বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে নাম প্রত্যাহারের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে নাম প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলো যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে সদস্যপদ থেকে নাম প্রত্যাহারের কথা জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানিয়েছে দেশটি।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে নাম প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলো যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে সদস্যপদ থেকে নাম প্রত্যাহারের কথা জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানিয়েছে দেশটি।
মঙ্গলবার (৭ জুলাই) এক সিনেটর জানান, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগে সদস্যপদ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
পররাষ্ট্র সম্পর্ক কমিটির শীর্ষ ডেমোক্রেট সিনেটর রবার্ট মেনেন্দেজ টুইটারে লিখেছেন, ‘মহামারির মাঝে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম মার্কিন প্রেসিডেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বলে জানতে পেরেছে কংগ্রেস।’
করোনাভাইরাস নিয়ে চীনের পক্ষপাতিত্ব করায় আগেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (ডব্লিউএইচও) অর্থ সাহায্য বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আমেরিকা। আরও এক ধাপ এগিয়ে মে মাসের শেষ দিকে তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় তারা। জাতিসংঘের সংস্থাকে অভ্যন্তরীণ সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়ার পর তাতে সাড়া না পাওয়ায় এ পদক্ষেপের কথা জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
মে মাসের শুরুতে চীনের ওপর নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে ডব্লিউএইচওকে আল্টিমেটাম দেন ট্রাম্প। তার দাবি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অভ্যন্তরীণ সংস্কারে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছে এবং চীনা নির্ভরতা কাটাতে পারেনি। এ কারণে সম্পর্ক ছিন্ন করার মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হলো।
প্রতিষ্ঠানকে এতদিন ধরে দেওয়া বার্ষিক ৪৫ কোটি ডলার এখন থেকে অন্য সংস্থার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জরুরি স্বাস্থ্য প্রকল্পে ব্যয় করা হবে জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। ওই ঘোষণার এক মাসেরও বেশি সময় পর আনুষ্ঠানিকভাবে নাম প্রত্যাহার করে নিলো আমেরিকা।
বাতাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে করোনাভাইরাস (কভিড-১৯)- দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা। এ ঝুঁকির বিষয়ে বিশ্ববাসীকে যথাযথভাবে সতর্ক করতে পারেনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)। এই অভিযোগ করে ডাব্লিউএইচওর উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি লিখেছেন সম্প্রতি বিশ্বের ২৩৯ বিজ্ঞানী। চিঠি পেয়ে বিষয়টি নতুন করে যাচাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডাব্লিউএইচও।
মঙ্গলবার (৭ জুলাই) এক ব্রিফিংয়ে ডাব্লিউএইচও জানিয়েছে, সংস্থাটির বিশেষজ্ঞ কমিটি ভাইরাসটির সংক্রমণ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করবে এবং এ বিষয়ে তথ্য হালনাগাদ করবে কয়েক দিনের মধ্যেই।
সংস্থাটির সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান ড. বেনডেট্টা অ্যালিগরানজি বলেন, ‘বায়ুর মাধ্যমে রোগটির ছড়ায় বিশেষ করে জনবহুল, আবদ্ধ, পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল করেনা এমন এলাকায়- এমন দাবি বাতিল করা যায় না।’
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাতাসে দীর্ঘক্ষণ করোনাভাইরাস টিকে থাকে এবং বাতাসের মাধ্যমে তা মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। তবে শুধু বাতাসের মাধ্যমে নয় আরো একটি পদ্ধতিতে করোনাভাইরাস ছড়ায়, সেটি হলো চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ করা।
করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার এ দুটি পদ্ধতিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে ডাব্লিউএইচও ও যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন। সংস্থাদুটি বলছে, সংক্রমণের একটি পদ্ধতি হলো কাছাকাছি থাকা কোনো সংক্রমিত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসের খুদে কণা (ড্রপলেট) নিঃশ্বাসের মাধ্যমে আরেকজনের শরীরে ঢুকে যাওয়া এবং আরেকটি পদ্ধতি হলো করোনাভাইরাসে দূষিত কোনো কিছু স্পর্শ করে ওই হাতের মাধ্যমে চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ করা।
ড্রপলেটের মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়ার কথা ডাব্লিউএইচও এতদিন স্বীকার করলেও সংস্থাটি বলে আসছে, শুধু ইনটিউবেশনের (রোগীর শ্বাসতন্ত্রে বিশেষ টিউব প্রবেশ করানোর মাধ্যমে চিকিৎসা) মতো চিকিৎসা কার্যক্রমের সময় ড্রপলেটের মাধ্যমে সংক্রমণের ঘটনা ঘটতে পারে।
ডাব্লিউএইচওর এ অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে গবেষকদের একটি দল বলছে, ড্রপলেটে থাকা করোনাভাইরাস দীর্ঘক্ষণ বাতাসে টিকে থাকতে পারে এবং তা বাতাসে ভেসে অনেক দূর পর্যন্ত চলে যেতে পারে। ওই দূরত্ব কয়েক মিটার পর্যন্ত হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে নাম প্রত্যাহারের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে নাম প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলো যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে সদস্যপদ থেকে নাম প্রত্যাহারের কথা জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানিয়েছে দেশটি।
আন্তর্জাতিক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে নাম প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলো যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে সদস্যপদ থেকে নাম প্রত্যাহারের কথা জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানিয়েছে দেশটি।
মঙ্গলবার (৭ জুলাই) এক সিনেটর জানান, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগে সদস্যপদ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
পররাষ্ট্র সম্পর্ক কমিটির শীর্ষ ডেমোক্রেট সিনেটর রবার্ট মেনেন্দেজ টুইটারে লিখেছেন, ‘মহামারির মাঝে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম মার্কিন প্রেসিডেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বলে জানতে পেরেছে কংগ্রেস।’
করোনাভাইরাস নিয়ে চীনের পক্ষপাতিত্ব করায় আগেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (ডব্লিউএইচও) অর্থ সাহায্য বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আমেরিকা। আরও এক ধাপ এগিয়ে মে মাসের শেষ দিকে তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় তারা। জাতিসংঘের সংস্থাকে অভ্যন্তরীণ সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়ার পর তাতে সাড়া না পাওয়ায় এ পদক্ষেপের কথা জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
মে মাসের শুরুতে চীনের ওপর নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে ডব্লিউএইচওকে আল্টিমেটাম দেন ট্রাম্প। তার দাবি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অভ্যন্তরীণ সংস্কারে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছে এবং চীনা নির্ভরতা কাটাতে পারেনি। এ কারণে সম্পর্ক ছিন্ন করার মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হলো।
প্রতিষ্ঠানকে এতদিন ধরে দেওয়া বার্ষিক ৪৫ কোটি ডলার এখন থেকে অন্য সংস্থার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জরুরি স্বাস্থ্য প্রকল্পে ব্যয় করা হবে জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। ওই ঘোষণার এক মাসেরও বেশি সময় পর আনুষ্ঠানিকভাবে নাম প্রত্যাহার করে নিলো আমেরিকা।
মহামারি করোনাভাইরাস তাণ্ডব চালাচ্ছে বিশ্বজুড়ে। সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। বিশেষ করে করোনা হাসপাতালের চিকিৎসকরা তো দম ফেলারও ফুরসত্ পাচ্ছেন না। ভারতের মহারাষ্ট্রের দুই জুনিয়র চিকিৎসকও এর বাইরে নন। তারাও করোনা আক্রান্তদের জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফলে অঙ্গরাজ্যটির রাজধানী শহর মুম্বাইয়ের সিওন হাসপাতালে করোনা রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে পিছিয়ে যায় তাদের বিয়েও। অবশেষে সেই হাসপাতালেই সারলেন নিজেদের বিয়ে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, মহারাষ্ট্রে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে মুম্বাইয়ের অবস্থা সবচেয়ে বেশি নাজুক। ফলে প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও পরস্পরকে আপন করে নিতে পারছিলেন না ডা. রিম্পি নাহারিয়া (২৯) ও ডা. সারজেরাও সোনুনে (৩০)। করোনা রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়ে বারবার পিছিয়ে যায় এ দুই অ্যানাসথেসিওলজিস্টের বিয়ে। অবশেষে ঠিক হলো বিয়েটা করেই ফেলবেন তারা। তবে বিয়ের সব আয়োজন হবে তাদের কর্মস্থল হাসপাতালেই।
