নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে ধর্ষণচেষ্টা ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে সোহাগকে (৪২) গ্রেফতার করা হয়েছে।
সোমবার রাতে উপজেলার এখলাছপুর এলাকা তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নোয়াখালী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপক জ্যোতি খীসা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, রাতে অভিযান চালিয়ে উপজেলার এখলাছপুর এলাকা থেকে ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে সোহাগকে গ্রেফতার করা হয়। তবে সোহাগ এজাহারভুক্ত আসামি নন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ধর্ষণের মতো সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন।
ধর্ষণের প্রতিটি ঘটনাতেই সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সরকার ক্ষমতায়, কি করে দায় এড়াবে? এসব ব্যাপারকে সরকার প্রশ্রয়ও দিচ্ছে না। প্রত্যেকটি ব্যাপারে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। দলীয় পরিচয়ের কেউ থাকলেও তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনায় সরকার অপরাধীদের শাস্তি দিচ্ছে। তবে এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়তে হবে। এ ধরনের ইস্যু নিয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
সোমবার (৫ অক্টোবর) সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তা এবং দফতর প্রধানের সঙ্গে উন্নয়ন কার্যক্রম পর্যালোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ধর্ষণ নিঃসন্দেহে নিন্দনীয় অপরাধ ও সামাজিক ব্যাধি। এসব চরম ঘৃণিত কাজের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা বিকৃত রুচির অপরাধী। সরকার এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিচ্ছে। তবু এ ধরনের ঘটনা দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে। সম্প্রতি পাশের দেশেও এমন ঘটনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। ’
অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে সবার প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সব ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করার কোনো প্রয়োজন নেই। এ ধরনের একটা ইস্যু নিয়ে রাজনৈতিক দলসহ সাংস্কৃতিক ও সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটা সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
ধর্ষণের সঙ্গে সরকারি দল সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের নাম আসছে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, যেই হোক। এটার দায় কেউ এড়াতে পারবে না। সরকার ক্ষমতায়, সরকার কীভাবে দায় এড়াবে? সরকার এটাকে মোটেও প্রশ্রয়ও দিচ্ছে না। প্রত্যেকটি ব্যাপারে সরকার দায়িত্ব নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী, এসব ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের মধ্যে আমাদের দলীয় পরিচয়েও কেউ যদি থাকে, অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় এবং শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সেটা শুধু মুখে বলা হচ্ছে না, বাস্তবেও কার্যকর করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, রিফাত হত্যা মামলার রায় হয়ে গেলো, ফেনীর নুসরাতের ঘটনায় রায় হলো। এগুলোর বিচার তো হচ্ছেই। সব ব্যাপারেই শাস্তি হবে। ওয়াহিদার ওপর হামলা হয়েছে, সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দলীয় পরিচয়ের নামও শোনা গেছে, কিন্তু কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি। আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডে প্রায় প্রত্যেকেই ছাত্রলীগের পরিচয়ে ছিল। কিন্তু তাদের কি শাস্তি থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে? নাকি তাদের চার্জশিট থেকে বাইরে রাখা হয়েছে?’
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের ৯ দফা দাবিতে ডাকা পণ্য পরিবহন ধর্মঘট দেশ ও অর্থনীতির স্বার্থে প্রত্যাহার করে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে সড়ক পরিবহন এবং সেতুমন্ত্রী বলেন, করোনাকালে জনভোগান্তি ও দেশের পণ্য পরিবহন জিম্মি করা প্রত্যাশিত নয়।
তিনি বলেন, সম্প্রতি পরিবহন মালিকদের একটি অংশ বিশেষ করে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি দু’দিনের ধর্মঘট ডাক দিয়েছে বলে শুনেছি। মালিক সমিতির কোনো দাবি থাকলে তা আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারি। অতীতেও অনেক বিষয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হয়েছে। আমি ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, তিনিও বসতে রাজি। কোনো দাবি থাকলে আলোচনা হবে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, করোনাকালে জনভোগান্তি ও দেশের পণ্য পরিবহন জিম্মি করা প্রত্যাশিত নয়। তাই আমি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতিকে দেশ ও অর্থনীতির স্বার্থে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত বিশেষ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ধর্মঘটের যে আহ্বান জানানো হয়েছে তা প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি। আপনারা আলোচনায় বসুন, যৌক্তিক কিছু থাকলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বসে বিষয়টির সমাধানের পথ খুঁজে বের করুন।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম
Post Written by :
Original Post URL : https://ppbd.news/national/175848/সরকার-ক্ষমতায়,-কী-করে-দায়-এড়াবে?
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD
আজকের এই দিনে জন্মগ্রহণ করায় পাশ্চাত্য মতে আপনি তুলা রাশির জাতব্যক্তি।
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক
আজকের এই দিনে জন্মগ্রহণ করায় পাশ্চাত্য মতে আপনি তুলা রাশির জাতব্যক্তি। আপনার ওপর আজ প্রেমের দেবতা শুক্রাচার্য, গ্রহমাতা চন্দ্র ও সেনাপতি মঙ্গলের প্রভাব বিদ্যমান।
আপনার সঙ্গে বৃষ রাশির বন্ধুত্ব শুভফল প্রদান করবে। রাগ জেদ অহংকার আবেগ বর্জন করুন। সংকটকালে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-পরিজন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে ধরবে, প্রেম রোমান্স শুভ।
মেষ [২১ মার্চ-২০ এপ্রিল]
অর্থকড়ি সতর্কতার সঙ্গে নাড়াচাড়া করুন। অবশ্য দীর্ঘদিনের আটকে থাকা বিল পাস ও পাওনা টাকা আদায় হবে। ভ্রমণকালীন পরিচয় থেকে বন্ধুত্বে রূপ নেবে। শত্রু ও বিরোধীপক্ষ পিছু হঠতে বাধ্য হবে।
বৃষ [২১ এপ্রিল-২০ মে]
দুর্যোগের মেঘ সরে গিয়ে সুদিনের সূর্য উদিত হবে। গৃহবাড়িতে নতুন আসবাবপত্র, বস্ত্রালঙ্কার ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর পসরা সাজবে। রাগ জেদ অহংকার আবেগ বর্জন করতে হবে। বিবাহযোগ্যদের বিবাহের পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়ার আবশ্যকতা রয়েছে।
মিথুন [২১ মে-২০ জুন]
শুভাশুভ মিশ্রফল প্রদান করবে। যেমন আয় তেমন ব্যয় হওয়ায় সঞ্চয়ের খাতে থাকবে শূন্য। দূর থেকে আসা কোনো অপ্রিয় সংবাদে মন বিষণœ হয়ে পড়বে। না বুঝে চুক্তি সম্পাদন ও বিনিয়োগ ঘাতক বলে প্রমাণিত হবে।
কর্কট [২১ জুন-২০ জুলাই]
পাওনা টাকা আদায় আটকে থাকা বিল পাস ও অচল ব্যবসা সচল হয়ে উঠবে। প্রেম রোমান্স বিনোদন ভ্রমণ বিবাহ বিনিয়োগ শুভ এমনকি সুদূরপ্রসারী হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে পরিবারে ছোট্ট নতুন মুখের আগমন ঘটতে পারে।
সিংহ [২১ জুলাই-২০ আগস্ট]
বেকারদের কর্মপ্রাপ্তির বাসনা পূরণ করবে। নিত্যনতুন ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিকল্পনা আলোর মুখ দর্শন করবে। বিদেশগমন ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পথ প্রশস্ত হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ অপেক্ষা করবে। শত্রু ও বিরোধীপক্ষের সব পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দুর্বারগতিতে এগিয়ে চলবেন।
কন্যা [২২ আগস্ট-২২ সেপ্টেম্বর]
দুর্যোগের মেঘ কাটতে আরম্ভ করবে। যে কাজে হাত দেবেন তাতেই কমবেশি সফলতাপ্রাপ্ত হবেন। বিবাহযোগ্যদের বিবাহের কথাবার্তা পাকাপাকি হবে। সন্তানদের আচরণ মনোবেদনার কারণ হলেও তাদের সাফল্যে গৌরবান্বিত হবেন।
তুলা [২৩ সেপ্টেম্বর-২২ অক্টোবর]
একদিকে আয়-উপার্জন কম অপরদিকে খরচের লাগামহীন চাপ আপনাকে জীর্ণ করে তুলবে। ঘুষ উৎকোচ গ্রহণ নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন ক্রয়-বিক্রয় অস্ত্রশস্ত্র বহন ও অপপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকুন। এতদসত্ত্বেও মন সুর সংগীত আধ্যাত্মিকতা ও পরোপকারের প্রতি ঝুঁকবে।
বৃশ্চিক [২৩ অক্টোবর-২১ নভেম্বর]
অত্যাবশ্যকীয় বিবাহে কোনো না কোনো বাধা এসে হাজির হবে। দাম্পত্য সুখ শান্তি প্রতিষ্ঠা বজায় রাখতে জীবনসাথীর মতামতকে গুরুত্ব দিন। নিঃসন্তান দম্পতিরা কোনো না কোনো শুভসংবাদ পাবেন। লৌকিকতায় যেমন ব্যয় হবে তেমনি উপহারসামগ্রীও প্রাপ্ত হবেন।
ধনু [২২ নভেম্বর-২০ ডিসেম্বর]
দুর্ঘটনা ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ভিড়ভাড় এড়িয়ে চলুন। সংকটকালে বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-পরিজন সাহায্যের পরিবর্তে দূরে থেকে মজা দেখবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে মজুদ মালের দাম বৃদ্ধি পেলেও বিক্রি করে ঘরে তোলা কঠিন হবে।
মকর [২১ ডিসেম্বর-১৯ জানুয়ারি]
শিক্ষার্থীদের মন ফেসবুক ইউটিউব প্রেম প্রসঙ্গ ও অনুচিত কাজবাজের প্রতি আকৃষ্ট থাকবে। পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখার চেষ্টা করুন। অবশ্য কর্ম ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বাড়তি দায়িত্বভার বর্তাতে পারে। অত্যাবশ্যকীয় বিদেশগমনের পথ স্তব্ধ হয়ে পড়বে।
কুম্ভ [২০ জানুয়ারি-১৮ ফেব্রুয়ারি]
দাম্পত্য সুখ-শান্তি প্রতিষ্ঠা বজায় রাখতে জীবনসাথীর মতামতকে গুরুত্ব দিন। ডাকযোগে প্রাপ্ত সংবাদে গোটা পরিবারে খুশির জোয়ার বইবে। সন্তানদের ক্যারিয়ার অধ্যয়ন স্বাস্থ্যবিষয়ক দুশ্চিন্তার অবসান ঘটবে।
মীন [১৯ ফেব্রুয়ারি-২০ মার্চ]
চতুর্দিক থেকে তরতাজা উন্নতি করতে থাকায় মন আনন্দে নাচবে। বিদেশগমন ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দুটোই সমানতালে শুভফল প্রদান করবে। সন্তানরা আজ্ঞাবহ হয়ে থাকবে। রাগ জেদ অহংকার আবেগ ক্ষতির কারণ হবে।
Post Written by :
Original Post URL : https://ppbd.news/feature/175846/আজকের-রাশিফল
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD
স্টাফ রিপোর্টার, কপোত নবী : আগামী জানুয়ারিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ সারাদেশে দু’শতাধিক পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সর্বশেষ দেশের পৌরসভাগুলোতে একযোগে ভোট গ্রহণ হয়েছিল ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর।
