যোগসাজশে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে না পারলে, আগামী কয়েকবছর পানির দামেই ছাড়তে হবে কোরবানির চামড়া ।