রিম্পি ও সারজেরার বিয়ের গায়ে হলুদ উপলক্ষে ফুল দিয়ে সাজানো হয় হাসপাতালের হোস্টেলের অষ্টম তলা। করোনায় যখন হাসপাতালে শুধুই মৃত্যু আর কান্নার আহাজারি, সেখানে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে আনন্দের এক টুকরো বাতাস বয়ে আনল এই বিয়ের অনুষ্ঠান।
চিকিৎসক জুটির বিয়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষে ৩০ জুন তাদের সহকর্মীরা ফুল ও আলোয় সাজিয়ে তুলে হাসপাতাল। অর্ডার দেওয়া বিশেষ খাবারদাবারের।
হরিয়ানার পাত্রী রিম্পি বলেন, আমরা কখনও বিরাট ধূমধাম করে বিয়ে করতে চাইনি। কিন্তু বিয়েতে বিশেষ একটা কিছু করতে চেয়েছিলাম। এই ভাবেই আমাদের বন্ধুরা আমাদের বিয়েটাকে স্পেশাল করে তুলল।
এমডি কোর্স শেষ করে মে মাসে বিয়ে করার কথা ছিল দুইজনের। সেই সময়েই ভারতজুড়ে থাবা বসায় করোনাভাইরাস। ফলে বিয়েটা বাতিল করে দিতে হয় তাদের।
ডাক্তার বর সারজেরাও বলেন, যে মহামারিতে সারা পৃথিবী আক্রান্ত, তা যে কবে শেষ হবে, কবে এর থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে, তার কিছুই এখনও বুঝে ওঠা যাচ্ছে না। সেই কারণেই বিয়েটা সেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
দুর্নীতি, লুটপাট আর নানা অনিয়মের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন উর রশিদ আসকারী নিয়োগ পাওয়ার পর একের পর এক কেলেঙ্কারির ঘটনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যায়ের ভাবমূর্তি একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। অভিযোগ উঠেছে, উপাচার্যের মদদপুষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের একটি চক্র গত তিন বছর ধরে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্য, মেগা প্রকল্পের আড়ালে দুর্নীতি আর বিধি লঙ্ঘন করে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা-কর্মীসহ প্রায় দুই শতাধিক লোককে ডে-লেবার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা এখন বহুল আলোচিত। শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্য বিষয়ে একাধিক ফোনালাপের অডিও ক্লিপ এখন সবার হাতে।
বর্তমান উপাচার্যের আমলে ঘটে যাওয়া সব অনিয়ম, দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত দাবির পাশাপাশি কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক সংগঠন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও কর্মকর্তা সমিতি থেকে শুরু করে সর্বস্তরের শিক্ষকরা। এসব সংগঠন ইতিমধ্যে লুটপাট ও অনিয়মের প্রমাণসহ প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও ইউজিসি চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে। এতে উপাচার্যের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি আর স্বেচ্ছাচারিতার বর্ণনা রয়েছে।
শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্য
অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমান উপাচার্যের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৬৫ জন। এ নিয়োগে বড় অঙ্কের ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট। গত ৪ বছরে নিয়োগ বাণিজ্যের ব্যাপারে ফোনালাপের অন্তত ৫টি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। এর প্রতিটির সঙ্গে উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষক ড. রুহুল আমিন, ইলেকট্রনিক বিভাগের শিক্ষক এস এম আবদুর রহিম ও সাবেক প্রক্টর ড. মাহবুবুর রহমানের সম্পৃক্ততা এসেছে। ফাঁস ফোনালাপের অডিও ক্লিপে তাদের কথোপকথন উঠে এসেছে। প্রতি শিক্ষক নিয়োগে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। সর্বশেষ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে আরিফ খান নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর কাছে এই তিন শিক্ষক ২৮ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে দাবি করা অর্থের পরিমাণ কমিয়ে ১৮ লাখ টাকা করা হয়। ফাঁস হওয়া ফোনালাপ থেকে এমনটিই জানা যায়। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় আরিফ হাসান খান নামের ওই প্রার্থীকে তার সব যোগত্যা থাকার পরও পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়নি। এই ফোনালাপ ফাঁস হলে তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপাচার্য। সেই তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন বাংলা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. সরওয়ার মুর্শেদ রতন। পরে সাবেক প্রক্টরসহ অন্যদের চাপে তিনি পদত্যাগ করেন। ফলে থেমে যায় তদন্তকাজ। পরে আরিফ হাসান খান বিচার চেয়ে তিন পৃষ্ঠার একটি লিখিত অভিযোগ দেন উপাচার্যের কাছে।
এ বিষয়ে আরিফ খান বলেন, ‘চাকরির জন্য আমার সব যোগ্যতা ছিল। কিন্তু রহুল আমিন স্যার, রহিম স্যার ও সাবেক প্রক্টর মাহবুবুর রহমান আমার কাছে সর্বশেষ ১৮ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। আমি অর্থ দিতে না পারায় অন্যদের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা করে নিয়ে চাকরি দিয়েছেন। আমি লিখিত অভিযোগ দিলেও শুধু তারা ভিসির অত্যন্ত কাছের লোক হওয়ায় উপযুক্ত বিচার পাচ্ছি না।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, ‘আমার সময়ে শিক্ষক নিয়োগে যত ফোনালাপের অডিও ফাঁস হয়েছে তার জন্য তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তদন্ত টিমের সুপারিশ অনুযায়ী কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়েছে এমন নজির রয়েছে। তবে আরিফের বিষয়টি জানার পর তদন্ত টিম করেছিলাম। সেই কমিটির প্রধান পদত্যাগ করলে আরেকজনকে প্রধান করা হয়েছে। সেটির তদন্ত চলছে।
উন্নয়ন প্রকল্পে কমিশন বাণিজ্য
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে ৫৩৭ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে গেছে। তবে এ কাজে হরিলুট চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি বড় দুটি টেন্ডার ঘিরে ইবির প্রধান প্রকৌশলীকে হুমকি দেন সাবেক প্রক্টর মাহবুবুর রহমান ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিব। তারা একটি বড় কাজ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতাকে দেওয়ার জন্য চাপ দেন। কাজ না দিলে পরিণতি ভয়াবহ হবে বলে মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনার পর প্রধান প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান টুটুল পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সব কিছু জানিয়ে দেওয়ার কথাও বলেন। এ ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হলে ওই প্রকৌশলীর বাসায় গোপনে এসে দেখা করেন সাবেক প্রক্টর মাহবুবুর রহমান। এ বিষয়ে উপাচার্য তদন্ত টিম গঠন করলেও শুধু তার ঘনিষ্ঠজনের জড়িত থাকায় তদন্ত থেমে আছে।
এ ছাড়া প্রতিটি কাজ থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ভিসিপন্থি কয়েকজন শিক্ষক নেতার বিরুদ্ধে। ঠিকাদারদের জিম্মি করে মেগা প্রকল্প থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি।
এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘প্রধান প্রকৌশলীকে হুমকি দেওয়ার পর তিনি পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। এরপর আমি কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। তদন্ত টিম করেছি। করোনার কারণে টিম কাজ করতে পারছে না।’
ডে লেবার নিয়োগে ঘাপলা
সম্প্রতি ছাত্রলীগের কিছু সাবেক নেতা-কর্মী, উপাচার্য ও সাবেক প্রক্টরের ঘনিষ্ঠজনদের ডে-লেবার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। যার সংখ্যা প্রায় দুই শতাধিক। এর মধ্যে ইবি থেকে পাস করা ছাত্রলীগের অনেক সাবেক নেতা-কর্মী রয়েছে। এদের বেশির ভাগ কাজ না করেই প্রতি মাসে বেতন নিচ্ছেন। এদের নিয়োগ দিতেও দুই থেকে তিন লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে বলে অনেকের অভিযোগ। অভিযোগ আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের প্রধান সাইফুল ইসলাম ডে-লেবারদের প্রতিজনের নামে বিল তোলেন সাড়ে ৯ হাজার টাকা। আর তাদের পেমেন্ট দেন সাড়ে ৫ হাজার টাকা করে। বিষয়টি জানাজানি হলে উপাচার্য একটি লোক দেখানো তদন্ত টিম করেন। এ ব্যাপারে উপাচার্য ড. হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, বিষয়টি আমার নজরে আসায় একটি তদন্ত টিম করেছি। তারা এখনো রিপোর্ট দেয়নি। আমি তাদের তাগাদা দিয়েছি দ্রুত রিপোর্ট দেওয়ার জন্য।
শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনে বিভাজন সৃষ্টি