নির্বাচিত মেয়ররা শপথ নিয়ে প্রথম সভা করেছিলেন ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। আইন অনুযায়ী নির্বাচিত পৌরসভার মেয়াদ হচ্ছে প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। আর ভোট করতে হয় সময় শেষ হবার আগে ৯০ দিনের মধ্যে।
দেশের নির্বাচিত পৌরসভা গুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় একযোগে ভোটের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি চাঁপাইনবাবগঞ্জের চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর প্রার্থীরাও নিজনিজ এলাকায় প্রচার প্রচারণায় নেমে পড়েছেন।
আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে দু’শতাধিক পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অক্টোবরে দেশের পৌরসভা গুলোর নির্বাচনের জন্য সময় গণনা শুরু হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যেই ভোট করতে হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে পৌরসভা রয়েছে ৩২৮টি। এর মধ্যে নির্বাচনের উপযোগী রয়েছে এখন পর্যন্ত ২৫৬টি। তবে এটি কমতে বা বাড়তে পারে। কেননা, মামলাসহ আইনি জটিলতার কারণে সংখ্যায় কিছুটা এদিক-সেদিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
দীর্ঘ ২৩ বছর শিক্ষকতার পর গত বছর আগস্টে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান যশোর চৌগাছার আরপিইউ দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আনিসুর রহমান। ডিসেম্বরে পরিবারের পক্ষ থেকে স্ত্রী মোছা. তাসলিমা খাতুন তার স্বামীর কল্যাণ ট্রাস্ট (আবেদন আইডি, এম-৯১৮৪০৩৫৩১) ও অবসর সুবিধার (এম-৩৭৭২১৪৭৯৯) টাকা পেতে আবেদন করেছেন। এ টাকার জন্য তিনি তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করছেন।
শুধু তাসলিমা খাতুন নন, জানা গেছে ২৩ হাজারের বেশি শিক্ষক ও কর্মচারী এবং তাদের পরিবার এই টাকা পেতে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। শেষ বয়সে এসে অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকা যথাসময়ে না পেয়ে শিক্ষকদের অনেকের দিন কাটছে নানা সমস্যায়। অর্থাভাবে কারো কারো মিলছে না চিকিৎসা। দিনের পর দিন এই টাকার জন্য ঘুরছেন রাজধানীর পলাশীতে ব্যানবেইস ভবনে অবস্থিত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডে।
মহামারী করোনাভাইরাসের সময়ও বৃদ্ধ বয়সে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবসরের এই অর্থের খোঁজে ঢাকায় আসছেন তারা।
তথ্য মতে, শিক্ষকদের এমপিওর (মান্থলি পে অর্ডার) ৪ শতাংশ অর্থ কেটে রাখা হয় বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিলে। আর ৬ শতাংশ কেটে রাখা হয় অবসর সুবিধা বোর্ড তহবিলে। এ তহবিলে সরকার একটি অংশ বরাদ্দ দেয়। এই টাকাই অবসরের পর পান শিক্ষক-কর্মচারীরা। এ অর্থের জন্য আবেদন করলেও তাদের অর্থ ছাড় হচ্ছে এক থেকে দুই বছর পর। যথাসময়ে টাকা ছাড় না হওয়ায় শিক্ষকদের অনেকেই মারা যাচ্ছেন অবসর ও কল্যাণ তহবিলের অর্থ হাতে না পেয়েই। সম্প্রতি ব্যানবেইস ভবনে গিয়ে দেখা গেছে শিক্ষক-কর্মচারী ও তাদের স্বজনদের দুর্দশার চিত্র।
জানা গেছে, প্রায় ১৯ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর কল্যাণ সুবিধার আবেদন অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে। আর প্রায় ২৩ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধার অর্থের জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করছেন। কল্যাণ ট্রাস্টে বর্তমানে গত বছর সেপ্টেম্বরে আবেদন নিষ্পন্নের কাজ চলছে। আর অবসর সুবিধা বোর্ডে কাজ চলছে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাসের আবেদন নিয়ে। শিক্ষকদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট যোগ হওয়া, চাহিদামাফিক অবসর সুবিধা বোর্ডে চাঁদার পরিমাণ না বাড়ার কারণে অর্থ সংকটে শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরের টাকা যথাসময়ে দেওয়া যাচ্ছে না বলে জানা গেছে।
অনিষ্পন্ন থাকা আবেদনগুলো নিষ্পন্ন করতে কল্যাণ ট্রাস্টে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ও অবসর সুবিধা বোর্ডে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন।
শিক্ষক-কর্মচারীদের যথাসময়ে কল্যাণ ও অবসর সুবিধার টাকা না পাওয়ার ব্যাপারে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু বলেন, কল্যাণ ট্রাস্টে জনবলের ঘাটতি রয়েছে। অল্পসংখ্যক কর্মকর্তা নিয়ে সেবা দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া সর্বশেষ স্কেলেই শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরের এই টাকা প্রদান করতে হয়। পে-স্কেল কার্যকরের আগে ২০১৫ সালের জুনে অবসরে যাওয়া একজন অধ্যক্ষ কল্যাণ ও অবসর মিলে পেতেন সাড়ে ২২ লাখ টাকার মতো। কিন্তু পে-স্কেল ঘোষণার পর তাকে দ্বিগুণের বেশি টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ ছাড়া ৫ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট যোগ হওয়ায় এ অঙ্ক আরো বেড়েছে।
শিক্ষক-কর্মচারীদের স্বার্থে শিক্ষাবান্ধব এ সরকারকে এই খাতে আরও বরাদ্দ দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন সাজু।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী বলেন, পে-স্কেল ও ইনক্রিমেন্টের কারণে অবসরের পর শিক্ষকদের বেশি টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে তুলনামূলক কম। তাই প্রতি মাসেই প্রায় ২০ কোটি টাকা ঘাটতি থাকছে এ বোর্ডে। শিক্ষাবান্ধব শেখ হাসিনার সরকারকে শিক্ষক-কর্মচারীদের স্বার্থে এ খাতে আরও বরাদ্দ দেওয়ার অনুরোধ জানাই।’ তিনি বলেন, করোনার মধ্যেও কল্যাণ ও অবসর সুবিধা বোর্ডের কর্মকর্তারা শিক্ষক ও কর্মচারীদের সেবা দিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু অর্থ সংকটের কারণেই তাদের টাকা পেতে কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
পূর্বপশ্চিমবিডি/অ-ভি
Post Written by :
Original Post URL : https://ppbd.news/education/175736/অপেক্ষার-প্রহর-গুনছেন-২৩-হাজার-শিক্ষক
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD
আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবস। বাংলাদেশের মহান স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও বাঙালির জীবনধারায় সমাজ সংস্কারসহ প্রগতির অন্যতম পুরোধা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদ্বিশতবার্ষিকী উদ্যাপন ও বিশ্বগ্রাসী মহামারি করোনার মতো অভাবিত দুর্যোগের পটভূমিতে দেশে দেশে শিক্ষকরা আজ দিবসটি পালন করছেন। অবশ্য ভারতসহ কয়েকটি দেশে অন্য দিনে দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। ভারতে দিনটি পালিত হয় এক মাস আগে রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধা কৃষ্ণের জন্মদিন ৫ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশে জাতীয় বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদ্যাপন কমিটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দিনটিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো ও শিক্ষক প্রতিনিধিদের নিয়ে বিকেলে এক জাতীয় ভার্চুয়াল মতবিনিময়সভার আয়োজন করেছে।
বিশ্ব শিক্ষক দিবস ৫ অক্টোবর কেন?
১৯৯৪ সালে ইউনেসকোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনে তত্কালীন মহাপরিচালক ফেডোরিকো মেয়রের প্রস্তাবক্রমে ১৯৬৬ সালে ইউনেসকোর উদ্যোগে প্যারিসে ৫ অক্টোবর বিভিন্ন রাষ্ট্রের সরকারগুলোর সভায় শিক্ষকদের অধিকার, মর্যাদা ও করণীয় সম্পর্কে গৃহীত ও পরবর্তী সময়ে আইএলও কর্তৃক অনুমোদিত সুপারিশগুলো চিরস্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যে ৫ অক্টোবর ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৯৪ সাল থেকেই দিবসটি উদ্যাপন শুরু হয়। তবে ১৯৬৬ সালের ১৪৫ ধারাসংবলিত সুপারিশমালার মধ্যে নার্সারি, কিন্ডারগার্টেন, প্রাথমিক, কারিগরি, বৃত্তিমূলক, চারুকলাসহ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পাঠদানকারী সব সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকের কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হলেও উচ্চতর শিক্ষাদানে নিয়োজিত শিক্ষকদের কথা সুনির্দিষ্ট উল্লেখ না থাকায় ১৯৯৭ সালের ১৫ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর প্যারিসে ইউনেসকোর এক বিশেষ অধিবেশনে উচ্চতর শিক্ষাদানকারী শিক্ষকদের মর্যাদাসংক্রান্ত সুপারিশ যুক্ত করা হয়। সিদ্ধান্ত হয় যে ১৯৯৬ ও ১৯৯৭ সালে গৃহীত উভয় সুপারিশমালাই ‘শিক্ষকদের মর্যাদা সনদ’ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং বিশ্বব্যাপী সর্বস্তরের শিক্ষকরা ওই সনদের স্মারক দিবস হিসেবে ৫ অক্টোবর প্রতিবছর ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ পালন করবেন। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ছয় কোটি শিক্ষক বর্তমানে দিবসটি পালন করে থাকেন।
ছয়টি উল্লেখযোগ্য বিষয়
উল্লেখ্য, শিক্ষকদের ‘মর্যাদা সনদ’ হিসেবে ইউনেসকো-আইএলও সুপারিশকৃত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে—১. সামগ্রিক জনস্বার্থে যেহেতু শিক্ষা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সেহেতু শিক্ষাকে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হিসেবে স্বীকার করতে হবে। যেহেতু শিক্ষা অর্থনৈতিক উন্নতির অপরিহার্য উপাদান, সেহেতু শিক্ষা পরিকল্পনা সমগ্র অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। ২. কোনো একতরফা সিদ্ধান্ত দ্বারা শিক্ষকদের পেশাজীবন ও অবস্থান যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তার পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পেশাগত অসদাচরণের জন্য কোনো শিক্ষকের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রযোজ্য বলে বিবেচিত হলে অসদাচরণের সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট উল্লেখ নিশ্চিত করতে হবে। ৩. কারো সম্পর্কে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয় স্থিরকৃত হলে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্ধারিত কর্তৃপক্ষকে শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। ৪. পেশাগত দায়িত্ব পালনে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত স্বাধীনতা থাকতে হবে। ৫. শিক্ষকরা এবং সংগঠনগুলো যৌথভাবে নতুন শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষা উপকরণের উন্নয়ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবে। ৬. ‘একজন শিক্ষকের প্রতিদিন বা প্রতি সপ্তাহে কত ঘণ্টা কাজ করা প্রয়োজন, তা শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারিত হওয়া উচিত। শিক্ষকদের বেতন এমন হওয়া উচিত, যা সমাজে শিক্ষকতা পেশার গুরুত্ব ও মর্যাদাকে তুলে ধরে।
শিক্ষকরা কতটা অধিকার ও করণীয় সচেতন?
১৯৯৪ সালে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের অন্যতম কারণ ছিল ১৯৬৬ সালের ইউনেসকো-আইএলও সুপারিশকৃত শিক্ষকদের অধিকার, করণীয় ও মর্যাদা সংক্রান্ত বিষয়গুলোর দিকে শিক্ষক, অভিভাবক, নীতি প্রণেতা, প্রশাসন—সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা। কিন্তু যাঁদের জন্য এসব সুপারিশ, তাঁরা কতজন এ বিষয়ে অবগত? এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল এ নিয়ে বিভিন্ন দেশে একাধিক জরিপ চালিয়েছে। এতে দেখা যায়, ৭৫ শতাংশ শিক্ষক সংগঠনের সদস্যরা জানলেও ১০ শতাংশ শিক্ষকের এগুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই। অন্যদিকে ১০ শতাংশ শিক্ষক আদৌ অবহিত নন যে তাঁদের জন্য এ ধরনের নীতিমালা বা গুচ্ছ সুপারিশ রয়েছে।
বাংলাদেশের শিক্ষকদের অবস্থা
কেমন আছেন বাংলাদেশের শিক্ষকরা? প্রাথমিক বাদ দিলে পরবর্তী শিক্ষাস্তরগুলোর ৯০ শতাংশের বেশি বেসরকারি। সেখানে পাঠরত শিক্ষার্থী ও কর্মরত শিক্ষক উভয়ই বৈষম্য-বঞ্চনার শিকার। সরকার আসে, সরকার যায়; কিন্তু অবস্থার মৌলিক পরিবর্তন হয় না। তার পরও এ কথা স্বীকার করতে হবে, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যেটুকু ইতিবাচক অর্জন তার বেশির ভাগই শেখ হাসিনার হাত দিয়ে হয়েছে। তবে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বিধ্বস্ত বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু স্বাধীন দেশের উপযোগী শিক্ষানীতি (কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট) দিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি। তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা-নির্দেশনাও দিয়ে যান। কিন্তু তাঁকে হত্যার পর ক্ষমতাসীন সরকারগুলো শিক্ষায় মৌলিক কোনো পরিবর্তনে হাত দেয়নি। কিছু তাত্ক্ষণিক বা অ্যাডহক সিদ্ধান্ত নিয়ে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতেই তাদের দেখা গেছে। সে জন্য প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারীকরণের পুরোটাই হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার হাত দিয়ে। শিক্ষা কারিকুলামে পরিবর্তন, তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার, মূল্যায়ন ব্যবস্থায় পরিবর্তন, সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে সঙ্গে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মূল বেতন বৃদ্ধি তার অন্যতম। তার পরও কথা থাকে। যেহেতু আজ দিনটি শিক্ষকদের জন্য নির্ধারিত একটি আন্তর্জাতিক দিবস, সে জন্য কিছু কথা বলা দরকার। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে বড় পদোন্নতি হলেও বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের পদোন্নতির হাল আগে যে তিমিরে ছিল, এখনো সে তিমিরেই। সহকারী অধ্যাপকের পদই সেখানে শেষ কথা। সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদ সৃষ্টি হয়নি। এমনকি এমপিওভুক্ত বেসরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষরা যথাক্রমে সরকারি কলেজের অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের মূল বেতন পেলেও তাঁদের অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যথাযথ পদায়ন করা হয়নি। ১৯৯৪ সালে জমির উদ্দিন সরকার শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের বেতন অন্যায়ভাবে সরকারি প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে মূল বেতন নির্ধারণ করা হয়। এ বঞ্চনার এখনো অবসান হয়নি। অথচ প্রাথমিক, পরবর্তী সময়ে বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরাই দেশে শিক্ষার ৯০ শতাংশের বেশি দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণা কার্যক্রমের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। ৬৬ হাজার কিন্ডারগার্টেনে কর্মরত ১০ লাখের কাছাকাছি শিক্ষক করোনাকালে প্রতিষ্ঠান ও পেশার অস্তিত্ব রক্ষার সংকটে। পদোন্নতির প্রশ্ন সেখানে বাস্তবেই অপ্রাসঙ্গিক। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় স্থায়ী শিক্ষক জনবল নেই। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সুপারিশ দেওয়ার বিধান আছে। সুপারিশ কার্যকরের ক্ষমতা নেই।
এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ২০ লাখের কাছাকাছি শিক্ষকের জীবনে বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২০ কী বার্তা এনেছে? তাঁদের মতামত কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে? তাঁরা কি করোনার মতো সংকটকালে নেতৃত্ব দিতে ও শিক্ষার ভিত্তিতে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টিতে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছেন? কিভাবে তাঁরা এই দিনটি পালন করছেন? বঞ্চনা বুকে পুষে না রেখে তা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে, আত্মানুসন্ধানে ভর করে এবং আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংহতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তাঁরা কি সংগঠিত, সুচিন্তিত পদক্ষেপ নিতে পারবেন? ভবিষ্যতের দিনগুলোতে তার সদুত্তর পাওয়া দরকার।
লেখক : বিশ্ব শিক্ষক দিবস জাতীয় উদ্যাপন কমিটির সমন্বয়ক ও জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য
prof.qfahmed@gmail.com
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম
Post Written by :
Original Post URL : https://ppbd.news/education/175733/সংকটে-নেতৃত্বদাতা-ও-ভবিষ্যদ্দ্রষ্টা-শিক্ষক
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD
টোকেন নয়, কাল থেকে সরাসরি মিলবে সৌদির টিকিট
কাল মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) থেকে টোকেন ছাড়া সরাসরি সৌদির টিকিট পাবেন প্রবাসীরা। তবে এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে ভিসা ও ইকামার মেয়াদ।
এ লক্ষ্যে এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের নাম ও ভিসার মেয়াদ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এই তথ্য মূল্যায়ন করে যাদের ভিসার মেয়াদ আগে শেষ হবে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকেট দেয়া হবে।এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কারা টিকিট পাবেন সে তথ্য প্রবাসীদের মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে।
এদিকে টোকেনের ভিত্তিতে আজই শেষ দিনের মতো টিকিট দেয়া হচ্ছে।
Post Written by : Rubel Islam
Original Post URL : https://ift.tt/36sFIcq
Post Come trough : নাচোল নিউজ
বিশ্ব শিক্ষক দিবস হল বিভিন্ন দেশের শিক্ষকদের সম্মানার্থে পালিত একটি বিশেষ দিবস। বিশ্ব শিক্ষক সংঘ তথা বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের ক্রমাগত প্রচেষ্টায় এবং ইউনেস্কো-আইএলও’র সদিচ্ছায় ১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ আন্তঃরাষ্ট্রীয় সরকার সম্মেলন। এ সম্মেলনে ইউনেস্কো-আইএলও সুপারিশ ১৯৬৬ প্রণীত হয়। এটি হল শিক্ষকদের অধিকার, কর্তব্য ও মর্যাদার সুপারিশ। ১৯৯৪ সালের ৫ অক্টোবর ইউনেস্কোর ২৬তম অধিবেশনে সংস্থার তৎকালীন মহাপরিচালক ফ্রেডারিক এম. মেয়র এডুকেশন ইন্টারন্যাশনালের অনুরোধে ৫ অক্টোবরকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল হল বেলজিয়ামভিত্তিক একটি শিক্ষাবিষয়ক সংস্থা। এটি গঠিত হয় ১৯৯৩ সালে।
এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল প্রতিবছর বিশ্ব শিক্ষক দিবসের একটি প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে থাকে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হল- ‘Teachers: Leading in crisis, reimagining the future’. এর বাংলা আভিধানিক অর্থ হল ‘শিক্ষক : সংকটে নেতৃত্বে, ভবিষ্যৎ নিয়ে পুনরায় কল্পনা’। এর সহজ ব্যাখ্যা হল, সংকটে শিক্ষকসমাজ নেতৃত্ব দেবে এবং ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য নতুনভাবে পরিকল্পনা তৈরি করবে।
প্রতিবছর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শিক্ষকসমাজ কিছু প্রত্যাশা করে ক্ষমতাসীনদের কাছে। বাংলাদেশে এ দিবসে শিক্ষকদের প্রত্যাশা হল- চাকরি জাতীয়করণ। কিন্তু কোভিড-১৯-এর কারণে উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশ বেশ বিপর্যস্ত পরিস্থিতির মোকাবেলা করে যাচ্ছে। তাই জাতীয়করণ না করা পর্যন্ত শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষার জন্য কিছু প্রস্তাব বিবেচনার দাবি রাখে। প্রস্তাবগুলো হল-
১. স্নাতক (পাস/অনার্স) থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষের বেতন কোড-০৪ এবং উপাধ্যক্ষের বেতন কোড-০৫, সেসব প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষের বেতন কোড-০৩ এবং উপাধ্যক্ষের বেতন কোড-০৪-এ উন্নীত করতে হবে। ২. থানাভিত্তিক এ ধরনের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মোট শিক্ষকের একটি নির্দিষ্ট হারে একই পর্যায়ের শিক্ষকতায় মোট ২২ বছর ও ২০ বছরের প্রকৃত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষকদের অধ্যাপক বেতন কোড-০৪ এবং সহযোগী অধ্যাপক বেতন কোড-০৫ প্রদান করতে হবে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রম চলছে, সেখানে শিক্ষকদের শ্রেণি বক্তৃতা পর্যবেক্ষণ করে (কতক্ষণ বক্তৃতা প্রদানে সক্ষম, বক্তৃতার মান, বক্তৃতা প্রদানের কৃত্রিমতা পরিহার করা, স্বাভাবিক থাকা ইত্যাদি যাচাই করে) প্রকৃত অভিজ্ঞ শিক্ষক বাছাই করা যাবে। আর যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তা নেই, সেখানে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে তা করতে হবে। এ প্রবন্ধে থানাভিত্তিক ১০ শতাংশ শিক্ষককে অধ্যাপক ও ১০ শতাংশ শিক্ষককে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির প্রস্তাব করা হল, যা এমপিওভুক্ত স্নাতক (পাস), স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর কলেজে সীমাবদ্ধ থাকবে। ৩. প্রতিষ্ঠানপ্রধান হওয়ার জন্য ২০ বছরের সমপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা এবং ৫০ বছর বয়স হওয়ার বিধান চালু করতে হবে। ৪. বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৫ থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে। ৫. সর্বশেষ বেতন স্কেলের ৫০ শতাংশ বাড়িভাড়া প্রদান করতে হবে। ৬. সর্বশেষ বেতন স্কেলের ২০ শতাংশ চিকিৎসা ভাতা প্রদান করতে হবে। ৭. মহানগরের জীবনযাপন ব্যয় অধিক বলে মহানগর শিক্ষকদের সর্বশেষ বেতন স্কেলের একটি নির্দিষ্ট হারে মহানগর ভাতা প্রদান করতে হবে। ৮. বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরির নির্ধারিত প্রবেশ বয়স বাতিল করে অবসর বয়স গড় আয়ুর সমান অর্থাৎ ৭২ বছর করতে হবে। সব স্তরের শিক্ষক এবং সব প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার (যারা প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে প্রবেশ করেছেন) ক্ষেত্রে গড় আয়ুর সমান অবসর বয়স নির্ধারণের বিষয়টি বিবেচনার দাবি রইল। ৯. কলেজ তথা উচ্চশিক্ষা শিক্ষকদের চাকরিতে প্রবেশ বেতন কোড-৮ নির্ধারণ করতে হবে।