শিক্ষকদের অভিযোগ, শিক্ষক সমিতিসহ সব সংগঠনের মাঝে বিভেদ তৈরি করে রাখা হয়েছে। ইবিতে শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, কর্মকর্তা সমিতি, কর্মচারী সমিতি ও ছাত্রলীগের মাঝে বিভেদ তৈরি করা হয়েছে। কর্মকর্তা সমিতি, কর্মচারী সমিতি নির্বাচনে ভোটে হেরে উপাচার্যপন্থিরা রাতারাতি জামায়াত-বিএনপি ও জাসদের লোকজনকে দিয়ে পাল্টা কমিটি করেছে।
রেজাউল করিম রেজা নামে একজন শিক্ষক হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ পেলেও গত ১০ বছরে তার পিতার মুক্তিযোদ্ধা সনদ জমা দিতে পারেননি। বিষয়টি জানাজানি হলে উপাচার্য তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বারবার তাকে সুযোগ দিয়ে আসছে। এ ছাড়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে আলোচিত সমালোচিত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু পরিষদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যায় শাখার সাধারণ সম্পাদক শিক্ষক নেতা প্রফেসর ড. মাহাবুবুল আরেফিন বলেন, উত্তরাঞ্চলের একটি সিন্ডিকেট ভিসি হারুন উর রশিদ আসকারীকে গ্রাস করেছে। সেই সিন্ডিকেটের কয়েকজন বিতর্কিত শিক্ষক ভিসিসহ গোটা বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের ইশারায় পরিচালনা করে আসছে। ভিসির নানা দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সিন্ডিকেটের মূল হোতা সাবেক প্রক্টর মাহবুবুুর রহমান, নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত দুই শিক্ষক রহুল আমিন, আবদুর রহিম, ভিসির দুই ভগ্নিপতিসহ এক ডজন শিক্ষক জড়িয়ে পড়েন নিয়োগ বাণিজ্যে, মেগা প্রকল্পের আড়ালে হরিলুট, ডে-লেবার নিয়োগ দেওয়ার নামে অর্থ লুটপাটে জড়িয়ে পড়েন। যার প্রমাণ গত চার বছরে ৫টি অডিও ফাঁস হয়েছে। এরা সবাই ভিসি ও সাবেক প্রক্টরের ডান হাত হিসেবে পরিচিত। নামমাত্র তদন্ত কমিটি হলেও তারা সবাই বহাল তবিয়তে আছেন।
কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মীর মুর্শেদুর রহমান বলেন, হারুন-উর-রশিদ আসকারী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর এক সভায় বলেছিলেন, ‘দুর্নীতি থাকলে আসকারী থাকবে না, আর আসকারী থাকলে দুর্নীতি থাকবে না’। সেদিন তার এ বক্তব্যে করতালি দিয়েছিল সবাই। কিন্তু প্রথম একটি বছর তার ভালো কাটলেও এরপর থেকে একের পর এক কেলেঙ্কারির ঘটনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যায়ের ভাবমূর্তি একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। ৪টি বছর উন্নয়নের আড়ালে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে উপাচার্যের মদদপুষ্ট চক্র।
ইবি শাপলা ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সিনিয়র শিক্ষক প্রফেসর ড. মুঈদ রহমান বলেন, ‘আসকারী আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ভিসি হিসেবে আসার পর একটি বছর তিনি ভালো ছিলেন। এরপর তিনি একটি সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন। কেন তিনি জিম্মি হয়ে পড়লেন, তিনিই ভালো বলতে পারবেন। এরপর শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, মেগা প্রকল্পে দুর্নীতিসহ নানা বিষয় সামনে এসেছে। শিক্ষক রাজনীতি কলুষিত হয়েছে। জামায়াত-বিএনপি আগের থেকে মাথাচাড়া দিচ্ছে। অর্থ যেখানে থাকে সেখানে অনর্থ ডেকে আনবে এটাই বড় কথা। আদর্শের জায়গাটি আর নেই।’
তবে উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন উর রশিদ আসকারীর দাবি, পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে তার আমলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছু ভালোভাবে পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্যসহ সব ধরনের অনিয়মের তদন্ত হয়েছে বা হচ্ছে। দায়ীদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
নাগরিকত্ব সংশোধন আইন এবং নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি করোনাভাইরাস মহামারির কারণে পর্দার আড়ালে চলে গেলেও খুব শিগগিরই নিশ্চিত তা মাথা তুলে দাঁড়াবে আবার। দেশভাগের ইতিহাসে নাগরিকত্বকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিতর্ক নতুন করে আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। পণ্ডিতজন এবং মিডিয়া বিশ্লেষকদের মনে সিলেট গণভোটের বিষয়ে নতুন করে ইতিবাচক ধ্যান-ধারণা প্রকাশিত হয়েছে। অনেক পণ্ডিতজন যুক্তি দিয়েছেন যে, আসামে ‘বিদেশি সমস্যা’ ও এনআরসি আপডেট করার দাবিকে ঘিরে যে রাজনীতি তা ১৯৪৭ সালের সিলেট গণভোটে পাওয়া যায়, যা আসাম রাজ্যের বিভক্তি সৃষ্টি করেছিল। ভারতের অনলাইন দ্য প্রিন্ট-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মালিনি ভট্টাচার্য আরো লিখিছেন, এই ঘটনার ৭৩তম বার্ষিকী ৬ই জুলাই। এ সময়ে হিন্দু সিলেটিদের কমপক্ষে দুটি প্রজন্মের জীবন ও তাদের গন্তব্য স্থায়ীভাবে পাল্টে গিয়েছিল। তারা বর্তমানের বাংলাদেশ, তাদের মাতৃভূমি ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন এবং অবিভক্ত আসামে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিলেন। দেশভাগের পরে এসব মানুষের পরিণতি কোনো গল্প নয়- এটা স্বীকৃত।
মূলধারার দেশবিভাগের ইতিহাসে এসব ভালোভাবে বর্ণিত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় দেশভাগের প্রধান কারণ ছিল হিন্দু-মুসলিম ইস্যু। কিন্তু আসামে এই বিভাগের মূলে ছিল জাতি ও ভাষাগত বিষয়। আসামের উপ-জাতীয়তাবাদের ধারণার ওপর ভিত্তি করে সব সময়ই ‘বিদেশি বিরোধী আন্দোলন’ এবং আসামে এনআরসি করার সিদ্ধান্ত এসেছে জাতি-ভাষাভিত্তিক উগ্র জাতীয়তাবাদ থেকে, যা শুরু হয়েছিল দেশভাগের পরই ‘বাঙাল খেদাও আন্দোলন’ নামে। এ বিষয়টি যখন ‘মুসলিমবিরোধী’ এবং নরেন্দ্র মোদি সরকারের সামপ্রদায়িক পরিকল্পনা বলে মনে করা হলো তখনই প্যান-ইন্ডিয়ান বোদ্ধারা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করলেন।
রাষ্ট্রহীন সিলেটি হিন্দু
নাগরিকত্ব ইস্যুতে সামপ্রদায়িকতা নিন্দনীয়। বিস্ময়কর যা থাকে তাহলো, কীভাবে জাতি-ভাষার ওপর ভিত্তি করে উগ্র জাতীয়তাবাদকে বৈধতা দেয়া হলো। এমনকি আসামীয় সমপ্রদায়ের হতাশার প্রকাশ স্বাভাবিকীকরণ করা হয়েছে। তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় বাঙালিদের দ্বারা হুমকিতে পড়েছে বলে মনে করা হয়। এই ভারসাম্যহীন ধারণার একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে, বাস্তুচ্যুত এই সমপ্রদায়কে কেন্দ্র করে যে ধারণা তা ত্রুটিপূর্ণ। বিজ্ঞজন এবং জনপ্রিয় একটি ধারণা আছে যে, হিন্দু সিলেটিরা অবশ্যই সমজাতীয় এবং সুবিধাভোগী সমপ্রদায়। ঔপনিবেশিক সময় থেকেই অনেক দশকে আসামের সঙ্গে মিশে যাওয়ায় তাদেরকে এমনটা বলা হয়। প্রতিটি সমপ্রদায়ের দৃশ্যমান সুযোগ সুবিধা আছে। এটা শুধু একাকী তাদের কোনো বৈষম্য ও দুর্ভোগের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো উচিত নয়।
বর্তমান বাংলাদেশের একটি অংশ সিলেট। আসলে এটি পরিচিত ছিল শ্রীহট্ট নামে, যার আক্ষরিক অর্থ সমৃদ্ধিশালী। ঔপনিবেশিক শাসনের সময়ে প্রশাসনিক কারণে সিলেটকে বৃটিশরা কখনো বাংলায় কখনো আসামের মধ্যে ফেলতেন। ঐতিহাসিকভাবে এটা ছিল বাংলার অবিভক্ত অংশ এবং ১৮৭৪ সাল নাগাদ বৃটিশ ইন্ডিয়ার ফ্রন্টিয়ার অঞ্চল। ওই সময়ে তারা যোগ দিয়েছিল নতুন করে অর্জিত আসাম ভূখণ্ডের সঙ্গে। নতুন এই অঞ্চলের সঙ্গে সিলেটকে আসাম প্রদেশের মুখ্য কমিশনার যুক্ত করান প্রাথমিকভাবে রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য এবং আসামকে অর্থনৈতিকভাবে টেকসই প্রদেশ হিসেবে তৈরি করার জন্য।
কিন্তু আসামের সঙ্গে সিলেটের এই যুক্ত হওয়ার বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ করতে থাকেন ওই অঞ্চলের হিন্দু বাঙালিরা। কারণ, তারা চাইছিলেন আসামের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চেয়ে উন্নত বাংলায় ফিরে যেতে।আসামের অভিজাত শ্রেণি দেখতে পেলো ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙালিরা তাদের কর্মক্ষেত্রে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এবং আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক সমপ্রীতি তাদের কারণে লঙ্ঘন হবে বলে মনে করা হতো। তাই আসামের অভিজাতরা এ উদ্যোগের বিরোধিতা করেন। ১৯০৫ সালে যখন বঙ্গভঙ্গ হলো, তখন সিলেটকে পূর্ব বাংলা এবং আসামের অংশ করা হলো। ১৯১২ সালে তাকে আবার বাংলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে আসামের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।
ইতিহাসজুড়ে লক্ষ্যবস্তু
যখন দেশভাগের পরিকল্পনা করা হলো এবং হিন্দু-মুসলিমের মতো মিশ্র জনসংখ্যার এই অঞ্চল কীভাবে ভাগ হবে এমন প্রশ্ন এলো, তখন আসাম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি এবং তখনকার আসামের প্রাইম মিনিস্টার গোপিনাথ বোরডোলোই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেন। তিনি ঔপনিবেশিক সরকারকে পটালেন সিলেটকে পূর্ব পাকিস্তানের কাছে ফিরিয়ে দিতে। এর ফলে ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ই জুলাই একটি গণভোট হয় সিলেটে। এতে ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮১৫ বৈধ ভোটারের মধ্যে ৪ লাখ ২৩ হাজার ৬৬০ জন ভোট দেন। জে বি ভট্টাচার্য এবং বিনায়ক দত্তের মতো অনেক বোদ্ধা উল্লেখ করেছেন যে, সিলেট গণভোট নিয়ে বড় রকমের বিতর্ক তৈরি হয়ে গেল। কারণ, মুসলিম লীগের তরফ থেকে ভয়ভীতি প্রদর্শনের কারণে এক লাখ ২৩ হাজার ১৫৫ জন ভোটার ভোট দেননি। তাদের বেশির ভাগই বৃক্ষরোপণ কর্মী এবং প্রধানত হিন্দু। এই গণভোটের পরে সাড়ে তিনটি থানা পাথরকান্দি, বদরপুর, রাতাবাড়ি এবং করিমগঞ্জ বাদে সিলেটের বাকি অংশ হস্তান্তর করা হলো পূর্ব পাকিস্তানের কাছে। আসাম থেকে সিলেটকে বিচ্ছিন্নকরণকে ইতিহাসবিদ সুজিত চৌধুরী আসামের অভিজাত শ্রেণির জন্য ‘ঈশ্বর প্রদত্ত সুযোগ’ বলে অভিহিত করেছেন। এই অভিজাত শ্রেণি চাইছিল তাদের নিজেদের ভাষার, নিজেদের মতো করে একটি সমজাতীয় প্রদেশ।
সুজিত চৌধুরী স্বীকার করেন, আসামের অভিজাত শ্রেণির মধ্যে এই আত্মপ্রসাদ ছিল স্বল্পমেয়াদি। কারণ, হিন্দু সিলেটিরা এ সময়ে শরণার্থী হতে শুরু করলেন। সীমান্তে মুসলিমদের ভীতিপ্রদর্শন ও টার্গেট করার কারণে দেশভাগের পর পরই অবিভক্ত আসামে ছোটা শুরু করলেন এসব হিন্দু। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য চাপ দেয়া সত্ত্বেও বোরডোলোই সরকার শুধু শরণার্থীদের বসতির জন্য জমি দিতেই অস্বীকার করেনি, একই সঙ্গে সব অ-আসামীয় সমপ্রদায়ের ক্ষেত্রেও একই নীতি নিয়েছিল, যদিও এসব মানুষ আসামে বহু প্রজন্ম ধরে বসবাস করে আসছিল।
১৯৪৮ সাল থেকে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাজুড়ে পর্যায়ক্রমে টার্গেট করা হচ্ছে হিন্দু বাঙালিদের। অনেকে এতে প্রাণ হারিয়েছেন। জীবিকা, সহায় সম্পদ হারিয়েছেন। ১৯৬০-এর দশকে শুরু হওয়া ভাষা বিষয়ক দাঙ্গা, ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত আসাম আন্দোলন মাঝে মাঝেই রাষ্ট্র সমর্থিত কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে, যেখানে হিন্দু বাঙালিদের হত্যা করা হয়েছে। তাদেরকে মেডিকেল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পালাতে বাধ্য করা হয়েছে। এমনকি জীবনের ভয়ে তারা চাকরি থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। এদের মধ্যে যারা সামাজিক ও অর্থনৈতিক কিছু পুঁজির মালিক হয়েছিলেন তারা এসব দাঙ্গাকালে কলকাতা পালিয়ে যান। সেখানেই তাদেরকে স্বাগত জানানো হয় নি। তাদেরকে দেখা হতো ‘প্রবাসী বাঙালি’ (অনাবাসী বাঙালি) হিসেবে। মজার বিষয় হলো, ১৯৮৩ সালে নিলি গণহত্যার পূর্ব পর্যন্ত আসামের বাঙালি মুসলিমরা হিন্দু আসামিদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এক মিত্রতা গড়ে তোলে। এতে একজাতীয় আসাম প্রদেশের দাবি জোরালো হয়েছিল।
হিন্দু সিলেটিরা এখন
আসামে সিলেটি হিন্দুদের দুর্দশার কথা তুলে ধরার চেষ্টাকালে আমি মুসলিমদের দুর্দশার কথা এড়িয়ে যেতে চাই না। বরং আসামে বিদেশি বিরোধী আন্দোলন জটিল হয়েছে। পুরো দেশে বেশির ভাগ হিন্দু সিলেটিদের কাছে স্বদেশের ধারণা রয়ে গেছে অধরাই।
বিস্ময়ের বিষয় হলো এই দুর্ভোগের কথা বৃহত্তর বোদ্ধা সমপ্রদায়ে ঘাটতি আছে। সিলেট গণভোটের বার্ষিকী রাজনৈতিক সহমর্মিতা প্রকাশের জন্য একটি উত্তম সুযোগ। দার্শনিক-তাত্ত্বিক জুডিথ বাটলারের যুক্তি অনুযায়ী, যেকোনো সময়ে একটি সমাজের বিদ্যমান বিশেষ আদর্শের জন্য একজন বৈধ ব্যক্তিকে আহ্বান করা। আরো বৃহত্তরভাবে বলা যায়, ভূখণ্ডহীন সিলেটি হিন্দুদের কথা সম্ভবত ভুলেই থাকা হবে। কারণ, রাজনৈতিকভাবে তারা কোনো ঘটনা নয়।
করোনাকালেও রাজনীতি হচ্ছে। তবে বিবর্ণ, অন্তঃসারশূন্য। সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অভিযোগ পাল্টা জবাব চলছে। থেমে নেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভিযোগ আর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের স্বভাবসুলভ জোছনাভেজা কাব্যিক জবাব। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ তাঁর কায়দায় যেমন বলছেন তেমনি বিরতিহীন চলছে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নিত্য বয়ান। মানুষের কাছে এসব বিতর্কের আবেদন আছে, নাকি নেই- এসবে কেউ নজর দিচ্ছেন না। তবে নি®প্রাণ সংসদে করোনাকালে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে বিরোধী দল কিছুটা ধুলো উড়িয়েছে। এমনিতেই আদর্শিক ঊর্মিমুখর গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে কর্মকা- আগের মতো নেই। অন্যদিকে ছাত্র রাজনীতির সেই যৌবনকাল কবে হারিয়ে গেছে! জাতীয় রাজনীতিতেও রাজনীতিবিদ বলতে হাতে গোনা কিছু আজ, সেখানে তারাও প্রায় বাধ্যতামূলক ছুটিতে। করোনার সঙ্গনিরোধকালে রাজনীতিই বা কই! তবু বলতে হয়, মিডিয়ায় থাকতে হয় বলে কেউ ধার ধারুক আর না-ই ধারুক বলবেনই তারা।
রাজনীতিটা যে রাজনীতিবিদদের হাত ফসকে কবে বের হয়ে গেছে, দেশ পরিচালনায় রাজনীতিবিদদের কর্তৃত্ব যে খর্ব হয়ে গেছে, তাও কেউ বুঝছেন না। করোনাকালের বিমর্ষ বিকালে আষাঢ়ের মেঘে খেলা করা আকাশে, রাজনীতির মনমরা ঘুড়ি দেখি, নাটাই কার হাতে জানি না! জনগণ আজন্ম রাজনীতিবিদদের নেতৃত্বে জীবন বাজির জুয়া খেলতে দ্বিধা করেনি। স্বাধীনতায়, মুক্তিযুদ্ধে, গণতন্ত্রের সংগ্রামে তার দেখা মিলেছে! জেলজুলুম মামলা রাজনীতিবিদরাই সইবেন, জীবন নিয়ে জুয়া খেলবেন মানুষের জন্য, কর্মীরাই জীবন দেবেন, রক্ত ঝরাবেন, নির্যাতন ভোগ করবেন। কিন্তু ক্ষমতায় এসেই জনগণ নয়, প্রশাসনের ওপর নির্ভরশীল হবেন, কর্মী ও জনগণের শক্তিকে অবহেলা করবেন। সুবিধাবাদী সুযোগসন্ধানীদের সুসময়ের বন্ধু করে দুর্দিনের সাথীদের দূরে ঠেলবেন- এ কেমন কথা! অনেকে নিজেরা অর্থের লোভে পড়বেন, কর্মীদেরও ভাসাবেন। দলের জনপ্রিয়তাও হারাবেন অপকর্মে। এভাবেই আজ রাজনীতিবিদরা রাজনীতিকে কলুষিত করে, নিজেরাই নিজেদের শক্তি হারিয়ে জনগণের ক্ষমতার কতটা প্রতিনিধিত্ব করছেন? এটা অনেক বড় প্রশ্ন।
আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অর্জিত রাজনৈতিক শক্তির নির্লোভ গণমুখী আদর্শিক উত্তরাধিকারিত্ব হারিয়ে আমরা রাজনীতিকে দেউলিয়া করেছি। বঙ্গবন্ধুই জনগণকে সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতার মালিক করেছিলেন। এটা তিনি বিশ্বাস করতেন। পাবলিক সার্ভেন্টদের কঠোরভাবে বলেছেন তাঁর গরিব কৃষক শ্রমিককে সম্মান করে কথা বলতে। ওরাই পড়াশোনা করিয়েছে, ওরাই বেতন দেয়। ওরা দুর্নীতি চোরাকারবারি করে না, বিদেশের এজেন্ট হয় না। তাই নয়, বঙ্গবন্ধুই এ দেশে রাজনীতিবিদদের কর্মীদের মর্যাদা সম্মান প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। প্রমাণ করেছিলেন পারিবারিক আভিজাত্যের, অর্থবিত্তের অহংকার জৌলুস ছাড়া গণমানুষের কল্যাণে রাজনীতি করে সাধারণ পরিবার থেকেও এমপি-মন্ত্রী হওয়া যায়। জননেতা হওয়া যায়। জননেতা শব্দটি আজ মানুষের হৃদয়ে নির্বাসিত হয়ে পোস্টারের স্বঘোষিত শব্দে পরিণত। আরও কত অলঙ্কার! বঙ্গবন্ধু নির্লোভ ত্যাগ আদর্শ ও সাহসের আলোয় নেতা-কর্মী তৈরি করেছিলেন। তিনিই ছিলেন রাজনীতি ও রাষ্ট্রের আদর্শ। তিনিই জনপ্রতিনিধিদের কলোনিয়াল প্রথা ভেঙে ক্ষমতাবানই করেননি, ইজ্জত বাড়িয়েছিলেন। পাবলিক সার্ভেন্টদের ওপর রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই সময় তাঁর ভিন্নমতের নেতা-কর্মীরাও আদর্শিক ছিলেন। কঠোর সরকারবিরোধী মওলানা ভাসানীকে রাজনীতির খরচ জোগান দিতেন বঙ্গবন্ধু। ভাবা যায় আজ কোথায় নেমে গেছি আমরা?
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে সংবিধান ও রাজনীতি থেকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বিসর্জন দেওয়া হয়েছিল। জাতীয় নেতাদের হত্যা, আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্মম নির্যাতন করা হয়েছিল। সংবিধানকে চরমভাবে লঙ্ঘন করে বন্দুকের শাসন কায়েম করে সামরিকতন্ত্রের অন্ধকারে বিচারহীনতায় দেশকে খুনিদের উল্লাসমঞ্চ বানিয়েছিল। এক ডজন খুনিকে কূটনীতিক বানিয়ে বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়েছিল। সাম্প্রদায়িক স্বাধীনতাবিরোধীই নয়, যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছিল। এমনকি সেনাশাসক জিয়াউর রহমান আমাদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মুসলিম লীগ, চিনাপন্থি মুজিববিদ্বেষী আর মুক্তিযোদ্ধাদের মিলিয়ে একাত্তরে পরাজিত পাকিস্তানি ধারার রাজনীতির আধুনিক সংস্করণ ‘বিএনপি’র জন্ম দিয়েছিলেন। সেই ধারা থেকে বিএনপি বের হতে পারেনি। এখনো সেই ধারারই প্রতিনিধিত্ব করছে। কয়েক দিন আগে প্রখ্যাত সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী লিখেছিলেন, করোনার রাজনীতি উল্টোপথে বিএনপি। বিএনপি কে চালায় এ প্রশ্ন তুলে এতদিন আমরা দলটির যে ভুলগুলো বলে আসছি তার সারমর্ম তুলে ধরেছেন। আসলে অনেক কিছুই কে চালায় ক্ষমতায় বাস করেও যেন অনেকে জানে না!