দেশের ৯৫ ভাগ শিক্ষায় অবদান রাখা শিক্ষকগোষ্ঠী হল এমপিওভুক্ত শিক্ষক শ্রেণি। এ সেক্টরের শিক্ষকদের মানোন্নয়নে সরকারকে নজর দিতে হবে এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রকৃত অভিজ্ঞ শিক্ষক খুঁজে বের করতে হবে। সেজন্য অনলাইনে যে শিক্ষা কার্যক্রম চলে তা নজরদারিতে রাখতে হবে। শিক্ষকরা কত মিনিট শ্রেণি বক্তৃতা দিতে সক্ষম, তা বের করে দীর্ঘ বক্তৃতা প্রদানে সক্ষম শিক্ষকদের পুরস্কৃত করে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কম বক্তৃতাকারী শিক্ষকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। কখনও কখনও লক্ষ করা যায়, শিক্ষকরা কমপক্ষে নির্ধারিত ৩০ মিনিট বক্তৃতা প্রদানে সক্ষম নন। তারা ৬ মিনিট থেকে ২৫ মিনিট পর্যন্ত বক্তৃতা সীমাবদ্ধ রাখেন। বক্তৃতায় শিক্ষকরা কি পাঠ্যপুস্তক পড়ে শোনাচ্ছেন, নাকি গল্প করছেন, তা নজরদারিতে আনতে হবে। লক্ষ করতে হবে, বক্তৃতায় শিক্ষকদের পূর্বপ্রস্তুতি আছে কি না এবং সৃজনশীলতা রয়েছে কি না। অনেক সময় লক্ষ করা যায়, শিক্ষকরা অনলাইনে অন্য শিক্ষকদের তৈরি করা প্রেজেন্টেশন থেকে স্লাইড সংগ্রহ করে তা দেখে দেখে বক্তৃতা প্রদান করেন। এতে শিক্ষার্থীরা বারবার সেই বক্তৃতা শুনে পাঠ মুখস্থ করে সত্য; কিন্তু তাদের জ্ঞানের প্রসার ঘটে না। স্লাইড সংগ্রহ অনৈতিক এবং এক্ষেত্রে সংগ্রহকারী শিক্ষকদের সৃজনশীলতা অনুপস্থিত থাকে। প্রসঙ্গক্রমে, প্রেজেন্টেশন হল কম্পিউটারের মাধ্যমে তৈরি করা বক্তৃতা, যা অনলাইন ব্যবস্থার মাধ্যমে দৃশ্যযোগ্য ও শ্রবণযোগ্য হয়। আর স্লাইড হল প্রেজেন্টেশনের একটি অংশ। কিছু শিক্ষক বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যসূচির প্রেজেন্টেশন তৈরি করে কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইন্টারনেট জগতে ছেড়ে দেয়। সেখান থেকে কোনো কোনো শিক্ষক তা ডাউনলোড করে নিজ নিজ শ্রেণি বক্তৃতা সরবরাহ করে, যাতে সৃজনশীলতা হ্রাস পায় বা থাকে না। এটিকে যথার্থ কাজ বলে বিবেচনায় আনা যায় না। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে শিক্ষকদের কর্তব্য যথাযথভাবে পালন হয় না।
আমরা প্রত্যাশা করি, ইউনেস্কো-আইএলও সুপারিশ ১৯৬৬ আমাদের দেশে বাস্তবায়িত হবে। সেই হিসেবে সরকার শিক্ষকদের ও শিক্ষার অগ্রগতিতে যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
অধ্যাপক কাজী মুহাম্মদ মাইন উদ্দীন : প্রবন্ধকার ও শিক্ষা বিশ্লেষক
সর্বগ্রাসী করোনার মতো অভাবিত চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী শিক্ষকরা উদ্যম ও সংগঠিত উদ্যোগে কীভাবে অগ্রণী বা নেতৃত্বের ভূমিকা নিতে ও ভবিষ্যৎ ইতিবাচক সম্ভাবনার রূপরেখা তুলে ধরতে পারেন, তাকে উপজীব্য করে ইউনেস্কো বিশ্ব শিক্ষক দিবস-২০২০-এর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে- ‘সংকটে নেতৃত্বদাতা, ভবিষ্যতের রূপদর্শী শিক্ষক’। দিনটিকে ঘিরে ইউনেস্কোর সঙ্গে আগের মতো যুক্ত হয়েছে ইউনিসেফ, আইএলও, ইউএনডিপি ও এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল। আজ ৫ অক্টোবর দিবসটি নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দেশে দেশে উদযাপিত হচ্ছে। বলা বাহুল্য, শিক্ষক-কর্মচারীদের সংগঠন ও নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা এতে অংশ নিচ্ছেন।
বাংলাদেশে শিক্ষকদের অবস্থা
প্রাথমিক স্তর ও মাধ্যমিকে নারী শিক্ষকদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষকের সংখ্যা তেমনটি নয়। তবে বাড়ছে; নারী শিক্ষকদের কেউ কেউ উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পদেও দায়িত্ব পালন করছেন। যদিও কারিগরি শিক্ষায় মেয়ে শিক্ষার্থী ও নারী শিক্ষক অনুল্লেখযোগ্য। তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষক কোথাও কর্মরত আছে- তেমনটি জানা নেই। ভারতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে একজনের দায়িত্ব পালনের কথা শোনা গেলেও পরে জানা যায়, সহকর্মীদের অসহযোগিতার কারণে তাকে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রাথমিক বাদ দিলে পরবর্তী শিক্ষাস্তরগুলোর ৯০ শতাংশের বেশি বেসরকারি। সেখানে পাঠরত শিক্ষার্থী ও কর্মরত শিক্ষক উভয়ই বৈষম্য-বঞ্চনার শিকার। তারপরও একথা স্বীকার করতে হবে, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যেটুকু ইতিবাচক অর্জন, তার সিংহভাগই শেখ হাসিনার হাত দিয়ে হয়েছে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বিধ্বস্ত বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু স্বাধীন দেশের উপযোগী শিক্ষানীতি (কুদরাত-ই-খুদা) রিপোর্ট দিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি। তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা-নির্দেশনাও দিয়ে যান। কিন্তু তাকে হত্যার পর ক্ষমতাসীন সরকারগুলো শিক্ষায় মৌলিক কোনো পরিবর্তনে হাত দেয়নি। সেজন্য প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারীকরণের পুরোটাই হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার হাত দিয়ে। যেমন- শিক্ষা কারিকুলামে পরিবর্তন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার, মূল্যায়ন ব্যবস্থায় পরিবর্তন, সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে সঙ্গে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মূল বেতন বৃদ্ধি ইত্যাদি।
তারপরও কথা থাকে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে বড় পদোন্নতি হলেও বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের পদোন্নতির হাল আগে যে তিমিরে ছিল, এখনও সে তিমিরেই। সহকারী অধ্যাপকের পদই সেখানে শেষকথা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষা উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত এমপিও নীতিমালা প্রণয়ন কমিটিসহ একাধিক কমিটির সুপারিশ সত্ত্বেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে রশি টানাটানির কারণে সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদ সৃষ্টি হয়নি। এমনকি এমপিওভুক্ত বেসরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষরা যথাক্রমে সরকারি কলেজের অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের মূল বেতন পেয়ে এলেও তাদের পর্যন্ত অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যথাযথ পদায়ন করা হয়নি।
১৯৯৪ সালে জমিরুদ্দিন সরকার শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের বেতন অন্যায়ভাবে সরকারি প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে মূল বেতন নির্ধারণ করা হয়। এ বঞ্চনার এখনও অবসান হয়নি। অথচ প্রাথমিক-পরবর্তী বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরাই দেশে শিক্ষার ৯০ ভাগের বেশি দায়িত্ব পালন করে থাকেন। বেসরকারি স্কুল, ডিগ্রি কলেজ, অনার্স-মাস্টার্স কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যারা কর্মরত, তাদের মধ্যে অনেকে হয় প্রতিষ্ঠান থেকে, না হয় সরকার থেকে অথবা দুটো উৎস থেকেই বেতনভাতা ও পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত।
সরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকরা বেতন বৈষম্যের অবসান, টাইম স্কেল বাস্তবায়ন ও পদোন্নতির দাবিতে সোচ্চার। এ দিকে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, বেসরকারি স্কুলের প্রাথমিক শ্রেণিগুলোর সঙ্গে সরকারি প্রাথমিক স্কুলের আর্থিক ও ব্যবস্থাপনাগত দুস্তর ব্যবধান দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ এখনও দৃষ্টিগোচর নয়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণা কার্যক্রমের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। ৬৬ হাজার কিন্ডারগার্টেনে কর্মরত ১০ লাখের কাছাকাছি শিক্ষক করোনাকালে প্রতিষ্ঠান ও পেশার অস্তিত্ব রক্ষার সংকটে ব্যস্ত। পদোন্নতির প্রশ্ন সেখানে বাস্তবেই অপ্রাসঙ্গিক।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় স্থায়ী শিক্ষক জনবল নেই। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সুপারিশ দেয়ার বিধান আছে। সুপারিশ কার্যকরের ক্ষমতা নেই। অন্যদিকে শিক্ষার্থী সংখ্যার দিক থেকে সর্বোচ্চ এবং দেশজুড়ে অবস্থান হলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এখনও উপেক্ষার পাত্র। তবে এ কথা স্বীকার করতে হবে, ইউজিসির বর্তমান চেয়ারম্যানের সময়কালে প্রতিষ্ঠানটি আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি সক্রিয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শর্তানুযায়ী অধিভুক্ত বেসরকারি অনার্স-মাস্টার্স কলেজগুলোয় নিয়োগপ্রাপ্ত ও বছরের পর বছর ধরে এক প্রকার বিনা বেতনে কর্মরত শিক্ষকরা এখনও সরকারের শিক্ষক বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা ও মূলত অনুরাগ, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এমপিও থেকে বঞ্চিত।
এদিকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে যারা অবসর নিয়েছেন, তারা অবসর ভাতার জন্য এখন অন্তহীন অপেক্ষায়। ব্যানবেইসের দুয়ারে মাথা ঠুকছেন তেতাল্লিশ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী। জানা গেছে, অবসর ভাতা প্রদানকারী বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের পক্ষে আর্থিক সংকটের কারণে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদনকারীদের চেক তৈরি করা হয়েছে। অন্যদিকে, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট-২০১৮ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত প্রাপ্ত আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করেছে। অর্থসংকটের কারণে অবসর গ্রহণকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রাপ্য আর্থিক সুবিধা বিতরণে সমস্যা এখন বিপুল। এ সমস্যা উত্তরণে অবিলম্বে বিশেষ ব্যবস্থায় সরকারের দিক থেকে আর্থিক আনুকূল্যের মাধ্যমে শিক্ষকদের সমস্যা নিরসন করতে হবে। একই সঙ্গে পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা নিয়ে অবসর গ্রহণকারী শিক্ষকদের সংকট মোকাবেলা করতে হবে। কমিউনিটি সেন্টার জেলায় জেলায় প্রতিষ্ঠা, শিক্ষকদের শিক্ষা ব্যাংক স্থাপন ও জমিতে বিনিয়োগসহ বিভিন্ন দেশের আদলে অবসর গ্রহণকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেয়া দরকার।