২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে সব সিটিতে মেয়র জয়ী জনপ্রিয় বিএনপির সেই ভোট বর্জন করে জামায়াতকে নিয়ে সহিংস প্রতিরোধের ডাক ছিল ফাঁদে পা দিয়ে আত্মঘাতী। ওয়াকওভার দেয় আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের। যারা সেদিন বোকা সিদ্ধান্তে সর্বনাশটা করেছিলেন তারা কার ক্যাপসুল খেয়েছিলেন? পরে জনগণকে না নিয়েই অসহযোগের নিষ্ফল অবরোধের আগুন-সন্ত্রাস মামলার জালে ক্ষয় করে দলকে। নেতারা যেখানে দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে বসার চেয়ার পাননি সেখানে আগে ঠিক করা প্রণব মুখার্জির সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক বাতিল করেন শিবিরের হরতালের জন্য! চড়া ভুলে দলের সর্বনাশ পরতে পরতে। সর্বশেষ নির্বাচনে ড. কামালকে সামনে নিয়ে দাঁড়ালেও জামায়াতকে ভোটের আসনের ভাগ দিয়ে শাসক দলের অধীনে নির্বাচনে যে ৪০-৫০ আসন পাওয়ার সুযোগ ছিল তাও হারায়। এর আগে ক্ষমতায় থাকতে ভুলে যায় কারা তাদের এনেছিল ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী করে। আইএসআইয়ের জন্য দেশের দরজা খুলে দিয়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, বোমা, একুশের গ্রেনেড হামলার ভয়াবহতা, তিন স্তরের দলীয় প্রশাসন, হাওয়া ভবনের তত্ত্বাবধানে তৈরি রাজদুর্নীতির বাজিকরদের দাপট দৃশ্যমান হয়েছিল। বিরোধী দলকে শেষ করার কি ভয়ঙ্কর খেলায় মেতেছিল তারা। ক্ষমতার অন্ধ মোহে ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একতরফা নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার শেষ চেষ্টা ওয়ান ইলেভেনে ব্যর্থ হতেই, সেই যে সব হারিয়ে গেল আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না! দাঁড়াতেই পারছে না এখন। শেখ হাসিনার কাছে পরিবারের আকুতিতে খালেদা জিয়ার মুক্তি মিললেও দল লাভহীন।
এদিকে ২০০৮ সালে শেখ হাসিনার ক্যারিশমায় গণরায়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ এক দশক পর এবারে টানা তৃতীয়বারে শরিকদেরও ক্ষমতার ভাগ দেয়নি। বিএনপি দাঁড়াতে পারছে না, আর সারা দেশে সব পেশার সবাই আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে। ক্ষমতার দম্ভে অনেকে ভুলতেই বসেছেন এই আওয়ামী লীগ তার ৭১ বছরের দীর্ঘ সময়ে রাজপথের সংগ্রামে রক্তই ঝরিয়েছে। নির্যাতন, জেল, মামলা, হামলা, হত্যার শিকার হয়েছে। কত দুঃসময় গেছে। বঙ্গবন্ধুর পর কন্যা শেখ হাসিনা প্রায় ৪০ বছর দলের নেতৃত্ব দিয়ে সাফল্যের গৌরব অর্জন করলেও ২১ বারের বেশি মৃত্যুর দুয়ার থেকে অমিত সাহসে ফিরেছেন। আজ তিনিই সরকার, দল ও মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক শক্তির ঐক্যের প্রতীক। তিনিই শক্তি। তাঁর ১০ বছর উন্নয়নের মহাযাত্রার দশক। যদিও দুর্নীতি, দলের একদল নেতা, মন্ত্রী, এমপির লুটপাট, সুবিধাবাদীদের ব্যাংক লুট, শেয়ার লুট, অর্থ পাচার নিয়ে অসন্তোষ আছে, কিন্তু বর্তমান করোনাকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চরম ব্যর্থতা, চিকিৎসা খাতের হরিলুটের ভয়াবহতা সব অর্জন ধূসর করে দিয়েছে। দলের নেতা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম যথার্থ বলেছেন, দাফতরিক কাজে ব্যস্ত জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবরা ব্যর্থ হয়েছেন। আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, অনুপ্রবেশকারী দুষ্টচক্রের হাত থেকে দলকে রক্ষা করতে হবে। দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারিতেও তারা দমেনি। নাসিম, নাছিম দুই ভাই-ই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে দুঃসময়ের পাঠ নেওয়া। ৩২ নম্বর থেকে একজন দুঃসময় সুসময়ে শেখ হাসিনার পাশে, আরেকজন সুধাসদন থেকে ও ওয়ান ইলেভেনে সরকারি চাকরি ছেড়ে পাশে থাকা। দুজনই প্রথম ক্ষমতাকালীন স্টাফ। তো দুষ্টচক্র আর আমলাতন্ত্রের সিন্ডিকেট থেকে কি বের হতে পারবে? না পারলে আজ বিএনপি সুদিনের কোকিলদের পাচ্ছে না, আওয়ামী লীগ অতীতে পায়নি ভবিষ্যতে পাবে না। কিন্তু করোনাকালের দায়টাই ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে জবাবদিহির জায়গায় আওয়ামী লীগকে দাঁড় করাবে। সব দেশের ক্ষমতাসীন দলের জন্যই করোনা হবে রাজনীতির চ্যালেঞ্জ।
’৯৬ সরকারেও অ্যারাবিয়ান ব্ল্যাকহর্সের মতোন গতিশীল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় রাজনীতির দীর্ঘ সংগ্রামে উঠে আসা জননেতাদের কি দাপুটে মন্ত্রিসভা। আবদুস সামাদ আজাদ, জিল্লুর রহমান, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, সালাহউদ্দিন ইউসুফ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, আ স ম আবদুর রব, জাঁদরেল সিএসপি থেকে আসা শাহ এ এম এস কিবরিয়া, এইচ কে সাদেক, শেষে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, পরে আমির হোসেন আমু, আবদুল জলিল, শেখ ফজলুল করিম সেলিমও যোগ দিয়ে দক্ষতা প্রমাণ করেছিলেন। কি দাপুটে সব নেতা আর ব্যক্তিত্ব। কি জাঁদরেল সব সচিব তারা নিয়ন্ত্রণে রেখে কাজ করেছেন। এটাই সত্য শেখ সেলিমের সময় চিকিৎসা খাত লুটের মুখ দেখা দূরে থাক, উন্নয়নের আলো দেখেছে সরকারি হাসপাতাল। এত বরাদ্দও ছিল না। পরে বিএনপির ড. মোশাররফ জমানা থেকে যে দুর্নীতি শুরু আর থামল না। বরাদ্দ বাড়ার সঙ্গে তুমুল লুটের রাজত্ব। এখনো বহাল। ১০ বছরে এক মিঠুই ৯০০ কোটি লুটে নিয়েছে সরকারি হাসপাতালে মেশিনের বদলে খালি বাক্স পর্যন্ত দিয়ে! অর্ধশত নাকি তার বেনামি কোম্পানি। এবার সংসদে প্রধানমন্ত্রী কথা বলতে দিয়েছেন। বিরোধী দলের কাজী ফিরোজ রশীদ, মুজিবুল হক চুন্নু, পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, বিএনপির হারুনুর রশীদ কঠোর সমালোচনা করেছেন। এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর ভিডিও ভাইরাল। মানুষের কথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে জবাব দিয়েছেন সবাই তাজ্জব! ভেন্টিলেশনে মারা যায়, পিপিইকে পিপিপি বলে এটা ঠিক মতোন ব্যবহার করতে না পারায় চিকিৎসকরা আক্রান্ত হয়ে মারা যায়! মনে হয় থামলেই ভালো হয়। অবশেষে দুদক এ খাতের ডন মিঠুকে তলব করেছে। আশা কেবল সিন্ডিকেট নয়, দুর্নীতির সব মুখোশ খুলে যাবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা জড়িত তারা পাকড়াও হবে।
এবার মন্ত্রিসভায় কয়েকজন ছাড়া বেশির ভাগই কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ। এতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় আমলাদের সিন্ডিকেট বেপরোয়া, জনগণের ক্ষমতা মুখ থুবড়ে পড়েছে। এক সচিবের আগ্রাসী দাপট সচিবালয় ছাড়িয়ে এলাকার রাজনীতিতে হাত রাখে! করোনাকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ই সব ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে। মানুষের ভরসার উচ্চতায় শেখ হাসিনা। এত মানুষকে খাদ্য সহায়তা, অর্থ সাহায্য দিলেন, এত বরাদ্দ স্বাস্থ্য খাতে করোনা মোকাবিলায় তবু এ দশা কেন। কাল ক্ষমতা গেলে রাজনীতিবিদরা মামলা জেল ভোগ করবেন। কর্মীরা নির্যাতনের শিকার হবেন। সচিব কর্মকর্তারা বহাল তবিয়তে থাকবেন, সুবিধাভোগী লুটেরা আস্তানা ও সুর বদলাবেন নতুন ছাতায়!
তাহলে ক্ষমতার রাজনীতিতে একদল আমলাকে সীমাহীন খবরদারি করতে দিয়ে পাবলিক সার্ভেন্টদের প্রভুর আসন দেওয়া কেন? জনগণের নির্বাচিত মন্ত্রী-এমপিরা যেন ডামি। বহুবার বলেছি সংবিধান ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সঙ্গে এটা অসংগতিপূর্ণ। মন্ত্রী-এমপিরা নিজেদের সামর্থ্যে করোনার রাজনীতিতে ত্রাণ বিতরণ করছেন। সাহায্য করছেন। যারা ব্যবসায়ী নন বা যাদের ধনাঢ্য দাতা শুভার্থী নেই, নির্লোভ সৎ তারা পিছিয়ে আছেন। তবু করছেন। প্রশাসনের কর্তারা চেয়ারম্যান মেম্বার দিয়ে ত্রাণ বিতরণ করে যাচ্ছেন করোনা ও বন্যায়। চেয়ারম্যান মেম্বাররা জেলে যাচ্ছেন, বরখাস্ত হচ্ছেন সেই প্রচলিত রিলিফ চুরির তকমায়। কিন্তু ত্রাণ বণ্টনে জড়িত সরকারি কর্মকর্তারা একদম সফেদ। মারহাবা! তাদের কোনো অনিয়ম নেই। ওপরে তাদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সরকার বদল হলেও তারা থাকবেন, জেলে যাবেন মন্ত্রী এমপিরা। কিন্তু জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কী বলবেন ভোট এলে? তাদের তো জনগণের কাছে জবাবদিহিতে পড়তেই হবে। মানুষের সঙ্গে থেকেই তাদের রাজনীতি। মানুষের বিপদে বসে থাকতে পারেন না।
সচিবদের জেলার সমন্বয়ক করা হয়েছে। তারা কতবার গেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলায়? জনগণের কাছে তাদের না জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহি? ক্ষমতা আমলার, জবাবদিহি রাজনীতিবিদদের! কী বেহাল অবস্থা! গণমাধ্যমেও আসে না জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবরা কোথায়? আসে না নেতাদের কণ্ঠে সাংবাদিক কাজল ফকিরের মুক্তি চাই। আসলে নেতাই নেই। কাজল আওয়ামী লীগ আমলে এত দিন নিখোঁজ, এত দিন জেলে গরিব বলে কেউ তার মুক্তির জন্য ভাববে না? ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকরা পীড়নে, কেউ দেখবে না? আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ করোনায় এলাকার দায়িত্ব পালন করে কানাডায় পরিবারের কাছে গেছেন। বাপরে যেন মহাপাপ! তিনি অন্যায় করেছেন যে বিতর্কে ফেলতে হবে? রাজনীতিবিদ দোষে-গুণে হলেও তাদের যখন তখন ধরা যায়। তাদের ধরতেই গণমাধ্যমের মজা আলাদা। সচিবরা জেলায় কদিন গেলেন, কী করলেন মিডিয়ায় নেই, ফেসবুকেও নেই। কি মানসিকতা!