বর্ণিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ২০ লাখ শিক্ষকের কাছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস-২০২০ কী বার্তা এনেছে? দিবসটি উপলক্ষে ইউনেস্কোর প্যারিসের প্রধান কার্যালয় থেকে যে ধারণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে, তা বাংলাদেশে কতটা প্রাসঙ্গিক? তারা কি করোনার মতো সংকটকালে নেতৃত্ব দিতে ও শিক্ষার ভিত্তি তৈরিতে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টির পাশাপাশি যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছেন? তাদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের বাস্তবতা নিয়ে কোনো মতবিনিময় হচ্ছে? বিশেষ করে তৃণমূলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কথা, তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও অপ্রাপ্তির বেদনা আমলে নিয়ে স্কুল খোলা না খোলা, মূল্যায়ন ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস জরুরি। যে কোনো সংকটকালে সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের যে দক্ষতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অব্যাহতভাবে দেখিয়ে চলেছেন, সে দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে আমাদের শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয় যত বেশি অভ্যস্ত হতে পারবে, বিশ্ব শিক্ষক দিবসে এ বছরের প্রতিপাদ্য ঠিক ততটাই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে।
অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ : বিশ্ব শিক্ষক দিবস জাতীয় উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক; জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য
সমর্থকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে হাসপাতালে ফিরে গেলেন ট্রাম্প
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
করোনায় আক্রান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাসপাতালের বাইরে এসে সমর্থকদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি বর্তমানে ওয়াশিংটনের কাছে ওয়াল্টার রিড মিলিটারি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা নিচ্ছেন।
রোববার (৪ অক্টোবর) তিনি টুইট করে সমর্থকদের তার আকস্মিক পরিদর্শনের কথা জানান।
হাসপাতালের বাইরে ট্রাম্পকে গাঢ় রঙের ফেসমাস্ক পরতে দেখা গেছে। তিনি সমর্থকদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন এবং এর পর হাসপাতালে ফিরে যান।
এর আগে টুইটারে পোস্ট করা ভিডিওতে ট্রাম্প সমর্থকদে উদ্দেশ্যে বলেন, রাস্তায় বেরিয়ে আসা কিছু দেশপ্রেমিককে আমরা সামান্য অবাক করে দিতে যাচ্ছি।
এদিকে করোনা প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, সত্যিকারের স্কুলে এসে তিনি করোনা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারছেন।
তিনি বলেন, এটি সত্যিকারের স্কুল। এটি ‘চলো আমরা বই পড়ি’ এ ধরণের কোন স্কুল নয়।
ট্রাম্পের স্বাস্থ্যের যথেষ্ট উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসকরা। সোমবার তাকে ছেড়ে দেয়া হতে পারে বলেও জানান তারা।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম
Post Written by :
Original Post URL : https://ppbd.news/abroad/175727/সমর্থকদের-শুভেচ্ছা-জানিয়ে-হাসপাতালে-ফিরে-গেলেন-ট্রাম্প
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD
আজ সোমবার (৫ অক্টোবর) বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে শিক্ষক দিবস। সারাবিশ্বের শিক্ষকদের সম্মানে গৃহীত এই দিবস। ‘ভবিষ্যতের সংকট মোকাবিলায় শিক্ষক সমাজ’ - এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।
১৯৯৪ সাল থেকে জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কোর উদ্যোগে প্রতিবছর ৫ অক্টোবর এ দিবসটি উদযাপিত হয়।
বিশ্ব শিক্ষক দিবসের ইতিহাস
১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর ফ্রান্সের প্যারিসে শিক্ষকদের অবস্থা নিয়ে আন্তঃসরকার সম্মেলন হয়েছিল। সেখানেই শিক্ষকদের কথা চিন্তা করে ইউনেস্কো এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন (আইএলও) কিছু পরামর্শে স্বাক্ষর করে। প্রথমবারের মতো এসব পরামর্শ শিক্ষকদের অধিকার, দায়িত্ব এবং বিশ্বব্যাপী শিক্ষকতা পেশার বিভিন্ন দিক নিয়ে ছিল।
১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেস্কোর ২৬তম অধিবেশনে গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ৫ অক্টোবর ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই প্রতি বছরের ৫ অক্টোবর যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয়ে আসছে।
বিশ্ব শিক্ষক দিবসের থিম
প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন প্রতিপাদ্যে উদযাপন করা হয় বিশ্ব শিক্ষক দিবস। সাম্প্রতিকতম কয়েকটি হলো- ২০১৬ সালে এ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘শিক্ষকদের মূল্যায়ন করা, তাদের অবস্থার উন্নতি করা’। ২০১৭ সালে এ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘শিক্ষকদের ক্ষমতায়ন করা’। ২০১৮ সালে এ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘শিক্ষার অধিকার মানেই একজন যোগ্য শিক্ষকের অধিকার’। ২০১৯ সালে এ দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘তরুণ শিক্ষক: পেশার ভবিষ্যৎ।’
ইউনেস্কো এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘শিক্ষক: সঙ্কটে নেতৃত্বদান, ভবিষ্যতের পুনর্নির্মাণ।’ আজ বিশ্বব্যাপী শিক্ষকতা পেশা উদযাপন করা হবে এবং জানানো হবে মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।
দেশ ভেদে শিক্ষক দিবস
বিশ্বের ১০০টি দেশে শিক্ষক দিবস পালিত হয়ে থাকে। অনেক দেশে দিবসটি ভিন্ন ভিন্ন তারিখে পালিত হয়। যেমন: ভারতে শিক্ষক দিবস পালিত হয় ৫ সেপ্টেম্বর। অস্ট্রেলিয়ায় অক্টোবর মাসের শেষ শুক্রবার শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়। শেষ শুক্রবার যদি ৩১ অক্টোবর হয়, তা হলে ৭ নভেম্বর শিক্ষক দিবস পালিত হয়। ভুটান শিক্ষক দিবস পালন করে ২ মে, ইন্দোনেশিয়া ২৫ নভেম্বর, মালয়েশিয়া ১৬ মে, ইরান ২ মে, ইরাক ১ মার্চ, আর্জেন্টিনা ১১ সেপ্টেম্বর, ব্রাজিল ১৫ অক্টোবর, চীন ১০ সেপ্টেম্বর, তাইওয়ান ২৮ সেপ্টেম্বর, থাইল্যান্ড ১৬ জানুয়ারি, সিঙ্গাপুর সেপ্টেম্বরের প্রথম শুক্রবার দিনটি পালন করে।
আজ সোমবার (৫ অক্টোবর) বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে শিক্ষক দিবস। সারাবিশ্বের শিক্ষকদের সম্মানে গৃহীত এই দিবস। ‘ভবিষ্যতের সংকট মোকাবিলায় শিক্ষক সমাজ’ - এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।
১৯৯৪ সাল থেকে জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কোর উদ্যোগে প্রতিবছর ৫ অক্টোবর এ দিবসটি উদযাপিত হয়।
এরপর, ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর অক্টোবরের পাঁচ তারিখ বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। শিক্ষকদের অবদান স্মরন করে বিশ্বের অন্তত ১০০ দেশে দিবসটি পালন করা হয়। এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল ও তার সহযোগী ৪০১ সংগঠন দিবসটি উদযাপনে মূল ভূমিকা রাখে।
এদিকে, বিশ্ব শিক্ষক দিবসকে সামনে রেখে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জাতীয়করনের দাবিতে সমাবেশ আহবান করেছেন। ওই সমাবেশে শিক্ষক নেতারা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির উপস্থিতি কামনা করছেন। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করনে লিয়াঁজো ফোরামের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করার কথা রয়েছে।
শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মুজিববর্ষকে অবিস্মরণীয় করে রাখতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন তথা শিক্ষা ব্যবস্থাকে দ্রুত জাতীয়করনের ঘোষণা দিতে হবে।
অন্যদিকে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আয়োজন করে শিক্ষক দিবস পালন করা হলেও বাংলাদেশে অনেকটা নিরবেই উদযাপিত হয়। দিনটিকে সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবি জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি।
শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ২৫ শতাংশ ঈদ বোনাস গত ১৬ বছরেও পরিবর্তন হয়নি। এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া আর ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা নিয়ে করোনাকালে গৃহবন্দি শিক্ষকদের দু:সময় যাচ্ছে। তাই, অবিলম্বে জাতীয়করনের ঘোষণা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
পাশাপাশি, বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আলোচনা সভা আহ্বান করেছেন। সেখানে শিল্পমন্ত্রীসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
নোয়াখালীতে এক নারীকে (৩৭) বিবস্ত্র করে নির্যাতনের এক ভিডিও রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি প্রশাসন ও গণমাধ্যমকর্মীদের নজরে এলে একজনকে আটক করে পুলিশ। গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে ঘটনাটি ঘটে।
Post Written by : Admin
Original Post URL : https://ift.tt/3ni2F89
Post Come trough : নাচোল নিউজ
মনিরুল ইসলাম, সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি: “শিশুর সাথে শিশুর তরে, বিশ্ব গড়ি নতুন করে” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নওগাঁর সাপাহারে বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ -২০২০ উপলক্ষে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে সাপাহার উপজেলা পরিষদ ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার প্রচারে উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকের সামনে ঘন্টাকাল ব্যাপী এক মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত মানবন্ধনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কল্যাণ চৌধুরী, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আল মাহমুদ সহ উপজেলার বিভন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগন উপস্থিত ছিলেন।
Post Written by : Admin
Original Post URL : https://ift.tt/33tnNAg
Post Come trough : নাচোল নিউজ
শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এই দুটি নাম বাংলাদেশের ইতিহাসে এজন্যই স্মরণীয় হয়ে থাকবে, পঁচাত্তর-পরবর্তী বাংলাদেশ গড়ে তোলার ব্যাপারে এই দুই বোনের ভূমিকা অনন্য। শেখ হাসিনার ভূমিকা প্রত্যক্ষ। রেহানার ভূমিকা নেপথ্যের। বঙ্গবন্ধু-হত্যার পর লন্ডনেই প্রথম বাংলাদেশে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন গড়ে ওঠে। শেখ হাসিনা আশির দশকের শুরুতেই দিল্লি থেকে ঢাকায় ফিরে গিয়ে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠন এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন গড়ে তোলার কাজে নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। শেখ রেহানা লন্ডনে অবস্থান করেন এবং বিদেশে আওয়ামী লীগ রাজনীতি তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি তখন নববিবাহিত; স্বামী-সংসার দেখার পাশাপাশি অভিবাসী বাঙালিদের রাজনৈতিক আন্দোলনের দিকেও লক্ষ রাখতেন। তবে নিজে রাজনীতিতে সামনে আসতেন না।