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যবসায়ী মোরশেদ খান ও ব্যবসায়ী সোহেল এফ রহমান চার্টার্ড বিমানে লন্ডন গেছেন চিকিৎসায়। সর্বশেষ আ হ ম মুস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) চিকিৎসার জন্য যাত্রী হয়ে বিমানে লন্ডন গেছেন। এসব নিয়ে বিতর্কের কী আছে? দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা আমরা দুর্নীতিতে দেউলিয়া করেছি। কোথায় শক্তিশালী চিকিৎসাব্যবস্থা? মুক্তবাজার অর্থনীতির যুগে যার সামর্থ্য আছে সে যাবে। আর এটা কি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শিক নির্লোভ ত্যাগী রাজনীতির জমানা? অর্থমন্ত্রী কি পোড় খেয়ে উঠে আসা রাজনীতিবিদ? তিনি মেধাবী সফল ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিতে এসে মন্ত্রী। তার টাকায় যাবেন, প্রধানমন্ত্রী অনুমতি দিয়েছেন। তিনি সব সময় বিদেশে চিকিৎসা করান। চিকিৎসার জন্য ধনী গরিব সবাই বিদেশ যান, কারণ জীবন আগে। আমেরিকাই না, সিঙ্গাপুর তো এখন ডালভাত। ব্যাংককে হুট করে চলে যায় মানুষ। ভারতে তো ঢল নামে আকাশ, রেল ও সড়কপথে। মধ্যপ্রাচ্য থেকেও তাদের রোগী আসে।
আমাদের দেশ থেকে যায় সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থা যত দিন না মানুষের আস্থা অর্জন করবে তত দিন এটা চলবে। কে কোথায় গেল সেটা বিতর্কের নয়, বিতর্ক আমাদের স্বাস্থ্য খাত কেন আস্থা অর্জন করতে পারেনি, উল্টো সরকারি খাতে হরিলুট বেসরকারি খাতে অমানবিক বাণিজ্য। কেন এতটা ভঙ্গুর তা নিয়ে আজ করোনা আক্রান্ত প্রিয় স্বদেশের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে প্রশ্ন। করোনা পৃথিবীজুড়ে মহাপ্রলয় ঘটিয়ে এখন আমাদের এখানে তা-ব শুরু করেছে। ২ হাজার ছাড়িয়েছে সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা। ২ লাখের দিকে যাচ্ছে আক্রান্তের হিসাব। একেকটা মৃত্যু কত বেদনার! একেকটা আক্রান্তে কি ভয়ঙ্কর অবস্থা। আর জীবন-জীবিকার লড়াইয়ে সরকারি খাত নিরাপদ, বেসরকারি খাত কঠিন চ্যালেঞ্জে। অর্থনীতির মহাবিপর্যয় পৃথিবীজুড়ে, ঝড় এখানেও লাগবে। কর্মহারা হচ্ছে কত মানুষ। তবু দুর্নীতি, লুট, মুনাফা, লোভ, হিংস্রতা, বেইমানি, নির্দয় অমানবিক ঘটনা থামছে না। ক্যান্সারে লড়ে চলে গেলেন জনপ্রিয় শিল্পী এন্ড্রু কিশোর। আমাদের সহকর্মী ভালোবাসার কবি সাংবাদিক মাশুক চৌধুরী, ফারুক কাজী, কত মুখ শেষ যাত্রায়। আমার চন্দ্রস্মিতা করোনাকে জয় করেছে ঘরে থেকে। তার মা এভারকেয়ারের আইসিইউতে ১৬ দিন থেকে ফিরেছেন সন্তানের কাছে। যুদ্ধে কাহিল। কত লাখ মানুষ অবসাদে আজ প্রাণহীন! ভ্যাকসিন অক্সফোর্ড, চীন, ভারতসহ অনেক দেশ সাফল্যের পথে বলছে। আমাদের বায়োটেকের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আসিফ মাহমুদও আশাবাদী, যেখানে তাঁকে সফল না হলেও বীরত্বের অভিবাদন জানানোর কথা সেখানে বিকৃতরা বিতর্ক করে! অসুস্থ সাবেক মন্ত্রী সাহারা খাতুনকে ব্যাংকক নেওয়া হয়েছে। বড় শিল্পপতি এভারকেয়ারে লড়ছেন, আরেক হাসপাতালের মেশিন নেওয়া হয়েছে। ওবায়দুল কাদের যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন সেখানে মেশিন প্যাকেটবন্দী অকেজো। সাপোর্ট দিয়েছে ল্যাবএইড। মানুষের দোয়া, আল্লাহর রহমত, প্রধানমন্ত্রীর চেষ্টায় সিঙ্গাপুর হয়ে ফিরে আসা। মানে দেশের সরকারি হাসপাতাল তো বেহালই, বেসরকারিতেও আস্থা নেই। ডাক্তার আছেন, ডায়াগনস্টিক কই? দক্ষ নার্স টেকনিশিয়ান কই? ব্যবস্থাপনা কই? সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার নার্স সবকিছুর সংকট। রাজনৈতিক সরকারকে এ ভয়ঙ্কর কঠিন সময়ে রাজনৈতিক অভিজ্ঞ দক্ষ নেতৃত্বকে আজ কাজে লাগানোর সময়। আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিমের মতো অভিজ্ঞ নেতাদের ঘরে বসিয়ে রাখার সময় নয়। আমির হোসেন আমুর মতো দাপুটে নেতারা বারবার আসেন না। দক্ষ মেধাবী তোফায়েল আহমেদ ওয়েলকানেকটেড। গুড ম্যানেজার। হতে পারতেন এ সময় রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার ক্রাইসিস ম্যানেজার। এঁরা প্রবীণ। মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম এমনকি অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত, ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না এমপি, ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলালসহ অনেককেই এ দুঃসময়ে কাজে লাগানো যায়। একদিকে চিকিৎসাব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, সিন্ডিকেটের দুর্নীতিমুক্ত করা, আরেকদিকে মনিটরিং করা। আবার সারা দেশে জনগণের দুয়ারে ত্রাণসামগ্রীসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা পর্যবেক্ষণ করা। রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে নেতা-কর্মী ও জনগণের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিটা শক্তিশালী করা। নতুবা ক্ষমতা যখন থাকবে না সব তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে। মহাজোটগতভাবেও প্রধানমন্ত্রী অভিজ্ঞ সিনিয়র নেতাদের নিয়ে নিয়মিত পরামর্শক মিটিং করতে পারেন। এতে জনমনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আজকের রাজনীতি, আজকের আওয়ামী লীগকে আমার অচেনা লাগে। যে বয়সে হৃদয়ে কিশোরীর মুখ লালনের কথা সে বয়স থেকেই আমার হৃদয়ে কেবল বঙ্গবন্ধুর ছবি গাঁথা। রাজনীতিবিদরাই ছিলেন তারুণ্যে নায়কের আসনে। বঙ্গবন্ধুই আমার আদর্শ। সে আদর্শের নাম মানুষের প্রতি ভালোবাসা দায়িত্ববোধ। গভীর দেশপ্রেম। এ দেশ আমি ছাড়িনি, আমার সন্তানও ছাড়বে না। মানুষের কথা বলবই। সাদাকে সাদা কালোকে কালো। আমিও হৃদয় ক্ষয়ে এসেছি অনেকটা পথ হেঁটে আজ ক্লান্ত অবসন্ন। ক্ষমতার অন্ধ মোহে অহংকারে ভ্রান্ত পথে যারা হাঁটছেন, মনে রাখবেন শেখ হাসিনা সব সামলে রাখছেন। হেফাজতকেও ম্যানেজ করছেন, জঙ্গিবাদকে দমন, জামায়াতকে কোণঠাসা করেছেন। দেশ সাম্প্রদায়িক শক্তির ওপর। এখানে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শক্তিতে গণমুখী নির্লোভ দক্ষ নেতৃত্বে সরকার ও দলকে জনগণের শক্তিকে সুসংগঠিত না করলে ক্ষমতা হারালে জাতিকেই চড়া মূল্য দিতে হবে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে নেতা-কর্মীরা দোজখে বাস করবেন। তাই ক্ষমতায় জনগণের মন জয় করেই থাকতে হবে। কেউ যদি মনে করেন বিএনপি শেষ, ভুল করবেন। ’৭০-এর নির্বাচনেও নৌকার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে অনেকে। ’৭১ বিরোধীই নয়, আওয়ামী লীগবিরোধী পাকিস্তানি ধারার শক্তি ক্ষমতা হারালে মাথা তুলবে।
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বাজেটের বিরোধিতা করা বিরোধী দলের প্রধান কাজ। সংসদে বাজেটের প্রতিটি শব্দের ভুল ধরে সংশোধনী এনে অর্থমন্ত্রীর বাজেট দেশবাসীর সামনে অসার প্রমাণিত করা এবং এমন কট্টর যুক্তি খাড়া করা যার সংশোধনী গ্রহণ না করলে সাধারণ মানুষ যাতে বুঝতে পারে সরকার গায়ের জোরে চলছে। তারা যুক্তিগ্রাহ্য কোনো কিছুই গ্রহণ করছে না। এমন সরকারের আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করে জনগণ। সেদিক থেকে বিচার করলে যে সংসদকে দেশের মানুষ ভালোভাবে স্বীকার করেনি, নির্বাচনের ওপর মানুষ আস্থা নেই সেখানে বিএনপির কয়েকজন এমপিকে দেশবাসী ধোয়া তুলসীপাতা মনে করে না। লোভ-লালসা তাদের সংসদে টেনে নিয়েছে বলে মনে করে। বিরোধী দল হিসেবে রুমিন ফারহানা প্রকাশ্য বাজেট বই ছিঁড়ে ফেলেছেন। সংসদ সদস্যের অমন ছেঁড়বার-ফাড়বার সুযোগ বা অধিকার আছে। স্বাভাবিক সময় এ কাজটি হয়তো প্রশংসাই পেত। কিন্তু করোনার মহাদুর্যোগে তাঁর এ কাজ বা তাঁর দল বিএনপির এ কাজ কোনোমতেই সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। রুমিন ফারহানার বাবা একজন যথার্থ রাজনীতিবিদ। জনাব ওলি আহাদ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দীর্ঘ সময় রাজনীতি করেছেন, হুজুর মওলানা ভাসানীর সঙ্গে করেছেন। মিল অমিল যা কিছুই থাকুক পাকিস্তানের রাজনীতিতে রুমিন ফারহানার বাবা জনাব ওলি আহাদের যথেষ্ট ভূমিকা আছে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর বিরোধ হয়েছে আবার প্রয়োজনে পাশে দাঁড়িয়েছেন- এটা ছিল তাঁদের গণমানুষের রাজনীতি।
রুমিন ফারহানাকে আমি প্রথম হাই কোর্টে দেখেছিলাম। আমাদের প্রিয় আবদুল মতিন খসরুর জুনিয়র হিসেবে কাজ করতেন। রুমিন ফারহানা আমাকে পিতার মতো সম্মান করেন। কী কারণে সে সময় হাই কোর্টে গেছি বিষয়টা আজ লিখতে গিয়ে মনে নেই। তবে অনেক কথা মনে পড়ছে। আবদুল মতিন খসরু একসময় আইনমন্ত্রী হয়েছিলেন। তার আগে তাঁর এলাকায় সভা-সমাবেশ করতে গেছি। তাঁর বড়–রায় এক সভায় গিয়েছিলাম। সঙ্গে ছিলেন রাজাবাজারের হাজী চান খাঁ। খুব কষ্ট করে ফিরেছিলাম। তবু ভীষণ ভালো লেগেছিল। উঠতে বসতে আবদুল মতিন খসরুর সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ-কথাবার্তা হতো। ’৯৬-এর সরকারে আবদুল মতিন খসরু যখন আইনমন্ত্রী আমাদের অ্যাডভোকেট মো. সোহরাওয়ার্দীকে টাঙ্গাইলে পিপি করতে অনুরোধ করেছিলাম। প্রবীণ জননেতা মান্নান ভাই হয়তো অন্য কারও জন্য বলেছিলেন। আবদুল মতিন খসরু মান্নান ভাইকে বলেছিলেন, ‘রাজনীতিতে আমি অনেক জুনিয়র। আপনি প্রবীণ মানুষ। এমন একজন মানুষ আমাকে অনুরোধ করেছেন একমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া অন্য কারও কথায় আমি তাঁর কথা ফেলতে পারব না। সোহরাওয়ার্দী টাঙ্গাইলের পিপি হয়েছিলেন। ভালো না খারাপ করেছে বলতে পারব না। তবে নিজের বাসাবাড়ি বেশ ভালো করেছিলেন। তখন খারাপ লাগত। এখন দেখি যারাই জিপি, পিপি হয় সবাই নতুন বাসা করে অথবা নিজের বাসা মেরামত করে- তাই এ নিয়ে আর ভাবী না। কিন্তু আবদুল মতিন খসরু সে সময় যথেষ্ট গুরুত্ব ও সম্মান দেখিয়েছিলেন। পরে আমার মনে হয়েছে যেভাবে বড়দের সম্মান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রবীণদের কোনো গুরুত্ব থাকছে না আমারও ওভাবে শুধু আবদুল মতিন খসরুকে বলা ঠিক হয়নি। কথাটা মান্নান ভাইকেও বলা উচিত ছিল। যেভাবেই হোক তাঁকে বলেকয়ে কাজটা করা উচিত ছিল। এখনো ব্যাপারটা ভাবী। কারণ বড়দের বড়রা সম্মান না দিলে আজ ছোটদের বড় হওয়ার যে দুর্বার বাসনা, যোগ্যতা থাকুক আর না থাকুক তারা আগে যাবেই। আইয়ুব খানের সময় দারোগা পুলিশ যে লতিফ সিদ্দিকীর কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারেনি সেই লতিফ সিদ্দিকীর গাড়ি ভেঙেছে তাঁরই স্যান্ডেল টানা তাঁরই কুড়িয়ে আনা নতুন নেতারা। বিষয়গুলো কখনো ভালো লাগেনি, এখনো লাগে না।
আমার বাড়িতে তেমন রাগারাগি ঠোকাঠুকি নেই। ছেলেমেয়েরা ঝগড়া-ফ্যাসাদ করে না। আমার স্ত্রী দু-এক কথা বললেও আমার জন্য তাঁর মায়া এবং দরদের শেষ নেই। যদি কিছু বলেন তার অনেকটাই না বুঝে বলেন। আর তাঁর মন খারাপ বা রাগ কচুপাতার পানির চেয়েও ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু এই রুমিন ফারহানার জন্য আমার মেয়ে কুঁড়ি ভীষণ রাগ করেছিল। আমি রুমিন ফারহানাকে মা কুঁড়ির চাইতেও সুন্দর পরীর মতো বলেছিলাম। সে প্রায় ১৫ বছর আগে। কুঁড়িমণি ভীষণ রাগ করেছিল। আমার হাত ধরে একটা মোচড়ও দিয়েছিল। মোচড় খেয়ে বুঝেছিলাম, ঠিকই তো, আমার মস্তবড় ভুল হয়ে গেছে। কেন অমন লিখতে গেলাম- কুঁড়ির চেয়েও সুন্দর। আসলে তা তো নয়, কুঁড়ির মতো সুন্দর। আমি সেদিন বুঝেছিলাম মেয়েদের একটা আলাদা জগৎ থাকে, আলাদা চিন্তা থাকে। তাই সেদিন রুমিন ফারহানার বাজেট ছেঁড়াফাড়া সমর্থন করতে পারিনি। এই করোনার দুঃসময়ে এসব করার কোনো মানে হয় না। গত ১০০ বছরে আমরা এমন দুর্যোগ-দুর্বিপাকে পড়িনি। ইতিহাসে দেখা যায়, শতবর্ষ পরপর এ রকম দুর্যোগ আসে। এই সময় সরকার নয়, দেশের কথা চিন্তা করা দরকার, দেশের মানুষের কথা চিন্তা করা দরকার। তাই আমি এবং আমার দল সরকারকে বিব্রত করা থেকে আপনা-আপনি বিরত আছি। অন্যদেরও বিরত থাকতে অনুরোধ করেছি। ভালোয় ভালোয় আমরা করোনার এ দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারলে নিশ্চয়ই তখন বিবেচনা করে দেখা যাবে কী করা যায়। বেঁচে থাকলে রাজনীতি করা যাবে, বেঁচে না থাকলে রাজনীতির কোনো সুযোগ নেই। দেশ না থাকলে, দেশের মানুষ না থাকলে কাকে নিয়ে রাজনীতি হবে? তাই ধৈর্য তো ধরতেই হবে। ধৈর্যশীলকে আল্লাহ পছন্দ করেন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের স্ত্রী লায়লা আরজুমান্দ বানু করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। গাজীপুরের আ ক ম মোজাম্মেলকে বহু বছর চিনি। একজন অত্যন্ত প্রিয় জননন্দিত রাজনীতিবিদ, আমাকে অসম্ভব ভালোবাসেন। মন্ত্রীর চাইতে মন্ত্রী না থাকা অবস্থায়ই অনেক ভালো, অনেক জনপ্রিয় ছিলেন, ছিলেন ভীষণ দরদি। প্রতিটি রাজনৈতিক মানুষ ভালো স্ত্রী না পেলে দলীয় কর্মীদের নিয়ে এক পরিবারের মতো চলতে পারে না। আ ক ম মোজাম্মেল ভীষণ প্রতিকূল অবস্থায়ও বিএনপির সময় বহুদিন গাজীপুর পৌরসভার মেয়র ছিলেন। সবার জন্য ছিল তাঁর দরজা খোলা। আশপাশের আওয়ামীপন্থিরা তাঁকে আশ্রয় মনে করতেন। মন্ত্রী হওয়ায় সবাই খুব খুশি হয়েছিল। কিন্তু আদতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী হওয়াটা খুব সহজ কাজ নয়। আর মন্ত্রী যেই হোক মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সরকারি প্রশাসন থাকতে গ্রামগঞ্জের হতদরিদ্র মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে হওয়ার কথা নয়। তাই বহু মানুষ তাঁর শত্রু হয়েছে। কিছু শত্রু হওয়ার হয়তো অর্থ আছে, কিন্তু বেশির ভাগের কোনো অর্থ নেই। আবার প্রায় সব মন্ত্রীর রাজনৈতিক এপিএসরা সব সময় একটু অন্যরকম হয়। সে রকম মোজাম্মেল হকের লোকও হয়েছে। এমনকি কয়েক বছর এক নাগাড়ে মাননীয় মন্ত্রীর দেহরক্ষী থাকায় কারও কারও দেমাক হয়েছে। তাই গুলি করে কাউকে মেরে এখন কারাগারে। তবে এ কথা সত্য, জীবন থাকলে জীবনের স্বাভাবিক যন্ত্রণা থাকবে। ঠিক এই সময় স্বামী-স্ত্রী দুজনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। স্ত্রীকে হারিয়ে মাননীয় মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল কতটা ব্যথিত তা আমি বুঝতে পারি। কত ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্যে যাতায়াত ছিল। আ ক ম মোজাম্মেল বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকীর কর্মী। কিন্তু তিনি আমাকে মান্য করেন বেশি। এজন্য আ ক ম মোজাম্মেলকে লতিফ ভাই মাঝেধ্যেই বলতেন, ‘বজ্র তোকে কী করেছে, তুই ওকে এত মান্য করিস কেন?’ তিনি বলতেন, ‘কাদের সিদ্দিকী আমাদের নেতা, মুক্তিযুদ্ধের নেতা। বঙ্গবন্ধুর জন্য তিনি যা করেছেন আমরা কেউ তাঁর ধারেকাছেও যেতে পারিনি। তাই তাঁকে সম্মান করি, আজীবন করব।’ আ ক ম মোজাম্মেল গাজীপুর পৌরসভার মেয়র থাকতে একবার খেতে গিয়েছিলাম। আমার এখনো মনে আছে, ছোট্ট একটা পাতিলে ভাত রেঁধেছিলেন। আমরা চার-পাঁচ জন খেয়েছিলাম। তরি-তরকারি এমন সুস্বাদু ছিল, যা বলবার মতো নয়। কোনো বোন তার প্রিয় ভাইকে যেভাবে আদরযত্ন করে খাওয়ায় তেমন করে খাইয়ে ছিলেন। আ ক ম মোজাম্মেল মন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর অফিসে বেশ কয়েকবার গিয়েছি। একবার রাজেন্দ্রপুরে ইকবাল সিদ্দিকীর কোনো অনুষ্ঠানে অথবা ময়মনসিংহের দিক থেকে ফিরতে তাঁর বাড়ি গিয়েছিলাম। সেদিন মন্ত্রী গাজীপুরেই ছিলেন। কেন ফোন করেছিলেন জানি না। বলেছিলেন, ‘আপনি যাওয়ার সময় আমার বাড়ি হয়ে যাবেন। আপনার বোন আপনাকে দেখতে চাচ্ছেন।’ গিয়েছিলাম। যেতে যেতেই চা-নাশতা দিতে চেয়েছিলেন। বলেছিলাম, না, বেশ ক্ষুধা লেগেছে। ঘরে যা ছিল তাই টেবিলে দিয়েছিলেন। খুবই সাধারণ তরি-তরকারি। কিন্তু খুব সুস্বাদু। স্বামী-স্ত্রী দুজনে বড় যত্ন করে খাইয়ে ছিলেন। যেমনটা করেছিলেন ভারতের সাবেক মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি তাঁর তালকাটরা রোডের বাড়িতে। দিদি শুভ্রা মুখার্জি ছিলেন কলকাতায়। তিনি বারবার প্রণবদাকে ফোন করছিলেন, ‘বাঘা তার বউ নিয়ে, ছেলেমেয়ে নিয়ে দিল্লি গেছে। ওদের সামনে বসে খাওয়াবে।’ প্রণবদা সে যে কি যত্ন করে আমাদের খাইয়েছিলেন তা ভাবতে আজও আনন্দ হয়। তাই হঠাৎ করে জাতীয় এই দুর্যোগে আ ক ম মোজাম্মেল হকের স্ত্রী লায়লা আরজুমান্দ বানু চলে যাওয়ায় ভীষণ আঘাত পেয়েছি। ভালো মানুষরা বোধহয় এভাবেই চলে যায়। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, আল্লাহ যেন তাঁকে বেহেশতবাসী করেন।