আশির দশকের গোড়াতেই লন্ডনে বঙ্গবন্ধুর অনুসারীদের মধ্যে নানা কারণে ভাঙন ধরে। তখনও আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে পুনর্গঠিত হয়নি। প্রয়াত গউস খান ছিলেন সংগ্রাম পরিষদের নেতা। তার সঙ্গে মতানৈক্য হওয়ায় মোহাম্মদ ইসহাক ও সুলতান শরীফের নেতৃত্বে এক দল আলাদা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। একই আদর্শ ও লক্ষ্য দুই সংগ্রাম পরিষদের। কিন্তু পূর্ব লন্ডনে একই হলে দুই পরিষদ আলাদা হয়ে সভা করত।
এই সময় আমি একটি ব্যাপার লক্ষ করেছি। রেহানার স্বামী শফিক সিদ্দিক খুব চুপিচুপি দুই সংগ্রাম পরিষদের সভাতেই বসতেন। কোনো কথা বলতেন না। আমার বুঝতে বাকি থাকেনি, শেখ রেহানার নির্দেশেই শফিক সিদ্দিক আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সভাতেই যান। অর্থাৎ এই দল ভাগাভাগিতে রেহানার সম্মতি নেই। তিনি চান দুই গ্রুপ মিলেমিশে কাজ করুক।
প্রথমদিকে ব্রিটেনে এবং ইউরোপে আওয়ামী লীগ রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন ড. মোহাম্মদ সেলিম। চার শহীদ জাতীয় নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর বড় ছেলে। সেলিম সপরিবারে লন্ডনেই বসবাস করতেন। তিনি এখন প্রয়াত। তারপর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন শফিক সিদ্দিক। অবশ্য নেপথ্যে আসল নায়িকা রেহানা। রাজনীতিতে শেখ রেহানার কতটা আগ্রহ তা আমি আরও বুঝতে পারি, লন্ডনে বঙ্গবন্ধুর ওপর ‘পলাশী থেকে ধানমণ্ডি’ নাটকটি মঞ্চস্থ করার সময়। এই নাটকের রিহার্সালে নিজে এসে উপস্থিত হতেন। নাটক মঞ্চায়নে অর্থ সাহায্য করেছেন। নাটক থেকে চলচ্চিত্রে রূপায়ণের সময়েও সাহায্য জুগিয়েছেন।
শেখ রেহানা নেপথ্যে থাকলেও রাজনীতিতে কতটা ‘ডিসাইসিব’ ছিলেন, তার প্রমাণ পাই বাংলাদেশে এক-এগারোর সময়। শেখ হাসিনাকে বন্দি করে সাবজেলে নেয়ার পর শেখ মুজিব রিসার্চ সেন্টারের পক্ষ থেকে ‘শেখ হাসিনার মুক্তি চাই’ শীর্ষক একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করি লন্ডনে। যুক্তরাজ্যের আওয়ামী লীগের নেতারা তাতে সহযোগিতা দিতে রাজি হননি। তারা জানালেন, ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক তাদের জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে যেন কোনো আন্দোলন করা না হয়। তাহলে শেখ হাসিনার মুক্তিলাভ আরও বিলম্বিত হবে।
এই ব্যাপারে যুক্তরাজ্য যুবলীগের নেতারা আমাকে জানান, শেখ রেহানার নির্দেশ শেখ হাসিনার মুক্তি দাবিতে আন্দোলন করার। তিনি মনে করেন, আন্দোলন ছাড়া হাসিনাকে কারামুক্ত করা যাবে না। তাদের কথা যে সত্য- তার প্রমাণ পাই, শেখ হাসিনার মুক্তি দাবিতে যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি করি; তাতে শেখ রেহানা তার ছোট মেয়ে রূপন্তি সিদ্দিককে পাঠান এবং তখনকার কিশোরী রূপন্তি সভায় বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং শেখ হাসিনার মুক্তি দাবিতে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেন।
শেখ হাসিনার মুক্তি দাবিতে লন্ডনে যে আন্দোলন হয় তার নেপথ্যে নায়িকা ছিলেন শেখ রেহানা। তার নির্দেশে যুবলীগের নেতাকর্মী এবং আওয়ামী লীগেরও কিছু নেতাকর্মী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। শেখ রেহানার রাজনৈতিক সাহস ও দূরদর্শিতা দেখে আমার মনে হয়েছিল, শেখ হাসিনার পর আওয়ামী লীগের ঐক্য ও সাংগঠনিক শক্তি ধরে রাখার জন্য রেহানাই উপযুক্ত নেত্রী বলে বিবেচিত হবেন। এজন্যই শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ দমনে যখন ব্যতিব্যস্ত, তখন একদিন তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে অনুরোধ জানিয়েছিলাম- হাসিনা, প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি; দুটো পদের দায়িত্বভার বহন করা তোমার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তুমি শেখ রেহানাকে দলের নির্বাহী সভানেত্রী করে নাও। শেখ হাসিনা সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘আমি রাজি। আপনি রেহানাকে রাজি করান। আমি এই মুহূর্তে দলের নির্বাহী সভাপতির পদে তাকে বসাতে তৈরি আছি। আমি তাকে বলেছিলাম। সে বলে, আমি তাহলে এই মুহূর্তে লন্ডনে ফিরে যাব।’
আমিও একবার রেহানাকে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছিলাম। রেহানা হেসে বলেছেন, ‘আমি তো আপনাকে সব সাহায্য দিচ্ছি। তাহলে সামনে গিয়ে মুখ দেখাতে হবে কেন? রেহানার কথাটি সত্য। তিনি যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ইত্যাদি সব সংগঠনের উপদেষ্টা ও অভিভাবক। কিন্তু কোনো পদ গ্রহণে একেবারেই অনাগ্রহী।
বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আমরা জিয়াউর রহমানের ভাড়াটে গুণ্ডাদের হামলা উপেক্ষা করে পূর্ব লন্ডনের ব্রিক লেন মসজিদ ও কনওয়ে হলে পালন করি। দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালনের সময় শেখ রেহানা অনুরোধ জানালেন, তিনি মিচামে একটি হলের ব্যবস্থা করেছেন। আমরা যেন সেখানেই বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীর সভা করি। মিচামে রেহানার বাসা। সুতরাং বাড়ির কাছের অনুষ্ঠানে তার যোগদান সহজ হবে। তিনি আরও জানালেন, এই সভায় অক্সফোর্ড থেকে ড. কামাল হোসেন তার তিন বন্ধুসহ আসবেন।
ড. কামাল হোসেনকে আমরা এই সময় এড়িয়ে চলতাম। বিশেষ করে আমি তার সুবিধাবাদী নীতি ও বর্ণচোরা স্বভাবের জন্য প্রচণ্ডভাবে তাকে অপছন্দ করতে শুরু করি। তিনি যেভাবে নানা অসিলায় আমাদের আন্দোলন হতে দূরে থাকতেন, জেলহত্যার আগে ব্রিটিশ নেতাদের কাছে তাকে টেনে নেয়া যায়নি। এই হত্যা প্রতিরোধের জন্য শেখ রেহানাকে দিল্লি থেকে লন্ডনে আনার ব্যাপারে ইন্দিরা গান্ধীর কাছে লেখা চিঠিতে সই দিতে রাজি হননি। সর্বোপরি, জেল হত্যার পর চার জাতীয় নেতার জন্য আমরা লন্ডনে যে শোকসভা করেছিলাম, তাতে এসে তার পালিয়ে যাওয়া ইত্যাদির জন্য আমার মনে তার সম্পর্কে প্রচণ্ড ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু এখন শেখ রেহানা যে তার সঙ্গে অক্সফোর্ডে যোগাযোগ স্থাপন করেছেন, তাকে ‘বিগ আঙ্কেল’ ডেকে তার কাছে রাজনৈতিক পরামর্শ চাইতে শুরু করেছেন, তা আমরা জানতাম না।
পরে জেনেছি, শেখ রেহানা স্বামী শফিক সিদ্দিককে ড. কামালের কাছে নিয়মিত পাঠান। আমি ব্যাপারটা জেনে বিস্মিত হলেও শেখ রেহানার রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তায় খুশি হয়েছি। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আওয়ামী লীগের এই দুর্দিনে কামাল হোসেনের মতো আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিত, পিতৃবন্ধু এক রাজনৈতিক নেতাকে দু’বোনই হারাতে চান না। সুতরাং বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে ড. কামাল ও তার তিন বন্ধুকে আনার ব্যবস্থা করে রেহানা ভালো কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যে চারজন (ড. কামাল, ড. মোশাররফ হোসেন, রেহমান সোবহান ও ড. নূরুল ইসলাম) অক্সফোর্ডে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন, তাদের আমি নাম দিয়েছিলাম ‘গ্যাঙ অব মোর’। পরে তাদের সঙ্গে এসে যোগ দেন গওহর রিজভী। তাকে আমি ড. কামাল হোসেনের প্রতিচ্ছায়া হিসেবে দেখেছি।
যা হোক, মিচামের কমিউনিটি হলে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীর সভা শুরু হল। কিন্তু ড. কামাল হোসেন নেই। রেহানার মুখ শুকনো। আমাকে বললেন, কামাল আঙ্কেল তো আসেননি। আমি মনে মনে হেসেছি; কোনো কথা বলিনি। সভার এককোণে দেখলাম, ড. মোশাররফ হোসেন টুপি মাথায় চুপচাপ বসে আছেন। জিজ্ঞেস করলাম, মোশাররফ ভাই, আপনাদের বন্ধু ড. কামাল হোসেন কই? মোশাররফ হোসেন থতমত খেয়ে বললেন, ‘ও তো আসতে প্রস্তুত হয়েছিল; হঠাৎ নিউইয়র্ক থেকে এক জরুরি সভার চিঠি পেয়ে চলে গেছে। ওর হয়ে আমি তো এসেছি।’ বললাম, মোশাররফ ভাই, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীর সভার চেয়ে তার কাছে নিউইয়র্কের সভা বেশি জরুরি হয়ে গেল? মোশাররফ হোসেন আমার কথার জবাব দেননি। আমার ধারণা, ড. কামাল হোসেন ও পরবর্তীকালে বিচারপতি সাহাবুদ্দীনকে বিশ্বাস করার ফল দু’বোন হাতে হাতে পেয়েছেন। তবে এই ব্যাপারে তারা রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দেখিয়েছেন।
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনের প্রথম সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন আমিই করেছিলাম। আজ তার চারপাশে লোকলস্করের অভাব নেই। সেদিন তার সঙ্গে আমরা চার-পাঁচ জন ছাড়া কেউ ছিলেন না। প্রথম সংবাদ সম্মেলনটির ব্যবস্থা করেছিলাম লন্ডনের বেকার স্ট্রিটের কাছে ‘লাইট অব ইন্ডিয়া’ রেস্টুরেন্টে। এর মালিক ছিলেন আমাদের বন্ধু। তিনি এই সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশিত খাবারের দাম নেননি।
শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে এখন দেশি-বিদেশি সংবাদিকদের দারুণ ভিড়। কিন্ত সেদিন আমন্ত্রণ জানানো সত্ত্বেও লন্ডনের ডেইলি মিরর এবং ডেইলি মর্নিং স্টার ছাড়া আর কোনো পত্রিকার সাংবাদিক শেখ হাসিনার প্রেস কনফারেন্সে আসেননি। আর এসেছিলেন বিবিসি রেডিও’র বাংলা বিভাগের সিরাজুর রহমান। তিনি অবশ্য এসেছিলেন নানা অবান্তর প্রশ্ন করে শেখ হাসিনাকে বিব্রত করার জন্য। কিন্তু শেখ হাসিনা বিব্রত হননি। তিনি একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিকের মতো তার সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন।
সেই আশির দশকের গোড়ার আরেকটি ঘটনার কথা বলি। বাংলাদেশে স্বৈরাচার নিপাতের যে আন্দোলন লন্ডনে তখন চলছিল, তাতে সমর্থন জানিয়ে সুইডেনে নিযুক্ত আমাদের রাষ্ট্রদূত আবদুর রাজ্জাক পদত্যাগ করে সুইডেনেও এই আন্দোলন গড়ে তোলেন। সুইডেনের তৎকালীন সরকার ছিলেন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে। আবদুর রাজ্জাক সুইডিস এমপি’দের সহযোগিতায় এই আন্দোলনের সমর্থনে স্টকহোমে একটি সম্মেলনের আয়োজন করেন। শেখ হাসিনা এই সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। তিনি তখন ঢাকায়।
এ সময় একদিন সকালে শফিক সিদ্দিক আমার বাসায় এসে হাজির। বললেন, হাসিনা আপা তো স্টকহোম সম্মেলনে যেতে পারবেন না। তাই তিনি সম্মেলনে তার বাণী পাঠাবেন। আপনাকে এই বাণীটি লিখে দিতে হবে। আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেছি। আমি বঙ্গবন্ধুরও ডিকটেনশন অনুযায়ী তার কয়েকটি ভাষণ লিখেছি। এখন তার কন্যার বাণী লিখব।