এই সেদিন দেশের একজন সেরা ব্যবসায়ী লতিফুর রহমান চলে গেলেন। বাংলাদেশে এখন হঠাৎ গজিয়ে ওঠা ধনবান আর লতিফুর রহমানের মধ্যে অবশ্যই বেশকিছু পার্থক্য আছে। ’৯০-এর আগে লতিফুর রহমানকে চিনতাম তবে ঘনিষ্ঠতা ছিল না। আমার কাছে মনে হয় নিজের চেষ্টায় ব্যবসা করে কত দূর যাওয়া যায় লতিফুর রহমান তার উজ্জ্বল প্রমাণ। সরকারের সঙ্গে ভাগাভাগি কিংবা কোনো কমিশন, আদম পাচার অথবা কমিশনের বেচাকেনা এসব না করে যা করার তিনি করেছেন। তিনি ঢাকা চেম্বারের অনেকবারের সভাপতি। অন্য বহু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব করেছেন। প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার তাঁর পত্রিকা। তিনি একবার এফবিসিসিআইর সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। আমাকে খুব ভরসা করতেন। তখন এফবিসিসিআইয়ে আমার বেশকিছু ভোটার ছিল। তাই একদিন হঠাৎ আমার বাসায় এসে হাজির, আমার সমর্থন চান। বলেছিলাম, আমি অন্য কাউকে সমর্থন করি। আপনাকে করতে পারব না। তবু ছোটাছুটির জন্য একটা গাড়ি এবং কিছু টাকা রেখে গিয়েছিলেন। মনে হয় সেবার ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন এফবিসিসিআইর সভাপতি হয়েছিলেন। তাঁকেই সমর্থন করেছিলাম। নির্বাচনের পর একটুও অসন্তুষ্ট হননি, বরং খুশিই হয়েছিলেন। আমার নৈতিকতা এবং সৎসাহসের অনেক প্রশংসা করেছিলেন। সেই থেকে মাঝেমধ্যেই কথা হতো। প্রয়োজনে লোকজন পাঠাতাম। তাদের অসম্ভব সম্মান করতেন, প্রয়োজন হলে সহযোগিতা করতেন। এভাবেই চলছিল বহুদিন। হঠাৎ একদিন খবরে দেখলাম তাঁর মেয়ে খুন হয়েছে। বড় লোকের যেমনি সম্মান তেমনি প্রতিষ্ঠিত লোকদের নানা যন্ত্রণা। লতিফুর রহমান তাঁর মেয়ের মৃৃত্যুতে দারুণ আঘাত পেয়েছিলেন। হঠাৎই একদিন লতিফুর রহমানের ফোন, ‘কাদের ভাই! আমার মেয়ে মারা গেল একটু খবর নিলেন না?’ ফোন পেয়ে আমি বোকা বনে গিয়েছিলাম। খুবই অপরাধী মনে হচ্ছিল। কী বলব, কোনো কিছু ভেবে পাচ্ছিলাম না। আমার নিজেরও খারাপ লাগছিল। আমরা যে বোকার মতো ভুল করি লতিফুর রহমানের মেয়ের মৃত্যুতে কোনো খবর না নেওয়া তার একটি মস্ত প্রমাণ। এরপর মাঝেধ্যেই ফোন করতাম, কথা বলতাম। এই সেদিন হঠাৎ হোলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলায় তাঁর মেয়ের ঘরের নাতি নিহত হয়। লোকটি একেবারে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছিলেন। আমাকে বলেছিলেন, ‘কাদের ভাই! আর পারছি না। এসব দেখে বড় কষ্ট হয়। দোষত্রুটি নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু জেনেশুনে কারও কোনো ক্ষতি করিনি। একজন কর্মচারীর সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করিনি। কাউকে জানামতে ঠকাইনি। প্রথম আলো, ডেইলি স্টার পত্রিকা দুটি যারা চালায় তাদের কোনো দিন একটা কথাও বলিনি। তার পরও দেখুন আমার নাতিটা কীভাবে মারা গেল। এখন কিছুই ভালো লাগে না।’ সেই লতিফুর রহমান তাঁর গ্রামের বাড়ি চৌদ্দগ্রামে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। জন্মেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহারে, লেখাপড়া শুরু মেঘালয়ের শিলং আর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন চৌদ্দগ্রামে। শেষ শয্যা নিলেন বনানী কবরস্থানে। আল্লাহ তাঁকে বেহেশতবাসী করুন। তাঁর পরিবার-পরিজনকে এই শোক সইবার শক্তি দিন।
ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাদ হোসেন মঙ্গলবার (৭ জুলাই) বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে করোনাক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। মানতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। যাকে সামনে রেখে ফেনীতে করোনাযুদ্ধ শুরু করেছিলাম সেই সেনাপতিকেই করোনা ছিনিয়ে নিল। ফেনীর সন্তান হিসেবে ফেনীর করোনাক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে তার ব্যকুলতা ভুলার নয়।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আমার সাথে সভা করার কয়েকদিনের মধ্যেই করোনায় আক্রান্ত হন তিনি। তার বহু আগে থেকেই প্রতিদিন করোনার চিকিৎসা সেবার বিষয়ে কথা হতো। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে ফোন করতেই বললো, "আমার তেমন কিছু হয় নাই স্যার, সামান্য কাশি এবং জ্বর। তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাব। দোয়া করবেন।"
প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস ছিল। এ কথাই শেষ কথা হবে ভাবি নাই। ২/৩ দিন পরই ডা. কাওসার জানাল, ঢাকা আজগর আলী হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তারপর থেকেই কাওসার থেকে নিয়মিত খোঁজ নিয়েছি। স্বাস্থ্য ক্রমাগত খারাপ হতে হতে আজ চলে গেলেন।
ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাদ হোসেন
ফেনী হারালো এক কৃতি সন্তানকে, যিনি জন্মভূমির মানুষের সেবার জন্য ফেনীতে পোস্টিং নিয়ে এসে আমৃত্যু ফেনীর মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।
লেখক: আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার।
শফিকুল ইসলাম, গোমস্তাপুর: চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের বসনইল গ্রামের দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান আব্দুর রহিম ৩৮ তম বিসিএস এ প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশকৃত হয়েছে। অনেক কষ্ট করে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করা রহিমের পরিবার ও এলাকায় এখন আনন্দের বন্যা বইছে। রহিম তার গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহন করে রহনপুর এবি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। ২০০৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫.০০ এবং রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ থেকে ২০১০ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫.০০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। পরবর্তীতে রাজশাহী প্রকৌশল ও
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট ) থেকে ২০১৬ সালে সিভিলে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পূন্ন করে বুয়েটে এমএসসিতে ভর্তি হয় এবং পাশাপাশি বিসিএস এর জন্য পড়াশোনা করতে থাকে। রহিমের বাবা শরিফুল ইসলাম পেশায় একজন কৃষক। ছোট বেলায় এবি স্কুলে পড়ার সময় সংসারের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। দীর্ঘদিন তার কৃষক বাবার সাথে জমিতে ফলানো সবজি নিজেই মাথায় করে হাটে-হাটে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করত। । ২০১০ সালে ভর্তি পরিক্ষায় অংশগ্রহনের জন্য বাবার শেষ সম্বল জমিটুকুও বিক্রি করে দেয়। ২০১২ (রুয়েট) ১ম বর্ষে পড়ার সময় মা মারা যান। ছোট ভাই ও বোনদের পড়াশোনার দায়িত্ব তার উপর পরে। কোচিং এ ক্লাস ও টিউশন করিয়ে নিজের ও তাদের খরচ চালাত। তার ছোট ভাই ঢাকায় শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এ স্নাতক ৪র্থ বর্ষে এবং ছোটবোন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এ স্নাতক ১ম বর্ষে পড়াশোনা করছে। রহিম জানায়, বাবার ইচ্ছাশক্তি ছিল অদম্য। আমার প্রচেষ্টার কারনে আজ আমি প্রতিকূলতাকে জয় করে অবশেষে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি । বর্তমানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এর অধীন স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ” এ সহকারী প্রকৌশলী পদে কর্মরত রয়েছি।
Post Written by : Admin
Original Post URL : https://ift.tt/31WpoOO
Post Come trough : Nachole News | নাচোল নিউজ
মানিকগঞ্জে যমুনার পানি কমতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। মঙ্গলবার (৭ জুলাই) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আরিচা কার্যালয়ের গ্রেজ রিডার মো. ফারুক হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, যমুনার পানি কমতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। আরিচা পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে অভ্যন্তরীণ নদীগুলোতে পানি স্থিতিশীল রয়েছে।
জেলার হরিরামপুর, ঘিওর, শিবালয়, দৌলতপুর ও সাটুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।