আমি এই বাণীর এক জায়গায় লিখেছিলাম, ‘সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়ে আমার পিতাকে হত্যা করে।’ এই বাণীটি দেখে দেয়ার জন্য ড. কামাল হোসেনকে দেয়া হলে তিনি সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থানের কথা কেটে সেখানে যোগ করে দেন- ‘সামরিক বাহিনী থেকে বহিষ্কৃত একদল বিপথগামী সামরিক অফিসারের দ্বারা’- এই কথা কয়টি। স্টকহোম সম্মেলনে এই বাণী পঠিত হয়। ড. কামাল হোসেন পরে তার বিভিন্ন বক্তৃতা-বিবৃতিতে দাবি করেছেন, এই বাণী তিনি লিখে দিয়েছিলেন।
নিজের ঢাক পেটানোর জন্য নয়; হাসিনা ও রেহানার চরিত্র-বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণের জন্যই অতীত ইতিহাসের কিছু ঘটনা উল্লেখ করলাম। ১৯৮১ সালে লন্ডনের ইয়র্ক হলে শেখ হাসিনাকে দেয়া প্রথম সংবর্ধনা সভায় ব্রিটিশ লেবার পার্টির নেতা প্রয়াত পিটার মোর সর্বপ্রথম শেখ হাসিনাকে ‘বাংলাদেশের ভাবি প্রধানমন্ত্রী’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। সে কথা সত্য হয়েছে। শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশের নন, সারা দক্ষিণ এশিয়ার একজন সেরা পলিটিক্যাল স্টেটসম্যান’ হিসেবে পরিচিত। তার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতির আজ অন্ত নেই। তিনি একটানা তিন দফা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। চতুর্থ দফাতেও তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, আশা করা যায়। অন্যদিকে শেখ রেহানাও আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত। তার এক কন্যা টিউলিপ সিদ্দিক এখন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য। লেবার পার্টি ক্ষমতায় গেলে টিউলিপ নিশ্চিতভাবে মন্ত্রী হবেন। শেখ হাসিনারও জননেত্রী হিসেবে গড়ে ওঠার পেছনে ছোট বোন শেখ রেহানার অবদান কম নয়।
আমার গর্ব, আমি এই ইতিহাসের একজন গর্বিত সাক্ষী। এই ইতিহাস সবটা লিখতে গেলে একটা মহাভারত হবে। তাই তার অংশ মাত্র লিখে কলম এখানেই থামালাম। আমি এই দুই বোনের দীর্ঘ আয়ু এবং আরও সমৃদ্ধি কামনা করি। (সমাপ্ত)
লণ্ডন, ৪ অক্টোবর, রোববার ২০২০
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম
Post Written by :
Original Post URL : https://ppbd.news/open-views/175723/হাসিনা-ও-রেহানা-:-অ-রূপকথার-দুই-বোন-(২)
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD
রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদেরও একটা ব্যক্তিজীবন থাকে। রাজনীতিটাই তাদের জীবনে বড় হয়ে ওঠে বলে রাজনৈতিক জীবনের আড়ালে তাদের ব্যক্তিজীবন ঢাকা পড়ে যায়। এই ব্যক্তি জীবনটি জানা না গেলে এই নেতা-নেত্রীদেরও আসল চরিত্রটি খুঁজে পাওয়া যায় না। আজ ২৮ সেপ্টেম্বর জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন। তিনি ৭৩ পেরিয়ে চুয়াত্তর বছরে পা দেবেন। এই একই সেপ্টেম্বর মাসে শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার জন্ম। বড় বোনের চাইতে তিনি দশ বছরের ছোট। তার জন্ম ১৯৫৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর।
বাংলাদেশের রাজনীতির দণ্ডমুণ্ডের কর্ত্রী এখন এই দুই বোন। শেখ হাসিনা প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে আছেন। শেখ রেহানা থাকেন নেপথ্যে। শেখ রেহানা রাজনীতিতে নেই বলে যারা ভাবেন তারা সঠিক তথ্যটি জানেন না। শেখ হাসিনা দেশ চালান। আর শেখ রেহানা পেছনে বসে প্রতিটি সমস্যা ও সংকটে বোনকে সাহস জোগান। রাজনৈতিক জীবনের আড়ালে এই দুই বোনের ব্যক্তিজীবন। তাদের কৈশোর থেকে কিছুটা জানি বলে শেখ রেহানার নেপথ্য রাজনৈতিক ভূমিকার কথাও কিছু জানি।
বঙ্গবন্ধু যখন বেঁচে ছিলেন, তখন ৩২ নম্বরে আমার ছিল অবাধ যাতায়াত। তবু আজ কবুল করব, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দীর্ঘ সাহচর্য সত্ত্বেও তিনি, ভাবি (মুজিব পত্নী), তাদের ছেলে শেখ কামালের সঙ্গে আমার যে ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল, তা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার সঙ্গে হয়নি। বত্রিশ নম্বরে গেলে মাঝে মাঝে তাদের দেখা পেতাম, শেখ হাসিনা হয়তো বই-খাতার ব্যাগ হাতে কলেজে যাচ্ছেন। রেহানা ছোট ভাই রাসেলের সঙ্গে খেলা করছেন। এর বেশি কিছু নয়।
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর এই সর্বস্বহারা দুই বোনের সঙ্গে আমার প্রত্যক্ষ পরিচয় হয়। শেখ হাসিনার সঙ্গে পরিচয়টা তেমন গভীর হয়নি। কিন্তু রেহানার সঙ্গে হয়েছিল। তাকে আমি মা ডাকতে শুরু করি। ১৯৭৬ সালে আমরা বঙ্গবন্ধুর কিছু অনুসারী মিলে দেশে সামরিক শাসন উচ্ছেদের লক্ষ্যে লন্ডনে একটি সংগ্রাম পরিষদ গঠন করি এবং এই সংগ্রাম পরিষদের মুখপত্র হিসেবে ‘বাংলার ডাক’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করি। এই সময় বঙ্গবন্ধুর এক সম্পর্কিত ভাই মমিনুল হক (খোকা) লন্ডনে অবস্থান করছিলেন, তিনি আমাদের আন্দোলনে সম্পর্কিত হন। সম্ভবত তিনি লন্ডনে আমার রাজনৈতিক কার্যকলাপ সম্পর্কে শেখ হাসিনাকে জানিয়েছিলেন। কিছুদিন পর খোকা ভাই আমাদের জানালেন, শেখ হাসিনা তাকে একটি চিঠি লিখেছেন। চিঠিটা তিনি আমাকে দেখালেন।
চিঠিটা পড়ে বুঝলাম, আমরা লন্ডনে আন্দোলন শুরু করায় তিনি খুশি হয়েছেন। আমার নাম উল্লেখ করে হাসিনা তার চিঠিতে লিখেছেন, ‘তাকে জানাবেন, হত্যাকারীরা সুলতানাকে (শেখ কামালের নববিবাহিত বধূ) হত্যা করে তার সোনার অলঙ্কারগুলোও নিয়ে গেছেন।’ গোটা চিঠিটাতেই ছিল একজন পরিবার-পরিজনহারা নির্বান্ধব নারীর আর্ত-হাহাকার এবং সেই সঙ্গে শহীদ পিতার আদর্শ রক্ষায় অটল থাকার অঙ্গীকারের কথা। তিনি লিখেছিলেন, ‘লন্ডনের আন্দোলনে আমি যে কোনোভাবে সাহায্য জোগাতে রাজি আছি।’ শেখ হাসিনা তখন জার্মানিতে। সহায়-সম্বলহীন তার অবস্থা। ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। ছোট বোন রেহানার শোক সামলাতে পারছেন না। সেই অবস্থাতেও তার মনের দৃঢ়তা দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম।
লন্ডনে আমাদের আন্দোলন যখন তুঙ্গে, বঙ্গবন্ধুর হত্যা ষড়যন্ত্রের নেতা জেনারেল জিয়াউর রহমানের লন্ডন সফর ব্যর্থ করে দিতে পেরেছি, তখন একদিন খোকা ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ। কথা প্রসঙ্গে বললাম, আমরা বিদেশে বসে তো যথেষ্ট আন্দোলন করছি, দেশের মানুষও জেগে উঠছে। যদি সামরিক শাসনের পতন হয় এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যায়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী হবেন কে?
খোকা ভাই সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলেন, কেন শেখ হাসিনা! আমার বিস্ময়ের অন্ত ছিল না। আমি ভেবেছিলাম, খোকা ভাই ড. কামাল হোসেন, আবদুস সামাদ আজাদ বা এই ধরনের কারও নাম বলবেন। তিনি ঝট করে শেখ হাসিনার নাম বললেন। তখন অল্প বয়স তার। রাজনীতি সম্পর্কে তেমন অভিজ্ঞ নন; তিনি কী করে এখনই একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন, তা আমি ভাবতে পারিনি। আরও বয়স হলে, অভিজ্ঞ হলে শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। যেমন, ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তবে শেখ হাসিনা এই বয়সে, এই সময়ে নয়। এটি ছিল আমার তখনকার ধারণা। আমার এই ধারণাটা অবশ্য পরে ভেঙে যায়।
আমি সেদিন খোকা ভাইকে বলেছিলাম, শেখ হাসিনার তো বয়স কম, অভিজ্ঞতা কম, তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন কীভাবে? খোকা ভাই বললেন, রাজনীতিতে শেখ হাসিনার অভিজ্ঞতা আছে। তিনি ইডেন কলেজের ছাত্রী পরিষদের সহসভাপতি ছিলেন না? আমি বলেছি, ইডেন কলেজের ছাত্রী পরিষদের নেতা হওয়া এবং একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়া কি এক কথা? খোকা ভাই বললেন, হাসিনাকে আপনি চেনেন না। চিনলে এ কথা বলতেন না। খোকা ভাই যে সেদিন আমাকে কতটা সত্য কথা বলেছেন, সেটা পরে বুঝতে পেরেছি।
শেখ রেহানার কথায় আসি। বাংলাদেশের এক জবরদস্ত ব্যুরোক্রাট, সম্ভবত নাম ছিল মইনুল ইসলাম, আমরা ডাকতাম মামা। বঙ্গবন্ধুও তাকে ডাকতেন মামা। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তিনি ম্যানচেস্টারে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। আমাদের আন্দোলনে উপদেশ ও অর্থ দিয়ে এবং আরও নানাভাবে সাহায্য করতেন। একদিন তার ম্যানচেস্টারের বাসায় বসে খোকা ভাই আমাকে বললেন, গাফ্ফার ভাই, রেহানাকে লন্ডনে আমার বাসায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। দিল্লিতে দুই বোনই নিরাপদ আছে। কিন্তু রেহানাকে নিয়ে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে।
বললাম, কীভাবে আনবেন? ইন্দিরা গান্ধী কি তাকে নিরাপত্তাবিহীনভাবে লন্ডনে আসতে দিতে রাজি হবেন? খোকা ভাই বললেন, যদি বিদেশের আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতারা ইন্দিরা গান্ধীকে রেহানার নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে চিঠি লেখেন, তিনি তাহলে রাজি হবেন। আমি ভাবছি ড. কামাল হোসেনের কাছে আপনাদের সবাইকে নিয়ে যাব। আপনারা সবাই মিলে একটা চিঠি ইন্দিরা গান্ধীর কাছে পাঠালে তিনি রেহানাকে দিল্লি থেকে লন্ডনে আসতে সম্মতি দেবেন। এখানকার স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডও বলেছে, তারা রেহানাকে নিরাপত্তা দেবেন।
হাসিনা-রেহানা দুই বোনই তখন জার্মানি থেকে দিল্লিতে চলে গেলেন। খোকা ভাই বললেন, শেখ হাসিনা এখন আসবেন না। আগে রেহানা আসবেন। আমরা ইন্দিরা গান্ধীর কাছে পাঠানোর জন্য একটা চিঠি ড্রাফট করলাম। ঠিক হল তাতে সই করবেন ড. কামাল হোসেন, গউস খান (তখন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি) এবং আমি। এক প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টির দিনে আমি, গউস খান, এমআর আখতার মুকুল অক্সফোর্ডে ড. কামাল হোসেনের বাসায় যাই। তিনি নানা অজুহাত দেখিয়ে চিঠিতে সই দিতে অসম্মত হন। আমি তার ওপর অত্যন্ত রেগে গিয়েছিলাম। আমাকে শান্ত করেন ড. মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, কামাল সই না দিক। আমি দেব। আমরা তার সই নিয়ে লন্ডনে ফিরে আসি। চিঠিটা ইন্দিরা গান্ধীকে পাঠানো হয়।
এরপর শেখ রেহানা কবে লন্ডনে এসে পৌঁছেছেন, তা আমি জানি না। তার নিরাপত্তার কঠোর ব্যবস্থা করেছিলেন খোকা ভাই। রেহানা যে লন্ডনে এসেছেন এবং তার বাড়িতেই অবস্থান করছেন, তা আমাকেও জানতে দেননি। একদিন আমি কী কাজে খোকা ভাইয়ের বাসায় টেলিফোন করেছি, একটি মেয়েলি কণ্ঠ জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কে বলছেন? বললাম, আমি গাফ্ফার চৌধুরী বলছি। সঙ্গে সঙ্গে জবাব এলো, ‘চাচা, আমি রেহানা বলছি।’ আমি থ’। রেহানা লন্ডনে আছেন- এ ধারণা আমার ছিল না। বললাম, রেহানা, তুমি লন্ডনে? কবে এসেছো? রেহানা বললেন, মাসখানেক হয়। জিজ্ঞাসা করলাম, কেমন আছো? রেহানা বললেন, ‘আমরা সব হারিয়েছি। কেমন অবস্থায় থাকতে পারি আপনিই চিন্তা করুন। আপনি ছাড়া আমাদের সহায় আর কে আছে?
তার কথায় আমার চোখে পানি এসেছিল। যে নেতার ডাকে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ (তখনকার) উঠত এবং বসত; তার কন্যা কিনা আজ আমার মতো সামান্য এক সাংবাদিককে বলছেন, আমি ছাড়া তাদের কোনো সহায় নেই।
বললাম, মা, আমি যতদিন বেঁচে আছি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে সরব না। তোমাদের পাশে সব সময় থাকব।
আজ ৯০ বছরের কাছাকাছি এসে আমার জীবনের একটাই সন্তোষ, বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে আমি বাংলাদেশে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকতে দেখে যেতে পারছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধরে রাখার ব্যাপারে আমি নানা অপবাদ, দুর্নাম সহ্য করেও অঙ্গীকার ভঙ্গ করিনি।
আরও পরের কথায় আসি। লন্ডনে এক বাঙালি ছেলের সঙ্গে রেহানারা বিয়ের ব্যবস্থা অত্যন্ত গোপনীয়তা এবং দ্রুততার মধ্যে সম্পন্ন হল। এই তরুণ শফিক সিদ্দিককে দেখলাম, খুবই সুদর্শন, শিক্ষিত এবং ভদ্র স্বভাবের মানুষ। শফিক যে রেহানার মনের মানুষ হবেন, তাতে আমার কোনো সন্দেহ রইল না।
খোকা ভাই আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি শফিককে চেনেন? আমাদের জিল্লুর রহমান (পরবর্তীকালে রাষ্ট্রপতি) ভাইয়ের আত্মীয়। আমি যে শফিক সিদ্দিককে সামনা-সামনি না চিনলেও নামে চিনি, এ কথা তাকে বললাম না। শফিক সিদ্দিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালে ছিলেন কট্টর চীনাপন্থী ছাত্র ইউনিয়নের একটি অংশের সঙ্গে জড়িত। এরা ছিলেন প্রচণ্ডভাবে মুজিববিরোধী। সেই চীনাপন্থী ছাত্র ইউনিয়নের নেতা কী করে রেহানাকে বিয়ে করেন? তাহলে কি ‘বঙ্গবন্ধুর জামাই’ হওয়ার লোভে তার এই আদর্শ ত্যাগ?
আমি পরে শফিক সিদ্দিকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হওয়ার পর তাকে রেহানাকে বিয়ে করার কারণ খোলাখুলি জিজ্ঞাসা করেছি। শফিক বললেন, না, আমি বঙ্গবন্ধুর জামাই হওয়ার লোভে রেহানাকে বিয়ে করিনি। তাকে বিয়ে করার বহু আগে আমি চীনাপন্থী তথা পিকিংপন্থীদের মারাত্মক ভুল বুঝতে পেরেছিলাম। বুঝতে পেরেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর আদর্শই হচ্ছে বাঙালির মুক্তির একমাত্র পথ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি আমার আগ্রহের কারণ দর্শিয়ে আমি একটা বই লিখেছি। নাম ‘একজন সাবেক পিকিংপন্থীর জবানবন্দী’। আপনার বাংলার ডাক পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে ছাপবেন?
আমি শফিক সিদ্দিকের লেখাটি ‘বাংলার ডাকে’ ধারাবাহিকভাবে ছেপে ছিলাম। তার লেখায় মুনশিয়ানা ছিল। তখনকার বাংলাদেশের অনেক চীনপন্থীর মুখোশ উন্মোচন করেছেন। তথ্য ও যুক্তি দিয়ে তাদের রাজনীতি যে ভুলপথের রাজনীতি ছিল, তা দেখানো হয়েছিল। এই লেখাটি বই আকারে প্রকাশিত হলে একটি চমৎকার রাজনৈতিক গ্রন্থ হতো।
বিয়ের পরও শেখ রেহানাকে কষ্টকর জীবনযাপন করতে হতো। শফিক সিদ্দিক তখনও ছাত্র। আয়-উপার্জন তেমন নেই। বন্ধুর সঙ্গে যুক্তভাবে লন্ডনের মিচাম এলাকায় ঘরভাড়া করে বাস করেন। ওই বাসায় আমি কয়েকবার গেছি। একেবারেই সাধারণ সাদামাটা জীবন। তার মধ্যেও শেখ রেহানা হাসি-খুশি।
ভেবেছিলাম, শেখ হাসিনা তো রাজনীতির দিকে ঝুঁকেছেন। শেখ রেহানা হয়তো ঝুঁকবেন না। ঘর-সংসার নিয়েই তুষ্ট থাকবেন। কিছুদিনের মধ্যেই বুঝলাম, বঙ্গবন্ধুর রক্ত যে মেয়ের শরীরে, তিনি রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে পারেন না। একদিন আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেনে সেন্ট্রাল লন্ডন থেকে এ জোয়ারে নিজের বাসায় ফিরছি, কিলবার্নে এসে ট্রেন বদল করতে হয়; দেখি শেখ রেহানা প্লাটফরমে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি বিপরীতগামী ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলেন। তার হাতের ঝুলিতে ডজনখানেক কমলা। আমাকে দেখে কাছে এলেন। বললাম, তুমি এখানে কেন? রেহানা বললেন, আমি এখানে একটা অফিসে কাজ করি।
আমি বিস্মিত হয়ে তার দিকে তাকালাম। পরনে একটা আটপৌরে শাড়ি। গায়ে জ্যাকেট। দেখে আমার কষ্ট হল। বঙ্গবন্ধুর কন্যা। এখন বাস আর ট্রেনে চলাফেরা করেন। সাধারণ একটি চাকরি করেন। আমার চিন্তায় বাধা পড়ল রেহানার কথায়। কমলার থলেটা আমার হাতে দিয়ে বললেন, এটা চাচিকে (আমার স্ত্রীকে) দেবেন। বললাম, তোমাদের এখন এই অবস্থা। তার মধ্যে সব কমলা আমাকে দিচ্ছ। রেহানা বললেন, আপনাকে নয়; চাচিকে দিচ্ছি।
তারপর কথা না থামিয়ে বললেন, ইস্ট লন্ডনে জিয়ার বিরুদ্ধে আপনাদের আন্দোলন কেমন চলছে। বললাম, ভালোই। রেহানা বললেন, এখন আমাদের এক হওয়া দরকার। গউস খান ও সুলতান শরিফের মধ্যে বিবাদটা মিটিয়ে দিন। বুঝলাম, পূর্ব লন্ডনে আমাদের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সব খবরই রেহানা রাখেন। তার ট্রেন তখনও আসেনি। বললেন, আপনি বাবাকে নিয়ে ইংরেজিতে (Sheikh Mujib : a commemorative) যে বইটা বের করেছেন, আমাকে কয়েক কপি দেবেন? বললাম, তুমি বই নিয়ে কী করবে? রেহানা বললেন, একটা আমার কাছে রাখব। বাকিগুলো বন্ধু-বান্ধবদের দেব। বললাম, তোমার বাসায় পৌঁছে দেব। ট্রেন এসে গিয়েছিল। রেহানা ট্রেনে গিয়ে উঠলেন। আমার ট্রেন তখনও আসেনি। আমি তার ট্রেনের দিকে তাকিয়ে রইলাম। বুঝতে বাকি রইল না, শেখ হাসিনা রাজনীতিতে হতে যাচ্ছেন প্রকাশ্য নায়িকা। শেখ রেহানাও হবেন রাজনীতির নেপথ্যের নায়িকা। (দ্বিতীয় অংশে সমাপ্য)
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম
Post Written by :
Original Post URL : https://ppbd.news/open-views/175722/হাসিনা-ও-রেহানা-:-অ-রূপকথার-দুই-বোন
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD
গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন: প্রধান আসামি বাদল ও দেলোয়ার গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিবেদক
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে মধ্যযুগীয় কায়দায় গৃহবধূকে বাবার বাড়িতে ধর্ষণ চেষ্টা, নির্যাতন ও শ্লীলতাহানি ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি বাদলকে ঢাকা থেকে এবং আরেক আসামি দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে অস্ত্রসহ নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সোমবার (৫ অক্টোবর) সকালে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. ক. আশিক বিল্লাহ জানান, বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাদের দু’জনকে রোববার (৪ অক্টোবর) রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুজনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এর আগে এ ঘটনায় আরো দুইজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ফলে এ ঘটনায় মোট চারজন গ্রেপ্তার হলো।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার নূর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে গৃহবধূর বসতঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রাখে স্থানীয় বাদল ও তার সহযোগীরা। এরপর গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করে তারা। এ সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তারা বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিও চিত্র ধারণ করে।
ঘটনার ৩২ দিন পর রোববার (৪ অক্টোবর) দুপুরে নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। রাতেই এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়। মামলার পরই গ্রেপ্তার হয় দুজন।
ভাইরাল ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, নির্যাতনকারীরা ওই গৃহবধূর পোশাক কেড়ে নিয়ে তার বিরুদ্ধে কিছু একটা বলতে থাকে। তিনি প্রাণপণে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করেন এবং হামলাকারীদের ‘বাবা’ ডাকেন, তাদের পায়ে ধরেন। কিন্তু, তারা ভিডিও ধারণ বন্ধ করেনি। বরং হামলাকারীদের একজন তার মুখমণ্ডলে লাথি মারে ও পা দিয়ে মুখসহ শরীর মাড়িয়ে দেয়। এরপর একটা লাঠি দিয়ে মাঝে মাঝেই আঘাত করতে থাকে। এসময় ঘটনাটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার উল্লাস প্রকাশ করে ‘ফেসবুক’ ‘ফেসবুক’ বলে চেঁচায় আরেকজন।
Post Written by :
Original Post URL : https://ppbd.news/national/175721/গৃহবধূকে-বিবস্ত্র-করে-নির্যাতন:-প্রধান-আসামি-বাদল-ও-দেলোয়ার-গ্রেপ্তার
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD